শাওয়াল ১৪৪৬   ||   এপ্রিল ২০২৫

ঈমানী আলোচনা কি শুধু মসজিদের জন্যই প্রযোজ্য?

আবু হাসসান রাইয়ান বিন লুৎফুর রহমান

[পূর্ব প্রকাশের (জানুয়ারি ২০২৫) পর]

 

সাহাবায়ে কেরাম যেমনিভাবে সুস্থ অবস্থায় নিজ ঘরে ঈমানী মুযাকারা করতেন, তদ্রূপ অসুস্থ অবস্থায়, এমনকি মৃত্যুশয্যায়ও ঈমানী মুযাকারা করেছেন স্বভাবতই তারা এসব আলোচনা নিজ ঘরেই করেছেন

নিম্নে কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল

(১৩)

عَنِ ابْنِ شِمَاسَةَ الْمَهْرِيِّ، قَالَ: حَضَرْنَا عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ، وَهُوَ فِي سِيَاقَةِ الْمَوْتِ، يَبْكِيْ طَوِيلاً، وَحَوَّلَ وَجْهَهُ إِلَى الْجِدَارِ، فَجَعَلَ ابْنُهُ يَقُولُ: يَا أَبَتَاهُ، أَمَا بَشَّرَكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بِكَذَا؟ أَمَا بَشَّرَكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بِكَذَا؟ قَالَ: فَأَقْبَلَ بِوَجْهِه، فَقَالَ: إِنَّ أَفْضَلَ مَا نُعِدُّ شَهَادَةُ أَنْ لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ...

ইবনে শিমাসাহ মাহরী রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা আমর ইবনে আস রা.-এর নিকট তাঁর ইন্তেকালের সময় হাজির হলাম তিনি দেয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে দীর্ঘ সময় কাঁদছিলেন তাঁর ছেলে তাঁকে বলল, আপনি কাঁদছেন কেন? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে এই এই সুসংবাদ দেননি?

একথা শুনে তিনি চেহারা ফেরালেন এবং বললেন, আমাদের কাছে এসব থেকেও উত্তম হল এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল... সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩২১

এই বর্ণনা হায়াতুস সাহাবা কিতাবেও আছে দেখুন, মুআসসাসাতুর রিসালাহ থেকে প্রকাশিত হায়াতুস সাহাবা ৪/৬৮ (দারুল কিতাব থেকে প্রকাশিত বাংলা হায়াতুস সাহাবা ৪/৩৪৫)

উপরোক্ত বর্ণনাতেও আমরা লক্ষ করলাম, আমর ইবনে আস রা. মৃত্যুশয্যায় নিজ ঘরে সকলের সামনে কালিমায়ে শাহাদাত-এর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছেন

 (১৪)

...حَدَّثَنِي عُبَادَةُ بْنُ الْوَلِيدِ بْنِ عُبَادَةَ، حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى عُبَادَةَ، وَهُوَ مَرِيضٌ أَتَخَايَلُ فِيهِ الْمَوْتَ، فَقُلْتُ: يَا أَبَتَاهُ أَوْصِنِي وَاجْتَهِدْ لِي. فَقَالَ: أَجْلِسُونِي. فَلَمَّا أَجْلَسُوهُ قَالَ: يَا بُنَيَّ إِنَّكَ لَنْ تَطْعَمَ طَعْمَ الْإِيمَانِ، وَلَنْ تَبْلُغْ حَقَّ حَقِيقَةِ الْعِلْمِ بِاللهِ حَتَّى تُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِه وَشَرِّه، قَالَ: قُلْتُ: يَا أَبَتَاهُ وَكَيْفَ لِي أَنْ أَعْلَمَ مَا خَيْرُ الْقَدَرِ مِنْ شَرِّه؟ قَالَ: تَعْلَمُ أَنَّ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ، وَمَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ. يَا بُنَيَّ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ: إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمُ، ثُمَّ قَالَ: اكْتُبْ، فَجَرَى فِي تِلْكَ السَّاعَةِ بِمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ. يَا بُنَيَّ إِنْ متَّ وَلَسْتَ عَلى ذلِكَ دَخَلْتَ النَّار.

ওলীদ ইবনে উবাদাহ বলেন, আমি উবাদাহ রা.-এর কাছে আসলাম তিনি অসুস্থ ছিলেন আমার মন বলছিল, তিনি এই রোগেই মৃত্যুবরণ করবেন আমি বললাম, আব্বাজান! আমাকে কিছু ওসিয়ত করুন এবং আমার জন্য একটু কষ্ট করুন

তিনি বললেন, আমাকে বসাও

যখন তাকে বসানো হল, তিনি বললেন, হে আমার বৎস! তুমি ঈমানের স্বাদ এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষন না তাকদীরের ভালোমন্দের প্রতি ঈমান আনবে

আমি বললাম, আব্বাজান! তাকদীরের ভালোমন্দ কীভাবে বুঝব?

তিনি বললেন, তুমি জেনে রেখ, যা তোমার জন্য লেখা হয়নি, তা কখনো তোমার নিকট পৌঁছবে না আর যা তোমার জন্য লেখা হয়েছে, তা কখনো তোমার নিকট পৌঁছতে ভুল করবে না

হে বৎস! নিশ্চয় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন অতঃপর কলমকে আদেশ করেছেন লেখ তাৎক্ষণিক সেই কলম কেয়ামত পর্যন্ত যা ঘটবে তা লিপিবদ্ধ করেছে

হে আমার বৎস! এই ঈমান ব্যতীত যদি তোমার মৃত্যু হয় তবে তুমি জাহান্নামে প্রবেশ করবে মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৭০৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩১৯

ইমাম তিরমিযী রাহ. বলেছেন

حَسَنٌ صَحِيْحٌ غَرِيْبٌ.

এই ঘটনা হায়াতুস সাহাবা কিতাবেও আছে দেখুন, মুআসসাসাতুর রিসালাহ থেকে প্রকাশিত হায়াতুস সাহাবা ৪/৪২ (দারুল কিতাব থেকে প্রকাশিত বাংলা হায়াতুস সাহাবা ৪/৩১২-৩১৩)

উপরোক্ত বর্ণনাতেও আমরা লক্ষ করলাম, উবাদাহ ইবনে সামিত রা. মৃত্যুশয্যাতেই নিজ পুত্রকে তাকদীরের প্রতি ঈমান শিক্ষা দিয়েছেন

(১৫)

عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، قَالَ: مَرِضَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم، فَدَخَلَ عَلَيْهِ أَصْحَابُه يَعُودُونَه، فَبَكَى، فَقِيلَ لَه: مَا يُبْكِيكَ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ؟ أَلَمْ يَقُلْ لَكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: خُذْ مِنْ شَارِبِكَ، ثُمَّ أَقِرَّه حَتَّى تَلْقَانِي؟

قَالَ: بَلَى، وَلكِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ: إِنَّ اللهَ قَبَضَ قَبْضَةً بِمِينِيَه، وَقَالَ: هذِهِ لِهذِه، وَلَا أُبَالِي. وَقَبَضَ قَبْضَةً أُخْرَى بِيَدِه الْأُخْرَى، فَقَالَ: هذِه لِهذِه، وَلَا أُبَالِي، فَلَا أَدْرِي فِي أَيّ الْقَبْضَتَيْنِ أَنَا.

আবু নাদরাহ রাহ. বলেন, আবু আবদুল্লাহ রা. নামে একজন সাহাবী ছিলেন তিনি অসুস্থ হলে তাঁর সঙ্গীগণ তাঁকে দেখতে এল তিনি কাঁদছিলেন তাঁরা বলল, আপনি কেন কাঁদছেন? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে বলেননি যে, তুমি মোচ ছোট রাখবে; আমার সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত এর ওপর অটল থাকবে

তিনি বললেন, অবশ্যই! কিন্তু আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ ডান হাতে এক মুষ্ঠি নিয়ে বলেছেন, এরা জান্নাতের জন্য; আমি কারো পরোয়া করি না অন্য হাতে আরেক মুষ্ঠি নিয়ে বলেছেন, এরা জাহান্নামের জন্য; আমি কারো পরোয়া করি না

এখন আমি তো জানি না, কোন্ মুষ্ঠিতে আমি ছিলাম মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৫৯৩

নূরুদ্দিন হাইছামী রাহ. বলেন

رِجَالُه رِجَالُ الصَّحِيْحَ.

মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/ ১৮৬

এই ঘটনা হায়াতুস সাহাবা কিতাবেও আছে দেখুন, হায়াতুস সাহাবা ৪/৪২ (দারুল কিতাব থেকে প্রকাশিত বাংলা হায়াতুস সাহাবা ৪/৩১৩)

উপরোক্ত বর্ণনাতেও আমরা লক্ষ করলাম, আবু আবদুল্লাহ রা. প্রচণ্ড অসুস্থতার সময়ও যারা তার ইয়াদাতে এসেছেন তাদের সাথে তাকদীরের প্রতি ঈমান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন

(১৬)

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، أَنَّه إِذْ حُضِرَ قَالَ: أَدْخِلُوا عَلَيَّ النَّاسَ، فَأُدْخِلُوا عَلَيْهِ، فَقَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ: مَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا، جَعَلَه اللهُ فِي الْجَنَّةِ...

মুআয ইবনে জাবাল রা.-এর যখন মৃত্যু উপস্থিত হল, তিনি বললেন, লোকজনকে আমার নিকট নিয়ে আসো

অতঃপর লোকজনকে তার কাছে নিয়ে আসা হল তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, সে আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করে না; আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন... মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৫৪৭

উপরের ঘটনাতে আমরা লক্ষ করলাম, বিশিষ্ট সাহাবী মুআয ইবনে জাবাল রা. নিজ ঘরে লোকজনকে ডেকে এনে মৃত্যুশয্যায়ও তাদের সামনে  ঈমানী আলোচনা করেছেন; তাওহীদের গুরুত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরেছেন

ঘরের মাসতুরাতদের সাথে ঈমানী মুযাকারা

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রা. যেখানে ঘরের মধ্যে পরস্পর ঈমানী মুযাকারা করেছেন, সেখানে ঘরের মাসতুরাতদের সাথে ঈমানী আলোচনা করবেন এটা তো বলাই বাহুল্য

আমরা কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি

(১৭)

عَنْ زَيْنَبَ، امْرَأَةِ عَبْدِ اللهِ، قَالَتْ: كَانَ عَبْدُ اللهِ إِذَا جَاءَ مِنْ حَاجَةٍ فَانْتَهَى إِلَى الْبَابِ، تَنَحْنَحَ وَبَزَقَ، كَرَاهِيَةَ أَنْ يَهْجُمَ مِنَّا عَلَى شَيْءٍ يَكْرَهُه، قَالَتْ: وَإِنَّه جَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ، فَتَنَحْنَحَ، قَالَتْ: وَعِنْدِي عَجُوزٌ تَرْقِينِي مِنَ الْحُمْرَةِ، فَأَدْخَلْتُهَا تَحْتَ السَّرِيرِ، فَدَخَلَ، فَجَلَسَ إِلَى جَنْبِي، فَرَأَى فِي عُنُقِي خَيْطًا، قَالَ: مَا هذَا الْخَيْطُ؟ قَالَتْ: قُلْتُ: خَيْطٌ أُرْقِيَ لِي فِيهِ، قَالَتْ: فَأَخَذَهُ فَقَطَعَه، ثُمَّ قَالَ: إِنَّ آلَ عَبْدِ اللهِ لَأَغْنِيَاءُ عَنِ الشِّرْكِ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ: إِنَّ الرُّقَى، وَالتَّمَائِمَ، وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ.

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর স্ত্রী যয়নাব রা. বলেন, একদিন এক বৃদ্ধ মহিলা হাম রোগের জন্য মন্ত্র পড়ে আমার চিকিৎসা করছিল হঠাৎ আবদুল্লাহ ঘরে এসে কাশি দিলেন আমি সেই বৃদ্ধাকে খাটের নিচে ঢুকিয়ে দিলাম তিনি ঘরে প্রবেশ করে আমার পাশে বসলেন এবং আমার গলায় সুতা দেখতে পেলেন তিনি বললেন, এটা কীসের সুতা?

বললাম, এটা মন্ত্র পড়া সুতা

তিনি তৎক্ষণাৎ সুতা ধরে ছিঁড়ে ফেললেন অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই আবদুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে অমুখাপেক্ষী আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মন্ত্র, তামীমা, জাদু হল শিরক... মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৬১৫

এই বর্ণনা হায়াতুস সাহাবা কিতাবেও আছে দেখুন, হায়াতুস সাহাবা ৪/১৭-১৮ (দারুল কিতাব থেকে প্রকাশিত বাংলা হায়াতুস সাহাবা ৪/২৮২)

এই ঘটনাতেও আমরা লক্ষ করলাম, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ঘরের মধ্যে নিজ স্ত্রীর সাথে ঈমানী আলোচনা করেছেন এবং শিরকী কর্মকাণ্ড থেকে সর্তক করেছেন

(১৮)

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ، قَالَتْ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فِي بَيْتِه فَقَالَ: إِذَا كَانَ قَبْلَ خُرُوجِ الدَّجَّالِ بِثَلَاثِ سِنِينَ، حَبَسَتِ السَّمَاءُ ثُلُثَ قَطْرِهَا، وَحَبَسَتِ الْأَرْضُ ثُلُثَ نَبَاتِهَا، فَإِذَا كَانَتِ السَّنَةُ الثَّانِيَةُ حَبَسَتِ السَّمَاءُ ثُلُثَيْ قَطْرِهَا، وَحَبَسَتِ الْأَرْضُ ثُلُثَيْ نَبَاتِهَا، فَإِذَا كَانَتِ السَّنَةُ الثَّالِثَةُ حَبَسَتِ السَّمَاءُ قَطْرَهَا كُلَّه، وَحَبَسَتِ الْأَرْضُ نَبَاتَهَا كُلَّه، فَلَا يَبْقَى ذُو خُفٍّ، وَلَا ظِلْفٍ إِلَّا هَلَكَ...

আসমা বিনতে ইয়াযীদ রা. বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর ঘরে ছিলাম তিনি বললেন, যখন দাজ্জাল বের হওয়ার পূর্বে তিন বছর বাকি থাকবে, তখন আসমান তার বৃষ্টির তিন ভাগের এক ভাগ বন্ধ করে দেবে এবং যমীন তার ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ বন্ধ করে দেবে অতঃপর যখন দ্বিতীয় বছর আসবে, তখন আসমান তার বৃষ্টির তিন ভাগের দুই ভাগ বন্ধ করে দেবে এবং যমীন তার ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগ বন্ধ করে দেবে অতঃপর যখন তৃতীয় বছর আসবে, তখন আসমান সম্পূর্ণরূপে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেবে আর যমীন সম্পূর্ণরূপে ফসল উৎপন্ন বন্ধ করে দেবে তখন খুরধারী সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে... মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৫৬৮

এই হাদীসেও আমরা লক্ষ করলাম, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় দাজ্জালের ফেতনা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন আর এই ঈমানী মুযাকারা তিনি নিজ ঘরে করেছেন

(১৯)

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، قَالَتْ: دُعِيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِلَى جَنَازَةِ صَبِيٍّ مِنَ الأَنْصَارِ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، طُوبَى لِهذَا، عُصْفُورٌ مِنْ عَصَافِيرِ الْجَنَّةِ، لَمْ يَعْمَلِ السُّوءَ وَلَمْ يُدْرِكْهُ، قَالَ: أَوَ غَيْرَ ذلِكَ يَا عَائِشَةُ، إِنَّ اللهَ خَلَقَ لِلْجَنَّةِ أَهْلاً، خَلَقَهُمْ لَهَا وَهُمْ فِي أَصْلاَبِ آبَائِهِمْ، وَخَلَقَ لِلنَّارِ أَهْلاً، خَلَقَهُمْ لَهَا وَهُمْ فِي أَصْلاَبِ آبَائِهِمْ.

আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আনসারদের এক বালকের জানাযার জন্য ডাকা হল আমি বললাম, তাঁর জন্য সুসংবাদ, জান্নাতের চড়ুইদের মধ্য থেকে একটি চড়ুই সে কোনো গোনাহ করেনি; গোনাহ লেখার বয়সেও উপনীত হয়নি তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! এটা ছাড়া অন্যকিছুও তো হতে পারে নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কিছু মানুষকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পিতার ঔরসেই তাদেরকে জান্নাতী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন তিনি কিছু মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পিতার ঔরসেই তাদেরকে জাহান্নামী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭৬৮

এই বর্ণনা হায়াতুস সাহাবা কিতাবেও আছে দেখুন, হায়াতুস সাহাবা ৪/৪১-৪২ (দারুল কিতাব থেকে প্রকাশিত বাংলা হায়াতুস সাহাবা ৪/৩১২)

(২০)

عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا ذَكَرَتِ النَّارَ، فَبَكَتْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: ذَكَرْتُ النَّارَ، فَبَكَيْتُ، فَهَلْ تَذْكُرُونَ أَهْلِيكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: أَمَّا فِي ثَلاَثَةِ مَوَاطِنَ، فَلاَ يَذْكُرُ أَحَدٌ أَحَدًا: عِنْدَ الْمِيزَانِ، حَتَّى يَعْلَمَ أَيَخِفُّ مِيزَانُه أَوْ يَثْقُلُ، وَعِنْدَ الْكِتَابِ، حِينَ يُقَالُ: هَاؤُمُ اقْرَؤُوا كِتَابِيَهْ، حَتَّى يَعْلَمَ أَيْنَ يَقَعُ كِتَابُه، أَفِي يَمِينِه، أَمْ فِي شِمَالِه، أَمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِه، وَعِنْدَ الصِّرَاطِ إِذَا وُضِعَ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ.

হাসান রাহ. বলেন, আয়েশা রা. জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাঁদলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কাঁদছ কেন?

তিনি বললেন, জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কেঁদেছি কিয়ামতের দিন আপনার পরিবারের কথা কি স্মরণ থাকবে?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিন জায়গায় কেউ কাউকে স্মরণ করবে না মিযানের নিকট, যতক্ষণ না সে জানতে পারবে, তার পাল্লা হালকা হল, নাকি ভারী হল? আমলনামার সময়, যখন বলা হবে, তোমার আমলনামা পড়ে দেখো যতক্ষণ না সে জানতে পারবে, তার আমলনামা ডান হাতে হবে, নাকি বাম হাতে অথবা পিঠের পেছনে? আর পুলসিরাতের নিকট, যখন তা জাহান্নামের ওপর রাখা হবে সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৭৫৫

এই বর্ণনা হায়াতুস সাহাবা কিতাবেও আছে দেখুন, হায়াতুস সাহাবা ৪/৭২ (দারুল কিতাব থেকে প্রকাশিত বাংলা হায়াতুস সাহাবা ৪/ ৩৫১)

(২১)

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ فِي بَعْضِ صَلَاتِه: اللّهُمََّ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرًا، فَلَمَّا انْصَرَفَ، قُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ، مَا الْحِسَابُ الْيَسِيرُ؟ قَالَ: أَنْ يَنْظُرَ فِي كِتَابِه فَيَتَجَاوَزَ عَنْهُ، إِنَّه مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ يَوْمَئِذٍ يَا عَائِشَةُ هَلَكَ.

আয়েশা রা. বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো নামাযে এই দুআ পড়তে শুনলাম

اللهُمَّ حَاسِبْنِيْ حِسَابًا يَّسِيْرًا.

হে আল্লাহ! তুমি আমার হিসাব সহজ করে দাও

যখন তিনি নামায শেষ করলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! সহজ হিসাব-এর কী অর্থ?

তিনি বললেন, বান্দার আমলের দিকে তাকানো হবে এবং তাকে মাফ করে দেওয়া হবে

হে আয়েশা! সেদিন যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে মুসনাদে আহমাদ,

হাদীস ২৪২১৫

উপরের তিনটি ঘটনাতেই আমরা লক্ষ করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মাজান আয়েশা রা.-এর সাথে ঈমানী আলোচনা করেছেন আর এটা তো একদম স্পষ্ট যে, এসব আলোচনা মসজিদের পরিবর্তে ঘরের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে

এখানে আমরা কেবলমাত্র ঘরের মধ্যে ঈমানী মুযাকারার ২১টি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করলাম সামনে মসজিদের বাইরে অন্যান্য স্থানেও ঈমানী আলোচনার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হচ্ছে

মসজিদের বাইরে বিভিন্ন স্থানে ঈমানী মুযাকারার কিছু দৃষ্টান্ত

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম যেমনিভাবে ঘরের মধ্যে ঈমানী মুযাকারা করতেন, তেমনি মাঠে-ময়দানে, বাগানে, বাজারে, কবরস্থানে, নদীর তীরে ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানেও ঈমানী মুযাকারা করতেন

কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি

(১)

عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فِي جَنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ، فَجَلَسَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَجَلَسْنَا حَوْلَه كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرُ، وَفِي يَدِه عُودٌ يَنْكُتُ بِه فِي الْأَرْضِ، فَرَفَعَ رَأْسَه، فَقَالَ: اسْتَعِيذُوا بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، مَرَّتَيْنِ، أَوْ ثَلَاثًا، قَالَ: وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِه، فَيَقُولَانِ لَه: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللهُ، فَيَقُولَانِ لَه: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَه: مَا هذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ قَالَ: فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم، فَيَقُولَانِ: وَمَا يُدْرِيكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللهِ فَآمَنْتُ بِه وَصَدَّقْتُ، قَالَ: فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ: أَنْ قَدْ صَدَقَ عَبْدِي، فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَافْتَحُوا لَه بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ. قَالَ: فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا، قَالَ: وَيُفْتَحُ لَه فِيهَا مَدَّ بَصَرِه...

বারা ইবনে আযেব রা. বর্ণনা করেন, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক আনসারী সাহাবীর জানাযায় গেলাম যখন আমরা কবরের কাছে পৌঁছলাম, তখনো কবর খননের কাজ শেষ হয়নি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বসে পড়লেন আমরাও তাঁর পাশে এমনভাবে বসলাম, যেন আমাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে...

অতঃপর তিনি দুই-তিনবার বললেন, তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও (কবরে শায়িত মুমিন) বান্দার কাছে দুজন ফেরেশতা আসে অতঃপর তারা তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করে, তোমার রব কে?

সে বলে, আমার রব আল্লাহ

আবার প্রশ্ন করে, তোমার দ্বীন কী?

সে বলে, আমার দ্বীন ইসলাম

আবার প্রশ্ন করে, এই ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল?

সে বলে, তিনি আল্লাহর রাসূল

ফেরেশতারা প্রশ্ন করে, তুমি এটা কীভাবে জানো?

সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এই কিতাবের প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে বিশ্বাস করেছি

অতঃপর আসমান থেকে আল্লাহর পক্ষ হতে একজন ঘোষণা প্রদান করে যে, আমার বান্দা সত্য বলেছে সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও সেই দরজা দিয়ে জান্নাতের মিষ্টি বাতাস এবং সুঘ্রাণ আসতে থাকে আর তাঁর দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত কবরকে প্রশস্ত করে দেওয়া হয়... সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৭৫৩

এই বর্ণনাটি মুন্তাখাব হাদীস কিতাবেও আছে, হাদীস নম্বর ১৪০

উল্লিখিত হাদীসে স্পষ্টভাবে আছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে বসে সাহাবীদের সাথে ঈমানী আলোচনা করেছেন

(২)

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنَّا فِي جَنَازَةٍ فِي بَقِيعِ الغَرْقَدِ، فَأَتَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم، فَقَعَدَ وَقَعَدْنَا حَوْلَه، وَمَعَه مِخْصَرَةٌ، فَنَكَّسَ فَجَعَلَ يَنْكُتُ بِمِخْصَرَتِه، ثُمَّ قَالَ: مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ، مَا مِنْ نَفْسٍ مَنْفُوسَةٍ إِلَّا كُتِبَ مَكَانُهَا مِنَ الجَنَّةِ وَالنَّارِ.

আলী রা. বলেন, আমরা বাকী কবরস্থানে একটি দাফনকার্যে রত ছিলাম তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন এবং বসে পড়লেন আমরাও তাঁর পাশে বসে পড়লাম... তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যত মানুষ আছে, সকলের জন্যই জান্নাত ও জাহান্নামে তার স্থান লিপিবদ্ধ আছে... সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৪৭

এই বর্ণনাতেও আমরা দেখলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকী কবরস্থানে বসেই সাহাবায়ে কেরামের সাথে তাকদীরের প্রতি ঈমান বিষয়ে আলোচনা করেছেন

(৩)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَتَى الْمَقْبرَةَ، فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا، قَالُوا: أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ، فَقَالُوا: كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ: أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلًا لَه خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلَا يَعْرِفُ خَيْلَه؟ قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنَ الْوُضُوءِ، وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْضِ...

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে এসে বললেন

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ.

(হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক নিশ্চয়ই আমরাও তোমাদের সাথে যুক্ত হব ইনশাআল্লাহ)

অতঃপর বললেন, আমার আকাক্সক্ষা, আমি যদি আমাদের ভাইদের দেখতে পেতাম

সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা কি আপনার ভাই নই?

তিনি বললেন, তোমরা হলে আমার সাথি (সাহাবী) আমাদের ভাই হল তারা, যারা এখনো দুনিয়াতে আসেনি

তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যারা এখনো দুনিয়াতে আসেনি, তাদেরকে আপনি কীভাবে চিনবেন?

তিনি বললেন, যদি কোনো ব্যক্তির এমন ঘোড়া থাকে, যার কপাল এবং হাত-পা সাদা আর সেই ঘোড়াটি যদি অনেকগুলো কালো ঘোড়ার মাঝে অবস্থান করে, তাহলে মালিক কি তার ঘোড়া চিনবে না?

তারা বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ!

তিনি বললেন, আমার উম্মত কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসবে যে, ওযুর কারণে তাদের কপাল-হাত-পা ঝলমল করতে থাকবে আর আমি তাদের অগ্রে হাউজের নিকট অবস্থান করব সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৯

(৪)

عَنِ ابْنِ دَارَّةَ، مَوْلَى عُثْمَانَ، قَالَ: إِنَّا لَبِالْبَقِيعِ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ إِذْ سَمِعْنَاهُ يَقُولُ: أَنَا أَعْلَمُ النَّاسِ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالَ: فَتَدَاكَّ النَّاسُ عَلَيْهِ، فَقَالُوا: إِيهٍ يَرْحَمُكَ اللهُ، قَالَ: يَقُولُ: اللّهُمَّ اغْفِرْ لِكُلِّ عَبْدٍ مُسْلِمٍ، لَقِيَكَ مُؤْمِنٌ بِي، لَا يُشْرِكُ بِكَ.

قال الشيخ شعيب: إسناده حسن.

উসমান রা.-এর গোলাম ইবনে দাররা রাহ. বলেন, আমরা বাকী কবরস্থানে আবু হুরায়রা রা.-এর সাথে ছিলাম হঠাৎ আমরা তাঁকে বলতে শুনলাম, কিয়ামতের দিন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ সম্পর্কে আমি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবগত

তখন লোকজন তাঁর কাছে ভিড় করল সবাই বলল, আপনার প্রতি আল্লাহ দয়া করুন, বিষয়টি আমাদের বলুন

তিনি বললেন, তিনি অর্থাৎ নবীজী বলবেন, হে আল্লাহ! তুমি এমন প্রত্যেক মুসলিম বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, যে তোমার সাথে সাক্ষাৎ করেছে এমন অবস্থায় যে, সে আমার প্রতি ঈমান রাখে আর তোমার সাথে শরীক করে না মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৮৫২

এই হাদীসেও আমরা দেখলাম, আবু হুরায়রা রা. বাকী কবরস্থানে ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছেন

(৫)

عن زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ، قَالَ: بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فِي حَائِطٍ لِبَنِي النَّجَّارِ، عَلَى بَغْلَةٍ لَه وَنَحْنُ مَعَه، إِذْ حَادَتْ بِه فَكَادَتْ تُلْقِيهِ، وَإِذَا أَقْبُرٌ سِتَّةٌ أَوْ خَمْسَةٌ أَوْ أَرْبَعَةٌ،... فَقَالَ: مَنْ يَعْرِفُ أَصْحَابَ هذِهِ الْأَقْبُرِ؟ فَقَالَ رَجُلٌ: أَنَا، قَالَ: فَمَتَى مَاتَ هؤُلَاءِ؟ قَالَ: مَاتُوا فِي الْإشْرَاكِ، فَقَالَ: إِنَّ هذِهِ الْأُمَّةَ تُبْتَلَى فِي قُبُورِهَا، فَلَوْلَا أَنْ لَا تَدَافَنُوا، لَدَعَوْتُ اللهَ أَنْ يُسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِي أَسْمَعُ مِنْهُ.

যায়েদ ইবনে ছাবিত রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু নাজ্জার গোত্রের বাগানে তার খচ্চরের ওপর বসা ছিলেন আমরাও তার সাথে ছিলাম হঠাৎ খচ্চরটি রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ল এমনকি নবীজীকে ফেলে দেওয়ার উপক্রম হল দেখা গেল, সেখানে চার-পাঁচ অথবা ছয়টি কবর আছে

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই কবরের বাসিন্দাদের কে চেনে?

এক সাহাবী বললেন, আমি

তিনি বললেন, এরা কবে মৃত্যুবরণ করেছে?

সাহাবী বললেন, তারা শিরকের হালতে মৃত্যুবরণ করেছে

তখন নবীজী বললেন, নিশ্চয়ই এই উম্মতকে কবরে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে যদি তোমরা দাফন ছেড়ে দেবে এই আশঙ্কা না থাকত, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করতাম, তিনি যেন তোমাদের কবরের আযাব শুনিয়ে দেন, যেমন আমি শুনতে পাই সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৬৭

(৬)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كُنْتُ أَمْشِي مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فِي نَخْلٍ لِبَعْضِ أَهْلِ الْمَدِينَةِ...، ثُمَّ قَالَ: هَلْ تَدْرِي مَا حَقُّ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى النَّاسِ؟ وَمَا حَقُّ النَّاسِ عَلَى اللهِ؟ قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُه أَعْلَمُ، قَالَ: فَإِنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى النَّاسِ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلَا يُشْرِكُوا بِه شَيْئًا، فَإِذَا فَعَلُوا ذلِكَ فَحَقٌّ عَلَيْهِ أَنْ لَا يُعَذِّبَهُمْ.

আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোনো এক মদীনাবাসীর খেজুর বাগানে হাঁটছিলাম... অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কি জানো মানুষের ওপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর ওপর মানুষের হক কী?

আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন

তিনি বললেন, নিশ্চয়ই মানুষের ওপর আল্লাহর হক হল, তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না অতঃপর যখন তারা তা করবে, তখন আল্লাহর ওপর মানুষের হক হল, তিনি তাদের শাস্তি দেবেন না মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮০৮৫; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৫১৭

নূরুদ্দিন হাইছামী রাহ. মাজমাউয যাওয়ায়েদ গ্রন্থে (১/২০৮) বলেছেন

رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَرِجَالُه ثِقَاتٌ أَثْبَاتٌ.

এই হাদীসেও আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পেলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খেজুর বাগানে আবু হুরায়রা রা.-এর সাথে ঈমানী আলোচনা করেছেন

(৭)

عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمنِ السُّلَمِيِّ، قَالَ: أَخَذَ بِيَدِي عَلِيٌّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَانْطَلَقْنَا نَمْشِي، حَتَّى جَلَسْنَا عَلَى شَطِّ الْفُرَاتِ، فَقَالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: مَا مِنْ نَفْسٍ مَنْفُوسَةٍ إِلا قَدْ سَبَقَ لَهَا مِنَ اللهِ شَقَاءٌ أَوْ سَعَادَةٌ، فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ! فِيمَ إِذًا نَعْمَلُ؟ قَالَ: اعْمَلُوا، فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَه، ثُمَّ قَرَأَ هذِهِ الْآيَةَ: فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى، وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى، فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى، وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى، وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى، فَسَنُيَسِّرُه لِلْعُسْرَى.

আবু আবদুর রহমান সুলামী বলেন, আলী রা. আমার হাত ধরলেন আমরা হাঁটতে থাকলাম অবশেষে আমরা ফুরাত নদীর তীরে এসে বসলাম তখন আলী রা. বললেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যত মানুষ রয়েছে প্রত্যেকের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলেছিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে আমরা আমল করব কীসের জন্য?

তিনি বললেন, তোমরা আমল করতে থাক; প্রত্যেককে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটা তার জন্য সহজ করে দেওয়া হবে

অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন

فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى، وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى، فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى، وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى، وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى، فَسَنُيَسِّرُه لِلْعُسْرَى .

[যে ব্যক্তি দান করেছে, ভয় করে চলেছে এবং উত্তম কথাকে সত্য বলে স্বীকার করেছে আমি তাকে সহজে পৌঁছে দিব শান্তিময় স্থানে আর যে ব্যক্তি র্কাপণ্য করেছে, বেপরোয়া থেকেছে এবং উত্তম কথাকে অস্বীকার করেছে আমি তাকে সহজে পৌঁছে দেব যাতনাময় স্থানে সূরা লাইল (৯২) : ৫-১০] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩৪৯

শুআইব আরনাউত রাহ. বলেছেন

إِسْنَادُه قَوِي.

এই হাদীসেও আমরা দেখতে পেলাম, খলীফায়ে রাশেদ আলী রা. ফুরাত নদীর তীরে বসেই তাকদীরের প্রতি ঈমান বিষয়ে আলোচনা করেছেন

(৮)

عَنْ شَدَّادٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: خَرَجْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ إِلَى السُّوقِ فَكَانَ أَكْثَرَ كَلَامِه مَعَ مِنْ لَقِيَ: سَلَامٌ عَلَيْكُمْ تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ قَدَرِ السُّوءِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: لَنْ يُؤْمِنَ مَنْ لَمْ يُؤْمِنْ بِالْقَدَرِ خَيْرِه وَشَرِّه.

শাদ্দাদ রা. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর সাথে বাজারে গেলাম যাদের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে, তাদের সঙ্গে তাঁর অধিকাংশ কথাই ছিলতোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’; ‘তোমরা মন্দ তাকদীর থেকে পানাহ চাও’

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে তাকদীরের ভালোমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে না, সে কিছুতেই মুমিন হতে পারবে না শরহু উসুলিল ই‘তিকাদ, ইমাম লালিকায়ী, হাদীস ১১০৬

উপরোক্ত ঘটনাতেও আমরা লক্ষ করলাম, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাজারের মধ্যেই লোকজনের সাথে ঈমানী মোযাকারা করেছেন

(৯)

عن عُثْمَانَ بْن عَفَّانَ رضي الله عنه يُحَدِّثُ: أَنَّ رِجَالًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم حِينَ تُوُفِّيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم حَزِنُوا عَلَيْهِ، حَتَّى كَادَ بَعْضُهُمْ يُوَسْوِسُ، وَكُنْتُ مِنْهُمْ، فَبَيْنَا أَنَا جَالِسٌ فِي ظِلِّ أُطُمٍ مِنَ الْآطَامِ مَرَّ عَلَيَّ عُمَرُ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، فَسَلَّمَ عَلَيَّ، فَلَمْ أَشْعُرْ أَنَّه مَرَّ وَلا سَلَّمَ، فَانْطَلَقَ عُمَرُ حَتَّى دَخَلَ عَلَى أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ...، فَقَالَ عُثْمَانُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: تَوَفَّى الله عَزَّ وَجَلَّ نَبِيَّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَبْلَ أَنْ نَسْأَلَه عَنْ نَجَاةِ هذَا الْأَمْرِ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ: قَدْ سَأَلْتُه عَنْ ذلِكَ، قَالَ: فَقُمْتُ إِلَيْهِ، فَقُلْتُ لَه: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي، أَنْتَ أَحَقُّ بِهَا، قَالَ أَبُو بَكْرٍ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ! مَا نَجَاةُ هَذَا الْأَمْرِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: مَنْ قَبِلَ مِنِّي الْكَلِمَةَ الَّتِي عَرَضْتُ عَلَى عَمِّي، فَرَدَّهَا عَلَيَّ، فَهِيَ لَه نَجَاةٌ.

উসমান রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পরে একদিন আমি একটি উঁচু ভবনের ছায়ায় বসা ছিলাম এবং চিন্তিত ছিলাম উমর রা. আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং সালাম দিলেন কিন্তু আমি বুঝতেই পারিনি, তিনি আমাকে সালাম দিয়েছেন ফলে উমর রা. হাঁটতে হাঁটতে আবু বকর রা.-এর কাছে চলে গেলেন...

উসমান রা. বলেন, আল্লাহ তাঁর রাসূলকে উঠিয়ে নিলেন, কিন্তু এই দ্বীনের মধ্যে নাজাতের বিষয়টি আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি

আবু বকর রা. বলেন যে, আমি এই বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছি

তৎক্ষণাৎ আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক, আপনিই এর উপযুক্ত

আবু বকর রা. বলেন, একবার আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এই দ্বীনের মধ্যে নাজাতের মাধ্যম কোন্টি?

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমার থেকে সেই কালিমা কবুল করে নেবে, যা আমি আমার চাচার সামনে পেশ করেছিলাম, এই কালিমা সেই ব্যক্তির জন্য নাজাতের কারণ হয়ে যাবে মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০

 ১০)

عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم، فَنَظَرَ إِلَى القَمَرِ لَيْلَة البَدْر، فَقَالَ: إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ، كَمَا تَرَوْنَ هذَا القَمَرَ، لاَ تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِه.

জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম সেদিন পূর্ণিমার রাত ছিল তিনি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে, যেভাবে এই চাঁদ দেখতে পাচ্ছ তাঁকে দেখার ক্ষেত্রে তোমাদের মধ্যে কোনো ধরনের ধাক্কাধাক্কি হবে না সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩২

এই হাদীসেও আমরা দেখতে পেলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোলা আকাশের নিচে পূর্ণিমার রাতে ঈমানী আলোচনা করেছেন

(১১)

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فِي نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِه وَصَبِيٌّ فِي الطَّرِيقِ، فَلَمَّا رَأَتْ أُمُّهُ الْقَوْمَ خَشِيَتْ عَلَى وَلَدِهَا أَنْ يُوطَأَ، فَأَقْبَلَتْ تَسْعَى وَتَقُولُ: ابْنِي ابْنِي وَسَعَتْ فَأَخَذَتْه، فَقَالَ الْقَوْمُ: يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم، مَا كَانَتْ هذِه لِتُلْقِيَ ابْنَهَا فِي النَّارِ، قَالَ: فَخَفَّضَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم، فَقَالَ: وَلَاءُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لَا يُلْقِي حَبِيبَه فِي النَّارِ.

আনাস রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের এক জামাত সাথে নিয়ে পথ অতিক্রম করলেন তখন রাস্তায় এক শিশু ছিল, যখন শিশুর মা এত লোকজন দেখল তখন সে শিশুটির পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করল ফলে সে ‘আমার পুত্র, আমার পুত্র’ বলে ছুটে এল এবং শিশুটিকে কোলে তুলে নিল

লোকজন বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই মা তো কখনোই নিজের সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করবে না

নবীজী নিচু স্বরে বললেন, আল্লাহ তার প্রিয় জিনিসকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন না মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২০১৮

(১২)

عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ قَالَ: خَرَجْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مِنَ الْمَدِينَةِ، فَالْتَفَتَ إِلَيْهَا فَقَالَ: إِنَّ اللهَ قَدْ بَرَّأَ هذِهِ الْجَزِيرَةَ مِنَ الشِّرْكِ، وَلكِنْ أَخَافُ أَنْ تُضِلَّهُمُ النُّجُومُ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ! كَيْفَ تُضِلُّهُمُ النُّجُومُ؟ قَالَ: يَنْزِلُ الْغَيْثُ، فَيَقُولُونَ: مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا.

আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মদীনা থেকে বের হলাম অতঃপর তিনি মদীনার দিকে তাকিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এই উপত্যকাকে শিরক থেকে পবিত্র করেছেন কিন্তু আমার আশঙ্কা হয় যে, নক্ষত্ররাজি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেবে 

তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নক্ষত্ররাজি কীভাবে তাদের পথভ্রষ্ট করবে?

তিনি বললেন, বৃষ্টি বর্ষণ হবে আর তারা বলবে, অমুক অমুক তারকার কারণে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৬৭০৯

নূরুদ্দিন হাইছামী রাহ. মাজমাউয যাওয়ায়েদে (৮/২১২) বলেছেন

رَوَاهُ أَبُو يَعْلى وَالطبَرَانِي فِي الْأَوْسَطِ بِاخْتِصَارٍ وَإِسْنَادُ أَبِي يَعْلى حَسَنٌ.

 

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

 

advertisement