যিলকদ ১৪৪৫   ||   মে ২০২৪

প্রচণ্ড দাবদাহ ॥
প্রয়োজন জুলুম ও জোরজবরদস্তি বন্ধ করা প্রকাশ্য পাপাচার পরিহার করা

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে চলছে প্রচণ্ড দাবদাহ। অস্বাভাবিক গরমে চরম কষ্ট যাচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ ও প্রাণীকুলের। বলা হচ্ছে, বিগত পঁচাত্তর বছরের মধ্যে এটি রেকর্ড সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এই ধরনের কথা সম্ভবত গত বছরও বলা হয়েছে। এর মানে গরমের মাত্রা বছর বছর বেড়েইে চলেছে। চারদিকে বিশ্লেষণ চলছে, কোন্ জেলায় কত ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠল, আগামী দিনগুলোতে আরো কত বৃদ্ধি পেতে পারে, বৃষ্টি কবে হতে পারে ইত্যাদি বিষয়ে। যদিও দিন শেষে এসকল ভবিষ্যদ্বাণীর অনেক কিছুই বাস্তবে ফলে না। তবুও বিশ্লেষণকারী এবং গণমাধ্যম বসে নেই; তারা এসব নিয়েই ব্যস্ত। কেউ আবার কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোতেও সমাধান খুঁজছেন। কিন্তু আসল কাজের কথা বলছেন অল্প মানুষই। গণমাধ্যমেরও সেদিকে নজর নেই। এই অস্বাভাবিক প্রচণ্ড গরম যে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পরীক্ষা, সতর্কবাণী ও শাস্তির ইঙ্গিতসেটিই তো প্রচার করা দরকার ছিল সবার আগে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত সকলের গণ তওবায় অংশগ্রহণ করে আল্লাহর কাছে বড় কোনো আযাব আসা থেকে পানাহ চাওয়াও তো ছিল সময়ের দাবি।

এই যে বলা হচ্ছে, আমাদের মতো গ্রীষ্মকালীন দেশগুলোতে চল্লিশ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা দীর্ঘদিন বিরাজ করলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে হিটস্ট্রোক ও বিভিন্ন রোগবালাইয়ে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানীও হতে পারে। তো এসব কি সুখকর কোনো খবর? নির্বিকার থাকার কোনো বিষয়? কিন্তু আমরা তো উপর থেকে নিচে সকলে দৃশ্যত এমন ভাবই দেখাচ্ছি।

মুমিন বান্দা মাত্রই বিশ্বাস করে, রোদ-বৃষ্টি, ঠাণ্ডা-গরম সবকিছুই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাতে মানুষের কর্মফলও দায়ী হয়ে থাকে। এই যে মরুভূমির দেশগুলো কয়েক বছর থেকে হঠাৎ করেই মুষলধার বৃষ্টিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে বন্যা হচ্ছে; এগুলোর যৌক্তিক ব্যাখ্যা কি আছে? তাই মুসলমানদের এসকল ক্ষেত্রে আসল করণীয়র পথে অগ্রসর হতে হবে। বন্ধ করতে হবে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সকল জুলুম-নির্যাতন-জবরদখলের মতো জঘন্য অপরাধগুলো। প্রকাশ্যে বেহায়াপনা ও পাপাচারের যে মহড়া এখন চারদিকে চলছে তাও বন্ধ হওয়া দরকার অবিলম্বে। কারণ এসবকিছুই আল্লাহর আযাব নেমে আসার প্রথম সারির কারণ। শুধু ইস্তিসকার নামায পড়া আর গুনাহের ভেতরে ডুবে থেকে বৃষ্টি বা ঠাণ্ডা নেমে আসার দুআ করা যথেষ্ট নয়। দয়াময় মেহেরবান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং তাঁর হেফাযতে রাখুন।

 

মে দিবস <br>

শুধু মে দিবস পালন করলেই কি মেহনতি মানুষ অধিকার পেয়ে যাবে

প্রতি বছরের মতো এবারও পহেলা মে পালিত হল। মেহনতি ও খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের জন্য নিবেদিত মে দিবস। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকার শিকাগোতে শ্রমিক সমাবেশে পুলিশের আক্রমণে হতাহতের ঘটনা থেকে এ দিবসের সূত্রপাত হয়। প্রতি বছরই বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয় সরকারি বেসরকারিভাবে, ঢাকঢোল পিটিয়ে। সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, শ্রমিক নেতা সবাই মেতে ওঠেন শ্রমিকের পক্ষে বয়ান-বক্তৃতা নিয়ে। অনেকে নীতি বাক্যের ফুলঝুরিও ফুটিয়ে থাকেন। এরপর কী? দিন শেষ, মেহনতি মানুষের চিন্তাও শেষ। মাঝে মাঝে তাদের নেতারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ না বোঝে তাদের অধিকার; না বোঝে তাদের দায়িত্ব!

মাসিক আলকাউসারে ইতিপূর্বেও শ্রমিকের দায়িত্ব ও অধিকার নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। চলতি সংখ্যাতেও এ বিষয়ে ইসলামের নীতিমালার প্রতি আলোকপাত করে পৃথক নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। এজন্য আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। আমরা বলতে চাচ্ছি, শুধু দিবস পালন করার দ্বারা কোনো কিছুই হাসিল হয় না। যেমনিভাবে ইসলামের বিধি-বিধানের ওপর আমল না করে, সুন্নাহসম্মত জীবনযাপন এড়িয়ে চলে কেবল ১২ রবিউল আউয়াল পালন করার দ্বারা নবীপ্রেমিক হওয়া যায় না (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তেমনি আমরা যদি শ্রমিক, কৃষক, দিনমজুর তথা মেহনতি গণমানুষের জীবন মানের সত্যিকারের উন্নতির চিন্তা করি, তাহলে সেটি একটি দিবস পালন করার মাধ্যমে, যেমনিভাবে এত বছর অর্জিত হয়নি, এখনো হবে না। বরং ক্ষমতাবান শ্রেণি, দায়িত্বশীল মহল, উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও মালিক সমাজসহ সকল সচেতন মানুষকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে উঠতে হবে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শিল্প হোক বা উন্নয়ন প্রকল্প, কৃষি হোক বা হরেক রকমের খামারযাই বলি না কেন, সবগুলোর মূল বাস্তবায়ন তো মেহনতি লোকের হাত ধরেই হয়ে থাকে। তাই তাদেরকে এড়িয়ে একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের সত্যিকার উন্নয়ন করা কিছুতেই সম্ভব না।

এখানে আরেকটি কথাও বলা দরকার, তা হচ্ছে, মেহনতি ও খেটে খাওয়া মানুষের শুধু অধিকারের কথা বললেই চলবে না। তাদেরকে বছর দুবছর পর বেতন বাড়িয়ে দেওয়াই কিন্তু যথেষ্ট নয়; বরং তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যাপক আয়োজনও করা দরকার। যেন তারা নিজ দায়িত্ব আদায়ে হয়ে উঠতে পারে আরো বেশি দক্ষ ও কর্মঠ। এই যে ব্যাপক একটি অভিযোগ থাকে, শ্রমিক ও দিনমজুররা ঠিকমতো কাজ করে না। একটু সুযোগ পেলেই গাফলতি করে, ধোঁকা দিতে চায়এর জন্য কি ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীরা দায় এড়াতে পারেন। কারণ, ওই শ্রেণির লোকদেরকে দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও সচেতন করে তোলাও তো প্রভাবশালী শ্রেণিরই কাজ। যদি তাদেরকে ব্যাপক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয় এবং ইসলাম তাদেরকে যে অধিকার দিয়েছে তা ঠিকমতো প্রদান করা হয়, তাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছে সে বিষয়ে সচেতন করা হয়, দ্বীনের মৌলিক বিষয় ও তাকওয়া তথা খোদাভীতি তাদের মধ্যে জাগ্রত করার কার্যকর চেষ্টা করা হয়, আমানত-দিয়ানত ও হুকুকের বিষয়গুলোর ইলম যদি তাদেরকে দেওয়া যায়, তাহলে সে সমাজ কি এখনকার মতো সমাজ থাকবে? মূল সমাধান আসলে সে পথেই। আমরা মুসলমানরা তো উল্টো পথেই হাঁটছি। আল্লাহ আমাদের সুমতি দান করুন।

 

 

advertisement