হাঁ, এটিই ফিলিস্তিন
তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব
ফিলিস্তিনে চলমান বিপর্যয় মুসলিম উম্মাহ্র জন্য সুকঠিন পরীক্ষা। ফিলিস্তিনে অবস্থিত মাসজিদুল আকসা ও পবিত্র ভূমিগুলো তো শুধু ফিলিস্তিনীদের নয়, শুধু আরবদের নয়, বরং প্রত্যেক মুসলিমের— যে সাক্ষ্য দেয় ও বিশ্বাস করে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।
এই ফিলিস্তিনেই তো কুদসের ভূমি, আকসার ভূমি। মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদীনার মাসজিদুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর বাইতুল মাকদিস হল তৃতীয় বিশেষ মসজিদ। মেরাজের রাতে নবীজী এই মাসজিদুল আকসায় সকল নবীর ইমামতি করেছেন। এই মসজিদ নবীজীর ‘সায়্যিদুল মুরসালীন’ হওয়ার জাজ¦ল্যমান বাস্তব সাক্ষী। যে কিবলার অভিমুখী হয়ে হিজরতের পর টানা ষোল মাস সাহাবায়ে কেরাম নবীজীর সঙ্গে নামায আদায় করেছেন, এই আকসাই তো সেই পবিত্র কিবলা।
ফিলিস্তিন বহু নবী ও রাসূলের স্মৃতি বিজড়িত ভূমি। ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকূব, ইউসূফ, লূত, দাউদ, সুলাইমান, যাকারিয়া, ইয়াহইয়া ও ঈসা আলাইহিমুস সালাতু ওয়াসসালামসহ বহু নবীর মোবারক পদধূলিতে ধন্য ফিলিস্তিনের মাটি। কয়েক হাজার বছর ঈমান ও ইসলামের দাওয়াতে সিঞ্চিত এই মাটি।
ফিলিস্তিনের ভূমি বরকতময় হওয়ার কথা স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা ইসরায় ঘোষণা করেছেন। ফিলিস্তিন বিস্তৃত প্রাচীন শাম অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত, যে শামের জন্য নবীজী দুআ করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের শামে এবং আমাদের ইয়েমেনে বরকত দান করুন’। নবীজী আরো বলেছেন, ‘কল্যাণময়ী শাম! কল্যাণময়ী শাম!’ জিজ্ঞেস করা হল, কিভাবে হে আল্লাহর রাসূল! নবীজী বললেন, ‘রহমানের ফেরেশতাগণ শামের ওপর নিজ ডানা বিছিয়ে দেবেন।’
১৬ হিজরীতে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের পর খলীফায়ে রাশেদ হযরত উমার বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং বহু সাহাবী ও কিবারে তাবিয়ীন এই ভূমি যিয়ারত করেছেন। ফিলিস্তিন বেশ কয়েকজন সাহাবীর বাসভূমি হওয়ারও সৌভাগ্য লাভ করেছে। হযরত উবাদাহ ইবনুস সামিত, শাদ্দাদ বিন আউস, ওয়াসিলাহ ইবনুল আসকা’, আউস ইবনুস সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ সাহাবী শেষ জীবনে ফিলিস্তিনে বাস করেছেন। খলীফা হিশাম বিন আব্দুল মালিকের প্রশ্নের উত্তরে বিখ্যাত তাবেয়ী রজা বিন হাইওয়াহ রহ.-কে ‘সায়্যিদু আহলি ফিলাস্তীন’ বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ইলম আমল যুহদ ও তাকওয়ায় তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনবাসীর সরদার।
ফিলিস্তিন ছিল উম্মাহ্র বহু ইমাম ও মনীষীর জন্মস্থল, যারা জগত জুড়ে ইলমের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। বাইতুল মাকদিসের প্রতি সম্বন্ধ করেই হাদীস ও ফিকহের বহু ইমামকে ‘মাকদিসী’ বলে স্মরণ করা হয়। ‘শুরুতুল আইম্মাতিস সিত্তাহ’ ও ‘আতরাফুল গারাইবি ওয়াল-আফরাদে’র লেখক মুহাম্মাদ ইবনে তাহের মাকদিসীর (৫০৭ হি.) জন্ম কুদস শহরে। ‘আলমুগনী’র লেখক ইবনে কুদামা মাকদিসী জাম্মা‘ঈলী (৬২০ হি.) এবং ‘আলকামাল ফী আসমাইর রিজালে’র লেখক আব্দুল গনী মাকদিসী জাম্মা‘ঈলী (৬০০ হি.); উভয়ের জন্ম ফিলিস্তিনের নাবুলুস শহরের ‘জাম্মা‘ঈল’ এলাকায়। আব্দুল গনী মাকদিসীর খাস শাগরিদ ‘আলআহাদীসুল মুখতারাহ’র লেখক যিয়া মাকদিসী (৬৪৩ হি.) এবং ‘আলবা‘ইছ আলা ইনকারিল বিদা‘ই ওয়াল-হাওয়াদিছে’র লেখক আবূ শামাহ মাকদিসীর (৬৬৫ হি.) নিসবতও বাইতুল মাকদিসকে কেন্দ্র করেই। সারূজীর ‘শরহুল হিদায়াহ’র তাকমিলাহ লেখক ও ইবনুশ শিহনাহর উস্তাদ হানাফী ফকীহ কাযী শামসুদ্দীন ইবনুদ দীরী মাকদিসীর (৮৬৭ হি.) জন্মও কুদস শহরে। এই শহরেই ‘আলআদাবুশ শরইয়্যাহ ওয়াল-মিনাহুল মারইয়্যাহ’, ও ‘আলফুরু’-এর লেখক প্রসিদ্ধ হাম্বলী ফকীহ শামসুদ্দীন ইবনে মুফলিহ মাকদিসীর (৭৬৩ হি.) জন্ম ও বেড়ে ওঠা। উলূমুল হাদীসের মুহাক্কিক ইমাম ‘জামিউত তাহসীল ফী আহকামিল মারাসীল’, ‘কিতাবুল আহকাম’ ও ‘আলমুখতালিতীনে’র লেখক সালাহুদ্দীন আলায়ী মাকদিসী রহ. (৭৬১ হি.) ৭৩১ হিজরীতে কুদস শহরে আগমন করেন, ওফাত পর্যন্ত এই শহরেই তাদরীস ইফতা ও তাসনীফের নানামুখী ইলমী খেদমত আঞ্জাম দেন। যাহাবী রহ. আপন সময়ের ‘আলিমু বাইতিল মাকদিস’ বলে স্মরণ করেছেন তাঁকে।
চলমান যুদ্ধক্ষেত্র গাজার মাটিতেই ইমাম শাফিয়ী রহিমাহুল্লাহ্র (২০৪ হি.) জন্ম। অষ্টম হিজরীর শেষার্ধ থেকে একাদশ হিজরীর মাঝামাঝি পর্যন্ত যে ‘আলুল গাযযী’ গোটা শাম অঞ্চলে প্রায় তিন শতাব্দী ধরে তালীম তাদরীস ইফতা ও কাযার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, তাদের নিসবত কিন্তু এই গাজার দিকেই। পিতা শিহাবুদ্দীন গায্যী (৮২২ হি.), তাঁর পুত্র রযীউদ্দীন গায্যী (৮৬৪ হি,), তাঁর নাতি বদরুদ্দীন গায্যী (৯৮৪ হি.), তাঁর প্রপৌত্র ‘আলকাওয়াকিবুস সাইরাহ বি-আ‘ইয়ানিল মিআতিল আশিরাহ’র লেখক নাজমুদ্দীন গায্যী (১০৬১ হি.) সকলেই ছিলেন নামকরা আলেম। এছাড়াও ‘আলকওলুল মুখতার ফী শারহি গায়াতিল ইখতিসার’ তথা ‘শরহু মাতনি আবী শুজা’র লেখক শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে কাসিম গায্যী (৯১৮ হি.), আদ-দুররুল মুখতারের মূল ‘তানবীরুল আবসারের’ লেখক খতীব তুমুরতাশী গায্যী হানাফীর (১০০৪ হি.) মতো বহু ইমামের নিসবত গাজার দিকে।
ফিলিস্তিনের একটি শহর আসকালান, যেটি এখন দখলদার ইহুদীদের হাতে। এই আসকালানের দিকেই প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবনে হাজার আসকালানীর (৮৫২ হি.) নিসবত, উলূমুল হাদীসের ময়দানে যার কীর্তি অবিস্মরণীয়।
এছাড়াও নাবুলুস, তবারিয়া, আক্কা, রামলাহ ও সাফাদের মতো শহরগুলো ফিলিস্তিনের সমৃদ্ধ ইলমী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আক্কায় ইমাম তাবারানীর জন্ম (৩৬০ হি.-এর কাছাকাছি ওফাত)। সাফাদ শহরের দিকে ‘আলওয়াফী বিল ওফায়াতের’ লেখক সালাহুদ্দীন সাফাদীর (৭৬৪ হি.) নিসবত। রামলার মাটিতে জন্ম নিয়েছেন সুনানে আবু দাউদের বিখ্যাত ভাষ্যকার ইবনে রাসলান শিহাবুদ্দীন রামলী (৮৪৪ হি.)। গাজা, কুদস, আসকালান ও আক্কার মতো ফিলিস্তিনী শহরগুলোতে সোনালী যুগে বহু মুহাদ্দিস ও রুওয়াতে হাদীস জন্মেছেন, বসবাস করেছেন, ইলমে হাদীস চর্চা করেছেন।
ফিলিস্তিনে শেষ যামানায় অবাক করা সব ঘটনা ঘটবে। কিয়ামতের আগে সত্য-মিথ্যার আখেরী লড়াই এবং সত্যের চূড়ান্ত বিজয় ঘটবে এই মাটিতেই। এখানেই ‘বাবে লুদ’ এলাকায় হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম দাজ্জালকে হত্যা করবেন।
উম্মাহ হিসেবে আমরা যদিও নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন কিন্তু ফিলিস্তিন ইস্যু আমাদের একটি মৌলিক সমস্যা, যা থেকে আমাদের দৃষ্টি ফেরানোর বৈধতা কিছুতেই তৈরি হতে পারে না। ফিলিস্তিনে অবিরত রক্ত ঝরছে, পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন শহীদের সংখ্যা বাড়ছে। ফিলিস্তিনের জন্য কত চোখ যে অশ্রু ঝরাচ্ছে! কত বীর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছে! লড়াইয়ের আগুন বুকে জাগ্রত করছে!
সাত দশক ধরে ফিলিস্তিনী জনগণ জায়নবাদী সেনাদের অত্যাচারে পিষ্ট হয়ে আছে। আশ্রয়কেন্দ্র আর তাঁবু তাঁদের বাসস্থানে পরিণত হয়েছে, লাখো ফিলিস্তিনী শরণার্থী দিকবিদিক ঘুরছে। এখন ফিলিস্তিনী জনগণের জীবন মানেই ভয়-শংকা, দুঃখ-দুর্দশা, ধসে যাওয়া ভবন, তালাবদ্ধ শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক বয়কট, হুমকি আর মৃত্যুর অঘোষিত পরোয়ানা, এখানে খাদ্যের মজুদস্থল ও মার্কেট বন্ধ, বিদ্যুৎ, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন। জীবন চলার সামান্য উপায়ও যেন বাকি না থাকে সেই ব্যবস্থা করতে কসুর করেনি জায়নবাদী পিশাচরা।
প্রতি মুহূর্তে ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইয়েরা ভয়াবহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে দিন গুজরান করছেন। যে কোনো সময় বিমানযোগে বোমা হামলা কিংবা ভারী ট্যাংকের অবিরাম গোলাবর্ষণ খুব স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কত মসজিদ যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে! এক হামলায় কত ইমারত ধসিয়ে দেওয়া হচ্ছে! কত নারী বিধবা হচ্ছে! কত শিশু এতীম হচ্ছে! কত গণকবর খোঁড়া হচ্ছে!
ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইয়েরা অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মাথানত করেননি। অদম্য সাহসে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ সেখানে শিশুদের দুধ নেই, আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো হাসপাতাল নেই। হাসপাতাল পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দিচ্ছে হানাদাররা। বাহির থেকে সাহায্য পৌঁছার পথও বন্ধ করে দিচ্ছে। পাথরের নিচে চাপা পড়া আহত শিশু পিপাসায় কাতর হয়ে পানি চাইছে, চিকন নলের সাহায্যে তাকে পানি পৌঁছানো হচ্ছে। অসহায় নারীরা একান্ত প্রয়োজনীয় সামান ব্যাগে নিয়ে প্রস্তুত ঘর ছেড়ে যাওয়ার জন্য। ঘোষণা দিয়ে পরিবারগুলোকে ভবন থেকে বের করে গণহত্যা করছে ইহুদী সেনারা। এমন বীভৎস নারকীয় দৃশ্য দেখে কোনো মুসলিম স্থির থাকতে পারে না। ফিলিস্তিনের এক টুকরো মাটির জন্যও কোনো মুসলিম দখলদার ইহুদীদের সঙ্গে আপোষ করতে পারে না।
দশকের পর দশক সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ, এতীমের অসহায় চিৎকার, বিধবার বুকফাটা কান্নার আওয়াজে ফিলিস্তিনের আকাশ ভারী হচ্ছে। কিন্তু কোথায় ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধন? কোথায় ঈমানী সম্পর্ক রক্ষার দাবি? অভিজাত আরব রক্তের সহজাত বৈশিষ্ট্য আজ কোথায় কীভাবে হারিয়ে গেল?!
আল্লাহর অকাট্য রীতি হল, وَ الْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকীদের জন্য শুভ পরিণাম নিশ্চিত এবং اَنَّ الْاَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصّٰلِحُوْنَ আল্লাহর নেককার ও যোগ্য বান্দারাই এই যমীনের প্রকৃত মালিক। ঈমানওয়ালা যখন ঈমানী দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানায়, চরম গাফিলতি করে, আল্লাহ তাদের পরিবর্তে যমীনে অন্য ঈমানদার জাতিকে প্রতিষ্ঠা দান করেন, যাদের অসাধারণ কিছু গুণ আছে। তাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন, তারাও আল্লাহকে ভালবাসে, তারা মুমিনদের প্রতি কোমল আর কাফিরদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর রাহে জিহাদ করে; নিন্দুকের নিন্দা পরোয়া করে না।
সীমান্তপ্রহরায় নিয়োজিত হে সজাগ সতর্ক মুজাহিদ! পাহাড়সম অটল অবিচল ও হার না মানা আপোষহীন হে ফিলিস্তিনী! হে বরকতময় ভূমির দৃঢ়চেতা সন্তান! আমরা ক্ষমা চাই, উম্মাহ্র কিছু সদস্যের মাঝে যদিও তোমাদের প্রতি অন্যায় ও অপমানকর আচরণ দেখতে পাও, কিন্তু বিশ্বাস করো, আমরা অন্তর থেকে তোমাদের সাথেই আছি, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন।
হে আল্লাহ! ফিলিস্তিনী মুসলিমদের রক্ষা করুন, গোটা দুনিয়ার নির্যাতিত মুসলিমদের জালিমের হাত থেকে মুক্তি দান করুন, সংকট থেকে উদ্ধার করুন।
হে আল্লাহ! আপনার রাহে জিহাদরত ভাইদের সাহায্য করুন, তাঁদের মাঝে সম্প্রীতি বজায় রাখুন, তাঁদেরকে একতাবদ্ধ থাকার তাওফীক দিন, বিজয়ের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল উপকরণ তাদের জন্য সহজ করে দিন, বাইতুল মাকদিস বিজয়ের পথ মসৃণ করে দিন।
হে আল্লাহ! ফিলিস্তিনী মুজাহিদগণকে তাদের দলভুক্ত করুন, যাদেরকে আপনি কোনো অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা যথাযথভাবে নামায আদায় করে, যাকাত দেয়, সৎ কাজের আদেশ দেয়, অসৎকাজে বাধা দেয়। নিশ্চয়ই সকল বিষয়ের উত্তম পরিণাম একমাত্র আল্লদাহ্র হাতে।
[আরবদের খুতবা থেকে সংগৃহিত ও অনূদিত
সংগ্রহে : মাওলানা হুসাইন আহমাদ
অনুবাদ : মাওলানা আবু আনাস সালমান]