রমযান ১৪৪৫   ||   মার্চ ২০২৪

রমযানের বিরতি
আমাদের ইলমী ও আমলী মাশগালা

মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ

রমযান ও তার আগ-পর মিলিয়ে প্রায় দুই মাস; এক বিরাট অখণ্ড সময়। আমাদের অনেককে এই সময়টাতে মাদরাসার নূরানী পরিবেশের বাইরে থাকতে হয়। উস্তাযগণের সযত্ন নেগরানী ও সৎসঙ্গ থেকে দূরে থাকতে হয়। ফলে এ সময় অনেকে অসৎসঙ্গের খপ্পরে পড়ে যায়। জীবনের মূল্যবান সময় বৃথা চলে যায়, এমনকি বিগত দশ মাসের অর্জিত নূর এ দুই মাসে  অনেকটা ম্লান হয়ে যায়।

একটু সচেতন হলে দুই মাস আমাদের জন্য অনেক অনেক বরকতের যরিয়া হতে পারে। আমার ইলমী-আমলী যিন্দেগীর উন্নতি ও তরক্কির সিঁড়ি হতে পারে।

তাই আসুন, এ দুই মাসকে কর্মমুখর করে তুলি। দ্বীন, দেশ ও জাতির তরে নিজের জীবনকে সমৃদ্ধ করি।

নেযামুল আওকাত বানিয়ে নিম্নোক্ত কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়ার চেষ্টা করি-

১. হাফেজ হয়ে থাকলে অবশ্যই তারাবী পড়াব। মসজিদে পড়ানোর ব্যবস্থা না হলে পারিবারিক পরিবেশে পরিচিতজনদের নিয়ে পড়াব। একজন হাফেজের জন্য তারাবী না পড়ানো নিতান্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়।

২. সবাই আমরা গুরুত্বের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে আদায় করব। তারাবী নামাযে অংশগ্রহণে কোনো অলসতা করব না। রোযা রাখব, মাসনূন দুআ-দরূদের এহতেমাম করব।

৩. মহব্বত, আজমত ও তাদাব্বুরের সাথে প্রতিদিন কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করব। গায়রে হাফেজগণ এই সুযোগে ২৮-২৯-৩০ পারা মুখস্থ করে নেব।

৪. ধারাবাহিকভাবে কুরআন মাজীদের তরজমা শেখা ও আত্মস্থ করার চেষ্টা করব। সংক্ষিপ্ত কোনো তাফসীর মুতালাআ করব।

৫. দৈনিক বিষয়ভিত্তিক দু-একটি হাদীস মুখস্থ করব এবং তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা রপ্ত করে নেব।

৬. প্রতিদিন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত এবং সাহাবা ও সালাফের যিন্দেগী পাঠ করার চেষ্টা করব।

৭. আকাবিরের মাওয়ায়েজ, মাকতুবাত ও মালফূযাত পাঠের চেষ্টা করব।

৮. নাহু-সরফ-ইনশা ইত্যাদি যার যে বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে কিংবা যোগ্যতা আরো শাণিত করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে বিশেষ লেখাপড়ায় মনোযোগ দেব।

৯. নিজের পরিবার ও সামাজিক পরিসরে দ্বীনী দাওয়াত ও তালীমের মেহনত করব।

১০. সর্বোতভাবে অসৎসঙ্গ বর্জন করব। স্মার্টফোনের কাছেও যাব না। অনেকের জন্য স্মার্টফোন الجليس السوء-এর নিকৃষ্ট উদাহরণ। সৎ সাহসের সঙ্গে হিম্মত করে এটা বর্জন করব।

১১. সম্ভব হলে কোনো আহলে ইলম আল্লাহওয়ালার সোহবত গ্রহণ করব এবং ইতিকাফ করব।

 

গ্রন্থনির্দেশিকা

তরজমা ও তফসীরের জন্য পাঠ্য কিতাবসমূহ-

১. এসো কোরআন শিখি। (মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ)

২. বয়ানুল কুরআন। (হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ.)

৩. হেদায়াতুল কুরআন। (মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী রাহ.)

৪. তাফসীরে উসমানী (বাংলা)। (হযরত মাওলানা শাব্বির আহমাদ উসমানী রাহ.)

৫. তাওযীহুল কুরআন (বাংলা)।  (মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী)

৬. সফওয়াতুত তাফাসীর। (শায়েখ আলী আসসাবুনী রাহ.)

৭. আইসারুত তাফাসীর। (শায়েখ আবু বকর আলজাযায়েরী রাহ.)

৮. আততরীক ইলা তাফসীরিল কুরআনিল কারীম। (মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ)

হাদীসের জন্য পাঠ্য কিতাবসমূহ-

১. রিয়াযুস সালেহীন (বাংলা) (অনুবাদ, মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম)

২. মাআরিফুল হাদীস। (মাওলানা মনযূর নোমানী রাহ.)

৩. আলআদাবুল মুফরাদ। (ইমাম বুখারী রাহ.)

সীরাতের জন্য পাঠ্য কিতাবসমূহ-

১. নবীয়ে রহমত। (সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.)

২. ফিকহুস সীরাহ। (সাঈদ রমাদান আলবূতী রাহ.)

৩. সুয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা। (আবদুর রহমান রাফাত পাশা)

৪. সুয়ারুম মিন হায়াতিত তাবিয়ীন। (আবদুর রহমান রাফাত পাশা)

৫. আকাবিরে দেওবন্দের ছাত্র জীবন। (মাওলানা এমদাদুল হক)

আকাবিরের মাওয়ায়েয ও মালফূযাত-এর জন্য পাঠ্য

১. ইসলাহী খুতুবাত। (মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী)

২. ইসলাহী মাজালিস। (মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী) 

৩. আকাবির কা রমযান। (শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রাহ.)

৪. আপবীতি (শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রাহ.)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কিতাবগুলো পড়ার এবং যোগ্যতা অর্জনের এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর তাওফীক দান করুন- আমিন। 

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

 

১০ শাবান ১৪৪৫ হি.

বাদ এশা, মালিবাগ জামিয়া

 

 

advertisement