রজব ১৪৪৬   ||   জানুয়ারি ২০২৫

সিরিয়ায় স্বৈরাচারী বাশারের পতন ॥
শামবাসী ফিরে পাক তাদের হারানো ঐতিহ্য

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

অবশেষে দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর সিরিয়া থেকে একনায়ক ও স্বৈরাচারী আসাদ পরিবারের শাসনের সমাপ্তি ঘটল। গত ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশের হাসিনার মতোই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বাশার আলআসাদ। দামেশকসহ পুরো সিরিয়ার নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষরা স্বস্তির নিশ্বাস নিয়েছে সেদিন। একইসাথে আবারও প্রমাণিত হল, পৃথিবীর যেখানেই স্বৈরশাসকরা মাটি কামড়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য যতই কঠিন দূর্গ তৈরি করুক, সাধারণ জনগণের ওপর যতই নির্দয়তা ও নির্যাতন করুক, একদিন আগে বা পরে তাদের পতন অনিবার্য। আমরা তো হরহামেশাই এ ধরনের কথা বলতে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শেষের কয়েক বছরে এ ধরনের কথায়ও অনেকে সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠত। আর শেষের দিকে একই কারণে এমন অনেক লোকও হাসিনা বা আওয়ামী লীগের তাবেদার হয়ে উঠেছিল, যাদের ঐতিহ্যগতভাবে এ দল ও  তার নীতির সাথে বিরোধ রয়েছে। সম্ভবত তারা ভেবেছিল যে, হাসিনা ও তার দল তো স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসে গেছে; সুতরাং তাদের সাথে মিলেঝুলে চলাটাই ভালো। কিন্তু তাদেরকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে শুধু হাসিনাই পালিয়ে যাননি; বরং তার সাথে দলের সিনিয়র নেতারাও পালিয়েছেন। আজ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, মনে হয় এদেশে যুগ যুগ থেকে আওয়ামী লীগের কোনো চিহ্নই ছিল না। একই পরিস্থিতি সিরিয়াতে ঘটেছে। আমরা বাশার আলআসাদের পতনের কথা বলতে গিয়ে হাসিনার বিষয়টি টেনে এনেছি প্রাসঙ্গিক কারণেই। কারণ দুজনের মধ্যে বহু দিক থেকে মিল রয়েছে। সিরিয়ার স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছেন বাশারের পিতা হাফিয আলআসাদ। তিনি আমৃত্যু (২৯ বছর) জোরপূর্বক ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে ছিলেন। একই কাজ হাসিনার পিতা শেখ মুজিব সাহেব করেছেন ১৯৭৪ সালে একদলীয় বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা না ঘটলে তিনিও আমরণ নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চাইতেন, এতে কেউ দ্বিমত করবেন না। হাফিয আলআসাদের মৃত্যুর পর তার ছেলে বাশার ক্ষমতায় এসে প্রথমে কিছু শ্রুতিমধুর ও নরম নরম কথা বলেছেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই বাবার রূপ ধারণ করেছেন। মুজিবকন্যা হাসিনাও করেছেন একই কাজ। একদিকে হাসিনা যেমন বাংলাদেশকে তার পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিলেন। দেশের মানুষকে গোলাম-বাদী ভাবতে শুরু করেছিলেন। বিরোধীদের দমনের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে গুম, খুন ও দমন, পীড়ন করেছেন; একই পন্থা সিরিয়াতে অবলম্বন করেছেন বাশার আলআসাদ। এখানকার আয়নাঘর আর সেখানকার সেদনায়া কারাগারের কী অপূর্ব মিল! সীমাহীন দুর্নীতি ও দেশের লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দেওলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছিলেন হাসিনা ও তার লোকজন। সিরিয়াতেও একই কাজ করেছেন বাশার আলআসাদ ও তার অনুসারীরা। তাই সিরিয়ায় বাশার আলআসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়া শুধু শামবাসীর জন্যই স্বস্তির বিষয় নয়; বরং পুরো মুসলিম বিশ্ব এবং শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্যও এটি খুশির বার্তা। 

কীভাবে পতন হল বাশারের?

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলছিল এক যুগেরও বেশি আগ থেকে। তখন বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী সিরিয়ায় সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ ইউরোপ, আমেরিকা ও তুরস্কও এসব গোষ্ঠীকে আলাদা আলাদাভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে থাকে। অন্যদিকে রাশিয়া, ইরান ও ইরানপন্থী হিযবুল্লাহ গোষ্ঠী বাশার আলআসাদকে হরেক রকম সহযোগিতা দিয়ে যায়। চলতে থাকে সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বহুমুখী ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ। বারবার বিভিন্ন শহর বিদ্রোহীদের হাতে পতন ঘটে। পরে আবার কোনো কোনোটির পুনঃনিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় বাশার সরকার। তবে কয়েক বছর আগে একসময় মনে হয়েছিল, বাশারের মনে হয় বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলো নীতি পরিবর্তন করে আবার বাশারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। যার দরুন আরো কয়েক বছর টিকে যান বাশার আলআসাদ। কিন্তু সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থামেনি। বিদ্রোহী বিভিন্ন গোষ্ঠী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল দীর্ঘদিন থেকে।

নিবন্ধের শুরুতে আমরা বলেছি হাসিনা ও বাশারের বেশ কিছু বিষয়ের মিলের কথা। সেই মিল বাশারের পতনের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। হাসিনার পতনের মূল আন্দোলন হয়েছে দুই সপ্তাহের কিছু বেশি সময় ধরে। বাশারের পতনের মূল লড়াইও হয়েছে দুই সপ্তাহের মতো। সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর ‘হলবের’ নিয়ন্ত্রণ নিতে বিদ্রোহীদের কয়েকদিন সময় লাগলেও দেমাশকে কিন্তু তারা বিনা বাধাতেই প্রবেশ করেছেন। অর্থাৎ দম্ভ ও নিষ্ঠুরতায় স্বৈরশাসকরা যতই এগিয়ে থাকুক, বিদায়ঘণ্টা বেজে গেলে খুব অল্পতেই তাদের পতন ঘটে যায় এটা আবারও প্রমাণিত হল।

শেষ বিজয় এল কার মাধ্যমে?

হাইআতুত তাহরীর আশশাম সংক্ষেপে এইচটিএস এতদিন পর্যন্ত ছিল সিরিয়ার প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এখন তারা বৃহত্তর অংশের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক। এদের হাতেই পতন হয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দেমাশকের। এর আগে কয়েক দিনের মধ্যে তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে হলব, হামাদ ও হিমস এলাকার। আমরা যারা হাদীস, ফিকহ এবং ইসলামের অন্যান্য উলূম ও শাস্ত্রের সাথে পরিচিত। যারা এসব বিষয়ে আগেকার পণ্ডিতদের কিতাবাদি পড়ে থাকি। এসকল শহরের নাম তাদের কাছে অতি পরিচিত। শাম দেশের হলব, হিমস, দেমাশক এ শহরগুলো ইসলামী শাস্ত্রের যেকোনো শিক্ষার্থীর কাছে জানাশোনা নাম। আর এ এলাকাগুলো এবং এসব এলাকার উলামায়ে কেরাম, দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মুসলিম সমাজকেই ধ্বংস করেছে আসাদ পিতা-পুত্রের অপশাসন ও জুলুম-নির্যাতন।

যাইহোক, হাইআতুত তাহরীর আশশাম অত্যন্ত দ্রুততার সাথেই সিরিয়ার রাজধানী দেমাশকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। বাশারের রাষ্ট্রীয় বাহিনী রাজধানীতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি এবং বাধাও দেয়নি। এইচটিএস রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছেন বাশার আলআসাদ। এখানেও সে অসাধারণ মিল। বাশার গেছেন এতদিন পর্যন্ত তাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে অন্যায়ভাবে সকল সুবিধা দেওয়া রাশিয়া ও পুতিনের কাছে। ঠিক যেমন হাসিনা পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভারত ও নরেন্দ্র মোদির কাছে। বাশারের পতনে দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধে অনেকটা বিধ্বস্ত সিরিয়ার মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। ক্ষোভে-ঘৃণায় তারা বাশারের পিতা হাফিয আলআসাদের মূর্তিগুলো ভেঙে চুরমার করে। ঠিক যেমন বাংলাদেশে ঘটেছিল হাসিনা-পিতা শেখ মুজিবের মূর্তিগুলোর সাথে।

হাইআতুত তাহরীর আশশাম দেমাশকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রথমে কয়েক দিন হয়তোবা কৌশলগত কারণে বাশারের প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা চালিয়ে যেতে বলেছিল। এরপর তারা অস্থায়ী সরকার গঠন করে। যার প্রধান করা হয় এতদিন পর্যন্ত ইদলীব অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনাকারী মুহাম্মাদ আলবাশীরকে।

কারা এই এইচটিএস?

এইচটিএস বা হাইআতুত তাহরীর আশশাম, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘সিরিয়া মুক্তি সংস্থা’, অনেক বছর থেকেই দেশটিতে সক্রিয় রয়েছে। এর প্রধান আহমাদ আলজোলানী। যার আসল নাম বলা হচ্ছে আহমাদ হুসাইন আশশার‘। তিনি কিছুদিন দায়েশ তথা আইসিসের সদস্য ছিলেন বলে জানা যায়। এরপর তিনি আলকায়েদার সাথে যুক্ত হন এবং সিরিয়ায় আলকায়েদার একটি শাখা সংস্থা গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে সে সংস্থা বাদ দিয়ে তিনি গঠন করেন হাইতুত তাহরীর আশশাম। আর ঘোষণা দিয়ে জানান দেন যে, তারা এখন আর আলকায়েদার কোনো শাখা নন। তার সংস্থাটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন।

বিভিন্ন সময়ে নাম শোনা হলেও এ সংস্থা বা ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমরা তেমন অবগত নই। তাই তাদের চিন্তাধারা ও কর্মপন্থা কী বা কেমন হবে তা জানার জন্য হয়তো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, স্বৈরাচারী একনায়ক বাশারের পতনে এইচটিএসের ভূমিকা ও অবদান ছিল অনন্য ও ঐতিহাসিক। সিরিয়া নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোর ক্ষমতাবানেরা এবং আন্তর্জাতিক বড় বড় শক্তি অনেক দিন পর্যন্ত নিজ নিজ স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে অনেক খেল খেলেছে। বস্তুত এদের বহুমুখী মতলবী অপতৎরতাও এ ঐতিহ্যবাহী মুসলিম দেশটির বর্তমান করুণ পরিণতির জন্য বহুলাংশে দায়ী। বর্তমানে আসাদ পরিবারের ক্ষমতার সমাপ্তি ঘটলেও ঐ শক্তিগুলো কিন্তু থেমে নেই। প্রত্যেকেই চাচ্ছে, যার যার মতো করে নিজের মতলব সিরিয়ায় বাস্তবায়ন করতে। সেজন্য এইচটিএস ও তার নেতার সাথেও তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যোগাযোগ স্থাপন করছে বলে শোনা যায়। এ পরিস্থিতিতে আহমাদ হুসাইন আশশার‘ বা আবু মুহাম্মাদ আলজোলানীর কর্মকৌশল কেমন হবে, সেদিকে নজর থাকবে নিপীড়িত মুসলিম দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষদের। সন্দেহ নেই, একটি চরম যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যার বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো কয়েকটি বিবদমান গোষ্ঠী ক্ষমতা আঁকড়ে রয়েছে, সে দেশটিকে ঐক্যবদ্ধ করা, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা, কাঙিক্ষত ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এসব বড় চ্যালেঞ্জের সাথে সাথে মধ্যপ্রাচ্যের ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সাথে দৃঢ়তা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়াও তাদের জন্য এখন সুকঠিন বিষয়। তাই আমাদের দুআ করে যেতে হবে, আল্লাহ তাআলা যেন এইচটিএস ও তার নেতাদের সুবুদ্ধি দান করেন। ইস্তিকামাত ও দৃঢ়তার নিআমতে ধন্য করেন। ইসলাম ও উম্মাহ স্বার্থে হকের ওপর অটল রাখেন। ঐতিহ্যবাহী এ মুসলিম দেশটি যেন আবারও ফিরে পায় তার হারানো গৌরব।

ইসরাইল ও সিরিয়া প্রসঙ্গ

সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়নের সময় এখনো পুরোপুরি আসেনি। সবকিছু বুঝে ওঠার জন্য হয়তো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তাই আমরা আজকের নিবন্ধকে দীর্ঘায়িত না করে প্রাসঙ্গিক আরো দুয়েকটি কথা বলেই ইতি টানব।

একদিকে হাইআতুত তাহরীর আশশাম-এর হাতে দেমাশকের পতন ঘটেছে। দুই যুগ ক্ষমতায় থাকা বাশার আলআসাদ সপরিবারে পালিয়েছে। অন্যদিকে সিরিায়াবাসী ও মুসলিম বিশ্বের জন্য দুঃসংবাদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জায়নবাদী ইসরাইল। ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নির্দেশে ইসরাইলী বাহিনী গোলান পাহাড়ি অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ তো নিয়েছেই, সাথে সাথে তারা সিরিয়ার অভ্যন্তরে দেমাশকের দিকে অনেকটা পথও অগ্রসর হয়েছে। অন্যদিকে তারা ধ্বংস করে যাচ্ছে সিরিয়ার বড় বড় ও মূল্যবান অস্ত্রাগারগুলো। জালেম ইসরাইলের এ অপতৎপরতা বাশারের পতনে সিরিয়াবাসী ও বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের মুখে ফুটে ওঠা হাসি অনেকখানি ম্লান করে দিয়েছে। এ নিয়ে এইচটিএস সম্পর্কে অনেকে বিরূপ মন্তব্যও করে যাচ্ছে। কেন তারা ইসরাইলকে ফেরাচ্ছে না। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে মূল্যায়নের জন্য আরো অপেক্ষা করা দরকার। কারণ হাইআতুত তাহরীর আশশাম সবেমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত ও বিবদমান বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত একটি দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় তারা ইসরাইলের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর জন্য কতটুকু প্রস্তুত তাও ভাবনার বিষয়। তাই ইসরাইল বিষয়ে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী হয় সেটি দেখার জন্য অপেক্ষা করা দরকার। তবে অদূর ভবিষ্যতে জায়নবাদীদের সাথে তাদের যে চূড়ান্ত বোঝাপড়ায় যেতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সকলের দুআ করা দরকার, সে পরীক্ষায় যেন এইচটিএস সুদৃঢ় থাকে এবং সফলকাম হয়। আল্লাহ তাআলা যেন শাম থেকেই জালেম ইসরাইলের ধ্বংসের সূচনা করেন। আমাদেরকে গাজাবাসী, হামাস ও ফিলিস্তিনীদের জন্য যেভাবে দুআ চালিয়ে যেতে হবে, তেমনি শামবাসীদের জন্যও দুআ অব্যাহত রাখতে হবে। বহুদিন পর সিরিয়াবাসী তাদের মাথার ওপর উড়ে এসে জুড়ে বসা সংখ্যালঘু কট্টর ‘উলূবী গোষ্ঠী’ আসাদ পরিবার ও তার অনুসারীদের (যারা প্রকৃত অর্থে মুসলমান নয়) নিপীড়ন, নির্যাতনের জাঁতাকলে আবদ্ধ ছিল। এখন সবেমাত্র সেটি থেকে তারা নিস্তার পেয়েছে। তাদের এ আনন্দ ও সুখ-শান্তির নিঃশ্বাস যেন ইসরাইল বা অন্য কেউ ম্লান করে দিতে না পারে।

প্রসঙ্গ : হাদীসে নববী

সিরিয়া বা শাম সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিভিন্ন হাদীস রয়েছে। বাশার আলআসাদের পতনের পর অনেকেই নতুন করে সেগুলোর চর্চা করছেন। আমরা আজ সে হাদীসগুলো ইচ্ছা করেই উদ্ধৃত করা থেকে বিরত থাকছি। আসলে বিভিন্ন হাদীসে যে সুসংবাদ ও ঘটনাপ্রবাহের কথা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করে গেছেন, সেগুলোতে কিন্তু সুনির্ধারিতভাবে কোনো সময় বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ নেই। তাই সবকিছু স্পষ্ট হওয়ার আগে কোনো একটি ক্ষেত্র বা গোষ্ঠীর সাথে হাদীসে নববীকে সম্পৃক্ত করে দেওয়া সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ নয়। কারণ যদি হাদীসকে সঠিক জায়গা ও ক্ষেত্রের সাথে সম্পৃক্ত করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অনেকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিরও সৃষ্টি হতে পারে। শুধু শাম নয়; বরং গযওয়াতুল হিন্দ-এর হাদীসসহ আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রেও কিছু হাদীসে নববীর অপাত্রে ও অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায় কারো কারো মধ্যে। আমরা মনে করি, এসব ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়া দরকার।

আল্লাহ তাআলা সিরিয়ার মুসলমানদের, সেদেশের নিপীড়িত মজলুম ভাইবোনদের রক্ষা করুন। তাদের আগামী দিনগুলো ইসলামের সাথে সুন্দর ও শান্তিময় করুন। ভবিষ্যত ক্ষমতাবান ও দায়িত্বশীলদের হিকমাহ, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে অগ্রসর হওয়া এবং দেশ পরিচালনার তাওফীক দান করুন। ঐতিহ্যবাহী এ মুসলিম দেশটির হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিন আমীন।

 

 

advertisement