শাওয়াল ১৪৪৬   ||   এপ্রিল ২০২৫

আমাদের দুর্দশার মূল কারণ

শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা

[গত ১২ রবিউল আখির ১৪৪৬ হি. উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত

الإسلام دين السلام والخير.

শিরোনামে একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন মুসলিম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইলমী ব্যক্তিত্ব শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা হাফিযাহুল্লাহু ওয়া রাআহু মজলিসে একাধিক মুসলিম রাষ্ট্রের আলেম ও গবেষক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন

উক্ত সেমিনারে শায়েখ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সারগর্ভ আলোচনা করেন শুরুতে আমাদের দুর্দশার মূল কারণ নিয়ে আলোকপাত করেন তারপর উজবেকিস্তানের  ইলমী ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরেন

ঈষৎ সংক্ষেপণ, লেখ্য ভাষায় রূপদান এবং জরুরি তথ্যসূত্র সংযোজনের পর আলকাউসারের পাঠকদের খেদমতে এর অনুবাদ পেশ করা হল

অনুবাদ করেছেন : মাওলানা আবু আনাস মুহাম্মাদ সালমান]

 

সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, তিনি আমাদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত, এর প্রচার-প্রসার এবং উম্মাহর সামনে ইসলামের সঠিক শিক্ষা তুলে ধরার জন্য এই বরকতময় মজলিসে একত্র করেছেন

সম্মানিত রাষ্ট্রপতি এবং সম্মেলনের আয়োজকদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি; আল্লাহ যেন তাদের এই আয়োজনকে কল্যাণকর বানিয়ে দেন

সম্মানিত হাজিরীন! ইতিমধ্যে আমরা ফিলিস্তিনে ইহুদীদের জুলুম-নির্যাতন ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ বিষয়ে অনেক কিছু শুনেছি, অনেক কষ্টের কথা জেনেছি আজ আমি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু কথা বলতে চাই এবং নিজেদের সম্পর্কে একটি কঠিন সত্য তুলে ধরতে চাই

আমরা যদি কুরআন কারীমের প্রতি দৃষ্টি দিই, তাহলে আমরা দেখি, আল্লাহ তাআলা সেখানে ইহুদীদের চিত্র তুলে ধরেছেন এভাবে তাদের ওপর লাঞ্ছনা ও দুর্দশা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে [দ্র. সূরা বাকারা (২) : ৬১] এবং তারা আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হয়েছে [দ্র. সূরা ফাতিহা (১) : ৭] 

কিন্তু কী আশ্চর্যের বিষয়, যাদের ওপর লাঞ্ছনা ও দুর্দশা আরোপ করা হয়েছে, তারা কীভাবে গোটা বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, এমনকি অপরাপর কাফের শক্তিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?

আমি নির্দিষ্ট করে কোনো দেশ বা জাতির নাম বলতে চাই না আমি বলব না, আমেরিকা বা ইংল্যান্ডকে ইহুদীরা নিয়ন্ত্রণ করছে, আমি বলব, কাফের গোষ্ঠীকে ইহুদীরা নিয়ন্ত্রণ করছে

এভাবে বলছি, কারণ লড়াই চলছে দুই শিবিরের মাঝে মুসলিম আর কাফের ভূখণ্ডভিত্তিক জাতীয়তার ভিত্তিতে কথা বললে মুসলিমদের স্বতন্ত্র পরিচয় হারিয়ে যায় যেমন কেউ বলল, আমি সিরীয় আর অমুক লেবানিজ বা আমি জর্ডানী আর সে ফিলিস্তিনী, তখন মুসলিম পরিচয় হারিয়ে যায়

বলছিলাম, ক্ষুদ্র ইহুদী গোষ্ঠী কাফের শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করছে তাই পশ্চিমা কিছু দেশ চাইলেও গাজার যুদ্ধ থামাতে পারছে না

এই নিষ্ঠুর জালেমদের বিরুদ্ধে আমরা কেবল অভিযোগ করেই ক্ষান্ত থাকি, কিন্তু আমাদের দুর্দশার মূল কারণ নিয়ে  আমরা ভাবতে চাই না কেন আমরা জুলুমের শিকার? কেন আমরা প্রতিকার করতে পারছি না?

উত্তর স্পষ্ট এই পরিণতির জন্য আমরাই দায়ী

আমার সম্মানিত ভাই ড. মুহিউদ্দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, আজ মুসলিম বিশ্ব পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন, পরস্পরের প্রতি বিমুখ, বৈরী ও বিভক্ত আমাদের প্রকৃত ব্যাধি আমাদের মধ্যেই নিহিত

আমি দুটি বক্তব্য তুলে ধরছি

প্রথমটি ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ ‘আলওয়ারা’ (الورع) কিতাবে বর্ণনা করেছেন এই ছোট কলেবরের কিতাবে তিনি সালাফের মূল্যবান কিছু উক্তি ও ঘটনা সংকলন করেছেন তিনি ইমাম সুফিয়ান সাওরী রাহিমাহুল্লাহর একটি কথা উল্লেখ করেছেন

إنما هلكنا إذ نحن سَقْمى.

আমরা রোগগ্রস্ত হওয়ার কারণেই ধ্বংস হয়েছি কিতাবুল ওয়ারা, ইমাম আহমাদ (আবু বকর মাররূযীর সূত্রে), বর্ণনা ৫৫৭

অর্থাৎ, আমাদের পাপের কারণেই আমাদের ওপর জালেমশাহী চেপে বসেছে আমাদের গুনাহ, আল্লাহর  বিধানের প্রতি অবহেলাই আমাদের দুর্দশার মূল কারণ

দ্বিতীয় কথাটি সাহাবী আবুদ দারদা রা. বলেছেন

তিনি মুসলিম নৌবাহিনীর সঙ্গে সাইপ্রাস (قبرس) অভিযানে অংশ নেন অনেক চেষ্টার পর মুসলিমরা এই দ্বীপ জয় করলে সবাই বিজয়ের আনন্দে উচ্ছ্বসিত হন কিন্তু আবুদ দারদা রা. কান্না করছিলেন তাবেয়ী জুবাইর বিন নুফাইর রাহ. বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন

يا أبا الدرداء! ما يبكيك في يوم أعز الله فيه الإسلام وأهله؟

ইসলাম ও মুসলমানের গৌরবের এই  দিনে আপনি কাঁদছেন?

তিনি উত্তর দিলেন

ما أهون الخلق على الله، إذا هم تركوا أمره، بينا هي أمة قاهرة ظاهرة لهم الملك، تركوا أمر الله عز وجل، فصاروا إلى ما ترى.

যখন কোনো জাতি আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করে, তখন তারা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ে দুশমনরা প্রতাপশালী রাজত্বের অধিকারী ছিল, কিন্তু আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় আল্লাহ আমাদেরকে বিজয় দান করেছেন সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর, বর্ণনা ২৬৬০; আযযুহদ, ইমাম আহমাদ, বর্ণনা ৭৬৩

দেখুন, কাফের রোমক জাতির সাথে আবুদ দারদা রা. ও তাঁর সঙ্গীরা তরবারী দিয়ে জিহাদ করেছেন, কিন্তু বিজয় লাভের পর এটা চিন্তা করে কাঁদছেনদুশমন আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় আল্লাহ তাদের পরাজিত করলেন’  তাদের প্রতি আল্লাহর আদেশ ছিল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ পেলে তোমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে কিন্তু তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি, তাঁকে সাহায্য করেনি আবুদ দারদা রা. হিকমতপূর্ণ বাক্য বলেছেন

ما أهون الخلق على الله إذا هم تركوا أمره.

যখন কোনো জাতি আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করে, তখন তারা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ে

সুতরাং নিজেদের দিকে তাকানো দরকার আমরা কি জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলছি?

আমাদেরকে ইলম শিখতে হবে, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, অধীনস্থ কর্মচারী ও আশপাশের সবাইকে ইলম শেখাতে হবে

রবীআ বিন যাইদ বলেন, আবুদ দারদা রা. বলতেন

اعمل عملا صالحا قبل الغزو، فإنما تقاتلون الناس بأعمالكم.

যুদ্ধের আগে নেক আমল করো, কারণ (সংখ্যা কিংবা অস্ত্রের জোর নয়) নেক আমল যুদ্ধের চালিকাশক্তি আযযুহদ, ইমাম আহমাদ, বর্ণনা ৭২৪

মুসলিমদের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক শুধু অভিযোগ করে লাভ নেই, নিজেদের এবং অধীনস্থদের হিসাব নিতে হবে, ভুল শুধরে নিতে হবে বলুন তো, আমরা আল্লাহর বিধান কতটুকু মেনে চলছি?

বিগত সময়ে দ্বীনের এমন কিছু মৌলিক ও প্রতিষ্ঠিত বিষয় ছিল, যা বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাই সম্মান করত যেমন কুরআনের মর্যাদা, আল্লাহর একত্ববাদ, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযমত-সম্মান কিন্তু আজ সবকিছু হেয় করার রেওয়াজ চালু হচ্ছে, এসব নিয়েও রীতিমতো অবজ্ঞা ও উপহাস করা হচ্ছে

এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য

الإسلام دين السلام و الخير.

ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম

আসসালাম’ (শান্তি ও নিরাপত্তা) ও ‘আলখায়ের’ (কল্যাণ) এই দুটি শব্দ গোটা ইসলামের সারমর্ম ধারণ করে শান্তি ও নিরাপত্তা কী, এটি অর্জনের উপায় কী, কল্যাণের উৎস কী এসব বোঝাতে হলে পুরো ইসলামকেই ব্যাখ্যা করতে হয়

(শান্তি ও কল্যাণের প্রকৃত উৎস পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রয়োজন সহীহ ইলম, তাই) বিশেষভাবে আজ এই দেশ (উজবেকিস্তানের ইলমচর্চার মহান ঐতিহ্য) নিয়ে কথা বলতে চাই, যা ইসলামী সভ্যতার গৌরবময় অংশ এই দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে কোনো না কোনো আলেম বা ইমামের পদচিহ্ন রয়েছে এই দেশ বহু আলেম জন্ম দিয়েছে, বহু ইমাম সফর করে এখানে এসেছেন সুতরাং এই অঞ্চলের গৌরব ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখুন এর অনন্য বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করুন এখানের ইলম ও তুরাছ-ঐতিহ্যকে পুনর্জীবিত করুন

ইসলাম সত্যিকার অর্থেই শান্তির ধর্ম ইতিহাসে আমরা এর প্রমাণ দেখতে পাই যখন কুছাম ইবনে আব্বাস রা. ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এই ভূখণ্ডে আসেন এবং এখানেই শাহাদাত বরণ করেন, তখন থেকে শত শত বছর ধরে এখানে ইসলাম বিকাশ লাভ করেছে (আলইসাবাহ, ইবনে হাজার আসকালানী ৫/৩২০) এই দেশের প্রতিটি পাথর কোনো না কোনো মহান আলেমের উপস্থিতির সাক্ষী হয়ে আছে

আপনারা সবাই ইমাম বুখারীর নাম জানেন এবং গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করেন এই উজবেকিস্তানের বুখারার দিকে সম্বন্ধ করেই ইমাম বুখারীকে ‘বুখারী’ বলা হয় মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ ফারাবরী বলেছেন, বুখারার বিখ্যাত কালান (كالان) মসজিদে নব্বই হাজার আলেম ইমাম বুখারীর কাছে তাঁর সংকলিত হাদীসগ্রন্থ ‘আলজামিউস সহীহ’ শুনেছেন! [তারীখে বাগদাদ, খতীব বাগদাদী ২/১০, তাকয়ীদুল মুহমাল ওয়া তাময়ীযুল মুশকিল, আবু আলী গাস্সানী (ওফাত ৪৯৮ হি.) ১/১৫]

চিন্তা করুন তো, নব্বই হাজার! এই দেশ তাদের পদচিহ্ন ধারণ করে আছে শুধু ইলমুল হাদীস নয়, তাফসীর, ফিকহ, ইলমুল কালাম; এখানে সব শাস্ত্রের বহু মনীষী জন্ম নিয়েছেন

ইমাম আবু মানসূর মাতুরীদীসহ অনেক ইমামের জীবনীতে পাবেন, তিনি (সমরকন্দের) ‘জাকারদীযাহ’ (جاكرديزه) কবরস্থানে শায়িত আছেন (দ্র. আলআনসাবের বিভিন্ন খণ্ডের তারাজিম, আততুহফাতুল লাতীফাহ ফী তারীখিল মাদীনাতিশ শারীফাহ, সাখাবী ১/৪৩২)

একসময় এখানের একটি কবরস্থান ‘তুরবাতুল মুহাম্মাদীন’ (تربة المحمدين) নামে পরিচিত ছিল যেখানে কেবল মুহাম্মাদ নামের আলেমদেরকেই দাফন করা হত সেখানে চার শ আলেমকে দাফন করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকের নাম ছিল মুহাম্মাদ এমনকি হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হিদায়া’র লেখক ইমাম মারগীনানীকেও সেখানে দাফন করা হয়নি, কারণ তাঁর নাম মুহাম্মাদ ছিল না! (আলজাওয়াহিরুল মুযিয়্যাহ ফী তাবাকাতিল হানাফিয়্যাহ, আবদুল কাদের কুরাশী ১/৭; আলআছমারুল জানিয়্যাহ ফী আসমাইল হানাফিয়্যাহ, মোল্লা আলী কারী ১/২৯২)

আল্লাহ এই দেশকে ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন এই দেশে ইসলামী ইলম ও তুরাছজ্ঞান ও ঐতিহ্যের গভীর শেকড় বিস্তৃত রয়েছে এই ভূমির ধূলিকণাও যেন ইলমের কথা বলে!

সম্মানিত শাসকবৃন্দ, সম্মানিত আলেমগণ, আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান, এই মহান তুরাছকে (সালাফের রেখে যাওয়া লাখো অমূূল্য গ্রন্থাবলির মীরাছ) পুনর্জীবিত করুন আমি নিজেকে এই মহৎ কাজের একজন কর্মী হিসেবে নিবেদন করতে প্রস্তুত রাষ্ট্রপ্রধানকে সাক্ষী রেখে বলছি, তিনি যদি তুরাছ পুনরুদ্ধারের কাজে নেতৃত্ব দেন, আমি তাঁর একজন সৈনিক হব

এই কাজে সফল হতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের প্রয়োজন আমানতদার, বিশ্বস্ত ও দক্ষ বিশেষজ্ঞ আলেমদের, যারা ইলম সংরক্ষণ ও গবেষণায় পারদর্শী হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, তারীখ-ইতিহাস প্রতিটি শাস্ত্রের তুরাছ যথাযথ পেশ করতে হলে যোগ্য গবেষক আলেমদের কাফেলা আবশ্যক, যারা সরাসরি মৌলিক সূত্র থেকে ইলম সংরক্ষণ ও প্রকাশ করতে পারবেন

আমাদের উচিত ইলমচর্চার মহান ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করা সমরকন্দ, নাসাফ, মার্ভের (مرو) মতো নগরী ইলমের অতুলনীয় বিদ্যাপীঠ ছিল এই ইতিহাস পুনরায় জীবন্ত করতে হবে, যেন আমরা পূর্বপুরুষদের গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারি তারা শুধু এই দেশের নয়, ইসলামের গর্ব ছিলেন

আসুন, এভাবে সবাই মিলে ইসলামের খেদমতে মনোনিবেশ করি, যাতে প্রতিভাত হয়, ইসলাম সত্যিই সর্বদিক থেকে, প্রকৃত অর্থে শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম; ইলম যার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ

আজও আরব শিক্ষার্থীরা আন্দালুস বা স্পেন সম্পর্কে পড়ে ইতিহাসে এটিকে ‘আলফিরদাউসুল মাফকূদ’ (الفردوس المفقود) বা ‘হারানো স্বর্গ’ বলে অভিহিত করা হয় স্মরণ করুন, মুসলিম মনীষীদের হাত ধরে আন্দালুস পুরো দুনিয়ায় ইলমের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিল

হকপন্থি মুসলিম এবং বাতিলপন্থি কাফেরদের পার্থক্য লক্ষ করুন আন্দালুসে বেদখল হয়ে যাওয়া শেষ মুসলিম নগরী ছিল ‘গারনাতাহ্’ বা গ্রানাডা শহর দখল করার পর খ্রিস্টান কমান্ডার মুসলিম মনীষীদের রচিত হাজার হাজার পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করল পাবলিক লাইব্রেরিগুলো থেকে লক্ষাধিক বই একত্র করে শহরের সবচেয়ে বড় চত্বর রামলায় এনে পুড়িয়ে ফেলল! (দাওলাতুল ইসলামি ফিল আন্দালুস ৫/৩১৬)

কথায় আছে

وبضدها تتميز الأشياء.

অন্ধকারে আলোর মূল্য বোঝা যায়!

এই কাফেরের ধ্বংসযজ্ঞের বিপরীতে ইসলামের জ্ঞান, নিদর্শন, মহিমা, শান্তি ও কল্যাণের পরিচয় বহনকারী মূল্যবান গ্রন্থগুলোর কথা চিন্তা করুন!

কত জ্ঞান, কত গবেষণা মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে ফেলল ওরা!

মুসলিমরা ছিল জ্ঞান ও সভ্যতার ধারক ও বাহক আর দখলদার খ্রিস্টান শক্তি ছিল জ্ঞান ও সভ্যতা ধ্বংসকারী

এই দেশের অতীত জ্ঞানচর্চার আরেকটি উদাহরণ দেই

সমরকন্দের নিকটবর্তী শহর মারগীনানে আবদুল আযীয বিন আবদুর রাযযাক নামের একজন মহান আলেম বাস করতেন তাঁর ছয় সন্তান ছিল এবং ছয়জনই আলেম ছিলেন! প্রত্যেকেই ফতোয়া প্রদানের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন যখন তিনি এই আলেম ছয় সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের হতেন, মানুষ বলত

سبعة من المفتين، خرجوا من دار واحدة!

এক ঘরের সাত মুফতী...! (আলআনসাব, সামআনী ১১/২৪৯; আলজাওয়াহিরুল মুযিয়্যাহ ২/৪৩৪)

আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি যেন ইসলামী সভ্যতার সেই গৌরব, মর্যাদা, শান্তি ও নিরাপত্তা এই দেশ এবং গোটা মুসলিম উম্মাহকে ফিরিয়ে দেন খাঁটি ইসলামের ছায়া ফিরিয়ে দেন; যে ইসলাম যুগের পরিবর্তনে বিকৃত হয় না, কোনো বিকৃত মতাদর্শের প্রভাবে যার রং বদলায় না; আদি ও চিরন্তন ইসলাম! আল্লাহ আমাদের সেই ইসলামকে আঁকড়ে ধরার তাওফীক দিন আমীন 

 

 

advertisement