সূরা তাকাসুরের শিক্ষা
সূরা তাকাসুরের পাঠ―
اَلْهٰىكُمُ التَّكَاثُرُ، حَتّٰی زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ، كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ، ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ،كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْیَقِیْنِ، لَتَرَوُنَّ الْجَحِیْمَ، ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَیْنَ الْیَقِیْنِ، ثُمَّ لَتُسْـَٔلُنَّ یَوْمَىِٕذٍ عَنِ النَّعِیْمِ.
অনুবাদ : (পার্থিব ভোগসামগ্রীতে) একে অন্যের ওপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টা তোমাদেরকে উদাসীন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে পৌঁছ। কিছুতেই এরূপ সমীচীন নয়। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। আবারও (শোন), কিছুতেই এরূপ সমীচীন নয়। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। কক্ষনও নয়। তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের সাথে যদি একথা জানতে (তবে এরূপ করতে না)। তোমরা জাহান্নাম অবশ্যই দেখবে। তোমরা অবশ্যই তা দেখবে চাক্ষুষ প্রত্যয়ে। অতঃপর সেদিন তোমাদেরকে নিআমতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে (যে, তোমরা তার কী হক আদায় করেছ?) -সূরা তাকাসুর (১০২) : ১-৮
এ সূরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের একটি মন্দ স্বভাবের কথা উল্লেখ করে সে সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। সূরার শুরুতে ইরশাদ করেছেন- (তরজমা) ‘(পার্থিব ভোগসামগ্রীতে) একে অন্যের ওপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টা তোমাদেরকে উদাসীন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে পৌঁছ।’
এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষের লোভ ও ভোগবাদী স্বভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। এ স্বভাব মানুষকে প্রতিনিয়ত প্ররোচিত করতে থাকে ইহজাগতিকতায় অন্যের চেয়ে এগিয়ে যেতে। অন্যের চেয়ে ভালো পোশাক পরতে, ভালো খাবার খেতে, অন্যের বাসস্থানের চেয়ে ভালো বাসস্থানে বসবাস করতে। একে একে নিজের জাগতিক সবকিছু যেন অন্যের চেয়ে ভালো হয়। ফলে কোনো ক্ষেত্রে অন্যের চেয়ে খারাপ থাকলে দুঃখ লাগে। মনে অতৃপ্তি দানা বাঁধে। তা লাভ করার লালসা জন্ম নেয়। আবার কোনো ক্ষেত্রে অন্যের চেয়ে এগিয়ে গেলে সুখবোধ হয়। অব্যহত এগিয়ে থাকার প্রতিযোগী মানসিকতা জেগে ওঠে। এভাবে মানুষের ভোগবাদী স্বভাব দুনিয়ামুখিতায় মানুষকে একে অন্যের ওপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টায় লিপ্ত রাখে। এ মানসিকতা ধীরে ধীরে মানুষকে তার প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে বিমুখ করে ফেলে। তাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? তার গন্তব্য কোথায়? তার করণীয় কী এবং সাফল্য লাভের কী উপায়Ñ এ ব্যাপারে সে উদাসীন হয়ে যায়। যে যত বেশি দুনিয়ামুখী হয়, সে তার প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও গন্তব্য থেকে তত বেশি দূরে সরে যায়।
অথচ দুনিয়ার জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। পরকালের তুলনায় এ জীবন এক মুহূর্তেরও নয়। এ সামান্য সময়ের জন্য কী ব্যাপক আয়োজন, কী বিপুল সমারোহ। তবুও সম্পদের চাহিদা মানুষের কখনোই শেষ হয় না, সে তৃপ্ত হতে পারে না। আর যতটুকু সম্পদ অর্জন করে, তা থেকেও খুব অল্পই ভোগ করতে পারে। বস্তুত মানুষের নিজের সম্পদ কেবল এতটুকু, যতটা সে ভোগ করে যেতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর রা. থেকে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন, তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরাটি অর্থাৎ সূরা তাকাসুর তিলাওয়াত করছিলেন। নবীজী বললেন-
يَقُولُ ابْنُ آدَمَ مَالِي مَالِي، وَهَلْ لَكَ مِنْ مَالِكَ إِلّا مَا تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ أَوْ أَكَلْتَ فَأَفْنَيْتَ أَوْ لَبِسْتَ فَأَبْلَيْتَ.
আদম-সন্তান বলে, আমার ধন, আমার সম্পদ। অথচ তুমি যা দান-সদকা করে (পরকালের জন্য) জমা করেছ, যা কিছু খেয়ে শেষ করেছ, যে কাপড় পরে পুরোনো করে ফেলেছ, তা ছাড়া আর কোনো কিছুই তোমার নয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৫৪
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَوْ أَنَّ لِابْنِ آدَمَ وَادِيًا مِنْ ذَهَبٍ، أَحَبَّ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَادِيَانِ، وَلَنْ يَمْلَأَ فَاهُ إِلّا التُّرَابُ، وَيَتُوبُ اللهُ عَلَى مَنْ تَابَ.
আদম সন্তানের যদি এক উপত্যকা ভর্তি সম্পদ থাকে, তাহলে সে দ্বিতীয় উপত্যকা ভর্তি সম্পদ চাইবে। মাটি ছাড়া আর কোনো কিছু তার মুখ ভরতে পারবে না। আর যে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬
অন্য বর্ণনায় আছে, যদি দুই উপত্যকা ভর্তি সম্পদ থাকে, তাহলে সে তৃতীয় উপত্যকা ভর্তি সম্পদ খুঁজে বেড়াবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৪৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৩৭
কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন স্থানে পার্থিব সামগ্রী সৃষ্টির কারণ বর্ণনা করে দিয়ে মানুষকে ভোগ-বিলাসী স্বভাব থেকে সতর্ক করেছেন। বহু আয়াতে নানান দৃষ্টিকোণ থেকে ইহজগৎ, তার স্বরূপ ও তা সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং এ সম্পর্কে মানুষের করণীয় ব্যক্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও হাদীস শরীফে আমাদের বুঝিয়েছেন। কিন্তু তবুও এ ব্যাপারে বহু মানুষের স্বভাব ও আচরণ হল, তারা পার্থিব সকল ক্ষেত্রে আধিক্য লাভের চেষ্টায় মত্ত ও সাফল্য পেতে মুখিয়ে থাকে। এ লোভ ও লালসা মৃত্যু পর্যন্ত তাদের পিছু ছাড়ে না। আল্লাহ তাআলা সে কথাই এ সূরার শুরুতে উল্লেখ করেছেন। অন্যত্র সূরা আ‘লাতে ইরশাদ হয়েছে-
بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَیٰوةَ الدُّنْیَا، وَ الْاٰخِرَةُ خَیْرٌ وَّ اَبْقٰی.
কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও। অথচ আখেরাত কত বেশি উৎকৃষ্ট ও কত বেশি স্থায়ী। -সূরা আ‘লা (৮৭) : ১৬-১৭।
এ মন্দ স্বভাবকে দমন ও বর্জন করে এ ক্ষেত্রে সকলেরই কুরআন-সুন্নাহ্র শিক্ষা ধারণ করা এবং মেনে চলা আবশ্যক। তাহলে দুনিয়ার জীবন সুন্দর ও সহজ হবে এবং আখেরাতে সফলতা লাভ হবে। জাগতিক ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা হল, দৃষ্টিকে অবনমিত রাখা। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ فِي المَالِ وَالخَلْقِ، فَلْيَنْظُرْ إِلى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْهُ.
তোমাদের কেউ যদি সম্পদ ও শারীরিক ক্ষেত্রে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কাউকে দেখে, তাহলে সে যেন তার চেয়ে নিম্নস্তরের কারো দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৬৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫১৩
নিজের চেয়ে ধনীর দিকে না তাকিয়ে দরিদ্রদের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে, আল্লাহ তাআলা আমাকে কত অযুত লক্ষ মানুষ থেকে ভালো রেখেছেন। কতশত নিআমত দান করেছেন। তখন কৃতজ্ঞ মনোভাব জেগে উঠবে এবং হৃদয় প্রশান্ত থাকবে। একথা হাদীসের অন্য বর্ণনায়ও রয়েছে।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা একথাও বলেছেন যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদ মানুষের পরীক্ষারও একটি মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা ন্যায়ানুগভাবে কমবেশি মাত্রাভেদে মানুষের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করেছেন। সম্পদ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিআমত। আবার বান্দার প্রতি কল্যাণকামিতার বিচারে তিনি যাকে যতটুকু সম্পদ দিয়েছেন, সেটা তার জন্য পরীক্ষার একটি ক্ষেত্রও বটে। পরকালে প্রত্যেককে তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সূরা তাকাসুরের শেষ আয়াতে সে সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ইরশাদ করেন-
ثُمَّ لَتُسْـَٔلُنَّ یَوْمَىِٕذٍ عَنِ النَّعِیْمِ.
অতঃপর সে দিন তোমাদেরকে নিআমতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে (যে, তোমরা তার কী হক আদায় করেছ?) -সূরা তাকাসুর (১০২) : ৮
একথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একাধিক হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে। যুবায়র ইবনুল আওয়াম রা. থেকে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি উক্ত আয়াত সম্পর্কে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে কোন্ নিআমত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে; আমাদের কাছে আছেই তো কেবল পানি আর খেজুর।
নবীজী বললেন, এগুলো সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করা হবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৫৬
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার তাড়নায় এমন সময় ঘর থেকে বের হলেন, যে সময় সাধারণত কেউ বের হয় না। পথে হযরত আবু বকর ও ওমর রা.-কে দেখতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘এসময়ে তোমরা ঘর থেকে বের হলে যে?’
তারা উত্তর দিলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! ক্ষুধার তাড়নায় বের হয়েছি।’
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমারা যে কারণে বের হয়েছ, আমিও সে কারণেই বের হয়েছি। ঠিক আছে, চলো।’
তারা চলতে চলতে আবুল হাইছাম ইবনুত তাইহান নামে এক আনসারী সাহাবীর বাড়িতে উপস্থিত হলেন। ওই সাহাবী তখন বাড়িতে ছিলেন না। তার স্ত্রী তাদেরকে দেখে, অভ্যর্থনা জানালেন। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন। অমুক কোথায়?
ওই সাহাবীর স্ত্রী বললেন, ঘরের জন্য সুপেয় মিষ্টি পানি আনতে গেছেন।
খানিক পরে আবুল হাইছাম এলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর ও ওমর রা.-কে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, আজকে মেহমানের দিক থেকে আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই।
তারপরে তিনি তাদেরকে বাগানে নিয়ে গিয়ে কাঁচা, পাকা ও শুকনো এক ছড়া খেজুর খেতে দিলেন। আর ছাগল জবাই করার জন্য ছুড়ি নিলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, সাবধান, দুধেল মাদী ছাগল জবাই করবে না।
ওই সাহাবী একটি ছাগল জবাই করলেন। সবাই মিলে ছাগলের গোশত, খেজুর ও মিষ্টি পানি পান করলেন। তারা যখন পরিতৃপ্ত হলেন, তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর ও ওমর রা.-কে লক্ষ করে বললেন, আল্লাহর কসম, কিয়ামতের দিন তোমরা এ নিআমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, এই শীতল বাতাস, তাজা খেজুর, সুপেয় পানি। তোমরা ক্ষুধার তাড়নায় ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলে, আর এখন এ নিআমত লাভ করে ফিরে যাচ্ছ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৩৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৬৯
প্রত্যেককেই তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। যথাযথ হিসাব নেওয়া হবে। মৃত্যুর পরে তো কোনো সম্পদই আর নিজের থাকে না। বেঁচে থাকতেও মানুষ যা কামাই করে সবটা তার নিজের নয়। বরং প্রত্যেকের সম্পদের সঙ্গে আরো অনেক মানুষের অনেক রকমের হক জড়িত থাকে। সকলের হক যথাযথভাবে আদায় করা কর্তব্য। আদায় করা না হলে নিজের কামাই করা সম্পদও পুরোটা ভোগ করা নিজের জন্য অন্যায্য হবে এবং আখেরাতে আল্লাহ তাআলার কাছে এ ব্যপারে জবাবদিহিতা করতে হবে। এ মর্মেও অনেক আয়াত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
অতএব ধন-সম্পদ অর্জনে মত্ত থাকা কোনো নেক বান্দার কাজ হতে পারে না। যে সম্পদ অর্জিত হয়ে যায়, তা আল্লাহ তাআলার নিআমত মনে করে শোকর আদায় করা জরুরি। সেইসঙ্গে একে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষার মাধ্যম মনে করে যথাযথ হক আদায় করা আবশ্যক। সম্পদ কামানোর প্রতিযোগিতা এবং অর্জিত সম্পদ নিয়ে গর্ব করা কিছুতেই সমীচীন নয়।
সূরাটির বার্তায় সম্পদের সঙ্গে সন্তান-সন্ততিও অন্তর্ভুক্ত। সন্তানাদি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমানত এবং পরীক্ষার আরেকটি ক্ষেত্র। আল্লাহ তাআলা যার ক্ষেত্রে যেমনটা কল্যাণকর মনে করেন এবং যাকে যেভাবে পরীক্ষা করতে চান তাকে তেমন সংখ্যক ছেলেমেয়ে দান করেন। সন্তানাদির সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ব করা খুবই অন্যায়। প্রত্যেক মা-বাবার দায়িত্ব- ছেলেমেয়েকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তোলা। কাজেই সন্তান বেশি হলে দায়িত্বও বেশি এবং তাদের ব্যাপারে পরকালে জবাবদিহিতার ভয়ও বেশি। এ কথা স্মরণে থাকলে সংখাধিক্য নিয়ে গর্ব না করে বরং আরো বেশি ভীত থাকবার কথা।
সন্তান লালনপালনে অনেকে জাগতিক দৃষ্টিকোণকে প্রাধান্য দেন এবং একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। দুনিয়ার বিচারে তারা কেউকেটা হয়ে গেলে মা-বাবা তাদের নিয়ে গর্ব করে বেড়ান। এ পুরো বিষয়টিই কুরআন-সুন্নাহ্র বিচারে বর্জনীয় এবং গুনাহ। বরং তাদেরকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই এ আমানতের হক রক্ষা হবে। যেমনটা সাহাবায়ে কেরাম করে গেছেন।
আবার সন্তানরা নেক ও মহান হলেও মা-বাবার গর্ব করে বেড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রত্যেককেই তার নিজের আমলের হিসাব দিতে হবে এবং সে অনুযায়ীই তার ফায়সালা হবে। অতএব সন্তানের প্রতি ভালবাসা ও তাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব যেন মা-বাবাকে নিজের নেক আমল ও আখেরাত সম্পর্কে উদাসীন করে না রাখে- এ ব্যাপারেও সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।
এর সঙ্গে সাযুজ্য আরেকটি মন্দ স্বভাব হল, জনবল নিয়ে গর্ব করা। আজকাল এ নিন্দিত মানসিকতা ব্যপক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার অধীনে এতজন, আমার সঙ্গে এতজন, আমার দলে এতজন ইত্যাদি। বহু মানুষ এভাবে জনবল বাড়ানোর ধান্দায় মত্ত। অনেকে আবার বংশের লোকদের নিয়ে গর্ব করে বেড়ায়। আমার বংশের অমুক তমুক এই সেই সাফল্য অর্জন করেছে ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার তার সঙ্গে সম্পর্কিত কত বড় বড় ব্যক্তিত্ব রয়েছে, তাদের কথা যত্রতত্র বলে বেড়ায়। এভাবে নানান কিসিমের বড়ত্ব ও অহংকারের প্রবণতা মানুষের মধ্যে দিনদিন বেড়েই চলেছে। ব্যক্তি থেকে সমাজ পর্যায়ে বহু মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন নেতিবাচক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে দ্বীন-ধর্মের শিক্ষা-শিষ্টতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
যারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনের বাস্তবতা নিয়ে সংশয়বাদী, তাদের জন্যও সূরা তাকাসুরে বিশাল শিক্ষা রয়েছে। সূরাটির তৃতীয় থেকে সপ্তম আয়াত পর্যন্ত বারংবার তাগিদের সাথে আল্লাহ তাআলা পরকালের অবশ্যম্ভাবিতার কথা বলেছেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সূরা তাকাসুরের শিক্ষা ধারণ করার তাওফীক দান করুন।