এবার রমযানে দ্রব্যমূল্যের ভিন্ন চিত্র ॥ <br>
সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব
প্রতি বছর পবিত্র রমযানুল মুবারক এলেই নিত্য প্রয়োজনীয় এবং বহুল ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম হঠাৎ করেই আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই দ্রব্যমূল্য এত বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় থাকা দুর্নীতিবাজ লোকদের যোগসাজশে অতি মুনাফালোভী অসৎ কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে এমনটি করে আসছে বছরকে বছর। অথচ হওয়া উচিত ছিল এর উল্টো। রমযানে তুলনামূলক কম মুনাফা করে নিম্ন আয়ের লোকদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়া অবশ্যই মুসলমান ব্যবসায়ী সমাজের নৈতিক দায়িত্ব। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, এমন কাণ্ড বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং এই ধরনের অল্প কিছু দেশেই দেখা যায়। এটি তো অনেকেরই জানা যে, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোকদের বিশেষত খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসবের পূর্বে ওইসকল দেশে ব্যাপক মূল্যছাড়ে পণ্য বিক্রি করা হয়। শুধু অমুসলিমরাই নয়, বরং আরব রাষ্ট্রগুলোসহ পৃথিবীর আরও অনেক মুসলিম রাষ্ট্রেও পবিত্র রমযানে নিত্যপণ্যে ছাড় দেওয়া হয়। ব্যতিক্রম শুধু আমাদের মতো কিছু দেশ।
তবে বহু বছর পর এবার রমযানে দৃশ্য অনেকটা ব্যতিক্রম। একথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মূল্যস্ফীতির এ যুগে সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে দ্রব্যমূল্য সব সময় অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে আসছে। এর ওপর যদি অকারণে মুনাফাখোর কর্তৃক অস্বাভাবিক বাড়তি মূল্য নেওয়া হয়, তাহলে সেটি যে কত কষ্টকর– তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানেন।
সাধারণ মানুষের ভাষ্য হচ্ছে, এবার রমযানে অন্তত এমনটি ঘটেনি। এর থেকে একথা সুস্পষ্টই বোঝা যায়, সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সততা ও নিষ্ঠা থাকলে অনেক অপকর্মই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। একথা তো স্পষ্ট যে, সব ব্যবসায়ী খারাপ নন। সবাই দুর্নীতিবাজ বা অসৎ মুনাফাখোর নন। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির যোগসাজশে বাজার নিয়ন্ত্রণের যে প্রবণতা বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে এবং এবারও কয়েক মাস পূর্বে কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেটি যদি কঠোর হস্তে দমন করা যায়, তাহলে বিনা কারণে মূল্যবৃদ্ধির সাহস ভবিষ্যতেও কেউ করবে না– একথা সহজেই বলা যায়।
যাইহোক, ১৪৪৬ হিজরীর রমযানুল মুবারকে নিত্যপণ্যের মূল্য মোটামুটি স্বাভাবিক রাখার জন্য অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং ব্যবসায়ীগণ মোবারকবাদ পাওয়ার যোগ্য।
রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরানোর প্রত্যয়
॥ <br> আন্তরিকতার সাথে জোরদার তৎপরতা কাম্য
কদিন আগে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসসহ কক্সবাজার জেলায় অবস্থানরত মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের (রাখাইন) রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যান। সেখানে তারা কয়েক বছর থেকে শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করা রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাথে ইফতারিতে অংশগ্রহণ করেন।
সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস সেখানে তার বক্তব্যে বলেছেন, আগামী বছরে ঈদ রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী। সন্দেহ নেই, এই আশাবাদ লক্ষ রোহিঙ্গার মনেও আশার সঞ্চার করবে। নিজ দেশ ও বাড়ি-ভিটা থেকে বিতাড়িত এই মজলুম মানুষগুলো বছরকে বছর কতই না কষ্টের জীবনযাপন করছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রোহিঙ্গা সমস্যাটির সমাধানে সেভাবে তৎপরতা চালায়নি। বরং অনেকের মতে সুকৌশলে সেটিকে জিইয়ে রাখা হয়েছিল। আশার কথা যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ব্যক্তি রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তৎপরতা দেখাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এ তৎপরতা জোরদার ও অর্থবহ হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেই বলছে, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকবে না। কিন্তু তাদের স্বল্প মেয়াদের মধ্যেই যদি তারা রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করাতে পারেন, তাহলে সেটি হবে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এ তৎপরতা সফলতার মুখ দেখুক– এটিই সকল দরদি মানুষের প্রত্যাশা।