সফর ১৪৪৬   ||   আগস্ট ২০২৪

কোটা আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানি
একটি নিরীহ দাবিকে কেন সহিংস ও রক্তাক্ত করে তোলা হল

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

ছেলের লাশেও গুলি লাগে, বললেন বাবা’, ‘আমার ছেলেকে কারা মারল? কার কাছে বিচার দেব?’, ‘হাসপাতাল ঘুরলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে’, ‘বেটা তো আর ফিরে আসবে না, এখন ওর বউ-ছোওয়ালপালের দিখবি কিডা?’, ‘পিয়! বাবাবে ফোন দাও।’ (চার বছরের সাদিরার আর্তনাদ), ‘দশ বছর বয়সী হোসেনের তলপেট ছেদ করে বেরিয়ে যায় গুলি’, ‘আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? আমাকে কেন সন্তানহারা হতে হল’, ‘মা বললেন, গুলি এসে মোস্তফার হাত ভেদ করে পাজরে ঢুকে পড়ে।’

উপরের খবরগুলো আজকে প্রকাশিত শুধু একটি পত্রিকার কিছু শিরোনাম। আজ ২৭ জুলাই ২০২৪ ঈ.। বাংলাদেশে কোটাপ্রথা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এরপর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দেশব্যাপী সর্বপ্রকার ইন্টারনেট বন্ধ। কারফিউ জারির পর এক সপ্তাহেরও বেশি পার হয়ে গেছে। কিন্তু হতাহতদের শরীর ও হৃদয়ের রক্ত যেন কোনোক্রমেই শুকাচ্ছে না। গুলিবদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া শত শত মানুষের লাশের মিছিলের খবর এলেও সঠিক পরিসংখ্যান এখনো সামনে আসেনি। কিন্তু নিহতদের সংখ্যা তো বেড়েই চলেছে। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অনেকেই মৃত্যুবরণ করছেন। আর হাজার হাজার আহত লোকের অনেকেরই যে স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হবে তা তো এখন সুস্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। কেবলমাত্র জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিটিউটেই চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সে হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে বহু লোক স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যাবেন। অনেকের চোখেই একাধিক গুলি এখনো বিদ্ধ হয়ে আছে।

আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছোট ছিলাম। তবুও মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের অঞ্চলে পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণের কথা এখনো সুস্পষ্ট মনে আছে। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা আবার খালেদা জিয়া এবং দু বছরের সেনা নিয়ন্ত্রিত অস্বাভাবিক সরকার দেখেছি। এরপরে ২০০৯ সাল থেকে তো একটি সরকারই দেখে যাচ্ছি। তারা কিন্তু এদেশে কম আন্দোলন, বিক্ষোভ, হরতাল, ধর্মঘট প্রত্যক্ষ করেনি বা মোকাবেলা করেনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সকল বড় বড় আন্দোলন, স্বৈরাচার-বিরোধী অসংখ্য হরতাল আমরা এবং আমাদের বয়সীদের চোখের সামনেই হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জেগে ওঠা বড় বড় গণ বিক্ষোভ দমনে সে সময়ের সরকারগুলো জুলুম-নির্যাতনও কম করেনি। হতাহতও হয়েছে অসংখ্য বনী আদম।

কিন্তু ২০২৪ ঈ. সালের জুলাই মাসের নির্মম হত্যাকাণ্ডগুলোকে ইতিহাসে কী ভাষায় লেখা হবে জানি না। প্রকাশ্যে টার্গেট করে ঠাণ্ডা মাথায় এত মানুষ হত্যা করার নজীর স্বাধীন বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। এমনকি ২১ জুলাইয়ের প্রথম আলো পত্রিকায় প্রবীণ অধ্যাপক ওয়াহিদুদ্দিন মাহমুদের লেখায় পড়লাম, ‘পাকিস্তান আমলে ষাটের দশকে আইয়ূব খানের শিক্ষানীতির বিরোধিতা করেও ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। সে আন্দোলনেও এত নিষ্ঠুরতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের আক্রমণের সংবাদ সারাবিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’ ১৯৬৯ সালেও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। তখনো এমন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু প্রশ্ন হল, এবার এত হত্যাকাণ্ড কেন ঘটল? বাহ্যত দেশ কি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল? অথবা — আল্লাহ না করুন— গৃহযুদ্ধ লেগে গিয়েছিল? না ওসবের কিছুই ঘটেনি। বরং নিরস্ত্র ও নিরীহ ছাত্রসমাজের একটি যৌক্তিক দাবি, যা পরবর্তীতে ব্যাপক গণদাবিতে পরিণত হয়েছিল। সেটিকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড। সরকারি চাকরির নিয়োগে যুগ যুগ থেকে চলে আসা কোটাপ্রথা নামের বৈষম্যপূর্ণ নীতি এবারের আন্দোলনের সূত্রপাত করেছে। প্রথমে বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্ররা, পরে বিভিন্ন কলেজ ও হাইস্কুলের ছাত্ররা কোটা বিরোধী আন্দোলন-বিক্ষোভ শুরু করে। এ আন্দোলন এবারই প্রথম হয়নি। এর আগেও ছাত্ররা বিভিন্ন সময় প্রচলিত কোটা প্রথার বিরোধিতা করেছে, আন্দোলন করেছে।

২০১৮ সালে তো কোটাপ্রথা বিরোধী আন্দোলনের সময় রাগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি পুরোই বাতিল করার কথা বলেন। এরপর বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। গত মাসে (জুন ২৪) হাইকোর্ট কোটাপ্রথা পুনর্বহাল করে রায় প্রদান করে। এরপরে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার আন্দোলন। যদিও আন্দোলনটির তীব্রতা ও ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল অনেক বেশি। কিন্তু সেটি শুরুতে সহিংস ছিল না। বিপত্তি শুরু হয় সরকারি দল সমর্থিত কিছু লোক কতৃর্ক আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। এরপর আন্দোলনকারীদের দৃঢ়তার মুখে পালাতে বাধ্য হয় তারা। কিন্তু আন্দোলনকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে রাজাকার বলাকে কেন্দ্র করে পুনরায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র সমাজ। টেলিভিশনে এমন উক্তি শুনে মধ্য রাতে বের হয়ে পড়ে তারা। রাগে ক্ষোভে ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ শ্লোগানও দেয় অনেকে।

একথা সত্য, কোটাপ্রথা বিরোধী আন্দোলন ছাত্ররা শুরু করলেও পরবর্তীতে ছাত্রদের অভিভাবকগণ এবং অনেক সাধারণ মানুষও এতে যোগ দিয়েছেন বলে মনে হয়। কিন্তু আন্দোলনে মানুষের সম্পৃক্ততা ব্যাপক হলেও তা দমানোর জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে নির্বিচারে গুলির মাধ্যমে ব্যাপক এ হত্যাকাণ্ডের আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল বলে বিবেকবান কোনো মানুষই মনে করছেন না। কোটাপ্রথা বৈষম্যে পরিপূর্ণ ছিল। একশ জন মানুষের সরকারি চাকরি হলে সে পদগুলোর ত্রিশটিই পাবে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা। এছাড়া জেলা কোটা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা মিলিয়ে রয়েছে আরও ২৬ শতাংশ। অর্থাৎ একশ জনের ৫৬ জনই মনোনীত হবে বিশেষ গোষ্ঠী থেকে। আর পুরো দেশের সাধারণ মেধাবী ছাত্রসমাজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৪৪টি আসনে। এমন একটি নীতি যে বৈষম্য ও জুলুমে পরিপূর্ণ, সংশ্লিষ্ট কিছু সুবিধাভোগী লোক ছাড়া কারোরই তাতে দ্বিমত ছিল না। ২০১৮ সনের শুরুতে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে সে বছরের মাসিক আলকাউসারের মার্চ সংখ্যায় এ বিষয়ে কিছু কথা আরজ করেছিলাম।

যাহোক সবকিছু ঘটে যাওয়ার পর যখন সকল প্রকারের ইন্টারনেট বন্ধ, দেশে কারফিউ জারি করা হল, এর মধ্যেই আপিল বিভাগ কোটাসংস্কার বিষয়ে রায় প্রদান করলেন। ৫৬% থেকে কমিয়ে ৭% করা হল। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৫% বরাদ্দ থাকল। যদিও আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, এটি নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার। সরকার চাইলে তাতে কমবেশি করতে পারে। তবুও আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সরকার রায়টি মেনে নিয়েছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর। সে আদালতের এমন রায় একথাই তো স্পষ্ট করছে যে, দীর্ঘ পাঁচ দশক থেকে চলে আসা এ কোটাপ্রথা ছিল অন্যায় ও বৈষম্যপূর্ণ। তো ছাত্ররা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে কোনো দোষ করেছে— এমন কথা তো কেউ আর বলতে পারবে না।

অথচ এ নিরীহ দাবি ও এর সপক্ষের আন্দোলনকে বল প্রয়োগ করে প্রতিহত করতে গিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এবং ব্যাপক ক্ষমতা প্রয়োগ করেই এ মহা বিপদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আন্দোলনের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তো কুরআন কারীমের আস্ত একটি আয়াতই বানিয়ে ফেলেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। ওই বিশ্ব বিদ্যালয়ের সমাজ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, আ ক ম জামালুদ্দীন, যিনি কি না বিশ্ব বিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে শিক্ষক প্রতিনিধি থেকে নির্বাচিত হয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তার দাবি, ‘পবিত্র কুরআনের সূরা আনফালে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, যারা বিজিত (তিনি হয়তো বিজয়ী বোঝাতে চেয়েছিলেন, মিথ্যা কথা বলতে গিয়ে মুখ ফসকে উল্টোটা বেরিয়ে যায়) বাহিনী হবে তারা দেশের সম্পদ, চাকরি, অর্থ ও ভূখণ্ডের আশি ভাগ অর্থাৎ চার ভাগের নিয়ন্ত্রণ পাবে। আর বাকি এক ভাগ থাকবে দুস্থ, এতীমদের জন্য।’ লোকটির ওই বক্তব্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। তখন মনে করেছিলাম, আগস্ট মাসের আলকাউসারের নিবন্ধ এ বিষয়েরই লেখা হবে।

একজন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, যিনি নাকি আবার পিএইচডি হোল্ডারও, তিনি কীভাবে নিজের বানানো কথাকে কুরআন শরীফের একটি সূরার আয়াত আখ্যা দিতে পারে—তা ভাবতেই অবাক লাগছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে তো ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগও রয়েছে। রয়েছে আরবী বিভাগ। সেখানে নিশ্চয়ই অনেক জ্ঞানী-গুণী আলেমও রয়েছেন। জানি না, তারা এর প্রতিবাদ করেছেন কি না? ওই শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে বলতে গিয়ে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতো নিজের বানানো কথাকে কীভাবে কুরআনের সূরা আনফালের আয়াত আখ্যা দিলেন। তার গোত্রীয় বর্তমান ও পূর্ব সময়ের আরও আঁতেলরা এভাবে নিজেদের মিথ্যা বানোয়াট কথাকে কীভাবে ধর্মের নামে চালিয়ে দিয়ে থাকে— সেই বিষয়ে কিছু আরজ করার ইচ্ছা ছিল। কে জানত, এর ভেতরে এ মহা হত্যাযজ্ঞ ঘটে যাবে; হতাহত হবে হাজার হাজার মানুষ!

যাইহোক, আগে এ ধরনের চাটুকার ও দুমুঠো অন্নের জন্য নির্লজ্জ গোলামী করা লোকদের আঁতেল বলা হত। এখন সম্ভবত এজাতীয় সাহেবদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় ওই শব্দটি আর শোনা যায় না। ওই ডক্টর আ ক ম জামালুদ্দীনের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি। আজ তার কথা থাক।

আমরা আরজ করছিলাম, নিরীহ ও যৌক্তিক একটি দাবি এবং এর সপক্ষের আন্দোলনকে প্রতিরোধ ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করাই এই সমস্যা ও জটিলতা তৈরি হওয়ার প্রাথমিক কারণ। যে আপিল বিভাগের মাধ্যমে কারফিউয়ের ভেতর এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হল, সেটা কদিন আগে করলে কী হত? কেন এত ঘোলা করে পানি পান করতে হল। ক্ষমতাসীনরা বলছেন, বিভিন্ন কথা। এতগুলো মানুষের হত্যাকাণ্ডের কোনো যৌক্তিক কারণ না বললেও তারা দাবি করছে, এ আন্দোলনে বিএনপি-জামাত অনুপ্রবেশ করেছিল। তাহলে কি কারো যৌক্তিক দাবিকে বিএনপি-জামাত সমর্থন করলেই সে দাবিওয়ালাদের রক্তপাত বৈধ হয়ে যায়? কোনো একটি আন্দোলন বড় হয়ে উঠলে বিরোধীরা তো সে সুযোগ নেবেই। ক্ষমতাবানেরা সেটিকে বড় হতে দিল কেন?

আর বাংলাদেশ না এখনো সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক দেশ। এদেশের নামও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। তো গণতন্ত্রে কি আন্দোলন ও বিক্ষোভকারীদের পাখির মতো গুলি করার সুযোগ রয়েছে। আরেকটি কথা এখন জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, দুষ্কৃতিকারীরা মেট্রোরেল, সেতু ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও হামলা চালিয়েছে। যার জন্য এ গুলিবর্ষণ। কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী শিক্ষার ছাত্র হিসেবে আমরা বরাবরই ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের সম্পদের ওপর হামলার বিরোধী। ইসলাম এহেন কর্মকাণ্ডকে কঠিনভাবে নিন্দা করে। ইসলামী শরীয়তে এগুলো স্পষ্ট হারাম। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই অগ্নিসংযোগ ও স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি এতগুলো বনী আদমের প্রাণহানিকে বৈধ করে দেয় কি না? এদেশে আন্দোলনে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এটাই কি প্রথম? আমরা তো সেই এরশাদের আমল থেকেই বিরোধী দলগুলোর এজাতীয় আন্দোলন দেখে আসছি। তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত একত্রিত হয়ে কত সহিংস কর্মসূচি পালন করেছে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে।

অসংখ্য হরতাল ও যানবাহন, স্থাপনা ভাঙচুরের কথা কার অজানা? এরপর ১৯৯০ থেকে ৯৬ খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও জামাতের একই প্রকার আন্দোলন। আবার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ —এর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি ও জামাতের সেই পুরোনো তরীকায় আন্দোলন। ২০০১ পরবর্তী বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক আন্দোলনের কথা দেশের মানুষ কি ভুলে গেছে? সেগুলোর কোন্টিতে যানবাহন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং স্থাপনা ভাঙচুর হয়নি, অগ্নিসংযোগ ঘটেনি!

আমরা আগেই বলেছি, আমরা এসবের একেবারেই পক্ষে নেই। আমাদের প্রিয় ধর্ম ইসলাম এহেন কর্মকাণ্ডের অনুমতি দেয় না। কিন্তু এদেশে এসবের রেওয়াজ তো রাজনৈতিক দলগুলোই করেছে। এখন এধরনের ধ্বংসাত্মক কাজকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষকে হতাহত করার বৈধতা কি দেওয়া যাবে? কোনো স্থাপনার মূল্য যতই হোক, সেটি কি কোনো মানবজীবনের সমান হতে পারে? কোনো প্রকৃত মা কি পাহাড়সম সম্পদ বা সোনা-মুক্তার বিনিময়ে তার বুকের ধনের জান বিসর্জনে রাজি হবে? সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ মামলাগুলোর বিচারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার জাতীয় সংসদে বলেছিলেন— ‘প্রয়োজনে ইসলামের হদ-—কিসাসের আইন আনব, তবুও ওদের বিচার করে ছাড়ব।’

তো যেসব দেশে এখনো হুদুদ ও কিসাসের বিধান কিছুটা হলেও কার্যকর রয়েছে, সেখানে নিহত ব্যক্তির হত্যাকারীকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে হত্যাকারী প্রভাবশালী বা বেশি ধনাঢ্য হলে নিহতের পরিবারকে দিয়ত—স্বরূপ মোটা অংকের অর্থ দিয়ে ক্ষমা ও মার্জনার আবেদন করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন আবেদনে সাড়া পাওয়া যায় না। নিহতের পরিবার দরিদ্র হলেও তারা চায়, তাদের আপনজনের জান যে ব্যক্তি নিয়েছে, তার যথাযথ শাস্তি হোক। এসবকিছু একথারই প্রমাণ বহন করে যে, প্রত্যেকের কাছে তার প্রিয়জনের জানের মূল্য দুনিয়ার সবকিছু থেকে বেশি। রাষ্ট্র যেহেতু জনগণের অভিভাবক; তাই ইসলামী রাষ্ট্র সেই জানের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর থাকে।

এখন যে বলা হচ্ছে, উন্নয়ন ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই এসব করা হয়েছে; তবে কি কিছু বড় স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগেই এতগুলো প্রাণহানির বৈধতা এসে গেছে। মানুষের জন্য উন্নয়ন, না উন্নয়নের জন্য মানুষ। কবি ও দার্শনিক শেখ সাদীর সেই বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়ে গেল—

خوردن برائے زیستن است + نہ زیستن برائے خوردن

অর্থাৎ খাবার ও সম্পদ জীবনের জন্য। জীবন কিন্তু সম্পদের জন্য নয়।

আগে তো পাঠ্যপুস্তকেও এসব মনীষীদের গল্প-কবিতা থাকত। এখন সেসবের জায়গা নিয়ে  নিয়েছে মতলবাজদের লেখা ও অশ্লীলতায় ভরা মিথ্যা কাহিনী। এখন থাক সে কথা।

তো স্থাপনা ধ্বংস বা ভাঙচুর অপরাধ হলেও সে কারণে মানুষ হত্যার বৈধতা তো আর দেওয়া যায় না। এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও এখনো চলছে গণ-গ্রেফতার ও অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার মানুষের নামে মামলা। যা আবার রাস্তা খুলবে পুলিশ ও বিভিন্ন মতলবী লোকদের গ্রেফতার ও জামিন বাণিজ্যের। চলছে হুমকি-ধমকিও। বলা হচ্ছে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জনৈক দায়িত্বশীল পুলিশ সদস্যদের নিহত হওয়ার কথা বললেন, (যা অবশ্যই অপরাধ, এরও সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্ত হয়ে বিচার হওয়া উচিত) এবং তাদের একজন সাবেক মেয়রের ওপর হামলার কথা বললেন; জানালেন, তাকে তো মেরেই ফেলা হত, যদি পুলিশ না গিয়ে পৌঁছাত। হাঁ, তেমন কিছু ঘটলে সেটিও তো ঠিক কাজ হত না। কিন্তু এ দায়িত্বশীল ব্যক্তি কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতৃর্ক নির্বিচারে গুলি করে যে অসংখ্য মানুষকে হতাহত করা হয়েছে, তার জন্য একবারও  দুঃখ প্রকাশ করেছেন? নিরীহ মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো লোকদের বিরুদ্ধে কোনো আইনী ব্যবস্থা নেওয়া কি শুরু হয়েছে? যেখানে দরকার জনগণের ক্ষতে মলম দেওয়া, সেখানে ছিটানো হচ্ছে লবণ! এই পন্থায় কতদিন দমন করা যাবে গণবিক্ষোভ?

এবারের ছাত্র জনতার আন্দোলন এবং তাতে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ও সমর্থন দেখে অনেকেই বলেছেন, এটি অনেক দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ক্ষমতাসীনদের প্রতি মানুষের বিরক্তি, ঘৃণা ও দীর্ঘদিন থেকে দেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকার কারণেই এমনটি ঘটেছে। আমরা সাধারণ মানুষ। রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না। ছাত্রকাল থেকে এ পর্যন্ত কোনোদিন রাজনীতি করাও হয়নি। কিন্তু এটা তো বুঝি, যেকোনো জনপ্রিয় বা জনসমর্থনপুষ্ট সরকার গণদাবির মুখে বিচলিত হয় না। শক্তি প্রয়োগ করে না।

জনগণের করের টাকায় কেনা বন্দুক ও বুলেট, তাদেরই করের টাকায় প্রতিষ্ঠিত ও চালিত বাহিনী দ্বারা জনগণের গায়ে কীভাবে বিদ্ধ করা যেতে পারে? একটি গণবান্ধব সরকার টিকেই তো থাকে জনগণের আস্থা ও ভালবাসা নিয়ে। এখন তো দেশে দেশে হাজার—কোটি টাকা ব্যয় করে বিভিন্ন এলিট ফোর্সের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। আগের যুগের শাসকদের কি এমন নিরাপত্তাবাহিনী ছিল? তারা টিকে থাকত কেমন করে? জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণের ওপর নিজের মনমতো করের বোঝা চাপিয়ে, নিজের পছন্দের শিক্ষা-সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়ে তারা কি টিকে থাকতে পারতেন? তো শক্তিপ্রয়োগের ও দমননীতির তখনই প্রশ্ন আসে, যখন নাগরিকদের ওপর আস্থা থাকে না। তাদেরকে যথাযথ সেবা দেওয়া হয় না। তাদের অধিকারগুলোর তোয়াক্কা করা হয় না।

যখন মনে হয় যে, এ আন্দোলন ক্ষমতাচ্যুতির কারণ হতে পারে, তখনই বিভিন্ন দেশে একনায়ক ও জুলুমবাজদের মরণকামড় দিতে দেখা যায়। রাষ্ট্র যদি জনগণের সেবক হয়ে ওঠে, যদি তাদের অধিকার আদায়ে মনোযোগ দেয়, যদি তাদের ওপর জুলুম ও নির্যাতন না করে, তাহলে কোনো আন্দোলনকেই ভয় পাওয়ার কথা নয়। সে তার ভালবাসা দিয়ে আন্দোলনকারীদের মন জয় করবে। তাদের কোনো ন্যায্য দাবি তৎক্ষণাৎ না মানতে পারলেও সুন্দরভাবে বুঝিয়ে ও যুক্তি দিয়ে সময় চাইবে। আর রাষ্ট্রের দ্বারা পালন করা সম্ভব না হলে সেটাও তাদেরকে বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু এবার হলটা কী? যে কাজ সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর করা হল, তা সুন্দরভাবে তৎক্ষণাৎ করলে কী অসুবিধা ছিল? তখন তো না এ অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটত, না ডিজিটাল বাংলাদেশকে ইন্টারনেটশূন্য করে এবং দেশে কারফিউ জারি করে জনগণের নাভিশ^াস ওঠানোর প্রয়োজন হত। গণমানুষের এত কষ্টও হত না। বিপর্যয়ে থাকা অর্থনীতি পড়ত না আরো ধ্বংসের কবলে। আর বিদেশে বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন করে হেয় ও তিরস্কারও হত না।

মহান সৃষ্টিকর্তা  আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন কারীমে একটি অন্যায় হত্যাকাণ্ডকে পুরো মানবতার হত্যা বলে আখ্যা দিয়েছেন। [দ্র. সূরা মায়েদা (০৫) : ৩২]

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে মুসলিমের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করেছেন—

إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، فِي بَلَدِكُمْ هَذَا.

তোমাদের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু তোমাদের ওপর এমনই হারাম ও সম্মানিত, যেমন এই মাসে, এই শহরে আজকের এই দিনটি হারাম ও সম্মানিত। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৭৯; সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৩৯

পরিশেষে দেশের দ্বীনদার শ্রেণি ও নওজোয়ান উলামায়ে কেরামের কাছে আবেদন, তারা যেন সাধারণ মানুষজনকে দ্বীন শিক্ষা দেন, কুরআন শিক্ষা দেন এবং ইসলাম তাদেরকে যে দায়িত্ব ও অধিকার দিয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন করে তোলায় আরো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ রাখেন। দুনিয়ায় এ হানাহানি ও জুলুম আর কতদিন চলবে?

এই যে এবার ছাত্র আন্দোলনের জোয়ার উঠল। অনেকেই বলছেন, এখানে কোটার বিষয়টি সামনে থাকলেও আসলে সাধারণ ছাত্ররা বহু বছর থেকে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন কতৃর্ক বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়ে আসছিল। সে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ তারা তুখোর আন্দোলনের মাধ্যমে করেছে এবং একই কারণে হয়তো তাদের কেউ কেউ আক্রমণাত্মকও হয়ে উঠেছেন। তো এই যে, একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহপাঠীরা, বড় ভাই ছোট ভাইয়েরা কেন হানাহানিতে লিপ্ত হল? কেন বড়রা ছোটদেরকে স্নেহ না করে শাসন করবে?

সরকারের মদদপুষ্ট হলেই কি সহপাঠীদের ওপর ক্ষমতা দেখাতে হবে? তাদেরকে নির্যাতন করতে হবে? তাই আলেম সমাজের এবং সর্বস্তরের ছাত্র অভিভাবকদের দায়িত্ব, আমাদের প্রিয় ধর্ম ইসলামের মূল্যবান শিক্ষাগুলো এই ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রদান করা। ইসলামের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও অহিংসার শিক্ষা এবং অনাচার-অহমিকা বিরোধিতাসহ এমন বহু আখলাক, আদব ও আচার-নিয়ম রয়েছে, যেগুলো ধারণ করলে এহেন হানাহানির আশঙ্কাই তৈরি হবে না।

আর রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের একথা ভালোভাবে মনে রাখা দরকার, দুনিয়ায় কেউ স্থায়ী থাকবে না। আল্লাহ্র দরবারে সকলকেই সবকিছুর জবাব দিতে হবে। এটি তো আখেরাতের বিষয়। যার প্রতি ঈমান সত্যিকারের মুসলিম মাত্রেরই রয়েছে। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে হোক বা রাষ্ট্রীয় পযার্য়ে হোক— জুলুম, হত্যা, নির্যাতন যে মানব হৃদয়ে স্থায়ী ক্ষত ও ক্ষোভ তৈরি করে, তা খুবই স্পষ্ট।

একজন নির্যাতিত ব্যক্তি অথবা নিহতের পরিবারের সদস্যবর্গের আপাতদৃষ্টিতে জুলুম সয়ে গিয়ে থেকেছে বলে মনে হলেও তাদের অনেকের দিলে কিন্তু প্রতিশোধের আগুন জ¦লতে থাকে যুগ যুগ ধরে। এমনকি বংশ পরম্পরায়। আর সে আগুনে কোনো না কোনো সময় নির্যাতনকারী বা তার অধস্তন বংশধররাও ভস্মীভূত হয়ে যায়। এগুলো শুধু গল্প-উপন্যাসের কথাই নয়; বরং দুনিয়ায় এমন নজীর কম নেই। তাই জালেম অথবা তার নির্দেশ পালন করে জুলুমে অংশগ্রহণকারী, নিজের পার্থিব সুবিধার জন্য শোষণ-নিযার্তনের পক্ষাবলম্বনকারী, এর পক্ষে সাফাইদাতা, চাই সে সমাজের যে পেশাতেই নিয়োজিত থাকুক— তাদের ভাববার বিষয় রয়েছে। বৈষম্য, নির্যাতন যত বাড়বে, দমন-পীড়ন যত শক্ত হবে, সমাজও তত বিভক্ত হবে। এগুলো শুধু কান্না এবং আহাজারিকেই জন্ম দেয় না; বরং অনেক সময় কারো কারো মনে প্রতিশোধ-পরায়ণতাও উসকে দেয়। তাই এই মুহূর্তে দায়িত্বশীলদের করণীয় হল, খাঁটি দিলে আল্লাহ্র কাছে তওবা করা, ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ক্ষমা চাওয়া, তাদের যথাযোগ্য ক্ষতিপূরণ করা, অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনা, সব ধরনের জুলুম, নির্যাতন ও অন্যায় হয়রানি থেকে বিরত থাকা।

আজকের পত্রিকায় দেখলাম, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যদি কারফিউ না দেওয়া হত, তাহলে শ্রীলংকার মতো এখানেও গণভবন দখল করে নেওয়া হত। ইস্ত্রি করা কথা বলা এ মন্ত্রী বাকপটু বলেই পরিচিত। তিনি কি শ্রীলংকার উদাহরণ না দিলে পারতেন না? শ্রীলংকার গণ আন্দোলন কি ভালো মানুষদের বিরুদ্ধে হয়েছিল? সেখানে মানুষ এমনি এমনিই এত বড় বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিল, নাকি ক্ষমতাসীনগণ কতৃর্ক বছর বছর থেকে মানুষের ওপর দমন-নির্যাতন, শোষণ, রাষ্ট্র ক্ষমতাকে একটি গোষ্ঠী ও পরিবারের কাছে কুক্ষিগত করে ফেলার ও তথাকথিত উন্নয়নের নামে ঋণ করতে করতে একসময় খোদ রাষ্ট্রকেই ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এনে পৌঁছানোর প্রতিক্রিয়া ছিল সেটি। এছাড়া ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা লোকজনের অবৈধ সম্পদের পাহাড় এবং সীমাহীন দুর্নীতি ঐ আন্দোলনকে বেগবান করেছিল। শ্রীলংকার সেই গণ বিক্ষোভ ও গণ বিপ্লব তো বিশে^র দেশে দেশে নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত ও আদর্শ হিসেবে স্থান পেয়েছে। কাদের সাহেব সেসব কথা টেনে নতুন ঝামেলায় পড়ছেন না তো?

আমার মনে হয়, একটি ভুল আমরাও করেছি। আমরা কি পারতাম না আন্দোলনের শুরুতেই কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে? আমাদের নেতৃস্থানীয় আলেমগণ, যারা বিভিন্ন পদ-পদবিতে রয়েছেন, যারা বড় বড় মসজিদগুলোতে খতীব ও ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন, যাদের সাথে ক্ষমতার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের ওঠা-বসা রয়েছে, তারা কি পারতেন না বিবৃতি দিয়ে, আবদার-অনুরোধ করে উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতে! হোক সেটি জেনারেল শিক্ষিত ছাত্রদের আন্দোলন। কিন্তু আমরা আর তারা কি একই সমাজের লোক নই? পূর্বের নীতি ভঙ্গ করে কেউ কেউ তো এখন ক্ষমতাসীনদের সাথে সুসম্পর্ক (!) বজায় রাখেন। আমরা তো ক্ষমতার দুয়ারের কাছে গেলাম; কিন্তু আম মুসলিম সমাজ থেকে দিন দিন আরো বিচ্ছিন্ন হচ্ছি না তো।

আল্লাহ আমাদের মাফ করুন। এদেশের মানুষকে ঈমান ও ইজ্জত নিয়ে নিরাপদে জীবন-যাপনের রাস্তা করে দিন। 

 

 

advertisement