জুমাদাল উলা ১৪৪৬   ||   নভেম্বর ২০২৪

পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পাঠ্যক্রম পরিমার্জন প্রসঙ্গ
নতুন সরকার আবার সেই ভুলপথে হাঁটবে না তো!

মাওলানা সায়ীদুল হক

ছাত্র-জনতার মহান ত্যাগ ও আত্মদানের বিনিময়ে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সঙ্গত কারণেই সে সরকারের কাছে জনগণের আশা-প্রত্যাশা অনেক। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জাতি একদিকে যেমন দীর্ঘ একটি দম বন্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়েছে, সেইসাথে বিগত আমলের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নও দেখছে। বিপর্যস্ত অন্যসব খাতের মতো শিক্ষাখাতেও সচেতন নাগরিক ও উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহলের দৃষ্টি নিবদ্ধ আছে; তারা তাকিয়ে আছে নতুন সরকারের দিকে। 

দায়িত্বগ্রহণের পর প্রথম কর্মদিবসেই শিক্ষাউপদেষ্টা মহোদয় নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নযোগ্য নয়  বলে মন্তব্য করেন। বিপ্লবী সরকারের এমন মন্তব্যে বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। শিক্ষাউপদেষ্টার বাস্তবতা উপলব্ধিতে দেশের সচেতন জনগণ একটু স্বস্তির নিশ্বাঃস ফেলে।

কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করে। সরকারের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তে জনগণের স্বস্তির জায়গাটা দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। আকাক্সক্ষার স্থানে দেখা যাচ্ছে আশঙ্কার ঘনঘটা।

শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ ও তার অধীনে প্রস্তুতকৃত পাঠ্যপুস্তকের বেহাল দশায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির জনগণ ছিলেন ক্ষুব্ধ। শুরু থেকেই অভিভাবক, শিক্ষক, উলামায়ে কেরাম ও সচেতন নাগরিকরা এর প্রতিবাদ করে আসছেন। তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কথা জনপরিসরে তুলে ধরেছেন। সে কারিকুলাম যে কেবল ধর্ম, সংস্কৃতি ও আবহমানকাল থেকে চলে আসা আমাদের সভ্যতার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছিল তা নয়; বরং তা সাধারণ শিক্ষার বিকাশেও অকার্যকর ছিল। পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের নানা সমস্যা নিয়ে পত্র-পত্রিকাতেও অনেক লেখালেখি হয়েছিল। মাসিক আলকাউসারের সেপ্টেম্বর ২০২৩ সংখ্যায় 'খেলাধুলা ও গানবাদ্যই কি নতুন পাঠ্যক্রমের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য!' শিরোনামের লেখায় বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তকগুলোতে মোটাদাগে চার ধরনের সমস্যা নির্দেশ করা হয়েছিল-

ক. পাশ্চাত্যের বস্তুবাদ ও ধর্মবিমুখতা।

খ. ইউরোপীয় লিবারেলিজম।

গ. পৌত্তলিক সংস্কৃতি।

ঘ. ইসলাম-বিদ্বেষ।

এ চার ধারায় বইগুলোর পাতায় পাতায় ছিল খেল-তামাশা, গান-বাজনা, ফিল্ম-সিনেমা, ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা, বিস্তারিত যৌনশিক্ষা, বিয়ে বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ, ট্রান্সজেন্ডারবাদ, এলজিবিটি রাইটস, ইতিহাস বিকৃতি, ইসলামবিদ্বেষ, সাংস্কৃতিক বিগাড় ও মূল্যবোধ বিকৃতি। সেইসাথে এগুলোর সহযোগী হিসেবে আরো অনেক কিছু। বিশ্বাসী, বিবেকবান ও সুস্থ সংস্কৃতির একটি সমাজ ধ্বংস করার জন্য এর এক একটিই যথেষ্ট। তবুও গাদাগাদি করে সব ঢোকানো হয়েছিল। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও গোষ্ঠী, একশ্রেণির সেক্যুলার সুশীল সমাজ ও অন্যান্য স্বার্থবাদী মহল- সবার আবদার পুরা করতে গিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল বেহাল-বিপর্যস্ত। এর পাশাপাশি মূল্যয়ন পদ্ধতি, অতিমাত্রায় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নির্ভরতা, জরুরি বিষয় বাদ দিয়ে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের বাহুল্য- এসব কারণেও তা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

স্বাভাবিকভাবেই তখন প্রশ্ন উঠত- একজন অভিভাবক তার সন্তানকে স্কুলে কেন পাঠায়? একজন শিক্ষার্থীর জীবনের মূল টার্গেটটা কী হওয়া উচিত? খুব সহজ কথা যে, সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কোনো একটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবে, দক্ষতা অর্জন করবে। দেশ, জাতি ও মানবতার সেবা করবে। গবেষণা করবে, উদ্ভাবন-আবিষ্কার করবে। কেউ রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্ব পালন করবে। আবার কেউ হবে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষাবিদ, নিস্বার্থ সমাজ-সেবক বা মানব উপকারী রাজনীতিবিদ। সর্বোপরি বিশ্বজগতের খালিক ও মালিক আল্লাহ তাআলার অনুগত বান্দা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে। এগুলোই তো সকল শিক্ষার্থীর মূল চিন্তা-চেতনা হওয়া উচিত এবং তাদের অভিভাবকরাও এটাই চায়। কিন্তু সেই পাঠ্যপ্স্তুক পড়ে উপরোক্ত লক্ষ্যে পৌছতে পারা তো দূরের কথা; উল্টো তাদের সুস্থ মন-মানস ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছিল। আত্মিকভাবে তারা শূন্য হয়ে যাচ্ছিল।

সুস্থ-সুন্দর মূল্যবোধের অধিকারী একটি জাতির শিক্ষাব্যবস্থা কাদের হাতে ধ্বংসের মুখে পড়েছিল- তা কোনো অজানা বিষয় ছিল না। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে অনেক। শিক্ষাব্যবস্থার সর্বনাশের পেছনে ছিল ব্রাক, ইউনিসেফ আর প্লানের মতো চিহ্নিত কিছু এনজিওর হাত। ঢাকা পোস্টের ০৯ এপ্রিল ২০২১ তারিখের রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'অভিযোগ উঠেছে, এনসিটিবি ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশীয় কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে নতুন কারিকুলাম তৈরি করা হচ্ছে।...

(গণশিক্ষা) মন্ত্রণালয় অনুমোদিত প্রাথমিক স্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত উপেক্ষা করে ইউনিসেফ, প্লান বাংলাদেশ ও ব্র্যাকের কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় সমন্বিত শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি তৈরি করা হয়েছো'

[দ্র. নতুন কারিকুলাম নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব (https://www.dhakapost.com/education/22992)]

২৫ ডিসেম্বর ২০২১ বাংলাট্রিবিউন-এ প্রকাশিত 'গোঁজামিলে তৈরি হচ্ছে নতুন কারিকুলাম' প্রতিবেদনে এবং আরো বিস্তারিত আকারে দৈনিক ভোরের কাগজের ০৫ জানুয়ারি ২০২২ -এর 'নতুন কারিকুলাম নিয়ে তালগোল'  (https://www.bhorerkagoj.com/education/105435) শীর্ষক প্রতিবেদনে ও ২৮ মার্চ ২০২৩ তারিখের 'পাঠ্যবই কেলেঙ্কারি : গোয়েন্দা নজরদারিতে ৪ কর্মকর্তা'  (https://www.bhorerkagoj.com/national/142902) প্রতিবেদনে আলোচনা করা হয়েছে।

ভোরের কাগজের ০৫ জানুয়ারি ২০২২ -এর বিস্তারিত রিপোর্র্টে এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়েছে, 'কুমিল্লার'বার্ডে' বসে সরকারের টাকা কম খরচে ২০১২ সালের কারিকুলাম প্রণয়ন করে দিয়েছে। অথচ এবার এনজিওর প্রতিনিধিরা রাজেন্দ্রপুর ও সাভারে অবস্থিত ব্র্যাক সিডিএমে বসে কারিকুলাম প্রণয়ন করেছেন। এতে সরকারের কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে।' [দ্র. নতুন কারিকুলাম নিয়ে তালগোল  (https://www.bhorerkagoj.com/education/105435)]

পত্রিকাটির ২৮ মার্চ ২০২৩ তারিখের রিপোর্টে আরো খোলামেলা আলোচনা এসেছে। সংশ্লিষ্টদের বরাতে তাতে লেখা হয়েছে-

পাঠ্যবই কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত চার কর্মকর্তার প্রধান হলেন অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান। ...এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ রাকিবুল হাসান খান। তিনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের জামাতা। ...অভিযোগ রয়েছে, রাকিবুল হাসান খানই পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্কিত লেখা জুড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন বেশি। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদর জামাতা হিসেবে এনসিটিবিতে তার প্রভাবও বেশি।

[দ্র. পাঠ্যবই কেলেঙ্কারি : গোয়েন্দা নজরদারিতে ৪ কর্মকর্তা (https://www.bhorerkagoj.com/national/142902)]

একটি স্বাধীন মুসলিম দেশের শিক্ষাখাত কীভাবে কয়েকটি চরম বিতর্কিত এনজিও এবং গুটি কতেক দুষ্কৃতিকারীর হাতে কুক্ষিগত হয়ে আছে। একটি জাতির শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন হয়েছে ব্রাকের ক্যাম্পাসে! ব্রাকের ক্যাম্পাস ইউনিসেফ ও প্লানের মতো  পশ্চিমা মতাদর্শের এনজিওগুলোরও অভয়ারণ্য। পাঠ্যপুস্তক বিষয়ক বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক কর্মশালা ব্রাকের সিডিএমে হয়েছে, যার কিছু ডকুমেন্ট এনসিটিবির সাইটেও বিদ্যমান আছে। আমাদের দেশের সামাজিক বিগাড় ও মূল্যবোধ ধ্বংসে ব্রাক, প্লান ও ইউনিসেফের কার্যকলাপ সম্পর্কে যাদের মোটামুটি ধারণা আছে, শিক্ষাব্যবস্থার সাথে এগুলোর সম্পৃক্ততার ভয়াবহতা তারা ঠিক বুঝতে পারবেন। এনজিও তিনটির কার্যকলাপের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। যা বৃহৎ কলেবরের স্বতন্ত্র রচনার বিষয়।

যাইহোক, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা যখন সে কারিকুলামকে বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে ভিন্ন কিছু করার কথা জানালেন, স্বাভাবিকভাবে জনগণ নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখল। কিন্তু সে স্বপ্ন যে অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যাবে- তা তারা ভাবতেও পারেনি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জারিকৃত এক অফিস আদেশে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কাজের সমন্বয়ের জন্য দশ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কার্যপরিধির তালিকার আটটি কাজের মধ্যে অন্যতম হল, 'রাষ্ট্রীয় দর্শন, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মতাদর্শ ও নৈতিক মূল্যবোধ যথাযথ আছে কি না- তা যাচাই করা।

পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু এবং প্রদত্ত ছবি, চার্ট, ডায়াগ্রাম, তথ্য ইত্যাদি সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্পর্শকাতর বলে প্রতীয়মান হলে সেগুলো চিহ্নিত করে তাতে তার বিপরীতে মতামত প্রদান করা।'

সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মতাদর্শ ও নৈতিক মূল্যবোধ যথাযথ আছে কি না এবং পাঠ্যপুস্তকের কোনো কিছু সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্পর্শকাতর হলে তার বিপরীত মত দেওয়া- এ কাজগুলোর জন্য কী ধরনের বিশেষজ্ঞ দরকার ছিল? অবশ্যই এমন ব্যক্তির, যারা এ দেশের প্রায় শতভাগ ধর্মানুরাগী জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের ভাষা বুঝতে পারেন, তাদের চিন্তা-চেতনার সাথে যারা একাত্ম হতে পারেন, এদেশের জনগণের আবহমানকাল থেকে চলে আসা বোধ বিশ্বাস, মন-মানস, জীবনাচার, সভ্যতা-সংস্কৃতি যারা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। বিশেষভাবে ৯২ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর যথার্থ প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন- এমন দক্ষ ও যোগ্য আলেম ও ধর্মপ্রাণ প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদগণই এ কাজের সবচেয়ে উপযুক্ত। তারাই সঠিকভাবে কার্যপরিধির তালিকার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো যথাযথভাবে আঞ্জাম দিতে পারবেন। এ মানদণ্ডের ভিত্তিতে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হলে তা হত জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সঠিক প্রতিফলন। তা না করে উল্টো এমন লোকদেরকে কমিটির হর্তাকর্তা বানিয়ে দেওয়া হল, যাদের সাথে এদেশের জনগণের বোধ-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার দুই মেরু সমান দূরত্ব। এসব কারণে তারা আগে থেকেই চরম বিতর্কিত। তাদের সাথে গণমানুষের বোধ-বিশ্বাসের ফারাক বুঝতে দুয়েকটি উদাহরণ দেখুন-

স্বৈরাচার আমলের পাঠ্যবইয়ে আমাদের সুস্থ সমাজ ধ্বংসের যেসকল উপাদান ছিল, তার মাঝে ছিল ট্রান্সজেন্ডারবাদ। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের শরীফার গল্পের মাধ্যমে এ ভয়ঙ্কর বিকৃতি নর্মালাইজেশন করা হয়। এ বানোয়াট গল্প সচেতন জনগণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করে। একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ কাকরাইলের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে একজন শিক্ষক ভরা মজলিসে পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্পের দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলে জাতির প্রতি তার দায়িত্ববোধের পরিচয় দেন। তার এ কাজ জাতির বিবেককে নতুন করে প্রচণ্ড ঝাকুনি দেয়। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। ব্যাপক গণরোষের মুখে সরকার এ গল্প প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। পাঠ্যবইয়ের শরীফার গল্প এমন জাতীয় ইস্যু ছিল, যেখানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিল। ঠিক এ সময়টাতে দেশের কিছু মহারথী পত্র-পত্রিকায় ও সামাজিক মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছিল। ২৮ জানুয়ারি ঘাদানিক (ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি) শরীফার বানোয়াট গল্প ছিঁড়ে ফেলাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান বলে বক্তব্য দেয়। অনেক প্রগতিশীল এটাকে বিভিন্নভাবে ব্যঙ্গ করে। পাঠ্যপুস্তকের সর্বনাশা দশায় বিপর্যস্ত ও দিশেহারা জনগণের বুকে ঘা মেরে তারা এলজিবিটির অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তোলে। অথচ সে সকল কীর্তিমান লোকদের দুজনকেও বর্তমান পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের সমন্বয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে! সমন্বয় কমিটির সদস্য ঢাবির সমাজ বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মিস সামিনা লুৎফা ২৩ জানুয়ারি তার ফেসবুকে চরম ন্যক্কারজনক পোস্ট দিয়েছেন।

পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন সমন্বয় কমিটির আরেক সদস্য জনাব কামরুল হাসান মামুন একই দিনে সামিনা লুৎফার ব্যঙ্গাত্মক পোস্টটি তার নিজের ফেসবুকে পেইজে পেস্ট করে প্রচার করেন।

২০১৭ সালে স্কুলের প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের অক্ষর পরিচয়ে ও-তে ওড়না লেখা হয়েছিল। এ অঞ্চলের গণমানুষের শালীন সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি সুপরিচিত শব্দ ওড়না। ওড়নার মতো একটি শালীন নিরীহ শব্দই সহ্য হয়নি অনেকের। বিবিসি, ডিবিসি, বাংলাট্রিবিউন, জাগো নিউজ ও কালের কণ্ঠসহ চিহ্নিত বামধারার পত্রপত্রিকাগুলো তা নিয়ে তুমুল হট্টগোল শুরু করে। পাঠ্যবইয়ে ওড়না লেখার মাধ্যমে নাকি জেন্ডার বৈষম্য প্রকাশ পেয়েছে। সে সময়ে ডিবিসি নিউজের এক টকশোতে মিস সামিনা  লুৎফা ওড়না ও পর্দা নিয়ে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছেন, 'পাঠ্যবইয়ে ও-তে ওড়না লিখে নারীকে নির্মাণ করা হয়েছে অধস্তন হিসেবে। যার কাজ হচ্ছে ঘরের ভেতর থাকা। ঘরের বাইরে যখন বের হবে তখন সে গনীমতের এবং সকলের ভোগের।'

প্রসিদ্ধ সমকামী সংগঠন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির লবিংয়ে প্রস্তুতকৃত ট্রান্সজেন্ডার অধিকার আইনের খসড়া জনসম্মুখে আসলে তা সর্বশ্রেণির জনগণের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। গণরোষের মুখে অবশেষে তা আর পাস হয়নি। সে সময়টিতে মিস সামিনা ট্রান্সজেন্ডার, এলজিবিটি ইত্যাদি যৌন বিকৃতির পক্ষে প্রকাশ্যে ওকালতি করেন এবং নিজের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন পোস্ট দেন।

১৫ সেপ্টেম্বর  সমন্বয় কমিটি   ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক তাদের আমলের ফিরিস্তি সামনে আসতে থাকে। ফলে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজের মাঝে তা তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে। বিভিন্ন মাধ্যমে চলতে থাকে  লাগাতার প্রতিবাদ। প্রতিবাদী জনতা সমন্বয় কমিটি থেকে উক্ত দুজনের বাহিষ্কার এবং কমিটিতে আলেম সদস্য যুক্ত করার দাবি জানায়। একপর্যায়ে সরকার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে এক অফিস আদেশের মাধ্যমে পুরো কমিটিই বাতিল করে দেয়। দুজন বিতর্কিত ব্যক্তি, তাদের জন্য পুরো কমিটিই বাতিল- বিষয়টি গোটা জাতির সামনে একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন রেখে যায়!

দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক সমাজ  বিতর্কিত ব্যক্তিদের অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেন। সমন্বয়ক কমিটির আরেক সদস্য জনাব রাখাল রাহা    শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক সমাজের দাবিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তাদেরকে পতিত স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দেন। তিনি এক পোস্টে লেখেন- 'রক্তের দাগ শুকায় নাই। এখনি যারা বিভাজনের খেলায় মত্ত, তারা বুঝে বা না বুঝে, অথবা পতিত স্বৈরাচারের দোসর হয়ে হাজির হয়েছেন।'

জনগণের মাথায় জগদ্দল পাথর চাপিয়ে দেবে, আর কেউ প্রশ্ন তুললেই সে হল বিভাজনকারী। জনগণের পছন্দের অধিকার কেড়ে নেবে আর প্রতিবাদের মুখে পড়লে বলবে প্রতিবাদকারীরা স্বৈরাচারের দোসর। গণমানুষের দাবি দাওয়ার প্রতি যাদের এমন অবজ্ঞা, তাদেরকেই দেওয়া হচ্ছে নতুন দেশ গড়ার ভার!

জুলাই বিপ্লবে তাদের কারো কারো ভূমিকা ছিল। সেজন্য তারা সাধুবাদ পাবেন। তাই বলে তাদের হাতে দেশের ৯৯% ধর্ম অন্তপ্রাণ জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ ন্যস্ত করা যায় না। ওড়না এ অঞ্চলের আবহমানকাল থেকে চলে আসা শালীন সংস্কৃতির একটি নিত্য অনুষঙ্গ। যারা এতটুকুন ওড়নাকেই সহ্য করতে পারে না, তারা আর যা-ই হোন না কেন, তাদের কাছে জাতির বিশ্বাস মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনার যে নূন্যতম নিরাপত্তা নেই, সেটা আর বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই।

যাইহোক, সরকার সমন্বয় কমিটি বাতিল করে দিয়েছে। গণমানুষের দাবিকে আমলে নেওয়ায় জনগণ সরকারকে সাধুবাদ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই দেখা গেল আরো বড় বিপত্তি। পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট যে কমিটি, তাতে উপরোক্ত তিনজন তো আছেনই, সাথে আছেন বিতর্কিত আরো কয়েকজন।

ইসলাম শিক্ষা বই পরিমার্জনের কাজ যাদেরকে দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন জনাব আবু সাঈদ খান, প্রসিদ্ধ মুলহিদ তথা কুরআনের মনগড়া ব্যাখ্যাকারী।

সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকাশ্য দুশমন। কত বড় ধৃষ্টতা তার একটু দেখুন-

'দ্বীন ইসলামের শত বিভ্রান্তি ভেজাল নিয়ে আমরা নিরন্তর কথা বলছি। কিন্তু বিভ্রান্তির গোড়া চিহ্নিত করতে পারতে হবে। শেষ নবী নামে সর্বশ্রেষ্ঠত্ব তত্ত্ব ইসলামের নামে উদ্ভাবিত সবচেয়ে ভয়াবহতম কিন্তু অতি জনপ্রিয় মিথ্যা বচন। এই মিথ্যাকে পুঁজি করেই প্রায় যাবতীয় ধর্মভিত্তিক ব্যবসাগুলো পরিচালিত হয়। শেষ নবীকে নিয়ে আশরাফুল আম্বিয়া বা ইমামুল আম্বিয়া বা সাইয়েদুল মুরসালিন সংক্রান্ত ধারণা সবচেয়ে বড় মাপের ডাহা মিথ্যাচার। ইসলামের নামে এ যাবৎকাল যত যত মিথ্যা উদ্ভাবন করা হয়েছে তার মধ্যে বলা যায় এটি হচ্ছে সকল মিথ্যার মা। এটি খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের চাইতেও ভয়ংকর এক বিষবৃক্ষ যার ফল ভক্ষণ মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের মুনাফিক ও মুশরিকে পরিণত করেছে। (আবু সাঈদ খান, প্রচলিত ও প্রকৃত ইসলাম, পৃষ্ঠা ৩২)

এখানে তার কেবলমাত্র একটি বক্তব্য দেখানো হল। এমন মুলহিদ ও যিন্দীক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে দেশের প্রায় ৯২ শতাংশ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সন্তানদের পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের দায়িত্ব!

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (১৮-১০-২০২৪) ৪১ সদস্যের কমিটির ৩ জন বিতর্কিত সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ড. সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন ও আবু সাঈদ খান। পাঠ্যপুস্তকের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে জনগণের সেন্টিমেন্টকে খানিকটা গ্রাহ্য করায় সরকারকে মোবারকবাদ। কিন্তু জনগণের স্বস্তির জায়গায় এখনো বিপদের ঘনঘটা।

খানিক আগে গণমাধ্যমের খবরে আমরা পড়ে এসেছি, বিগত স্বৈরআমলে যাদের হাতে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সর্বনাশ হয়েছে তাদের অন্যতম ছিল ব্রাক। আসলে ব্রাক নিছক কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, বরং তা এদেশে পশ্চিমা বস্তাপচা সংস্কৃতি, বিকৃত মূল্যবোধের সবচেয়ে বড় ইমপোর্টার। এসব বাজে জিনিস কীভাবে আমাদের সমাজে পুশ করা যায়- তার গবেষণাগার। ব্রাকের আবাসিক ক্যাম্পাস সিডিএম-এ বসেই বিতর্কিত পাঠ্যক্রম রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছিল। ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে তিন জনই হলেন সরাসরি ব্রাকের। এছাড়া আরো কয়েকজন আছেন ব্রাকের সভা সেমিনারে যাদেরকে দেখা যায়। ব্রাক পশ্চিমা মানবাধিকারের ফেরি করে বেড়ায় আর পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার হল এলজিবিটি রাইটস। যেমনটি হিলারি ক্লিন্টন বলেছিলেন-

'gay rights are human rights'

সমকামী অধিকার মানবাধিকার।

ব্রাকের হিউম্যান রাইটস এন্ড লিগ্যাল এইড সার্ভিসের ডিরেক্টর Dr Faustina Pereira ২০১৩ সালে ০৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত Realising the next barrier to human rights লেখায় পরবর্তী বিশ বছরে মানবাধিকারের চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। তার দেওয়া মানবাধিকারের চ্যালেঞ্জের তালিকায় মাত্র দুটি বিষয় স্থান পেয়েছে-

এক. যৌনতার ট্যাবু কাটিয়ে ওঠা।

দুই. এলজিবিটি অধিকার ও চাহিদাসমূহকে স্বীকৃতি প্রদান।

এখন ব্রাকের লোকেরা পাঠ্যবইয়ে  তাদের সেসব মানবাধিকার ঢুকাবেন না- সে নিরাপত্তা কে দেবে?

এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে দুজন ব্রাকের। আরো একজন আছেন, যিনি ব্রাকের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য ও ব্রাকের সাবেক এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কর্তৃক পরিচালিত গণসাহায্য সংস্থার শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক।

৪১ সদস্য বিশিষ্ট পরিমার্জন কমিটি ও ৯ সদস্য বিশিষ্ট গণশিক্ষার মানোন্নয়ন কমিটি- উভয় কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিযুক্ত সদস্যগণ ব্যতীত অন্য অনেক সদস্য ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু, এলজিবিটি ইস্যু ও বিতর্কিত বিভিন্ন  ইস্যুতে দেশের জনগণের বিপরীতে সরব ছিলেন বা তারা এমন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত, যে প্রতিষ্ঠান এসব ইস্যুতে জনগণের বিপক্ষে আছে। 

এনসিটিবির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, 'অনুভূতিতে আঘাত লাগে- এমন কন্টেন্ট পরিমার্জনের চেষ্টা চলছে।' কমিটির শুধু দু-তিনজন সদস্যের কিছু হালাত দেখানো হয়েছে, পাঠক তা থেকেই আঁচ করতে পারছেন, কমিটির পরিমার্জন কী রূপ হতে পারে!

অতএব দেখা যাচ্ছে, সরকারের তরফ থেকে জনগণের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে না। উল্টো বিতর্কিত পথেই হাঁটা হচ্ছে। গত ৩১ আগস্ট রাতে শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের যে দাবি শিক্ষক-অভিভাবকরা তুলেছেন, তা পুরোপুরি সম্ভব নয়। আগামী বছর সারা বছর ধরে কিছু পরিপত্র জারি করে কিছুটা যে দুর্বলতাগুলো আগের শিক্ষাক্রমে আছে, সেগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করা হবে। ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে জারিকৃত শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এক  পরিপত্রে জানানো হয়- 'শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, প্যাডাগগ, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা  প্রশাসক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অভিভাবক প্রতিনিধিগণের সহযোগিতায় ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে, ২০২৬ সাল থেকে পরিপূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে।

মানে স্বৈর আমলে এনজিওর নির্দেশনায় প্রস্তুত হওয়া সেই চরম বিতর্কিত পাঠ্যক্রম আবার চালু করা হবে। এনসিটিবর চেয়ারম্যান সাহেব শোনালেন, কারিকুলাম নাকি কখনো নতুন হয় না, সবসময় পরিমার্জিত হয়।

চরম বিতর্কিত যে কারিকুলামকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুনরায় চালু করতে চায়, সেটা কোন্ কারিকুলামের পরিমার্জন ছিল- চেয়ারম্যান সাহেব এ প্রশ্নের কী উত্তর দেবেন!

সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা পরিমার্জনের কথা বলছেন। যদি সঠিকভাবে পরিমার্জন করা হয়, তাহলে এর কতটুকু টিকবেব্রাক প্লানের মতো চিহ্নিত এনজিওদের প্রেসক্রিপশনে  তৈরি করা কারিকুলাম ধরে রাখতে এত তোড়জোড় কেন? প্রসিদ্ধ সমকামী সংগঠন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির দাবি অনুযায়ী উক্ত শিক্ষাক্রম রূপরেখার 'ইনক্লুশন ও জেন্ডার সংবেদনশীলতা' অধ্যায়টি তাদের লবিংয়ে যুক্ত হয়েছে। এনজিওদের চাপ উপেক্ষা করে এ অধ্যায়টি বাদ দেওয়ার মতো সৎসাহস কি আমাদের কর্তাব্যক্তিদের আছে? চলুন দেখে নেই পাঠ্যক্রম রূপরেখার ইনক্লুশন অধ্যায়ে কী আছে।

পাঠ্যক্রমে এলজিবিটি ইস্যু

জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১ -এর ২.১৭ নং অধ্যায়ের শিরোনাম হল, 'শিক্ষাক্রমে ইনক্লুশন ও জেন্ডার সংবেদনশীলতা'। এতে ইনক্লুশনের ওপর খুব জোর দেওয়া হয়েছে। ইনক্লুশন পশ্চিমাদের বহুল ব্যবহৃত একটি পরিভাষা, যার শাব্দিক অর্থ হল অন্তর্ভুক্তকরণ। পাঠ্যক্রম রূপরেখা ২০২১ এবং পাঠ্যপুস্তকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত সংস্থা প্লান ইন্টারন্যাশনাল-এর ওয়েবসাইট থেকে শিক্ষাক্রমে ইনক্লুশন মানে কাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা বুঝায়- তা উল্লেখ করছি। ওয়েবসাইটটিতে Inclusive, quality education শিরোনামের লেখায়  স্পষ্ট ভাষায় বলা আছে-

Children and girls in all their diversity, including those living with disabilities, those that are LGBTQIA+, indigenous, minority ethnic or racialised groups, children living in contexts of conflict and crisis, and children living in poor and remote areas are most often denied access to education....  We promote free, equal access to quality education for all children – from early learning to secondary education.

https://plan-international.org/quality-education/

অর্থাৎ বৈচিত্র্যের মধ্যে থাকা শিশু ও মেয়েরা প্রায়শই শিক্ষায় প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন, যারা প্রতিবন্ধী, যারা এলজিবিটিকিউ+, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, সংঘাত ও দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত এলাকার শিশু...। সকল শিশুর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষায় অবাধ ও সমান প্রবেশাধিকারকে আমরা প্রমোট করি। (এটিই হল ইনক্লুসিভ এডুকেশন তথা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা)

এখানের এলজিবিটিকিউ+ শব্দটি লক্ষ্যণীয়। শিক্ষাক্রমে ইনক্লুশন মানে শিক্ষাব্যবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সমকামী, ট্রান্সজেন্ডারসহ অন্যান্য যৌনবিকৃতির লোকদেরকে সমান অধিকার দেওয়া। তাদের বিকৃতির নিন্দা না করে উল্টো তাদেরকে সমাজের মূল ধারায় জায়গা দেওয়া। এলজিবিটি+ ইনক্লুশন পশ্চিমাদের আজব ধরনের পাগলামি। বিকৃতিকে দূর করার পরিবর্তে উল্টো তা সমাজে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছে!

পশ্চিমা এনজিওগুলোর জোর লবিংয়ে ২০২১-এর শিক্ষাক্রম রূপরেখায় এই ইনক্লুশন ঢুকানো হয়েছে। শিক্ষাক্রম রূপরেখার পৃ. ৮৫-এ বলা হয়েছে, শিক্ষায় জেন্ডার ও ইনক্লুশন কোনো ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয় নয়; বরং  মানবাধিকার ও আইনগত বিষয়।

পৃ. ৮৬-এ বলা হয়েছে, শিক্ষাক্রম উন্নয়নের... সকল ধাপকে জেন্ডার সংবেদনশীল ও ইনক্লুশন সহায়ক করার জন্য একটি কারিগরি নির্দেশনা তৈরি করা হবে।

পৃ. ৮৭-এ বলা হয়েছে, 'নারী, পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গসহ সকল বৈচিত্র্যের মানুষ যাতে কোনোরূপ বৈষম্য ছাড়াই শিখন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে... সক্ষমতা অর্জন করে তা-ই এই অ্যাপ্রোচ (জেন্ডার ট্রান্সফরমেটিভ অ্যাপ্রোচ) বেছে নেবার মূল উদ্দেশ্য।

উপরের উদ্ধৃতিসমূহের বোল্ডকরা শব্দগুলোতে এলজিবিটি ইনক্লুশনের কথা বলা হয়েছে। এভাবেই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় এলজিবিটি গোষ্ঠীকে সমাজের মূলস্রোতে মিশিয়ে নেওয়ার ছক চূড়ান্ত করা হয়। ৮৭ নং পৃষ্ঠার উদ্ধৃতির 'তৃতীয় লিঙ্গসহ সকল বৈচিত্র্যের মানুষ কথাটি লক্ষ্যণীয়। যাদের লবিংয়ে পাঠ্যক্রম রূপরেখায় ইনক্লুশন ঢুকানো হল, সে বন্ধু ওয়েলফেয়ার ২৬টির মতো বিদেশী সংস্থার সাথে যুক্ত। যার মধ্যে রয়েছে  MenEngage Alliance । ৩০টিরও অধিক দেশে এ এনজিও এলজিবি গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করে। বাংলাদেশে এর সদস্য হল বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। MenEngage Alliance-এর ওয়েবসাইটে 'বন্ধু'র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষ মানে কী- তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তাতে বলা হয়েছে, 'বন্ধু বাংলাদেশে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষদের (জিডিপি) সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে।

লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষ (জিডিপি) বলতে বুঝায়, বাংলাদেশের ঐসকল মানুষ, যারা সিসজেন্ডার (স্বাভাবিক পুরুষ বা মহিলা, যারা জন্মগতভাবে যা, মনমানসেও তা) ও বিষমকামী (স্বাভাবিক যৌনতা, যেখানে একপক্ষ পুরুষ অপর পক্ষ নারী) নয়। সুতরাং  বৈচিত্র্যের মানুষ  হলো, সমকামী পুরুষ, পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক  করে এমন পুরুষ, ট্রান্সজেন্ডার... লেসবিয়ান, নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করে এমন নারী ইত্যাদি।

বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এসব লোকদের কল্যাণে কাজ করে।'

https://menengage.org/members/bandhu/

আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক উভয় দিক থেকে সমকামিতা অনেক বড় অপরাধ। রাষ্ট্রীয় আইনেও তা দণ্ডনীয় অপরাধ। তবুও 'বন্ধু'রা সরকারের নাগের ডগায় বসে সমকামিতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও আরো কয়েকজন উপদেষ্টার সাথে এনজিওদের সম্পর্ক থাকার কারণে এনজিওদের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বিগত স্বৈর আমলে এনজিওদেরকে সরকারের বিভিন্ন লোকদের মাধ্যম হয়ে শিক্ষাক্রমে তসরুফ করতে হত।  আর এখন খোদ সরকারের মধ্যেই তাদের লোক। অবস্থা এমন না হয় যে- শিক্ষাব্যবস্থা কড়াই থেকে উনুনে পড়ে গেছে!

জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও একটি সর্বজনবিদিত ও জনআকাক্সিক্ষত শিক্ষাব্যবস্থা আমরা পাইনি। বারবার শিক্ষাআইন, শিক্ষানীতি ও শিক্ষাকারিকুলাম পরিবর্তন করা হলেও স্বতন্ত্র কোনো শিক্ষাকাঠামো গড়ে ওঠেনি, যার মাঝে দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর চিন্তা ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটবে।  একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, যে কোনো দেশের শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচি ওই দেশের জাতীয় চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও জাতীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করে; যা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে অত্যন্ত গুরুত্ব ও যত্নের সাথে রাখা হয়। যেন তারা দেশের আগামী দিনের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। সেজন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ভার এমন ব্যক্তিদের কাছেই অর্পণ করা কর্তব্য, যারা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও সেবা এবং জনগণের  জাতীয় চেতনা-বিশ্বাস, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নির্ভরযোগ্য ধারক বাহক ও বিশ্বস্ত মুখপাত্র। বিশেষভাবে যারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং পাঠ্যপুস্তকে তার প্রতিফলন ঘটাবে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই এক্ষেত্রে যথাযথ দয়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। ফলে পাঠ্যবইয়ে এমনসব বিষয় দাখিল হয়, যা কোনোভাবেই আবহমানকাল থেকে চলে আসা এ দেশের গণমানুষের বিশ্বাস, আবেগ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে মানানসই হয় না।

চলতি বছরের শুরুতে একটি জাতীয় দৈনিকে জনৈক অধ্যাপকের শিক্ষা বিষয়ক একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। কোনো প্রকার রাখঢাক না রেখে তিনি বাস্তব কথাটি অকপটে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় দেশের প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী কারও পক্ষেই প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রতিটা বই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পড়ে দেখা ও রূপকল্প তৈরি করা সম্ভব নয়, যদিও সব কর্মের দায়দায়িত্ব তাদের কাঁধে এসে বর্তায়। শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি তৈরির জন্য যাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায়, তাদের মধ্যে কারও কারও মাথা মোটা ও বিকৃত বাতিল চিন্তা-চেতনা ও মতবাদে মদদপুষ্ট ও পক্ষপাতদুষ্ট। তারা তাদের নিজস্ব বাতিল ধ্যানধারণাকে এদেশের পুরো জনগোষ্ঠীর ওপর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীনভাবে চাপিয়ে দিতে চায়। গলদটা এখানেই; 'কাজ করে বেহদ্দ, মার খায় গোষ্ঠীসুদ্ধ'। পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি তৈরিতে এদেশের সংস্কৃতি, সামাজিক চেতনা, মূল্যবোধ ও সামাজিক বাস্তবতার দিকে লক্ষ রেখে পদ্ধতি ও বিষয় নির্বাচন করলেই কোনো ঝামেলা থাকে না ও বিতর্কও তৈরি হয় না।”  (https://www.jugantor.com/tp-ub-editorial/770182)

খুব যথার্থই বলেছেন তিনি। কারিকুলাম তৈরির সময় কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে একবার আমেরিকান, একবার জাপানী, একবার ফিনল্যান্ডি, আরেকবার চাইনিজ বানানোর প্রজেক্ট নেওয়া হয়। কাজের কাজ তো কিছুই না; যা হয়- জাতির কোটি কোটি টাকা গচ্চা যায়।

এভাবে তো আমাদের জাতীয় গর্ব ও অস্তিত্ব ক্রমেই বিলীন হতে বাধ্য। আমাদের একটা নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আছে আলাদা মূল্যবোধ, জাতীয় চেতনা, সামাজিক বুনন; যা এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকেও স্বতন্ত্র। এসব কিছু ভুলে গেলে কিংবা এড়িয়ে গেলে আমরা অন্য কোনো সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, সমাজ-স্বাতন্ত্র্য ও জাতীয়তাবোধের সঙ্গে কালক্রমে মিশে যাব। এর থেকে দুঃসংবাদের কথা আর কী থাকতে পারে! আমরা বিশ্বের দরবারে স্বকীয় সত্তায় পরিচিত হতে চাই, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই, নিজস্ব শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সক্ষমতায় টিকে থাকতে চাই।

বিশ্বে নতুন নতুন মতবাদের অভাব নেই। সব মতবাদ এদেশের বোধ-বিশ্বাস, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সামাজিক মননশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নয় সামাজিক মূল্যবোধের অনুগামী। পশ্চিমা বিশ্ব প্রগতিবাদকে এক চোখে দেখে; এদেশের সুশিক্ষিত সমাজ কিন্তু প্রগতিবাদ শব্দটাকে ভিন্ন চোখে দেখে। আমরা পোশাক পরি শরীরকে আবৃত করার জন্য। ওইসব দেশে বাজারে কাপড়ের অভাব নেই, কিন্তু শরীর ঢাকতে কাপড়ের বড্ড অভাব। পশ্চিমা সব মতবাদ সব দেশের জন্য পালনীয় নয়। সেখানে নিত্যনতুন অনেক মতবাদের উদ্ভব হচ্ছে। মানবসভ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো কোনো মতবাদ টিকে আছে, আবার অনেক বিকৃত মতবাদ কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। সামাজিক মতবাদ ছাড়াও অনেক রাজনৈতিক মতবাদেরও একই দশা। সেজন্য আমরা এদেশে কুহেলিকার পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করতে চাই না। প্রগতিবাদের মোড়কে উচ্ছৃঙ্খলতা, বিকৃত মানসিকতা, প্রকৃতিবিরুদ্ধ কর্মপদ্ধতি ও জীবনাচার দেশে প্রবর্তন করতে চাই না। নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন হতে দিতে চাই না। এ দেশীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে আমাদের স্বকীয় সক্ষমতাকে জানান দিতে চাই। এর মধ্যেই আমাদের ভবিষ্যৎ কল্যাণ ও মঙ্গল নিহিত আছে।

মনে রাখতে হবে, আমাদের খালিক ও মালিক রাব্বুল আলামীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জ্ঞান চর্চা কখনো সফল হতে পারে না। ধর্মীয় ও জাগতিক যে কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞান একমাত্র তখনই সফল হবে যখন তার সঙ্গে থাকবে রব্বে কারীমের নাম এবং আখেরাতের বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِیْ خَلَقَ، خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ، اِقْرَاْ وَ رَبُّكَ الْاَكْرَمُ،الَّذِیْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ.

পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি (সব কিছু) সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত দ্বারা; পড় এবং তোমার প্রতিপালক সর্বাপেক্ষা বেশি মহানুভব। যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন -সূরা আলাক (৯৬) : ১-৪

আরো ইরশাদ করেন-

یَعْلَمُوْنَ ظَاهِرًا مِّنَ الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ هُمْ عَنِ الْاٰخِرَةِ هُمْ غٰفِلُوْنَ،اَوَ لَمْ یَتَفَكَّرُوْا فِیْۤ اَنْفُسِهِمْ مَا خَلَقَ اللهُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ وَ مَا بَیْنَهُمَاۤ اِلَّا بِالْحَقِّ وَ اَجَلٍ مُّسَمًّی  وَ اِنَّ كَثِیْرًا مِّنَ النَّاسِ بِلِقَآئِ رَبِّهِمْ لَكٰفِرُوْنَ.

তারা পার্থিব জীবনের প্রকাশ্য দিকটাই জানে আর আখেরাত সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ গাফেল। তবে কি তারা নিজেদের অন্তরে ভেবে দেখেনি? আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে এবং এতদুভয়ের মাঝে বিদ্যমান জিনিসকে যথাযথ উদ্দেশ্য ও নির্দিষ্ট মেয়াদ ব্যতিরেকে সৃষ্টি করেননি। কিন্তু মানুষের মধ্যে অনেকেই নিজ প্রতিপালকের সম্মুখীন হওয়াকে অবিশ্বাস করে। -সূরা রূম (৩০) : ৭-৮ 

 

 

টীকা-

[1] Hillary Clinton declares 'gay rights are human rights'. BBC. December 7,2011. https://www.bbc.com/news/world-us-canada-16062937

 

 

 

advertisement