সফর ১৪৪৬   ||   আগস্ট ২০২৪

ঈমান-আকীদা বিনষ্টকারী বিভিন্ন চিন্তা ও কথা ॥
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর

মাহমুদ বিন ইমরান

প্রশ্ন :

بسم الله الرحمن الرحيم

বিষয় : স্থানীয় এক ব্যক্তির আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে শরয়ী সমাধান জানার আবেদন।

মুহতারাম!

السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

আমরা নোয়াখালীর ... উপজেলার ... গ্রামের স্থানীয় উলামা ও ইমামগণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শরয়ী সমাধানের লক্ষ্যে আপনাদের নিকট পত্র লিখছি। আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি, যার ফেসবুক আইডি এই- ...

তিনি গত ২০১৭ ঈ. সনে তার ফেসবুক পেইজে আল্লাহ, রাসূল এবং ইসলামের বিভিন্ন নিদর্শন ও বিধান সম্পর্কে নানা গোমরাহীমূলক কথাবার্তা লেখালেখি করেন এবং শরীয়তের কোনো কোনো বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও করেন। তখন স্থানীয় উলামা, আইম্মা ও তাওহীদী জনতা তার বিরুদ্ধে গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। পরবর্তীতে তিনি নানা ছল-চাতুরী করেও বাঁচতে না পেরে অবশেষে ২০১৭ ঈ. সনের মে মাসে স্থানীয় উলামায়ে কেরামের সামনে তওবা করে নতুন করে কালিমা পড়ে মুসলমান হন। এরপর থেকে তিনি নীরব হয়ে যান। কিন্তু গত এক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজে নিজের একটা সরব অবস্থান তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

তার কার্যক্রমগুলো হল, ২০২২ সালে ঈদুল ফিতরের পরের দিন তিনি আলোর পথেনামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে এলাকার দরিদ্র মানুষের মাঝে নতুন টাকা বিতরণ করেন। ঈদুল আযহার পরের দিনও নতুন টাকা বিতরণ করেন। ২০২৩ ঈ. সনে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ... গ্রামের সকল মসজিদের ইমামগণকে জানান, ‘আলোর পথেসংগঠনের পক্ষ থেকে ... গ্রামে জামাতে সালাত আদায় ও উত্তম চরিত্রের চল্লিশ দিনব্যাপী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ইমাম সাহেবগণ যেন বিষয়টি জুমার দিন বয়ানে ঘোষণা করে দেন। কিন্তু এলাকার সচেতন উলামায়ে কেরাম যেহেতু তার সম্পর্কে অবগত তাই তারা পরামর্শ দেন, প্রথমে আলোর পথেসংগঠনটি কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা কী এবং তাদের অর্থের উৎস কী- এ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জানতে হবে। এগুলো না জেনে প্রতিযোগিতার বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া যাবে না।

দুঃখজনক হল, কিছু মানুষ উক্ত ব্যক্তি ও তার সংগঠনের নাম গোপন করে সরাসরি উলামায়ে কেরামের নামে ঘোষণাটি করে দেয়। ফলে সমাজে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ব্যাপক সমালোচনা হয়। সাধারণ মানুষের অনেকেই এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় উলামা ও ইমামগণ পরামর্শে বসেন। তারা পুনরায় ওই ব্যক্তির ফেসবুক পেইজ ঘাঁটেন। তারা দেখেন, ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন থেকে তার বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্টে কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াতের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা করে আসছেন। শরীয়তের কোনো কোনো বিষয় নিয়ে উপহাসও করেছেন। তার এ ধরনের কিছু পোস্ট ও কমেন্টের ছবি প্রশ্নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হল। এছাড়া তিনি বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে যুক্ত। যেমন : কোয়ান্টাম মেথড, সিলভা মেথড, কসমিক হিলারস ফাউন্ডেশন। তিনি মানুষকে এসবের দিকে আহ্বান করেন।

অতএব মুহতারামের নিকট বিনীত নিবেদন, উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যসমূহের ভিত্তিতে তার সম্পর্কে এবং কোয়ান্টাম মেথড, সিলভা মেথড ও কসমিক হিলারস ফাউন্ডেশন সম্পর্কে শরয়ী সমাধান কী- জানিয়ে বাধিত করবেন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

 

নিবেদক

...

তারিখ : ১৬-০৩-২০২৩ ঈ.

(প্রশ্নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত কাগজগুলো, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির ফেসবুক আইডি ও প্রশ্নকারীর নাম-ঠিকানা অনিবার্য কারণে এখানে ছাপা হল না।)

 

 

উত্তর

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين وعلى آله وصحبه أجمعين.

আমরা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির ফেসবুক স্ট্যাটাস ও কমেন্টগুলো দেখেছি। সরাসরি তার ফেসবুক পেইজ ও এক্সে (সাবেক টুইটার) গিয়েও অনেক স্ট্যাটাস ও কমেন্ট পড়েছি। তার ফেসবুক পেইজের বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, সিলভা মেথড, কোয়ান্টাম মেথড ও কসমিক হিলারস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এমনকি কসমিক হিলারসের ওয়েব সাইটে এডভাইজারী বোর্ডের সদস্যদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তাই আমরা কসমিক হিলারস, সিলভা মেথড ও কোয়ান্টাম মেথডের পেইজ ও বইপত্রগুলোও ঘেঁটে দেখেছি।

এই সবকিছু থেকে এ বিষয়টা একদম স্পষ্ট, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ২০১৭ সনে তওবা করে ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও এখনো তার মধ্যে অনেক কুফরী চিন্তা এবং মারাত্মক রকমের গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা বিদ্যমান। এসবের দিকে তিনি মানুষকে দাওয়াতও দিয়ে বেড়ান। সেগুলোর কোনো কোনোটা তো এমন ভয়ানক কুফর যে, তা কারো মধ্যে থাকলে তার ঈমানই নষ্ট হয়ে যায়।

নমুনাস্বরূপ তার কয়েকটি মারাত্মক কুফর ও ভ্রান্ত চিন্তা তুলে ধরা হল-

১. কুরআনের অপব্যাখ্যা।

২. কুরআনের আরবী পাঠ জরুরি নয় মনে করা।

৩. কুরবানীর বিধান নিয়ে উপহাস।

৪. দাড়ি-টুপি নিয়ে উপহাস।

৫. مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ হাদীসকে কুরআন বিরোধী আখ্যা দেওয়া।

৬. হাদীস ও হাদীসের কিতাবসমূহের প্রতি অনাস্থা।

৭. আহলে কুরআন তথা হাদীস অস্বীকারকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক।

৮. হ্যানি এটচানের মতো স্পষ্ট কুরআন বিকৃতিকারী ও হাদীস অস্বীকারকারীর অনুসরণ।

৯. সিলভা মেথড, কসমিক হিলারস ও কোয়ান্টাম মেথডের অনুসরণ এবং সেগুলোর প্রচার-প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা পালন।

এখানে এ কথাও মনে রাখা দরকার, কেউ কোনো কুফরী বা গোমরাহীপূর্ণ কথা লেখার পর যদি কোনো কারণে সেটা লুকিয়ে ফেলে বা সরিয়ে দেয়, তাহলে শুধু সরিয়ে দেওয়া বা লুকিয়ে ফেলার দ্বারাই সে তা থেকে দায়মুক্ত হয়ে যায় না। বরং দায়মুক্ত হওয়ার জন্য তাকে প্রকাশ্যে ঐ কথার বিরোধিতা করতে হবে এবং তওবার ঘোষণা দিয়ে সঠিক পথে চলতে হবে।

যাইহোক নিম্নে তার এসব কুফরী ও গোমরাহী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

 

এক. কুরআনের অপব্যাখ্যা

ক. সূরা বনী ইসরাঈলের ৪৫-৪৬ নং আয়াতের অপব্যাখ্যা

প্রথমে আয়াতদুটির সঠিক অর্থ জেনে নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ اِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ جَعَلْنَا بَیْنَكَ وَ بَیْنَ الَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُوْرًا، وَّ جَعَلْنَا عَلٰی قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ یَّفْقَهُوْهُ وَ فِیْۤ اٰذَانِهِمْ وَقْرًا وَ اِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِی الْقُرْاٰنِ وَحْدَهٗ وَلَّوْا عَلٰۤی اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرًا.

আপনি যখন কুরআন পাঠ করেন তখন আমি আপনার ও যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য পর্দা রেখে দেই। আর তাদের অন্তরের ওপরে রেখে দেই এক আচ্ছাদন, যাতে ওরা কুরআন অনুধাবন না করে এবং ওদের কানে সৃষ্টি করে দেই বধিরতা। আর আপনি যখন কুরআনের মধ্যে এককভাবে আপনার রবের উল্লেখ করেন তখন ওরা ঘৃণাভরে পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়। -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৪৫-৪৬

আয়াতদুটিতে একথা একেবারেই স্পষ্ট যে, এখানে ঐসব কাফেরদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না। তাদেরকে কুরআন শোনানোর সময় তাতে এক আল্লাহর আলোচনা এলে তারা ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করে। মনোযোগসহ কুরআন শোনা এবং ইনসাফের সঙ্গে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করাÑ এই কাজটুকু তারা করে না। তাদের এই হঠকারিতার শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদের মাঝে অদৃশ্য আড়াল তৈরি করে দেন, তাদের অন্তরে আবরণ ফেলে দেন এবং তাদের কানকে বধির করে দেন। ফলে কুরআন আর তাদের অন্তরে রেখাপাত করে না। তাদের হেদায়েতের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। মোটকথা আয়াতদুটি অবতীর্ণ হয়েছে হঠকারী কাফেরদের সম্পর্কে।

এবার দেখুন প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি কী বলেন। গত ২৩ এপ্রিল ২০২১ তারিখের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন-

সুরা বনি ইসরাইলের ৪৫-৪৬ আয়াতের শিক্ষা : যারা কোরআন বুঝে পড়ে না, আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মেই তাদের অন্তরে মূর্খতার আস্তর লেগে যায়, আল্লাহর বিধিবিধান শুনার শ্রবণশক্তি রহিত হয়ে যায়।

পর্যালোচনা : তিনি বিভিন্ন সময়ে নিজের কুরআন গবেষণানিয়ে গর্ব করে থাকেন। অপরদিকে সাধারণ হাফেয, কারী ও দ্বীনদার মানুষ, যারা কুরআনের অর্থ না বুঝলেও নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং কুরআনের শিক্ষা ও বিধিবিধানসমূহ আলেমগণের কাছে শিখে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করেন- তাদের সম্পর্কে তার অবজ্ঞা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শেষ নেই। অথচ এই হল তার কুরআন গবেষণা! কোথায় হঠকারী অহংকারী কাফের আর কোথায় অর্থ না বুঝে কুরআন তিলাওয়াতকারী মুমিন! কিন্তু তিনি কী অবলীলায় কাফেরদের পরিণাম মুমিন বান্দাদের ওপর চাপিয়ে দিলেন! হাদীসের ভাষায় একে বলা হয়- تحريف الغالين (বাড়াবাড়িকারীদের বিকৃতি)।

কুরআন কারীমের তিলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত এবং অর্থ না বুঝে তিলাওয়াত করলেও সওয়াব লাভ হবে- এটি শরীয়তের একটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। যুগে যুগে কুরআন-সুন্নাহর বিজ্ঞ আলেমগণের এ বিষয়ে ইজমা তথা ঐকমত্য রয়েছে। বিষয়টি শরীয়তের অনেক দলীল দ্বারাই প্রমাণিত। এখানে শুধু একটি হাদীস পেশ করা হল। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَه بِه حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لاَ أَقُولُ الٓمّٓ حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ، وَلاَمٌ حَرْفٌ، وَمِيمٌ حَرْفٌ.

যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পড়বে, সে বিনিময়ে একটি নেকি পাবে। আর সেটা দশগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,) আমি বলি না, ‘আলিফ-লাম-মীমএকটি হরফ। বরং আলিফএকটি হরফ, ‘লামএকটি হরফ এবং মীমএকটি হরফ। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১০

দেখুন, হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট বলেছেন, কেবল পড়ার বিনিময়েই প্রতি হরফে দশ নেকি দেওয়া হবে। অর্থ বুঝে পড়তে হবে এই শর্ত তিনি করেননি। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন আলিফ-লাম-মীম। এখান থেকে বিষয়টা আরো স্পষ্ট। কারণ আলিফ-লাম-মীমদ্বারা আল্লাহ তাআলার কী উদ্দেশ্য সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। আমাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, এটি এবং কুরআনে এ ধরনের আরো যত আলহুরূফুল মুকাত্তাআতআছে, সব আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদাহরণ হিসেবে কুরআনের এমন একটি কালিমা নির্বাচন করলেন, যার অর্থ আমরা জানি না। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, অর্থ না বুঝে তিলাওয়াত করলেও তিলাওয়াতের সওয়াব লাভ হবে।

অর্থ বুঝে ও চিন্তা-ভাবনা করে কুরআন তিলাওয়াত করা নিঃসন্দেহে অনেক সওয়াবের কাজ। কিন্তু এর মানে কখনো এই নয় যে, অর্থ না বুঝে তিলাওয়াত করার কোনো মূল্য নেই।

মনে রাখা দরকার, কুরআনের বিধিবিধান ও হালাল-হারাম জানা আর অর্থ বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করা- একটি আরেকটির জন্য অনিবার্য নয়। যে ভদ্রলোকেরা অর্থ না বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করাকে অর্থহীনমনে করেন, তারা হয়তো ভাবেন, অর্থ না বুঝে কুরআন পড়লে কুরআনের শিক্ষা কীভাবে লাভ করবে? খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এই ব্যক্তিরা দ্বীন শেখার জন্য হয়তো কখনো আলেমদের কাছে আসেননি এবং নিয়ম মাফিক আলেমদের কাছে দ্বীন শেখেননি। তাই তারা জানেন না, দ্বীন ও কুরআন শেখার সহজ ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি কী?

উলামায়ে কেরাম কখনো সাধারণ মানুষকে কুরআনের অর্থ-মর্ম শিখতে নিরুৎসাহিত করেননি। বরং মানুষ যেন সঠিকভাবে কুরআনের মর্ম অনুধাবন করতে পারে এবং কোনো পদস্খলনের শিকার না হয়, সেজন্য তারা যুগে যুগে সাধারণ মানুষের বোঝার উপযোগী করে কুরআনের অনুবাদ করেছেন এবং কুরআনের মর্ম ব্যাখ্যা করেছেন। সেইসঙ্গে উলামায়ে কেরাম জানেন, সাধারণ মানুষের জন্য কোন্ বিষয়টা আগে জরুরি এবং কতটা জরুরি। সে হিসেবেই তারা মানুষকে দিকনির্দেশনা দান করেন। সেজন্যই তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পদ্ধতি অনুযায়ী বলেন, একজন মুমিনকে প্রথমে ঈমানী যিন্দেগী শিখতে হবে, যা কুরআন কারীমের সকল মৌলিক হেদায়েত ও বিধিবিধানের সারনির্যাস। এ অনুসৃত পদ্ধতিটিই ধ্বনিত হয়েছে সাহাবায়ে কেরামের এ বাণীতে-

تَعَلَّمْنَا الْإيمَانَ، ثُمَّ تَعَلَّمْنَا الْقُرْآنَ.

আমরা (প্রথমে) ঈমান শিখেছি, এরপর কুরআন শিখেছি। -আসসুন্নাহ, আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদীস ৮২৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৬১

আফসোস, এই ভদ্রলোকগণ উলামায়ে কেরামের এই কল্যাণকামিতাকে অবজ্ঞা করেছেন। অতঃপর নিজেদের ভুল চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতিকে দলীল দিয়ে প্রমাণ করার জন্য যা যা করেছেন তা কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা ও বিকৃতি বৈ কিছু নয়। এর একটা দৃষ্টান্ত, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির এ কথা। অর্থ না বুঝে তিলাওয়াত করাকে ভুল আখ্যা দেওয়ার জন্য তিনি কী অনায়াসে কাফেরদের পরিণতি মুমিনদের ওপর চাপিয়ে দিলেন!

খ. কেবলা নিয়ে সংশয় ছড়ানো

নামাযে কেবলামুখী থাকা দ্বীন ও শরীয়তের একটি স্বতঃসিদ্ধ ও সর্বজনবিদিত বিষয়। সূরা বাকারার ১৪৪, ১৪৯ ও ১৫০ নং আয়াতে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় তিন বার এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ.

আপনার চেহারা মাসজিদে হারামের দিকে ফেরান। -সূরা বাকারা (২) : ১৪৪

অতএব কেউ যদি এ বিষয়ে সন্দেহও পোষণ করে, সে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে। আশ্চর্যের বিষয়, এমন স্পষ্ট বিষয়েও প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি সংশয় ছড়িয়েছেন। তিনি লিখেছেন-

পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরে মুসলমানেরা নামাজ পড়ে। সুরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতে আল্লাহ ষ্ট্রেইট বলে দিয়েছেন পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফেরানোতে কোন পুণ্য নেই। যেসব কাজে পুণ্য আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কাউকে কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটা পালন করা।-ফেসবুক পোস্ট, ২৩ অক্টোবর ২০২২

পর্যালোচনা : তিনি তার এ কথায় কেবলার বিধানকে (যা কুরআনের তিনটি আয়াতে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে) অবজ্ঞা করলেন এবং এ সম্পর্কে মানুষকে ভুল বার্তা দিলেন। বোঝাতে চাইলেন, মুসলমানেরা নামাযে কেবলামুখী হয়- এটা ভুল ও কুরআন বিরোধী। আর এটা করতে গিয়ে তিনি সূরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতকেও বিকৃত করলেন। আয়াতটি হল-

لَیْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلٰٓىِٕكَةِ وَالْكِتٰبِ وَالنَّبِیّٖنَ، وَاٰتَی الْمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الْقُرْبٰی وَالْیَتٰمٰی وَالْمَسٰكِیْنَ وَابْنَ السَّبِیْلِ وَالسَّآىِٕلِیْنَ وَفِی الرِّقَابِ، وَاَقَامَ الصَّلٰوةَ وَاٰتَی الزَّكٰوةَ، وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عٰهَدُوْا، وَالصّٰبِرِیْنَ فِی الْبَاْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِیْنَ الْبَاْسِ، اُولٰٓىِٕكَ الَّذِیْنَ صَدَقُوْا، وَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُتَّقُوْن.

পুণ্য তো (কেবল) এটাই নয় যে, তোমরা নিজেদের মুখ পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাবে। বরং প্রকৃত পুণ্য-(বান) তো সে, যে ঈমান রাখে আল্লাহ, শেষ দিবস, সকল ফেরেশতা, কিতাব ও নবীদের প্রতি। এবং যে অর্থ-সম্পদ দান করে এর প্রতি ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও- আত্মীয়-স্বজন, এতীম, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির ও ভিক্ষুকদের আর দাসমুক্তিতে। এবং যে নামায কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে। এবং যারা স্বীয় অঙ্গীকার পূর্ণ করে যখন তারা অঙ্গীকার করে এবং যারা ধৈর্যধারণ করে অভাব-অনটনে, রোগ-যাতনায় ও যুদ্ধের সময়ে। এরাই সত্যবাদী এবং এরাই মুত্তাকী। -সূরা বাকারা (২) : ১৭৭

অথচ এর আগের আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট, এখানে মূলত আহলে কিতাবদের ভুল সংশোধন করা হচ্ছে। কারণ মসজিদে আকসা থেকে মসজিদে হারামের দিকে কেবলা ফেরানোর বিষয়টা তাদের কাছে বড় কঠিন ঠেকছিল। সেজন্য আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফেরানোটা মূল উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য তো আল্লাহর আনুগত্য করা, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করা, তিনি যেদিকে মুখ ফেরাতে বলেন সেদিকে মুখ ফেরানো এবং তাঁর দেওয়া বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করা।

কিবলার বিধানের হাকীকত তো আল্লাহ তাআলা নিজেই বলে দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন-

وَ مَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِیْ كُنْتَ عَلَیْهَاۤ اِلَّا لِنَعْلَمَ مَنْ یَّتَّبِعُ الرَّسُوْلَ مِمَّنْ یَّنْقَلِبُ عَلٰی عَقِبَیْهِ، وَ اِنْ كَانَتْ لَكَبِیْرَةً اِلَّا عَلَی الَّذِیْنَ هَدَی اللهُ.

পূর্বে আপনি যে কেবলার অনুসারী ছিলেন, আমি তা অন্য কোনো কারণে নয়; বরং কেবল এ কারণেই স্থির করেছিলাম যে, আমি জানতে চাই- কে রাসূলের অনুসরণ করে আর কে পেছনের দিকে ফিরে যায়। সন্দেহ নেই, এ বিষয়টা বড় কঠিন, তবে আল্লাহ যাদের হেদায়েত দিয়েছেন তাদের পক্ষে (মোটেই কঠিন) নয়। -সূরা বাকারা (২) : ১৪৩

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা চাইলে শুরু থেকেই মাসজিদে হারামকে কেবলা হিসেবে নির্ধারণ করে দিতে পারতেন। কিন্তু প্রথমে মাসজিদে আকসাকে কেবলা হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। তিনি দেখতে চান, পরবর্তীতে যখন মাসজিদে হারামকে কেবলা হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ আসবে তখন কে রাসূলের অনুসরণ করে আর কে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে।

মোটকথা, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি কেবলার মতো একটি অকাট্য কুরআনী বিধানকে অবজ্ঞা করেছেন এবং সাধারণ মানুষকে ভুল বার্তা দিয়েছেন। তিনি সূরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতটি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন। আয়াতের-لَيۡسَ ٱلۡبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ قِبَلَ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ-অংশটি এমনভাবে উল্লেখ করেছেন, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে কেবলা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।

তার লেখায় এ ধরনের অপব্যাখ্যা ও বিকৃতি আরো রয়েছে। এখানে নমুনা হিসেবে দুটি উদাহরণ উল্লেখ করা হল।

দুই. কুরআনের আরবী পাঠ জরুরি নয় মনে করা

তার আরেকটি কুফরী চিন্তা হল, তিনি কুরআনের আরবী পাঠ জরুরি মনে করেন না। তার মতে কুরআনের অনুবাদ পড়াই যথেষ্ট।

তিনি লিখেছেন-

আরবীতে কুরআন পড়লে সওয়াব পাওয়া যায় এরকম কোন আয়াত কুরআনে থাকলে তা জানার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী। কারো জানা থাকলে বলবেন প্লীজ।-এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট, ২৩ জুন ২০১৯

পর্যালোচনা : এটা তার আরেক কুফরী চিন্তা। কুরআন মাজীদে অন্তত দশ জায়গায় আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, তিনি আরবী কুরআন নাযিল করেছেন। সূরা ইউসুফে বলেন-

اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ قُرْءٰنًا عَرَبِیًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ.

নিশ্চয়ই আমি একে আরবী কুরআনরূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। -সূরা ইউসুফ (১২) : ২

সূরা হা-মীম সাজদায় বলেন-

كِتٰبٌ فُصِّلَتْ اٰیٰتُهٗ قُرْاٰنًا عَرَبِیًّا لِّقَوْمٍ یَّعْلَمُوْنَ .

এটি এমন কিতাব, যার আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। এটি আরবী ভাষার কুরআন; জ্ঞানী লোকদের জন্য। -সূরা হা-মীম সাজদা (৪১) : ৩

আরো বলেন-

وَ لَوْ جَعَلْنٰهُ قُرْاٰنًا اَعْجَمِیًّا لَّقَالُوْا لَوْ لَا فُصِّلَتْ اٰیٰتُهٗ.

আমি যদি একে অনারব ভাষার কুরআন বানাতাম, তবে তারা অবশ্যই বলত, এর আয়াতগুলো স্পষ্ট করা হল না কেন? -সূরা হা-মীম সাজদা (৪১) : ৪৪

অতএব একদম স্পষ্ট- আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমকে আরবী ভাষার কুরআনরূপে নাযিল করেছেন। অন্য ভাষায় এর অনুবাদ করা হলে সেটা কুরআনের অনুবাদ হবে, কুরআন নয়। ইমাম নববী (ওফাত : ৬৭৬ হি.) রাহ. দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন-

تَرْجَمَةُ الْقُرْآنِ لَيْسَتْ قُرْآنًا بِإِجْمِاعِ الْمُسْلِمِينَ، وَمُحَاوَلَةُ الدَّلِيْلِ لِهذَا تَكَلُّفٌ، فَلَيْسَ أَحَدٌ يُخَالِفُ فِيْ أَنَّ مَنْ تَكَلَّمَ بِمَعْنَى الْقُرْآنِ بِالْهِنْدِيَّةِ لَيْسَتْ قُرْآنًا، وَلَيْسَ مَا لَفَظَ بِه قُرْآنًا، وَمَنْ خَالَفَ فِيْ هذَا كَانَ مُرَاغِمًا جَاحِدًا.

কুরআনের অনুবাদ কুরআন নয়- এ বিষয়ে গোটা মুসলিম উম্মাহ্র ইজমা তথা ঐকমত্য রয়েছে। আর এ সম্পর্কে দলীল খোঁজাটাও অহেতুক। কারণ এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই যে, কেউ যদি হিন্দী ভাষায় কুরআনের অর্থ পড়ে, তবে হিন্দী ভাষার অনুবাদটাও কুরআন নয় আর সে যা উচ্চারণ করেছে সেটাও কুরআন নয়। এ বিষয়ে কেউ যদি ভিন্নমত পোষণ করে, তবে সে অস্বীকারকারী ও হঠকারী। -আলমাজমু শরহুল মুহাযযাব, নববী ৩/৩৮০

তাই এটাও দ্বীন ও শরীয়তের অকাট্য বিষয় যে, কুরআনকে কুরআনের ভাষায় (যা আল্লাহর নাযিলকৃত) পড়লেই তা কুরআন তিলাওয়াত হবে এবং তিলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যাবে। অনুবাদ পড়ে তিলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যাবে না। কুরআনের অনুবাদ পড়া (যদি তা নির্ভরযোগ্য কোনো অনুবাদ হয়ে থাকে) কুরআন শেখার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে তা অবশ্যই নেক আমল হিসেবে গণ্য হবে; তবে এর দ্বারা কোনোভাবেই তিলাওয়াতে কুরআনের বিধান পালিত হবে না।

অথচ বাস্তবতা হল, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি মূলত আল্লাহর নাযিলকৃত আরবী কুরআনকেই কুরআন মনে করেন না। তার কাছে এর ভাবার্থটাই কুরআন। এজন্য তিনি কুরআনের অনুবাদ পড়াকেই যথেষ্ট মনে করেন। কুরআন তিলাওয়াতকে তিনি ইবাদত মনে করেন না এবং কুরআনের হাফেয হওয়াকেও কোনো নেক আমল গণ্য করেন না। সে কারণেই তিনি ফেসবুকে একজনকে কমেন্ট করে লিখেছেন-

‘... কোরআনের একটিমাত্র আয়াত দেখান, যে আয়াতে আল্লাহ বলেছে- তোমরা সুর করে কোরআন তেলাওয়াত করো, তোমরা কোরআন মুখস্থ করো। আল্লাহ বলেছেন কোরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য। তার জন্য সবার আগে দরকার কোরআন বুঝে পড়া, সুর করে পড়া নয়।

এ কুফরী চিন্তা আবিষ্কারের পেছনে এ ধরনের লোকদের মূল উদ্দেশ্য থাকে, কুরআন বিকৃতির রাস্তা সুগম করা। অর্থাৎ এর মাধ্যমে তারা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো যা ইচ্ছা আবিষ্কার করবে এবং সেটাকেই কুরআনের মর্মবাণীনামে চালিয়ে দেবে। আল্লাহর নাযিলকৃত কুরআনের আয়াত উল্লেখ করবে না, যাতে তাদের বিকৃতি ধরা না পড়ে।

তিন. কুরবানীর বিধান নিয়ে উপহাস

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি লিখেছেন-

আমাদের প্রিয় জিনিস গরীব দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য সেক্রিফাইস করাই হচ্ছে কোরবানি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ তা করার জন্য। কিন্ত আপনি যে বললেন- আমাদেরকে একটা গরু কোরবানি দিতে বলা হয়েছে, তা আল্লাহর কথা নয় মিয়া ভাই, তা মোল্লার কথা।-ফেসবুক পোস্ট, ২৩ জুলাই ২০২১

পর্যালোচনা : কুরবানী অর্থ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোনো প্রিয় বস্তু আল্লাহ তাআলার দরবারে পেশ করা এবং শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় তা ব্যবহার করা।

কুরবানী হযরত আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকে বিদ্যমান। সূরা মায়িদার ২৭ নং আয়াতে হযরত আদম আলাইহিস সালামের দুই পুত্রের কুরবানীর কথা বর্ণিত হয়েছে। সব নবীর শরীয়তে কুরবানীর পন্থা এক ছিল না। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তে কুরবানীর পন্থা হলÑ শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় শরীয়ত নির্ধারিত কোনো পশু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জবাই করা। এর মূল সূত্র মিল্লাতে ইবরাহীমীতে ছিল। কুরআন মাজীদ ও সহীহ হাদীস থেকে তা স্পষ্ট জানা যায়। এজন্য কুরবানীকে সুন্নাতে ইবরাহীমীনামে অভিহিত করা হয়। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত যেহেতু সর্বশেষ শরীয়ত সেহেতু কুরবানীর এ পন্থা কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় কুরবানীশব্দটি আরবী কুরবান শব্দের স্থলে ব্যবহৃত হয়। এটি ق ر ب মূলধাতু থেকে নির্গত, যার অর্থ নৈকট্য। তাই আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের জন্য শরীয়তসম্মত পন্থায় আদায়কৃত বান্দার যে কোনো আমলকে আভিধানিক দিক থেকে কুরবানবলা যেতে পারে। তবে শরীয়তের পরিভাষায় কুরবানীশব্দের মর্ম সেটাই, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় শরীয়ত নির্ধারিত কোনো পশু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জবাই করা।

কুরবানী ইসলামের একটি স্বতঃসিদ্ধ ও সর্বজনবিদিত বিধান। মুসলিম উম্মাহ্র ছোট-বড়, সাধারণ-বিশেষ এমনকি অমুসলিমরা পর্যন্ত ইসলামের এ বিধান সম্পর্কে অবগত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আজ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে মুসলিম জাতির মধ্যে এ বিধান চলমান। সেইসঙ্গে এটি শাআইরুল ইসলামতথা ইসলামের নিদর্শনসমূহের অন্যতম।

সূরা কাউসারে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে-

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَ انْحَرْ.

অতএব আপনি নিজ রবের জন্য নামায পড়ুন এবং (কুরবানীর উদ্দেশ্যে) জবাই করুন। -সূরা কাউসার (১০৮) : ২

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন-

أَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّي كُلَّ سَنَةٍ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেছেন। প্রত্যেক বছর তিনি কুরবানী করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫০৭

আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন-

ضَحَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ، ذَبَحَهُمَا بِيَدِه، وَسَمَّى وَكَبَّرَ.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংবিশিষ্ট সাদা-কালো বর্ণের দুটি নর দুম্বা কুরবানী করেছেন। তিনি দুম্বা দুটিকে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবারবলে নিজ হাতে জবাই করেছেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৬

কুরবানী সম্পর্কে আরো দলীল জানার জন্য দেখুন হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক দামাত বারাকাতুহুমের প্রবন্ধ যিলহজ্ব, হজ্ব ও কুরবানী-নির্বাচিত প্রবন্ধ, খ. ২ পৃ. ১২১-১৩৭; মাসিক আলকাউসার, ডিসেম্বর ২০০৭।

আশ্চর্যের বিষয়, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি শরীয়তের এমন অকাট্য স্বতঃসিদ্ধ ও সুস্পষ্ট বিধানকেও কী দুঃসাহসের সঙ্গে অস্বীকার করলেন আর আলেমদের তাচ্ছিল্য করে বললেন, এটা নাকি তাদের বানানো! বলার অপেক্ষা রাখে না, এর দ্বারা তিনি শরীয়তের একটি অকাট্য বিধান অস্বীকার করলেন, যা স্পষ্ট কুফর।

চার. দাড়ি-টুপি নিয়ে উপহাস

এক ব্যক্তি কমেন্টে তাকে দাড়ি ও টুপি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি লেখেন-

ব্যবসায়িক এইসব বিষয়ের সাথে কোরআনের কোনো সম্পর্ক নাই।

পর্যালোচনা : তিনি তার এ কথার দ্বারা দাড়ি ও টুপি নিয়ে উপহাস ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করলেন। দাড়ি-টুপি উভয়টিই মুসলিমদের শিআর বা নিদর্শন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে মুসলিমগণ এ দুই বিষয়ের প্রতি যত্নবান। উভয় বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের অনেক দলীল রয়েছে। সুতরাং এগুলো নিয়ে উপহাস করা নিঃসন্দেহে চরম গোমরাহী।

দাড়ি তো ফিত্রতেরই অংশ। কুরআন কারীমে সূরা ত্ব-হার ৯৪ নং আয়াতে হযরত হারূন আলাইহিস সালামের দাড়ির প্রসঙ্গ আছে।

হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: قَصُّ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ، وَقَصُّ الْأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَنَتْفُ الْإِبِطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ...

দশটি বিষয় ফিতরতের অংশ- মোচ কাটা, দাড়ি লম্বা রাখা, মেসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, গিঁঠসমূহ ধোয়া, বগলের পশম পরিষ্কার করা, নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করা, পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা...। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬১

আরেক হাদীসে বলেন-

خَالِفُوا المُشْرِكِينَ؛ وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ.

তোমরা মুশরিকদের খেলাফ কর; দাড়ি লম্বা কর এবং মোচ ছোট কর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৯

আর টুপি সম্পর্কে কথা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের যুগ থেকে প্রতি যুগে মুসলিমদের মধ্যে টুপি পরিধানের আমল চলমান। টুপি সম্পর্কে মাওলানা মুহাম্মাদ ইমদাদুল হক হাফিযাহুল্লাহ্র একটি দালীলিক প্রবন্ধ রয়েছে। হাদীসে কি টুপির কথা নেই- এ শিরোনামে প্রবন্ধটি মাসিক আলকাউসারে নভেম্বর ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। এখানে টুপি সম্পর্কে কেবল দুইটি হাদীস ও একটি আসার উল্লেখ করা হচ্ছে।

১. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত-

أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَلْبَسُ مِنَ الْقَلَانِسِ فِي السَّفَرِ ذَوَاتِ الْآذَانِ، وَفِي الْحَضَرِ الْمُشَمَّرَةَ، يَعْنِي الشَّامِيَّةَ.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় কানবিশিষ্ট টুপি পরতেন আর আবাসে শামী টুপি পরতেন। -আখলাকুন নবী, আবুশ শায়খ, হাদীস ৩১৪

২. হাসান ইবনে মেহরান রাহ. থেকে বর্ণিত-

عَنْ رَجُلٍ مِنَ الصَّحَابَةِ، قَالَ : أَكَلْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَأَيْتُ عَلَيْهِ قَلَنْسُوَةً بَيْضَاَء فِي وَسْطِ رَأْسِه.

সাহাবীদের একজন বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আহার গ্রহণ করেছি। তখন তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি। -আলইসাবা ফী তাময়ীযিস সাহাবা, ইবনে হাজার আসকালানী ৪/৩৩৯

৩. দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর শাসনামলে নাজরান শহরের খ্রিস্টানরা সন্ধি করতে এবং কর দিতে সম্মত হয়। তখন তারা উমর রা.-এর সঙ্গে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। সে চুক্তিনামায় খ্রিস্টানরা এ বাক্যটিও লিখেছিল্ল-

وَلَا نَتَشَبَّهُ بِهِمْ فِي شَيْءٍ مِنْ لِبَاسِهِمْ مِنْ قَلَنْسُوَةٍ وَلَا عِمَامَةٍ.

অর্থাৎ আমরা মুসলমানদের কোনো পোশাক, এমনকি টুপি-পাগড়িতেও তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করব না। -আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৯১৮৬

চুক্তিনামার এ বাক্যে টুপিকে মুসলমানদের পোশাক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন পাগড়িকে উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়, সে যুগে মুসলমানদের মাঝে টুপির প্রচলন কত ব্যাপক ছিল।

যাহোক দাড়ি-টুপি উভয়টিই ইসলামী শরীয়তের অংশ এবং নবীযুগ থেকেই মুসলিমগণ এ দুটির প্রতি যত্নবান। এগুলো মুসলমানদের শিআর বা জাতীয় নিদর্শন। এগুলো অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।

অথচ এমন প্রসিদ্ধ ও প্রমাণিত বিষয়কেও প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি অজ্ঞতার কারণে কিংবা হঠকারিতার কারণে অস্বীকার করেছেন। এমনকি উপহাস করেছেন। আলেমদের অপবাদ দিয়েছেন। এগুলোর প্রত্যেকটাই মারাত্মক অন্যায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : তিনি তার বিভিন্ন লেখায় শরীয়তের একাধিক বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছেন। জানা কথা, শরীয়তের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাস করা ঈমান নষ্টের কারণ। কুরআন মাজীদে উপহাসকারীদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-

وَ لَىِٕنْ سَاَلْتَهُمْ لَیَقُوْلُنَّ اِنَّمَا كُنَّا نَخُوْضُ وَ نَلْعَبُ، قُلْ اَبِاللهِ وَ اٰیٰتِهٖ وَ رَسُوْلِهٖ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِءُوْنَ، لَا تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ اِیْمَانِكُمْ، اِنْ نَّعْفُ عَنْ طَآىِٕفَةٍ مِّنْكُمْ نُعَذِّبْ طَآىِٕفَةًۢ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا مُجْرِمِیْنَ.

আপনি যদি ওদের জিজ্ঞেস করেন, তারা অবশ্যই বলবে, আমরা তো হাসি-তামাশা ও ফূর্তি করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর বিধানাবলি ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছিলে? অজুহাত দেখিও না। তোমরা ঈমানের দাবি করার পর কাফের হয়ে গেছ। আমি তোমাদের এক দলকে ক্ষমা করলেও, অন্য দলকে অবশ্যই শাস্তি দেব। কেননা ওরা অপরাধী। -সূরা তাওবা (৯) : ৬৫-৬৬

পাঁচ. مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ হাদীসকে কুরআন বিরোধী আখ্যা দেওয়া

ইতোপূর্বে দেখানো হয়েছে, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি কুরবানী, দাড়ি ও টুপির মতো শরীয়তের এমন প্রসিদ্ধ ও স্বতঃসিদ্ধ বিষয়সমূহকে কীভাবে অস্বীকার করেন। বস্তুত এ ধরনের প্রসিদ্ধ কোনো একটা বিষয়কে অস্বীকার করার অর্থই হল, সে বিষয় সংক্রাস্ত সকল হাদীস ও শরীয়তের দলীল অস্বীকার করা। এ ধরনের গোমরাহীপূর্ণ মানসিকতা যার মধ্যে থাকে, সে একেক সময় একেক হাদীস অস্বীকার করতে থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ হাদীসটিকেও অস্বীকার করলেন। প্রথমে তার বক্তব্য দেখুন-

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, মানুষের তৈরি বিভিন্ন গ্রন্থে যেভাবে একচ্ছত্রভাবে নামাযকে জান্নাতের একমাত্র চাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- সেই বিষয়টা। এককভাবে শুধুমাত্র নামাযকে জান্নাতের চাবি বলা হয়েছে- এমন কোন আয়াত এখনো আমার নজরে পড়েনি। তবে আমি ৪টি আয়াত পেয়েছি, যেই আয়াতগুলোর প্রত্যেকটিতে জান্নাতে যাবার জন্য নামাযের পাশাপাশি আরো কয়েকটি ক্রাইটেরিয়া উল্লেখ করা হয়েছে।-ফেসবুক পোস্ট, ১৭ জুন ২০২০

পর্যালোচনা : হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ, জামে তিরমিযীসহ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সাহাবী জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ، وَمِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ.

জান্নাতের চাবি নামায আর নামাযের চাবি পবিত্রতা। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৬৬২; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪

লক্ষণীয় এইÑ হাদীসটিতে একমাত্রজাতীয় কোনো শব্দ নেই। প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি সেটা নিজের পক্ষ থেকে বাড়িয়েছেন।

হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ করার পর থেকে মুসলিমদের মধ্যে চর্চা হয়ে আসছে। যুগে যুগে অসংখ্য আলেম, ফকীহ ও ওয়ায়েয নামায ও পবিত্রতার গুরুত্ব বোঝাতে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। কখনো কারো মনে হয়নি, হাদীসটি কুরআন বিরোধী। প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির আগে কেউ এমন কথা বলেনি। তিনি যদি হাদীসটি একটু মনোযোগসহ পড়তেন অথবা কোনো আলেমের সঙ্গে আলোচনা করতেন, তাহলেও হয়ত তিনি নিজেকে এমন একটা অন্যায়ে জড়াতেন না। কিন্তু তিনি সেটা প্রয়োজন মনে করেননি।

হাদীসের দুটি অংশ। প্রথম অংশ-

مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ.

জান্নাতের চাবি নামায।

দ্বিতীয় অংশ-

وَمِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُور.

আর নামাযের চাবি পবিত্রতা।

দ্বিতীয় অংশ থেকে কি কারো মনে হয়েছে, পবিত্রতা নামায সহীহ হওয়ার একমাত্র শর্ত? পবিত্রতা ছাড়া নামাযের আর কোনো শর্ত নেই? সবাই জানে, নামায সহীহ হওয়ার জন্য পবিত্রতা যেমন জরুরি তেমনি সতর ঢাকা, কেবলামুখী হওয়া ইত্যাদি বিষয়ও জরুরি।

مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ বাক্য দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা ফরয এবং পবিত্রতা ছাড়া নামায হয় না- এ বিষয়টা বোঝা যায়। এখান থেকে কেউ যদি ভাবে, অন্য বিষয়গুলো জরুরি নয় এবং সেগুলো ছাড়াও নামায হয়ে যাবে, তাহলে সেটা অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতা।

তেমনিভাবে مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ বাক্য দ্বারা নামায পড়া ফরয এবং নামায ছাড়া জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হওয়া যায় না- এ বিষয়টা বোঝা যায়। এখান থেকে কেউ যদি বোঝে, জান্নাতে প্রবেশের জন্য অন্যান্য ফরয ও আবশ্যকীয় বিধানের ওপর আমল করা জরুরি নয়, তাহলে সেটা হবে মারাত্মক ভুল।

কিন্তু এই ভুল অর্থটাই তিনি তৈরি করেছেন। একদম নিজের পক্ষ থেকে হাদীসে একমাত্রশব্দটা বাড়ালেন। এরপর হাদীসটিকে কোরআন বিরোধী আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করে দিলেন।

যাদের মধ্যে হাদীস অস্বীকারের প্রবণতা রয়েছে, তাদের অনেকেই এ কাজটা করেন। নিজেরাই হাদীসের একটা ভুল অর্থ করেন, এরপর সেটাকে কুরআন বিরোধী আখ্যা দিয়ে হাদীসটাকেই অস্বীকার করে দেন। এটা যে দ্বীনের মাঝে বিকৃতি সাধনের নিকৃষ্টতম পন্থা, তা তো একদম স্পষ্ট।

ছয়. হাদীস ও হাদীসের কিতাবসমূহের প্রতি অনাস্থা

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি কেবল নির্দিষ্ট একটা হাদীস অস্বীকার করেন- এমন নয়, বরং হাদীসের গোটা ভাণ্ডার তথা হাদীস ও হাদীসের কিতাবসমূহের প্রতিই তার চরম অনাস্থা। ১৭-০৬-২০২০ ঈ. তারিখের পোস্টেই তিনি লিখেছেন-

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ

আল্লাহর কথার উপর যাদের বিন্দু পরিমাণ সংশয় আছে এবং যারা আল্লাহর কথাকে মানুষের তৈরি বিভিন্ন গ্রন্থের সাথে তুলনা করে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, গবেষণামূলক এই লেখা তাদের পরিপাকতন্ত্রে গন্ডগোল সৃষ্টি করতে পারে।

সুরা মুহাম্মাদের ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “তবে কি তারা কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে না, না তাদের অন্তরে তালা পড়ে গিয়েছে?” সেই গবেষণার অংশ হিসেবে জান্নাতে যাবার জন্য মহান রব কি কি শর্ত দিয়েছেন তা বের করে রীতিমত অবাক করা কিছু তথ্য পেলাম, যা আমাদের কাছ থেকে গোপন রেখে মানুষের তৈরি বিভিন্ন গ্রন্থের রেফারেন্সে অর্ধসত্য, অসম্পূর্ণ এবং ক্ষেত্রভেদে ভুল শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

পর্যালোচনা : বিষয়টি কিন্তু এমন নয় যে, তিনি সমাজে প্রচলিত কোনো রেওয়াজের সংশোধনী দিচ্ছেন। বরং তিনি ইসলামের একটি অকাট্য আকীদাকে ভুল আখ্যা দিচ্ছেন। অথচ সেটি কুরআন-সুন্নাহ্য় স্পষ্টভাবে অনেক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে।

আকীদাটি হল, কুরআন কারীমের মুআল্লিম হলেন স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর শিক্ষা হাদীস ও সুন্নাহ্ই হল কুরআন কারীম ও আল্লাহর কালাম বোঝার বিষয়ে সবচেয়ে বড় মানদণ্ড।

অথচ এই ভদ্রলোকেরা বলতে চাইছেন, কুরআন বোঝার নামে ওরা যা-ই বলবে সেটাই হবে আল্লাহর কথা। উলামায়ে কেরাম যদি তাদের কথার খণ্ডনে হাদীস পেশ করেন, তাহলে সেটা নাকি হয়ে যাবে আল্লাহর কথাকে মানুষের তৈরি বিভিন্ন গ্রন্থের সাথে তুলনা করা! লক্ষ করুন, তারা তাদের খেয়াল-খুশিমতো বানানো কথাকে আল্লাহর কথার সাথে তুলনা করছে আর হাদীসের বাণীকে তুলনা করছে মানুষের তৈরি কথার সাথে!

এই হল তাদের কাছে নবীজীর হাদীসের অবস্থা। কোনো সন্দেহ নেই, নবীজীর হাদীস ও শিক্ষার প্রতি এমন ধারণা পোষণ করা স্পষ্ট কুফর।

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি তার এই বক্তব্যে হাদীসের কিতাবাদি সম্পর্কে দুইটি মন্তব্য করেছেন-

১. অর্ধসত্য, অসম্পূর্ণ এবং ক্ষেত্রভেদে ভুল শিক্ষা।

২. মানুষের তৈরি বিভিন্ন গ্রন্থ ।

ক. অর্ধসত্য, অসম্পূর্ণ এবং ক্ষেত্রভেদে ভুল শিক্ষা- তার এ কথা দ্বারা তিনি এক-দুইটি হাদীস নয়, পাঁচ-দশটি হাদীসও নয়, বরং হাদীসের গোটা ভাণ্ডারকেই অনাস্থার বস্তু ঠাওরালেন!

বলার অপেক্ষা রাখে না, এটাই তার সকল গোমরাহী আর ভ্রষ্টতার মূল। হাদীসের কিতাবসমূহের প্রতি তার কোনো আস্থাই নেই। ইতিপূর্বে দেখানো হয়েছে, কুরআনে নেই দাবি করে তিনি কীভাবে কুরবানী, দাড়ি ও টুপির মতো শরীয়তের স্বতঃসিদ্ধ ও সর্বজনবিদিত বিষয়গুলো অস্বীকার করলেন। তার অস্বীকারের যাত্রাএখানেই শেষ হওয়ার নয়, বরং তার সেই ভ্রষ্টতাপ্রসূত চিন্তার কারণে যে কোনো সময় যে কোনো হাদীসকে এবং শরীয়তের যে কোনো বিষয়কে কুরআনে নেই কিংবা কুরআন বিরোধী অথবা অর্ধসত্য, অসম্পূর্ণ বা ভুল শিক্ষা আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করে বসতে পারেন।

তিনি তার পোস্টগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন বটে, কিন্তু মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা। উদাহরণস্বরূপ একজন ব্যক্তি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে। কিন্তু তার বিশ্বাসমতে কুরআন অনুযায়ী নামায পাঁচ ওয়াক্ত নয়, বরং তিন ওয়াক্ত (নাউযু বিল্লাহ)। তাহলে এ ব্যক্তি কাফের; যদিও সে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে।

একইভাবে প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি যেহেতু হাদীসের পুরো ভাণ্ডারকে অর্ধসত্য, অসম্পূর্ণ এবং ক্ষেত্রভেদে ভুল শিক্ষায় ভরপুর মনে করেন, সেহেতু এক-দুইটি হাদীসের উদ্ধৃতি তাকে এ সর্বগ্রাসী ভ্রষ্টতা থেকে বাঁচাতে পারবে না। এর থেকে বাঁচার একটাই উপায়। তা হল, এ গোমরাহী থেকে সম্পূর্ণরূপে তওবা করা এবং নিজের চিন্তা-চেতনা শুধরে নেওয়া।

খ. তিনি হাদীসের কিতাবসমূহকে মানুষের তৈরি বিভিন্ন গ্রন্থবলে কী বোঝাতে চান? তিনি কি বলতে চান, এগুলো মানুষের রচিত অন্যান্য গ্রন্থের মতো কোনো গ্রন্থ? এটা তো সম্পূর্ণ অবাস্তব এবং ভ্রষ্টতাপূর্ণ ধারণা। কে না জানে, হাদীসের এসব গ্রন্থ প্রচলিত অর্থের কোনো রচনা নয়, বরং এগুলো হল সংকলন। হাদীসের মৌলিক গ্রন্থগুলোতে প্রতিটি হাদীস সনদ (সূত্র)সহ সংকলিত আছে। হাদীসের সংকলক থেকে হাদীসের উৎস পর্যন্ত পুরো সনদ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ থাকে। সে সনদটি ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য স্তরে উন্নীত হলেই তবে বলা হয়, এটি নবীজীর হাদীস।

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি এ বাস্তবতাটাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। হাদীসের কিতাবসমূহ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে এ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, এগুলো মানুষের তৈরি রচনা; কাজেই এগুলোর প্রতি আস্থা রাখা যায় না। নাউযু বিল্লাহ।

মনে রাখতে হবে, হাদীসের সংকলকগণ কোনো অপরিচিত সম্প্রদায় নন। তাঁরা সর্বকালেই সত্য ও সততার মিনার ছিলেন এবং আছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহ্র এ ইমামগণের মাধ্যমে যেভাবে কুরআন সংরক্ষণ করিয়েছেন, তেমনি তাদের দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসও সংরক্ষণ করিয়েছেন। কুরআন ও হাদীসের হেফাযতের জন্য উম্মাহ্র এ ইমামগণ সব ধরনের দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, অর্ধাহার-অনাহার হাসিমুখে বরণ করেছেন। তিনি যদি প্রকৃত সত্যান্বেষী হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি আলেমগণের কাছে গিয়ে এ সম্পর্কে জানতে পারেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَسْـَٔلُوْۤا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ.

অতএব তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে। -সূরা নাহল (১৬) : ৪৩

সাত. আহলে কুরআন তথা হাদীস অস্বীকারকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি তার বিভিন্ন লেখায় আল্লাহর কথা নয়’, ‘কোরআনের কোনো সম্পর্ক নাই’, ‘কোরআনের একটিমাত্র আয়াত দেখান- এজাতীয় শব্দ-বাক্য ব্যবহার করে থাকেন। এমনকি এক পোস্টে তিনি এমনও লিখেছেন-

কুরআনে বলা হয়েছে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যাসহ আল কুরআন নাজিল হয়েছে। বিপরীতে কেউ কেউ বলে থাকেন কুরআন ব্যাখ্যা করার জন্য মানুষের তৈরী কিতাব পড়তে হবে।

কার কথা বিশ্বাস করা উচিৎ??? মানুষের কথা, নাকি আল্লাহর কথা সত্য???’ -এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট, ০৪ জানুয়ারি ২০১৯

পর্যালোচনা : তার এসব কথা থেকেও স্পষ্ট, তিনি কেবল হাদীসের কিতাব নয়, বরং আহলে কুরআন তথা হাদীস অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের মতো সরাসরি হাদীসকেই অপ্রয়োজনীয় মনে করেন। হাদীসকে তিনি শরীয়তের দলীল হিসেবে মানেন না।

অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র সর্বজনবিদিত ও সর্ববাদিসম্মত আকীদা ও বিশ্বাস এটাই যে, কুরআন যেমন শরীয়তের দলীল, তেমনি হাদীসও শরীয়তের দলীল। কুরআনের অস্বীকারকারী যেমন কাফের, তেমনি হাদীসের অস্বীকারকারীও কাফের। কুরআনের কোনো আয়াত অস্বীকার করলে যেমন কাফের হয়ে যায়, তেমনি কোনো একটি হাদীস ও বিধান নবীজী থেকে প্রমাণিত জানার পরও তা অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যায়।

মুমিন ও মুসলিম হওয়ার জন্য একটি প্রধান ও মৌলিক শর্ত হল, খাতামুন্নাবিয়্যীন সায়্যিদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান আনা। এর জন্য জরুরি হল, তাঁর থেকে প্রাপ্ত সমস্ত বিষয়কে সত্য বলে বিশ্বাস করা। চাই সেটা কুরআন হোক কিংবা কুরআনের বাইরে হাদীস হোক। কুরআনে আল্লাহ তাআলা নবীজীর প্রতি নিঃশর্তভাবে ঈমান আনার আদেশ করেছেন। তাঁর থেকে প্রাপ্ত সকল আদেশ-নিষেধ ও হালাল-হারামের প্রতি ঈমান আনার ও তাঁর অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। নবীর কথা কুরআনে থাকলে মানবে আর কুরআনে না থাকলে মানবে না- এমন কোনো কথা আল্লাহ তাআলা বলেননি; বলার প্রশ্নই ওঠে না। নবীজীর প্রতি ঈমান ও তাঁর অনুসরণের বিষয়ে আল্লাহ তাআলার আদেশ একদম স্পষ্ট। এখানে কোনো ধরনের অপব্যাখ্যার সুযোগ নেই। সূরা আরাফে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট বলেছেন-

یَاْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهٰىهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ یُحِلُّ لَهُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیْهِمُ الْخَبٰٓىِٕثَ وَ یَضَعُ عَنْهُمْ اِصْرَهُمْ وَ الْاَغْلٰلَ الَّتِیْ كَانَتْ عَلَیْهِمْ، فَالَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِهٖ وَ عَزَّرُوْهُ وَ نَصَرُوْهُ وَ اتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ مَعَهٗۤ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.

তিনি (রাসূল) তাদের সৎ কাজের আদেশ করবেন ও মন্দকাজে নিষেধ করবেন এবং তাদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করবেন ও নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করবেন। আর তাদের থেকে ভার ও গলার বেড়ি নামাবেন, যা তাদের ওপর চাপানো ছিল। সুতরাং যারা তাঁর (অর্থাৎ রাসূলের) প্রতি ঈমান আনবে, তাঁকে সম্মান করবে, তাঁর সাহায্য করবে এবং তাঁর সঙ্গে যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তার অনুসরণ করবে, তারাই হবে সফলকাম। -সূরা আরাফ (৭) : ১৫৭

অতএব কুরআনে আল্লাহর হারামকৃত বস্তু যেমন হারাম, তেমনি হাদীসে নবীজীর হারামকৃত বস্তুও হারাম। কুফর থেকে বাঁচতে উভয়ের হারামকৃত বস্তুকেই হারাম মনে করতে হবে; কোনো রকমের পার্থক্য করা যাবে না। পার্থক্য করলে ঈমান থাকবে না। কাফেরদের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা উভয় হারামকে একইসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, কোনো ধরনের পার্থক্য না করেই। সূরা তাওবায় ইরশাদ হয়েছে-

قَاتِلُوا الَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ لَا بِالْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ لَا یُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَ رَسُوْلُهٗ وَ لَا یَدِیْنُوْنَ دِیْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ حَتّٰی یُعْطُوا الْجِزْیَةَ عَنْ یَّدٍ وَّ هُمْ صٰغِرُوْنَ.

তোমরা ওসব কিতাবীর সঙ্গে যুদ্ধ কর, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না ও পরকালেও না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন, তাকে হারাম মনে করে না এবং সত্য দ্বীনকে নিজের দ্বীন বলে স্বীকার করে না। (তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর) যতক্ষণ না তারা হেয় হয়ে নিজ হাতে জিযিয়া আদায় করে। -সূরা তাওবা (৯) : ২৯

যারা কুরআন মানে, কিন্তু হাদীস মানে না- তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন। সাহাবী মিকদাম ইবনে মাদীকারিব রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

أَلاَ هَلْ عَسَى رَجُلٌ يَبْلُغُهُ الحَدِيثُ عَنِّي وَهُوَ مُتَّكِئٌ عَلَى أَرِيكَتِه، فَيَقُولُ: بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ كِتَابُ اللهِ، فَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَلاَلاً اسْتَحْلَلْنَاهُ. وَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَرَامًا حَرَّمْنَاهُ، وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ اللهِ كَمَا حَرَّمَ اللهُ.

শুনে রাখ, হয়তো এমন ব্যক্তির উদ্ভব ঘটবে, সে তার সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। তখন তার কাছে আমার কোনো হাদীস পৌঁছলে সে বলে উঠবে, আমাদের মাঝে ও তোমাদের মাঝে তো আল্লাহর কিতাবই আছে। এতে আমরা যা হালাল পাব, তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করব আর যা হারাম পাব, তা হারাম মনে করব। অথচ (প্রকৃত অবস্থা এই যে,) রাসূল যা হারাম করেছেন তা আল্লাহর হারামকৃত বস্তুর মতোই হারাম। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৬৪

আরেক বর্ণনায় আছে-

أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ، وَمِثْلَه مَعَه، أَلَا يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانُ عَلَى أَرِيكَتِه يَقُولُ: عَلَيْكُمْ بِهذَا الْقُرْآنِ، فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلَالٍ فَأَحِلُّوهُ، وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ.

শুনে রাখ, নিশ্চয় আমাকে কিতাব ও তার সঙ্গে তার সমান আরো দেওয়া হয়েছে। শুনে রাখ, হয়ত এমন লোকের উদ্ভব ঘটবে, যে তৃপ্ত হয়ে তার সুসজ্জিত আসনে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। সে বলবে, তোমরা এ কুরআনকে গ্রহণ কর। এর মধ্যে যা হালাল পাবে, তা হালাল হিসেবে গ্রহণ কর আর যা হারাম পাবে তা হারাম হিসেবে গ্রহণ কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৪

সেজন্য নবীর সাহাবীগণ কখনো কুরআনের বিধান আর হাদীসের বিধানের মধ্যে পার্থক্য করেননি। তাঁরা শুধু দেখতেন, বিষয়টা নবীজী বলেছেন কি  না? বিষয়টা তাঁর থেকে প্রমাণিত কি না? তাঁরা কুরআনের বিধান এবং নবীর মুখে শোনা হাদীসের বিধান উভয়টাকেই একপর্যায়ের মনে করতেন। কারণ কুরআনের বিধান আর হাদীসের বিধান উভয়টাই আমরা নবীজী থেকে পেয়েছি। বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে একজন জিজ্ঞেস করল, আবাসে থাকাকালীন নামায এবং শত্রু ভীতিকালীন নামাযের বিবরণ তো আমরা কুরআনে পাই। তবে সফরকালীন নামাযের বিবরণ তো কুরআনে পাই না? তখন আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বললেন-

إِنَّ اللهَ بَعَثَ إِلَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ وَلاَ نَعْلَمُ شَيْئًا،فَإِنَّمَا نَفْعَلُ كَمَا رَأَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَفْعَلُ.

আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন এ অবস্থায় যে, আমরা কিছুই জানতাম না। তাই আমরা তেমনই করি, যেমন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে করতে দেখেছি। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৬৬; সুনানে নাসায়ী ৩/১১৭; মুসতাদরাকে হাকেম ১/২৫৮

দ্বীন ও শরীয়ত মানার এটাই একমাত্র সঠিক ও স্বতঃসিদ্ধ পদ্ধতি। সকল সাহাবায়ে কেরাম এভাবেই দ্বীন পালন করতেন। সকল যুগের সকল মুমিন এভাবেই দ্বীন পালন করে আসছেন। বর্তমানে যারা কুরআন অনুসরণের নাম ব্যবহার করে মানুষকে নবীজীর হাদীস থেকে বিমুখ করার চেষ্টা করছে, ওরা আসলে মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ তারা মুমিনদের পথ ছেড়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন রাস্তা গ্রহণ করেছে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ঘোষণা করছেন-

وَ مَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الْهُدٰی وَ یَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصْلِهٖ جَهَنَّمَ، وَ سَآءَتْ مَصِیْرًا.

আর যে ব্যক্তি তার সামনে হেদায়েত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং সাবীলুল মুমিনীনতথা মুমিনদের পথ ছেড়ে অন্য কোনো পথ অনুসরণ করবে, আমি তাকে সে পথেই ছেড়ে দেব, যে পথ সে অবলম্বন করেছে। আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব, যা অতি মন্দ ঠিকানা। -সূরা নিসা (৪) : ১১৫

 

একটি আয়াতের অপব্যাখ্যা : প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি তার মতের পক্ষে কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করেছেন। সব হাদীস অস্বীকারকারীই তাদের অস্বীকারের দলীল হিসেবে এ আয়াতটিকে ব্যবহার করে থাকেন। সূরা নাহ্লের ৮৯ নং আয়াত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ نَزَّلْنَا عَلَیْكَ الْكِتٰبَ تِبْیَانًا لِّكُلِّ شَیْءٍ وَّ هُدًی وَّ رَحْمَةً وَّ بُشْرٰی لِلْمُسْلِمِیْنَ.

আর আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি-  যা প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী। এটি মুসলিমদের জন্য হেদায়েত, রহমত ও সুসংবাদ। -সূরা নাহ্ল (১৬) : ৮৯

হাদীস অস্বীকারকারীরা এ আয়াতের অনিবার্য অর্থ এটাই ধরে নিয়েছে যে, এর মানে রাসূলের হাদীস মানতে হবে না! রাসূল কুরআনের ব্যাখ্যায় কী বললেন- সেটা আর জানতে হবে না! আমরা নিজেরা কুরআন (বা কুরআনের অনুবাদ) পড়ব এবং নিজেরাই কুরআন বুঝে নেব; এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। (নাউযু বিল্লাহ)

অথচ এমন কোনো কথা আয়াতে বলা হয়নি। এটা সম্পূর্ণ তাদের নিজেদের বানানো কথা। এটাকে তারা কুরআনের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।

কুরআন প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী- এ বাক্যের কী অর্থ? এর স্বাভাবিক অর্থ তো এটাই যে, কুরআন যেহেতু হেদায়েত-গ্রন্থ সেহেতু মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যা যা নির্দেশনা দরকার, সমস্ত নির্দেশনা কুরআনে বিদ্যমান। সমস্ত নির্দেশনা আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। কোনো অস্পষ্টতা রাখেননি। অতএব এখন আমাদের জানতে হবে, কুরআনে আল্লাহ তাআলা কী কী নির্দেশনা দিয়েছেন?

এখানে দুইটি নির্দেশনা উল্লেখ করা হল-

ক. কুরআনে আল্লাহ তাআলা যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলোর অন্যতম হল- রাসূলের প্রতি ঈমান আনা এবং রাসূলের অনুসরণ করা। ত্রিশেরও অধিকবার এ আদেশ করেছেন। বিভিন্নভাবে করেছেন। রাসূলের অনুসরণে কাফেরদের যত আপত্তি, সমস্ত আপত্তি খণ্ডন করেছেন। রাসূলের প্রতি কাফেরদের যত অপবাদ, সমস্ত অপবাদ দূর করেছেন। কারণ আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আনার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাসূলের প্রতি ঈমান আনা এবং রাসূলের অনুসরণ করা। রাসূলের প্রতি ঈমান আনা না হলে কুরআনের প্রতিও ঈমান আনা হবে না; অন্য কোনো কিছুর প্রতিও ঈমান আনা হবে না। সেজন্য কুরআন কারীমে এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত জোর দিয়েছেন। এমনকি একথাও বলে দিয়েছেন-

مَنْ یُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ، وَ مَنْ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ عَلَیْهِمْ حَفِیْظًا.

 যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে মুখ ফিরিয়ে নিল, তো আমি আপনাকে তাদের পর্যবেক্ষকরূপে পাঠাইনি। -সূরা নিসা (৪) : ৮০

সেইসঙ্গে নিজের মহব্বত ও মাগফিরাতকে রাসূলের আনুগত্যের সঙ্গে শর্তযুক্ত করে দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন-

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ، وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

(হে নবী!) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১

খ. আল্লাহ তাআলা মানুষের হেদায়েতের জন্য এ কিতাব নাযিল করেছেন। তাই এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল যে, মানুষ যেন এ কিতাবের নির্দেশনা ও বার্তাগুলো সঠিক ও নির্ভুলভাবে গ্রহণ করতে পারে। তারা যেন কিতাব বুঝতে গিয়ে কোনো ভুল বা গোমরাহীর শিকার না হয়। তাই আল্লাহ তাআলা রাসূলের ওপর কিতাব নাযিলের পাশাপাশি তাঁকে কিতাবের ব্যাখ্যাও শিখিয়ে দিলেন। সূরা কিয়ামায় নবীজীকে বললেন-

لَا تُحَرِّكْ بِهٖ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهٖ، اِنَّ عَلَیْنَا جَمْعَهٗ وَ قُرْاٰنَهٗ، فَاِذَا قَرَاْنٰهُ فَاتَّبِعْ قُرْاٰنَهٗ، ثُمَّ اِنَّ عَلَیْنَا بَیَانَهٗ.

(হে নবী!) আপনি কুরআন তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য এর সাথে আপনার জিহ্বা নাড়াবেন না। নিশ্চয়ই একে (আপনার অন্তরে) সংরক্ষণ করা এবং তা (আপনার মুখে) পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। অতএব যখন আমি তা (জিবরীলের মাধ্যমে) পাঠ করি তখন আপনি তার পাঠের অনুসরণ করুন। এরপর তা স্পষ্ট করে বর্ণনা করাও আমার দায়িত্ব। -সূরা কিয়ামাহ (৭৫) : ১৬-১৯

আল্লাহ তাআলা নবীজীকে যেমন কুরআনের পাঠ শেখালেন, তেমনি কুরআনের ব্যাখ্যাও শেখালেন। এরপর তাঁকে নির্দেশ দিলেন, এবার তিনিও যেন মানুষকে একইভাবে কুরআনের ব্যাখ্যা শেখান। সূরা নাহ্লে আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় আদেশ করেছেন-

وَ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الذِّكْرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیْهِمْ وَ لَعَلَّهُمْ یَتَفَكَّرُوْنَ.

আমি আপনার প্রতি এ যিক্র (কুরআন) নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের সামনে তা স্পষ্ট করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা গভীরভাবে চিন্তা করে। -সূরা নাহ্ল (১৬) : ৪৪

সূরা নিসায়ও আদেশ করেছেন-

اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَیْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرٰىكَ اللهُ، وَ لَا تَكُنْ لِّلْخَآىِٕنِیْنَ خَصِیْمًا.

আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে সে অনুসারে মীমাংসা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে বুঝিয়েছেন। আর আপনি খেয়ানতকারীদের পক্ষাবলম্বনকারী হবেন না। -সূরা নিসা (৪) : ১০৫

শুধু তা-ই নয়! আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন শিক্ষাদানের দায়িত্ব দিয়ে মুমিনদের প্রতি যে বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন, সেটা তিনি কুরআন কারীমে একাধিকবার উল্লেখ করেছেন। সূরা আলে ইমরানে ইরশাদ করেছেন-

لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ، وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ.

নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদেরই মধ্য থেকে। তিনি তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদের পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন। নিশ্চয়ই এর আগে তারা স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে ছিল। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৬৪

সারকথা, মানুষের হেদায়েতের জন্য যত নির্দেশনা জরুরি, সমস্ত নির্দেশনা আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। সেসব নির্দেশনার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি নির্দেশনা হল-

১. রাসূলের প্রতি ঈমান ও আনুগত্য।

২. রাসূল কর্তৃক মুমিনদেরকে কুরআনের ব্যাখ্যা ও বিধিবিধান শিক্ষাদান।

এখান থেকে এ বিষয়টা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে, কুরআনেরই সুস্পষ্ট আদেশ হল- সঠিকভাবে কুরআন অনুধাবনের জন্য অবশ্যই রাসূলের শিক্ষা ও আদর্শ আঁকড়ে ধরতে হবে। তাঁর শেখানো নীতির আলোকে কুরআন বুঝতে হবে এবং কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। তাঁর শিক্ষাকে অর্থাৎ তাঁর হাদীসকে উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করে কুরআন বুঝতে চাওয়া মানে কুরআনের সুস্পষ্ট আদেশ অমান্য করা।

কিন্তু হাদীস অস্বীকারকারীরা একদম নিজেদের পক্ষ থেকে একটা কথা কুরআনের উপর চাপিয়ে দিয়ে কুরআন ও হাদীসের মধ্যে সংঘর্ষ দেখানোর চেষ্টা করেছেন আর দাবি করেছেন, হাদীস মানলে কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ করা হবে। বলা বাহুল্য, তাদের এ কথা কুরআনের স্পষ্ট তাহরীফ ও বিকৃতি।

তারা এ বিকৃতি ঘটানোর আগে ভেবেও দেখেননি, তাদের এ বিকৃতি কিছুতেই সফল হবার নয়। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো সূরা নাহ্লের ৮৯ নং আয়াত, যেটাকে বিকৃত করে তারা এতসব কাণ্ড ঘটিয়েছেন, সেটার ব্যাখ্যাও তিনি সাহাবায়ে কেরামকে শিখিয়ে গেছেন। সাহাবায়ে কেরাম পরবর্তীদের শিখিয়েছেন। এভাবে সবযুগেই এর সঠিক ও প্রতিষ্ঠিত অর্থটি মুসলমানদের মাঝে পরিচিত ছিল ও আছে। সেজন্য বর্তমান যুগের এই গুটিকয়েক হাদীস অস্বীকারকারী ছাড়া আর কেউই এ আয়াত থেকে এমনটা বোঝেনি আর বোঝার প্রশ্নই আসে না।

সবশেষে নবীজীর বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গের ইতি টানছি। তাবেয়ী আলকামা রাহ. থেকে বর্ণিত-

 عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: لَعَنَ اللهُ الوَاشِمَاتِ وَالمُوتَشِمَاتِ،وَالمُتَنَمِّصَاتِ وَالمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ، المُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ.

فَبَلَغَ ذَلِكَ امْرَأَةً مِنْ بَنِي أَسَدٍ يُقَالُ لَهَا أُمُّ يَعْقُوبَ، فَجَاءَتْ فَقَالَتْ: إِنَّه بَلَغَنِي عَنْكَ أَنَّكَ لَعَنْتَ كَيْتَ وَكَيْتَ، فَقَالَ: وَمَا لِي لا أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَنْ هُوَ فِي كِتَابِ اللهِ؟

فَقَالَتْ: لَقَدْ قَرَأْتُ مَا بَيْنَ اللَّوْحَيْنِ، فَمَا وَجَدْتُ فِيهِ مَا تَقُولُ، قَالَ: لَئِنْ كُنْتِ قَرَأْتِيهِ لَقَدْ وَجَدْتِيهِ، أَمَا قَرَأْتِ: وَمَا اٰتٰىكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَ مَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا.

قَالَتْ: بَلَى، قَالَ: فَإِنَّه قَدْ نَهَى عَنْهُ.

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আল্লাহর লানত ওসব নারীর প্রতি, যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকন করে ও নিজের শরীরে উল্কি অংকন করায় এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। এসব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধনকারী।

তাঁর এ কথা আসাদ গোত্রের উম্মে ইয়াকুব নামক এক মহিলার কাছে পৌঁছল। সে এসে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লানত করেন।

ইবনে মাসউদ রা. বললেন, আমি কেন এমন মানুষদের প্রতি লানত করব না, যাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন এবং যাদের কথা আল্লাহর কিতাবে আছে?

মহিলাটি বলল, আমি তো দুই ফলকের মাঝে যা আছে (অর্থাৎ সম্পূর্ণ কুরআন) পড়েছি, কিন্তু আপনি যা বলছেন তা পাইনি।

তিনি বললেন, তুমি যদি (ভালোভাবে বুঝে-শুনে) পড়তে তবে অবশ্যই পেতে। তুমি কি পড়নি-

وَ مَاۤ اٰتٰىكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَ مَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا.

[রাসূল তোমাদের যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর আর যা বারণ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। -সূরা হাশর (৫৯) : ০৭]

মহিলাটি বলল, হাঁ।

ইবনে মাসউদ রা. বললেন, তিনিই তো নিষেধ করেছেন এ থেকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১২৫

যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ও শিক্ষাকে কুরআনে নেইবলে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য এ ঘটনায় শিক্ষা রয়েছে।

আট. হ্যানি এটচানের মতো স্পষ্ট কুরআন বিকৃতিকারী ও হাদীস অস্বীকারকারীর অনুসরণ

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির মারাত্মক গোমরাহী ও ভ্রষ্টতার একটা দিক হল, তিনি ড. হ্যানি এটচানের (Dr. Hany Atchan) মতো কুরআনের স্পষ্ট বিকৃতিকারী ও হাদীস অস্বীকারকারীর অনুসরণ করেন এবং তার অনলাইন কুরআন ক্লাসে অংশগ্রহণের জন্য মানুষকে আহ্বান করেন।

২৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে তিনি The Cosmic Healers -এর ফেসবুক গ্রুপে একটি পোস্টে ঘোষণা করেছেন-

কসমিক হিলারস ফাউন্ডেশনের এডভাইজারী বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ড. হ্যানি এটচানের কোরআন অনুবাদ নিয়ে অনলাইন সেশন শুরু হবে। যারা কোরআনের এই অথেনটিক অনুবাদ বুঝতে আগ্রহী তাদেরকে আগামী ২৭ ডিসেম্বর সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার মধ্যে সংযুক্ত গুগল ফর্ম ফিলআপ করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করা যাচ্ছে।

একই তারিখে The Cosmic Healers -এর অফিসিয়াল পেইজ থেকেও এ ঘোষণাটি প্রচারিত হয়েছে।

ড. হ্যানির মিশনই হল, কুরআনের চরম পর্যায়ের বিকৃতি সাধন করা এবং কুরআনের স্পষ্ট বাণীসমূহের অস্বীকার করা। এটা তার ইউটিউব চ্যানেলের লেকচার থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। নিম্নে ড. হ্যানির কিছু জঘন্য কুফর, ইলহাদ ও ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস তার ইউটিউব চ্যানেল থেকে তুলে ধরা হল, যেগুলোকে তিনি কুরআন গবেষণার নামে প্রচার করে থাকেন। এতে প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির আকীদা-বিশ্বাসও সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। কারণ তিনি হ্যানির এসব কুফর সম্পর্কে অবগত আছেন- এটাই তো স্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও হ্যানির কুরআন অনুবাদকে তিনি অথেনটিক অনুবাদবলে প্রশংসা করেন এবং তার দিকে মানুষকে আহ্বান করেন। ড. হ্যানি এটচানের কিছু কুফরী কথাবার্তা তুলে ধরা হল-

. Muhammad our beloved (SAWS) was a Nabiy for Bani Issrail, for them, not for the followers of Quran.

আমাদের প্রিয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাইলের জন্য নবী ছিলেন। কুরআন অনুসারীদের জন্য নয়।’ (নাউযু বিল্লাহ) (৩ : ০১ মিনিট)

ভিডিওর লিংক : https://youtu.be/KoBxLGZIh2c?si =Tfjj8d1Ajv3Y5pcu

ভিডিওটির ডেসক্রিপশনে লিখেছেন-

Muhammad (SAWS) was a Nabiy (prophet) for Bani Issrail..., the followers of the Quran are not to consider him a Nabiy, because unlike the Torah, the Quran does not need prophets to explain or interpret the Quran for us. Engaging the Quran directly allows us to access divine guidance without prophets.

 ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাঈলের জন্য নবী ছিলেন...। কুরআন অনুসারীদের জন্য তাকে নবী হিসেবে মানতে হবে না। কারণ কুরআন তাওরাতের মতো নয়। আমাদেরকে কুরআন ব্যাখ্যা করে দেওয়ার জন্য কোনো নবীর প্রয়োজন নেই। নবী ছাড়াই কুরআনের সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আমরা খোদায়ী নির্দেশনা পেতে পারি।’ (নাউযু বিল্লাহ) 

. Quran is not teaching us to do Friday prayer, that was something that was invented much later.

কুরআন আমাদেরকে জুমার নামায শিক্ষা দেয় না। এটা এমন একটা জিনিস, যা আরো পরে আবিষ্কৃত হয়েছিল।’ (নাউযু বিল্লাহ) (২৩ : ৩০ মিনিট)

ভিডিওর লিংক : https://youtu.be/8z46uX12lXM?si=gQDi-vdDQE0rZwom

. Adam was really not the first human being.

আদম সত্যিকার অর্থে প্রথম মানুষ নন।’ (নাউযু বিল্লাহ) (০ : ০১ মিনিট)

ভিডিওর লিংক :

https://youtu.be/eGS8COmntl4?si=Mfgx Mwx713myo6aY

. Ismael was none other than our beloved prophet Muhammad (SAWS).

ইসমাঈল অন্য কেউ নন; বরং আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ (নাউযু বিল্লাহ) (৩৬ : ০৫ মিনিট)

ভিডিওর লিংক : https://youtu.be/3KMM8pE_A5M?si=n9sB7hQaK6h4IPL3

৫. Has Jesus Returned Already?  (ঈসা কি পুনরায় আবির্ভূত হয়েছেন?) এ শিরোনামে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি দাবি করেছেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই হলেন ঈসা। (নাউযু বিল্লাহ)

তিনি বলেছেন-

The name Isa Ibne Maryam is the wiped meaning erased name. It’s  not the real name that was given to Isa later on. Isa was later given a more praiseworthy name Ahmad.

 ‘ঈসা ইবনে মারয়াম নামটি মুছে দেওয়া নাম। এটা সত্যিকারের নাম নয়, যা পরবর্তীতে ঈসাকে দেওয়া হয়েছিল। ঈসাকে পরবর্তীতে আরো প্রশংসিত একটি নাম দেওয়া হয়েছিল। সেটি হল আহমাদ।’ (নাউযু বিল্লাহ) (৭ : ১৮ মিনিট)

ভিডিওর লিংক : https://youtu.be/olY5ra8NW0g?si=78f0qf3 vPzwygjOY

. Zul Qarnain was none other than our beloved prophet Muhammad (SAWS).

যুল কারনাইন আর কেউ নন; বরং আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ (নাউযু বিল্লাহ) (২২ : ০০ মিনিট)

ভিডিওর লিংক : https://youtu.be/f_k-Kv56KB8?si= 0pgbTnHMC5hRqOx2

. Maryam was indeed Yahya’s mother.

মারয়াম সত্যিই ইয়াহইয়ার মা ছিলেন।’ (নাউযু বিল্লাহ) (৫৭ : ৫৬ মিনিট)

ভিডিওর লিংক : https://youtu.be/B_l4PB37URo?si=CVXMQYEB6-d43tyI

আরো বলেন-

Yahya was her first son.

ইয়াহইয়া ছিলেন মারয়ামের প্রথম পুত্র।’ (নাউযু বিল্লাহ) (৩২ : ৪০ মিনিট)

ভিডিওর লিংক : https://youtu.be/pr5yWnUjGI0?si=PvUiV6ZAZ-hLjOb2

. We claim Zakaria is his (Isa) father.

আমাদের দাবি, যাকারিয়া হলেন তার (ঈসার) পিতা।’ (নাউযু বিল্লাহ) (৫ : ১৪ মিনিট)

ভিডিওর লিংক : https://youtu.be/D_gMrgb_v-8?si=JKDfwyZ-QI81KwKI

এ হল হ্যানি এটচানের কুফর ও ইলহাদের কিছু নমুনা। যার মধ্যে দ্বীনের সামান্যতম জ্ঞান ও বুঝ আছে, সেও বুঝবে, এগুলো কত জঘন্য পর্যায়ের কুফর। কুরআনের স্পষ্ট বাণীর অস্বীকার, কুরআনের বিকৃতি, নবী-রাসূলের প্রতি জঘন্য রকমের অপবাদ, ইসলামের স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ের অস্বীকার, হাদীসগ্রন্থ নিয়ে উপহাস- কী নেই তার কথায়! অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল, এরকম একটা জঘন্য কাফের ও মুলহিদ লোককে প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ও তার ফাউন্ডেশন নিজেদের অনুসরণীয় হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং তার কুরআন ক্লাস’-এর প্রতি মানুষকে আহ্বান করছে। তার কুরআন অনুবাদকে অথেনটিক অনুবাদ’-এর স্বীকৃতি দিচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তার এই এক ভ্রষ্টতাই তাকে ঈমানের গণ্ডি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।

নয়. কোয়ান্টাম মেথড, কসমিক হিলারস ও সিলভা মেথডের অনুসরণ এবং সেগুলোর প্রচার-প্রসারে অংশগ্রহণ

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির গোমরাহীর আরেকটা ভয়াবহ দিক হল, তিনি কোয়ান্টাম মেথড, কসমিক হিলারস ও সিলভা মেথডের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন এবং এসবের প্রচার-প্রসারের কাজ করে যাচ্ছেন। আর এটা স্পষ্ট যে, এসব সংগঠনের অনেক বিষয়ই কুফর ও গোমরাহীপূর্ণ। নিম্নে এসব সংগঠন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল-

ক. কোয়ান্টাম মেথড

এখানে কেয়ান্টাম মেথডের কেবল একটা কুফরী বিশ্বাস উল্লেখ করা হচ্ছে, যে বিশ্বাস অন্তরে লালন করে কেউ মুসলিম থাকতে পারে না।

ইসলামের অকাট্য ও শাশ্বত আকীদা হল, আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম আল্লাহ তাআলার কাছে গৃহীত নয়। আখেরাতে মুক্তির একমাত্র উপায় ইসলাম। ইসলাম আকীদা ও শরীয়ত উভয়টির সমষ্টির নাম। মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস সকল নবী-রাসূলেরই এক ও অভিন্ন। তবে শরীয়ত আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক উম্মতের জন্য আলাদা আলাদা দিয়েছেন। আকীদা ও বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর দেওয়া শরীয়ত গ্রহণ করলেই আল্লাহর কাছে ইসলাম গ্রহণ করা ধর্তব্য হবে। আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ নবী, যিনি সায়্যিদুল মুরসালীন এবং রাহমাতুল্লিল আলামীনও, তাঁকে আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ শরীয়ত দান করেছেন। এটি কিয়ামত পর্যন্ত সকল জাতি ও গোষ্ঠীর জন্য অবশ্যপালনীয় শরীয়ত। অতএব সর্বশেষ নবীর প্রতি ঈমান এনে, ইসলামী আকীদাসমূহ বিশ্বাস করে এবং তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে এই সর্বশেষ শরীয়ত গ্রহণ করার দ্বারাই মুসলিম হওয়া যাবে। আর এভাবে ঈমান এনে ইসলামে প্রবেশ করার মধ্যেই দুনিয়ার সফলতা ও আখেরাতের মুক্তি সীমাবদ্ধ। সর্বশেষ নবীর আগমনের পর এবং তাঁর শরীয়ত প্রচার হয়ে যাওয়ার পর ইহুদীধর্ম, খ্রিস্টধর্ম, কোনো ধর্মই চলবার নয়। সব ধর্মই রহিত হয়ে গেছে।

সেজন্য দুনিয়ায় সফলতা অর্জন করতে হলে এবং আখেরাতে মুক্তি পেতে হলে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনতে হবে, একমাত্র তাঁরই অনুসরণ করতে হবে এবং তাঁর ওপর নাযিলকৃত কুরআন, হাদীস, আকীদা-বিশ্বাস এবং ইবাদত-শরীয়তেরই অনুসরণ করতে হবে। কেউ যদি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ কুরআন, হাদীস এবং ইবাদত-শরীয়ত ছেড়ে ভিন্ন কোনো ধর্ম অবলম্বন করে, তাহলে সে নিজেকে যত খোদাভক্ত ও স্রষ্টায় সমর্পিত দাবি করুক, বাস্তবে সে সত্য অস্বীকারকারী। তার এ বাহ্যিক খোদাভক্তি ও স্রষ্টায় সমর্পণ আল্লাহর দরবারে কোনো কাজে আসবে না। আর তার এ সমর্পণ ও ভক্তিকে কখনো ইসলাম নাম দেওয়া যাবে না। কারণ ইসলাম একটি পরিভাষা, যার সুনির্দিষ্ট অর্থ ও মর্ম রয়েছে।

এটা কুরআন ও হাদীস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং নবীযুগ থেকে আজ পর্যন্ত সকল মুমিন-মুসলিমেরই এই আকীদা। এ বিষয়ে অস্বীকার করা তো দূরের কথা, কেউ সামান্য সন্দেহ পোষণ করলেও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।

কুরআনে আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট ঘোষণা-

اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ.

নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম ইসলাম। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯

وَ مَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَ هُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِيْنَ.

যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করবে, সেটা তার থেকে কিছুতেই কবুল করা হবে না। আর আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮৫

وَ مَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيْرًا وَّ نَذِيْرًا وَّ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ.

(হে নবী!) আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যই প্রেরণ করেছি- সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি রাখে না। -সূরা সাবা (৩৪) : ২৮

হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন-

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه، لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هذِهِ الْأُمَّةِ وَلَا يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ، وَمَاتَ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِه، إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ.

সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এ উম্মতের যে কেউ এবং যে কোনো ইহুদী ও খ্রিস্টান আমার বিষয়ে শুনবে অথচ আমাকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে, তার প্রতি ঈমান না এনেই মৃত্যুবরণ করবে, সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮২০৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩

আরেক হাদীসে তিনি আরো স্পষ্টভাবে বলেছেন-

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه، لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوسَى فَاتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي، لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ، وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِي، لَاتَّبَعَنِي.

সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! যদি স্বয়ং মূসা তোমাদের সামনে আবির্ভূত হতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে, তবে অবশ্যই তোমরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে। যদি তিনি জীবিত থাকতেন আর আমাকে নবী অবস্থায় পেতেন, তবে অবশ্যই আমার অনুসরণ করতেন। -সুনানে দারেমী, হাদীস ৪৫৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫১৫৬

কিন্তু কোয়ান্টামের বিশ্বাস ইসলাম ও মুসলমানদের অকাট্য বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। আর ওই বিপরীত বিশ্বাসটাই তাদের মূল চিন্তাগুলোর একটা। তারা তাদের কথাবার্তায়, কাজকর্মে ও লেখালেখিতে এ চিন্তারই প্রকাশ ঘটায়। কোয়ান্টামের ভাষায়-

 ‘কোয়ান্টাম বিশ্বাস করে সকল ধর্মের মূল শিক্ষা এক। স্থান কাল ভাষা পরিবেশ অনুসারে ধর্মাচারে পার্থক্য রয়েছে। স্বধর্ম পালন ও অন্যের ধর্মপালনের অধিকার নিশ্চিত করাই ধর্মের শিক্ষা। কোরআন কণিকার পাশাপাশি বেদ কণিকা, বাইবেল কণিকা, ধম্মপদ কণিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সকল ধর্মের প্রতি কোয়ান্টামের শ্রদ্ধাবোধের প্রকাশ ঘটেছে।-কোয়ান্টাম উচ্ছ্বাস ৯

এর মানে কোয়ান্টামের কাছে সব ধর্মই সঠিক। ধর্মাচারের যে পার্থক্য সেটা স্থান কাল ভাষা পরিবেশের কারণে! নতুবা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই আপন আপন জায়গায় সঠিক ধর্মেরই অনুসরণ করছে! (নাউযু বিল্লাহ)

বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা এ যুগের সবচেয়ে মারাত্মক কুফরী বিশ্বাসগুলোর একটা। কোয়ান্টাম এ কুফরী চিন্তা জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে জঘন্য যে কাজটা করেছে তা হল, কুরআনের বিকৃতি এবং ইসলামের বিভিন্ন মৌলিক পরিভাষার বিকৃতি। তার একটা নমুনা এখানে উল্লেখ করা হল-

ইসলামের বিকৃতি : যেহেতু কুরআন মাজীদে ইসলামকে আল্লাহ তাআলার একমাত্র মনোনীত দ্বীন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেহেতু কোয়ান্টাম ইসলাম শব্দের উদ্দেশ্যই পরিবর্তন করে দিয়েছে। এমন একটা অর্থ উল্লেখ করেছে, যার মধ্যে স্রষ্টায় বিশ্বাসী সব ধর্মকেই অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

আল কোরআন বাংলা মর্মবাণীবইয়ে সূরা আলে ইমরান (৩)-এর ১৯ নং আয়াতের অর্থ লেখা হয়েছে-

নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে একমাত্র ধর্ম হচ্ছে ইসলাম (অর্থাৎ স্রষ্টায় পুরোপুরি সমর্পণ)।-আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী, পৃ. ৮৬, পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত মুদ্রণ : মাহে রমজান, ২০২২

সূরা আলে ইমরান (৩)-এর ৮৫ নং আয়াতের অর্থ লেখা হয়েছে-

আর কেউ আল্লাহতে সমর্পিত হওয়া ছাড়া অন্য কোনো ধর্মবিধান গ্রহণ করতে চাইলে তা কবুল করা হবে না।-আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী, পৃ. ১৪৩

সূরা মায়েদা (৫)-এর ৩ নং আয়াতের অর্থ লেখা হয়েছে-

আজ তোমাদের জন্যে তোমাদের ধর্মবিধানকে পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের ওপর আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। ইসলাম অর্থাৎ আল্লাহতে পরিপূর্ণ সমর্পণকেই তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম।-আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী, পৃ. ১৪৩

তাদের এ কাজ সুকৌশলে বহু ধর্মে বিশ্বাস এবং সকল ধর্মই সঠিক- এমন মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। যা কুরআন ও ইসলামের চরম বিকৃতি বৈ কিছু নয়। ইসলাম একটি পরিভাষা এবং এর সুনির্দিষ্ট অর্থ ও মর্ম রয়েছে- এটাকেই তারা স্বীকার করে না। তার একটা নিদর্শন হল, মর্মবাণীর শেষে মর্মবাণীতে ব্যবহৃত আরবী শব্দের প্রতিশব্দশিরোনামে একটি তালিকা রয়েছে। সেখানে ঈমান, কুফর, শিরক, মুনাফেকি, দ্বীন সব আছে, কিন্তু ইসলাম নেই। তেমনি ঈমানদার, মুমিন, মুশরিক, মুনাফেক, কিতাবি, মুত্তাকী, ফাসেক সবাই আছে কিন্তু মুসলিম নেই।

এ তালিকার পরে বিষয়ভিত্তিক আয়াত : সংক্ষিপ্তসূচিআছে। সেখানে ঈমান, বিশ্বাস, শিরক, ইবাদত, ইহুদি, খ্রিস্টান, কিতাবি, মুনাফেকের জন্য শিরোনাম আছে; কিন্তু ইসলাম ও মুসলিমের জন্য কোনো শিরোনাম নেই। শিরোনাম আছে সমর্পণ’! আর ধর্মশিরোনামের অধীনে শাখা-শিরোনাম আছে-আল্লাহতে পূর্ণ সমর্পণই ইসলাম। এভাবে তারা ইসলামের শাশ্বত ও অকাট্য সংজ্ঞা ও পরিচয়টাকেই মুছে দিতে চাইছে। বরং ইসলামকে একটি পরিভাষায় না রেখে এবং ইসলামের পারিভাষিক ব্যাখ্যা না দিয়ে শুধু ইসলাম শব্দের আভিধানিক একটি অর্থ পেশ করেছে। কেন? কে না জানে, ইসলাম একটি দ্বীনের নাম, যার রয়েছে স্বতন্ত্র ও পরিপূর্ণ বিধিবিধান। তাহলে তারা কেন কুরআনে বর্ণিত ইসলাম শব্দের আভিধানিক ব্যাখ্যা দিচ্ছে? আর এভাবে তারা ইসলামের একটা নতুন ব্যাখ্যা মানুষের মধ্যে প্রচার করার চেষ্টা করছে, যা স্পষ্ট কুফর।

এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে কোয়ান্টামের একটা কুফরী বিশ্বাস ও একটা বিকৃতি উল্লেখ করা হল। নতুবা তাদের গোমরাহী ও বিকৃতি এত বেশি যে, এর জন্য স্বতন্ত্র রচনার প্রয়োজন।

এদেশে খ্রিস্টানদেরও অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোতে সেবার আড়ালে তারা সাধারণ মুসলমানদের দ্বীন-ঈমান হরণ করার চেষ্টা করে। একজন মুমিন কখনো এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করা জায়েয মনে করে না। উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোয়ান্টাম মেথডও একটা কুফরী প্রতিষ্ঠান, যার মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার মধ্যে অনেক কুফর ও গোমরাহী বিদ্যমান। এসব কুফরী বিশ্বাস ও গোমরাহীপূর্ণ ধ্যান-ধারণা তারা তাদের কথাবার্তায়, কাজকর্মে ও লেখালেখিতে প্রচার করে থাকে। তাই একজন মুমিন-মুসলিমের জন্য কোয়ান্টাম ও এ ধরনের কুফরী প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত হওয়া এবং তাদের প্রোগ্রাম ও অনুষ্ঠানে যোগদান করা কিছুতেই জায়েয নয়।

মনে রাখবেন, সুস্থতা, আত্মিক প্রশান্তি, সুখ-সমৃদ্ধি, ধ্যান-মুরাকাবা, দুআ-মুনাজাত, আশ্রয় প্রার্থনা ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামের স্বতন্ত্র বিধিবিধান ও দিকনির্দেশনা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ইসলাম ও কোয়ান্টাম মেথডের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হল, এসব বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনা সম্পূর্ণ তাওহীদ ও সুন্নাহভিত্তিক। অপরদিকে কোয়ান্টাম মেথডের শিক্ষা ও নির্দেশনা হল কুফর ও শিরকভিত্তিক।

তাছাড়া ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনাবলি, যদি এগুলো যথাযথভাবে পালন করা হয়, এগুলোতে কেবলই প্রশান্তি ও উপকার। এগুলোর কোনো পার্শ¦প্রতিক্রিয়া নেই। অন্যদিকে বাস্তবতা ও ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন বক্তব্য দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, রোগমুক্তি, আত্মিক প্রশান্তি ইত্যাদির জন্য কোয়ান্টাম যেসব চিকিৎসা ও নির্দেশনা দেয়, সেগুলোর বিভিন্ন রকম পার্শ¦প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এগুলোতে বাড়াবাড়ি ও প্রান্তিকতা আছে, এগুলোর কারণে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট মানুষদের হক নষ্ট হয়, পরিবারে অশান্তি দেখা দেয় এবং বিভিন্ন রকমের সমস্যা তৈরি হয়।

যদি এতে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও প্রান্তিকতা নাও থাকত, তবুও যেহেতু এটা কুফর ও শিরক-নির্ভর একটা ব্যবস্থা, সেহেতু কোনো মুমিন এটা সমর্থন করতে পারে না এবং এতে যুক্ত হতে পারে না।

খ. দ্যা কসমিক হিলারস ফাউন্ডেশন

দ্যা কসমিক হিলারস ফাউন্ডেশনের ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি কসমিক হিলারস ফাউন্ডেশনের এডভাইজারী বোর্ডের একজন সদস্য। ইতোপূর্বে আমরা পড়েছি, কসমিক হিলারস ফাউন্ডেশনের এডভাইজারী বোর্ড হ্যানি এটচানের মতো একজন জঘন্য কুরআন বিকৃতিকারী কাফের ও মুলহিদকে নিজেদের সংগঠনের কুরআনের শিক্ষকহিসেবে গ্রহণ করেছে। এ একটা বিষয়ই তাদেরকে কুফরের সর্বনিম্নস্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। এছাড়াও তাদের ভ্রষ্টতার বড় বড় আরো বিভিন্ন দিক রয়েছে। যেমন-

১. কোয়ান্টাম মেথডের মতো কসমিক হিলারসও সব ধর্মই সঠিকমতবাদে বিশ্বাসী। কসমিক হিলারসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এর উদ্যোক্তা সাঈদ রহমান লিখেছেন-

‘... এভাবেই আমার মাথায় জন্ম নিল কসমিক হিলারসগঠনের ভাবনা। নিজ এনার্জি ফিল্ড সিনক্রোনাইজ করতে সক্ষম এমন একদল প্রশিক্ষিত মানুষ হবে, যাদের সম্মিলিত ফোকাসপাল্টে দিতে পারে যে কোনো ঘটনার গতিপথ। ...শুভ শক্তির পক্ষের এমন একদল মানুষ, যারা জাতি, ধর্ম, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি যে কোনো মানদণ্ডের ঊর্ধ্বে। শুধু সৃষ্টির সেরা জীব মানুষহিসেবে, স্রষ্টা প্রদত্ত তার সত্যিকার ক্ষমতা নিয়োজিত করতে পারে মানবজাতির কল্যাণে।

সুতরাং আল্লাহ যার অন্তর বিকশিত করেছেন নিবেদনের দিকে, নুরের উপর রয়েছে সে তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে।’ (আল-কোরআন, ৩৯:২২)-ফেসবুক পোস্ট, ৯ এপ্রিল ২০২০

এর মানে শুভ ও কল্যাণের জন্য ইসলাম ধর্ম কবুল করা এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত কুরআন-হাদীস, আকীদা-বিশ্বাস এবং ইবাদত-শরীয়তের অনুসরণ করার দরকার নেই। বরং দ্যা কসমিক হিলারস ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা সাঈদ রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী সাধনা করতে থাকলে ভিন্ন ধর্মের লোকেরাও স্রষ্টার পছন্দনীয় মানুষ হয়ে যাবেন! এমনকি সাঈদ রহমান শেষে ইসলামকেও বিকৃত করলেন। কুরআনের আয়াতের অনুবাদে ইসলামের পরিবর্তে শব্দ ব্যবহার করলেন নিবেদন। অর্থাৎ কোয়ান্টামের ঈমান নষ্টকারী কুফর এখানেও বিদ্যমান।

২. সাঈদ রহমান কসমিক হিলারস প্রতিষ্ঠা করার আগে এবং পরেও সিলভা মেথডের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত ছিলেন। প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি লিখেছেন-

সিলভা মেথড বাংলাদেশ ও নেপালের সাবেক সফল কান্ট্রি ডিরেক্টর সাঈদ-উর-রহমান স্যার ২০১১ সালে সিলভা হেড কোয়ার্টার লারেডো, টেক্সাস, ইউএসএ থেকে ডিরেক্টর অব দ্যা ইয়ার সম্মানে ভূষিত হওয়ায় ঐ বছরই সিলভা গ্র্যাজুয়েটদের পক্ষ থেকে স্যারকে একটি বিশেষ সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেই সংবর্ধনা প্রোগ্রামে কসমিক হিলারদের পক্ষ থেকে আমাকে পোডিয়ামে অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দেয়া হয়।-ফেসবুক পোস্ট, ১৩ এপ্রিল ২০২০

এর মানে, সিলভা মেথডের সমস্ত কুফরী ও গোমরাহী কসমিক হিলারসের মধ্যেও বিদ্যমান; (সিলভা মেথড সম্পর্কে আলোচনা সামনে আসছে।) বরং আরো বড় আকারে বিদ্যমান। কারণ সাঈদ রহমান সিলভা মেথডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হওয়া সত্ত্বেও আলাদাভাবে কসমিক হিলারস প্রতিষ্ঠা করেছেন; এতে তার একটা মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল, সিলভা মেথড ও এ ধরনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চিন্তা, দর্শন ও কর্মপদ্ধতিগুলোকে (যেসবের অনেকগুলোই স্পষ্ট গোমরাহী ও কুফর) কুরআন থেকে প্রমাণ করা। (দ্র. কসমিক হিলারসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে সাঈদ রহমানের পোস্ট, ৯ এপ্রিল ২০২০)

আর এ কাজটা করতে গিয়েই যত তাহরীফ ও বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। এমনকি সাঈদ রহমানেরা শেষ পর্যন্ত হ্যানি এটচানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন এবং সাধারণ মানুষকে তার হাতে তুলে দিয়েছেন।

গ. সিলভা মেথড

সিলভা মেথডের গুরু ও আবিষ্কারক হলেন হোসে সিলভা (১৯১৪-১৯৯৯ ঈ.)। মেথডটি সম্পর্কে জানতে হোসে সিলভা রচিত দ্যা সিলভা মাইন্ড কন্ট্রোল মেথডবইটি আদ্যোপান্ত পড়া হয়েছে।

হোসে সিলভা একজন অমুসলিম। তবে তিনি অন্য কোন্ ধর্মে বিশ্বাসী, সেটা তার বই থেকে নিশ্চিত করে বোঝা যায় না। তিনি যে ধর্মেরই হোন, তার মেথড যে সম্পূর্ণ শিরক নির্ভর, সেটা তার বই থেকে একদম স্পষ্ট। তার দাবি হল, স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে আরেকটা সত্তা রয়েছে; হোসে সিলভা যার নাম দিয়েছেন ঐরমযবৎ ওহঃবষষরমবহপব (হায়ার ইন্টেলিজেন্স)। স্রষ্টার পাশাপাশি এই হায়ার ইন্টেলিজেন্সও নাকি মানুষকে পথ দেখায়। হোসে সিলভার ভাষায়-

‘Now let us deal a larger question. I have mentioned Higher Intelligence a number of times in past chapters. Is this some noncommittal way of mine of referring to God? I cannot prove what I am about to say; I must speak from faith. My answer is no, by Higher Intelligence I do not mean God. I use capitate for the words because I am so respectful of it, but to me it is not God.

The universe seems to do what it does with remarkable efficiency―without a scrap of waste. When I put one foot in front of another, I cannot believe it is one of God’s preoccupations to see that I do not trip, nor, for that matter, is it a concern of Higher Intelligence; it is mine. I was genetically programmed to learn to walk; that was God’s work. Now that I have learned, the routine steps are up to me.

However, some steps in life are not routine, and I may need information not available through the five senses to make a decision. For this I turn to Higher Intelligence. sometimes I need overall advice of transcending importance. for this I turn to God. I pray.’ (THE SILVA MIND CONTROL METHOD, P. 119)

অনুবাদ : এবার আসুন আমরা একটি বৃহত্তর প্রশ্ন নিয়ে কথা বলি। আমি আগের অধ্যায়গুলোতে Higher Intelligence (হায়ার ইন্টেলিজেন্স) শব্দটি কয়েকবার ব্যবহার করেছি। আমি কি এ শব্দের মাধ্যমে আমার মতো করে গডকে বুঝিয়েছি? আমি এখন যা বলতে যাচ্ছি তা প্রমাণ করতে পারব না; আমি অবশ্যই আমার বিশ্বাস থেকে বলছি। আমার উত্তর হল- না, আমি Higher Intelligence দ্বারা গডকে বোঝাচ্ছি না। আমি এই শব্দ দুটির জন্য বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করি। কারণ আমি এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি; তবে আমার কাছে এটি গড নয়।

মনে হয়, মহাবিশ্ব তার সবকিছুই যথাযথভাবে করে চলেছে কোনো অপচয় ছাড়াই। যখন আমি একটির পর আরেকটি পা ফেলি, আমার বিশ্বাস হয় না- এটা গডের কোনো জরুরি কাজ যে, তিনি দেখবেন আমি পড়ে যাচ্ছি কি না। এটা হায়ার ইন্টেলিজেন্সেরও চিন্তার বিষয় নয়; এটা আমার চিন্তার বিষয়। আমাকে জেনেটিকালি প্রোগ্রাম করা হয়েছে হাঁটা শেখার জন্য, আর সেটা ছিল গডের কাজ। এখন আমি যখন শিখে ফেলেছি, বাকিটা আমার কাজ।

তবে জীবনের কিছু ধাপ এমন রুটিনমাফিক নয় এবং (তখন) আমাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এমন তথ্য জানতে হয়, যা পঞ্চেন্দ্রিয়ের দ্বারা পাওয়া যায় না। তখন হায়ার ইন্টেলিজেন্সের শরণাপন্ন হই। কখনো কখনো আমার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার প্রয়োজন হয়, তখন আমি গডের দ্বারস্থ হই। আমি প্রার্থনা করি।-দ্যা সিলভা মাইন্ড কন্ট্রোল মেথড, পৃ. ১১৯

বাংলাদেশে যারা সিলভা মেথডের পক্ষে কাজ করেন তারাও মানুষকে একদম এ কথাগুলোই শেখান। ডা. কালাম ফারুক, যিনি নিজেকে সিলভা মাইন্ড কন্ট্রোল মেথডের একজন ইন্সট্রাক্টর হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি তার এক ভিডিওতে সিলভা মেথডের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-

আপনি জানেন, আমাদেরকে গাইড করা হয়। আমরা গাইডেড। সুপার ন্যাচার পাওয়ার বলে একটা কথা আছে। ন্যাচার আমাদেরকে সবসময় গাইড করছে। আমাদের সাথে একটা হায়ার ইন্টেলিজেন্স আছে, যে আমাদেরকে গাইড করছে। আমরা স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদের সমাধান খুঁজে বের করতে পারি। এটা একটা সাইন্স। এপ্লিকেশন সিলভা মেথড আপনাকে জানাবে।’ (৫:২৪-৫:৫৬ মিনিট)

সামনে আরো বলেন-

আরো কিছু ডীপ লেভেলের কথা যদি আপনি শুনতে চান তাহলে আমি আপনাকে বলব যে, আমরা হায়ার ইন্টেলিজেন্স দ্বারা গাইডেড। আপনি দেখবেন, কোনো কাজ করতে গেলে আপনার একটা গড ফিলিংসতৈরি হচ্ছে।

আচ্ছা, আপনি চান যে, কেউ আপনাকে গাইড করুক। আপনাকে গইড তো সবসময় করা হচ্ছে। কিন্তু আপনি গাইডেন্সটা বুঝছেন না। কেন বুঝছেন না? কারণ আপনি এই সোর্স এনার্জি ফিল্ডের সাথে কানেক্টেড হচ্ছেন ইনটিউশনের মাধ্যমে। আপনি চান তিনি আপনাকে গাইড করুক। সর্বনিয়ত তিনি সবসময় গাইড করছেন। যদি আপনার ইনটিউটিভ পাওয়ারটাকে ডেভেলপ করেন, আপনার ইনটিউশনকে যদি প্র্যাকটিস করেন, আপনার ঊঝচ-কে যদি ইউজ করেন, যেটাকে আমরা সিক্সথ সেন্স, থার্ড আই অনেক নামে ডাকি, এটাকে যদি ট্রেইন্ড করেন, এটার বেনিফিট আপনি নিতে পারবেন।

আপনি প্রতিনিয়ত যখনই গাইডেন্স চাবেন, আপনি গাইডেন্স কীভাবে সীক করবেন, সেই টেকনিকটি সিলভা মেথড আপনাকে শেখাবে।’ (৯:৩৫-১০:৪২ মিনিট)

ভিডিওটির লিংক : https://youtu.be/4xw4eBH mRSM?si=CssxNTCvqKnSTTii

এই হল সিলভা মেথডের অবস্থা। মেডিটেশন আর মাইন্ড কন্ট্রোলের নামে মানুষকে শিরকের অন্ধকার গলিতে নিয়ে যাচ্ছে, যার একমাত্র পরিণতি জাহান্নাম।

মোটকথা, কোয়ান্টাম মেথড, দ্যা কসমিক হিলারস ও সিলভা মেথডের বহু বিষয় এমন, যেগুলো স্পষ্ট কুফর ও শিরক। এগুলোর কারণে মানুষের ঈমানই বরবাদ হয়ে যায়। এর বাইরে তাদের অন্যান্য গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা তো আছেই। তাই এ ধরনের ঈমান বিধ্বংসী শিরকী ও কুফরী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া একদম হারাম।

মানুষের জীবনে রোগ-ব্যাধি একটি স্বাভাবিক বিষয়। রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা ইসলামেরই নির্দেশ। কিন্তু চিকিৎসার নামে এমন কোনো পদ্ধতি বা মেথড গ্রহণ করার একদম সুযোগ নেই, যেটা মানুষের ঈমান-আকীদা নষ্ট করে দেয়। সুতরাং ডিপ্রেশন, অবসাদ বা বিষণ্নতা থেকে আরোগ্য লাভের জন্য কোনো মেথড গ্রহণ করার আগে, অবশ্যই ওই মেথড কুরআন সুন্নাহ ও শরীয়তসম্মত কি না, তা বিজ্ঞ আলেমের কাছ থেকে জেনে নেওয়া কর্তব্য।

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে করণীয়

উপরোক্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে এটা প্রমাণিত, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির মধ্যে নিংসন্দেহে অনেক কুফরী আকীদা-বিশ্বাস আছে এবং তিনি এসব কুফরী আকীদা-বিশ্বাসের দিকে মানুষকে আহ্বান করেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে স্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও সচেতন মুসলিমদের ঈমানী কর্তব্য, তাদের ফেতনা ও কুফরী আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা। তারা যেন কুরআনের নাম ব্যবহার করে বা অন্য কোনো উপায়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা। আর স্থানীয় প্রশাসনের কর্তব্য, তাদেরকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা। তারা যদি নিজেদের সমস্ত কুফরী আকীদা-বিশ্বাস, ভ্রান্ত চিন্তা-চেতনা ও অন্যায় কর্মকাণ্ড থেকে পরিপূর্ণরূপে তওবা করে ফিরে না আসে, তাহলে এলাকাবাসীর ঈমানী দায়িত্ব হবে তাদেরকে ধর্মীয়ভাবে বয়কট করা এবং জনগণের উচিত তাদেরকে স্বতঃস্ফূর্ত সামাজিক বয়কট করা।

আলোর পথেসংগঠনের বিষয়ে স্থানীয় উলামায়ে কেরাম পরামর্শ দিয়েছিলেন, সংগঠনটি কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা কী এবং তাদের অর্থের উৎস কী- এ সম্পর্কে পরিপূর্ণ না জেনে সংগঠনটির কোনো কার্যক্রমের বিষয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যাবে না। তাদের এ পরামর্শ একদম যথাযথ। মনে রাখতে হবে, গোমরাহ ও ভ্রষ্ট লোকেরা মানুষকে নিজেদের দলে ভেড়ানোর জন্য অনেক সময় ভালো রূপেও ধোঁকা দেয়। কখনো দান, কখনো প্রার্থনা, কখনো মেডিটেশন, কখনো প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ আবার কখনো কুরআন শিক্ষা কোর্স ইত্যাদি বহু শিরোনামেই আসতে পারে। যে শিরোনামেই আসুক, প্রথমে দেখতে হবে তাদের আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা কী? তাদের মধ্যে কোনো গোমরাহী নেই তো? এসবের আড়ালে তারা মানুষের মধ্যে কোনো গোমরাহী বা কুফরী চিন্তা ঢুকিয়ে দিচ্ছে না তো? ন্যূনতম এতটুকু সচেতনতা ও সতর্কতা সকল মুসলমানের মধ্যেই থাকা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সব ধরনের ফেতনা-ফাসাদ থেকে হেফাজতে রাখুন এবং ঈমানের উপর দৃঢ়তা ও অবিচলতা দান করুন- আমীন।

 

০৭-০১-১৪৪৬ হি.

 ১৪-০৭-২০২৪ ঈ.

 

 

advertisement