রবিউল আউয়াল ১৪৪৬   ||   সেপ্টেম্বর ২০২৪

মজলুম ফিলিস্তিনীদের কথা যেন ভুলে না যাই

খন্দকার মনসুর আহমদ

এই লেখাটি যখন প্রস্তুত হচ্ছে, তখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বিরামহীন ও পৈশাচিক গণহত্যার ১১তম মাস চলছে। গত ৩১ জুলাই ইরানে গুপ্ত ঘাতকের হামলায় শহীদ হন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাঈল হানিয়া। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট জায়নবাদী ইহুদীদের অবিরাম হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ হাজার নিরীহ মুসলিম শাহাদাত বরণ করেছেন। যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। ধ্বংসস্তুপের নিচে রয়ে গেছেন অগণিত বনী আদম। ইহুদীদের হাতে প্রকাশ্য-গোপন বন্দিত্বের শিকার হয়ে নিখোঁজ রয়েছে বহু মানুষ; যাদের একটি বড় অংশ শিশু। নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত আছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনী। দুর্ভিক্ষের কারণে খাদ্যাভাবে মারা যাচ্ছেন অনেকে।

আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে গাজার গণহত্যার প্রসঙ্গটি যেন অনেকটা চাপা পড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে অভূতপূর্ব এক গণ অভ্যুত্থানে সুদীর্ঘ  স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। পতনের পূর্বে  সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীরা যেভাবে এদেশের জনগণের উপর হত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছে, তা অবর্ণনীয়। তবে গাজা উপত্যকায় পরিচালিত গণহত্যা ও পৈশাচিকতা তো এর তুলনায় হাজার গুণ বেশি। তাই দেশীয় প্রেক্ষাপট ও সময়ের দীর্ঘতার কারণে যদি গাজার মজলুম ভাইবোন ও নিষ্পাপ শিশুদের আর্তনাদ-আহাজারি আমাদের গা-সওয়া হয়ে যায়, তাহলে মুসলিম হিসেবে, সর্বোপরি মানুষ হিসেবে এটা আমাদের মস্তবড় অপরাধ। দেহের ক্ষত ও তার যন্ত্রণা যত দীর্ঘস্থায়ীই হোক, এর জন্য প্রতি রাতই নির্ঘুম কাটাতে হয়। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদেরকে এক দেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলেছেন, দেহের একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে গোটা দেহই জ্বর ও নিদ্রাহীনতায় ভুগতে থাকে।

সুতরাং এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের প্রথম কর্তব্য হল, নিজেদের মাঝে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা। এটা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।

এই যে আমরা প্রসঙ্গের ভিড়ে আমাদের মজলুম ভাইবোনদের কথা বারবার ভুলে যাই, এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের অভাব। তাই এটাকে আবার আমাদের মাঝে নতুন করে জাগ্রত করতে হবে।

দ্বিতীয় করণীয় হল, নিজেদের সাধ্য মোতাবেক গাজার মজলুম ভাইবোনদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা।

সাহায্যের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। সবার পক্ষে সবধরনের সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। দূরত্বের কারণে এবং  নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদেরও অনেক সীমাবদ্ধতা ও অপারগতা রয়েছে। এর মানে এই নয় যে, আমাদের কিছুই করার নেই। সুতরাং আমরা যেন আমাদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে তাদের সঙ্গে শরীক থাকার চেষ্টা করি।

নিম্নে এ ধরনের কিছু বিষয় উল্লেখ করছি, যেগুলো আমাদের সবার পক্ষেই করা সম্ভব।

১. দুআ করা

ফিলিস্তিনের মুক্তি ও বিজয়ের জন্য এবং ইসরাইলী ও মার্কিন জালেম শক্তির বিনাশের জন্য আমরা  বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন সময়ে দুআ করতে পারি। সালাতুল হাজত পড়ে দুআ করতে পারি।  আবার হাদীস শরীফে ফরয নামাযের পর এবং শেষরাতে দুআ কবুলের বিশেষ প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ দুটো সময়ে আমরা তাদের জন্য বিশেষভাবে দুআ করতে পারি। সফরের অবস্থায় গাড়িতে বসে বসে দুআ করতে পারি। কারণ সফরের হালতে বিশেষভাবে দুআ কবুল হয়ে থাকে।

হাদীসে শত্রু দমনের জন্য যেসকল দুআ বর্ণিত আছে, সেগুলোর মাধ্যমে দুআ করতে পারি। মুখস্থ না পারলে দেখে দেখেই দুআ করি। সেটাও না পারলে নিজের ভাষাতেই আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি। মোটকথা দুআ করা থেকে যেন মাহরুম না হই। মনে রাখতে হবে, মজলুমের জন্য দুআ করতে পারাটাও সৌভাগ্যের বিষয়। এর দ্বারা নিজের জীবনেও বহু কল্যাণ সাধিত হয়।

নিম্নে হাদীসে বর্ণিত কয়েকটি দুআ পেশ করা হল-

ক.

আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাবের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের প্রতি বদদুআ স্বরূপ বলেছেন-

اَللّٰهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ، سَرِيعَ الْحِسَابِ، اَللّٰهُمَّ اهْزِمِ الْأَحْزَابَ، اَللّٰهُمَّ اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ.

হে কিতাব অবতীর্ণকারী ও দ্রুত বিচারকারী আল্লাহ! আপনি জোটবদ্ধ শত্রুকে পরাজিত করুন।

হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে পরাজিত ও পদস্খলিত করুন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৯৩৩

খ.

আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো দল বা গোষ্ঠীর অনিষ্টের আশঙ্কা করতেন, তখন বলতেন-

اَللّٰهُمَّ إنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ.

হে আল্লাহ! আমরা আপনাকে তাদের সম্মুখে করলাম [আপনিই তাদের দমন করুন] আর তাদের মন্দ প্রভাব থেকে আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৩৯

গ.

তায়েফের কঠিন বিপন্নতা ও অসহায়ত্বের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বৃক্ষের নিচে আশ্রয় নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে বিনীতভাবে একটি দুআ করেছিলেন। ফিলিস্তিনের সংকটকে নিজেদের সংকট  মনে করে সে দুআটিও ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে পাঠ করতে পারি। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালিবের ইন্তেকালের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়ে হেঁটে তায়েফ গমন করলেন এবং তায়েফবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। কিন্তু তারা তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিল না। তাই তিনি ফিরে এলেন এবং একটি বৃক্ষের নিচে এসে দুরাকাত নামায আদায় করে [মহান আল্লাহর কাছে] দুআ করলেন-

اَللّٰهُمَّ إلَيْكَ أشْكُوْ ضَعْفَ قُوَّتِيْ وَقِلَّةَ حِيْلَتِيْ، وَهَوَانِيْ عَلٰى النَّاسِ أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، أَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ، إِلٰى مَنْ تَكِلُنيْ؟ إِلٰى عَدُوٍّ يَتَجَهَّمُنِيْ، أمْ إِلٰى قَرِيْبٍ مَلَّكْتَهُ أمْرِيْ، إِنْ لَمْ تَكُنْ غَضْبَانًا عَلَيَّ فَلاَ أُبَالِيْ، غَيْرَ أنَّ عافِيَتَكَ أوْسَعُ لِيْ، أعُوْذُ بِنُوْرِ وَجْهِكَ الَّذِيْ أَشْرَقَتْ لَهُ الظُّلُمَاتُ، وصَلَحَ عَلَيْهِ أمْرُ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ أَنْ تُنْزِلَ بِيْ غَضَبَكَ، أَوْ تُحِلَّ عَلَيَّ سَخَطَكَ، لَكَ العُتْبىحَتّى تَرْضى، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إلاَّ بِكَ.

হে আল্লাহ! আপনার কাছে ব্যক্ত করছি, আমার শক্তির দুর্বলতার, কৌশলের স্বল্পতার এবং লোকচক্ষুতে আমার হেয়তার। হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু! আপনি তো সর্বাধিক দয়াবান; আমাকে কার কাছে সোপর্দ করছেন? শত্রুর কাছে, যে আমাকে আক্রমণ করবে? না এমন স্বজনের কাছে, যাকে আমার মালিক বানিয়ে দিয়েছেন। আপনি যদি অসন্তুষ্ট না হন, তাহলে আমি কিছুরই পরোয়া করি না। অবশ্য আপনার দেওয়া নিরাপত্তাই আমার জন্য শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। আমি আপনার মহিয়ান সত্তার নূরের আশ্রয় গ্রহণ করি, যার মাধ্যমে অন্ধকার আলোকোজ্জ্বল হয়ে যায় এবং ইহকাল ও পরকালের সব কাজ ঠিক হয়ে যায়। আশ্রয় প্রার্থনা করি আপনার গযবে পতিত হওয়া থেকে এবং আপনার অসন্তেÍাষের পাত্র হওয়া থেকে। আমি আপনার সন্তুষ্টি কামনা করতে থাকব, যতক্ষণ না আপনি সন্তুষ্ট হন।

আমরা আপনার সাহায্য ব্যতীত কোনো অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারি না এবং কোনো সওয়াব অর্জন করতে পারি না। -আদদুআ, তবারানী, হাদীস ১০৩৬; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ১৪৭৬৪; আলআহাদীসুল মুখতারাহ, যিয়া আলমাকদেসী, হাদীস ১৬২

ঘ.

উহুদ যুদ্ধে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দীর্ঘ দুআ করেছিলেন, এর মাধ্যমেও আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করতে পারি। সেই দুআর একটি অংশ ছিল-

اللّهُمَّ قَاتِلِ الْكَفَرَةَ، الَّذِينَ يُكَذِّبُونَ رُسُلَكَ، وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيْلِكَ، وَاجْعَلْ عَلَيْهِمْ رِجْزَكَ وَعَذَابَكَ،

اللّهُمَّ قَاتِلِ الْكَفَرَةَ  الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتَابَ إِلهَ الْحَقِّ.

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৪৯২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৮৬৮

ঙ.

কুনুতে নাযেলা হিসেবে ওমর রা. যে দুআটি করতেন, তার মাধ্যমেও আমরা দুআ করতে পারি-

اللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ، وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ وَلَا نَكْفُرُكَ، وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّيْ وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعى وَنَحْفِدُ، وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخَافُ عَذَابَكَ إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَفَّارِيْنَ مُلْحِقٌ،

 اللّهُمَّ عَذِّبِ الْكَفَرَةَ، وَأَلْقِ فِيْ قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ، وَخَالِفْ بَيْنِ كَلِمَتِهِمْ، وَأَنْزِلْ عَلَيْهِمْ رِجْزَكَ وَعَذَابَكَ،

اللّهُمَّ عَذِّبِ الْكَفَرَةَ أَهْلَ الْكِتَابِ الَّذِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ، وَيُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِيَاءَكَ،

اللّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ، وَاجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِهِمُ الْإِيْمَانَ وَالْحِكْمَةَ، وَثَبِّتْهُمْ عَلى مِلَّةِ نَبِيِّكَ، وَأَوْزِعْهُمْ أَنْ يُوْفُوْا بِالْعَهْدِ الَّذِيْ عَاهَدْتَّهُمْ عَلَيْهِ، وَانْصُرْهُمْ عَلى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ، إِلهَ الْحَقِّ، وَاجْعَلْنَا مِنْهُمْ.

-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৬৮

এছাড়াও হাদীসে বিভিন্ন দুআ বর্ণিত আছে। সেগুলোও পড়তে পারি। সেইসঙ্গে ইস্তিগফার ও দরূদ শরীফের ইহতিমাম করি।

চ.

আল্লাহ তাআলা শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। শান্তি নিরাপত্তা ও সুস্থতাসহ তাঁকে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন। গাজার গণহত্যা যত দীর্ঘ হচ্ছে, মজলুম ভাইবোনদের প্রতি তাঁর দরদ-ব্যথাও তত গভীর হচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে তিনি ফিলিস্তিনের জন্য প্রতিদিন ১০ মিনিট সময় বের করে দুআয়ে ইউনুসের মাধ্যমে দুআ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন-

আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করুন। তিনি যেন মুসলমানদেরকে এই মসিবত থেকে নাজাত দান করেন। এখন দুআ করার এক তরীকা তো হল, আমরা নামাযের পর দুআ করব, চলতে-ফিরতে দুআ করব এবং আমাদের দিলে এই চিন্তা প্রবল থাকবে। কিন্তু মানুষ বিষয়টি ভুলে যায়। অন্তরে চিন্তা এলেও আবার তা ভুলে যায়। তাই এ বিষয়ে আমার ভাবনায় একটি উপায় এসেছে। আশা করি আপনারা এটির সমর্থন করবেন। তা হলপ্রত্যেক মুসলিম দিন-রাতের দশ মিনিট সময় ফিলিস্তিনীদের জন্য ওয়াকফ [বরাদ্দ] করবেন। দশ মিনিট। এই দশ মিনিটে আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজির হয়ে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে কারীমা পাঠ করবেন-

لَاۤ اِلٰهَ  اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَکَ  اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ.

[(হে আল্লাহ!) আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী। -সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৭]

কারণ কুরআনে পাকের ওয়াদা হচ্ছে, এর মাধ্যমে আল্লাহ বিপদ থেকে পরিত্রাণ দেবেন। অভিজ্ঞতাও তাই বলে। হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে গিয়ে এ বাক্য পাঠ করে আল্লাহ তাআলাকে ডেকেছেন, তখন আল্লাহ তাকে মুক্তি দিয়েছেন।...

 সামনে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

وَکَذٰلِکَ  نُـنْجِي الْمُؤْمِنِيْنَ.

[আর এভাবে আমি মুমিনদেরকে নাজাত দিয়ে থাকি। -সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৮]

[মাসিক আলকাউসারের যিলহজ্ব ১৪৪৫/ জুন ২০২৪-এ তাঁর পূর্ণ আলোচনা ছাপা হয়েছে।]

২. আর্থিক সহযোগিতা করা

ফিলিস্তিনী মজলুম ভাইবোনদের সাহায্য করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল আর্থিকভাবে তাদের সহযোগিতা করা। যাদের সামর্থ্য ও সুযোগ রয়েছে তাদের এ বিষয়ে যত্নবান হওয়া উচিত।

৩. ইসরাইলী পণ্য বয়কট করা

আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুপাতে শত্রুর অর্থনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি। আমরা প্রথমে ইসরাইল ও আমেরিকার পণ্য বর্জন করতে পারিআর ইসরাইলকে সহযোগিতা করে এমন প্রতিটি দেশের পণ্য বয়কট করতে পারি এবং এ বিষয়ে ব্যাপক জনমত তৈরিতে কাজ করতে পারি।

বয়কট একটি ভালো অস্ত্র। এটা শত্রুদের অর্থনীতিতে আঘাত হানে।  এ মুহূর্তে এ অস্ত্র ব্যবহার করা আমাদের ঈমানী কর্তব্যও বটে। কারণ ফিলিস্তিনী মুসলিমদের ওপর এতো নির্মম ও পাশবিক গণহত্যা চালানোর পরও  ইসরাইল ও তার দোসরদের পণ্য ক্রয়ের অর্থ দাঁড়ায় আমার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ নেই। বরং আমার বিলাসিতা ও বাণিজ্যই আমার কাছে বড়।

বন্ধুরা! এটা তো কোনো মুসলিমের চিন্তা হতে পারে না। মহান আল্লাহ  যদি আমার এই নিষ্ঠুরতার কিছু শাস্তি দেন এবং আমার অর্থনৈতিক বরকত নষ্ট করে দেন তাহলে কী করার থাকবে।

আবার কারো মনে হতে পারে, আমার একার সামান্য বয়কটে ইসরাইলের কী-ইবা ক্ষতি হয়ে যাবে। তাদের জবাবে আমরা কবির ভাষায় বলতে চাই-

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালু কণা বিন্দু বিন্দু জল/গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।

মূলত একটু একটু করেই অনেক হয়। একজন-দুজন করেই তা লক্ষ কোটিতে পৌঁছাবে। তাছাড়া ক্ষতি যতটুকুই হোক, নিজের সাধ্যমতো জালেমের বিপক্ষে এবং মজলুমের পক্ষে  ভূমিকা রাখা আমাদের দ্বীনী ও ঈমানী দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, জালেমকে সামান্য সাহায্য করলেও সেজন্য আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। 

 

 

advertisement