বায়তুল মোকাররমের মিম্বর থেকে
[হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুমকে গত ২১-১০-২০২৪ তারিখে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের নতুন খতীব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এরপর গত ২১ রবিউল আখির ১৪৪৬ হিজরী মোতাবেক ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ঈসায়ী, জুমাবার তিনি প্রথম খুতবা প্রদান করেন। সেদিনের জুমাপূর্ব বাংলা আলোচনার সারসংক্ষেপ তাঁর নজরেসানীর পর মাসিক আলকাউসারের পাঠকদের খেদমতে পেশ করা হল। -সম্পাদক]
মোবাইলে ছবি-ভিডিও ধারণ প্রসঙ্গ
মিম্বরে ওঠার পর কিছু ভাই ছবি তুলতে চাইলে তাদের উদ্দেশে বলেন, ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা কি ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত কিংবা মুস্তাহাব? উত্তরে সবাই বললেন, না।
এরপর তিনি বললেন, অধিকাংশ মুফতী ও ফকীহগণের মতে অ্যানালগ ক্যামেরায় ছবি তোলার মতো ডিজিটাল ক্যামেরার ছবিও নিষিদ্ধ।
(পরবর্তীতে আলোচনা চলাকালে আবারও কেউ ছবি তুলতে চাইলে তিনি বলেন) মসজিদে এসে ক্যামেরার পেছনে পড়ে থাকা, মানুষের নামাযের ভিডিও করা, মসজিদ-মজলিসের ভিডিও করা কোনো সওয়াবের কাজ নয়। বরং অধিকাংশ মুফতী ও ফকীহের মতে এটি নাজায়েয। যারা দাওয়াতী জরুরতে শর্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে একটু ছাড় দেন, তারাও মসজিদে ছবি তোলার অনুমতি দেন না। মসজিদ তো ইবাদতের স্থান। এখানে মানুষ ইবাদতের জন্য আসে। জুমার জন্য আসে।
হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং যে কোনো মসজিদ এমনকি কোনো দ্বীনী মজলিস-মাহফিলে ডিজিটাল ক্যামেরার ব্যবহার নিষেধ করেন।
আমরা মোবাইল ব্যবহারে সংযত হওয়ার চেষ্টা করব। সম্ভব হলে মসজিদে স্মার্ট ফোন আনব না। একজন মসজিদে এসেছেন। আর আপনি তার ছবি, ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে ছেড়ে দিলেন। এটা অন্যায়। কারো অনুমতি ছাড়া কিংবা তার অগোচরে ছবি তোলা, ভিডিও করা এরপর তা অনলাইনে দিয়ে দেওয়া কেউ জায়েয বলেন না। এমনকি যারা শর্তসাপেক্ষে ছবি তোলার অনুমতি দেন তাদের কাছেও এটি জায়েয নয়। কারণ প্রত্যেকের ব্যক্তিগত রুচি-চাহিদা আছে। এর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া শরীয়তের বিধান। প্রত্যেকের ইজ্জত-সম্মান, মন-মানস এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; যা জেনারেল শিক্ষিত ভাইয়েরাও বোঝেন। আমি একবার মদীনা মুনাওয়ারায় দেখেছি। এক বড় মজলিসে শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা -হাফিযাহুল্লাহু তাআলা ও রাআহু- আছেন। তো এক ভাই শায়েখের ছবি তুলতে চাইলে শায়েখ ক্ষমা চেয়ে নিলেন। ফলে সে বিরত থাকল।
সকলের কাছে আমার অনুরোধ, আমরা ছবি তুলব না, ভিডিও করব না। আল্লাহর ওয়াস্তে আমরা মসজিদে স্মার্ট ফোন আনব না।
মাসনূন হামদ ও সালাতের পর...
শুরুতেই তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শোকর আদায় করেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে জুমার নামায আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হওয়ার তাওফীক দিয়েছেন।
এসময় মসজিদের সাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিলে মুসল্লিদের মাঝে শোরগোল সৃষ্টি হয়। তখন তিনি সবাইকে নীরব থাকা ও সবর করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণনা আছে, মজলিসে যারা আওয়াজ শোনেন তারা যেমন সওয়াব লাভ করেন, যাদের পর্যন্ত আওয়াজ পৌঁছে না, কিন্তু চুপ থাকেন, তারাও সমান সওয়াব লাভ করেন। (হযরত ওসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
إِذَا قَامَ الْإِمَامُ يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَاسْمَعُوا وَأَنْصِتُوا. فَإِنَّ لِلْمُنْصِتِ الَّذِي لاَ يَسْمَعُ مِنَ الْحَظِّ، مِثْلَ مَا لِلْمُنْصِتِ السَّامِعِ.
-মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ৩৪৫)
এরপর তিনি বলেন, লাউড স্পিকার বা সাউন্ড সিস্টেম আবিষ্কারের বয়স কত আর হবে? বড় জোর ১০০ বছর। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর পরবর্তী ১৩০০ বছর পর্যন্ত তো এই সাউন্ড সিস্টেম ছিল না। তখন কি বড় মজমা, বড় মজলিস হত না? অবশ্যই হয়েছে। তখন মজলিসগুলোতে সবাই চুপ থাকতেন। যারা শুনতে পারতেন তারা শুনে সওয়াব পেতেন। যাদের কাছে আওয়াজ পৌঁছত না, তারা চুপ থাকতেন এবং মসজিদ ও মজলিসের আদব রক্ষা করতেন; ফলে তারাও সওয়াব লাভ করতেন। তাই এসব পরিস্থিতিতে আমাদের সবর করা উচিত।
এরপর তিনি আবারও আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জুমার দিনের মতো এত বড় নিআমত দান করেছেন। মসজিদ আল্লাহর একটি বড় নিআমত। জুমার দিনও একটি বড় নিআমত। আজকে মসজিদের পরিবেশে এবং জুমার দিনে আমাদের প্রথম মোলাকাত হচ্ছে।
জুমার দিনের ফযীলত
জুমার দিনের অনেক ফযীলত। এটি সর্বশেষ নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই ফযীলতের দিন আগের উম্মতকেও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা তা রক্ষা করতে পারেনি; হারিয়ে ফেলেছে। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসীলায় আমাদেরকে এই নিআমত দান করেছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
نَحْنُ الآخِرُونَ السّابِقُونَ.
আমরা (আগমনের দিক থেকে) সর্বশেষ এবং (সওয়াব ও মর্যাদার বিচারে) সকলের অগ্রগামী উম্মত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭০৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৫
এই উম্মতের একটি বৈশিষ্ট্য হল জুমার দিন। জুমার দিনের অনেক ফযীলত। জুমার দিন হল সর্বোত্তম দিন। হাদীসে এ দিনটিকে خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ)) সর্বোত্তম দিন বলা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৪)
জুমার দিনের অনেক ফযীলত ও আমল আছে। আল্লাহর রহমতে আমরা অনেকেই তা জানি এবং আমলও করে থাকি।
দ্বীনী আলোচনার উদ্দেশ্য ও ফায়েদা
দ্বীনী আলোচনা কেবল নতুন বিষয় জানার জন্য নয়। কারো জন্য কোনো কথা নতুন হতে পারে। কোনো নতুন কথা জানা ছাড়াও দ্বীনী আলোচনার আরো ফায়েদা আছে। যেমন-
ক) কোনো অস্পষ্ট বিষয় আরো স্পষ্টভাবে জানা।
খ) কোনো বিষয়ে ভুল বা অসম্পূর্ণ জানলে তার সঠিক ও পূর্ণ জ্ঞান লাভ করা।
গ) আমলের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া।
ঘ) সবচেয়ে বড় ফায়েদা হল ঈমান তাজা হওয়া।
দ্বীনী মজলিস যে কোনো সময় ও যে কোনো স্থানে হতে পারে। তবে শর্ত হল, কথাগুলো সঠিক ও শুদ্ধ হওয়া।
জুমাপূর্ব বয়ান প্রসঙ্গ
জুমার আগে স্থানীয় ভাষায় যে আলোচনা হয় এটি জুমার নামাযের অংশ নয় এবং জুমার দিনেরও বিশেষ কোনো আমল নয়। এটি অন্য দিনেও হতে পারে। জুমার পরেও হতে পারে, এমনকি একেবারে না হলেও কোনো অসুবিধা নেই। যেহেতু জুমার দিন আগে আগে মসজিদে আসা হয়। একটা বড় মজমা হয়, তাই এই সুযোগে কিছু দ্বীনী আলোচনা হয়। তবে জুমার দিন নামাযের আগে যে দুটি খুতবা হয় তা নামাযের অংশ। এটি আরবী ভাষায় হওয়া এবং নামাযের আগে হওয়াই নির্ধারিত।
জুমার দিনের আমল
জুমার দিনের অনেক আমল রয়েছে। আজকে শুধু একটি আমল নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
জুমার দিনের একটি বিশেষ আমল হল, বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করা। জুমার রাত ও জুমার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকে জুমাবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত বেশি বেশি দরূদ শরীফ পড়া। দরূদ শরীফের শব্দমালা বড় হোক বা ছোট। বিশেষ করে হাদীস শরীফে বর্ণিত দরূদ শরীফ পড়লে সবচেয়ে ভালো। আবুল কাসিম আসফাহানী রাহ. (মৃত্যু : ৫৩৫ হিজরী)-এর 'আততারগীব ওয়াত তারহীব'-এ বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তাঁর শাগরিদকে বলেছেন, জুমার দিন তুমি এক হাজার বার দরূদ শরীফ পড়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী দরূদ পড়ব? তখন তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدِنِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ.
(দ্র. আততারগীব ওয়াত তারহীব, আবুল কাসিম আসফাহানী, হাদীস ১৬৮১)
আরো সহজ দরূদ হতে পারে-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ.
এভাবেও হতে পারে-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدِنِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ وَاٰلِه وَسَلِّمْ.
সংক্ষিপ্ত কোনো দরূদ শরীফ পড়তে পারি। নামাযে আমরা যে দরূদ শরীফ পড়ি, সেটাও পড়তে পারি।
মোটকথা, জুমার দিন বেশি বেশি দরূদ শরীফ পড়ব। জুমার দিন, জুমার রাতে, জুমার নামাযের আগে, নামাযের পরে, আসরের পরে দরূদ পড়ব।
জুমার দিনের একটি বৈশিষ্ট্য আমরা অনেকেই জানি। এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যে মুহূর্তের সকল দুআই আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। তবে সে মুহূর্তটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। এটা হতে পারে জুমার আযান থেকে নামাযের শেষ পর্যন্ত সময়। আবার আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় হওয়ারও খুব সম্ভাবনা আছে। অথবা আগে বা পরের কোনো সময়ও হতে পারে। এটা একেবারে নিশ্চিতভাবে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এর একটি ফায়েদা হল, যেন আমরা এ মুহূর্তটির তলবে থাকি। বেশি বেশি গুরুত্ব দেই। বেশি বেশি তিলাওয়াত করি। সূরা কাহ্ফ তিলাওয়াত করি। অন্যান্য সূরা তিলাওয়াত করি। জুমার দিনে একটু বেশি তিলাওয়াত করব। অন্যদিনও তিলাওয়াত করব ও দরূদ শরীফ পড়ব। জুমার দিনের বিষয়ে তো বলা হয়েছে-
فأكثروا.
বেশি বেশি দরূদ পড়ো। তোমাদের দরূদ আমার সামনে পেশ করা হয়। একবার দরূদ পাঠ করলে দশটি রহমত নাযিল হয়, দশটি গুনাহ মাফ হয় এবং দশটি দরজা তথা মর্যাদা বুলন্দ হয়।
মসজিদের আদব ও সম্মান রক্ষা করা
আমরা মসজিদে এসেছি। মসজিদ আল্লাহর ঘর। মসজিদের সম্মান রক্ষা করা ফরয। মসজিদের কিছু কিছু আদব তো একেবারে ফরয পর্যায়ের।
মসজিদে কীভাবে প্রবেশ করব, মসজিদ থেকে কীভাবে বের হব- এ ধরনের আরো বেশ কিছু আদব রয়েছে। এগুলো ছোট ছোট আমল, কিন্তু এগুলোর অনেক সওয়াব। এগুলোর অনেক ফায়েদা ও অনেক ফযীলত আছে।
আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই জানি, মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা সুন্নত। জুতা খোলার সময় বাম পা থেকে আগে জুতা খুলতে হয়, এরপর ডান পা থেকে। তাহলে মসজিদে প্রবেশের সময় প্রথমে বাম পা থেকে জুতা খুলে জুতার ওপর বাম পা রাখব, এরপর ডান পা থেকে জুতা খুলে মসজিদের ভেতর প্রথমে ডান পা রাখব, এরপর বাম পা। বিসমিল্লাহ পড়ব। দরূদ শরীফ পড়ব। দুআ পড়ব। এভাবে বলব-
بِسْمِ اللهِ، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ، اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.
এটি একটি দুআ। এছাড়াও আরো দুআ আছে। সেগুলো মুখস্থ থাকলে পড়ব।
মসজিদে এসে আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে রহমতের দুআ করেছি। হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য রহমতের সকল দরজা খুলে দিন। আপনার রহমতের যত দরজা আছে সব দরজা আমার জন্য খুলে দিন।
সব মুসল্লি যদি এভাবে দুআ করে, রহমতের প্রার্থনা করে মসজিদে আসে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমতের সকল দরজা আমাদের জন্য খুলে দেবেন।
أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ، وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৬)
এটাও একটি দুআ। মুখস্থ থাকলে এটাও পড়তে পারি।
আমরা মসজিদে এসেছি ইবাদতের জন্য। আল্লাহকে রাজি করার জন্য। মসজিদে এসে এমন কাজ যেন আমার দ্বারা না হয়, যা দ্বারা মসজিদের আদব নষ্ট নয়। সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। এসেছি আল্লাহকে রাজি করানোর জন্য। এসে আমার দ্বারা যেন কোনো গুনাহ না হয়ে যায়। প্রবেশের সময় আমি বলে এসেছি, আল্লাহ আমার জন্য রহমতের সকল দরজা খুলে দিন এবং শয়তান থেকে আমাকে রক্ষা করুন। শয়তানের যত কাজ এবং শয়তান যেসব কাজ পছন্দ করে এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকা তো মসজিদের বাইরেই আমার জন্য জরুরি ছিল। আর মসজিদের ভেতর তো তা অবশ্যই জরুরি।
ইতিপূর্বে আমরা সবর সম্পর্কে আলোচনা করেছি। সবর এটি ঈমানের এক গুরুত্বপূর্ণ সিফাত। মুমিন সবরহারা হতে পারে না। মুমিনের কাজই হল সবর ও শোকর। সবরের অনেক ক্ষেত্র আছে। যেমন, আজকের আলোচনার শুরুতে যখন সাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা হয়েছিল তখন আমরা অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে পড়েছিলাম। এ ধরনের অবস্থায় ধৈর্যহারা হওয়া ঠিক নয়। নিয়ম হল, কোনো এক ভাই জানিয়ে দেবেন, অমুক জায়গায় স্পিকারে সমস্যা হচ্ছে। আপনি জানিয়ে দিলেন। এরপর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারলে নিলেন আর ব্যবস্থা নিতে না পারলে যদি শোনা না যায়, তাহলে এতেও কোনো অসুবিধা নেই। ইতিপূর্বে আমি সাহাবায়ে কেরামের উদ্ধৃতিতে বলেছি, যারা শুনতে পারছেন তারা চুপ করে শুনে যে সওয়াব পাবেন, যারা শুনতে পারছেন না, কিন্তু চুপ আছেন এবং মসজিদের আদব ও মজলিসের আদব রক্ষা করছেন, তারাও সমান সওয়াব পেয়ে যাবেন।
আমার তো দরকার সওয়াব। আমার তো দরকার ফায়েদা। কেউ শুনে সওয়াব পাবে আর কেউ না শুনলেও আল্লাহ তাকে সওয়াব দেবেন। যে শুনতে পারছে, সে শোকর করবে। আর যে শুনতে পারছে না, সে সবর করবে। এটা যেকোনো মজলিস এবং যেকোনো বড় মজমার জন্য প্রযোজ্য। যেখানে আওয়াজ পৌঁছে না, সেখানে সবার দায়িত্ব সবর করা। আর বিশেষ করে মসজিদের মধ্যে তো আমাদের সবর করতেই হবে। এখানে তো সবরের শিক্ষা নেওয়ার জন্য এসেছি। আল্লাহকে রাজি করার জন্য মসজিদে এসেছি। এখানে আমরা সবরহারা হব না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা সকলকে তাওফীক দান করুন- আমীন।
মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করব আর বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে বের হব। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নিয়ত করব- আবার মসজিদে আসব। জুমার পরে বের হচ্ছি, নিয়ত থাকবে- আসরের সময় আমি মসজিদে এসে নামায পড়ব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন।
* আরবী খুতবায় ইসলামের সার্বজনীনতা ও শরীয়তে ইসলামীর পূর্ণাঙ্গতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন।
শ্রুতিলিখন : মাওলানা আবদুল্লাহ ফাহাদ