যিলকদ ১৪৪৫   ||   মে ২০২৪

আমরাই আমাদের পরাজয়ের কারণ

মাওলানা আবুল কালাম আযাদ রাহ.

আমাদেরকে কেউ পরাস্ত করতে পারবে না। আমরা ঈমান ও বিশ্বাস এবং ইস্তিকামাত ও দৃঢ়তার অস্ত্রে এতটাই শক্তিশালী যে, পৃথিবীর বড় বড় পরাশক্তিও আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের ঈমান ও আমলে যদি সামান্যতম দুর্বলতা  ও ত্রুটিও এসে যায়, তাহলে আমরা নিজেরাই হব নিজেদের হন্তারক এবং হঠাৎ নিশ্চিহ্ন হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া কোনো জাতি থেকেও দ্রুততর হবে আমাদের পতন ও বিলীন।

কোনো রাষ্ট্রশক্তি আমাদের মুছে ফেলতে পারবে না; আমাদের গাফলত-উদাসীনতাই আমাদের শেষ করে দেবে। কোনো বাহিনী আমাদের নিঃশেষ করতে পারবে না, নিজেদের অন্তরের ভয় ও দুর্বলতা আমাদের পরাস্ত করবে। আমাদের শত্রুর কোনো দৈহিক অবয়ব নেই। আমাদের শত্রু আমাদের ঈমান ও আমলের দুর্বলতা।

যদি আমাদের ভেতরে ভয়-ভীতি দানা বাঁধে, সন্দেহ-সংশয় যদি আমাদের পেয়ে বসে, ঈমান ও ইয়াকীন দুর্বল ও দোদুল্যমান হয়ে যায়; আমরা যদি কুরবানী ও আত্মত্যাগের মানসিকতা হারিয়ে ফেলি, নিজেদেরকে নফসের গোলামীতে আবদ্ধ করি; আমরা  যদি সবর ও অবিচলতার গুণ খুইয়ে বসি; অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি; প্রার্থনা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাই; আমাদের মধ্যে যদি কোনো শৃঙ্খলা না থাকে; আমরা যদি আমাদের তাহরীক ও আন্দোলনে সবাইকে একত্রিত ও একাত্ম করতে না পারি; আমাদের কঠিন থেকে কঠিন সমস্যায়, বড় থেকে বড় বিপদ-মসিবতে নিজেদের নিরাপত্তা বিধান করতে না পারি এবং নিজেদের সংগঠিত রাখতে না পারি; আমাদের পারস্পরিক মেল-বন্ধন ও সম্প্রীতিতে যদি কোনো উন্নতি না ঘটে! অর্থাৎ আমরা যদি ঈমান-ইয়াকীনে পরিপূর্ণ ও পরিপক্ব প্রমাণিত না হই এবং যথাযথ পদক্ষেপ ও কর্মনীতি গ্রহণ না করি, তাহলে আমাদের পরাজয় ও ব্যর্থতা, আমাদের লাঞ্ছনা ও পতন অনিবার্য। এর জন্য না কোনো রাষ্ট্রশক্তির প্রয়োজন আছে, না তাদের কোনো জুলুম-জবরদস্তির! নিজেরাই নিজেদের গলায় ছুরি চালাব। এরপর আমাদের ব্যর্থতার গল্প শিক্ষার উপকরণ হয়ে গোটা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াবে।

আমাদের শক্তিমত্তা বাহ্যিক উপায়-উপকরণে নয় যে, তা হারিয়ে গেলে পুনরুদ্ধার সম্ভব; বরং আমাদের অস্তিত্ব শুধু দিল ও আত্মার সততা ও পবিত্রতার ওপর প্রতিষ্ঠিত; আর এটা দুনিয়ার বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না।

যদি ধনভাণ্ডার শেষ হয়ে যায়, তাহলে তা পুনরায় সঞ্চয় করা সম্ভব; যদি সৈন্যবাহিনী বিধ্বস্ত হয়, তাহলে পুনর্বিন্যাস সম্ভব; যদি অস্ত্রসামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে কারখানায় তা পুনরায় বানিয়ে নেওয়া সম্ভব; কিন্তু যদি আমাদের ঈমান ও বিশ্বাস হারিয়ে যায়, তাহলে তা কোথায় পাব?!

যদি আত্মত্যাগ এবং হক ও সত্যকে গ্রহণের পবিত্র চেতনাই মরে যায়, তাহলে তা কার কাছ থেকে চেয়ে আনব? যদি আমাদের খোদাপ্রেম, জাতি ও দেশের প্রতি দায় ও ভালবাসা হারিয়ে যায়, তাহলে তা কোন্ কারখানায় মিলবে?!

-লেখকের কওলে ফয়সল’ (পৃ. ৯৩-৯৪) গ্রন্থ থেকে গৃহীত

[সাপ্তাহিক নেদায়ে ফিলিস্তিন, দিল্লি

২৬-০২-১৩৮৮ হি./ ২৫-০৫-১৯৬৮ ঈ.-এ প্রকাশিত

ভাষান্তর : মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ]

 

 

advertisement