ঈমানী আলোচনা কি শুধু মসজিদের জন্যই প্রযোজ্য?
প্রশ্ন : আমি আল্লাহর রহমতে দীর্ঘদিন যাবৎ তাবলীগ জামাতের মেহনতের সাথে জড়িত আছি। এই মেহনতের একটি বুনিয়াদি উদ্দেশ্য হল, উম্মতের ঈমান তাজা করা। হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. এই কাজকে 'তাহরীকে ঈমান' বা ঈমানী আন্দোলন বলতেন। এজন্যই এই মেহনতে ঈমান শেখা, ঈমানী হালকা কায়েম করে ঈমানী মুযাকারার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়। আমার জানার বিষয় হল, ঈমান শেখা এবং ঈমান মজবুত করার জন্য কি মসজিদের মধ্যেই ঈমানী হালকা কায়েম করা জরুরি? আল্লাহর রাসূল এবং সাহাবায়ে কেরাম কি সর্বদা মসজিদেই ঈমানী মুযাকারা করতেন? কারণ মাওলানা সা'দ সাহেব বিভিন্ন বয়ানে বলেছেন যে, ঈমান শেখার জায়গা হল মসজিদ। ঈমান শেখা, ঈমান বৃদ্ধির জন্য মসজিদে ঈমানী হালকা কায়েম করাকে তিনি শর্ত ও জরুরি আখ্যায়িত করে থাকেন। এই প্রসঙ্গে তিনি দলীল হিসেবে মুআজ ইবনে জাবাল রা., আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা., উমর ইবনে খাত্তাব রা. প্রমুখ সাহাবায়ে কেরামের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন যে, তাঁরা লোকজনকে ঈমানী মুযাকারার জন্য মসজিদে একত্রিত করতেন।
আমার প্রশ্ন হল, মাওলানা সা'দ সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য এবং পেশকৃত দলীলগুলো কি সঠিক? মসজিদের বাইরে ঈমানী হালকা করা কি সীরাত পরিপন্থী পদ্ধতি?
আহনাফ বিন আলী আহমাদ
ঝিলপাড়, পল্লবী
উত্তর : রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের সীরাত আমাদের সকলের জন্য আদর্শ ও অনুসরণীয়। তবে সীরাত থেকে কোনো উসূল ও বিধান উদ্ঘাটন করতে হলে বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি।
(এক) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সীরাতের সকল ঘটনা বা বর্ণনা একত্রিত করা।
(দুই) সংশ্লিষ্ট বর্ণনা বা ঘটনাসমূহ উসূলে হাদীসের আলোকে যাচাই-বাছাই করা এবং কোন্টা দলীল ও আমলযোগ্য এবং কোন্টা দলীল ও আমলযোগ্য না তা নির্ধারণ করা।
(তিন) সীরাত সংশ্লিষ্ট ঘটনা বা বর্ণনা দ্বারা যে উসূল ও বিধান প্রমাণ করা হচ্ছে, বাস্তবেই কি উক্ত বর্ণনা বা ঘটনা আলোচিত উসূল ও বিধানকে নির্দেশ করে? উসূলে ফিকহের আলোকে বিষয়টিকে ভালোভাবে যাচাই করা।
যদি কোনো ব্যক্তি উপরোক্ত তিনটি কাজ যথাযথ আঞ্জাম দিতে সক্ষম না হওয়া সত্ত্বেও একাকী সীরাত থেকে উসূল ও বিধান আহরণ করতে চায়, তাহলে প্রবল আশঙ্কা রয়েছে যে, সে বড় ধরনের ত্রুটির শিকার হবে এবং সীরাত অনুসরণের শিরোনামে সুন্নাহ বিরোধিতায় লিপ্ত হয়ে যাবে এবং তার দ্বারা নতুন নতুন বিদআতের আবিষ্কার হতে থাকবে। হয়তো কখনো কোনো একটি মুবাহকে খেলাফে সীরাত বলে দেবে। আবার অন্য মুবাহকে সরাসরি সীরাত বানিয়ে দেবে, যা নিঃসন্দেহে বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টির ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। যদি ঈমান শেখা, ঈমানী মুযাকারার জন্য ঈমানী হালকা কায়েম করা বিষয়ে সীরাতের সকল বর্ণনা একত্র করা হয়, তবে কখনোই এই কথা বলার অবকাশ নেই যে, ঈমানী হালকা কায়েম করার জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়া জরুরি। অনুরূপভাবে মাওলানা সা'দ সাহেব 'মসজিদেই ঈমান শিখতে হবে'— তার এ দাবিটিকে প্রমাণ করতে গিয়ে সীরাতের যেসব ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন, সেসব ঘটনার দ্বারাও কেবল মসজিদেই ঈমান শেখার বিষয়টি প্রমাণিত হয় না। বরং এক্ষেত্রে সঠিক কথা হল, ঈমান শেখা, ঈমানী মুযাকারা করা, ঈমানী হালকা কায়েম করা ইত্যাদি কাজগুলো যে কোনো স্থানেই হতে পারে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম ঘরে, বাইরে, মসজিদে, ময়দানে, সফরে যেখানেই সুযোগ পেতেন, ঈমানী মুযাকারা করতেন। হাদীস ও সীরাতের কিতাবে এই মর্মে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। স¦য়ং মুনতাখাব হাদীস এবং হায়াতুস সাহাবা কিতাবেই তো কত দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমরা উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি মাত্র বর্ণনা তুলে ধরছি। অতঃপর হযরত মাওলানা সা'দ সাহেবের পেশকৃত দলীলসমূহের পর্যালোচনা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।
ঘরের মধ্যে ঈমানী মুযাকারার কিছু দৃষ্টান্ত :
(১)
عَنْ رَجُلٍ مِنْ بَنِي عَامِرٍ، أَنَّه اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَأَلِجُ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِخَادِمِه: اخْرُجِي إِلَيْهِ فَإِنَّه لَا يُحْسِنُ الِاسْتِئْذَانَ، فَقُولِي لَه: فَلْيَقُلِ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ آدْخُلُ؟ قَالَ: فَسَمِعْتُه يَقُولُ ذلِكَ فَقُلْتُ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، آَدْخُلُ؟ قَالَ: فَأَذِنَ، أَوْ قَالَ: فَدَخَلْتُ، فَقُلْتُ: بِمَ أَتَيْتَنَا بِه؟ قَالَ: لَمْ آتِكُمْ إِلَّا بِخَيْرٍ، أَتَيْتُكُمْ أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه -قَالَ شُعْبَةُ: وَأَحْسِبُهُ قَالَ- وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه، وَأَنْ تَدَعُوا اللَّاتَ وَالْعُزَّى، وَأَنْ تُصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ خَمْسَ صَلَوَاتٍ، وَأَنْ تَصُومُوا مِنَ السَّنَةِ شَهْرًا، وَأَنْ تَحُجُّوا الْبَيْتَ، وَأَنْ تَأْخُذُوا مِنْ أَمْوَالِ أَغْنِيَائِكُمْ فَتَرُدُّوهَا عَلَى فُقَرَائِكُمْ، قَالَ: فَقَالَ: هَلْ بَقِيَ مِنَ الْعِلْمِ شَيْءٌ لَا تَعْلَمُه؟ قَالَ: قَدْ عَلِمَ اللهُ خَيْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَا يَعْلَمُه إِلَّا الله الْخَمْسَ : اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِ وَ یُنَزِّلُ الْغَیْثَ وَ یَعْلَمُ مَا فِی الْاَرْحَامِ وَ مَا تَدْرِیْ نَفْسٌ مَّا ذَا تَكْسِبُ غَدًا وَ مَا تَدْرِیْ نَفْسٌۢ بِاَیِّ اَرْضٍ تَمُوْتُ اِنَّ اللهَ عَلِیْمٌ خَبِیْرٌ.
বনু আমের গোত্রের এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইতে গিয়ে বলল, আমি কি ঢুকতে পারি? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খাদেমকে বললেন, তুমি বের হয়ে তাকে অনুমতি প্রার্থনার নিয়ম বলে দাও। সে যেন বলে, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি?
বনু আমের গোত্রের লোকটি বাইরে থেকেই এই কথা শুনে ফেলল। এবার সে সালাম দিয়ে অনুমতি চাইল। নবীজী তাকে অনুমতি দিলেন। সে বলল, আমি (নবীজীকে) বললাম, আপনি কী নিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন?
তিনি বললেন, আমি তোমাদের কাছে কেবল কল্যাণকর বিষয়াদিই নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের কাছে এসেছি এই পয়গাম নিয়ে যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, যাঁর কোনো শরীক নেই। এবং 'লাত' ও 'উযযা'-এর উপাসনা পরিত্যাগ করবে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে। প্রতি বছর রমযান মাসে সিয়াম পালন করবে। বাইতুল্লাহর হজ্ব করবে। তোমাদের ধনীদের সম্পদের কিছু অংশ নিয়ে তোমাদের গরীবদের দেবে।
সে বলল, গায়েবের এমন কোনো বিষয় কি আছে, যা আপনি জানেন না?
তিনি বললেন, আল্লাহ সমস্ত কল্যাণের বিষয় জানেন। আর গায়েবের পাঁচটি বিষয় এমন আছে, যেটা তিনি ছাড়া কেউ জানে না।
অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন—
اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِ وَ یُنَزِّلُ الْغَیْثَ وَ یَعْلَمُ مَا فِی الْاَرْحَامِ وَ مَا تَدْرِیْ نَفْسٌ مَّا ذَا تَكْسِبُ غَدًا وَ مَا تَدْرِیْ نَفْسٌۢ بِاَیِّ اَرْضٍ تَمُوْتُ اِنَّ اللهَ عَلِیْمٌ خَبِیْرٌ.
নিশ্চয়ই কিয়ামত(-এর ক্ষণ) সম্পর্কিত জ্ঞান কেবল আল্লাহরই কাছে আছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কী আছে। কোনো প্রাণী জানে না, সে আগামীকাল কী অর্জন করবে এবং কোনো প্রাণী এটাও জানে না যে, কোন্ ভূমিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত, সবকিছু সম্পর্কে পরিপূর্ণ খবর রাখেন। [সূরা লুকমান (৩১) : ৩৪]
—মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩১২৭
নূরুদ্দিন হাইছামী রাহ. বলেন—
رواه أحمد، ورجاله كلهم ثقات أئمة.
—মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৪৩, হাদীস ১২০
এই হাদীসে আমরা লক্ষ করলাম রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘরেই এক ব্যক্তিকে তাওহীদ এবং ঈমান বিল গায়েব-এর বিষয়াদি শিক্ষা দিয়েছেন।
(২)
عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي مَحْمُودُ بْنُ الرَّبِيعِ الأَنْصَارِيُّ، أَنَّ عِتْبَانَ بْنَ مَالِكٍ وَهُوَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا مِنَ الأَنْصَارِ أَنَّه أَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ قَدْ أَنْكَرْتُ بَصَرِي، وَأَنَا أُصَلِّي لِقَوْمِي فَإِذَا كَانَتِ الأَمْطَارُ سَالَ الوَادِي الَّذِي بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ، لَمْ أَسْتَطِعْ أَنْ آتِيَ مَسْجِدَهُمْ فَأُصَلِّيَ بِهِمْ، وَوَدِدْتُ يَا رَسُولَ اللهِ، أَنَّكَ تَأْتِينِي فَتُصَلِّيَ فِي بَيْتِي، فَأَتَّخِذَه مُصَلًّى، قَالَ: فَقَالَ لَه رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: سَأَفْعَلُ إِنْ شَاءَ اللهُ.
قَالَ عِتْبَانُ: فَغَدَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ حِينَ ارْتَفَعَ النَّهَارُ، فَاسْتَأْذَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَذِنْتُ لَه، فَلَمْ يَجْلِسْ حَتَّى دَخَلَ البَيْتَ، ثُمَّ قَالَ: أَيْنَ تُحِبُّ أَنْ أُصَلِّيَ مِنْ بَيْتِكَ، قَالَ: فَأَشَرْتُ لَه إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ البَيْتِ، فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَبَّرَ، فَقُمْنَا فَصَفَّنَا فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ، قَالَ: وَحَبَسْنَاهُ عَلَى خَزِيرَةٍ صَنَعْنَاهَا لَه، قَالَ: فَآبَ فِي البَيْتِ رِجَالٌ مِنْ أَهْلِ الدَّارِ ذَوُو عَدَدٍ، فَاجْتَمَعُوا، فَقَالَ قَائِلٌ مِنْهُمْ: أَيْنَ مَالِكُ بْنُ الدُّخَيْشِنِ أَوِ ابْنُ الدُّخْشُنِ؟ فَقَالَ بَعْضُهُمْ: ذلِكَ مُنَافِقٌ لاَ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَه، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ تَقُلْ ذلِكَ، أَلاَ تَرَاهُ قَدْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ، يُرِيدُ بِذَِكَ وَجْهَ اللهِ. قَالَ: اللهُ وَرَسُولُه أَعْلَمُ، قَالَ: فَإِنَّا نَرَى وَجْهَه وَنَصِيحَتَه إِلَى المُنَافِقِينَ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَإِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلূهَ إِلَّا اللهُ، يَبْتَغِي بِذلِكَ وَجْهَ اللهِ.
ইতবান ইবনে মালিক রা. একজন আনসারী সাহাবী ছিলেন। যিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর আমি আমার কওমের ইমামতি করি। যখন বৃষ্টিপাত হয় তখন আমার ও তাদের মধ্যকার উপত্যকা প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে আমি তাদের মসজিদে এসে নামায পড়াতে পারি না। হে আল্লাহর রাসূল! আমার আকাক্সক্ষা হল, আপনি যদি আমার ঘরে এসে নামায পড়তেন, তবে আমি সেই স্থানকে নামাযের স্থান বানিয়ে নিতাম।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি অবশ্যই যাব ইনশাআল্লাহ।
ইতবান রা. বলেন, পর দিন দ্বিপ্রহরের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. এলেন, নবীজী অনুমতি চাইলেন। তিনি ঘরে প্রবেশ করে কোথাও না বসে সরাসরি বললেন, ঘরের কোন্ অংশে আমি নামায পড়ি— তুমি চাও?
তিনি বলেন, আমি তাঁকে ঘরের একটি কোণার দিকে ইশারা করলাম। নবীজী তাকবীর দিয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও কাতারবদ্ধ হয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি দুই রাকাত নামায পড়ে সালাম ফেরালেন।
ইতবান রা. বলেন, আমি নবীজীর জন্য খাযীরা (এক প্রকার খাবার) প্রস্তুত করেছিলাম। তাই তাঁকে যেতে দিলাম না। ইত্যবসরে মহল্লার বহু লোক ঘরের মধ্যে একত্রিত হয়ে গেল। একজন বলল, মালিক ইবনে দুখশুন কোথায়? আরেকজন বলল, সে মুনাফিক। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সে পছন্দ করে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এসব কথা বলো না। তুমি কি দেখো না— সে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ বলেছে। ...যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে— لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ নেই) বলেছে, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৪২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৩
এই হাদীসে আমরা লক্ষ করলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীর ঘরে বসে সকলের সামনে 'তাওহীদের গুরুত্ব ও মর্যাদা' তুলে ধরেছেন।
(৩)
عَنْ عَامِرِ بْنِ وَاثِلَةَ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ عَلِيًّا: هَلْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسِرُّ إِلَيْكَ بِشَيْءٍ دُونَ النَّاسِ؟ فَغَضِبَ عَلِيٌّ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ وَقَالَ: مَا كَانَ يُسِرُّ إِلَيَّ شَيْئًا دُونَ النَّاسِ غَيْرَ أَنَّهُ حَدَّثَنِي بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ، وَأَنَا وَهُوَ فِي الْبَيْتِ، فَقَالَ: لَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَه، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ.
আমের ইবনে ওয়াছিলা রা. বলেন, এক ব্যক্তি আলী রা.-কে নিবেদন করল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকের অগোচরে কি আপনাকে কিছু বলে গেছেন? একথা শুনে ক্রোধে আলী রা.-এর চেহারা লাল হয়ে গেল। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার অগোচরে আমাকে কিছু বলে যাননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলে গেছেন; তখন আমরা ছিলাম ঘরের ভেতরে। তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার পিতাকে লানত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে লানত করেন। যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করে, আল্লাহ তাআলা তাকে লানত করেন। যে ব্যক্তি কোনো বেদআতীকে আশ্রয় দেয় আল্লাহ তাআলা তাকে লানত করেন। যে ব্যক্তি জমির চিহ্ন (সীমানা) এদিক-সেদিক করে, আল্লাহ তাআলা তাকে লানত করেন। —সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৪২২
এই হাদীসে আমরা স্পষ্ট দেখলাম যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের মধ্যেই হযরত আলী রা.-কে ঈমান-ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন। তন্মধ্যে গাইরুল্লাহর নামে জবাইয়ের কথাও এসেছে, যা স্পষ্ট শিরক।
(৪)
عَن مَعْبَدِ بْنِ هِلاَلٍ العَنَزِيِّ قَالَ: اجْتَمَعْنَا نَاسٌ مِنْ أَهْلِ البَصْرَةِ، فَذَهَبْنَا إِلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، وَذَهَبْنَا مَعَنَا بِثَابِتٍ البُنَانِيِّ إِلَيْهِ يَسْأَلُه لَنَا عَنْ حَدِيثِ الشَّفَاعَةِ، فَإِذَا هُوَ فِي قَصْرِه، فَوَافَقْنَاهُ يُصَلِّي الضُّحَى، فَاسْتَأْذَنَّا، فَأَذِنَ لَنَا وَهُوَ قَاعِدٌ عَلَى فِرَاشِه، فَقُلْنَا لِثَابِتٍ: لاَ تَسْأَلْهُ عَنْ شَيْءٍ أَوَّلَ مِنْ حَدِيثِ الشَّفَاعَةِ، فَقَالَ: يَا أَبَا حَمْزَةَ هَؤُلاَءِ إِخْوَانُكَ مِنْ أَهْلِ البَصْرَةِ جَاءُوكَ يَسْأَلُونَكَ عَنْ حَدِيثِ الشَّفَاعَةِ، فَقَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا كَانَ يَوْمُ القِيَامَةِ مَاجَ النَّاسُ بَعْضُهُمْ فِي بَعْضٍ، فَيَأْتُونَ آدَمَ، فَيَقُولُونَ: اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلكِنْ عَلَيْكُمْ بِإِبْرَاهِيمَ فَإِنَّه خَلِيلُ الرَّحْمنِ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ، فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُوسَى فَإِنَّه كَلِيمُ اللهِ، فَيَأْتُونَ مُوسَى فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلكِنْ عَلَيْكُمْ بِعِيسَى فَإِنَّهُ رُوحُ اللهِ، وَكَلِمَتُه، فَيَأْتُونَ عِيسَى، فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَأْتُونِي، فَأَقُولُ: أَنَا لَهَا، فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي، فَيُؤْذَنُ لِي، وَيُلْهِمُنِي مَحَامِدَ أَحْمَدُه بِهَا لاَ تَحْضُرُنِي الآنَ، فَأَحْمَدُه بِتِلْكَ المَحَامِدِ، وَأَخِرُّ لَه سَاجِدًا، فَيَقُولُ: يَا مُحَمَّدُ! ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ، أُمَّتِي أُمَّتِي، فَيَقُولُ: انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مِنْهَا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِه مِثْقَالُ شَعِيرَةٍ مِنْ إِيمَانٍ، فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ،...
(শাফাআত বিষয়ে এক দীর্ঘ বর্ণনায়) মা'বাদ ইবনে হেলাল আলআনাযী বলেন, আমরা বসরার অধিবাসী কয়েকজন একত্রিত হয়ে আনাস ইবনে মালেক রা.-এর কাছে গেলাম। আমাদের সাথে ছাবেত বুনানীকেও নিয়ে নিলাম। যাতে তিনি আমাদের পক্ষ হতে তাঁকে শাফাআতের হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন তিনি নিজ বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন। আমরা তাঁকে চাশতের নামায আদায়ে রত পেলাম। আমরা তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি আমাদের অনুমতি প্রদান করলেন। তিনি নিজ বিছানায় বসা ছিলেন। আমরা ছাবিতকে বললাম যে, তাঁকে শাফাআতের হাদীসের পূর্বে অন্য কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না। তখন তিনি বললেন, হে আবু হামযা! এই মানুষগুলো বসরার অধিবাসী আপনার কয়েকজন দ্বীনী ভাই। তাঁরা আপনার কাছে 'শাফাআতের হাদীস' সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছে। তখন তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষ একে অপরের মধ্যে তরঙ্গায়িত হবে— হয়রান-পেরেশান থাকবে। তারা হযরত আদম আলাইহি সালামের কাছে যাবে, বলবে, আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। তখন তিনি বলবেন, আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়; তোমরা ইবরাহীমের কাছে যাও। তিনি তো আল্লাহর খলীল ও বন্ধু। অতঃপর তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে যাবে। কিন্তু তিনিও বলবেন, আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়; তোমরা মূসার কাছে যাও। নিশ্চয়ই তিনি কালীমুল্লাহ। অতঃপর তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কাছে যাবে। তিনি বলবেন, আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়; তোমরা ঈসার কাছে যাও। নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রূহ এবং তাঁর কালিমা। তারা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে যাবে। তিনি বলবেন, 'আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়'; তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। তখন তারা আমার কাছে আসবে। তখন আমি বলব, আমিই এর উপযুক্ত। অতঃপর আমি আমার রবের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি প্রদান করা হবে। তিনি আমার অন্তরে এমন কিছু প্রশংসাবাণী উদয় করে দেবেন, যেটা বর্তমানে আমার জানা নেই। অতঃপর আমি সেইসব প্রশংসাবাণী দ্বারা আল্লাহর শোকর আদায় করব এবং তাঁর সমীপে সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি মাথা ওঠান। বলুন, আপনার কথা শোনা হবে। চাইতে থাকুন, আপনাকে দেওয়া হবে। সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে। আমি বলব, হে আমার রব! আমার উম্মত! আমার উম্মত!!
বলা হবে, আপনি যান এবং যার অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসুন। অতঃপর আমি গিয়ে আমার কাজ সম্পাদন করব।... —সহীহ বুখারী, হাদীস, ৭৫১০
উপরের বর্ণনাতেও আমরা দেখলাম, আনাস রা. নিজ বাসভবনে অবস্থান করেই লোকজনের সাথে ঈমানী মুযাকারা করেছেন।
(৫)
عَنْ يَعْلَى بْنِ شَدَّادٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي شَدَّادُ بْنُ أَوْسٍ، وَعُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ حَاضِرٌ يُصَدِّقُه، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: هَلْ فِيكُمْ غَرِيبٌ؟ يَعْنِي أَهْلَ الْكِتَابِ. فَقُلْنَا: لَا يَا رَسُولَ اللهِ. فَأَمَرَ بِغَلْقِ الْبَابِ، وَقَالَ: ارْفَعُوا أَيْدِيَكُمْ، وَقُولُوا: لَا إِلূهَ إِلَّا اللهُ فَرَفَعْنَا أَيْدِيَنَا سَاعَةً، ثُمَّ وَضَعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَه، ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ لِلهِ، اَللّٰهُمَّ بَعَثْتَنِي بِهذِهِ الْكَلِمَةِ، وَأَمَرْتَنِي بِهَا، وَوَعَدْتَنِي عَلَيْهَا الْجَنَّةَ، وَإِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ، ثُمَّ قَالَ: أَبْشِرُوا، فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ غَفَرَ لَكُمْ.
ইয়া'লা ইবনে শাদ্দাদ রাহ. বলেন, আমার পিতা শাদ্দাদ রা. আমাকে এই হাদীস শুনিয়েছেন আর হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রা. উপস্থিত থেকে তাকে সত্যায়ন করেছেন; তিনি বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। নবীজী বললেন, তোমাদের মধ্যে কোনো অপরিচিত অর্থাৎ আহলে কিতাব আছে কি? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রাসূল! অতঃপর তিনি দরজা বন্ধ করার হুকুম করলেন এবং বললেন, তোমরা হাত উঁচু করো এবং বল—
لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ.
(আমরা বললাম এবং) কিছুক্ষণ হাত উঁচু করে রাখলাম। অতঃপর নবীজী হাত নামালেন এবং বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এই কালেমাসহ প্রেরণ করেছ এবং আমাকে এই কালেমার হুকুম করেছ। সাথে সাথে তুমি এর ওপর আমার সাথে জান্নাতের ওয়াদা করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কর না। অতঃপর নবীজী বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো; আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। —মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭১২১
নূরুদ্দীন হাইসামী রাহ. বলেন—
رواه أحمد والطبراني والبزار، ورجاله موثقون.
—মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খ. ১, পৃ. ৯১
এই ঘটনা হায়াতুস সাহাবা কিতাবেও আছে। (দেখুন, মুআসসাসাতুর রিসালাহ থেকে প্রকাশিত হায়াতুস সাহাবা ৪/১০; দারুল কিতাব থেকে প্রকাশিত বাংলা হায়াতুস সাহাবা ৪/২৭৫-২৭৬)
এই হাদীসেও আমরা লক্ষ করলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের দরজা বন্ধ করে ঈমানের কালেমা—
لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ.
-এর ফযীলত ও মর্যাদা সাহাবায়ে কেরামের সামনে তুলে ধরেছেন এবং মাগফিরাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
(৬)
عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: جِئْتُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، وَالْعَبَّاسُ جَالِسٌ عَنْ يَمِينِه وَفَاطِمَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنْ يَسَارِهِ فَقَالَ : يَا فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُولِ اللهِ! -صلى الله عليه وسلم- اعْمَلِي لِلهِ خَيْرًا، إِنِّي لاَ أُغْنِي عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالَ: يَعْنِي ذلِكَ ثَلاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: يَا عَبَّاسَ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ! يَا عَمَّ رَسُولِ اللهِ! -صلى الله عليه وسلم- اعْمَلْ لِلهِ خَيْرًا، إِنِّي لاَ أُغْنِي عَنْكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ اللهِ شَيْئًا، قَالَهَا : ثَلاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: يَا حُذَيْفَةُ، ادْنُ، فَدَنَوْتُ، ثُمَّ قَالَ: يَا حُذَيْفَةُ! مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ وَآمَنَ، أَحْسَبُه قَالَ: بِمَا جِئْتُ بِه، إِلاَّ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ، وَوَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ،... قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ، أُسِرُّ هَذَا أَمْ أُعْلِنُهُ؟ قَالَ : أَعْلِنْهُ...
হুযাইফা রা. বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। তখন আব্বাস রা. তাঁর ডানে এবং ফাতেমা রা. তাঁর বামে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন নবীজী বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতেমা! তুমি আল্লাহর জন্য নেক আমল করো। নিশ্চয়ই আমি কিয়ামতের দিন আল্লাহর মোকাবেলায় তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।' এই কথা তিনি তিনবার বললেন।
তারপর বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূলের চাচা! আল্লাহর জন্য নেক আমল করুন। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর মোকাবেলায় কেয়ামতের দিন আপনার কোনো উপকার করতে পারব না।' এই কথাও তিনি তিনবার বললেন।
অতঃপর নবীজী বললেন, 'হে হুযাইফা! নিকটবর্তী হও। আমি নিকটে এলাম। তিনি বললেন, আরো কাছে আসো। আমি আরো কাছে এলাম। অতঃপর তিনি বললেন, হে হুযাইফা! যে সাক্ষ্য দেবে— আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল এবং আমি যেসব বিষয় নিয়ে এসেছি তার প্রতি ঈমান আনবে— আল্লাহ তার ওপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন এবং তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি একথা গোপন রাখব, না প্রকাশ্যে ঘোষণা দেব?
তিনি বললেন, তুমি একথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে পারো। —মুসনাদে বাযযার, হাদীস, ২৯১৯
এই হাদীসেও আমরা দেখতে পেলাম, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘরে বসেই ঈমান ও তাওহীদের গুরুত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরেছেন।
(৭)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، خَادِمِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: مَا فِي بَيْتِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا إِلَّا أَنَا وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، وَأَنَا يَوْمَئِذٍ ابْنُ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً، فَقَالَ رَسُولُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا أَبَا بَكْرٍ، لَيْتَ أَنِّي لَقِيتُ إِخْوَانِي، لَيْتَ أَنِّي لَقِيتُ إِخْوَانِي، فَإِنِّي أُحِبُّهُمْ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: يَا رَسُولَ اللهِ، نَحْنُ إِخْوَانُكَ، قَالَ: أَنْتُمْ أَصْحَابِي، إِخْوَانِي الَّذِينَ لَمْ يَرَوْنِي وَصَدَّقُونِي، وَأَحَبُّونِي حَتَّى إِنَّى لَأَحَبُّ إِلَى أَحَدِهِمْ مِنْ وَلَدِهِ وَوَالِدِه.
আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, আয়েশা রা.-এর ঘরে আমি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. ব্যতীত আর কেউ ছিল না। তখন আমার বয়স ছিল পনেরো। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'হায়! আমি যদি আমার ভাইদের সাক্ষাৎ পেতাম। হায়! আমি যদি আমার ভাইদের সাক্ষাৎ পেতাম। নিশ্চয়ই আমি তাদের ভালবাসি।'
তখন আবু বকর রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাই তো আপনার ভাই? তিনি বললেন, তোমরা আমার সাহাবী ও সঙ্গী। আমার ভাই হল তারা, যারা আমাকে দেখেনি, তবে আমাকে সত্যায়ন করেছে এবং আমাকে ভালবেসেছে। এমনকি আমি তাদের কারো নিকট তাঁর পিতা ও সন্তান থেকেও বেশি প্রিয়। —আলফাওয়াইদ, ইমাম ইবনে মাসী, পৃ. ৯৯, হাদীস ৩২
উপরোক্ত হাদীসেও আমরা লক্ষ করলাম, আম্মাজান আয়েশা রা.-এর ঘরে বসেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানী মুযাকারা করেছেন। যারা তাঁকে না দেখেই ঈমান এনেছে তাদের ফযীলত ও মর্যাদা তুলে ধরেছেন।
(৮)
عن حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيدٍ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غُرْفَةٍ وَنَحْنُ أَسْفَلَ مِنْهُ، فَاطَّلَعَ إِلَيْنَا، فَقَالَ: مَا تَذْكُرُونَ؟ قُلْنَا: السَّاعَةَ، قَالَ: إِنَّ السَّاعَةَ لَا تَكُونُ حَتَّى تَكُونَ عَشْرُ آيَاتٍ: خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ، وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ، وَخَسْفٌ فِي جَزِيرَةِ الْعَرَبِ، وَالدُّخَانُ، وَالدَّجَّالُ، وَدَابَّةُ الْأَرْضِ، وَيَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ، وَطُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا، وَنَارٌ تَخْرُجُ مِنْ قُعْرَةِ عَدَنٍ تَرْحَلُ النَّاسَ.
হুযাইফা ইবনে আসীদ রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কামরায় ছিলেন আর আমরা কামরার নিচে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ তিনি ওপর থেকে ঝুঁকে আমাদেরকে দেখলেন। বললেন, তোমরা কী বিষয়ে আলোচনা করছ? আমরা বললাম, কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি।
তিনি বললেন, কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না দশটি নিদর্শন প্রকাশ পাবে।... (অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দশটি আলামত তুলে ধরলেন।) —সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯০১
এই হাদীসেও আমরা লক্ষ করলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ কামরা থেকেই সাহাবাদেরকে ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়— 'কিয়ামতের আলামতসমূহ' শিক্ষা দিয়েছেন।
(৯)
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي خِدْرٍ لَه، فَقُلْتُ: أَدْخُلُ؟ فَقَالَ: ادْخُلْ. قُلْتُ: أَكُلِّي؟ قَالَ: ্রكُلُّكَগ্ধ، فَلَمَّا جَلَسْتُ، قَالَ: أَمْسِكْ سِتًّا تَكُونُ قَبْلَ السَّاعَةِ، أَوَّلُهُنَّ وَفَاةُ نَبِيِّكُمْ، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، وَفِتْنَةٌ تَدْخُلُ بَيْتَ كُلِّ شَعرٍ وَمَدَرٍ، وَأَنْ يَفِيضَ الْمَالُ فِيكُمْ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَتَسَخَّطَهَا، وَمُوتَانٌ يَكُونُ فِي النَّاسِ كَقُعَاصِ الْغَنَمِ، قَالَ: وَهُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الْأَصْفَرِ، فَيَغْدِرُونَ بِكُمْ فَيَسِيرُونَ إِلَيْكُمْ فِي ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا.
আওফ ইবনে মালিক আনসারী রা. বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। তখন তিনি তাঁর খাস কামরায় ছিলেন।
আমি বললাম, আমি কি অন্দরে প্রবেশ করতে পারি?
তিনি বললেন, প্রবেশ করো।
আমি বললাম, পুরো দেহসহ প্রবেশ করব?
তিনি বললেন, পুরো দেহসহ প্রবেশ করো।
অতঃপর যখন আমি বসলাম, তিনি বললেন, 'কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি ঘটনা স্মরণ রেখো, সর্বপ্রথম তোমাদের নবীর মৃত্যু হবে। অতঃপর বাইতুল মাকদিস বিজয় হবে। এমন ফেতনা সৃষ্টি হবে, যা প্রত্যেক কাঁচা-পাকা ঘরে প্রবেশ করবে। সম্পদের এত ছড়াছড়ি হবে যে, কাউকে এক শ দিনার দেওয়া হলেও সে রুষ্ট হবে। মানুষের মধ্যে মেষ-ছাগলের ব্যাধির ন্যায় ব্যাপক মহামারী হবে। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে এবং বনু আসফার (রোমক)-এর মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকার অধীনে তোমাদের দিকে অভিযান পরিচালনা করবে। প্রত্যেক পতাকার অধীনে বারো হাজার সৈন্য থাকবে। —মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৯৯৬
শায়েখ শুয়াইব আরনাউত রাহ. বলেন—
حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ.
উপরোক্ত হাদীসেও আমরা লক্ষ করলাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের খাস কামরাতেই তাঁর সাহাবীর সাথে ঈমানী মোযাকারা করেছেন। কিয়ামতের পূর্বে সংঘটিত কিছু আলামত তুলে ধরেছেন।
(১০)
عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ فِي قُبَّةٍ، فَقَالَ: أَتَرْضَوْنَ أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الجَنَّةِ؟ قُلْنَا: نَعَمْ، قَالَ: أَتَرْضَوْنَ أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الجَنَّةِ؟ قُلْنَا: نَعَمْ، قَالَ: أَتَرْضَوْنَ أَنْ تَكُونُوا شَطْرَ أَهْلِ الجَنَّةِ؟ قُلْنَا: نَعَمْ، قَالَ: وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه، إِنِّي لَأَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الجَنَّةِ، وَذلِكَ أَنَّ الجَنَّةَ لاَ يَدْخُلُهَا إِلَّا نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক তাঁবুতে প্রায় চল্লিশজন ছিলাম। নবীজী বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট যে, জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ তোমরা হবে?
আমরা বললাম, জী।
তিনি বললেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে, জান্নাতীদের এক তৃতীয়াংশ তোমরা হবে?
আমরা বললাম, জী।
অতঃপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই আমি আশাবাদী, সমস্ত জান্নাতবাসীদের অর্ধেক হবে তোমরা।
আর জান্নাত হল এমন স্থান, যেখানে মুসলিম ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করবে না। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৫২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২১
এখানেও আমরা দেখলাম, নবীজী একটি তাঁবুর মধ্যে সাহাবীদের সাথে ঈমানী আলোচনা করেছেন।
(১১)
عَنْ يُحَنَّسَ، أَنَّ حَمْزَةَ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ لَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ تَزَوَّجَ خَوْلَةَ بِنْتَ قَيْسِ بْنِ قَهْدٍ الْأَنْصَارِيَّةَ مِنْ بَنِي النَّجَّارِ قَالَ: وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزُورُ حَمْزَةَ فِي بَيْتِهَا، وَكَانَتْ تُحَدِّثُه عَنْهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَادِيثَ، قَالَتْ: جَاءَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، بَلَغَنِي عَنْكَ أَنَّكَ تُحَدِّثُ أَنَّ لَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَوْضًا مَا بَيْنَ كَذَا إِلَى كَذَا، قَالَ: أَجَلْ، وَأَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ أَنْ يَرْوَى مِنْهُ قَوْمُكِ.
ইউহান্নাস বলেন যে, হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. যখন মদীনায় আসলেন, তিনি বনু নাজ্জার গোত্রের নারী খাওলা বিনতে কায়স রা.-কে বিবাহ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযা রা.-এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তাঁর ঘরে আসতেন। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পক্ষ থেকে আমার কাছে এই সংবাদ পৌঁছেছে যে, আপনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন আপনার এমন একটি হাউয থাকবে। তার বিস্তৃতি হবে অমুক এলাকা থেকে অমুক এলাকা পর্যন্ত। তিনি বললেন, হাঁ! আর যারা এই হাউয থেকে তৃপ্ত হবে, তাদের মধ্যে আমার কাছে সবচে প্রিয় তোমার সম্প্রদায়।
—মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৩১৬
নূরুদ্দিন হাইছামী রাহ. বলেন—
رواه أحمد والطبراني، ورجال أحمد رجال الصحيح.
—মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/ ৩৬১
(১২)
عن خَوْلَةَ بِنْتَ قَيْسٍ تُحَدِّثُ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى حَمْزَةَ بَيْتَه، فَتَذَاكَرُوا الدُّنْيَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الدُّنْيَا خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، مَنْ أَخَذَهَا بِحَقِّهَا بُورِكَ لَه فِيهَا، وَرُبَّ مُتَخَوِّضٍ فِي مَالِ اللهِ وَمَالِ رَسُولِه لَهُ النَّارُ يَوْمَ يَلْقَى اللهَ.
খাওলা বিনতে কায়েস রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযা রা.-এর ঘরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর তারা দুনিয়া সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয় দুনিয়া সবুজ-সতেজ মিষ্ট স্থান। যে দুনিয়া সঠিকভাবে গ্রহণ করবে, তার জন্য এতে বরকত হবে। আর বহু লোক এমন আছে, যারা আল্লাহর সম্পদ এবং তাঁর রাসূলের সম্পদে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করে। তারা যখন আল্লাহর সামনে হাজির হবে, তাদের জন্য থাকবে জাহান্নাম। —মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৩১৭
শায়েখ শুআইব আরনাউত রাহ. বলেন—
حديث صحيح.
ওপরের দুটি ঘটনাতেও আমরা লক্ষ করলাম, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযা রা.-এর ঘরে গিয়েছেন এবং সেখানেই ঈমানী আলোচনা করেছেন।
ওপরের দুটি ঘটনাতেও আমরা লক্ষ করলাম, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযা রা.-এর ঘরে গিয়েছেন এবং সেখানেই ঈমানী আলোচনা করেছেন।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)