মুহাররম ১৪৪৬   ||   জুলাই ২০২৪

শরীয়তের দৃষ্টিতে
ট্রান্সজেন্ডার ও ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ
একটি প্রামাণ্য ফতোয়া

[ফতোয়াটি সময়োপযোগী একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ ফতোয়া প্রস্তুত করা ও প্রকাশ করার জন্য আমরা আল-হাইআতুল উলয়ার শুকরিয়া আদায় করছি। বিষয়টি সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হওয়ায় ফতোয়াটির বহুল প্রচার কাম্য। তাই আল-হাইআতুল উলয়ার ছাপানো নুসখা থেকে আমরা তা আলকাউসারেও ছেপে দিলাম। সম্পাদক]

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد!

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন এবং এর রয়েছে স্বতন্ত্র নীতি-আদর্শ ও জীবনপদ্ধতি। কিয়ামত পর্যন্ত সকল সমস্যার সমাধান এতে রয়েছে। যত ভয়ঙ্কর ফিতনাই আসুক, তা থেকে বাঁচার জরুরি পথনির্দেশনা এ দ্বীন ও শরীয়তে আগে থেকেই বিদ্যমান আছে।

বর্তমান যুগে ট্রান্সজেন্ডারবাদ নামে খুবই ভয়ঙ্কর এক ফিতনার প্রকাশ ঘটেছে, যাকে বলা যায় সকল নোংরামি ও অশ্লীলতার মূল। আফসোস, পাশ্চাত্য থেকে ছড়াতে ছড়াতে এখন তা মুসলিম দেশগুলোতেও অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছে। সচেতন মুসলিমগণ এ সম্পর্কে শরীয়তের বিধান জানতে চান। দেশের প্রায় সকল দারুল ইফতাতেই এ বিষয়ে প্রশ্ন আসছে।

যেহেতু এটা একটা জাতীয় বরং আন্তর্জাতিক সমস্যা, তাই সঙ্গত মনে হল এ বিষয়ে জাতীয় প্রতিষ্ঠান

আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর জাতীয় মুফতি বোর্ড-এর পক্ষ থেকে দলীলসমৃদ্ধ বিস্তারিত ফতোয়া প্রকাশ করা হোক। সেমতে ২৩ জুমাদাল আখিরা ১৪৪৫ হি. মোতাবেক

০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ঈ. তারিখে জাতীয় মুফতি বোর্ডের মজলিস আহ্বানপূর্বক দাওয়াতনামা প্রেরণ করা হয় এবং ঘোষিত তারিখ ৩০ জুমাদাল আখিরা ১৪৪৫ হি. মোতাবেক ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ঈ. শনিবার মুফতি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। মজলিসের কয়েকজন সদস্য নির্ধারিত বিষয়ে ফতোয়ার মুসাবিদা প্রস্তুত করে আনেন। একটি মুসাবিদা মজলিসে পড়ে শোনানো হয়। কিছু পরামর্শও সামনে আসে। চূড়ান্ত ফতোয়া প্রস্তুত করার জন্য নিম্নবর্ণিত ৫ (পাঁচ) সদস্যবিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়

১. মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক, (আহ্বায়ক), মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা

২. মাওলানা মাহফুজুল হক, সদস্য, আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ

৩. মাওলানা মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ, শায়খ যাকারিয়া রিসার্চ সেন্টার কুড়িল, ঢাকা

৪. মাওলানা মুফতি আবদুস সালাম, জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ

৫. মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ কেফায়াতুল্লাহ, আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী।

সাব-কমিটি ঐ দিনই ফতোয়াটি নযরে সানী করেন। এরপর ০৪ শাবান ১৪৪৫ হিজরী মোতাবেক ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ঈসাব্দ তারিখে এক দীর্ঘ সভায় ফতোয়াটি আরো গভীরভাবে সম্পাদনা ও পরিমার্জন করা হয় এবং তাতে জরুরি সংযোজনও করা হয়। এভাবে সাব-কমিটি ফতোয়াটিকে চূড়ান্ত রূপ দান করে আমার সামনে পেশ করে। আমি ফতোয়াটি দেখে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, ফতোয়াটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে দলীলসমৃদ্ধ আকারে প্রস্তুত করা হয়েছে।

অদ্য ১২ যিলকদ ১৪৪৫ হিজরী মোতাবেক ২১ মে ২০২৪ ঈসাব্দ, মঙ্গলবার জাতীয় মুফতি বোর্ডের সভায় দীর্ঘ পর্যালোচনার পর ফতোয়াটি প্রকাশের অনুমোদন দেয়া হয়।

সর্বসাধারণের উপকারিতার কথা বিবেচনা করে ফতোয়াটি আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর প্রকাশনা বিভাগ থেকে ছাপানো হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে পুরো উম্মতকে উপকৃত করুন। জাতির দায়িত্বশীলদেরকে নিজ নিজ দায়িত্ব আদায়ের তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

মঙ্গলবার,

১২ যিলকদ ১৪৪৫ হিজরী

(মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা) মাহমুদুল হাসান

চেয়ারম্যান, জাতীয় মুফতি বোর্ড

চেয়ারম্যান, আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ

 

 

 

 

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

ট্রান্সজেন্ডারবাদ বিষয়ে জিজ্ঞাসা

 

বরাবর,

জাতীয় মুফতি বোর্ড

আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ

 

বিষয় : ট্রান্সজেন্ডারবাদ বিষয়ে শরয়ী বিধান প্রসঙ্গে।

 

মুহতারাম,

সম্প্রতি একাধিক দৈনিক পত্রিকা ও মিডিয়া মারফত জানতে পারলাম, ‘‘ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন ২০২৩’’ নামে একটি আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। আইনের খসড়া কপিটি আমি সংগ্রহ করেছি এবং পড়ে দেখেছি। সেখানে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির পরিচয়ে বলা হয়েছে

ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি বলিতে বুঝাইবে (ক) জৈবিক লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এমন ব্যক্তি যাহাকে পূর্ণাঙ্গ নারী বা পুরুষ কোন লিঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, অথবা জন্মকালে যাহার মধ্যে লিঙ্গ বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হইবার কারণে লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নাইএমন আন্তঃলিঙ্গ (intersex) ব্যক্তি; অথবা (খ) এমন ব্যক্তি, শারীরিক-মানসিক ও আচরণগত বা মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার রূপান্তরের ফলে যাহার প্রকাশ ভঙ্গিতে পরিবর্তন ঘটিয়াছে। ট্রান্সজেন্ডার ম্যান বা ট্রান্সজেন্ডার উইম্যান বা সামাজিক-সংস্কৃতিগতভাবে হিজড়া নামে পরিচিত ব্যক্তিও এর আওতাভুক্ত হইবেন; অথবা  (গ) এমন ব্যক্তি, যিনি নিজেকে জেন্ডার নৈর্ব্যক্তিক (non-binary) অনুভব (perceived) করেন।

এখানে ট্রান্সজেন্ডারের পরিচয়ের মাঝে হিজড়াকেও দাখিল করা হয়েছে, অথচ হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার টার্ম দুটির মাঝে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। হিজড়া হল জন্মগত শারীরিক ত্রুটিযুক্ত ব্যক্তি আর ট্রান্সজেন্ডার হল মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গ অভিব্যক্তি বা জেন্ডার সম্পর্কীয়।

ট্রান্সজেন্ডারবাদ মূলত জেন্ডার বিষয়ক পাশ্চাত্যের একটি ধারণা। ট্রান্সজেন্ডার মানে হল, যার মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন থেকে ভিন্ন। এ মতবাদ অনুযায়ী শারীরিক গঠনে সুস্থ স্বাভাবিক কোন পুরুষ যদি নিজেকে নারী বোধ করে, তাহলে সে নারী। অনুরূপভাবে শারীরিক গঠনে সুস্থ স্বাভাবিক কোন নারী যদি নিজেকে পুরুষ বোধ করে, তাহলে সে পুরুষ। অর্থাৎ জন্মগত লিঙ্গ দিয়ে নারী-পুরুষ চিহ্নিত করা হবে না; বরং নারী-পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার মাধ্যম হবে মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গবোধ। নিজেকে যা মনে করেন তিনি তা। এ মতবাদে ট্রান্সজেন্ডার হওয়ার জন্য সার্জারির মাধ্যমে বা হরমোন থেরাপির মাধ্যমে শারীরিক কাঠামো পরিবর্তন করা আবশ্যক নয়, করতেও পারে, আবার নাও করতে পারে। সর্বাবস্থায়ই সে ট্রান্সজেন্ডার।

এ মতবাদ যদি আইনি বৈধতা পায়, তাহলে একজন পুরুষ নিজেকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে নারী দাবি করলে সে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে ট্রান্সনারী এবং একজন নারী নিজেকে পুরুষ দাবি করলে সে একজন ট্রান্সপুরুষ হিসেবে গণ্য হবে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অধিকার ও নিয়মাবলি তার রূপান্তরিত অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার আইন ২০২৩-এর খসড়াতে বলা হয়েছে

আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।

ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি কর্তৃক অনুসৃত ধর্ম অনুসারে তাহার জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিম্নবর্ণিতভাবে নির্ধারিত হইবে। যথা

ট্রান্সজেন্ডার ম্যান-এর জন্য উত্তরাধিকারের অংশ পুরুষের অংশের অনুরূপ হইবে; ট্রান্সজেন্ডার উইম্যান-এর জন্য উত্তরাধিকারের অংশ নারীর অংশের অনুরূপ হইবে।

এ মতবাদ দ্বারা পারিবারিক কলহ ও ঝগড়া-বিবাদের সূচনা হবে। নারীদের সামাজিক নিরাপত্তাও অনেকাংশে হুমকির মুখে পড়বে।

ট্রান্সজেন্ডার আইনের ভয়াবহ দিকগুলো হচ্ছে, এর দ্বারা যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। তার চেয়েও ভয়াবহ হল, এ আইনের মাধ্যমে সমকামিতার অবাধ বিস্তার ঘটবে। ট্রান্সজেন্ডারবাদের বিরুদ্ধে তুরস্ক, চীন ও রাশিয়াসহ অনেক দেশ সোচ্চার হয়েছে; কিন্তু যদ্দুর জানা গেছে, আমাদের দেশে নাকি তা আইনি বৈধতা পেতে যাচ্ছে। আমাদের দেশের প্রসিদ্ধ অনেক মিডিয়াতে ট্রান্সজেন্ডারবাদকে খুব ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। তার পক্ষে যুক্তি দেয়া হচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদেরকে নিয়েও খুব মাতামাতি করা হচ্ছে। যা দেশের অনেক সাধারণ জনগণের মাঝে ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায় আমাদের মত সাধারণ জনগণের বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাই

ক. ট্রান্সজেন্ডারবাদ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

খ. ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার কি এক, না ভিন্ন?

গ. হরমোন থেরাপি বা সার্জারির মাধ্যমে লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তনের অনুমতি আছে কি? পরিবর্তন না করেও নিজেকে নিজে বিপরীত লিঙ্গের মনে করা এবং তা ঘোষণা দেয়ার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী?

ঘ. মুসলিম দেশে এ ধরনের আইন প্রণয়ন করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন এবং এ বিষয়ে আমাদের করণীয় কী?

ঙ. হিজড়াদের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী? মীরাস (উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন), বিবাহ, পর্দা ইত্যাদি বিধানগুলোতে তাদের ক্ষেত্রে কী পন্থা অবলম্বন করা হবে? তাদের ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কীভাবে প্রযোজ্য হবে?

চ. শরীয়তের দৃষ্টিতে হিজড়াদের জন্য হরমোন থেরাপি ও সার্জারির অনুমতি আছে কি?

অতএব মুফতি বোর্ড সমীপে আবেদন, আমার উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর শরয়ী সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।

 

বিনীত নিবেদক

শামিম বিন যায়নুল আবেদীন

ভোলা, বরিশাল।

তারিখ : ২/১/২০২৪ ঈসাব্দ।

 

 

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

উত্তরের পূর্বে ট্রান্সজেন্ডার শব্দের উৎপত্তি এবং ট্রান্সজেন্ডারবাদের সূচনা সম্পর্কে সংক্ষেপে দুয়েকটি কথা বলা সঙ্গত মনে হচ্ছে।

ট্রান্সজেন্ডার (Transgender) Trans এবং Gender যোগে গঠিত একটি শব্দ। Trans অর্থ হল রূপান্তরিত। Gender অর্থ লিঙ্গ। সুতরাং ট্রান্সজেন্ডার মানে হল রূপান্তরিত লিঙ্গ। ট্রান্সজেন্ডারকে সংক্ষিপ্তাকারে কখনো শুধু ট্রান্সও বলা হয়। পরিভাষায় ট্রান্সজেন্ডার হল এমন ব্যক্তি, যার মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন থেকে ভিন্ন। দেখুন

1. Oxford English Dictionary (OED), entry : transgender https://www.oed.com/dictionary/transgender_adj?tl =true&tab=compounds_and_derived_words#12164429

2. Cambridge Dictionary, entry : trans & transgender

https://dictionary.cambridge.org/dictionary/english/transgender

3. https://glaad.org/reference/trans-terms/

নারী পুরুষ নির্ধারণের এ নতুন ধারণা অর্থাৎ শারীরিক লিঙ্গ চিহ্নের বাইরে মানসিক বোধকে লিঙ্গ পরিচয়ের মানদণ্ড হিসেবে দাঁড় করানো সকল আসমানী শরীয়ত এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত শরীয়ত বিরোধী। এটি শুরু হয় অমুসলিমদের কাছ থেকে।

এক্ষেত্রে যাদের নাম আসে, তাদের প্রথম সারিতে আছেন গত শতকের চরম বিতর্কিত সেক্সোলজিস্ট ড. জন উইলিয়াম মানি। ১৯৫৫ সনে তার এক লেখায় তিনি জেন্ডার শব্দকে সেক্স থেকে আলাদা করে ব্যবহার করেন। লেখাটি জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির বুলেটিন, জুন ১৯৫৫ সংখ্যায় ছাপা হয়। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ম্যাগাজিন SPIKED-এ বলা হয়েছে

In 1955, he was the first person to use the word ‘gender’ as opposed to ‘sex’ to draw a distinction between the biological attributes and the behavioural characteristics that differentiate males from females. He subsequently popularised terms like ‘gender identity’ and even founded the world’s first gender-identity clinic at John Hopkins University in Baltimore in the US in 1966, specialising in the psychological and medical treatment of transgender patients. Above all, Money pushed the view, so central to today’s trans movement, that though we may be born with biologically determined sex characteristics, they do not determine whether we are male or female. Without Money, it’s unlikely that trans ideology, especially the phenomenon of ‘trans kids’, would exist today in the way that it does.

এ উদ্ধৃতির সারকথা হল, তিনিই (জন মানি) প্রথম ব্যক্তি, যিনি ১৯৫৫ সালে সেক্স-এর বিপরীতে জেন্ডার ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা তিনি জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ের পরিবর্তে আচরণগত পার্থক্যকে লিঙ্গ পরিচয়ের মানদণ্ড বানিয়েছেন। তিনি পরবর্তীকালে জেন্ডার পরিচয় (gender identity)-এর মত শব্দগুলোকে জনপ্রিয় করে তোলেন। সর্বোপরি তিনি এ মত সামনে আনেন যে, আমরা যে লিঙ্গ পরিচয় নিয়েই জন্মগ্রহণ করি না কেন, সেটা আমরা পুরুষ, না নারী, তা নির্ধারণ করে না!

https://www.spiked-online.com/2023/02/05/dr-john-money-and-the-sinister-origins-of-gender-ideology/

জন মানিকে বলা হয়েছে যৌন স্বাধীনতাবাদী। অনেকেই তাকে বিকৃতকারী আখ্যা দিয়েছে।

https://press.uchicago.edu/ucp/books/book/chicago/F/bo18991189.html

সেক্স ও জেন্ডার আইডেন্টিটির উপর তিনি যে পরীক্ষা চালিয়েছেন তা চরম বিতর্কিত হয়েছে। ইতিহাসে তা ডেভিড রেইমার কেইস নামে পরিচিত। তাতে তিনি ডেভিড রেইমার নামক একটি ছেলেকে মেয়ে বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। এটা করতে গিয়ে জন মানি যা করেছেন, তা ছিল অমানবিক, নোংরামি ও চরম ঘৃণ্য। ছেলেটি মেয়ে তো হয়নি, উপরন্তু তীব্র মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তার দিন কাটছিল। পরিশেষে ৩৮ বছর বয়সে সে আত্মহত্যা করে।

https://embryo.asu.edu/taxonomy/term/148752

ডেভিড রেইমার আত্মহত্যা করে ২০০৪ সালে, ততদিনে পশ্চিমা গবেষকদের হাত ধরে পাশ্চাত্যে এ মতবাদটি ছড়িয়ে পড়ে। আর প্রভাবশালী বিভিন্ন গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় এবং মিডিয়ার প্রচারণায় এর ক্রমবিস্তার ঘটে।

 

উত্তর

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين، وبعد:

আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য প্রথমে কিছু মৌলিক বিষয় জেনে রাখা দরকার।

 

কয়েকটি মৌলিক কথা

এক.

মানুষ সাধারণভাবে জন্ম থেকেই হয়ত পুরুষ কিংবা নারী। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে এ দুই ভাগেই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন

وَ اَنَّهٗ خَلَقَ الزَّوْجَیْنِ الذَّكَرَ وَ الْاُنْثٰی.

আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন যুগল পুরুষ ও নারী। সূরা আননাজম (৫৩) : ৪৫

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু বকর জাস্সাস রাহ. বলেন

لما كان قوله: {الذكر والأنثى} اسما للجنسين استوعب الجميع، وهذا يدل على أنه لا يخلو من أن يكون ذكرا أو أنثى، وأن الخنثى وإن اشتبه علينا أمره لا يخلو من أحدهما.

অর্থাৎ এখানে الذَّكَرَ وَالْأُنْثٰى (পুরুষ ও নারী) যেহেতু উভয় শ্রেণির নাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তাই সবাই এই দুই শ্রেনির অন্তর্ভূক্ত। আর এটা প্রমাণ করে যে, পুরো মানব জাতি হয়ত পুরুষ নতুবা নারী। আর হিজড়ার অবস্থা বাহ্যত আমাদের সামনে অস্পষ্ট লাগলেও তারা নারী ও পুরুষের বাইরে নয়। আহকামুল কুরআন, ইমাম জাসসাস রাহ. খ. ৩, পৃ. ৫৫১

অর্থাৎ হিজড়ার মাঝে বাহ্যত উভয় ধরনের আলামত পরিলক্ষিত হলেও শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আলামতগুলো বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়ে যায় কোন্ হিজড়া পুরুষ আর কোন্ হিজড়া নারী। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তো তা আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। আর একেবারেই জটিল হিজড়া, যার শ্রেণি নির্ণয় করা কঠিন, তাদের সংখ্যা খুব নগণ্য। তারা মূলত এক ধরনের প্রতিবন্ধী; ভিন্ন কোন শ্রেণি নয়।

উল্লেখ্য, হিজড়াকে আরবীতে খুনসা বলা হয়। ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবে খুনসা অধ্যায়ে খুনসার যাবতীয় বিধি-বিধান উল্লেখিত হয়েছে। বিস্তারিত সামনে (পৃ. ২৫-২৬) আসছে।

যাহোক, মানুষ জন্ম থেকেই হয়ত পুরুষ, নতুবা নারী। নারী ও পুরুষ উভয় শ্রেণিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভিন্ন ভিন্ন এমন বিশেষ কিছু অঙ্গ ও শারীরিক অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে, কোন শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে, সে ছেলে নাকি মেয়ে, মানুষ দেখেই তা বুঝতে পারে। এরপর তার বড় হওয়ার সাথে সাথে তার এই পরিচয়টি আরো পরিষ্কার হতে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পর ছেলে হলে তার দেহে পুরুষের অন্যান্য আলামত এবং মেয়ে হলে তার দেহে নারীর অন্যান্য আলামত সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিশেষ কিছু অঙ্গ ও সক্ষমতায় এমনভাবে দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছেন যে, এর দ্বারা কে পুরুষ আর কে নারী সেটি তার দেহ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

মানুষের দেহে নারী-পুরুষ হিসেবে এই পার্থক্য ও ভিন্নতা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি। সৃষ্টিগত এই ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে নারী-পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারণ যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিগত বিধান, তেমনি আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়তেরও বিধান। শরীয়তের দৃষ্টিতে কারো জন্য এই ভিন্নতায় হস্তক্ষেপের কোন রকম সুযোগ নেই। আর মানুষের মাঝে নারী ও পুরুষ হিসেবে দৈহিক ও গঠনগত যে ভিন্নতা রয়েছে, এর উপর ভিত্তি করে আল্লাহ তাআলা উভয় শ্রেণির মাঝে সৃষ্টিগতভাবেই পরস্পর আকর্ষণবোধও সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যার কারণে উভয় শ্রেণি পরস্পর শারীরিক সম্পর্কের প্রয়োজন বোধ করে। যার ভিত্তিতে সন্তান জন্ম হয় এবং মানবজাতির বংশ বিস্তার হয়। আর এ শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টিও আল্লাহর দেয়া বিধান মতেই হতে হবে। স্রষ্টার বিধানের বাইরে কোন নারী-পুরুষের জন্য শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো হারাম। একই কারণে পুরুষের সাথে পুরুষের এবং নারীর সাথে নারীর শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। তা সম্পূর্ণ হারাম ও চরম ঘৃণিত কাজ।

এই হচ্ছে নারী-পুরুষের শ্রেণি ভিন্নতা ও লিঙ্গ নির্ধারণ এবং পরস্পরের শারীরিক সম্পর্ক বিষয়ক আল্লাহ তাআলার দেয়া বিধান। এবং এ অনুযায়ী শুরু থেকেই মানবজাতির জীবনধারা ও সমাজ ব্যবস্থা চলমান। নগণ্য কিছু বিকৃত রুচি ও বিকৃত মনমানসিকতার লোক, যারা নারী-পুরুষের বৈবাহিক বৈধ সম্পর্ক বাদ দিয়ে যিনা-ব্যভিচার এবং সমকামিতায় আগ্রহী, শুধু তারাই আল্লাহর দেয়া বিধান ও সমাজব্যবস্থা থেকে বিচ্যুত। এই কুরুচিপূর্ণ ও অবাধ যৌনাচারের চূড়ান্ত রূপ হিসেবে বর্তমানকালে প্রকাশ পায় ট্রান্সজেন্ডারবাদ। মানুষের চিরায়ত ও সুস্থ রুচি-প্রকৃতির পরিপন্থী এবং ইসলাম ও কুরআন-সুন্নাহবিরোধী এই কুফরি মতবাদ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রদত্ত নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য করার শাশ্বত নিয়ম ভেঙে দিয়ে মানবসমাজকে মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সব দিক থেকে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

দুই.

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানবমণ্ডলীর সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র মালিক এবং জগৎসমূহের প্রতিপালক। দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানে মানুষের সফলতা লাভের ও সঠিক পথনির্দেশনার জন্য আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কুরআন কারীম অবতীর্ণ করেছেন। কিয়ামত পর্যন্তের জন্য তাঁকে আখেরী শরীয়ত দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাণী হাদীস ও সুন্নাহতে মানবজাতিকে সঠিক পথ, সফলতা, পবিত্রতা এবং নির্মল জীবনের পথে আহ্বান করেন। আর শয়তান যেহেতু মানুষের প্রকাশ্য দুশমন, তাই সে মানুষকে ভ্রষ্টতা, নষ্টামি, নোংরামি, পঙ্কিলতা, সংকীর্ণতা ও বিপর্যয়ের পথে ডাকে। মানবজাতির প্রতি শয়তানের এ শত্রুতার কথা আল্লাহ তাআলা কুরআনে খুব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে

اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَیْكُمْ یٰبَنِیْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّیْطٰنَ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِیْنٌ،وَّ اَنِ اعْبُدُوْنِیْ ؔ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِیْمٌ،وَ لَقَدْ اَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِیْرًا اَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ.

হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে বলিনি যে, তোমরা শয়তানের ইবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং এও (বলিনি) যে, তোমরা আমার ইবাদত কর, এটিই সরল পথ? বস্তুত শয়তান তোমাদের মধ্য হতে একটি বড় দলকে গোমরাহ করেছিল। তবুও কি তোমরা বোঝনি? সূরা ইয়াসীন (৩৬) : ৬০-৬২

আরো ইরশাদ হয়েছে

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً  وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ  اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِیْنٌ.

হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চিত জেন, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা বাকারা (২) : ২০৮

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে

اَلشَّیْطٰنُ یَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَ یَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ وَ اللهُ یَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَ فَضْلًا وَ اللهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ.

শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং তোমাদেরকে অশ্লীলতার আদেশ করে, আর আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় মাগফিরাত ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। সূরা বাকারা (২) : ২৬৮

আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে এও জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন সাধন অথবা পরিবর্তনের সন্দেহ সৃষ্টি হয় এমন কিছু করার জন্য শয়তানই মানুষকে প্ররোচিত করে। এজন্য মানুষের মধ্যে যারা এমন কিছু চিন্তা করে বা এমন মতবাদের দিকে ডাকে, তারা মূলত শয়তানের অনুগামী। তারা শয়তানের পদাঙ্কই অনুসরণ করছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শয়তানকে অভিসম্পাত করে বলেছেন

لَّعَنَهُ اللهُ وَ قَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِیْبًا مَّفْرُوْضًا،وَّ لَاُضِلَّنَّهُمْ وَ لَاُمَنِّیَنَّهُمْ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ وَ مَنْ یَّتَّخِذِ الشَّیْطٰنَ وَلِیًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِیْنًا،یَعِدُهُمْ وَ یُمَنِّیْهِمْ ،وَ مَا یَعِدُهُمُ الشَّیْطٰنُ اِلَّا غُرُوْرًا،اُولٰٓىِٕكَ مَاْوٰىهُمْ جَهَنَّمُ وَ لَا یَجِدُوْنَ عَنْهَا مَحِیْصًا.

...শয়তানকে আল্লাহ লানত করেছেন। সে (আল্লাহকে) বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের মধ্য হতে নির্ধারিত এক অংশকে নিয়ে নেব। এবং আমি তাদেরকে সরল পথ হতে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুত করব, তাদেরকে (অনেক) আশা-ভরসা দেব এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান চিরে ফেলবে এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট লোকসানের মধ্যে পড়ে যায়। সে ওদের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং আশা-ভরসা দেয়। প্রকৃতপক্ষে শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের সকলের ঠিকানা জাহান্নাম। তারা তা থেকে বাঁচার জন্য পালানোর কোন পথ পাবে না। সূরা নিসা (৪) : ১১৮-১২১

শয়তান তো মানুষকে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেয়ার হুকুম করে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার হুকুম হল

فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّیْنِ حَنِیْفًا ؕ فِطْرَتَ اللهِ الَّتِیْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَیْهَا لَا تَبْدِیْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ.

সুতরাং তুমি নিজ চেহারাকে একনিষ্ঠভাবে এই দ্বীনের অভিমুখী রাখ। আল্লাহর সেই ফিতরত অনুযায়ী চল, যে ফিতরতের উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তনসাধন নেই (অর্থাৎ কোন পরিবর্তন করো না)। এটাই সম্পূর্ণ সরল দ্বীন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। সূরা রূম (৩০) : ৩০

কুরআন কারীমের এ আয়াতগুলো চিন্তা-ভাবনার সাথে পাঠ করলে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিরেট শয়তানী মতবাদ। আল্লাহ তাআলার দেয়া হেদায়েত এবং তাঁর নাযিলকৃত শরীয়তের সাথে এর ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নেই; বরং তা সম্পূর্ণরূপে কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা, ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি হল, মানুষের লিঙ্গ পরিচয় তার সৃষ্টিগত দৈহিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল নয়; বরং সেটি সম্পূর্ণ ব্যক্তির মানসিক ব্যাপার। যার জন্ম পুরুষ হিসেবেই হয়েছে এবং তার দেহে পুরুষের সব আলামতই আছে; পুরুষ হিসেবে তার শারীরিক কোন ত্রুটি নেই, তারপরও সে যদি কখনো নিজেকে নারী মনে করে তাহলে সে একজন নারী। সমাজ এবং আইন তাকে নারী হিসেবেই গণ্য করতে হবে এবং সে নারী হিসেবে যাবতীয় অধিকার লাভ করবে। তার উপর নারীর যাবতীয় বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে; পুরুষের নয়।

তদ্রূপ একজন মানুষ নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে; দৈহিকভাবে সে সম্পূর্ণ নারী; এতে তার কোন ত্রুটি নেই; তার ঋতুস্রাব হয়; সে গর্ভধারণ করে এবং সন্তান জন্ম দেয়, সন্তানকে স্তন্য দান করে, তথাপি সে যদি নিজেকে কখনো পুরুষ মনে করে তাহলে সে একজন পুরুষ। সমাজ ও আইন তাকে পুরুষ হিসেবেই গণ্য করতে হবে এবং সে পুরুষ হিসেবে যাবতীয় অধিকার লাভ করবে, তার উপর পুরুষের যাবতীয় বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে। নাউযুবিল্লাহ।

এই মতবাদ অনুযায়ী ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিকে নারী থেকে পুরুষ অথবা পুরুষ থেকে নারী হওয়ার জন্য সার্জারি কিংবা হরমোন থেরাপির মাধ্যমে দেহের সৃষ্টিগত কাঠামো পরিবর্তনেরও প্রয়োজন নেই; বরং সেটি ঐচ্ছিক বিষয়। সে নিজেকে কোন্ লিঙ্গের মনে করে এটাই মূলকথা। এ মতবাদের প্রবক্তাদের বক্তব্যে বিষয়টি এভাবেই একদম পরিষ্কার। যেমনটি প্রশ্নপত্রেও তুলে ধরা হয়েছে। সামনে তাদের একটি বক্তব্য তুলে ধরা হল। এ বিকৃত মতবাদটির প্রচারক প্রভাবশালী এক সংস্থার ভাষায় এর পরিচয় হল

Transgender is a term used to describe people whose gender identity differs from the sex they were assigned at birth. Gender identity is a person’s internal, personal sense of being a man or a woman (or boy or girl.) For some people, their gender identity does not fit neatly into those two choices. For transgender people, the sex they were assigned at birth and their own internal gender identity do not match. ...

As part of the transition process, many transgender people are prescribed hormones by their doctors to change their bodies. Some undergo surgeries as well. But not all transgender people can or will take those steps, and it’s important to know that being transgender is not dependent upon medical procedures.

এখানে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে ‘‘ট্রান্সজেন্ডার’’ একটি পরিভাষা, যার দ্বারা এমন লোকদের বোঝানো হয়, যাদের লিঙ্গ পরিচয় তাদের জন্মগতভাবে নির্ধারিত লিঙ্গ পরিচয় থেকে ভিন্ন। তাদের লিঙ্গ পরিচয় জন্মগত চিহ্ন নয়; বরং তারা পুরুষ, না নারী এ ব্যাপারে তাদের মানসিক বোধই তাদের লিঙ্গ পরিচয়। এই শ্রেনির মানুষের সেই মানসিক বোধ জন্মের সময় যে লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারিত হয়েছিল তা থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। ... কোন কোন ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি হরমোন থেরাপি গ্রহণ করে থাকে আবার তাদের কেউ সার্জারিও করে। তবে সব ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি এগুলো করে না বা করতে পারে না। এবং এটি জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, ট্রান্সজেন্ডার হওয়া কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণের উপর নির্ভরশীল নয়। দেখুন

https://glaad.org/transgender/transfaq/

এই হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডারের পরিচয় ও স্বরূপ। এই পরিচয় পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর এ বিকৃত ও বিকারগ্রস্ত মতবাদের খণ্ডনে আসলে কিছু বলারই প্রয়োজন পড়ে না। বিষয়টি একটু সহজভাবেই ভেবে দেখুন আপনার পিতা, যাকে আপনি জন্মের পর থেকেই পিতা ডেকে আসছেন, একদিন সে নিজেকে নারী দাবি করে বসল! অথবা আপনার মা, যার কোলে আপনার বেড়ে ওঠা, জন্মের পর থেকেই আপনি যাকে মা ডেকে আসছেন, একদিন সে নিজেকে পুরুষ দাবি করে বসল! তখন বিষয়টি কেমন হবে?! আপনার সেই পিতামাতার মধ্যকার সম্পর্কটা এখন কী দাঁড়াল! আপনার পিতৃ-মাতৃ পরিচয়েরই বা তখন কী দশা হবে! আপনি যাকে পিতা বলছেন, সে কিনা একজন নারী কিংবা যাকে মা বলছেন, সে কিনা একজন পুরুষ! আজব! তদ্রূপ কারো স্ত্রী, যার সাথে বিয়ের পর থেকে একত্রে থেকে আসছে, তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক হচ্ছে, তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সে অবগত, কিন্তু হঠাৎ সে একদিন নিজেকে পুরুষ দাবি করে বসল! তখন অবস্থা কী দাঁড়াবে?! অথচ ট্রান্সজেন্ডারবাদের পরিচয় এটিই যে, মানুষের লিঙ্গ পরিচয় তার মানসিক ব্যাপার। সে নিজেকে যে লিঙ্গের মনে করবে, সেটিই তার লিঙ্গ পরিচয়। ট্রান্সজেন্ডারবাদের এ পরিচয় জানার পর একথা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটা চরম শয়তানী মতবাদ। শয়তানের এ চক্রান্তের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা মানুষকে আগেই সতর্ক করেছেন, যা আমরা সূরা নিসার ১১৮-১২১ নং আয়াতের উদ্ধৃতিতে পড়ে এসেছি।

তিন.

কারো অবস্থা যদি বাস্তবিকই এমন হয় যে, সে পুরুষ হয়েও নারীর তুলনায় পুরুষের প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করে, তদ্রূপ নারী হয়েও কেউ যদি পুরুষের তুলনায় নারীর প্রতিই বেশি আকর্ষণ বোধ করে তবে এটি তার মানসিক রোগ বা শয়তানের কুমন্ত্রণা। শরীয়তের দৃষ্টিতে একে প্রশ্রয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বরং তার জন্য মনের এই অবস্থার চিকিৎসা ও সংশোধন করা জরুরি। এর জন্য যেমন শাস্ত্রীয় চিকিৎসাব্যবস্থা আছে, তেমনি শরীয়তের আখলাক অধ্যায়ে স্বতন্ত্র শিক্ষা রয়েছে, যাতে আত্মশুদ্ধি ও কলবের পবিত্রতা বিষয়ে মূল্যবান নির্দেশনা দেয়া আছে এবং এ আত্মিক ব্যাধি সংশোধনের জন্য অন্যান্য হেদায়েতের পাশাপাশি বিভিন্ন দুআও শেখানো হয়েছে। সে সব হেদায়েত গ্রহণ না করে যদি মানসিক ব্যাধি ও বিকৃত চিন্তাকে জিইয়ে রাখা হয়, তাহলে তা হবে চরম গোমরাহী।

আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন

وَ مَنْ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوٰىهُ بِغَیْرِ هُدًی مِّنَ اللهِ.

আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? সূরা কাসাস (২৮) : ৫০

চার.

কোন পুরুষের কাছে নিজেকে ভেতরে ভেতরে নারী নারী মনে হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তার নিজেকে নারী হিসেবে প্রকাশ করার সুযোগ নেই। তদ্রূপ কোন নারীর নিজেকে ভেতরে ভেতরে পুরুষ পুরুষ লাগলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তার নিজেকে পুরুষ হিসেবে প্রকাশ করার কোন সুযোগ নেই; বরং কোন পুরুষের যদি নিজেকে নারী নারী মনে হয় তবে এটি তার মানসিক রোগ। তখন শরীয়তের দৃষ্টিতে তার উপর জরুরি হল, নিজে নিজেই চেষ্টা করে এবং প্রয়োজনে যথাসম্ভব চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই নারীবোধ দূর করা এবং পরিপূর্ণ পুরুষরূপে জীবন যাপন করা। তা না করে উল্টো সে যদি তার এই মেয়েলিভাবকে ভেতরে লালন করতে থাকে; এবং মানুষের সামনে নিজেকে মেয়েলিভাবেই প্রকাশ করে, তাহলে সে চরম গুনাহগার হবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের লানতের শিকার হবে। তদ্রূপ নারীদের ক্ষেত্রেও একই হুকুম। কোন নারীর যদি নিজেকে পুরুষ পুরুষ মনে হয় তাহলে নিজে নিজে চেষ্টা করে এবং প্রয়োজনে যথাসম্ভব চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে তার পুরুষবোধকে দূর করা এবং পরিপূর্ণ নারীরূপে জীবন যাপন করা জরুরি। তা না করে উল্টো সে যদি তার পুরুষালিভাবকে ভেতরে লালন করতে থাকে এবং মানুষের সামনে নিজেকে পুরুষালিভাবেই প্রকাশ করে তাহলে সেও মারাত্মক গুনাহগার হবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের লানতের শিকার হবে।

হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

لَعَنَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ، وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنَ النِّسَاءِ، وَقَالَ: أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ، قَالَ: فَأَخْرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فُلَانًا، وَأَخْرَجَ عُمَرُ فُلَانًا.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীরূপ ধারণকারী পুরুষদের উপর এবং পুরুষরূপ ধারণকারী নারীদের উপর লানত করেছেন এবং বলেছেন, তাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও।

বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুককে (তাঁর ঘরে আসলে) বের করে দিয়েছেন এবং অমুককে উমর রা. বের করে দিয়েছেন। সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৮৬

অপর হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

لَعَنَ اللهُ الوَاشِمَاتِ وَالمُوتَشِمَاتِ، وَالمُتَنَمِّصَاتِ وَالمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ المُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ.

আল্লাহ লানত করেন আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধনকারী ঐ সকল নারীর প্রতি, যারা অন্যের শরীরে উল্কি অঙ্কন করে ও নিজ শরীরে উল্কি অঙ্কন করায় এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৮৬

আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐসব পুরুষকে লানত করেছেন, যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং ঐসব নারীকে লানত করেছেন, যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৮৫

অপর হাদীসে এসেছে, আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَعَنَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন এমন পুরুষের ওপর, যে নারীর মত পোশাক পরিধান করে এবং এমন নারীর ওপর, যে পুরুষের মত পোশাক পরিধান করে। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৩০৯

পাঁচ.

এ তো হচ্ছে নারী ও পুরুষের একে অন্যের বাহ্যিক সাদৃশ্য অবলম্বন সম্পর্কে শরীয়তের বিধান। শরীয়ত এতেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর ট্রান্সজেন্ডারবাদ এর থেকে বহুগুণ ভয়াবহ মতবাদ। এটা শুধু নারী ও পুরুষের একে অন্যের বাহ্যিক সাদৃশ্য অবলম্বনের বিষয় নয়; বরং এতে নারী-পুরুষের সৃষ্টিগত লিঙ্গ পরিচয়কেই পরিবর্তন করে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে মানবসমাজের জীবন ব্যবস্থা ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে, চরম বিশৃঙ্খলা, নৈতিক অবক্ষয় ও নানাবিধ সমস্যার জটলা তৈরি হবে। এর চেয়েও ভয়াবহ হল, এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির বিকৃতি এবং তার দেয়া শরীয়ত ও কুরআন-সুন্নাহর বিধান সবকিছুর সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ হয়।

ট্রান্সজেন্ডারবাদের মত স্বভাববিরুদ্ধ ও সুস্থ রুচি-প্রকৃতি পরিপন্থী এ মতবাদ যদি সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়, তাহলে তার অনিবার্য পরিণতির কয়েকটি হল

ক. সমকামিতার মত ভয়ানক অপরাধের পথ খুলে যাওয়া।

খ. যিনা-ব্যভিচারের অবাধ বিস্তার।

গ. ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন সহজ হয়ে যাওয়া।

ঘ. ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও ভয়াবহ সামাজিক বিপর্যয়।

ঙ. আল্লাহর দেয়া শরীয়ত ও কুরআন-সুন্নাহর অসংখ্য বিধানের বিরুদ্ধাচরণ।

ক. সমকামিতা

ট্রান্সজেন্ডারবাদকে স্বীকৃতি দেয়ার একটি অনিবার্য ফল হল সমকামিতাকে বৈধতা প্রদান। অথচ ধর্ম ও সমাজ উভয় দিক থেকে নারী-পুরুষের সমলিঙ্গে বিবাহের কোন সুযোগ নেই। অনেক দেশের আইনেও তা নিষিদ্ধ। কিন্তু কিছু বিকৃত রুচির লোক এতেই আগ্রহী। তাদের এহেন কুরুচি বাস্তবায়নের পথে ধর্ম, সমাজ ও অনেক দেশের আইনও বাধা। কোন পুরুষ যদি নিজেকে নারী মনে করে আর রাষ্ট্র ও সমাজ তা মেনে নেয়, তাহলে তার জন্য অপর পুরুষকে বিয়ে করার পথ সুগম হয়ে যায়। অথচ বাস্তবে সে পুরুষ এবং বিয়ে করছে অপর পুরুষকে; যা সুস্পষ্ট সমকামিতা। তদ্রূপ কোন নারী যদি নিজেকে পুরুষ পরিচয় দেয়, আর রাষ্ট্র ও সমাজ তা মেনে নেয়, তাহলে তার জন্য অপর নারীকে বিবাহ করতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কোন বাধা থাকে না। অথচ এটি হচ্ছে নারীতে নারীতে বিবাহ; যা সম্পূর্ণ সমকামিতা। আর সমকামিতা যে শরীয়তের দৃষ্টিতে জঘন্য হারাম তা তো সবারই জানা। এ অপরাধের কারণেই হযরত লূত আলাইহিস সালামের কওমের উপর কঠিন আসমানী আযাব এসেছিল। যা কুরআন কারীমের অনেক সূরায় বর্ণিত হয়েছে। এখানে আমরা দুটি সূরা থেকে উদ্ধৃত করছি

وَ لُوْطًا اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَتَاْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ اَحَدٍ مِّنَ الْعٰلَمِیْنَ، اِنَّكُمْ لَتَاْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسَآءِ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ،وَ مَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْۤا اَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ قَرْیَتِكُمْ  اِنَّهُمْ اُنَاسٌ یَّتَطَهَّرُوْنَ،فَاَنْجَیْنٰهُ وَ اَهْلَهٗۤ اِلَّا امْرَاَتَهٗ كَانَتْ مِنَ الْغٰبِرِیْنَ،وَ اَمْطَرْنَا عَلَیْهِمْ مَّطَرًا ؕ فَانْظُرْ كَیْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُجْرِمِیْنَ.

এবং লূতকে (পাঠালাম)। যখন সে নিজ সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের আগে সারা বিশ্বে কেউ করেনি? তোমরা তো কামেচ্ছা পূরণের জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষের কাছে যাও! বরং তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। তার সম্প্রদায়ের উত্তর ছিল কেবল এই কথা যে, এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক, যারা বড় পবিত্র থাকতে চায়। পরিণামে আমি তাকে (অর্থাৎ হযরত লূত আলাইহিস সালামকে) ও তার পরিবারবর্গকে (জনপদ থেকে বের করে) রক্ষা করলাম, তবে তার স্ত্রী ছাড়া। সে অবশিষ্ট লোকদের মধ্যে শামিল থাকল (যারা আযাবের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়)। আর আমি তাদের উপর (পাথরের) প্রচণ্ড বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। সুতরাং দেখ, সে অপরাধীদের পরিণাম কেমন (ভয়াবহ) হয়েছিল। সূরা আরাফ (৭) : ৮০-৮৪

وَ لُوْطًا اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَتَاْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ وَ اَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ،اَىِٕنَّكُمْ لَتَاْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسَآءِ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ.

এবং আমি লূতকে (নবী বানিয়ে পাঠালাম)। যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কি চোখে দেখেও অশ্লীল কাজ করছ? তোমরা কি কামচাহিদা পূরণের জন্য নারীদের ছেড়ে পুরুষদের কাছে গমন কর? তোমরা তো এক মূর্খ সম্প্রদায়। সূরা নামল (২৭) : ৫৪-৫৫

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

لَا يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ، وَلَا الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ، وَلَا يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، وَلَا تُفْضِي الْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِي الثَّوْبِ الْوَاحِدِ.

কোন পুরুষ অপর পুরুষের সতরের প্রতি তাকাবে না এবং কোন নারী অপর নারীর সতরের প্রতি তাকাবে না। কোন পুরুষ এক কাপড়ের নিচে অপর পুরুষের শরীরের সঙ্গে নিজের শরীর লাগাবে না এবং কোন নারী এক কাপড়ের নিচে অপর নারীর শরীরের সঙ্গে নিজের শরীর লাগাবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৩৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭৯৩

এই হল ট্রান্সজেন্ডারবাদের এক অনিবার্য পরিণতি। সুকৌশলে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে সমকামী বিবাহকে বৈধ ও স্বাভাবিকীকরণের উদ্দেশ্যে তারা সরাসরি সমকামী বিবাহের দাবি না করে নারী-পুরুষের লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তনে হাত দিয়ে বসেছে। তাই এ বিষয়ে সকলের সোচ্চার হওয়া জরুরি।

আমাদের দেশে সমকামিতা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশের পেনাল কোড (১৮৬০ সনের ৪৫ নং আইন)-এর ৩৭৭ নং ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে

‘‘377. Whoever voluntarily has carnal intercourse against the Unna order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with [imprisonment] for life, or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine.’’ (The Bangladesh Code, vol 1, p. 199, published in 2007)

 ‘‘৩৭৭। অস্বাভাবিক অপরাধসমূহ : যদি কোনো ব্যক্তি প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে কোনো পুরুষ, স্ত্রীলোক বা পশুর সহিত যৌন সংগম করে, তাহা হইলে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, কিংবা দশ বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং তাহাকে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যাইবে।’’ (দণ্ডবিধি, এডভোকেট আশরাফুল আলম, কামরুল বুক হাউস, দ্বাদশ মুদ্রণ ২০২২)

খ. যিনা-ব্যভিচারের অবাধ বিস্তার

আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন

وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَ سَآءَ سَبِیْلًا.

এবং ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা। সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৩২

অথচ ট্রান্সজেন্ডারবাদের একটি ভয়াবহ দিক হল যিনা-ব্যভিচার ও অবাধ যৌনাচারের সয়লাব। ট্রান্সজেন্ডারবাদকে বৈধতা দিলে যিনা-ব্যভিচারেও সামাজিক ও আইনগত কোন বাধা থাকবে না। কেননা কোন পুরুষ যদি নিজেকে নারী হিসেবে পরিচয় দেয় আর দেশ ও সমাজ তা মেনে নেয় তাহলে সে আবাসিক হোটেলে, বাসা-বাড়িতে কিংবা কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রী হোস্টেলে অথবা নারীদের জন্য নির্ধারিত যেকোনো স্থানে নারীর সাথেই থাকার সুযোগ পাবে। অনুরূপ কোন নারী যদি নিজেকে পুরুষ হিসেবে পরিচয় দেয় আর দেশ ও সমাজ তা মেনে নেয় তাহলে সে আবাসিক হোটেলে, বাসা-বাড়িতে কিংবা কলেজ-ভার্সিটির ছাত্র হোস্টেলে পুরুষের সাথেই থাকার সুযোগ পাবে। এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ হবে তা বলাই বাহুল্য।

গ. ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন সহজ হয়ে যাওয়া

ট্রান্সজেন্ডারবাদ বৈধতা পেলে শুধু যিনা-ব্যভিচারই নয়, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণও অতি সহজে সমাজে ছড়িয়ে পড়বে। কেননা কোন নারী না বুঝে নিজের সমলিঙ্গের মনে করে নারীরূপী কোন পুরুষের সাথে থাকলে তার কাছ থেকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। খারাপ চরিত্রের লোকেরা নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের উদ্দেশ্যে সহজে নারীদের কাছে পৌঁছার জন্য এই পথ বেছে নেবে। ফলে নারীদের জন্য সমাজে নিরাপদ স্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। যেমনটি পশ্চিমা বিশ্বে ঘটে থাকে। (দ্রষ্টব্য : নিউ ইয়র্ক পোস্ট, ১৭ জুলাই ২০২২; ফক্স নিউজ, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩)

ঘ. ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও ভয়াবহ সামাজিক বিপর্যয়

পূর্বে জানা হয়েছে যে, ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠা পেলে সমাজে সমকামিতা, যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও নানা ধরনের যৌন নিপীড়নের ব্যাপক ছড়াছড়ি ঘটবে। এগুলো যে সর্বগ্রাসী সামাজিক বিপর্যয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উপরন্তু  এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা পেলে পরিবার ও সংসারের মত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কাঠামোতে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। কে পিতা, কে মাতা, কে ভাই, কে বোন তা নিয়েই তৈরি হবে অনিঃশেষ জটিলতা। এত দিন ধরে যিনি পিতা ছিলেন, হঠাৎ তিনি নারী হয়ে গেলে, তদ্রূপ এতদিন যিনি মা ছিলেন, হঠাৎ তিনি পুরুষ হয়ে গেলে পরিবার ও সংসারের কী হবে! বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ট্রান্সনারী কোন্ হলে সিট পাবে, ক্যাডেট কলেজ, আর্মি ব্যারাক, জেলখানায় ট্রান্সজেন্ডার নারী কোথায় সিট পাবে?

ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠা পেলে শুধু পরিবার-সংসার নয়, পুরো সমাজজুড়ে চরম অনিরাপত্তা, অরাজকতা ছড়িয়ে পড়বে। কোন পুরুষ যদি নিজেকে নারী মনে করে আর আইনও তার বৈধতা দেয়, তাহলে সে মহিলাদের বিশেষায়িত স্থানে অনায়াসেই প্রবেশাধিকার পাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হোস্টেলে, মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, মেয়েদের ক্লাসরুমে, হাসপাতালে, কলকারখানায় নারীকর্মীদের বিশেষ রুমে ট্রান্সনারী প্রবেশ করতে পারবে।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালে নারীদের জন্য নিরাপদ কোন স্থান থাকবে না। ছাত্রী হোস্টেলে মেয়েরা কীভাবে থাকবে? কোন অভিভাবক তার মেয়েকে কীভাবে গার্লস স্কুলে, মহিলা কলেজে ও ছাত্রী হোস্টেলে রাখবে? ক্লাসরুমে মেয়েদের জন্য ছেলেদের থেকে পৃথক বসার ব্যবস্থা করেও কতটুকু কাজ হবে? শুধু মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানইবা কতটুকু কাজে আসবে?

ঙ. আল্লাহর দেয়া শরীয়ত ও কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য বিধানের বিরুদ্ধাচরণ

ট্রান্সজেন্ডারবাদে আল্লাহর দেয়া শরীয়ত ও কুরআন-সুন্নাহর অসংখ্য বিধানের স্পষ্ট বিরুদ্ধাচরণ রয়েছে। এর মাধ্যমে ইসলামের সালাত, হজ্ব, বিয়ে, তালাক, ইদ্দত, বংশপরিচয়, পর্দা-সতর, শাহাদাহ (সাক্ষ্যদান), কাযা, ইমামাত (নামাযের ইমামতি), রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া ও মীরাস-উত্তরাধিকারসহ নারী-পুরুষ সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামের বহু বিধান সরাসরি লঙ্ঘিত হয়।

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী বিবাহ হবে নারী ও পুরুষের মাঝে। কিন্তু এ মতবাদ মেনে নিলে একজন ট্রান্সনারী (বাস্তবে পুরুষ) অপর পুরুষকে বিবাহ করার রাস্তা খুলবে। অনুরূপভাবে একজন ট্রান্সপুরুষ (বাস্তবে নারী) অপর নারীকে বিবাহ করার রাস্তা খুলবে। পুরুষে পুরুষে বিয়ে বা নারীতে নারীতে বিয়ে তো স্পষ্ট সমকামিতা।

শরীয়ত মোতাবেক একজন নারীর জন্য একসঙ্গে একাধিক স্বামী রাখার অনুমতি নেই। অথচ এ মতবাদ মেনে নেয়া হলে একজন ট্রান্সপুরুষের (বাস্তবে নারী) একাধিক ট্রান্সনারীকে (বাস্তবে পুরুষ) বিয়ে করার রাস্তা খুলবে।

এমনিভাবে শরীয়া আইনে মীরাসের ক্ষেত্রে দুজন মেয়েকে একজন ছেলের সমান গণ্য করা হয়। দুজন মেয়ে একজন ছেলের সমান উত্তরাধিকারের অংশ পায়। কিন্তু এ মতবাদ অনুযায়ী ট্রান্সপুরুষ (বাস্তবে নারী) পুরুষের সমান গণ্য হবে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষার খসড়া আইনেও এটি রয়েছে যে, ট্রান্সজেন্ডার ম্যান-এর জন্য উত্তরাধিকারের অংশ পুরুষের অংশের অনুরূপ হইবে; ট্রান্সজেন্ডার উইম্যান-এর জন্য উত্তরাধিকারের অংশ নারীর অংশের অনুরূপ হইবে।

অথচ এটি সরাসরি কুরআনের নির্দেশের লঙ্ঘন; বরং বিরুদ্ধাচরণ। কুরআনের যে কোন বিধানের বিরুদ্ধাচরণেরই শাস্তি জাহান্নাম। মীরাসের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঘোষিত হয়েছে

وَ مَنْ یَّعْصِ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ وَ یَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ یُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِیْهَا وَ لَهٗ عَذَابٌ مُّهِیْنٌ.

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর (স্থিরীকৃত) সীমা লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জাহান্নামে, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং তার জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। সূরা নিসা (৪) : ১৪

এভাবে ইসলামের অনেক বিষয়ে বিধানগতভাবে নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। এ মতবাদ মেনে নেয়া হলে ঐসব বিধানে নারীর জন্য পুরুষের বিধান আর পুরুষের জন্য নারীর বিধান চালিয়ে দেয়া হবে, যা শরীয়ত বিকৃতির ভয়ংকর রূপ।

মোটকথা, ট্রান্সজেন্ডারবাদ এতই ভয়ংকর একটি বিষয়, সামাজিক ও আইনগতভাবে যদি একে স্বীকৃতি দেয়া হয় তাহলে মানবজাতির পুরো সমাজ ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। চরম বিশৃঙ্খলা, নৈতিক বড় বড় সব অপরাধ অবাধে ছড়িয়ে পড়বে। দেশ-জাতি ও সমাজে ভয়াবহ অবক্ষয় দেখা দিবে। সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি এবং তাঁর দেয়া বিধিবিধানে হস্তক্ষেপ করা হবে, যা স্পষ্ট কুফরি।

ছয়. ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া সম্পূর্ণ ভিন্ন

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ট্রান্সজেন্ডারের সাথে হিজড়ার কোন সম্পর্ক নেই; বরং দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।

ভালোভাবে বোঝা দরকার যে, হিজড়ার পরিচয় সম্পূর্ণ সৃষ্টিগত দৈহিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তির মানসিক কোন চিন্তা ও অভ্যন্তরীণ অনুভূতির এতে কোন দখল নেই। অপর দিকে ট্রান্সজেন্ডার সম্পূর্ণ ব্যক্তির মানসিক বিষয়। সৃষ্টিগত দৈহিক অবস্থার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। হিজড়া জন্মগত দৈহিক ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। যাতে তার কোন হাত নেই। আর ট্রান্সজেন্ডার সম্পূর্ণ ব্যক্তির মনের ইচ্ছা-নির্ভর বিষয়, যেটি শুধুই তার নিজের কর্ম। অতএব ট্রান্সজেন্ডারকে হিজড়ার সাথে গুলিয়ে ফেলা স্পষ্ট বিভ্রান্তি।

তাছাড়া হিজড়া নারী-পুরুষের বাইরে ভিন্ন কোন শ্রেণি নয়। তার দেহে বিদ্যমান আলামতগুলোকে বিশ্লেষণ করতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে হয়ত সে নারী গণ্য হবে বা পুরুষ। কোন্ ধরনের হিজড়ার ক্ষেত্রে পুরুষের বিধান আরোপিত হবে আর কোন্ প্রকারের হিজড়ার ক্ষেত্রে নারীর বিধান আরোপিত হবে তা ইসলামী ফিক্হ-ফতোয়ার কিতাবে সবিস্তারে উল্লেখ আছে। যার সারসংক্ষেপ সামনে আসছে। তাই হিজড়ার জন্যও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে গ্রহণ করা বৈধ নয়। যে প্রকারের হিজড়া শরীয়তের দৃষ্টিতে পুরুষের অন্তর্ভুক্ত, তার জন্য নিজেকে নারী গণ্য করার সুযোগ নেই এবং যে প্রকারের হিজড়া শরীয়তের দৃষ্টিতে নারী শ্রেণিভুক্ত, তার জন্য নিজেকে পুরুষ গণ্য করার সুযোগ নেই।

অতএব বাস্তবতা, ধরন ও প্রকৃতি এবং শরীয়তের বিধান সব দিক থেকেই হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন।

হিজড়াদের জন্য ইসলামে যাবতীয় বিধিবিধান রয়েছে। তাই হিজড়ার অধিকার সুরক্ষা আইন অবশ্যই থাকা উচিত। তবে সেটা হতে হবে তাদের জন্য প্রদত্ত ইসলামের বিধান অনুযায়ী। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার অধিকার নামে কিছুতেই কোন আইন প্রণয়ন করা, পাস করা বা বাস্তবায়ন করা বৈধ নয়।

এ মতবাদ কত আয়াতের বিরুদ্ধে যাচ্ছে

বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, অপরিণামদর্শিতার শিকার হয়ে কোন রাষ্ট্র-সমাজ যদি ট্রান্সজেন্ডারবাদের অনুমোদন দিয়ে দেয়, তাহলে তা হবে মারাত্মক ভুল উদ্যোগ। আর এর পরিণাম যে কত ভয়াবহ, তা তো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এর চেয়েও বড় কথা হল, এটা ইসলামের শিক্ষা ও আকীদা-বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। এতে কুরআন কারীমের শুধু এক-দুটি আয়াত নয়; বরং দুশরও অধিক আয়াতের অবজ্ঞা ও বিরুদ্ধাচরণ করা হবে। এমনিভাবে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শত শত হাদীসেরও বিরুদ্ধাচরণ হবে। তাছাড়া এটি হবে সকল নবী, রাসূল, সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীসহ সকল মুমিন-মুসলিমের পথ তথা জান্নাতের পথ ছেড়ে অভিশপ্ত শয়তানের পথ তথা জাহান্নামের পথ অবলম্বন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

وَ مَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الْهُدٰی وَ یَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصْلِهٖ جَهَنَّمَ وَسَآءَتْ مَصِیْرًا.

আর যে ব্যক্তি তার সামনে হিদায়েত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে ও মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য কোন পথ অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেই পথেই ছেড়ে দেব, যা সে অবলম্বন করেছে। আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব, যা অতি মন্দ ঠিকানা। সূরা নিসা  (৪) : ১১৫

আল্লাহ, রাসূল ও আখেরাতে বিশ্বাসী সকল মুমিনের দায়িত্ব, সমাজ বিধ্বংসী এ কুফরি মতবাদটির ভয়াবহতা ভালোভাবে বুঝে নিজেরা এ থেকে দূরে থাকা এবং দ্বীনী ও দাওয়াতী পন্থায় সমাজের অন্যদেরকেও সঠিক জ্ঞান প্রদান করে এই বিকৃত কাজগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলোর ধারাবাহিক উত্তর

উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনায় আপনার প্রশ্নগুলোর জবাবও এসে গেছে। তবু নিম্নে ধারাবাহিকভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হল।

উত্তর : ক.

ট্রান্সজেন্ডারবাদ ইসলাম ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী সম্পূর্ণ কুফরি মতবাদ। যা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির চরম বিকৃতি এবং তাঁর দেয়া শরীয়ত ও কুরআন-সুন্নাহর বিধানের স্পষ্ট বিরুদ্ধাচরণ। একইসাথে তা মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ, সুস্থ রুচিবোধ পরিপন্থী ও সমাজ বিধ্বংসী মতবাদ। বিকৃত ও সুস্থ রুচিবোধ পরিপন্থী এ মতবাদটি ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক পর্যায়ের হারাম ও ভয়াবহ কবীরা গুনাহ এবং ভয়ংকর কুফরি মতবাদ। শরীয়তে যেখানে নারী-পুরুষের পরস্পর বাহ্যিক সাদৃশ্য অবলম্বন করাকেই লানত করা হয়েছে সেখানে ট্রান্সজেন্ডারবাদে শুধু বাহ্যিক সাদৃশ্যই নয়; বরং নারী-পুরুষের সৃষ্টিগত লিঙ্গপরিচয়কেই পরিবর্তন করে দেয়া হচ্ছে। এটা যে ভয়াবহ গযব ও লানতের কাজ তাতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।

উত্তর : খ.

হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার এক নয়; সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন। ইসলামের দৃষ্টিতে তো নয়ই, বাস্তবতার ভিত্তিতেও এ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। হিজড়া হওয়া সৃষ্টিগত ও জন্মগত বিষয়। এটি একটি শারীরিক ত্রুটি। আর ট্রান্সজেন্ডার হল সম্পূর্ণ মানসিক একটি বিষয়। বাস্তবে পুরুষ হয়েও নিজেকে নারী মনে করলে সে রূপান্তরিত নারী। তদ্রূপ বাস্তবে নারী হয়েও নিজেকে পুরুষ মনে করলে সে রূপান্তরিত পুরুষ। এ হল ট্রান্সজেন্ডারবাদ। হিজড়াকে এর সাথে মেলানোর সামান্যতমও সুযোগ নেই; না শরয়ী দৃষ্টিতে, না বাস্তবতার বিচারে।

হিজড়া হয়ে জন্মগ্রহণ করা কোন অপরাধ নয়। শরীয়তে হিজড়াদের বিষয়ে যাবতীয় বিধিবিধান দেয়া হয়েছে। ঈমানের সাথে শরীয়তের বিধিবিধান মেনে চললে তারাও আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা হতে পারে। অপরদিকে ট্রান্সজেন্ডারবাদ ইসলামের দৃষ্টিতে ভয়াবহ কুফর ও জঘন্য অপরাধ। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির উপর আল্লাহ তাআলার লানত ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লানত।

তবে মনে রাখা দরকার, যারা বাস্তবে হিজড়া না হয়েও হিজড়ার রূপ ধারণ করে অথবা পুরুষ হিজড়া হয়ে নারীর বেশ ধারণ করে বা নারী হিজড়া হয়ে পুরুষের বেশ ধারণ করে বা আরো অবক্ষয়ের শিকার হয়ে আজকালের এ কুফরি মতবাদ ট্রান্সজেন্ডারবাদকে নাউযুবিল্লাহ সঠিক মনে করে তারাও আল্লাহর লানতের শিকার হবে।

উত্তর : গ.

হরমোন থেরাপি বা সার্জারির মাধ্যমে লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন করার কোন অনুমতি ইসলামে নেই; বরং তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এটা সরাসরি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির মধ্যে হস্তক্ষেপ। এগুলোর মাধ্যমে শারীরিক কাঠামো পরিবর্তন করে ফেলা, অনুরূপভাবে পরিবর্তন না করেও নিজেকে নিজে বিপরীত লিঙ্গের মনে করা বা ঘোষণা দেয়া জঘন্য পর্যায়ের হারাম। এ উভয় ধরনের ব্যক্তির উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের লানত। আল্লাহ না করুন, কেউ এ ভয়াবহ গুনাহে লিপ্ত হয়ে গেলে তার কর্তব্য অতি দ্রুত তওবা করে ফিরে আসা।

উত্তর : ঘ.

ট্রান্সজেন্ডারবাদ মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ, ইসলাম ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী সম্পূর্ণ কুফরি মতবাদ। যা সংসার, পরিবার, সমাজ সর্বোপরি গোটা দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়কর। তাই কোন মুসলিম দেশের জন্য এমন বিপর্যয়কর, সমাজ বিধ্বংসী কুফরি মতবাদের অনুমোদন ও স্বীকৃতিদান কিছুতেই বৈধ হবে না।

মুসলিম জনসাধারণের দায়িত্ব, ইসলাম বিরোধী ও সমাজ বিধ্বংসী এ মতবাদ থেকে দূরে থাকা। দাওয়াতের মাধ্যমে শক্ত জনমত গড়ে তোলা। প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী এর প্রতিকারে কাজ করা। কোনক্রমেই যেন এমন আইন অনুমোদন না হয় সে লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো এবং সাধ্যানুযায়ী শরীয়তসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

উল্লেখ্য, ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের ব্যাপারে পুরো বিশে^র সকল মুফতি একমত। তাদের সবাই একে হারাম বলেছেন এবং ইসলামী শরীয়ত ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আখ্যা দিয়েছেন। এখানে শুধু নমুনাস্বরূপ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হল।

১. ওআইসির প্রতিষ্ঠান জেদ্দা ফিকহ একাডেমি, সিদ্ধান্ত ২৫১ (১৩/২৫)

২. রাবেতাতুল আলামিল ইসলামীর ফিকহ একাডেমির সিদ্ধান্ত (ক্বারারাতুল মাজমা আলফিকহি আলইসলামী, পৃষ্ঠা : ২৬২)

৩. সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ হাইআতু কিবারিল উলামার সিদ্ধান্ত, নং ১৭৬

৪. সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ফতোয়া বোর্ড আললাজনাতুদ দায়িমাহর ফতোয়া ২৫/৪৭

উত্তর : ঙ.

হিজড়া (খুনসা) যেহেতু নারী অথবা পুরুষ থেকে ভিন্ন কোন শ্রেণি নয় তাই হিজড়া সম্পর্কে মূল কথা হল, সে কি পুরুষ, না নারী তা আগে যাচাই করতে হবে।

সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই ফুকাহায়ে ইসলাম এই বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। সব কিছুর সারকথা হল, তার দেহে বিদ্যমান চিহ্নগুলোর মাধ্যমে নির্ণয় করা হবে যে, কোন্ হিজড়ার মধ্যে পুরুষের মূল চিহ্ন কিংবা পুরুষের অধিকাংশ চিহ্ন বিদ্যমান এবং কোন্ হিজড়ার মধ্যে নারীর মূল চিহ্ন কিংবা নারীর অধিকাংশ চিহ্ন বিদ্যমান। এর ভিত্তিতেই সে পুরুষ নাকি নারী সেটি নির্ধারণ করা হবে। আর যে হিজড়ার ব্যাপারে কোন পন্থায় পুরুষ অথবা নারী কোনটি নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না তাকে জটিল হিজড়া (খুনসা মুশকিল) গণ্য করা হবে, যারা এক ধরনের প্রতিবন্ধী। তাদের বিধানও ভিন্ন, যা সামনে আসছে।

এখন প্রশ্ন হল, কোন্ হিজড়া পুরুষ শ্রেণিভুক্ত আর কোন্ হিজড়া নারী শ্রেণিভুক্ত? এর উত্তর হল, এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষণীয় :

১. প্রথম কথা তো এই, যার দেহে শুধু পুরুষের বিশেষ অঙ্গ বিদ্যমান রয়েছে; নারীর বিশেষ অঙ্গ তার দেহে নেই সে পুরুষ। তার দেহে নারীর অন্য কোন আলামত থাকলেও সে পুরুষই; হিজড়া নয়। তদ্রূপ যার দেহে শুধু নারীর বিশেষ অঙ্গ বিদ্যমান রয়েছে; পুরুষের বিশেষ অঙ্গ তার দেহে নেই সে নারী। তার দেহে পুরুষের অন্য কোন আলামত থাকলেও সে নারীই; হিজড়া নয়। হিজড়া হল, যার দেহে নারী-পুরুষ উভয়ের বিশেষ অঙ্গ বিদ্যমান আছে অথবা কোনটিই নেই; বরং প্রস্রাব বের হওয়ার জন্য শুধু একটি ছিদ্রপথ রয়েছে।

২. এমন হিজড়া, যার দেহে নারী-পুরুষ উভয়ের বিশেষ অঙ্গ রয়েছে তার ক্ষেত্রে যাচাই করা হবে, তার কোন্ অঙ্গটি কার্যকর আর কোন্টি কার্যকর নয়, এবং সে ভিত্তিতে তাকে নারী অথবা পুরুষ কোন একটির শ্রেণিভুক্ত করা হবে। যেমন, এ ধরনের বাচ্চা যদি পুরুষাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে পুরুষ গণ্য হবে আর নারীর মূত্রনালি দিয়ে প্রস্রাব করলে সে নারী গণ্য হবে। উম্মতে মুসলিমাহর চতুর্থ খলীফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রা.-এর সামনে কোন এক হিজড়ার মীরাসের মাসআলা উত্থাপিত হলে তিনি তাকে পুরুষ হিসেবে মীরাসের অংশ দিয়েছেন। কারণ সে তার পুরুষাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করত।

শাবী রাহ. হযরত আলী রা. থেকে বর্ণনা করেন

أَنَّهُ وَرَّثَ خُنْثَى ذَكَرًا مِنْ حَيْثُ يَبُولُ.

আলী রা. এক হিজড়াকে পুরুষ হিসেবে মীরাসের অংশ দিয়েছেন। কারণ সে তার পুরুষাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করত (তার দেহে ভিন্ন পথ থাকলেও তার প্রস্রাব সে পথে আসত না)। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৯২০৪

৩. কোন্ হিজড়ার পুরুষাঙ্গ কার্যকর আর কোন্ হিজড়ার মেয়েলি অঙ্গ কার্যকর, বালেগ হওয়ার পর এর যাচাই আরো সহজ হয়ে যায়। যেমন, তার যদি ঋতুস্রাব আসে তাহলে সে নারী। আর যদি তার পুরুষাঙ্গ দিয়ে বীর্যপাত হয়, যেমন স্বপ্নদোষ হল অথবা তার পুরুষাঙ্গে কামভাব অনুভব হয় এবং তা উত্থিত হয় তাহলে এর অর্থ তার পুরুষাঙ্গ কার্যকর। তাই সে পুরুষ শ্রেণিভুক্ত হবে।

এমনিভাবে যদি তার পুরুষের মত দাড়ি উঠে তাহলে সে পুরুষ, আর যদি নারীর মত স্তন প্রকাশ পায় তাহলে সে নারী গণ্য হবে।

যার দেহে পুরুষ ও নারী উভয়েরই অঙ্গ রয়েছে তার লিঙ্গ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি হল, তার দেহে শুক্রাশয় আছে, না ডিম্বাশয়, মেডিকেল টেস্টের মাধ্যমে তা নির্ণয় করা। যদি শুক্রাশয় থাকে তাহলে সে পুরুষ আর যদি ডিম্বাশয় থাকে তাহলে সে নারী।

হিজড়া, পুরুষ না নারী তা নির্ণয় করার আলামত সম্পর্কে মৌলিক আলোচনা ফকীহ ইমামগণ করে গেছেন। এর আলোকে আরো কিছু আলামতের কথা পরবর্তী আহলে ফিকহ এবং সমকালীন ফকীহগণ উল্লেখ করেছেন।

সারকথা, কোন আলামতের ভিত্তিতে যখন কোন হিজড়ার নারী কিংবা পুরুষ হওয়া নির্ধারিত হয়ে যাবে তখন তাকে ঐ শ্রেণিভুক্ত গণ্য করা জরুরি। এবং সে হিসেবেই তার উপর বিবাহ, পর্দা, মীরাসসহ যাবতীয় বিধিবিধান কার্যকর হবে।

অবশ্য যে হিজড়াকে কোন আলামত দ্বারাই নারী অথবা পুরুষ গণ্য করা সম্ভব হবে না সেই প্রকৃত হিজড়া। যাকে ফিকহের পরিভাষায় খুনসা মুশকিল বলা হয়। এ ধরনের মানুষ মাযুর (প্রতিবন্ধী)। তার ওযর দূর হয়ে সে কোন্ লিঙ্গের তা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তার ক্ষেত্রে সতর্কতার পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে। যেমন, মীরাসের ক্ষেত্রে তাকে সাধারণত নারী ধরে অংশ দেয়া হবে। কোন পরিবারে মীরাস বণ্টনের ক্ষেত্রে এমন কেউ থাকলে পুরো বিষয়টি কোন ফতোয়া বিভাগে জানিয়ে সুস্পষ্ট ফারায়েয করিয়ে নিতে হবে। অনুরূপভাবে তার লিঙ্গ নির্ধারণ হওয়ার আগ পর্যন্ত সে বিবাহ থেকে বিরত থাকবে এবং সতর্কতামূলক সে গাইরে মাহরামের (মাহরাম নয় এমন ব্যক্তির) সাথে পর্দা করবে।

প্রকাশ থাকে যে, আমাদের সমাজে কেবল নামধারী অনেক হিজড়া রয়েছে, যারা আসলে জন্মগতভাবে পুরুষ। তাদের দেহে নারীদের মত লজ্জাস্থান থাকে না। কিছু বৈষয়িক স্বার্থে কেবল বাহ্যিকভাবে তারা মেয়েলি বেশ ধারণ করে। আবার তাদের কেউ কেউ অপারেশনের মাধ্যমে শুধু নিজের পুরুষাঙ্গটি কেটে ফেলে; বাকি সব কিছু আগের মতই থাকে। সাথে কেউ হয়ত হরমোন থেরাপিও নিয়ে থাকে। এরা আসলে হিজড়াই নয়; বরং পুরুষ। তাদের মধ্যে যারা পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে তারা হচ্ছে মাজবুব তথা পুরুষাঙ্গ কর্তিত পুরুষ। পূর্বেই বলা হয়েছে, খুনসা হচ্ছে, যার দেহে জন্মগতভাবে নারী-পুরুষ উভয়ের লিঙ্গ রয়েছে। অথবা কোন লিঙ্গই নেই। যদি কারো দেহে শুধু একটিই লিঙ্গ থাকে তাহলে সে হিজড়া নয়; বরং যে ধরনের লিঙ্গ আছে সে হিসেবে তার নারী অথবা পুরুষ হওয়াই নির্ধারিত।

উত্তর : চ.

পূর্বোক্ত বিবরণ অনুযায়ী শরীয়তের দৃষ্টিতে যে হিজড়া পুরুষের শ্রেণিভুক্ত তার দেহ থেকে মেয়েলি আলামত অপসারণের জন্য হরমোন থেরাপি ও সার্জারি করার সুযোগ আছে। তদ্রূপ শরীয়তের দৃষ্টিতে যে হিজড়া নারীর শ্রেণিভুক্ত তার দেহ থেকে পুরুষালি আলামত অপসারণের জন্য হরমোন থেরাপি ও সার্জারি করার সুযোগ আছে। তবে এটি করতে হবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে, যেন তা শারীরিক বড় কোন ক্ষতি ডেকে না আনে।

هذا، وصلى الله تعالى على رسوله محمد، خاتم النبيين، وعلى آله وأصحابه أجمعين.

***

 

উদ্ধৃতিসমূহ :

سورة النساء، الآية ১১৯وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذانَ الْأَنْعامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ وَمَنْ يَتَّخِذِ الشَّيْطانَ وَلِيًّا مِنْ دُونِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْراناً مُبِيناً.

صحيح البخاري، رقم الحديث ৫৮৮৬ : لَعَنَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ، وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنَ النِّسَاءِ، وَقَالَ: أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ، قَالَ: فَأَخْرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فُلَانًا، وَأَخْرَجَ عُمَرُ فُلَانًا.

صحيح البخاري، رقم الحديث ৪৮৮৬ : لَعَنَ اللهُ الوَاشِمَاتِ وَالمُوتَشِمَاتِ، وَالمُتَنَمِّصَاتِ وَالمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ المُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ.

صحيح البخاري، رقم الحديث ৫৮৮৫ : لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.

مسند أحمد، رقم الحديث ৮৩০৯ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَعَنَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ.

مسند أحمد،رقم الحديث ৪১২৯: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُتَوَشِّمَاتِ، وَالْمُتَنَمِّصَاتِ، وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ، الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ.

فتح الباري لابن حجر ১০/৩৪৫ : قوله: >لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المتشبهين< قال الطبري: المعنى لا يجوز للرجال التشبه بالنساء في اللباس والزينة التي تختص بالنساء ولا العكس. قلت: وكذا في الكلام والمشي، فأما هيئة اللباس فتختلف باختلاف عادة كل بلد، فرب قوم لا يفترق زي نسائهم من رجالهم في اللبس لكن يمتاز النساء بالاحتجاب والاستتار، وأما ذم التشبه بالكلام والمشي فمختص بمن تعمد ذلك، وأما من كان ذلك من أصل خلقته فإنما يؤمر بتكلف تركه والإدمان على ذلك بالتدريج، فإن لم يفعل وتمادى دخله الذم، ولا سيما إن بدا منه ما يدل على الرضا به.

عمدة القاري للبدر العيني ২২/৪১  : هذا باب في بيان ذم الرجال المتشبهين بالنساء، وبيان ذم النساء المتشبهات بالرجال. ويدل على ذلك ذكر اللعن في حديث الباب، وتشبه الرجال بالنساء في اللباس والزينة التي تختص بالنساء، مثل لبس المقانع والقلائد والمخانق والأسورة والخلاخل والقرط ونحو ذلك مما ليس للرجال لبسه، وتشبه النساء بالرجال مثل لبس النعال الرقاق والمشي بها في محافل الرجال، ولبس الأردية والطيالسة والعمائم ونحو ذلك مما ليس لهن استعماله، وكذلك لا يحل للرجال التشبه بهن في الأفعال التي هي مخصوصة بهن كالانخناث في الأجسام والتأنيث في الكلام والمشي، وأما من كان ذلك في أصل خلقته فإنه يؤمر بتكلف تركه والإدمان على ذلك بالتدريج، فإن لم يفعل وتمادى دخله الذم ولا سيما إذا بدا منه ما يدل على الرضا.

شرح صحيح البخاري، لابن بطال /১৪০: ولا يجوز للنساء التشبه بالرجال فيما كان ذلك للرجال خاصة. فمما يحرم على الرجال لبسه مما هو من لباس النساء: البراقع والقلائد والمخانق والأسورة والخلاخل، ومما لا يحل له التشبه بهن من الأفعال التى هن بها مخصوصات فالانخناث فى الأجسام، والتأنيث فى الكلام. ومما يحرم على المرأة لبسه مما هو من لباس الرجال: النعال والرقاق التى هى نعال الحد والمشى بها فى محافل الرجال، والأردية والطيالسة على نحو لبس الرجال لها فى محافل الرجال وشبه ذلك من لباس الرجال، ولايحل لها التشبه بالرجال من الأفعال فى إعطائها نفسها مما أمرت بلبسه من القلائد والقرط والخلاخل والأسورة، ونحو ذلك مما ليس للرجل لبسه، وترك تغيير الأيدي والأرجل من الخضاب الذى أمرن بتغييرها به.

شرح صحيح البخاري لابن بطال /১৬৭: فى هذا الحديث البيان عن رسول الله أنه لا يجوز لامرأة تغيير شىء من خلقها الذى خلقها الله عليه بزيادة فيه أو نقص منه التماس التحسن به لزوج أو غيره، لأن ذلك نقض منها خلقها إلى غير هيئته.

الكاشف عن حقائق السنن للطيبي /২৯২৬: المخنث ضربان: أحدهما من خلق كذلك، ولم يتكلف التخلق بأخلاق النساء، وزيهن وكلامهن وحركاتهن، وهذا لا ذم عليه ولا إثم ولا عتب ولا عقوبة؛ لأنه معذور. والثاني من المخنث من تكلف أخلاق النساء وحركاتهن وهيأتهن وكلامهن وزيهن، فهذا هو المذموم الذي جاء في الحديث لعنه.

الجامع لأحكام القرآن /৩৯৩: قال أبو جعفر الطبري: في حديث ابن مسعود دليل على أنه لا يجوز تغيير شي من خلقها الذي خلقها الله عليه بزيادة أو نقصان، التماس الحسن لزوج أو غيره، سواء فلجت أسنانها أو وشرتها.

المفهم لما أشكل من تلخيص كتاب مسلم /৪৪৪: و(المتنمصات): ... و(المتفلجات): ...: (الواشمات)  ... وهذه الأمور كُلُّها قد شهدت الأحاديث بلعن من يفعلها، وبأنَّها من الكبائر. واختلف في المعنى الذي لأجله نهي عنها. فقيل: لأنَّها من باب التدليس. وقيل: من باب تغيير خلق الله؛ الذي يحمل الشيطان عليه، ويأمر به، كما قال تعالى مخبرًا عنه: {وَلآمُرَنَّهُم فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلقَ اللهِ} قال ابن مسعود، والحسن: بالوشم. وهو الذي أومأ إليه قوله صلى الله عليه وسلم: (المغيرات خلق الله).

المبسوط للسرخسي ১৫/১৩৪: خصاء بني آدم فذلك منهي عنه وهو من جملة ما يأمر به الشيطان قال الله تعالى : ولآمرنهم فليغيرن خلق الله.

المحيط البرهاني /৮৭: وإذا حلقت المرأة شعرها؛ فإن حلقت لوجع أصابها فلا بأس به، وإن حلقت تشبهاً بالرجال فهو مكروه، وهي ملعونة على لسان صاحب الشرع.

البناية شرح الهداية /৬৯: وقد ورد النهي عن تشبه الرجال بالنساء.

***

وجاء في >قرار مجمع الفقه الإسلامي الدولي< المنبثق عن منظمة التعاون الإسلامي، رقم القرار: ২৫১ (১৩/২৫) : ثانيًا: يحرم شرعًا تغيير الجنس، لأنه تغيير لخلق الله، وهو داخل في قوله تعالى : وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ. [النساء: ১১৯]، وللحديث الذي رواه البخاري عن أنس رضي الله عنه قال: لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المخنثين من الرجال والمترجلات من النساء. وقال: أخرجوهم من بيوتكم. ...

رابعًا: تظلُّ الأحكام الشرعيَّة المتعلقة بالذكر والأنثى من واجبات وحقوق دينية ومدنية ثابتة كما كانت قبل إقدام أحدهما على تحويل نفسه ظاهريًّا من ذكر إلى أنثى، أو من أنثى إلى ذكر، وبخاصة فيما يتعلّق بأحكام الحضانة، والنفقة، والميراث، وذلك لأنَّ تحويله نفسه إلى أنثى أو ذكر لا يُعدُّ تغييرًا حقيقيًّا بل هو تغيير ظاهريٌّ كما قرره الأطباء، فلا تأثير له على ما ثبت من أحكام قبل إقدام أحدهما على هذا التصرف.

ويراجع أيضا : قرارات المجمع الفقهي الإسلامي بمكة المكرمة، ص ২৬২.

***

في كتاب >الأصل< للإمام الشيباني (/৩২১) : محمد بن الحسن عن أبي يوسف عن الكلبي عن أبي صالح عن ابن عباس عن رسول الله صلى الله عليه وسلم  أنه سئل عن مولود ولد لقوم له ما للمرأة وما للرجل كيف يورث؟ قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من حيث يبول. محمد عن أبي يوسف قال: حدثنا الحجاج بن أرطأة عن رجل من بني فزارة عن علي بن أبي طالب مثله. محمد قال: حدثنا الحسن بن كثير عن أبيه عن علي مثله. وهذا قول أبي حنيفة وقول أبي يوسف ومحمد. محمد بن الحسن قال: أخبرنا سعيد بن أبي عروبة عن قتادة عن جابر بن زيد أنه قال في الخنثى: يورث من حيث يبول. قال قتادة: فذكرت لسعيد بن المسيب. فقال: صدق، وإن بال منهما جميعا ورث من أولهما. وهذا قول أبي حنيفة وأبي يوسف ومحمد. ...

وسألت أبا يوسف عن هذا الخنثى الذي يبول منهما جميعا معا ولا يعرف أيهما أكثر إذا أدرك ما حاله؟ قال: إن جامع بذكره فهو رجل. وإن لم يجامع بذكره فخرجت له لحية فهو رجل. فإن لم يجامع بذكره ولم تكن له لحية وكانت له ثديان مثل ثدي المرأة فهو امرأة، وحاله حال النساء. وإن لم تكن له ثديان فرأى الحيض كما ترى النساء فهو امرأة.

وفي >أحكام القرآن< للجصاص (/৫৫১) : قال أبو بكر: لما كان قوله: {الذكر والأنثى} اسما للجنسين استوعب الجميع، وهذا يدل على أنه لا يخلو من أن يكون ذكرا أو أنثى، وأن الخنثى وإن اشتبه علينا أمره لا يخلو من أحدهما; وقد قال محمد بن الحسن: إن الخنثى المشكل إنما يكون ما دام صغيرا فإذا بلغ فلا بد من أن تظهر فيه علامة ذكر أو أنثى. وهذه الآية تدل على صحة قوله.

وفي >الدر المختار< (مع رد المحتار) (/৭২৭) : هذا قبل البلوغ، (فإن بلغ وخرجت لحيته أو وصل إلى امرأة أو احتلم) كما يحتلم الرجل (فرجل، وإن ظهر له ثدي أو لبن أو حاض أو حبل أو أمكن وطؤه فامرأة، وإن لم تظهر له علامة أصلا أو تعارضت العلامات فمشكل فيؤخذ في أمره بما هو الأحوط) في كل الأحكام.

وفي >رد المحتار< (/৭২৮) : (قوله أو تعارضت العلامات) كما إذا نهد ثديه ونبتت لحيته معا، أو أمنى بفرج الرجل وحاض بفرج المرأة، أو بال بفرجها وأمنى بفرجه قهستاني.

الفتاوى الهندية (/৪৩৭) (كتاب الخنثى) وفيه فصلان، الفصل الأول في تفسيره ووقوع الإشكال في حاله. يجب أن يعلم بأن الخنثى من يكون له مخرجان، قال البقالي  رحمه الله تعالى: أو لا يكون له واحد منهما ويخرج البول من ثقبة، ويعتبر المبال في حقه، كذا في الذخيرة.

المبسوط للسرخسي ৩০/৯২ : اختلف العلماء رحمهم الله في حكم الخنثى المشكل في الميراث، فقال أبو حنيفة ومحمد رحمهما الله وهو قول أبي يوسف الأول رحمه الله  يجعل في الميراث بمنزلة الأنثى إلا أن يكون أسوأ حاله أن يجعل ذكرا فحينئذ يجعل ذكرا، وفي الحاصل يكون له شر الحالين وأقل النصيبين، وفي قول أبي يوسف الآخر له نصف ميراث الذكر ونصف ميراث الأنثى وهو أقرب من قول الشعبي على ما نبينه.

الهداية /৭০৩ : ولو مات أبوه وخلف ابنا، فالمال بينهما عند أبي حنيفة رحمه الله تعالى أثلاثا : للابن سهمان، وللخنثى سهم، وهو أنثى عنده في الميراث، إلا أن يتبين غير ذلك، وقالا : للخنثى نصف ميراث ذكر ونصف ميراث أنثى.

ويراجع أيضا : المبسوط للسرخسي ৩০/১০৪؛ والاختيار لتعليل المختار /৩৯؛ والعناية شرح الهداية ১০/৫১৬؛ الفتاوى الهندية /৪৩৮؛ ومجمع الأنهر/৭২৯؛ ومجلة المجمع الفقهي الإسلامي، العدد السادس، ص ৩৬৪.

***

وفي >الفتاوى من أقاويل المشايخ< (المعروف بـ>فتاوى النوازل<) للسمرقندي ص ৪৯৫ : وروي عن نصير أنه قال: فيمن به إصبع زائدة فأراد قطعها هل له ذلك؟ قال : إن كان الغالب على من قطع مثل ذلك الهلاك فلا يفعل، وإن كان الغالب النجاة فهو في سعة من قطعها.

وفي >الفتاوى الخانية< /৪১০ : وفي الفتاوي: إذا أراد أن يقطع إصبعا زائدة أو شيئا آخر قال أبو نصر رحمه الله تعالى إن كان الغالب على من قطع مثل ذلك الهلاك فإنه لا يفعل لأنه تعريض النفس للهلاك، وإن كان الغالب

هو النجاة فهو في سعة من ذلك. رجل أو امرأة قطع الإصبع الزائدة من ولده، قال بعضهم : لا يضمن؛ لأنه معالجة ولهما ولاية المعالجة، ولو فعل ذلك غير الأب والأم فهلك كان ضامنا لعدم الولاية، وقال بعضهم ليس للأب والأم أن يقطع، وإن قطع وأوجب وهنا في يده كان ضامنا، والمختار هو الأول إلا أن يخاف التعدي

أو وهنا في اليد.

وجاء في >قرارات المجمع الفقهي الإسلامي بمكة المكرمة< ص ২৬২: أما من اجتمع في أعضائه علامات النساء والرجال، فينظر فيه إلى الغالب من حاله، فإن غلبت عليه الذكورة جاز علاجه طبيًّا بما يزيل الاشتباه في ذكورته، ومن غلبت عليه علامات الأنوثة جاز علاجه طبيًّا، بما يزيل الاشتباه في أنوثته، سواء أكان العلاج بالجراحة، أم بالهرمونات، لأن هذا مرض، والعلاج يقصد به الشفاء منه، وليس تغييرًا لخلق الله عز وجل.

والله تعالى أعلم.

ফতোয়া প্রদান :

জাতীয় মুফতি বোর্ড

আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ

তারিখ : ০২-০৭-১৪৪৫ হি.

১৫-০১-২০২৪ ঈ.

 

মুফতি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ :

০১. আল্লামা মাহমুদুল হাসান, চেয়ারম্যান, জাতীয় মুফতি বোর্ড

০২. হযরত মাওলানা সাজিদুর রহমান

০৩. হযরত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ

০৪. হযরত মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন

০৫. হযরত মাওলানা মুফতি মানসূরুল হক

০৬. হযরত মাওলানা মাহফুজুল হক

০৭. হযরত মাওলানা মুফতি আরশাদ রাহমানী

০৮. হযরত মাওলানা মুফতি মোহাম্মাদ আলী

০৯. হযরত মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ

১০. হযরত মাওলানা মুফতি জসিমুদ্দীন

১১. হযরত মাওলানা মুফতি এনামুল হক

১২. হযরত মাওলানা মুফতি শামসুদ্দিন জিয়া

১৩. হযরত মাওলানা মুফতি মুজিবুর রহমান (সিলেট)

১৪. হযরত মাওলানা মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ

১৫. হযরত মাওলানা মুফতি দেলোয়ার হোসাইন

১৬. হযরত মাওলানা মুফতি আব্দুস সালাম (ফরিদাবাদ)

১৭. হযরত মাওলানা মুফতি কেফায়াতুল্লাহ (হাটহাজারী)

১৮. হযরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আবদুল মালেক,সদস্য সচিব, জাতীয় মুফতি বোর্ড। 

 

 

advertisement