সূরাসমূহের নামের অর্থ
কামরুল আনাম খান
(পূর্ব প্রকাশের পর)
৬৬। সূরা তাহরীম
‘তাহরীম’ (تَحْرِيْم) অর্থ হারাম করা। সূরার প্রথম আয়াতে এই تَحْرِيْم মাসদার বা ক্রিয়ামূল থেকে تُحَرِّمُ ফেয়েল বা ক্রিয়াপদ ব্যবহার হয়েছে।
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কারণ বশত একটি হালাল খাবারের ব্যাপারে বলেছিলেন, তিনি তা আর খাবেন না। সে ঘটনা সংক্ষেপে এ সূরার শুরুতে বর্ণিত হয়েছে। সূরাটির প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবীজীকে সম্বোধন করে বলেছেন–
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكَ.
‘আল্লাহ তাআলা যে জিনিস আপনার জন্য হালাল করেছেন, আপনি নিজের জন্য তা হারাম করলেন কেন?’
এ হিসেবেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা তাহরীম’।
৬৭। সূরা মুলক
‘মুলক’ (المُلْكُ) অর্থ রাজত্ব, ক্ষমতা। সূরাটির প্রথম আয়াতেই মুলক শব্দটি রয়েছে। সূরার শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
تَبٰرَكَ الَّذِیْ بِیَدِهِ الْمُلْكُ وَ هُوَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرُ، ن ِالَّذِیْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَ الْحَیٰوةَ لِیَبْلُوَكُمْ اَیُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا، وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْغَفُوْرُ.
মহিমাময় সেই সত্তা, যার হাতে গোটা রাজত্ব। তিনি সবকিছুর ওপর পরিপূর্ণ শক্তিমান। যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে, কর্মে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম। তিনিই পরিপূর্ণ ক্ষমতার মালিক, অতি ক্ষমাশীল। –আয়াত : ১-২
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত ‘মুলক’ (المُلْكُ) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা মুলক’।
৬৮। সূরা কলাম
‘কলাম’ (القَلَم) অর্থ কলম। সূরাটির শুরুতেই কলাম শব্দটি রয়েছে। তাতে আল্লাহ তাআলা কলমের শপথ করে ইরশাদ করেছেন–
نٓ وَالْقَلَمِ وَمَا یَسْطُرُوْنَ، مَاۤ اَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُوْنٍ، وَاِنَّ لَكَ لَاَجْرًا غَیْرَ مَمْنُوْنٍ، وَاِنَّكَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیْمٍ.
নূন। (হে রাসূল!) শপথ কলমের এবং তারা যা লিখছে তার। স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি উন্মাদ নও। নিশ্চয়ই তোমার জন্য আছে অনিঃশেষ প্রতিদান। এবং নিশ্চয়ই তুমি অধিষ্ঠিত আছো মহান চরিত্রে। –আয়াত : ১-৪
উক্ত আয়াতে ‘কলাম’ (القَلَم) বলে মানুষ ও ফেরেশতাগণের লেখার কলমকে বোঝানো হয়েছে।
মক্কার কাফেররা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো কখনো পাগল বলত (নাউযুবিল্লাহ)। এ সূরার শুরুতে আল্লাহ তাআলা কলম ও তা দিয়ে মানুষ ও ফেরেশতাগণ যা কিছু লেখেন তার শপথ করে কাফেরদের ওই কটুক্তির জবাব দিয়েছেন এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন– ‘তুমি উন্মাদ নও’।
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত ‘কলাম’ (القَلَم) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা কলাম’।
৬৯। সূরা হাক্কাহ
‘হাক্কাহ’ (الحَآقَّة) অর্থ অবশ্যম্ভাবী ঘটনা, সুনিশ্চিত বিষয়। সূরাটির প্রথম তিন আয়াতেই হাক্কাহ শব্দটি রয়েছে। তাতে ইরশাদ হয়েছে–
اَلْحَآقَّةُ، مَا الْحَآقَّةُ، وَ مَاۤ اَدْرٰىكَ مَا الْحَآقَّةُ.
অবশ্যম্ভাবী সত্য! কী সেই অবশ্যম্ভাবী সত্য? তোমার কি জানা আছে– সেই অবশ্যম্ভাবী সত্য কী? –সূরা হাক্কাহ (৬৯) : ১-৩
এখানে اَلْحَآقَّةُ তথা ‘অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার’ বলে কিয়ামতকে বোঝানো হয়েছে। এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা হাক্কাহ’।
৭০। সূরা মাআরিজ
‘মাআরিজ’ (المَعَارِج) শব্দটি মি‘রাজ (معراج) শব্দের বহুবচন। অর্থ, সিঁড়ি, সোপান, যার মাধ্যমে ওপরে ওঠা হয় ইত্যাদি। সূরাটির তৃতীয় আয়াতেই মাআরিজ শব্দটি রয়েছে। তাতে আল্লাহ তাআলার মর্যাদা বোঝাতে বর্ণিত হয়েছে– তিনি ذو المعارج । অর্থাৎ আল্লাহ ওপরে ওঠার পথসমূহের মালিক। এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা মাআরিজ’।
৭১। সূরা নূহ
আল্লাহ তাআলার মহান নবী হযরত নূহ আলাইহিস সালামের নামেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে। কারণ এ সূরায় নূহ আলাইহিস সালামের দাওয়াতী কার্যক্রম ও তাঁর দুআসমূহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সূরাটিতে একাধিকবার নূহ আলাইহিস সালামের নাম এসেছে। সূরার শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰی قَوْمِهٖۤ اَنْ اَنْذِرْ قَوْمَكَ مِنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ، قَالَ یٰقَوْمِ اِنِّیْ لَكُمْ نَذِیْرٌ مُّبِیْنٌ، اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اتَّقُوْهُ وَ اَطِیْعُوْنِ، یَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَ یُؤَخِّرْكُمْ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی اِنَّ اَجَلَ اللهِ اِذَا جَآءَ لَا یُؤَخَّرُ لَوْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম (এই নির্দেশ দিয়ে যে,) নিজ সম্প্রদায়কে সতর্ক কর তাদের প্রতি যন্ত্রণাময় শাস্তি আসার আগে। সে (নিজ সম্প্রদায়কে) বলল, আমি তো তোমাদের জন্য এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী। এই বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আল্লাহ তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বাকি রাখবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর স্থিরীকৃত কাল যখন এসে যায়, তখন আর তা বিলম্বিত হয় না, যদি তোমরা জানতে! –আয়াত : ১-৪
৭২। সূরা জিন
‘জিন’ (جنّ) দ্বারা উদ্দেশ্য জিনজাতি। এ সূরায় জিনদের একটি দলের কুরআন কারীম শোনা ও ঈমান আনা এবং অন্য জিনদের মধ্যে ঈমানের কথা প্রচার করার বিষয়টি বিবৃত হয়েছে। সূরার শুরুতেই ইরশাদ হয়েছে–
قُلْ اُوْحِیَ اِلَیَّ اَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوْۤا اِنَّا سَمِعْنَا قُرْاٰنًا عَجَبًا، یَّهْدِیْۤ اِلَی الرُّشْدِ فَاٰمَنَّا بِهٖ وَ لَنْ نُّشْرِكَ بِرَبِّنَاۤ اَحَدًا، وَّ اَنَّهٗ تَعٰلٰی جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَّ لَا وَلَدًا، وَّ اَنَّهٗ كَانَ یَقُوْلُ سَفِیْهُنَا عَلَی اللهِ شَطَطًا.
(হে রাসূল!) বলে দাও, আমার কাছে ওহী এসেছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে (কুরআন) শুনেছে অতঃপর (নিজ সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে) বলেছে, আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি; যা সঠিক পথ প্রদর্শন করে। সুতরাং আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি। এখন আর আমরা আমাদের প্রতিপালকের সাথে কখনো কাউকে শরীক করব না। এবং এই (বিশ্বাস করেছি) যে, আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সমুচ্চ। তিনি কোনো স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং কোনো সন্তানও নয়। এবং এই যে, আমাদের মধ্যকার নির্বোধেরা আল্লাহ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা বলত। –আয়াত : ১-৪
এ কারণেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা জিন’।
৭৩। সূরা মুয্যাম্মিল
‘মুয্যাম্মিল’ (المُزَّمِّل) অর্থ চাদরাবৃত, বস্ত্রাবৃত। সূরার প্রথম আয়াতেই শব্দটি রয়েছে। সূরাটির শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
یٰۤاَیُّهَا الْمُزَّمِّلُ، قُمِ الَّیْلَ اِلَّا قَلِیْلًا، نِّصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِیْلًا، اَوْ زِدْ عَلَیْهِ وَ رَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِیْلًا.
হে চাদরাবৃত! রাতের কিছু অংশ ছাড়া বাকি রাত (ইবাদতের জন্য) দাঁড়িয়ে যাও, রাতের অর্ধাংশ বা অর্ধাংশ থেকে কিছু কমাও। বা তা থেকে কিছু বাড়িয়ে নাও এবং ধীর-স্থিরভাবে স্পষ্টরূপে কুরআন তিলাওয়াত কর। –আয়াত : ১-৪
আয়াতে المُزَّمِّل তথা চাদরাবৃত বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা মুয্যাম্মিল’।
৭৪। সূরা মুদ্দাছছির
‘মুদ্দাছছির’ (المُدَّثِّر) অর্থও চাদরাবৃত, বস্ত্রাবৃত। সূরার প্রথম আয়াতেই শব্দটি রয়েছে। সূরাটির শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
یٰۤاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُ،قُمْ فَاَنْذِرْ،وَ رَبَّكَ فَكَبِّرْ.
হে বস্ত্রাবৃত! ওঠ এবং মানুষকে সতর্ক কর। এবং নিজ প্রতিপালকের তাকবীর বল। –আয়াত : ১-৩
এখানেও المُدَّثِّر তথা বস্ত্রাবৃত বলে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা মুদ্দাছছির’।
৭৫। সূরা কিয়ামাহ
‘কিয়ামাহ’ (القِیٰمَة) হল বাংলায় আমরা যে কিয়ামত বলি সেটাই। আরবী قيامة (কিয়ামাতুন) শব্দের শেষে ওয়াকফ করলে উচ্চারণ হয় কিয়ামাহ। সূরাটির প্রথম ও ষষ্ঠ আয়াতে কিয়ামাহ শব্দটি রয়েছে। সূরাটির শুরুতে আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসের শপথ করে তা যে অবশ্যই ঘটবে এবং সেদিনের অবস্থা কী হবে– তা বর্ণনা করেছেন। এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা কিয়ামাহ’।
৭৬। সূরা দাহর
‘দাহর’ (الدَّهْر) অর্থ যুগ, কাল, সময়। সূরার প্রথম আয়াতেই শব্দটি রয়েছে। সূরাটির শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
هَلْ اَتٰی عَلَی الْاِنْسَانِ حِیْنٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ یَكُنْ شَیْـًٔا مَّذْكُوْرًا، اِنَّا خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ اَمْشَاجٍ نَّبْتَلِیْهِ فَجَعَلْنٰهُ سَمِیْعًۢا بَصِیْرًا، اِنَّا هَدَیْنٰهُ السَّبِیْلَ اِمَّا شَاكِرًا وَّ اِمَّا كَفُوْرًا.
মানুষের ওপর কখনো এমন সময় এসেছে কি, যখন সে উল্লেখযোগ্য কোনো বস্তু ছিল না? আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য। তারপর তাকে বানিয়েছি শ্রবণকারী ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথ দেখিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে অথবা হবে অকৃতজ্ঞ। –আয়াত : ১-৩
অর্থাৎ মানুষের এমন একটা সময় ছিল, যখন তার অস্তিত্বই ছিল না। তারপরে আল্লাহ তাআলাই নিজ দয়ায় তাকে অস্তিত্ব দান করেছেন এবং পর্যায়ক্রমে সুগঠিত করেছেন। এর দ্বারা মানুষকে তার অস্তিÍত্বলাভের সূচনাপর্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতা ও শোকরগোযারীর আহ্বান করা হয়েছে।
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত দাহর (الدَّهْر) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা দাহর’।
৭৭। সূরা মুরসালাত
‘মুরসালাত’ (المُرْسَلٰت) শব্দটি মুরসালাতুন (مرسلة) শব্দের বহুবচন। অর্থ প্রেরিত, যা/যাকে পাঠানো হয়েছে। সূরার প্রথম আয়াতেই শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। তাতে আল্লাহ তাআলা প্রেরিত বাতাসের শপথ করেছেন। এর সঙ্গে আরও বিভিন্ন জিনিসের শপথ করে তারপরে কিয়ামতের অবশ্যম্ভাবিতার কথা বলেছেন।
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত মুরসালাত (المُرْسَلٰت) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা মুরসালাত’।
এ সূরায় অনেকবার একটি আয়াতের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। তা হল–
وَیْلٌ یَّوْمَىِٕذٍ لِّلْمُكَذِّبِیْنَ.
সেদিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
৭৮। সূরা নাবা
‘নাবা’ (النَّبَأ) অর্থ সংবাদ, খবর বা বিশেষ খবর, ঘটনা বা বিশেষ ঘটনা। সূরার দ্বিতীয় আয়াতেই শব্দটি রয়েছে। সূরার শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
عَمَّ یَتَسَآءَلُوْنَ، عَنِ النَّبَاِ الْعَظِیْمِ، الَّذِیْ هُمْ فِیْهِ مُخْتَلِفُوْنَ.
তারা (অর্থাৎ কাফেররা) কোন্ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? (তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে) সেই মহা ঘটনা সম্পর্কে, যে সম্বন্ধে তারা বিভিন্ন রকম কথা বলে। –আয়াত : ১-৩
এখানে النَّبَاِ الْعَظِیْمِ তথা মহা ঘটনা বলে কিয়ামতের কথা বোঝানো হয়েছে। সূরাটিতে কিয়ামত ও তার পরবর্তী পরিণতির কথা বিবৃত হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখিত নাবা (النَّبَا) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা নাবা’।
৭৯। সূরা নাযিয়াত
‘নাযিয়াত’ (النّٰزِعٰت) শব্দটি নাযিয়াতুন (نَازِعَةٌ) শব্দের বহুবচন। অর্থ, যে টেনে বের করে। এর দ্বারা জান কবজকারী ফেরেশতাদের বোঝানো হয়েছে, যারা (সাধারণত কাফেরদের) রূহ দেহ থেকে কঠোরভাবে টেনে বের করে। সূরার প্রথম আয়াতেই শব্দটি রয়েছে। সূরার শুরুতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন–
وَ النّٰزِعٰتِ غَرْقًا، وَّ النّٰشِطٰتِ نَشْطًا.
শপথ তাদের (অর্থাৎ সেই ফেরেশতাদের), যারা (কাফেরদের প্রাণ) কঠোরভাবে টেনে বের করে। এবং যারা (মুমিনদের প্রাণের) বন্ধন খোলে কোমলভাবে। –আয়াত : ১-২
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত নাযিয়াত (النّٰزِعٰت) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা নাযিয়াত’।
৮০। সূরা আবাসা
আরবী আলআবসু (العَبْس) শব্দের অর্থ ভ্রুকুঞ্চিত করা, অসন্তোষের চোখে তাকানো, মুখ ভার করা ইত্যাদি। সূরার প্রথম আয়াতে আলআবসু মাসদার থেকে ‘আবাসা’ (عَبَسَ) ফেয়েল ব্যবহৃত হয়েছে। কোনো এক প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার অসন্তোষ হয়ে ভ্রুকুঞ্চিত করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা সে বিষয়টির দিকে এ সূরার শুরুতে ইঙ্গিত করেছেন।
এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা আবাসা’।
৮১। সূরা তাকবীর
‘তাকবীর’ (تكوير) অর্থ ভাঁজ করা। সূরার প্রথম আয়াতে تكوير মাসদার বা ক্রিয়ামূল থেকে كُوِّرَتْ ফেয়েল বা ক্রিয়াপদ উল্লেখিত হয়েছে। এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা তাকবীর’। সূরার শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
اِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ.
যখন সূর্যকে ভাঁজ করা হবে। –আয়াত : ১
উক্ত আয়াতে এবং এর পরে আরও কিছু আয়াতে কিয়ামতের সময়কার অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।
৮২। সূরা ইনফিতার
‘ইনফিতার’ (انفطار) অর্থ ফেটে যাওয়া, বিদীর্ণ হওয়া। সূরার প্রথম আয়াতে انفطار মাসদার থেকে انْفَطَرَتْ ফেয়েল ব্যবহৃত হয়েছে। এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা ইনফিতার’। সূরার শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
اِذَا السَّمَآءُ انْفَطَرَتْ.
যখন আকাশ ফেটে যাবে। –আয়াত : ১
পূর্বের সূরার মতো এ সূরার শুরুতেও বেশ কিছু আয়াতে কিয়ামতের সময়কার অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।
৮৩। সূরা মুতাফফিফীন
‘মুতাফফিফূন’ (مطفّفون) শব্দটি মুতাফফিফুন (مطفّف) শব্দের বহুবচন। অর্থ, যে মাপে কমবেশ করে, যে সঠিকভাবে মাপে না। সূরার প্রথম আয়াতেই শব্দটি রয়েছে। সূরার শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
وَیْلٌ لِّلْمُطَفِّفِیْنَ، الَّذِیْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَی النَّاسِ یَسْتَوْفُوْنَ، وَ اِذَا كَالُوْهُمْ اَوْ وَّ زَنُوْهُمْ یُخْسِرُوْنَ،اَلَا یَظُنُّ اُولٰٓىِٕكَ اَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْن، لِیَوْمٍ عَظِیْمٍ، یَّوْمَ یَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعٰلَمِیْنَ.
বহু দুর্ভোগ আছে তাদের, যারা মাপে কম দেয়, যারা মানুষের নিকট থেকে যখন মেপে নেয়, পূর্ণ মাত্রায় নেয় আর যখন অন্যকে মেপে বা ওজন করে দেয়, তখন কমিয়ে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তাদেরকে এক মহা দিবসে জীবিত করে ওঠানো হবে? যেদিন সমস্ত মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে। –আয়াত : ১-৬
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত মুতাফফিফীন শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা মুত্বাফফিফীন’।
৮৪। সূরা ইনশিকাক
‘ইনশিকাক’ (انشقاق) অর্থ ফেটে যাওয়া, বিদীর্ণ হওয়া। সূরার প্রথম আয়াতে انشقاق মাসদার বা ক্রিয়ামূল থেকে انْشَقَّتْ ফেয়েল বা ক্রিয়াপদ উল্লেখিত হয়েছে। এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা ইনশিকাক’। সূরার শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
اِذَا السَّمَآءُ انْشَقَّتْ.
যখন আকাশ ফেটে যাবে। –আয়াত : ১
উক্ত আয়াতে এবং এর পরে আরও কিছু আয়াতে কিয়ামতের সময়কার অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।