দরূদ শরীফ স্বতন্ত্র ইবাদত একে রসম বানাবেন না
দরূদ শরীফ স্বতন্ত্র ইবাদত
একে রসম বানাবেন না
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা অজস্র বৈশিষ্ট্য আর মর্যাদা এবং গুণ ও সৌন্দর্যে ভূষিত করেছেন। তার নাম ও সুনামকে করেছেন সমুন্নত। বলেছেন-
ورفعنا لك ذكرك ورفعنا لك ذكرك
অর্থাৎ আর হে নবী আমি কি আপনার নামকে বুলন্দ করিনি? (সূরা আলাম নাশরাহ : ৪)
কতভাবে আল্লাহ তাঁর নবীর নামকে বুলন্দ করেছেন এবং কী কী উপায়ে তার মানমর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন সে এক দীর্ঘ বহছ। তবে সংক্ষিপ্ত কথা এই যে, তার সম্মান বৃদ্ধি ও সুনাম প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ নবীর নামকে নিজের নামের সাথে উল্লেখ করেছেন, তার আনুগত্যকে নিজের আনুগত্য আখ্যায়িত করেছেন এবং তার অনুসরণ-অনুকরণকে আল্লাহর মাহবুব ও প্রিয়পাত্র হওয়ার উপায় বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
ঈমানের কালিমা থেকে আরম্ভ করে নামাযের তাশাহহুদ ও দরূদ, আযানের বাক্যসমূহ থেকে নিয়ে দাফনের দুআ-কালাম, উর্ধ্বজগত থেকে নিয়ে পার্থিব জগত এবং রূহের জগতে শপথ গ্রহণের সময় থেকে নিয়ে কবর-হাশর এবং বরযখ ও আখিরাত পর্যন্ত সকল জায়গায়, সবক্ষেত্রে নবীর নামকে আল্লাহ নিজের নামের সঙ্গে একত্রে উল্লেখ করেছেন।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর সঙ্গে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা-এর সঙ্গে ওয়া আশহাদু আন্নামুহাম্মাদান আবদূহু ও রাসূলুহু, বিসমিল্লাহ-এর সঙ্গে ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ, মার রাববুকা-এর সাথে মান হাযার রাজুল ... কে এমনভাবে যুক্ত করা হয়েছে যে, একটি অপরটি থেকে আলাদা হওয়ার কোনই অবকাশ নেই।
যেখানেই মাওলা পাকের কথা সেখানেই তাঁর সবচে প্রিয় ও সবচেয়ে সম্মানিত বান্দার আলোচনা ....।
আল্লাহ ও নবীর নাম একত্র উচ্চারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল সালাত (দরূদ) ও সালাম। প্রত্যেক সালাত ও সালামে আল্লাহর নবীর জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। এ কারণে সালাত ও সালাম যেমন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হক আদায়ের একটি সেরা আমল তেমনি সেটি দুআ ও প্রার্থনার সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে অনেক বড় ইবাদত।
আর সে কারণেই কোনো ব্যক্তি যদি ওযিফা ও দৈনন্দিন যিকির-আযকারের সবটুকু সময় সালাত ও সালামের আমলে ব্যয় করে তবে সে আল্লাহর ইবাদতে এবং আল্লাহর যিকিরেই মশগুল রয়েছে বলা হবে।
সালাত ও সালাম বা দরূদ শরীফের সৌন্দর্য ও তাৎপর্যের মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এতে একই সাথে আল্লাহর ইবাদত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হক আদায়, উভয়ের প্রতি ভালবাসায় দৃঢ়তা, ইত্তেবায়ে সুন্নতের তাওফীক, আল্লাহ ও রাসূলের শোকরগোযারি, উভয়ের সন্তুষ্টি অর্জন, হাশরের ময়দানে নবীয়ে করীমের সুপারিশ লাভ ও নিজের উন্নতি ও মরতবা বৃদ্ধি-সবকিছুই নিহিত রয়েছে। এর বেশি আর কী চাই যে, নবীয়ে করীমের প্রতি সালাত (দরূদ) ও সালামের বদৌলতে স্বয়ং আল্লাহ দরূদ পাঠকারী উম্মতির উপর সালাত (রহমত) ও সালাম (শান্তি) বর্ষণ করেন!?
সালাত ও সালামের দ্বারা দ্বীন ও ঈমান, দুনিয়া-আখিরাত এবং যাহের ও বাতেনের বহুবিধ কল্যাণ সাধিত হয়। এর মাঝে বহু হেকমত আর রহস্য লুকায়িত আছে। রয়েছে বহু শিক্ষা। একটি বড় শিক্ষা এই যে, এতে চিন্তাভাবনা করলে মানুষের মাঝে বিনয় ও আল্লাহমুখিতার দৌলত নসীব হয়। দ্বিতীয় শিক্ষা হল, এর দ্বারা শিরকের প্রতি নফরত ও ঘৃণা এবং তাওহীদের উপর অটল-অবিচল থাকার স্বভাব পয়দা হয়। কারণ যখন সমস্ত মাখলুকের সরদার, সব নবীদের নবী-খাতামুন্নাবিয়্যীন ও সায়্যিদুল মুরসালীন-এর কাছে চাওয়ার পরিবর্তে উল্টো তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তো এতেই বোঝা যায় যে, একমাত্র আল্লাহই দেনে ওয়ালা যাত-পরম দাতা। তাই শুধু এবং শুধু তাঁর কাছেই চাইতে হবে। সাহায্য ও আশ্রয় প্রার্থনার জন্য কেবল তাঁরই কাছে হাত তোলা যাবে। তাঁর কাছেই জানাতে হবে সকল মিনতি ও আরয এবং তাঁর দরবারেই নিবেদিত হবে সকল প্রার্থনা ও ফরিয়াদ।
দুঃখের বিষয়, সালাত ও সালামের এতসব ফায়েদা এবং শরীয়তে এর প্রতি এই পরিমাণ তাকিদ থাকা সত্ত্বেও আমরা এক্ষেত্রে চরম শিথিলতা করছি। একে আমরা কেবল একটি রসমি আমল ও প্রথাসর্বস্ব ব্যাপার বানিয়ে ফেলেছি এবং আনুষ্ঠানিকতা ও প্রাতিষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত করেছি। অথচ এটি একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। দিন-রাত ও সকাল-সন্ধ্যায় পালনীয় যাবতীয় ওযিফা ও যিকির-আযকারের মধ্যে যার অবস্থান হওয়া উচিত সর্বাগ্রে।
নামাযে পঠিত দরূদ শরীফ তো মাশাআল্লাহ সবার মুখস্থ আছে। এছাড়াও ছোট-বড় বিভিন্ন দরূদ শরীফ হাদীস ও সীরাত গ্রন্থে এবং সালাত ও সালামের ওপর লেখা বই-পুস্তকে পাওয়া যায়। যার জন্য যে দরূদ সহজ মনে হয় যাওক-শাওকের সাথে প্রতিদিন নিয়মিত পড়া উচিত। সুবিধার জন্য নিচে সালাত ও সালামের কিছু কালিমা ও বাক্য লিপিবদ্ধ করা হল। আল্লাহ আমাকে ও আমাদের সকলকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
اللهم صل على محمد عبدك ورسولك كما صليت على إبراهيم، وبارك على محمد وآل محمد كما باركت على إبرايهم.
اللهم صل على محمد النبي الأمي، وأزواجه أمهات المؤمنين وذريته وأهل بيته، كما صليت على إبرايهم، إنك حميد مجيد.
اللهم صل على محمد وأنزله المقعد المقرب عندك يوم القيامة.
اللهم صل على محمد وعلى آله وسلم.
اللهم صل على محمد عبدك ورسولك، وصل على المؤمنين والمؤمنات والمسلمين والمسلمات.
اللهم صل على محمد النبي الأمي وعلى آله وسلم تسليما.