মুহাররম ১৪৪৬   ||   জুলাই ২০২৪

সূরাসমূহের নামের অর্থ

কামরুল আনাম খান

(পূর্ব প্রকাশের পর)

২৪। সূরা নূর : নূর অর্থ আলো। সূরাটির ৩৫ নম্বর আয়াতে নূর শব্দটি কয়েকবার উল্লেখিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ পৃথিবী ও আকাশের নূর। তারপরে তাঁর নূরের দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, আল্লাহ যাকে চান তাকে তাঁর নূরের দিকে পথ দেখান। সেখান থেকেই সূরাটির নাম সূরা নূর

২৫। সূরা ফুরকান : ফুরকান অর্থ সত্য-মিথ্যার মধ্যে মীমাংসাকারী। সূরাটির প্রথম আয়াতেই ফুরকান শব্দটি রয়েছে। এটি কুরআন মাজীদেরও একটি নাম। কুরআন যেহেতু সত্য-মিথ্যার মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তাই কুরআনের আরেক নাম ফুরকান। সূরাটির প্রথম আয়াতে শব্দটি উল্লেখ করে বলা হয়েছে (তরজমা) মহিমময় সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দার প্রতি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে মীমাংসাকারী কিতাব নাযিল করেছেন, যাতে তা বিশ্ববাসীর জন্য হয় সতর্ককারী। এ থেকেই সূরাটির নাম সূরা ফুরকান

২৬। সূরা শুআরা : শুআরা শব্দটি শায়ের শব্দের বহুবচন, অর্থ কবিগণ। সূরাটির শেষাংশে কবিদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। সেখান থেকেই সূরাটির নাম

সূরা শুআরা

২৭। সূরা নামল : নামল অর্থ পিঁপড়া। সূরাটির ১৮ ও ১৯ নম্বর আয়াতে পিঁপড়ার উপত্যকা দিয়ে সুলাইমান আলাইহিস সালামের সসৈন্য গমন এবং তখন পিঁপড়াদের উদ্দেশে এক পিঁপড়ার ভাষণ এবং সুলাইমান আলাইহিস সালাম কর্তৃক তা শ্রবণের ঘটনা বিবৃত হয়েছে। সেখান থেকেই সূরাটির নাম সূরা নামল

২৮। সূরা কাসাস : কাসাস অর্থ গল্প, কাহিনী বা বিশদ বর্ণনা। সূরাটির ২৫ নম্বর আয়াতে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের আলোচনা প্রসঙ্গে কাসাস শব্দটি এসেছে। এ সূরায় মূসা আলাইহিস সালামের বৃত্তান্ত, বিশেষত তাঁর জন্ম থেকে নবুওত লাভ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছিল, তা বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয়েছে।

২৯। সূরা আনকাবূত : আনকাবূত অর্থ মাকড়সা। সূরাটির ৪১ নম্বর আয়াতে যারা শিরকী কার্যকলাপে লিপ্ত, তাদের ব্যাপারে মাকড়সার দৃষ্টান্ত টেনে বলা হয়েছে (তরজমা) যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্য অভিভাবক গ্রহণ করেছে, তাদের দৃষ্টান্ত হল মাকড়সা, যে নিজের জন্য ঘর বানিয়েছে, আর নিশ্চয়ই ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই সর্বাপেক্ষা দুর্বল হয়ে থাকে। আহা! তারা যদি জানত। সেখান থেকেই এ সূরার নাম সূরা আনকাবূত

৩০। সূরা রূম : সূরাটির শুরুতে ইরশাদ হয়েছে

الٓمّٓ غُلِبَتِ الرُّوْمُ فِيْۤ اَدْنَي الْاَرْضِ وَ هُمْ مِّنْۢ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُوْنَ.

(আলিফ-লাম-মীম। রোমকগণ নিকটবর্তী অঞ্চলে পরাজিত হয়েছে, কিন্তু তারা তাদের পরাজয়ের পর আবার বিজয় অর্জন করবে)।

এখানে রোমানদের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, ইরানীদের বিরুদ্ধে রোমানরা যদিও এখন পরাস্ত হচ্ছে, কিন্তু বছর কয়েকের মধ্যেই তারা জয়লাভ করবে। সেসময়ের পরিবেশ-পরিস্থিতি-দৃষ্টে এ ভবিষ্যদ্বাণী এমন অকল্পনীয় ছিল যে, তখনকার অবস্থা সম্পর্কে অবগত কারও পক্ষে এ রকম চিন্তা করা সম্ভবই ছিল না। কারণ তখন ইরানীদের হাতে রোমানদের শক্তি ও সাম্রাজ্য সম্পূর্ণ লণ্ডভণ্ড। দূর-ভবিষ্যতেও যে তারা আবার জয়লাভ করবে এটা ছিল কল্পনাতীত। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই কুরআনের এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয়েছিল। সূরার শুরুতে উল্লেখিত রূম শব্দ থেকেই সূরাটির নাম সূরা রূম

৩১। সূরা লুকমান : লুকমান ছিলেন আরবের এক খ্যাতনামা বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি নিজ সন্তানকে কিছু মূল্যবান নসীহত করেছিলেন। তা হল

ক. কখনও শিরক করো না।

খ. নামায কায়েম কর।

গ. মানুষকে সৎকাজের আদেশ কর, মন্দ কাজে বাধা দাও।

ঘ. তোমার যে কষ্ট দেখা দেয়, তাতে সবর কর।

ঙ. মানুষের সামনে (অহংকারে) গাল ফুলিও না।

চ. জমিনে দর্পভরে চলো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দর্পিত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

ছ. পদচারণায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর।

জ. কণ্ঠস্বর সংযত রাখ। নিশ্চয়ই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট স্বর গাধাদেরই স্বর।

তাঁর এ নসীহতগুলো এ সূরার ১২ থেকে ১৯ নম্বর পর্যন্ত আয়াতসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকেই সূরাটির নাম সূরা লুকমান

৩২। সূরা সাজদা : এ সূরাটির প্রথম আয়াত الٓـمّٓআবার এ সূরার ১৫ নম্বর আয়াতটি সেজদার আয়াত। তাতে মুমিনগণের সেজদার কথা উল্লেখিত হয়েছে। সে হিসেবেই সূরাটির নাম সূরা আলিফ-লাম-মীম আসসাজদা

৩৩। সূরা আহযাব : এটি হিযবুন শব্দের বহুবচন, অর্থ সম্মিলিত বাহিনী। মক্কার কুরাইশরা আরবের অন্যান্য গোত্রসমূহকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তুলেছিল এবং মদীনায় আক্রমণ করতে চেয়েছিল। সে যুদ্ধের আলোচনা এ সূরায় বর্ণিত হয়েছে। সূরাটির ২০ ও ২২ নম্বর আয়াতে আহযাব শব্দটি এসেছে। সেখান থেকেই সূরাটির নাম সূরা আহযাব

৩৪। সূরা সাবা : এ সূরার ১৫ নম্বর আয়াত থেকে প্রাচীন ইয়ামানের সাবা সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অনেক নেয়ামত দান করেছিলেন। কিন্তু তারা অকৃতজ্ঞ হয়েছিল। তাই আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিলেন। এ থেকেই সূরাটির নাম সূরা সাবা

৩৫। সূরা ফাতির : ফাতির অর্থ সৃষ্টিকর্তা, এটি আল্লাহ তাআলার একটি গুণবাচক নাম। সূরার প্রথম আয়াতেই ফাতির শব্দটি রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে

اَلْحَمْدُ لِلهِ فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ.

(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা)। এখান থেকেই সূরাটি নাম সূরা ফাতির। 

 

 

advertisement