শাওয়াল ১৪৪৬   ||   এপ্রিল ২০২৫

সূরা ওয়াকিয়ায় বর্ণিত আখেরাতে মানুষের তিনটি শ্রেণি

মাওলানা ফজলুদ্দীন মিকদাদ

আল্লাহ তাআলা সূরা ওয়াকিয়ায় ইরশাদ করেন

وَّ كُنْتُمْ اَزْوَاجًا ثَلٰثَةً، فَاَصْحٰبُ الْمَیْمَنَةِ مَاۤ اَصْحٰبُ الْمَیْمَنَةِ، وَ اَصْحٰبُ الْمَشْـَٔمَةِ مَاۤ اَصْحٰبُ الْمَشْـَٔمَةِ، وَ السّٰبِقُوْنَ السّٰبِقُوْنَ، اُولٰٓىِٕكَ الْمُقَرَّبُوْنَ.

(হে মানুষ!) তোমরা (কিয়ামতের দিন) বিভক্ত হবে তিন শ্রেণিতে ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! এবং বাম দিকের দল; কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! আর যারা অগ্রগামী, তারা তো অগ্রগামীই! তারাই আল্লাহর বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা আয়াত : ৭-১১

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষকে তাদের দুনিয়ার কর্মের বিচারে তিন দলে বিভক্ত করা হবে এক দল হল ডান দিকের দল বা ডান হাতবিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অর্থাৎ যাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেওয়া হবে এই দলে সাধারণ জান্নাতবাসী সকলে অন্তর্ভুক্ত আরেক দল হল বাম দিকের দল বা বাম হাতবিশিষ্টরা অর্থাৎ যাদের আমলনামা তাদের বাম হাতে দেওয়া হবে তারা হবে জাহান্নামবাসী আরেক দল হলেন যারা মর্যাদায় ডান দিকের দলের চেয়েও অগ্রগামী, আল্লাহর আরও বেশি নৈকট্যপ্রাপ্ত মূলত এই শ্রেণিটি প্রথোমক্ত ডান দিকের দল থেকেই বিশেষ ব্যক্তিগণের একটি শ্রেণি তারা সাধারণ জান্নাতীদের চেয়ে উচ্চ স্তরের জান্নাতে থাকবেন এ শ্রেণিতে থাকবেন নবীগণ, শহীদগণ, সত্যবাদীগণ ও আল্লাহর এমন নেক বান্দাগণ, দুনিয়ার জীবনে যাদের তাকওয়া-পরহেযগারী অনেক বেশি ছিল

এই শ্রেণি-বিভক্তি উল্লেখ করার পরে আখেরাতে কোন্ দল কী অবস্থায় থাকবে আল্লাহ তাআলা তাও উল্লেখ করেছেন প্রথমে বিশেষ নৈকট্যশীল বান্দাদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন

اُولٰٓىِٕكَ الْمُقَرَّبُوْنَ، فِیْ جَنّٰتِ النَّعِیْمِ، ثُلَّةٌ مِّنَ الْاَوَّلِیْنَ، وَ قَلِیْلٌ مِّنَ الْاٰخِرِیْنَ، عَلٰی سُرُرٍ مَّوْضُوْنَةٍ، مُّتَّكِـِٕیْنَ عَلَیْهَا مُتَقٰبِلِیْنَ، یَطُوْفُ عَلَیْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَ، بِاَكْوَابٍ وَّ اَبَارِیْقَ وَ كَاْسٍ مِّنْ مَّعِیْنٍ، لَّا یُصَدَّعُوْنَ عَنْهَا وَ لَا یُنْزِفُوْنَ، وَ فَاكِهَةٍ مِّمَّا یَتَخَیَّرُوْنَ، وَ لَحْمِ طَیْرٍ مِّمَّا یَشْتَهُوْنَ، وَ حُوْرٌ عِیْنٌ، كَاَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُوْنِ، جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ، لَا یَسْمَعُوْنَ فِیْهَا لَغْوًا وَّ لَا تَاْثِیْمًا، اِلَّا قِیْلًا سَلٰمًا سَلٰمًا.

তারাই আল্লাহর বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা তারা থাকবে নিআমতপূর্ণ উদ্যানে বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্য হতে সোনার তারে বোনা উঁচু আসনে তারা পরস্পর সামনা-সামনি হেলান দিয়ে থাকবে তাদের সামনে (সেবার জন্য) ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা, এমন পান-পাত্র, জগ ও প্রস্রবণ-নিসৃত স্বচ্ছ সুরা-পাত্র নিয়ে, যা পানে তাদের মাথা ব্যথা হবে না এবং তারা চেতনা হারাবে না এবং তাদের পছন্দমতো ফল নিয়ে এবং তাদের চাহিদামতো পাখির গোশত নিয়ে এবং তাদের জন্য থাকবে আয়তলোচনা হুর, যেন তারা লুকিয়ে রাখা মুক্তা তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তারা সে জান্নাতে শুনবে না কোনো অহেতুক কথা এবং না কোনো পাপের কথা তবে সেখানে হবে কেবল শান্তিপূর্ণ কথা, কেবলই শান্তিপূর্ণ কথা আয়াত : ১১-২৬

আল্লাহ তাআলা এই অগ্রগামী দল, তাদের মহত্ত-মর্যাদা ও তারা পরকালে যেসকল নিআমত লাভ করবে, সে সম্পর্কে কুরআন কারীমে একাধিক জায়গায় বিভিন্ন আয়াত নাযিল করেছেন এর মধ্যে উল্লেখিত আয়াতসমূহে তাদের সম্পর্কে বলছেন তারা আল্লাহ তাআলার বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা তারা পরকালে নিআমতপূর্ণ উদ্যানে থাকবেন সেখানে তাদের জন্য স্বর্ণ দিয়ে বানানো আসন থাকবে আরও থাকবে জান্নাতের প্রস্রবণ থেকে নিসৃত উপাদেয় পানীয়, পছন্দমতো ফলমূল, চাহিদামতো পাখির গোশত এবং সৌন্দর্যে মুক্তার মতো ঝলমলে তাদের স্ত্রীগণ তারা যখন যা চাবেন, অনায়াসে তা লাভ করবেন সেখানে তারা কোনো রকম কষ্টদায়ক কিছু শুনবেন না কেবল এমন কিছুই শুনবেন, যা চিত্ত প্রশান্তিকর কুরআনে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে যে, ফেরেশতাগণ তাদেরকে সর্বদিক থেকে সালাম দিয়ে সম্ভাষণ জানাবেন

তারপরে ডান দিকের দল বা ডান হাতবিশিষ্টগণ পরকালে কী অবস্থায় থাকবে তা বর্ণনা করে বলেন

وَ اَصْحٰبُ الْیَمِیْنِ مَاۤ اَصْحٰبُ الْیَمِیْنِ، فِیْ سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ، وَّ طَلْحٍ مَّنْضُوْدٍ، وَّ ظِلٍّ مَّمْدُوْدٍ، وَّ مَآءٍ مَّسْكُوْبٍ، وَّ فَاكِهَةٍ كَثِیْرَةٍ، لَّا مَقْطُوْعَةٍ وَّ لَا مَمْنُوْعَةٍ، وَّ فُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ، اِنَّاۤ اَنْشَاْنٰهُنَّ اِنْشَآءً، فَجَعَلْنٰهُنَّ اَبْكَارًا، عُرُبًا اَتْرَابًا، لِّاَصْحٰبِ الْیَمِیْنِ، ثُلَّةٌ مِّنَ الْاَوَّلِیْنَ، وَ ثُلَّةٌ مِّنَ الْاٰخِرِیْنَ.

আর যারা ডান দিকের দল, আহা, কেমন যে সে ডান দিকের দল! (তারা আয়েশে থাকবে) কাঁটাবিহীন কুল গাছের মাঝে এবং কাঁদি ভরা কলা গাছ, সুদূর বিস্তৃত ছায়া, প্রবহমান পানি এবং প্রচুর ফলমূলের ভেতর যা কখনো শেষ হবে না এবং যাতে কোনো বাধাও দেওয়া হবে না আর তারা থাকবে উঁচুতে রাখা ফরাশে নিশ্চয়ই আমি সে নারীদেরকে দিয়েছি নব উত্থান সুতরাং তাদেরকে বানিয়েছি কুমারী (স্বামীদের পক্ষে) প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা সবই ডান দিকের দলের জন্য আয়াত : ২৭-৩৮

জান্নাতীরা জান্নাতে কী কী নিআমত লাভ করবে, তা কুরআন কারীমে বহু সূরায় শত শত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে আর এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহস্রাধিক হাদীস তো বর্ণিত আছেই উল্লেখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা বিশেষ নৈকট্যশীলদের পর সাধারণ জান্নাতীদের সম্পর্কে বলছেন তাদের জন্য থাকবে বিভিন্ন রকমের প্রচুর ফলমূল, সুদূর বিস্তৃত মনোরোম ও আরামদায়ক ছায়া এবং প্রবহমান পানি এসব কিছুর কোনো ঘাটতি হবে না, কখনো শেষ হবে না এবং তাদেরকে তা ভোগ-উপভোগ করতে কখনোই কোনো প্রকার বাধা দেওয়া হবে না আর তাদের সঙ্গে থাকবেন তাদের প্রেমময়ী স্ত্রীগণ অর্থাৎ তারাও জান্নাতে সব রকম আরাম-আয়েশের মধ্যে থাকবেন

এরপরে আল্লাহ তাআলা বাম দলের বা যাদের বাম হাতে আমলনামা দেওয়া হবে, সেইসব পথভ্রষ্ট কাফের বেঈমানদের আখেরাতে কী অবস্থা হবে তা বর্ণনা করে বলেন

وَ اَصْحٰبُ الشِّمَالِ مَاۤ اَصْحٰبُ الشِّمَالِ، فِیْ سَمُوْمٍ وَّ حَمِیْمٍ، وَّ ظِلٍّ مِّنْ یَّحْمُوْمٍ، لَّا بَارِدٍ وَّ لَا كَرِیْمٍ، اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُتْرَفِیْنَ، وَ كَانُوْا یُصِرُّوْنَ عَلَی الْحِنْثِ الْعَظِیْمِ، وَ كَانُوْا یَقُوْلُوْنَ اَىِٕذَا مِتْنَا وَ كُنَّا تُرَابًا وَّ عِظَامًا ءَاِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ، اَوَ اٰبَآؤُنَا الْاَوَّلُوْنَ، قُلْ اِنَّ الْاَوَّلِیْنَ وَ الْاٰخِرِیْنَ، لَمَجْمُوْعُوْنَ اِلٰی مِیْقَاتِ یَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ، ثُمَّ اِنَّكُمْ اَیُّهَا الضَّآلُّوْنَ الْمُكَذِّبُوْنَ، لَاٰكِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِّنْ زَقُّوْمٍ، فَمَالِـُٔوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ، فَشٰرِبُوْنَ عَلَیْهِ مِنَ الْحَمِیْمِ، فَشٰرِبُوْنَ شُرْبَ الْهِیْمِ، هٰذَا نُزُلُهُمْ یَوْمَ الدِّیْنِ.

আর যারা বাম দিকের দল, কী হতভাগ্য সে বাম দিকের দল! তারা থাকবে উত্তপ্ত বায়ু ও ফুটন্ত পানিতে কালো ধোঁয়ার ছায়ায়; যা হবে, না শীতল, না উপকারী ইতিপূর্বে তারা ছিল আরাম-আয়েশের ভেতর অতি বড় পাপে অনড় থাকত এবং বলত, আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও অস্থিতে পরিণত হব, তখনো কি আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে? এবং আমাদের বাপ-দাদাদেরকেও, যারা পূর্বে গত হয়ে গেছে? বলে দাও, নিশ্চয়ই আগের ও পরের সমস্ত মানুষকে নির্দিষ্ট এক দিনের স্থিরীকৃত সময়ে একত্র করা হবে অতঃপর হে অবিশ্বাসী পথভ্রষ্টরা! অবশ্যই তোমরা এমন এক গাছ থেকে খাবে, যার নাম যাক্কুম অতঃপর তা দ্বারা উদর পূর্ণ করবে তদুপরি পান করবে ফুটন্ত পানি পানও করবে সেইভাবে, যেভাবে পান করে তৃষ্ণার রোগে আক্রান্ত উট এটাই বিচার দিবসে তাদের আপ্যায়ন আয়াত : ৪১-৫৬

আখেরাতে যাদের আমলনামা তাদের বাম হাতে দেওয়া হবে, সেই হতভাগ্য বাম দলের কী ভয়াবহ পরিণতি হবে সে কথাও আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন সূরার শতাধিক আয়াতে ইরশাদ করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অসংখ্য হাদীসে সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন উল্লেখিত আয়াতসমূহে বাম দলের নিয়তি সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের জন্য থাকবে জাহান্নামের উত্তপ্ত গরম বাতাস ও কালো ধোঁয়া এবং তারা পান করবে ফুটন্ত পানি সেই পানিও পান করবে এমনভাবে, যেভাবে তৃষ্ণার রোগে আক্রান্ত উট পান করে যে উট তৃষ্ণার রোগে আক্রান্ত হয়, তার কখনো তৃষ্ণা নিবারণ হয় না সেভাবে তারাও ফুটন্ত পানি পান করবে, তাতে তাদের নাড়িভুঁড়ি গলে যাবে, কিন্তু তৃষ্ণা মিটবে না এমনই ভয়াবহ পরিণতি জাহান্নামে ভোগ করতে হবে আল্লাত তাআলা আমাদেরকে বাম দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন

তারপরে এ সূরার শেষ দিকে আবার উক্ত তিন দলের কথা সংক্ষেপে এভাবে বর্ণিত হয়েছে

فَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِیْنَ، فَرَوْحٌ وَّ رَیْحَانٌ وَّ جَنَّتُ نَعِیْمٍ، وَ اَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنْ اَصْحٰبِ الْیَمِیْنِ، فَسَلٰمٌ لَّكَ مِنْ اَصْحٰبِ الْیَمِیْنِ، وَ اَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِیْنَ الضَّآلِّیْنَ، فَنُزُلٌ مِّنْ حَمِیْمٍ، وَّ تَصْلِیَةُ جَحِیْمٍ، اِنَّ هٰذَا لَهُوَ حَقُّ الْیَقِیْنِ، فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِیْمِ

অতঃপর সে (মৃত ব্যক্তি) যদি আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের একজন হয়, তবে (তার জন্য) শুধু আরাম, সুরভি ও নিআমতপূর্ণ জান্নাত আর যদি হয় ডান দিকের দলের অন্তর্ভুক্ত, তবে (তাকে বলা হবে যে,) তোমার জন্য রয়েছে শান্তি, যেহেতু তুমি ডান দিকের দলের অন্তর্ভুক্ত আর যদি হয় সেই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করত, তবে (তার জন্য আছে) ফুটন্ত পানির আপ্যায়ন আর জাহান্নামে প্রবেশ এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এটাই যথার্থ সুনিশ্চিত বিষয় সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নাম নিয়ে তাঁর তাসবীহ পাঠ কর

আয়াত : ৮৮-৯৬

অর্থাৎ আখেরাতে যারা ডান দলের এবং যারা মর্যাদায় তাদের চেয়েও অগ্রবর্তী হবে, উভয় দলই জান্নাতে মর্যাদাভেদে আরাম-আয়েশে থাকবে এবং সব ধরনের নিআমত লাভ করবে আর পরকালে যারা বাম দলের হবে তাদের দুর্ভোগের কোনো শেষ থাকবে না

সবশেষে আল্লাহ তাআলা বলছেন, এসব কিছু ঘটবেই, এতে কোনো সংশয়-সন্দেহ নেই কাজেই হে রাসূল! আপনি আপনার মহান প্রতিপালকের নাম নিয়ে তাঁর তাসবীহ পাঠ করতে থাকুন যদিও শেষোক্ত বাক্যে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করেছেন, কিন্তু তাসবীহ পাঠের নির্দেশনার ব্যাপকতায় সকল মানুষই অন্তর্ভুক্ত

সূরা ওয়াকিয়ায় আল্লাহ তাআলা আখেরাতে মানুষের যে তিন শ্রেণির কথা উল্লেখ করলেন, তা হল মৌলিক শ্রেণিভাগ এই প্রত্যেক শ্রেণির মধ্যেও আবার একাধিক স্তর থাকবে যেমন শুরুতে বলা হয়েছে, ‘আসসাবিকূন’ এটা আসহাবুল ইয়ামীন বা জান্নাতীদেরই একটি বিশেষ শ্রেণি ও সর্বোচ্চ স্তর আবার তাকওয়া ও পরহেযগারির ভিত্তিতেও জান্নাতীদের মধ্যে অনেক স্তর হবে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বলেছেন, যার মধ্যে যত বেশি তাকওয়া থাকবে, সে আল্লাহর কাছে তত বেশি মর্যাদাবান ইরশাদ হয়েছে

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقْنٰكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّ اُنْثٰی وَ جَعَلْنٰكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَآىِٕلَ لِتَعَارَفُوْا اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقٰىكُمْ  اِنَّ اللهَ عَلِیْمٌ خَبِیْرٌ.

হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলকে এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অন্যকে চিনতে পার প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান সে-ই, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু সম্পর্কে অবহিত সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১৩

অতএব দুনিয়াতে যে যত বেশি তাকওয়া অবলম্বন করবে, আখেরাতে আল্লাহ তাআলার কাছে তার তত বেশি মর্যাদা হবে এবং সে তত উঁচু স্তরের জান্নাতে থাকবে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের পরিচয় ও তারা যে আল্লাহর কতটা প্রিয়পাত্র এবং আখেরাতে তারা যে বহুবিধ নিআমত লাভ করবে তা কুরআন কারীমে বহু জায়গায় ইরশাদ করেছেন আখেরাতে মুত্তাকী বান্দাগণ যে জান্নাত ও নিআমত লাভ করবে, সেইরকম জান্নাত পাওয়ার জন্য অন্যদেরকে উৎসাহ দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বলেছেন

وَ سَارِعُوْۤا اِلٰی مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَ.

এবং নিজ প্রতিপালকের পক্ষ হতে মাগফিরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতুল্য তা সেই মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে... সূরা আলে ইমরান (০৩) : ১৩৩

আরও কিছু নেক আমল সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বিশেষ মর্যাদা ও আল্লাহর নৈকট্যলাভের কথা ইরশাদ করেছেন যেমন জিহাদ করা, ইসলামের সূচনালগ্নে ও সংকটকালে ইসলাম গ্রহণ করা, ইখলাসের সাথে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করাসহ আরও কিছু নেক আমল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে নফল আমলসহ আরও কিছু নেক আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর কারণে আল্লাহ তাআলা বান্দার মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দেন এবং বান্দা আল্লাহর নিকটবর্তী হতে থাকে

অতএব এভাবে নেক আমলের কমবেশি ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের ভিত্তিতে আসহাবুল ইয়ামীন বা ডান দিকের দল তথা জান্নাতীদের মধ্যে আবার অনেক শ্রেণি বা স্তর থাকবে

তেমনিভাবে কুফর, নিফাক ও বদ আমলের কমবেশির কারণে জাহান্নামীদের মধ্যেও বিভিন্ন স্তর থাকবে কুফর, নিফাক, ইরতিদাদ বা ধর্মত্যাগ, আল্লাহর প্রতি অন্যায় ও জুলুম, আল্লাহর পথে বাধা প্রদান, আল্লাহর বিধিবিধান বিকৃতি ইত্যাদি হল সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজ, যারা এগুলো করে, আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বহু জায়গায় তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন যারা এসব অভিশপ্ত কাজসহ আরও যেসব ভয়াবহ কবীরা গুনাহ রয়েছে, সেগুলো করবে, আল্লাহ তাআলার সঙ্গে হঠকারিতামূলক ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করবে এবং যে যত ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট গুনাহ করবে, সে তত ভয়াবহ আযাবের মধ্যে থাকবে যেমন মুনাফিকরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে মারাত্মক অন্যায় ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করেছিল, তাই তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বলেছেন, তারা সবচেয়ে ভয়াবহ জাহান্নামে থাকবে ইরশাদ হয়েছে

اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ فِی الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَ لَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِیْرًا.

নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে এবং তুমি তাদের পক্ষে কোনো সাহায্যকারী পাবে না সূরা নিসা (০৪) : ১৪৫

অন্যত্র আরও ইরশাদ হয়েছে

وَعَدَ اللهُ الْمُنٰفِقِیْنَ وَالْمُنٰفِقٰتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا هِیَ حَسْبُهُمْ وَلَعَنَهُمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِیْمٌ.

আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী এবং সমস্ত কাফেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাতে তারা সর্বদা থাকবে তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত বর্ষণ করেছেন আর তাদের জন্য আছে স্থায়ী শাস্তি সূরা তাওবা (০৯) : ৬৮

সুতরাং যার গুনাহের পাল্লা যত ভারী হবে, জাহান্নামে সে তত বেশি দুর্দশায় থাকবে

কুরআন কারীমে বর্ণিত আল্লাহ তাআলার এসকল সতর্কবাণী ও দিকনির্দেশনা জানার পরে আমাদের করণীয় হল, বাম দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া, সবক্ষেত্রে  আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করা এবং তাকওয়া ও পরহেযগারীতে প্রতিযোগিতা করে অগ্রগামী হওয়া যেন আখেরাতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আসহাবুল ইয়ামীনের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে ‘আসসাবিকূন’ তথা সবচেয়ে অগ্রগামীদের মধ্যে শামিল করে দেন

 

 

advertisement