সফর ১৪৪৬   ||   আগস্ট ২০২৪

দাঈদের প্রতি, সকলের প্রতি
পুনর্যাত্রার প্রস্তুতি এখনই শুরু হোক

মাওলানা মাসউদুযযামান শহীদ

চারদিকে অনাচার-অবিচার দেখতে দেখতে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি। মানুষের মনুষ্যত্ব আজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে! নিয়ম-নীতির তোয়াক্কাহীন শাসনযন্ত্রের কবলে পড়ে মানুষের প্রাণ নাকাল। এ বন্দীশালা থেকে কি মুক্তির উপায় নেই! এমন একটি দেশ যদি হত, যেখানে ভয়হীন, বাধাবিপত্তিহীন পরম নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করা যেত! এমন একটি পৃথিবী যদি গড়া যেত, যেখানে দুঃখ নেই, জুলুম নেই, যেখানে আছে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার; আছে অধিকার ও মানবতা, মৈত্রী ও ভালবাসা...।

এমন দেশ কিন্তু পৃথিবীতে ছিল। এমন পৃথিবী কিন্তু দুনিয়াবাসী দেখেছিল। সে দেশের এবং সেই পৃথিবীর শাসক যারা ছিলেন, তাঁদের কাছেই শিখতে হবে সুখী দেশ ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ার সবক। অবিশ্বাসীরা তাতে যতই অবাক হোক কিংবা আপত্তি তুলুক। সভ্যতার দাবিদারদের সুসভ্যচেহারাখানা তো কয়েক শতাব্দী ধরে জগদ্বাসী দেখল। এবার পৃথিবীবাসীর মনে করতে দেয়া উচিত, কী ছিল তার আগে, কেমন ছিল। সভ্য ও শিক্ষিত হবার উপায়-উপকরণ এবং মানবতা ও আদর্শবাদিতার চর্চা- এসবকিছু দুনিয়াবাসী কাদের থেকে পেয়েছিল, কাদের দেখে শিখেছিল। সেই সমৃদ্ধ অতীতে পুনর্যাত্রার সম্মিলিত মহাপ্রস্তুতি এখনই শুরু করা উচিত।

সোনালী যুগের সেই সুশাসনের যারা কারিগর ছিলেন, তাঁদের শাসনামলের ঘটনাগুলো, তাঁদের শাসকজীবনের আচার-অভ্যাস, রীতি-নীতি ও বৈশিষ্ট্যগুলো বারবার আলোচিত হওয়া উচিত। তেমনিভাবে কেমন ছিলেন সে যুগের নাগরিকরা। শিক্ষা-দীক্ষা এবং উন্নত আখলাক-চরিত্রে কীভাবে তারা পরিপূর্ণ মানবে পরিণত হয়ে উঠেছিলেন। ভালো শাসক এবং সুনাগরিক- এ দুইয়ে মিলে কীভাবে গড়ে উঠেছিল একটি মনুষ্যত্বের সমাজ...। এ আলোচনা এজন্য দরকার, যাতে একালের মানুষ জানতে পারে, সেযুগের মানুষের সফলতার পেছনের কথাগুলো। কেন, কীভাবে, কেমন করে তাঁরা পৃথিবীজুড়ে শান্তি-সাম্য-ন্যায়বিচার এবং মানবতা ও মহানুভবতার মহোত্তর উত্তরণ উপহার দিতে পেরেছিলেন। তাতে করে হয়তোবা জেগে উঠবে ঘুমন্ত চেতনা। অনাচার, অবিচার আর নৈরাজ্যে ভরা দেশ, সমাজ ও বিশ্বকে শোধরানোর দিশা পেয়ে যাবে- মুক্ত বাতাসে দম নেবার জন্য মুখিয়ে থাকা মানবতা।

এখনো নিশ্চয়ই আছে এমন তারুণ্য, যারা আদর্শবাদিতায় বিশ্বাসী। মিথ্যা, ধোঁকা, প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা ও স্বার্থপরতার প্রবল উৎসবের মধ্যেও যারা আঁকড়ে থাকতে চায় শেকড়। তাদেরই জন্য এ নিবেদন।

আজকে যখন অহরহ দেশপ্রেমিক, জনদরদী, ত্যাগী ও মানবতাবাদী শব্দগুলোর উচ্চারণ শুনি তখন  আমাদের মনে রাখা উচিত, যতক্ষণ না মানুষের মাঝে আল্লাহর ভয়, পরকালের চিন্তা, আমানতদারি ও আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চেতনা জাগ্রত হবে ততক্ষণ সে কিছুতেই সত্যিকার দেশপ্রেমিক ও জনদরদী হতে পারবে না। কেননা গণমানুষের কল্যাণ সাধনের চিন্তা তখনই সে করতে পারবে, যখন নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে পারবে। আর নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে পারে কেবল সেইসব মানুষেরা, যারা ত্যাগের মাঝেই অর্জন খুঁজে পায়। যারা তাদের সব ভালো কাজের প্রাপ্তি ও প্রতিদান শুধু আল্লাহর কাছে চায়। যারা শাসনভারকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত মনে করে রাষ্ট্র ও জনতার রক্ষণাবেক্ষণে যত্নবান হয়। আর তাই আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় মিশ্রিত থাকে তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপে- সব বিষয়ে, সবসময়। এমন মানুষের কাছেই তো সুবিচার ও সুশাসন আশা করা যায়। তাঁদের পথেই হাঁটতে হবে এখন, আর দেরি নয়। বহু কিছু দেখা হল, বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হল। এখন ঘরে ফেরার সময়। জাতীয় কবির ভাষায়-

ঘুমাইয়া কাযা করেছি ফজর

তখনো জাগিনি যখন যোহর

হেলায় খেলায় কেটেছে আছর

মাগরিবে আজ শুনি আযান;

নামাযে শামিল হওরে এশাতে

এখনো জামাতে আছে স্থান!

 

১৮-১-১৪৪৬ হি./২৫-৭-২০২৪ ঈ. বৃহস্পতিবার, রাত

 

 

 

advertisement