জুমাপূর্ব বয়ান
মসজিদে আকসার একমাত্র হকদার মুসলিম উম্মাহ
হামদ ও সালাতের পর...
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বরকত, হেদায়েত ও ইবাদতের সর্বপ্রথম ও সবচে মর্যাদাপূর্ণ ঘর বানিয়েছেন বাইতুল্লাহকে। যার চারপাশ ঘিরে আছে আলমাসজিদুল হারাম। ইবাদত ও হেদায়েতের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই জমিনে সর্বপ্রথম যে ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছেন, সেটি মসজিদে হারাম। এরপর মসজিদে আকসা, যার আরেক নাম বাইতুল মাকদিস। তার অনেক পর এসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে নির্মিত হয় মসজিদে নববী। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বানানো সর্বপ্রথম মসজিদ মসজিদে কুবা, তারপর মসজিদে নববী।
মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা ও মসজিদে নববী- এই তিনটি মসজিদ অন্য সকল মসজিদের চেয়ে বরকতপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ। হেদায়েত, ঈমান ও আমন (নিরাপত্তার)-এর ক্ষেত্রে এই তিন মসজিদের অবদান সবচেয়ে বেশি। যার বা যাদের এই তিন মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক বেশি এবং মজবুত হবে, সে তত বড় ঈমানদার হবে। তার আমানতও তত মজবুত হবে। আর সে তত বেশি নিরাপদ থাকবে। তিনটা বিষয়- ঈমান, আমানত ও আমন বা নিরাপত্তা। এই বিষয়গুলোর ফায়দা হাসিল করতে হলে এই তিন মসজিদ তথা- বাইতুল্লাহ, মসজিদে আকসা এবং মসজিদে নববীর সাথে গভীর ও মজবুত সম্পর্ক রাখতে হবে।
তিন মসজিদের একই বার্তা
তিন মসজিদেরই বার্তা এক- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ লা-শারীকালাহ্’। তিন মসজিদের একই বার্তা-তাওহীদ।
দুনিয়ার সকল মসজিদেরও একই বার্তা। কারণ ছোট হোক আর বড়, অন্য সকল মসজিদ ওই তিন মসজিদেরই অধীন।
তাওহীদের সবক মানুষ কোত্থেকে নেবে? সেজন্য তাওহীদ যেমন এই তিন মসজিদের প্রথম বার্তা, একইসঙ্গে পরবর্তী বার্তাটি হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাওহীদের যে দাওয়াত নিয়ে আদম আ. থেকে শুরু করে যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি ঈমান এনে তাঁদের শেখানো পথে চলা এবং আল্লাহর ইবাদত করা। সাথে সাথে তিন মসজিদেরই বার্তার মধ্যে একথাও আছে যে, হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সর্বশেষ নবী ও আখেরী রাসূল। তাঁর আবির্ভাব বা তাঁকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওত দান করার পর থেকে ইবাদত ও হেদায়েতের একমাত্র রাহবার তিনি। তাঁকে আল্লাহ যে শরীয়ত দান করেছেন, তাঁর প্রতি হেদায়েতের যে কিতাব কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ করেছেন, তাঁর যিন্দেগীকে যে আমাদের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন- ব্যস, এই কুরআন, শরীয়ত, সুন্নত ও উসওয়ায়ে হাসানাহ- এর মাধ্যমেই কেবল তুমি আল্লাহকে পেতে পার, জান্নাত পেতে পার। এটা বাইতুল্লাহ্রও বার্তা, মসজিদে আকসারও বার্তা, মসজিদে নববীরও বার্তা।
বাইতুল্লাহর নবনির্মাণের সময় ইবরাহীম আ. যে রাসূল প্রেরণের জন্য দুআ করেছিলেন তিনি কে?
নূহ আ.-এর তুফানের সময় থেকে বা অন্য যে কোনো সময় থেকে মানুষ বাইতুল্লাহ শরীফের চিহ্ন খুঁজে পাচ্ছিল না। ইবরাহীম আ.-কে আল্লাহ তাআলা এর চিহ্ন দেখিয়ে দিয়েছেন। ইবরাহীম আ.-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এই ঘরের নবনির্মাণের কাজ করিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলার নির্দেশে ইবরাহীম আ. নিজের ছেলে ইসমাঈল আ.-কে সঙ্গে নিয়ে বাইতুল্লাহ্র নবনির্মাণ করেছিলেন। কুরআন কারীমের সূরা বাকারার মধ্যে আল্লাহ তাআলা সেকথাও বলেছেন-
وَ اِذْ يَرْفَعُ اِبْرٰهٖمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَ اِسْمٰعِيْلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ.
[এবং (সেই সময়ের কথা চিন্তা কর) যখন ইবরাহীম বাইতুল্লাহ্র ভিত উঁচু করছিল এবং ইসমাঈলও (তার সাথে শরীক ছিল এবং তারা বলছিল) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ থেকে (এ সেবা) কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি এবং কেবল আপনিই সব কিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। -সূরা বাকারা (০২) : ১২৭]
বাইতুল্লাহর নবনির্মাণের সময় ইবরাহীম আ. আল্লাহর কাছে যেসব দুআ করেছেন, তার মধ্যে একটা দুআ ছিল এই-
رَبَّنَا وَ ابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيٰتِكَ وَ يُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ يُزَكِّيْهِمْ.
হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্যে এমন একজন রাসূলও প্রেরণ করুন, যে তাদেরই মধ্য হতে হবে এবং যে তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দেবে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে। -সূরা বাকারা (০২) : ১২৯
ইবরাহীম আ. আল্লাহর নিকট যে রাসূলের দুআ করেছিলেন সেই রাসূল কে? শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বাইতুল্লাহ্র বার্তা আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আ.-এর যবানে জানিয়ে দিয়েছেন। সেখানে রয়েছে আখেরী নবীর আগমনের বার্তাও। আখেরী নবীর জন্য আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আ.-এর দুআ কবুল করেছেন এবং ইবরাহীম আ.-এর সন্তান হযরত ইসমাঈল আ.-এর খান্দানের মধ্যেই হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আখেরী নবী ও রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সকলের হেদায়েত ও ইবাদতের রাহবার।
মিরাজ ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীজীর প্রতি সর্বোচ্চ ইকরাম
ইবরাহীম আ. দুআ করেছেন; কিন্তু তার অনেক আগেই, অর্থাৎ ঊর্ধ্বজগতে আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আখেরী নবী বানানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। মানবজাতির বাবা হযরত আদম আ.-এর সৃষ্টিরও আগে। সুতরাং বাইতুল্লাহ বা মসজিদে হারামের বার্তার মধ্যে যেমন তাওহীদের কথা আছে, তেমনি খতমে নবুওতের কথাও আছে। মসজিদে আকসার বার্তার মধ্যেও তাই আছে।
ইবরাহীম আ.-এর ছেলে ইসহাক আ.। তাঁর ছেলে ইয়াকুব আ.। সে থেকে হযরত ঈসা আ. পর্যন্ত নবুওতের যে ধারা, বেশিরভাগ নবীই হযরত ইসহাক আ.-এর খান্দানে এসেছেন। তাঁদের সবার ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে ছিল, আখেরী নবী আসার পরে সবাইকে তাঁরই অনুসরণ করতে হবে। হাদীসে তো একথাও এসেছে-
وَلَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلّا اتِّبَاعِي.
মূসা বেঁচে থাকলে আমার অনুসরণই করতেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫১৫৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৬৯৪৯; শুআবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস ১৭৪
মুসা আ.-এর শরীয়তে অনেক নবী তো এসেছেন। সবাই তাওরাতের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। তাওরাত-ইঞ্জিলের বার্তার মধ্যেই আছে শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের বার্তা।
ঈসা আ. তো সরাসরিই বলতেন-
وَ مُبَشِّرًۢا بِرَسُوْلٍ يَّاْتِيْ مِنْۢ بَعْدِي اسْمُهٗۤ اَحْمَدُ.
(আর আমি তোমাদের কাছে এসেছি) সেই রাসূলের সুসংবাদদাতারূপে, যিনি আমার পরে আসবেন এবং যার নাম হবে ‘আহমাদ’। -সূরা সাফ্ (৬১) : ৬
আগের নবীরাও আখেরী নবীর ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। সেই হিসেবে মসজিদে আকসার মেহরাবে কতবার যে উচ্চারিত হয়েছে আখেরী নবীর কথা, সে তো আল্লাহ্ই জানেন! আর বিষয়টিকে আল্লাহ তাআলা চূড়ান্ত করে দিয়েছেন মিরাজের রাতে। ইরশাদ হয়েছে-
سُبْحٰنَ الَّذِيْۤ اَسْرٰي بِعَبْدِهٖ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَي الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا الَّذِيْ بٰرَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ ا ٰيٰتِنَا اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ.
পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাত্রি বেলায় মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু দেখেন। -সূরা বনী ইসরাইল (১৭) : ১
মদীনা শরীফে হিজরত করার আগের কথা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওত লাভের আট-নয় বছর পরে- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে এই বিশাল বড় মুজিযা দান করলেন। এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সর্বোচ্চ ইকরাম। এত বড় ইকরাম, যা আল্লাহ তাঁর আর কোনো বান্দাকে করেননি।
ওই মিরাজ কীভাবে হয়েছে? মিরাজ বাইতুল্লাহ থেকে শুরু হয়েছে। রাতের সামান্য অংশের মধ্যে সবকিছু আল্লাহ তাআলা তাঁকে দেখিয়ে দিয়েছেন। এটা ছিল আল্লাহ তাআলার অনেক বড় কুদরত ও মেহেরবানী। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা খাতামুন্নাবিয়্যীন বানাবেন, সেজন্য মিরাজের মাধ্যমেই তাঁর প্রিয় হাবীবকে ঊর্ধ্বজগতের সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছেন। একেক আসমান করে করে সেই ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পর্যন্ত নিলেন, যে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’র ওপরের দিকের কেউ কখনো ‘সিদরাতুল মুনতাহা’র নিচের দিকে নেমে আসেনি। আসমান-জমিনের এখন পর্যন্ত কতটুকু জানতে পেরেছে মানুষ, কীবা জানে তারা? বিজ্ঞান কী জানে? বিজ্ঞান এখনো প্রথম আসমানেও পৌঁছাতে পারেনি। প্রথম আসমানের নিচে যে মহাকাশ, তাকে কেন্দ্র করেই বিজ্ঞানের যত গবেষণা।
সায়্যিদুল মুরসালীন হওয়ার প্রকাশ হয়েছে বাইতুল মাকদিসে ইমামতির মধ্য দিয়ে
তো এই মিরাজের জন্য আল্লাহ তাআলা চাইলে সরাসরি বাইতুল্লাহ থেকেই নবীজীকে ঊর্ধ্বজগতে নিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু তা না করে তাঁকে প্রথমে নিয়ে গেলেন বাইতুল মাকদিসে। সেটা কেন? কেন আল্লাহ এমন করলেন? সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফরসঙ্গী হিসেবে তো জিবরীল আ. ছিলেনই; সাথে রাসূলুল্লাহ্র আগের যত নবী ছিলেন সবাইকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুদরতিভাবে হাজির করলেন। এরপর আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার ইমামতি করলেন। সবাই খাতামুন্নাবিয়্যীন শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে নামায পড়লেন।
একমাত্র ঈসা আ. ছাড়া অন্য সকল নবীই তো রাসূলুল্লাহ্র আগে ইনতেকাল করেছেন। অন্য কেউ জীবিত আছেন বলে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল নেই। যদিও আরো দু-একজনের কথা ইতিহাসের কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলোর মজবুত কোনো ভিত্তি নেই। একমাত্র ঈসা আ. সম্পর্কেই কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা জানতে পারি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে জীবিত রেখেছেন।
ঈসা আ. তো হায়াতে আছেন, আর আগের যত নবী ইনতেকাল করে গেছেন, তাঁদের সবাইকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর কুদরতে জমা করেছেন। এখন কি যে শরীর নিয়ে তারা কবরে গিয়েছেন, হুবহু সেই শরীরেই আল্লাহ বাইতুল মাকদিসে তাঁদের হাজির করেছেন, নাকি সূরতে মেছালী বা হুবহু এই দেহ নয়; অন্য কোনো সূরতে আল্লাহ তাআলা হাজির করেছেন, সেটা আল্লাহ্ই জানেন। কিন্তু তাঁদেরকে যে বাইতুল মাকদিসে হাজির করেছেন- একথা সহীহ হাদীসে আছে। কীভাবে হাজির করেছেন- তার বিস্তারিত বিবরণ নেই।
যাইহোক, সবাই হাজির হয়ে শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে নামায আদায় করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁকে যেমন খাতামুন্নাবিয়্যীন ও ইমামুল আম্বিয়াও বানিয়েছেন, তেমনি তাঁকে সায়্যিদুল মুরসালীনও বানিয়েছেন। তার একবার প্রকাশ ঘটিয়েছেন এই দুনিয়াতে- মে‘রাজের রাতে বাইতুল মাকদিসে তাঁর ইমামতির মাধ্যমে। তিনি সবার ইমামতি করেছেন। আরেকবার প্রকাশ ঘটাবেন হাশরের ময়দানে মাকামে মাহমুদে ও শাফাআতে কুবরার মাধ্যমে।
বাইতুল মাকদিসে ইমামতির মাধ্যমে এই বার্তা দেওয়া হল যে, তিনি সায়্যিদুল মুরসালীন, তিনি খাতামুন্নাবিয়্যীন। এই মসজিদে যত নবী ইমামতি করেছেন, মসজিদে আকসাতে দ্বীন-শরীয়তের যত তালীম হয়েছে, সব এখন ফিরে এসেছে শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে। সবাইকে এখন তাঁরই অনুসরণ করতে হবে। তাঁকে যে কিতাব আল্লাহ তাআলা দান করেছেন, তা শিখতে হবে। আল্লাহ বলেন, তাঁর যিন্দেগীকে আমি তোমাদের জন্য ‘উসওয়া হাসানা’ তথা উত্তম ও নিখুঁত-নির্ভুল আদর্শ বানিয়েছি। মিরাজে সকল নবীকে আল্লাহ তাআলা শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুক্তাদী বানিয়ে এই বার্তা দিয়ে দিয়েছেন। এখন আগের সকল নবীর অনুসারীদের এই আখেরী নবীরই অনুসরণ করতে হবে। মসজিদে হারাম আর বাইতুল মাকদিসের যে বার্তা, সেই বার্তাটাই উচ্চারিত হয়েছে মসজিদে নববীতে-
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَ لٰكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَ خَاتَمَ النَّبِيّٖنَ وَ كَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا.
(হে মুমিনগণ!) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন, কিন্তু সে আল্লাহর রাসূল এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ। আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৪০
বাইতুল মাকদিসের প্রকৃত হকদার কে?
বাইতুল মাকদিসের প্রকৃত হকদার কে? কারা মসজিদে আকসার হকদার? কারা এই মসজিদের মেহরাবে ইমামতি করার অধিকার রাখে? এই মসজিদের মেহরাব-মিম্বার তো নবীদের হাতেই ছিল। সকল নবী তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন এবং সকল নবী আখেরী যামানার জন্য শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। কাজেই যারা তাওহীদে বিশ্বাসী এবং এই আখেরী নবী খাতামুন্নাবিয়্যীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী, তাঁর নবুওত ও খতমে নবুওতের প্রতি যাদের ঈমান রয়েছে, একমাত্র তারাই মসজিদে আকসার হক রাখে। যারা তাওরাতকে বিকৃত করেছে, মূসা আ.-এর শরীয়তকে বিকৃত করেছে, যারা ঈসা আ.-কে হত্যা করতে চেয়েছে এবং তাদের দাবি, তারা নাকি হত্যা করেও ফেলেছে, অথচ আল্লাহ বলেছেন, না, বরং-
وَ مَا قَتَلُوْهُ وَ مَا صَلَبُوْهُ وَ لٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ.
অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং শূলেও চড়াতে পারেনি; বরং তাদের
বিভ্রম হয়েছিল। -সূরা নিসা (৪) : ১৫৭
কখনো পারেনি তারা নবী ঈসা আ.-কে হত্যা করতে। শূলে চড়ানো তো দূরের কথা; আল্লাহ তাআলা তাঁকে নিজ হেফাজতে আসমানে নিয়ে গেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
بَلْ رَّفَعَهُ اللهُ اِلَيْهِ وَ كَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا.
বরং আল্লাহ তাকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন। বস্তুত আল্লাহ মহা ক্ষমতার অধিকারী, অতি প্রজ্ঞাবান। -সূরা নিসা (৪) : ১৫৮
তো যে মসজিদের মিম্বারে তাওহীদ এবং ঈমানের দাওয়াত উচ্চারিত হয়েছে, খাতামুন্নাবিয়্যীনের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারিত হয়েছে, সে মসজিদের মিম্বার আর মেহরাবের অধিকার কি এই ইহুদী-খ্রিস্টানরা রাখে, যারা তাওরাত ও ইঞ্জিলকে বিকৃত করেছে, মূসা আ. ও ঈসা আ.-এর শরীয়তকে বিকৃত করেছে, আল্লাহর নবীদের হত্যা করেছে, তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, ঈসা আ.-এর ব্যাপারে কুফরী ও শিরকী আকীদা পোষণ করছে? কখনোই না। তারা যখনই তাদের নবীদের শরীয়ত বিকৃত করে ফেলেছে এবং শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসার পর তাঁকে নবী হিসেবে গ্রহণ করেনি, মানেনি, তাদের আর অধিকার থাকেনি। কীসের অধিকার তাদের? নিজেদের নবীদের কিতাব ও শরীয়ত বিকৃত করার পরই তারা বাইতুল মাকদিসের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। এরপর আখেরী নবীকে পাওয়ার পরও যখন তারা তাঁকে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করেনি তখন আবার তাদের অধিকার থাকে কীভাবে?
হাঁ, ইহুদী ও খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গ্রহণ করেছেন তারা সৌভাগ্যবান। তারা ‘খায়রে উম্মত’-এর মধ্যে শামিল আছেন।
বাস্তবতা হল, হেদায়েত সবার কিসমতে জোটে না। মদীনাতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সর্বোচ্চ সম্মান দান করেছেন। তাদেরকে মদীনা, যা এমন দারুল ইসলাম, দুনিয়া এরচেয়ে পবিত্র দারুল ইসলাম আর কখনো দেখেনি, সেই দারুল ইসলামে তাদের থাকতে দিয়েছেন। তাদেরকে এই দারুল ইসলামের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাদের সাথে সন্ধিচুক্তি করেছেন। শর্ত-শারায়েত লিখিত হয়েছে যে, তোমরা এভাবে এভাবে এখানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাক। তোমরা তোমাদের ধর্ম মেনেই থাক।
আহা, এই আখেরী নবী, যাঁর ব্যাপারে বলা হয়েছে, মূসা আ. জীবিত থাকলে এই নবীরই অনুসরণ করতেন, ঈসা আ. আসমানে জীবিত আছেন, কিয়ামতের আগে আবার দুনিয়াতে আসবেন এবং এই নবীর শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসারী হয়েই আসবেন, এই নবীর ওপর যে কিতাব ও শরীয়ত নাযিল হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করার জন্যই আসবেন, এমন নবীকে এই ইহুদীরা গ্রহণ করতে পারেনি। (বরং তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এমনকি তাঁকে হত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছে।) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে মদীনায় থাকতে দিয়েছেন, কিন্তু নিজেরা গাদ্দারি করে করে, নিমকহারামি করে করে সেই অধিকারও শেষ করেছে। তাদের বড় বড় তিনটা গোষ্ঠী- বনু কাইনুকা, বনু কুরাইযা ও বনু নযীর। আল্লাহ তাদের কত সম্মান দিয়েছিলেন! আখেরী নবী তাদের কত সম্মানিত করেছিলেন!! মদীনার নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সমস্ত চুক্তি লঙ্ঘন করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে করে নিজেদেরকে তারা শেষ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেই দিয়েছেন-
ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ اَيْنَ مَا ثُقِفُوْۤا اِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللهِ وَ حَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ وَ بَآءُوْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَ ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيٰتِ اللهِ وَ يَقْتُلُوْنَ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّ كَانُوْا يَعْتَدُوْنَ.
তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাক, তাদের ওপর লাঞ্ছনার ছাপ মেরে দেওয়া হয়েছে, অবশ্য আল্লাহর তরফ থেকে যদি কোনো উপায় সৃষ্টি হয়ে যায়, কিংবা মানুষের পক্ষ থেকে কোনো অবলম্বন বের হয়ে আসে, (যা তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করবে) তবে ভিন্ন কথা। এবং তারা আল্লাহর ক্রোধ নিয়ে ফিরেছে, আর তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অভাব। এর কারণ এই যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। (তাছাড়া) এর কারণ এই যে, তারা অবাধ্যতা করত ও সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত থাকত। -সূরা অলে ইমরান (৩) : ১১২
এভাবেই তাদের যিন্দেগী কেটেছে। কিন্তু তারপরও তারা নিজেদের বদখাসলতগুলো ছাড়েনি। কুরআন কারীমের সূরা বাকারায় আল্লাহ তাআলা ইহুদীদের একেক বদখাসলত ধরে ধরে আলোচনা করেছেন। দুইটা উদ্দেশ্য। এক তো তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, তাদের পূর্বপুরুষেরা আল্লাহ এবং নবীদের সাথে কী কী আচরণ করেছে? কী কী ষড়যন্ত্র করেছে? কী কী বেয়াদবি করেছে?
আরেক হল, উম্মতে মুসলিমাকে সতর্ক করা। দেখো, তোমরা কিন্তু এমন হয়ো না!
এই হল মুসলিম আর ইহুদী-খ্রিস্টানদের মাঝে পার্থক্য।
বাইতুল মাকদিস বিজয়
বাইতুল মাকদিস ১৬ হিজরীতে, অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতেকালের পাঁচ বছর পর হযরত উমর রা.-এর খেলাফতকালে মুসলমানদের হাতে এসেছে, কীভাবে এসেছে, ওই ইতিহাস শুনলেই ঈমান তাজা হয়ে যায়। ঈমান যিন্দা হয়ে যায়। আবু উবাইদা রা.সহ সাহাবীগণ যখন বাইতুল মাকদিসের ফিলিস্তিন-এলাকা ঘেরাও করলেন, তাঁরা চেয়েছেন, যাতে কোনো রক্তপাত না হয়। খ্রিস্টানরা কত ধরনের জুলুম-অত্যাচার করেছে, সব তাঁরা ভুলে গিয়ে অত্যন্ত সুন্দর ব্যবস্থাপনায় তাদের নিরাপত্তা দিয়ে সন্ধির মাধ্যমে মুসলমানরা বাইতুল মাকদিস গ্রহণ করেছেন। এভাবে বাইতুল মাকদিসের যারা প্রকৃত হকদার, তাদের হাতে এসেছে এই মসজিদ।
১৬ হিজরীতে স্বয়ং হযরত উমর রা. বাইতুল মাকদিসে গিয়ে মসজিদ পরিষ্কার করেছেন। ওরা কেবল কুফর-শিরকের নাপাকি নয়; বরং গান্ধা-আবর্জনা দিয়ে ভরে রেখেছিল মসজিদের একটা অংশ। উমর রা. নিজহাতেও অনেকগুলো সাফ করেছেন, লোক দিয়েও সাফ করিয়েছেন। মুসলমানেরা মসজিদ সাফ করেছেন এবং সন্ধি করেছেন, এই এই শর্তে তোমরা এখানে থাকতে পারবে। কোনো সমস্যা নেই।
এভাবে বাইতুল মাকদিস এসেছে মুসলমানদের হাতে। মারা যাওয়া তো দূর; একটা লোকেরও কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। প্রায় পাঁচশ বছর মুসলমানদের হাতে ছিল বাইতুল মাকদিস। এরপর খ্রিস্টানরা এসে আবার এটা দখল করল। দখল করার সময় মুসলমানদের ব্যাপকহারে হত্যা করল। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানি, মাত্র নব্বই বছরের মধ্যে আল্লাহ তাআলা আবার সালাউদ্দীন আইয়ুবীর মাধ্যমে বাইতুল মাকদিস দান করেছেন মুসলমানদের হাতে। এরপর হাজার বছরের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ছিল মুসলমানদের হাতে।
১৯৪৮ সালে এসে ইহুদীদেরকে এনে বসানো হল। ব্রিটিশরা বসিয়েছে এদেরকে।
প্রথমে জবরদস্তি একটু জায়গা নিল, এরপর শুরু হল একটার পর একটা দখল করা। দখল করে যাচ্ছে, একের পর এক জুলুম করে যাচ্ছে। বাইতুল মাকদিসের সম্মান নষ্ট করছে, মুসলমানদের হত্যা করছে, মেয়েদের হত্যা করছে, শিশুবাচ্চাদের পর্যন্ত হত্যা করছে। আর সবাই বসে বসে তামাশা দেখছে!
কেন? কারণ আমরাও তো আসলে এমনই। আমাদের আখেরী নবীর আদর্শের ওপর আমরা কতটুকু আছি? এক আফগানিস্তানের ইমারতে ইসলামিয়া ছাড়া কোনো একটা মুসলিম দেশ কি আছে, যেখানে ইসলামী হুকুমত আছে? আল্লাহ তো দেখছেন সব! ১৯৪৮ থেকে ২০২৩, এই পর্যন্ত কত ধরনের যে জুলুম তারা করেছে, করে যাচ্ছে। চুক্তি লঙ্ঘন তো ওদের একেবারে স্বভাবের মধ্যেই আছে। তাছাড়াও আরো যত ন্যাক্কারজনক কাজ আছে, সবই তারা করছে।
এবার সম্ভবত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর একটু কুদরত দেখাচ্ছেন। ফিলিস্তিনের মুজাহিদ ভাইদের হাতে কী আছে? কিন্তু ওদের সঙ্গে তো দুনিয়ার সব সুপার পাওয়ার। এরপরও মোটামুটি এবার কিছুটা হলেও ইহুদীরা ভয় পাচ্ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুদরতিভাবে হিম্মত দিয়েছেন মুজাহিদদেরকে। এখন আমাদের সবার দায়িত্ব হল সালাতুল হাজত পড়ে পড়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা। বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফার করা। আমাদের গোনাহ্র কারণেই এই মুজাহিদ এবং নারী-শিশুরা কষ্ট পাচ্ছে। এই জালিমরা মসজিদে আকসার মতো পবিত্র জায়গা, যেখান থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ হল, সেই জায়গা তারা অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছে।
খুব দুআ করি, এবারই যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাইতুল মাকদিস ফাতাহ করে দেন! ফিলিস্তিনকে আল্লাহ তাআলা বিজয় দান করেন! ইসরাইলকে আল্লাহ তাআলা ধ্বংস করে দেন!
এদের জমিনের ওপরে থাকার অধিকার নেই। নিজেরাই নিজেদের অধিকার নষ্ট করে ফেলেছে। সবাই খুব দুআ করি! ইসতেগফার করি! বেশি বেশি সালাতুল হাজত পড়ি। ‘কুনূতে নাযেলা’-এর দুআ যাদের মুখস্থ আছে, মুনাজাতে পড়ব। নফল নামাযে পড়ব। সিজদার মধ্যে পড়ব। বিতরের নামাযে দুআয়ে কুনূত যেটা পারি সেটা তো পড়ব, কুনূতে নাযেলাও পড়ব। যাদের মুখস্থ নেই, মুখস্থ করে ফেলতে পারি।
আমরা এই দুআগুলো পড়তে পারি-
رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَي الْقَوْمِ الْكٰفِرِيْنَ.
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ اِسْرَافَنَا فِيْۤ اَمْرِنَا وَ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَي الْقَوْمِ الْكٰفِرِيْنَ.
* * *
اللّٰهُمَّ عَذِّبِ الْكَفَرَةَ، وَأَلْقِ فِي قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ، وَخَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمْ، وَأَنْزِلْ عَلَيْهِمْ رِجْزَكَ وَعَذَابَكَ، اللّٰهُمَّ عَذِّبِ الْكَفَرَةَ أَهْلَ الْكِتَابِ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ، وَيُكَذِّبُونَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُونَ أَوْلِيَاءَكَ، اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ، وَاجْعَلْ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَالْحِكْمَةَ، وَثَبِّتْهُمْ عَلٰى مِلَّةِ نَبِيِّكَ، وَأَوْزِعْهُمْ أَنْ يُوَفُّوا بِالْعَهْدِ الَّذِي عَاهَدْتَهُمْ عَلَيْهِ، وَانْصُرْهُمْ عَلٰى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ، إِلٰهَ الْحَقِّ، وَاجْعَلْنَا مِنْهُمْ.
সেই সঙ্গে আমরা বেশি বেশি দুআ ইউনুস পড়ব।
আল্লাহ তাআলা ভরপুর তাওফীক দান করুন- আমীন।
وآخِرُ دَعْوانَا أنِ الحمدُ لِلهِ رَبِّ العالَمِين.
[জুমাপূর্ব বয়ান
২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হি. মোতাবেক ১৩-১০-২০২৩ ঈ.]