তলাবা-মুদাররিসীনের প্রতি হযরত নানূপুরী রাহ.
কয়েক বছর আগে রমযানুল মুবারকের শেষ দিকে হযরত নানুপুরী রাহ.-এর মুখ থেকে শোনা কিছু কথা তলাবা-মুদাররিসীনের খিদমতে আরজ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাকে ও সকল পাঠক-শ্রোতাকে ফায়েদা হাসিলের তাওফীক দিন।
১. নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ুন। তালিবে ইলমির যিন্দেগীতেও আকাবিরের তাহাজ্জুদ কাযা হত না।
২. নিয়মিত কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করুন।
৩. দৈনিক সালাতুত তাওবা পড়ুন।
৪. ‘মুনাজাতে মাকবুলে’র দুআগুলি নিয়মিত পাঠ করুন।
৫. গীবত থেকে বেঁচে থাকুন। কোনো মজলিসে গীবত হলে সেই স্থান ত্যাগ করুন। চবিবশ ঘণ্টা নিজের কথা চিন্তা করুন। নিজের মনকে বলুন, সবাই ভালো, আমি খারাপ।
৬. পত্রিকার খবর পড়ার দরকার নেই, নিজের খবর নিন।
৭. ইসলাহ ও আত্মশুদ্ধির জন্য কথা কম বলা ও মানুষের সাথে কম মেশা অপরিহার্য। আগের পরের সকল বুযুর্গ এ বিষয়ে একমত।
৮. নির্জনতা অবলম্বন করুন এবং প্রচারমুখিতা পরিত্যাগ করুন।
چند در كثرت نمائى خويش را ٭ يك زمانہ خانئہ وحدت بيا
ہنج كنج بے ددوبے دام نيست ٭ جزى بہ خلوت گاہ آرام نيست
৯. তাদরীসের সুযোগ হলে বিশেষ কোনো কিতাব দাবি করবেন না এবং ইশারা-ইঙ্গিতেও কোনো উস্তাযের নিন্দা করবেন না।
১০. রাতে উঠে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করুন, ইয়া আল্লাহ! তালিবে ইলমদের হক আদায়ের তাওফীক দাও, ইলমের, তালিবানে ইলমের এবং কিতাব ও মুসান্নিফদের হক তলফি থেকে আমাকে রক্ষা কর। ইয়া আল্লাহ! আমি অযোগ্য, আমার গুনাহর কারণে তালিবে ইলমদের মাহরূম করো না।
১১. সকল বিষয়ে অল্পেতুষ্টি ও মিতব্যয়িতা অবলম্বন করুন। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি না হওয়া চাই এবং কর্জ নেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা চাই।
১২. হোটেলে বা চায়ের স্টলে চা পানের অভ্যাস ভালো নয়। এটা আলিমের ভাব মর্যাদার পরিপন্থী। বরং চায়ের অভ্যাস করা থেকেই বিরত থাকুন। সম্ভব হলে অন্যকে পান করান, কেউ আপনাকে পান করাবে-এই অপেক্ষায় থাকবে না।
১৩. রাজনীতি ও নেতাগিরি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।
১৪. যে আলিমরা ময়দানে কাজ করছেন তাদের সমালোচনা করবেন না; বরং তাদের জন্য দুআ করুন।
১৫. বয়ান করতে হলে ‘সুন্নত’, ফাযায়েলে আমাল’ ও ‘মানাকিবে সাহাবা’ বিষয়ে বয়ান করুন। ‘ইখতিলাফি মাসায়েলে’র আলোচনা বয়ানে করা উচিত নয়।
১৬. আল্লাহর কাছে রোনাযারির সাথে এই দুআ করুন-
اللهم إني أعوذبك من شر سمعي ومن شر بصري ومن شر لساني ومن شر قلبي ومن شر منيي
তিনি বলতেন, এই দুআর তরতিব ও বিন্যাস চিন্তার দাবিদার। এই সকল বিষয়ের অনিষ্ট থেকে বাঁচা খুবই জরুরি।
১৭. আকাবিরের সাওয়ানেহ ও জীবনী পাঠ করুন এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করুন। কারণ তাঁরা ছিলেন সুন্নতের অনুসারী।
আজকের অবসরে এই কয়েকটি নসীহতই খুব সংক্ষেপে আরজ করলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।