কার্যকর হয়ে উঠছে বয়কট অস্ত্র
‖ প্রয়োজন আরো ব্যাপক ও কঠোর প্রয়োগ
গত বছর অক্টোবর থেকে দখলদার ইসরাইল কর্তৃক নিরীহ ফিলিস্তিনী জনগণের ওপর গণহত্যা ও জাতি নিধনের একটি ছোট্ট প্রতিবাদ হিসেবে ‘বয়কট’ অস্ত্রটির প্রয়োগ শুরু হয়েছিল। যদিও পৃথিবীতে অর্ধ শতাধিক মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে। পৃথিবীর খনিজ সম্পদের বিশাল অংশ রয়েছে মুসলমানদের হাতেই। অসংখ্য মুসলিম বিলিয়নিয়ার দু-হাতে টাকা কামাচ্ছেন বিশ্বব্যাপী। তবুও স্বজাতির কয়েক লাখ নিরপরাধ ও নিরস্ত্র নারী-শিশু ও সাধারণ মানুষকে জালেম জায়নবাদিদের হাত থেকে রক্ষা করতে এদের কেউই কার্যকরভাবে এগিয়ে আসেনি। মুসলিম দেশের সরকারগুলো ব্যস্ত তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে। তাদের কেউ কেউ তো দখলদার জালেমদের সাথে প্রকাশ্যেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর অন্যরা পালন করে যাচ্ছে অন্যায় নীরবতা।
এমতাবস্থায় পুরো বিশ্বের সাধারণ মুসলমানগণ আল্লাহর দরবারে দুআ ও সাধ্যানুযায়ী সামান্য ত্রাণ সহায়তার মতো ছোটখাট উদ্যোগের পাশাপাশি আরেকটি কাজও শুরু করেছিল। সেটি হচ্ছে, ওইসকল বহুজাতিক কোম্পানি ও তাদের পণ্যগুলোকে বয়কট করা, যেগুলো ইসরাইলকে অর্থসহায়তা ও সমর্থন দিয়ে থাকে। যে তালিকায় রয়েছে প্রাচীন কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, জুতো প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, প্রসাধনী, খাবার ও চা-কফির মতো বিভিন্ন বড় বড় ব্র্যান্ড। প্রথমে ছোট আকারে এ বয়কট কার্যক্রম শুরু হলেও ইসরাইল কর্তৃক গাজাবাসী ও ফিলিস্তিনীদের গণহত্যা যতই ব্যাপক ও দীর্ঘায়িত হচ্ছে ঘৃণা ও প্রতিরোধের বয়কট অস্ত্রও দিন দিন বেগবান হয়ে উঠছে। শুধু মুসলিম সমাজের লোকজনই নন, বরং বিবেকবান বহু অমুসলিমও এ বয়কটে যোগ দিয়েছেন। যেসব পণ্য বিশ্বব্যাপী বয়কটের আওতায় এসেছে বিশেষত পানীয় খাবার ও প্রসাধনী এগুলোতে মানুষ সাধারণত বিভিন্ন ব্র্যান্ডে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। তা পরিবর্তন করা অথবা সেসব পণ্যের ব্যবহারই বন্ধ করে দেওয়া একেবারে সহজ কাজ নয়। কিন্তু ঈমানী শক্তি ও মানবতার দরদ বিবেকবান বহু মানুষকে এ বয়কট কার্যক্রমে টিকিয়ে রেখেছে। অনেকেই শুধু ওই সব বহুজাতিক কোম্পানির কোমল পানীয়ই ছেড়ে দেননি, এই সুযোগে এসব বেহুদা জিনিস পান করাই পরিত্যাগ করেছেন।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এই বয়কট অস্ত্রটির সুপ্রভাব এখন দেশে দেশে পরিষ্কার দৃশ্যমান। ওই বড় বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে একচেটিয়া দাপটের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছিল, যুগ যুগ থেকে অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাছাকাছি বিকল্পও মানুষ খুঁজে পেত না। যে সুযোগে তারা ইচ্ছেমতো দামও হাঁকিয়ে নিত ক্রেতা ও ভোক্তা সাধারণ থেকে। এখন তাদের বেহাল দশা দেখলে করুণাই হয়। কত প্রকার ছাড়ের ছড়াছড়ি, গিফটের ছড়াছড়ি, একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি দিয়েও বয়কটকারী মানুষদের ফিরিয়ে আনতে পারছে না তারা। এখন তো বরং পানীয়র সাথে ডিমও ফ্রি দেওয়া শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম দেশগুলো এমনকি কোনো কোনো অমুসলিম দেশেও বড় বড় স্টোরগুলো এবং ইহুদীদোসর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমগুলো কেউ ঘুরে আসলেই এ অবস্থা দেখতে পাবেন। জানা কথা যে, সমাজের অল্প শ্রেণির মানুষই স্বেচ্ছায় এ বয়কটে যোগ দিয়েছেন। এখন যদি এ বয়কট আন্দোলনকে ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমে আরো বেগবান করা যায়, তাহলে এর প্রভাব যে আরো সুদূরপ্রসারী হবে, তা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
শুধু ইহুদীদের দোসরই নয়, দেশে দেশে ইসলামবিদ্বেষী আরো বহু গোষ্ঠী রয়েছে। যারা চলে মুসলিম ভোক্তা জনগণের টাকায় আর সহযোগিতা দেয় ইসলামের শত্রুদের। যেমন দোজাহানের সরদার সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকাশ্য শত্রু কাদিয়ানীদের অর্থসহায়তা দানকারী এদেশের একটি গোষ্ঠীও ব্যবসা করে যাচ্ছে দু-হাত ভরে। কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন এবং তৃণমূল পর্যায়ের দোকানীদের মোটা অঙ্কের কমিশন দিয়ে তারা হরেক রকমের পণ্য সহজেই বাজারজাত করছে এবং সুকৌশলে অসংখ্য ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করে নিজেদের আসল পরিচয় গোপন রেখে মানুষকে প্রতারিত করছে। তাদের বহু পণ্যের মধ্যে খুব ছোট করেই হয়তো নিজের ব্র্যান্ডের নাম লেখা থাকে। যেন মানুষ বুঝতেই না পারে এটি কাদের তৈরি। তো এ গোষ্ঠীটির পণ্য বয়কটেরও একটি আহ্বান আছে উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার শ্রেণির পক্ষ থেকে। যার যথাযথ প্রয়ো শুরু হলে সেটিও যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তাতেও সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
এমনিভাবে এদেশীয় আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও আমাদের দ্বীন-ধর্ম সভ্যতা সংস্কৃতি ধ্বংসে লিপ্ত রয়েছে বিভিন্নভাবে। এখন তো তাদের কারো কারো সাহস চরমে পৌঁছে গেছে। তারা লেগে গেছে এমনকি মানবতার বিরুদ্ধেও এবং বিজাতিদের থেকে আমদানি করছে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার নিকৃষ্ট সব বিষয়াদি। এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) ও ট্রান্সজেন্ডার-এর মতো ঈমান ও মানবতা বিধ্বংসী মতবাদগুলোও শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী। ইনসানিয়াতকে ধ্বংস করে দিয়ে আশরাফুল মাখলুকাত বনী আদমকে পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট করার সকল আয়োজন খুলে বসেছে তারা। আর এদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে এদেশের চিহ্নিত আরো কিছু প্রতিষ্ঠান। দেশের উলামায়ে কেরাম, গুণীজন ও মানবতার বিপর্যয় নিয়ে উদ্বিগ্নÑ এমন সকলের দায়িত্ব হয়ে উঠেছে এসব গোষ্ঠীর মুখোশ উন্মোচন করে দেওয়ার এবং তাদের সকল ব্যবসায়িক ও তথাকথিত সেবা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমগুলোকে বয়কটের ডাক দিয়ে মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার। ব্যাপক গণসচেতনতা ও নীরব বয়কট বিপ্লবের মাধ্যমে এদের প্রতিরোধ করতে না পারলে এদেশের মানুষের বিশেষত বর্তমান তরুণ ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করা সুকঠিন হয়ে উঠবে। অতএব প্রত্যেককে ভাবতে হবে যার যার অবস্থান ও জায়গা থেকে।
স্কুল ছাত্রী ও শিশুদের নির্যাতন <br> ‖
এ মানুষরূপী পশুগুলো শিক্ষকতা পদে বহাল থাকে কী করে
সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোতে দুটি খবর পড়ে আঁৎকে উঠেছেন দেশের সাধারণ মানুষ। খবরদুটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ হচ্ছে-
প্রথম ঘটনা : রাজশাহী শহরে ১০ বছরের কম বয়সী ৩০ জন স্কুলছাত্রকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আবদুল ওয়াকেল (৩৩) নামের এক শিক্ষককে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শনিবার রাজশাহী নগরের ডাঁশমারী এলাকা থেকে আবদুল ওয়াকেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি বলছে, যৌন নিপীড়নের দৃশ্যগুলো ওই শিক্ষক ভিডিও ধারণ করে নিজের মুঠোফোন, পেনড্রাইভ, কম্পিউটার এবং এক্সটার্নাল হার্ডডিস্কে সংরক্ষণ করতেন।
স্নাতক পড়ার সময় থেকে শিশুদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন তিনি। ছাত্রদের পড়ানোর জন্য তিনি একটি কোচিং সেন্টার খোলেন। কোচিং সেন্টারের ছাত্রদের চকোলেট ও পছন্দের মোবাইল গেম খেলায় ব্যস্ত রেখে যৌন নিপীড়ন করতেন। যৌন নিপীড়নের এসব দৃশ্য তিনি ভিডিও করে রাখতেন। এ ঘটনায় ওয়াকেলের বিরুদ্ধে তাঁর বর্তমান কর্মস্থলের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন’-এ মামলা করেছেন।’
১৯ মে ২০২৪
দ্বিতীয় ঘটনা : ‘দিনাজপুরের বিরামপুরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে দুই সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা জানান, ওই দুই শিক্ষক পাঠদানের সময় প্রায়ই ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। তাঁরা বিষয়ভিত্তিক পাঠদান বাদ দিয়ে অশালীন ও আপত্তিকর বিষয়ে কথাবার্তা বলেন। শুধু তা-ই নয়, ওই দুই শিক্ষক কৌশলে শিক্ষার্থীর স্পর্শকাতর স্থানেও হাত দেন।
এদিকে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৭ মে বেলা ১১টার সময় অভিযুক্ত এক শিক্ষক দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে লাইব্রেরি কক্ষে ডেকে নিয়ে ল্যাবের কম্পিউটারে আপত্তিকর ভিডিও দেখান। অবাঞ্ছিতভাবে ওই ছাত্রীকে স্পর্শ করার চেষ্টাও করেন অভিযুক্ত শিক্ষক। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ওই ছাত্রী ল্যাব থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বের হয়ে আসে।’
২৪ মে ২০২৪
ছাত্রী ও শিশু শিক্ষার্থীদের এধরনের লজ্জাজনক হয়রানির ঘটনা এগুলোই প্রথম নয়। বরং এ বছরেও বহুবার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্তৃক বিভিন্নভাবে ছাত্রী ও শিশু শিক্ষার্থী নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি সংখ্যালঘু একাধিক শিক্ষক কর্তৃক মুসলিম ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। সেগুলোর যদি দৃষ্টান্তমূলক বিচার হত, যদি ঐ জঘন্য বেহায়া লোকদের শাস্তি নিশ্চিত করা হত, তাহলে এসব ঘটনার ব্যাপকতা নিশ্চয়ই কমে আসত। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই তদন্ত কমিটি গঠন ও চাকরির স্থান বদলি অথবা কোনো শাস্তি না দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয় এদের। যার দরুন এ দুষ্ট লোকগুলোর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দায়িত্বশীলরা যদি এখনো এসব বিষয়ে উদাসীন থাকেন, আর এসব বিকৃত মস্তিষ্কের শিক্ষকরূপী অসভ্য লোকদের কঠোর শাস্তির আওতায় না আনা হয় এবং এ ধরনের মানসিকতা ও কুপ্রবৃত্তি রয়েছে- এমন লোকদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিতাড়িত করা না হয় তাহলে পরিস্থিতি যে আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠবে, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।