সেকালের ফেরাউন একালের ফেরাউন
ফিলিস্তিনী মজলুম মুসলমানদের ওপর, বিশেষত ফিলিস্তিনী শিশুদের ওপর জালেম ইসরাইল যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে এটাকে অনেকেই ফেরাউনের সাথে, ফেরাউনের যুগের সাথে তুলনা করছে। এটি অনেকটা প্রাসঙ্গিক। বিগত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হত্যাযজ্ঞগুলো দেখলেও বিষয়টা স্পষ্ট হবে। আর গত শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে গোটা ফিলিস্তিনে ইহুদীদের যে অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চলেছে সেখানেও তারা বিশেষভাবে শিশুদেরকে টার্গেট করেছে। বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে কিংবা শিশুদের জটলা টার্গেট করে করে বোমা মেরেছে।
এ পর্যন্ত হাজার হাজার শিশু তাদের হাতে শহীদ হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য। এ সবকিছু স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনী শিশুদের টার্গেট করছে। ইতিহাসে এধরনের শিশুহত্যাকাণ্ডের নজীর একমাত্র ফেরাউনী শাসনামলেই পাওয়া যায়। ঠিক ইসরাইলের পাশেই সেই ফেরাউনী শাসনের দেশটি অবস্থিত- এযুগের মিশর। এ জাতিও সে গোষ্ঠী থেকেই আসা; অন্তত আত্মিকভাবে তো বটেই।
ইসরাইলীদেরকে এখন অনেকেই ফেরাউন বলছে। বিভিন্ন দেশ থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, তারা এ যুগের ফেরাউন। সে হিসেবে তাদেরকে ফেরাউন বলা বা ফেরাউনী চরিত্রের বলা প্রাসঙ্গিক।
পবিত্র কুরআন পড়লেও বিষয়টা আমরা খুব সহজে বুঝতে পারব। যারা ইতিহাস সম্পর্কে অবগত তারাও জানেন, ফেরাউন কে? সে ছিল একসময়ের মহাসম্রাট। যার কথার বাইরে কারও কিছু করার সাহস ছিল না। তার হুকুমেই সবকিছু চলত। নিজেকে খোদাও দাবি করেছিল সে। সেই ফেরাউনকে একবার এক জ্যোতিষী বলেছিল, অচিরেই এক শিশু জন্ম নেবে, যে ভবিষ্যতে আপনার শাসনকে চ্যালেঞ্জ করবে। তার হাতেই আপনার পতন হবে। তখনকার মানুষ জ্যোতিষীদের বিশ্বাস করত।
দুনিয়ার আর দশজন একনায়ক ও জালেমের ক্ষেত্রে যা হয়, ফেরাউনের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে। বুদ্ধিমান হলে তো সে জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করে আগ থেকেই ক্ষমতা ছেড়ে পালাত- ‘শিশুর হাতে মরার দরকার নেই। আমি নিজেই চলে যাই।’ কিন্তু দুনিয়ার সব জালেম ও একনায়ক একই পথ অবলম্বন করে। তারা যখন শোনে, অমুক তার বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে, সে তার বিরোধী, সে তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, তখন তাকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। হিংস্রতার শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়। কিছুতেই দমে না।
এযুগে আমরা দেখি, দেশে দেশে গুম-খুন-হত্যা-নির্বিচার হত্যা এরকম বহুকিছুই করতে থাকে জালেমরা। সে যুগে ফেরাউনও তা করেছিল। সে বলল, এটা তো সহজ কাজ। যে আমার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করবে সে তো কেবল জন্মলাভ করেছে, শিশু। সে ঠিক করল, সব শিশুকে মেরে ফেলবে। এতেই তো সব সমস্যা একসাথে সমাধা হয়ে যায়। ফেরাউন সকল নবজাতক শিশুকে হত্যা করার নির্দেশ জারি করল। সে অনুযায়ী যার ঘরে যত ছেলে সন্তান হয়েছে সবাইকে হত্যা করা শুরু হয়ে গেল। কিন্তু আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত তো ভিন্ন ছিল। ফেরাউনের পতন অনিবার্য ছিল। যুগ যুগ থেকেই ফেরাউনদের পতন অনিবার্যই থাকে। কারো আগে হয়, কারো পরে।
পরের ইতিহাস সকলেরই জানা। একটি ঘরে মূসা নামক এক ছেলে জন্ম নিল। শিশুটি খুন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় মা আকুল হয়ে গেলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে তার মনে বুদ্ধি এল, শিশুটিকে নদীতে ভাসিয়ে দাও। তাকে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হল। সে শিশু বেড়ে উঠল ফেরাউনেরই ঘরে। পরবর্তীতে তাকেই ধাওয়া করতে গিয়ে ডুবে মরল ফেরাউন ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। এটুকু ইতিহাস তো সকলেরই জানা।
এখান থেকে বারবারই একটা কথা মনে আসছে। সেটা হল, ইসরাইল যে চিন্তা থেকে শিশুদেরকে আগ বাড়িয়ে হত্যা করছে, টার্গেট করে করে শিশুদেরকে হত্যা করছে, একটু বেড়ে ওঠা শিশুদের পাথর নিয়ে প্রতিরোধ চেষ্টা তাদের অপছন্দ লাগে, এজন্য আগেই তাদের শেষ করে দিতে চায়। হয়তো তারা ভয় পায়, এ শিশুদের মধ্য থেকেই কেউ বড় হয়ে যায় কি না! বড় হয়ে আমাদেরকে মারে কি না? আমাদের পতনের কারণ হয় কি না? কিন্তু তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না। তারা মনে করছে, শিশুদের হত্যা করে শেষ করে ফেলবে। কোনো ইসরাইলী দম্ভ করে বলছিল, ‘গাজাকে তারা মিশিয়ে দিয়ে সেখানে পার্ক বানাবে।’ তারা দম্ভ দেখাচ্ছে। তারা জানে না, তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। শিশুহত্যা করেই যে তারা পার পাবে না, এটা তাদের ইতিহাস থেকে শেখা উচিত। কালকে ফেরাউনের ঘরে পালিত শিশু আজ তাকেই চ্যালেঞ্জ করল। বর্তমানে কি সেটা অসম্ভব কিছু? এমন কি হতে পারে না যে, ইসরাইলের ভেতরেই হয়তো বড় হচ্ছে কোনো সালাহুদ্দীন আইয়ুবি কিংবা অন্য নামের কেউ। যে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং তাদের ভরাডুবি তার হাতেই হবে।
এটা মনে রাখা দরকার, ইতিহাসে যারা সবকিছু উল্টে দেওয়ার জন্য আবির্ভূত হন তারা কিন্তু হঠাৎই হন। জানান দিয়ে আসেন না। সালাহুদ্দীন আইয়ুবির বিজয়ের দিনের আগে কেউ জানত না, এ লোকই আবার ক্রুসেডারদের থেকে উদ্ধার করবে ফিলিস্তিন, মসজিদুল আকসা। তাতারিদের আগে কে জানত, এরকম একটা শক্তি আসবে। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সবকিছু শেষ করে দেবে। শিশুহত্যা করে ইসরাইল যা করতে চায় এটা তার জন্য বিধিবাম হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। ইসরাইলের তথাকথিত বন্ধু আরবরাষ্ট্রগুলো... (এখানে মনে রাখতে হবে, এ বন্ধু মানে হল, মুখের বন্ধু এবং মনে রাখা দরকার, এরকম অনেক দেশেই থাকে, আমাদের দেশেও আছে। এগুলো একতরফা বন্ধুত্ব। তাবেদারির বন্ধুত্ব। শুধু দেওয়ার বন্ধুত্ব। পাওয়া খুবই সামান্য।)
এই যে আরবরা এখন মুসলিম ভাইদের, নিজ ভাষাভাষীর, সংস্কৃতির এবং স্বধর্মের মজলুমদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে না, তারা ইসরাইলকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে, ইনিয়ে-বিনিয়ে তার পক্ষই টানছে। বারবার তাঁরা লোকদেখানো মিটিংয়ে একত্রিত হয়। কিন্তু আসল ফয়সালা ইসরাইলের পক্ষেই যায়। কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত তারা নিতে পারেনি। তারা ভাবছে, ইসরাইলের কারণে যদি তাদের ক্ষমতার ক্ষতি হয়, অথবা তাদের এ ভয়ও ভেতরে থাকতে পারে, আজকে ফিলিস্তিনীরা মজবুত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলে, হামাস শক্তিশালী হয়ে উঠলে, তাদের ক্ষমতাকেই চ্যালেঞ্জ করে বসে কি না? এসব ভীতিও তাদের থাকতে পারে। কিন্তু একথা তো বোঝা দরকার এবং ইতিহাস বারবার পড়া দরকার।
ইতিহাসে কোনো সাহসী মহান ব্যক্তি, কোনো বীরসেনা যদি কোনো অঞ্চলে দাঁড়িয়ে যায় তখন সে অঞ্চলেই শুধু সীমিত থাকে না। আজকে ইসরাইলীরা শিশু হত্যা করছে, কালকে যদি বেঁচে যাওয়া কোনো শিশুই বড় হয়ে যায়, তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দেয়, তখন কী হবে? আর সেক্ষেত্রে সে তো কেবল তাদেরকেই চ্যালেঞ্জ জানাবে না; সে আরো বড় থেকে বড় সাহেবদের দিকে আঙুল তুলবে নিশ্চয়। তখন এসব আরবদের কী হবে? এদের ক্ষমতা কি জায়গামতো থাকবে?
ইসরাইলের ধ্বংস অবধারিত সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু সময়ের অপেক্ষা। যারা এমন জুলুম করে তারা পৃথিবীতে বহুদিন টিকে থাকবে না। এটা তো সুনিশ্চিত। কিন্তু আজকে ইসরাইলকে যে আরবরা মৌন ও প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাদের কি শেষরক্ষা হবে? এটা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
ستمگر وقت کا تىور بدل جاۓتو کىا ہوگا
مىرا اسراورتىرا پتھر بدل جاۓ تو کىا ہوگا