মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না
গত শতাব্দীর পৃথিবীতে আলো ছড়ানো এক মনীষী—মাওলানা সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবার জুমার নামাযের কিছুক্ষণ আগে তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন। সারা জীবন যেমন আলো ছড়িয়েছেন মাওলানা নদভী, তাঁর মৃত্যুর দৃশ্যটিও ছিল তেমনি হৃদয়ছোঁয়া। জুমার নামাযের প্রস্তুতির জন্যে খাদেম এসে গোসল করিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি স্বাভাবিক অভ্যাস মোতাবেক সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবেন। কিন্তু কুরআন কারীম হাতে নিয়ে তিলাওয়াত শুরু করলেন সূরা ইয়াসীন। ১১তম আয়াতটি যখন তিলাওয়াত করলেন—
اِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَ خَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَّ اَجْرٍ كَرِيْمٍ.
[অর্থাৎ তুমি কেবল তাকেই সতর্ক করতে পারবে, যে কুরআন অনুসরণ করে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে ভয় করে, তাই তাকে তুমি ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের সুসংবাদ দাও]—তখনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এ মনীষী! ভাবা যায়, কত সুন্দর মৃত্যু! আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আগত ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের সুসংবাদ পড়তে পড়তে চলে গেলেন আল্লাহ তাআলারই সান্নিধ্যে। এমন মৃত্যু কে না চায়!
মৃত্যু যাদের এমন নেক হালতে হয়, তাদের জন্যে স্বভাবতই আমরা এক সুন্দর সমৃদ্ধ পরকালের আশা করি। কিন্তু মৃত্যু তো আমাদের কারো হাতে নয়। মৃত্যু থেকে আমাদের কারো যেমন পালিয়ে থাকার অবকাশ নেই, তেমনি সুযোগ নেই নিজে নিজে মৃত্যুকে জড়িয়ে ধরার। মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। এ নির্ধারিত সময়েই প্রতিটি মানুষকে, প্রতিটি জীবকে গ্রহণ করতে হবে মৃত্যুর স্বাদ। এ মৃত্যু হচ্ছে সীমাহীন আখেরাতের প্রবেশদ্বার। মৃত্যুটা যদি সুন্দর হয়, নেক হালতে হয়, আশা করা যায়, আখেরাতের জীবনটাও সুন্দর হবে। আর এ তো বলাবাহুল্য— একজন মুমিনের কাছে সুন্দর মৃত্যু মানেই ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু। ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুই হচ্ছে একজন মুমিনের দুনিয়ার জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার মানদণ্ড। শেষটা যদি সুন্দর হয়, মৃত্যুটা যদি ঈমানের হালতে হয়, তবেই মুমিনের জীবন সফল। এ সফলতার সামনে দুনিয়ার শত অপ্রাপ্তি বঞ্চনা ও ব্যর্থতা নিতান্তই তুচ্ছ। প্রশ্ন হল, এ সুন্দর মৃত্যু পাওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি? পবিত্র কুরআন আমাদেরকে এ পথনির্দেশিকাই দিয়েছে—
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ.
হে মুমিনেরা! তোমরা আল্লাহকে পরিপূর্ণরূপে ভয় করো আর মুসলিম না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। —সূরা আলে ইমরান (০৩) : ১০২
মুমিনদেরকে ডেকে আল্লাহ তাআলা এখানে দুটি উপদেশ দিয়েছেন—
এক. আল্লাহকে পরিপূর্ণরূপে ভয় করো।
দুই. মুসলিম না হয়ে কেউ মরো না।
মৃত্যুর সময় যেহেতু আমাদের কারোই জানা নেই, তাই এখানে এমন অর্থ করা যাবে না— মৃত্যুর আগে তোমরা সকলে মুসলমান হয়ে যেয়ো। এটাও সম্ভব নয়— মৃত্যু দেখে কেউ ইসলাম গ্রহণ করবে, কিংবা কোনো মুসলিম তার যাবতীয় পাপ ও মন্দ কাজ থেকে তওবা করে নেবে। মৃত্যু যখন চলে আসবে, তখন তো আর এ সুযোগটুকু পাওয়া যাবে না। তাই তাফসীরকারদের কাছে এর স্বীকৃত অর্থ— জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই তোমরা মুসলিম হিসেবে কাটাও। এ অর্থে আয়াতের বাক্যদুটি একে অন্যের পরিপূরক, সমার্থক। পরিপূর্ণরূপে ভয়ের অর্থই হচ্ছে— সাধ্যের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করা; জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তাআলার যত আদেশ ও নিষেধ তার সবগুলো পালন করা; কখনোই আল্লাহ তাআলার কোনো হুকুম অমান্য না করা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মুসলিম হিসেবে কাটানোর জন্যও এগুলো অপরিহার্য। আল্লাহ-রাসূল-কিতাব-পরকাল ইত্যাদি বিষয়গুলোতে কেবল বিশ্বাস স্থাপন করাই একজন মুসলিমের জন্যে যথেষ্ট নয়: বরং জীবনজুড়ে এ বিশ্বাসের প্রতিফলনও জরুরি। আল্লাহ তাআলার দেওয়া বিধান ও শরীয়ত মেনে চলার মাধ্যমেই আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হতে পারে এ বিশ্বাস। তাই আয়াতের দুই বাক্যে উপদেশ মূলত একটাই। এ উপদেশটা মেনে চললে, স্বাভাবিক কথা, মৃত্যু আমাদের সুন্দর হবে।
দুর্বল মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে— দিবানিশি সারাক্ষণ কি সম্ভব আল্লাহ তাআলার হুকুম মেনে চলা? যে কোনো মুহূর্তে আমরা কোনো বিধানের কথা ভুলে যেতে পারি, শয়তানের প্ররোচনায় লঙ্ঘিত হতে পারে যে কোনো আদেশ। তাহলে কী করে সম্ভব আল্লাহ তাআলাকে পরিপূর্ণরূপে ভয় করা এবং প্রতিটি মুহূর্ত মুসলিম হিসেবে কাটানো? সূরা নিসায় আল্লাহ তাআলা এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন—
اِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَي اللهِ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السُّوْٓءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِيْبٍ فَاُولٰٓىِٕكَ يَتُوْبُ اللهُ عَلَيْهِمْ وَ كَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا.
তওবা, যা কবুল করা আল্লাহর দায়িত্বে, তা তো তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে, এরপর দ্রুতই তওবা করে। আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। —সূরা নিসা (০৪) : ১৭
বোঝাই যাচ্ছে, ভুলবশত কোনো অন্যায় হয়ে যাওয়ার পর যখনই কেউ তওবা করবে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন। ভুল করার পর যখন কেউ অনুতপ্ত মনে লজ্জাবনত হয়ে ফিরে আসে, আল্লাহর দরবারে এবং কৃত পাপের জন্য ক্ষমা চায়, তওবা ও ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তাআলা তখন তাকে অভাবনীয় পুরস্কারে পুরস্কৃত করেন।
পবিত্র কুরআনের আরেকটি আয়াত—
اِلَّا مَنْ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓىِٕكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّاٰتِهِمْ حَسَنٰتٍ.
তবে যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও নেক আমল করে, আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে নেকিতে পরিবর্তন করে দেন। —সূরা ফুরকান (২৫) : ৭০
তওবা যে কেউ যে কোনো সময় করতে পারে। এর জন্য কোনো আয়োজন লাগে না। যে কোনো মুহূর্তে মনে মনে নিজের কৃত গোনাহের জন্যে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত এবং ভবিষ্যতে সে পাপ কাজটি আর না করার প্রতিজ্ঞা করলেই তওবা হয়ে গেল। এক মুহূর্তের তওবাতেই ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যেতে পারে পেছনের দীর্ঘ জীবনের যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা। তবে যারা তওবার জন্য মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকবে, মৃত্যু আসলেই তওবা করে নেবে বলে ভাববে, তাদের জন্যে উচ্চারিত হয়েছে কঠোর সতর্কবাণী—
وَ لَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّاٰتِ حَتّٰي اِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ اِنِّيْ تُبْتُ الْـٰٔنَ وَ لَا الَّذِيْنَ يَمُوْتُوْنَ وَ هُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓىِٕكَ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا.
তওবা তাদের জন্য নয়, যারা মন্দ কাজ করে চলে, অবশেষে যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলে, আমি এখন তওবা করলাম এবং তাদের জন্যও (তওবা) নয়, যারা কাফের অবস্থায় মারা যায়। তাদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। —সূরা নিসা (০৪) : ১৮
সূরা আলে ইমরানের উপরোক্ত আয়াতে যে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ইসলামী বিধিবিধান মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কেউ যখন তা প্রতিপালন করতে সক্ষম হবে, তখন তার নিরেট পার্থিব বিষয়গুলোও হয়ে উঠবে অফুরন্ত নেকির একেকটি উৎস। কোনো মুমিনের জীবনে যখন তাকওয়া থাকে, তখন তার দুনিয়াদারিও শুধু দুনিয়ার বিষয় থাকে না, তা দ্বীনের অংশ হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ ব্যবসার কথা বলি। ব্যবসা তো দুনিয়াতে নিজের ও অধীনস্থদের জীবিকা নির্বাহের জন্যই। সে হিসেবে এ তো নিরেট একটি পার্থিব বিষয়। কিন্তু একজন মুমিন ব্যবসায়ী যখন ব্যবসা করতে গিয়েও আল্লাহর কথা স্মরণ রাখবে, তাঁর দেওয়া বিধিবিধান মেনে চলবে, তখন এ ব্যবসাও হতে পারে তার মুমিন জীবনের সফলতার মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْاَرْضِ وَ ابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَ اذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.
(জুমার) নামায যখন শেষ হয়ে যায়, তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর দয়া (অর্থাৎ রিযিক) তালাশ করো এবং আল্লাহর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করো, যেন তোমরা সফল হতে পার। —সূরা জুমা (৬২) : ১০
সফলতার এ ঘোষণা পাক কুরআনের। আগের আয়াতে বলা হয়েছে— যখন জুমার আযান হয় তখন ব্যবসা গুটিয়ে দ্রুত নামাযে যাও। আর এ আয়াতে বলা হয়েছে— নামায যখন শেষ হয় তখন আবারও ব্যবসায় লেগে যাও, তবে আল্লাহর কথা মনে রেখো, এতেই তোমাদের সফলতা।
এ তো গেল টাকা উপার্জনের প্রসঙ্গ। টাকা ব্যয়ের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে—
وَ مَا تُنْفِقُوْنَ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللهِ وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ يُّوَفَّ اِلَيْكُمْ وَ اَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ.
তোমরা তো কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই খরচ কর; তোমরা যে সম্পদই খরচ কর তোমাদের তা(র প্রতিদান) পূর্ণরূপে দেওয়া হবে এবং তোমাদের ওপর জুলুম করা হবে না। —সূরা বাকারা (০২) : ২৭২
আমরা আমাদের সম্পদ তো কত উপলক্ষেই খরচ করি। দ্বীনী কোনো কাজে সহযোগিতা, ঈসালে সওয়াব, সদকায়ে জারিয়া ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে যেমন টাকা খরচ করি, আবার নিজের ও নিজের অধীনস্থদের প্রয়োজন মেটাতেও টাকা খরচ করি। আয়াতের ভাষ্য হল— দ্বীনী কাজে টাকা খরচ করলে যেমন এর প্রতিদান পাওয়া যাবে, নিজের ও নিজের অধীনস্থদের প্রয়োজনে টাকা খরচ করলেও পরকালে এর প্রতিদান পাওয়া যাবে। শর্ত একটাই— উপার্জন ও খরচ হতে হবে আল্লাহ তাআলার বিধান মেনে। বলাবাহুল্য, আল্লাহর বিধান মেনে ব্যয় করলেই কেবল তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি আশা করা যায়।
হাদীস শরীফে তো আরো স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে—
دِينَارٌ أَنْفَقْتَهٗ فِى سَبِيلِ اللهِ، وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهٗ فِى رَقَبَةٍ، وَدِينَارٌ تَصَدَّقْتَ بِهٖ عَلَى مِسْكِينٍ، وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهٗ عَلٰى أَهْلِكَ أَعْظَمُهَا أَجْرًا، الَّذِى أَنْفَقْتَهٗ عَلَى أَهْلِكَ..
একটি দিনার তুমি আল্লাহর পথে (জিহাদে) ব্যয় করলে, আরেকটি দিনার তুমি গোলাম আজাদ করার জন্য ব্যয় করলে, আরেকটি দিনার একজন মিসকীনকে দান করলে আর একটি দিনার তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করলে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে সেটিতেই, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করলে। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৯৫
এভাবেই একজন মুমিনের পুরো জীবনটাকেই কল্যাণকর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজের ও পরিবারের চাহিদা মেটানো, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করাটাও ইসলামে পুণ্যের কাজ বলে বিবেচিত। এমনকি পেশাব-পায়খানার মতো একান্ত মানবীয় প্রয়োজনগুলোও যখন শরীয়তের বিধান মেনে পূরণ করা হয়, সুন্নতে নববীর অনুসরণ করা হয়, তখন সেখানকার সময়টুকুও দ্বীনের অনুসরণেই অতিবাহিত হয়। অথচ দুনিয়াতে এর চেয়ে দৃষ্টিকটু জায়গা কি আর কিছু আছে?
এর বিপরীত দিকটিও অবশ্য-লক্ষণীয়। হাম্মামের ভেতরে থেকেও কেউ যেমন সুন্নতের অনুসরণ করে নেকি অর্জন করতে পারে, আল্লাহর ঘর মসজিদে গিয়ে যখন কেউ অন্যায় করে, তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ও পবিত্র জায়গাটিতে থেকেও তার গোনাহ হতে থাকে। বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের সুবাদে মসজিদে থেকেও চোখের গোনাহে জড়িয়ে পড়া বিচিত্র কিছু নয়। গীবত-পরনিন্দা তো সবযুগেই এক মারাত্মক ব্যাধি। এর পাশাপাশি মসজিদে ইবাদত করতে গিয়েও যদি অন্যায়ভাবে কারো ইবাদত বা বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটানো হয়, তবে এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য সে পাপী সাব্যস্ত হবে। বোঝা গেল, সময় কিংবা স্থানটাই মূল বিষয় নয়। জীবনের নানামুখী চাহিদা— সে তো আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। বেঁচে থাকার জন্য খেতে হয়, স্বাভাবিক জীবন কাটানোর জন্য বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রয়োজন হয়। নিজের, পরিবারের সদস্যদের এসব চাহিদা মেটানোর দায়ভার শরীয়তের পক্ষ থেকেই আরোপিত। সৃষ্টিগত এক শারীরিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনেই সাংসারিক জীবনে প্রবেশ করতে হয়। এসব দায়দায়িত্ব পালনের জন্য আর্থিক সঙ্গতিও অনস্বীকার্য। এসব নানাবিধ চাহিদা মেটানোর জন্য একজন মুমিন যে সময়টুকু ব্যয় করে, তা যদি শরীয়তের বিধান মেনে করা হয় এবং চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রেও দ্বীনের অনুসরণ করা হয়, তবে দুনিয়াবী এসব কাজও নেক কাজ হয়ে যায়। তাই ঘরে-বাইরে, বাজারে কিংবা মসজিদে, অফিস-আদালত কিংবা দ্বীনী মজলিস— যেখানেই আমরা থাকি না কেন, প্রয়োজন সর্বত্র দ্বীন মেনে চলা, দ্বীনী নির্দেশনা পুরোপুরি অনুসরণ করা। জীবনের পদে পদে শরীয়তের বিধান যদি মেনে চলতে পারি, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে যদি আমরা আমাদের আদর্শ বানাতে পারি, তাহলে মৃত্যু আমাদের যেখানেই হোক, যখনই হোক, সে মৃত্যু আমাদের জন্য হবে এক সসীম সুন্দরের সমাপ্তি আর এক অসীম সুন্দরের শুভ সূচনা— ইনশাআল্লাহ।
প্রতিটি মুমিন তো এমন মৃত্যুরই অপেক্ষায় থাকে।