কুরআন কারীমে ইহুদী জাতির চরিত্র
[ইহুদীদের মাঝে আল্লাহ তাআলা বহু নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তাদেরকে আল্লাহ কিতাবও দিয়েছেন। তাই তাদের বলা হয় আহলে কিতাব। খ্রিস্টানদেরকেও আল্লাহ কিতাব দিয়েছিলেন, ফলে তাদেরকেও আহলে কিতাব বলা হয়। আহলে কিতাব দ্বারা সাধারণত ইহুদী-খ্রিস্টান উভয়ই উদ্দেশ্য হয়। তবে আজকের আলোচ্য প্রবন্ধ ইহুদীদের নিয়ে।
আহলে কিতাবদের মাঝে ভালো-মন্দ সব শ্রেণির মানুষই ছিল। তাদের যারা হেদায়েতপ্রাপ্ত ও নেক ছিল, তারা নিজ নবীর আনীত কিতাব ও শরীয়ত মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছে এবং নবীর বিদায়ের পরও তাঁর শরীয়তের ওপর অটল-অবিচল থেকেছে। তারা মূসা আ.-এর ওপর এবং তাঁর প্রতি নাযিলকৃত কিতাব তাওরাতের প্রতি ঈমান এনেছে। এরপর হযরত ঈসা আ.-এর আগমনের পর তাঁকেও খোলামনে গ্রহণ করেছে। কুরআন কারীমে যাদের বলা হয়েছে ‘উম্মাতুন মুকতাসিদাহ’ তথা সরল পথের অনুসারী। [দ্র. সূরা মায়িদা (৫) : ৬৬]
এরপর তাদের যারা সঠিক পথের ওপর অটল-অবিচল ছিল তারা আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও ঈমান এনেছে এবং তাঁর প্রতি নাযিলকৃত কিতাব ও শরীয়তকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছে, কুরআন কারীমে তাদের বলা হয়েছে, ‘উম্মাতুন কা-ইমাহ’ তথা সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত। আরো বলা হয়েছে, ‘সালিহীন’ তথা নেককার ও সৎকর্মপরায়ণশীল। [দ্র. সূরা আলে ইমরান (০৩) : ১১৩-১১৪]
কিন্তু তাদের যারা খারাপ ছিল, তারা বহু নবীকে হত্যা করেছে। আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রাসূলের অবাধ্য হয়েছে এবং সমূহ অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। কুরআন কারীমে তাদেরকে وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فٰسِقُوْنَ ‘তাদের অনেকেই অবাধ্য’ এবং وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُوْنَ ‘তাদের অনেকেই এমন, যাদের কার্যকলাপ মন্দ’ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। [দ্র. সূরা মায়েদা (০৫) : ৬৬; সূরা হাদীদ (৫৭) : ১৬]
কুরআনে তাদের মন্দ শ্রেণির চরিত্র ও তাদের বহু অপকর্মের বর্ণনা এসেছে। আজও তারাই পৃথিবীর বড় বড় অপকর্মের হোতা এবং পৃথিবীতে ফাসাদ ও নৈরাজ্যের রাজা। তা নিয়েই আজকের নিবন্ধ।]
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের প্রতিটি রাকাতে আমরা তিলাওয়াত করি-
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ، صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّيْنَ.
(হে আল্লাহ!) আমাদের সরল পথে পরিচালিত কর। সেইসকল লোকের পথে, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ। ওই সকল লোকের পথে নয়, যাদের প্রতি গযব নাযিল হয়েছে এবং তাদের পথেও নয়, যারা পথহারা। -সূরা ফাতিহা (০১) : ৫-৭
এখানে الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ ‘যাদের প্রতি গযব নাযিল হয়েছে’ বলে যে জাতিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তারা হল ইহুদী জাতি। এদের থেকেই আমরা প্রতি নামাযের প্রতি রাকাতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। কেন?
কারণ তারাই সেই জাতি, যারা সত্য জানার পরও হঠকারিতা ও বিদ্বেষবশত তা গ্রহণ করেনি। উপর্যুপরি বিদ্বেষ ও হঠকারিতার কারণে যাদের ওপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলার কুদরত, নিআমত ও আযাব সরাসরি প্রত্যক্ষ করার পরও যারা সবক নেয়নি। বরং নিজেদের অন্যায়-অনাচার ও দুশ্চরিত্রের ফলে আল্লাহর রহমত থেকে ছিটকে পড়েছে। কুফর, শিরক, অন্যায়-অনাচারে যারা সকল সীমা অতিক্রম করেছে। বহু নবীকে যারা হত্যা করেছে।
যাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যই হল- সত্য গোপন করা, নবীদের বিরুদ্ধাচারণ করা, বিশেষত ইসলাম ও ইসলামের নবী এবং মুসলমানদের প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ করা, ইসলামের বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা, ওয়াদা ও চুক্তিভঙ্গ করা, বিশ্বাসঘাতকতা, খেয়ানত ও গাদ্দারি, খুন-খারাবি, পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি, যুদ্ধ-বিগ্রহ জিইয়ে রাখা, অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ গ্রাস করাসহ এমন হেন অপরাধ নেই, যা তারা করেনি বা করছে না!
কুরআন কারীমে জায়গায় জায়গায় আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন আঙ্গিকে তাদের চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন। সংক্ষিপ্ত পরিসরে এখানে আমরা কুরআনে বর্ণিত তাদের চরিত্রের মৌলিক কিছু দিক নিয়ে আলোকপাত করব।
আল্লাহর শানে বেয়াদবি
যাকাতের বিধান নাযিল হওয়ার পর তারা ব্যঙ্গ করে বলেছিল-
اِنَّ اللهَ فَقِيْرٌ وَّ نَحْنُ اَغْنِيَآءُ .
আল্লাহ দরিদ্র আর আমরা ধনী।
আল্লাহ তাআলা তাদের এ চরম বেয়াদবির কোনো উত্তর না দিয়ে বরং শাস্তির সতর্কবাণী শুনিয়ে দিয়েছেন,
[তরজমা] আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলে, আল্লাহ গরীব এবং আমরা ধনী। তারা যা বলে আমি তা (তাদের আমলনামায়) লিখে রাখি এবং তারা নবীগণকে অন্যায়ভাবে যে হত্যা করেছে সেটাও। অতঃপর আমি বলব, জ¦লন্ত আগুনের স্বাদ গ্রহণ কর। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৮১
অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ তাআলা কিছুদিন এদেরকে অর্থসংকটে নিক্ষেপ করলেন। এ অবস্থায় এদের তো উচিত ছিল আনুগত্য স্বীকার করা। তা না করে বরং তাদের নেতৃস্থানীয় কিছু লোক আল্লাহ তাআলার শানে চরম অশিষ্ট বাক্য উচ্চারণ করল। এমন বেয়াদবিমূলক কথা সম্ভবত পৃথিবীতে কেবল তারাই বলেছিল-
يَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌ.
আল্লাহর হাত বাঁধা।
আরবীতে ‘হাত বাঁধা’ দ্বারা কৃপণতা বোঝানো হয়ে থাকে। তারা বলল, আল্লাহ তাআলা তাদের অর্থসংকটে ফেলে তাদের প্রতি কৃপণতা করছেন, নাউযুবিল্লাহ। অথচ এই ইহুদী জাতি সেই প্রাচীনকাল থেকেই বখিল ও কৃপণ বলে পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। আল্লাহ তাআলা বলছেন- বরং তারা নিজেরা কৃপণ এবং তাদের কথার কারণে তাদের ওপর লানত বর্ষণ করা হয়েছে। [দ্র. সূরা মায়িদা (৫) : ৬৪, তাফসীরে তাবারী; তাফসীরে কুরতুবী, আলোচ্য আয়াত]
আল্লাহর বিধান অমান্য করার কারণে বনী ইসরাইলকে আল্লাহ তাআলা দীর্ঘ দিন সিনাই মরুভূমিতে ছন্নছাড়া জীবন যাপন করিয়েছেন। সেখানে তাদের বিভিন্ন ধরনের কষ্ট হচ্ছিল, যদিও অনেক অলৌকিক নিআমতও তখন তাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে। এ থেকে মুক্তি দিয়ে আল্লাহ তাআলা যখন তাদের বললেন, নতশির হয়ে অমুক জনপদে প্রবেশ করো আর বলো-
حِطَّةٌ نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطٰيٰكُمْ.
আল্লাহ, আমরা ক্ষমা চাই, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন! {-সূরা বাকারা (২) : ৫৮-৫৯}
কিন্তু তারা আল্লাহর সঙ্গে মশকরা শুরু করে দিল। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করল-
حَبَّةٌ فِيْ شَعْرَةٍ.
গম চাই! গম চাই!! -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৬৪১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৪০৩
নবীগণকে হত্যা করা ও অপবাদ দেওয়া
এরা আল্লাহর প্রেরিত নবীদের হত্যা করেছে। নবীগণ শরীয়তের কোনো বিধান নিয়ে এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে, তাদের মনঃপুত না হলেই হয়তো দাম্ভিকতা দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে, নয়তো নবীকেই হত্যা করে ফেলেছে। এই ছিল ইহুদীদের পূর্বপুরুষদের চরিত্র।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
اَفَكُلَّمَا جَآءَكُمْ رَسُوْلٌۢ بِمَا لَا تَهْوٰۤي اَنْفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيْقًا كَذَّبْتُمْ وَ فَرِيْقًا تَقْتُلُوْنَ.
অতঃপর এটা কেমন আচরণ যে, যখনই কোনো রাসূল তোমাদের কাছে এমন কোনো বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, যা তোমাদের মনের চাহিদা সম্মত নয়, তখনই তোমরা দম্ভ দেখিয়েছ? অতএব কতক (নবী)-কে তোমরা মিথ্যাবাদী বলেছ এবং কতককে হত্যা করছ। -সূরা বাকারা (২) : ৮৭
ইহুদীদের হাতে নবীদের হত্যার বিষয়টি আল্লাহ তাআলা বারবার বলেছেন। বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। দেখুন, সূরা নিসা (৪) : ১৫৫; সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৮, ১১২; সূরা বাকারা (২) : ৯১
শুধু তাই নয়; ইহুদীরা আজ বাইতুল মাকদিস দখল করে রেখেছে। অথচ আল্লাহর যে নবী হযরত সুলাইমান আ.-এর হাতে বাইতুল মাকদিসের নবনির্মাণ কাজ হয়। (দ্র. ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ৬/৪০৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪০৮; শরহু সুনানি ইবনে মাজাহ, ৮: ৪২১) তাকে পর্যন্ত এরা জাদুর অপবাদ দিয়েছে। এমনকি কুরআন কারীমের আয়াত নাযিল হয়ে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত যুগ যুগ ধরে কতিপয় মূর্খ শ্রেণির ইহুদী তাঁকে কাফের আখ্যা দিয়েছে। [দ্র. সূরা বাকারা (২) : ১০২; তাফসীরে ইবনে আবী হাতেম ১/১৮৫; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/১৮৭]
আর যে খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলো এখন ইসরাইলকে লালন পালন করছে তাদের ধর্মের নবী ঈসা আ.-এর পবিত্রাত্মা মাকে ইহুদীরা মহা অপবাদ দিয়েছিল। কুরআনে যাকে বলা হয়েছে ‘বুহতানুন আযীম’! শুধু তাই নয়; তাদের দাবি ও বিশ্বাস অনুযায়ী ইহুদীরা তাদের নবী ঈসা আ.কে হত্যাও করেছিল। যদিও কুরআন কারীমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঈসা আ.কে হত্যা করতে পারেনি তারা; বরং আল্লাহ তাআলা তাঁকে নিজ হেফাজতে রেখেছেন। কিয়ামতের আগে তিনি শেষনবীর উম্মত হয়ে দুনিয়াতে আগমন করবেন। -সূরা নিসা (৪) : ১৫৬-১৫৮
অব্যাহতভাবে পৃথিবীতে অন্যায়-অনাচার ও ফাসাদ সৃষ্টি করে যাওয়া
ইহুদীদের স্বভাব, জমিনে যুদ্ধ-বিগ্রহ, খুন-খারাবি ও অনাচার সৃষ্টি করে যাওয়া। অন্যদের মধ্যে শত্রুতা লাগিয়ে দেওয়া এবং জিইয়ে রাখা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
كُلَّمَاۤ اَوْقَدُوْا نَارًا لِّلْحَرْبِ اَطْفَاَهَا اللهُ وَ يَسْعَوْنَ فِي الْاَرْضِ فَسَادًا، وَ اللهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ.
তারা যখনই যুদ্ধের আগুন জ্বালায়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন। তারা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তার করে বেড়ায়, অথচ আল্লাহ অশান্তি বিস্তারকারীদেরকে পছন্দ করেন না। -সূরা মায়িদা (৫) : ৬৪
ইমাম কুরতুবী রাহ. (৬৭১ হি.) বলেন, সবচেয়ে বড় ফাসাদ তাদের ইসলাম ও মুসলমানদের মিটিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা। (দ্র. তাফসীরে কুরতুবী)
ওয়াদা ও চুক্তিভঙ্গ, খেয়ানত ও গাদ্দারি, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত এবং গুপ্ত ফন্দি তাদের জীবনের অংশ
এই জাতির চরিত্রই হল চুক্তিভঙ্গ করা। কুরআন কারীমে এই বিষয়ে অসংখ্য ঘটনা ও বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদীনায় যাওয়ার পর থেকে আজ ১৪৪৫ হিজরী পর্যন্তও এর দৃষ্টান্ত অসংখ্য। এখানে কেবল আল্লাহ তাআলার বাণীই স্মরণ রাখতে পারি-
اَوَ كُلَّمَا عٰهَدُوْا عَهْدًا نَّبَذَهٗ فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ، بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ.
(তা এটা কেমন আচরণ যে,) যখনই তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সর্বদা তাদের একটি দল তা ভেঙে ছুড়ে ফেলেছে; বরং তাদের অধিকাংশই ঈমান আনে না। -সূরা বাকারা (২) : ১০০
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
[তরজমা] (তারা) সেই সকল লোক, যাদের থেকে আপনি প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তারা প্রতিবার নিজ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তারা বিন্দুমাত্র ভয় করে না। -সূরা আনফাল (৮) : ৫৬
চুক্তিভঙ্গের মতো গুরুতর অপরাধের কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের অভিশাপও দিয়েছেন। কঠিন করে দিয়েছেন তাদের অন্তরকেও। ইরশাদ হয়েছে,
[তরজমা] অতঃপর তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণেই তো আমি তাদেরকে আমার রহমত থেকে বিতাড়িত করি ও তাদের অন্তর কঠিন করে দেই। তারা (তাওরাতের) বাণীসমূহকে তার আপন স্থান থেকে সরিয়ে দেয়। এবং তাদেরকে যে বিষয়ে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তার একটি অংশ ভুলে যায়।
এদের অন্তর অত্যন্ত কঠিন ও নিষ্ঠুর
আগের আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি তাদের অন্তর কঠিন করে দেই। অন্য আয়াতে বলেন-
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوْبُكُمْ مِّنْۢ بَعْدِ ذٰلِكَ فَهِيَ كَالْحِجَارَةِ اَوْ اَشَدُّ قَسْوَةً .
(আল্লাহ তাআলার এতসব নিআমত সরাসরি প্রত্যক্ষ করার পরও) তোমাদের অন্তর আবার শক্ত হয়ে গেল, এমনকি তা হয়ে গেল পাথরের মত; বরং তার চেয়েও বেশি শক্ত। -সূরা বাকারা (২) : ৭৪; সূরা হাদীদ (৫৭) : ১৬
মুসলিমের প্রতি চির বিদ্বেষ
মুসলিম এবং ইসলামের নবীর প্রতি তাদের বিদ্বেষ এতই প্রকট যে, আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ لَيَزِيْدَنَّ كَثِيْرًا مِّنْهُمْ مَّاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ طُغْيَانًا وَّ كُفْرًا، وَاَلْقَيْنَا بَيْنَهُمُ الْعَدَاوَةَ وَ الْبَغْضَآءَ اِلٰي يَوْمِ الْقِيٰمَةِ.
আপনার প্রতি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যে ওহী নাযিল করা হয়েছে, তা তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফরীতে বৃদ্ধি সাধন করবেই এবং আমি তাদের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত (স্থায়ী) শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দিয়েছি। -সূরা মায়িদা (৫) : ৬৪
শুধু তাই নয়, এর কারণে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের প্রতিও তাদের বিদ্বেষ বাড়তে থাকে। দেখুন, উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর, তাফসীরে ইবনে কাসীর।
কাপুরুষতা ও মৃত্যুর প্রতি সীমাহীন ভয়
আল্লাহর চেয়ে তারা মুসলিম উম্মাহকে বেশি ভয় পায়! আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَاَنْتُمْ اَشَدُّ رَهْبَةً فِيْ صُدُوْرِهِمْ مِّنَ اللهِ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ.
(হে মুসলিমগণ!) প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্তরে আল্লাহর চেয়ে তোমাদের ভয়ই বেশি। তা এজন্য যে, তারা এমনই এক সম্প্রদায়, যাদের বুঝ-সমঝ নেই। -সূরা হাশর (৫৯) : ১৩
এখনো দেখা যায় কথিত বড় সামরিক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনীদের প্রতি তারা এত ভীত!
ইসলাম ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে বনু নযীরের ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার পর নবীজী যখন তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে মদীনা থেকে চলে যাওয়ার সময় বেঁধে দিলেন, মুনাফেকদের প্রলোভনে তারা মদীনায় বসে থাকল। অবশেষে মুনাফেকদের সাহায্য না পেয়ে তারা দূর্গে গিয়ে আশ্রয় নিল। এই প্রসঙ্গে কুরআন কারীমের সূরা হাশর নাযিল হয়। সেখানে এও বলা হয়েছে-
لَا يُقَاتِلُوْنَكُمْ جَمِيْعًا اِلَّا فِيْ قُرًي مُّحَصَّنَةٍ اَوْ مِنْ وَّرَآءِ جُدُرٍ بَاْسُهُمْ بَيْنَهُمْ شَدِيْدٌ تَحْسَبُهُمْ جَمِيْعًا وَّ قُلُوْبُهُمْ شَتّٰي ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُوْنَ.
তারা সকলে একাট্টা হয়েও তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে না, তবে এমন জনপদে (করবে), যা প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত অথবা (করবে) দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে। তাদের আপসের মধ্যে বিরোধ প্রচণ্ড। তুমি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে কর, অথচ তাদের অন্তর বহুধা বিভক্ত। তা এজন্য যে, তারা এমনই এক সম্প্রদায়, যাদের আকল-বুদ্ধি নেই। -সূরা হাশর (৫৯) : ১৪
পরকালের সফলতা একমাত্র নিজেদের বলে নবীজীর কাছে তাদের মিথ্যা আস্ফালন দেখাত, কিন্তু নবীর পক্ষ থেকে যখনই তাদের চ্যালেঞ্জ দেওয়া হত যে, যদি তোমরা আল্লাহর এতই প্রিয় বান্দা হয়ে থাক, পরকালের সফলতা যদি তোমাদেরই হয়ে থাকে, তাহলে এই জগৎ থেকে ওই জগতের পাড়ি দেওয়ার একমাত্র সেতুপথ মৃত্যুটা একটু কামনা করে দেখাও না! কিন্তু মৃত্যু কামনা দূরের কথা; এদের একেক জন কামনা করে, যদি পৃথিবীতে হাজার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকা যায়! [দ্র. সূরা বাকারা (২) : ৯৪-৯৬]
সূরা জুমুআতেও রয়েছে তাদের মৃত্যুভীতির কথা। [দ্র. সূরা জুমুআ (৬২) : ৬-৭]
এসকল ইহুদীর পূর্বপুরুষ মূসা আ.-এর যুগের বনী ইসরাইলের চরিত্রও তুলে ধরেছেন আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে। আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ অভয় প্রদান এবং বিজয়ের সরাসরি ঘোষণা পাওয়ার পরও তারা সামনে অগ্রসর হওয়ার সাহস না করে নবীর সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল, পরিণতিতে কীভাবে চল্লিশ বছর তাদের উদ্বাস্তু জীবন কাটাতে হয়েছে, সেই উপাখ্যানও আছে কুরআন কারীমে! [দ্র. সূরা মায়িদা (৫) : ২১-২৬]
ইসলামের বিরুদ্ধে মূর্তিপূজার সমর্থন ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতেও প্রস্তুত
ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের গল্প বলে শেষ করা যাবে না। নিজেদের যেহেতু আসমানী ধর্মের অনুসারী দাবি করে, সেই হিসেবে উচিত ছিল, কোনোভাবেই মূর্তিপূজারীদের সঙ্গে হাত না মিলানো। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে তারা সবই করতে পারে।
শান্তি-চুক্তি ভঙ্গ করে মক্কার মুশরেকদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার জন্য ইহুদী সরদার কাব ইবনে আশরাফ অপর ইহুদী নেতা হুয়াই ইবনে আখতাবকে নিয়ে মক্কা মুর্কারমায় যায়। মুশরেকদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাহায্যের আশ্বাস দেয়। এমনকি মুশরেকদের তদানীন্তন নেতা আবু সুফিয়ানের কৌশলী প্রশ্নে নির্লজ্জভাবে সে ইসলামের বিপরীতে মূর্তিপূজার ধর্মকে শ্রেষ্ঠ আখ্যা দেয়। অথচ সে জানে, মূর্তিপূজার ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলার অর্থ মূর্তিপূজাকেই সমর্থন করা, যা ইহুদী ধর্মেরও পরিপন্থী। কোনো কোনো বর্ণনায় প্রতিমার সামনে তার সিজদা করার বিষয়টিও আসে। এ প্রেক্ষিতে আয়াত নাযিল হয়-
اَلَمْ تَرَ اِلَي الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتٰبِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَ الطَّاغُوْتِ وَ يَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰي مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا.
যাদেরকে কিতাবের একটা অংশ (অর্থাৎ তাওরাতের কিছু জ্ঞান) দেওয়া হয়েছিল, আপনি কি দেখেননি- (কীভাবে) তারা প্রতিমা ও শয়তানের সমর্থন করছে এবং তারা কাফেরদের (অর্থাৎ মূর্তিপূজকদের) সম্বন্ধে বলে, মুমিনদের অপেক্ষা তারাই বেশি সঠিক পথে আছে? -সূরা নিসা (০৪) : ৫১ [দ্র. তাফসীরে ইবনে আবী হাতেম, তাওযীহুল কুরআন]
এই আয়াতটি আবার পড়ুন এবং নযর দিন, চরম হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে নেতানিয়াহু ও দখলদার ইসরাইলের পরম সখ্য ও বন্ধুত্বের দিকে।
আমানতের খেয়ানত
অ-ইহুদীদের সঙ্গে তাদের আচরণ যাচ্ছে তাই করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ مِنْهُمْ مَّنْ اِنْ تَاْمَنْهُ بِدِيْنَارٍ لَّا يُؤَدِّهٖۤ اِلَيْكَ اِلَّا مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَآىِٕمًا ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الْاُمِّيّٖنَ سَبِيْلٌ وَ يَقُوْلُوْنَ عَلَي اللهِ الْكَذِبَ وَ هُمْ يَعْلَمُوْنَ.
আহলে কিতাবদের কিছু লোক, যাদের কাছে একটি দিনারও যদি আমানত রাখা হয়, তা সে আর ফেরত দেবে না- যদি না তুমি তার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে থাক। তাদের এ কর্মপন্থা এ কারণে যে, তারা বলে থাকে, উম্মীদের (অর্থাৎ অইহুদী আরবদের) ব্যাপারে আমাদের থেকে কোনো কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে না। আর (এভাবে) জেনে শুনে তারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যাচার করে। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৭৫
আরো দ্রষ্টব্য : সূরা মায়িদা (৫) : ১৮
ঘোর সাম্প্রদায়িক
এদের অধিকাংশই এমন, নিজেদের পূর্বসূরিদের মতাদর্শ ছাড়া অন্য কিছুই তারা গ্রহণ করতে রাজি না। যত সত্যবাণীই পেশ করা হোক, তারা বলত-
قُلُوْبُنَا غُلْفٌ.
আমাদের অন্তরে পর্দা লাগানো।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
بَلْ طَبَعَ اللهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا.
অর্থাৎ বরং হঠকারিতার কারণে তাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর করে দিয়েছেন। সেজন্যই তাতে সত্য-সঠিক কোনো কথা প্রবেশ করে না। -সূরা নিসা (৪) : ১৫৫
নিজেদের বিষয়ে এদের অহংবোধ ও দাম্ভিকতা এতটাই প্রকট যে, শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীনের প্রতি আহ্বান করা হলে তারা বলত-
نُؤْمِنُ بِمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَ يَكْفُرُوْنَ بِمَا وَرَآءَهٗ وَ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَهُمْ .
অর্থাৎ আমরা তো কেবল সেই কালামের ওপরই ঈমান রাখব, যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে; অর্থাৎ, তাওরাত। অথচ তাদের কাছে যে কিতাব আছে সেই কিতাবও এই কুরআনকে সত্যায়ন ও সমর্থন করে।
মূলত এরা আসলে মনচাহি জীবন চলে। কোনো কিতাবই মানে না। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি তাদের বলে দিন, সত্যিই যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক, তবে কেন নবীদের হত্যা করে থাক? [দ্র. সূরা বাকারা (২) : ৯১]
অর্থাৎ নিজেদের ধর্মই যদি তোমরা মেনে চলবে, তাহলে কেন ইতিপূর্বে নিজ ধর্মের নবীদের হত্যা করলে?
সর্বদা মুসলিমদের ইসলাম থেকে সরানোর পাঁয়তারা
মুসলিমদের প্রতি ইহুদীদের চরম হিংসা, তারা সর্বদা চায়, কীভাবে মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে সরানো যায়। আল্লাহ তাআলা সেই মনোভাবটাও তুলে ধরেছেন-
[তরজমা] (হে মুসলিমগণ!) কিতাবীদের অনেকেই তাদের কাছে সত্য পরিস্ফুট হওয়ার পরও তাদের মনের হিংসাপ্রসূত কামনা করে, যদি তোমাদেরকে ঈমান আনার পর পুনরায় কাফির বানিয়ে দিতে পারত! -সূরা বাকারা (২) : ১০৯; সূরা আলে ইমরান (৩) : ৬৯-৭৪
এদের মনে হিংসার জ্বালা
ইসলামের প্রতি তাদের বিদ্বেষের অন্যতম কারণ শেষনবী তাদের বংশে না আসা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰي مَاۤ اٰتٰىهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ.
নাকি তারা এই কারণে মানুষের প্রতি ঈর্ষা করে যে, তিনি তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ দান করেন (কেন?)। -সূরা নিসা (৪) : ৫৪
অথচ বিষয়টি পুরোটাই আল্লাহর হাতে। এখানে আপত্তি করার কিছু নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, এরা এতই কৃপণ, এতই হাঁড় কিপটে এবং এতই সাম্প্রদায়িক যে, রাজত্ব যদি কখনো তাদের হাতে যেত, তবে তারা এতটা কার্পণ্য করত যে, নিজেদের গোত্রের বাইরে কাউকে কণা পরিমাণও কিছু দিত না-
اَمْ لَهُمْ نَصِيْبٌ مِّنَ الْمُلْكِ فَاِذًا لَّايُؤْتُوْنَ النَّاسَ نَقِيْرًا.
তবে কি (বিশ্ব-জগতের) সার্বভৌমত্বে তাদের কোনো অংশ আছে? যদি তাই হত, তবে তারা মানুষকে খেজুর-বীচির আবরণ পরিমাণও কিছু দিত না। -সূরা নিসা (৪) : ৫৩; সূরা আলে ইমরান (৩) : ৭৩-৪৭ (দ্র. তাফসীরে ইবনে আবী হাতেম, তাফসীরে ইবনে কাসীর।)
উল্লিখিত মন্দ চরিত্র ছাড়াও তাদের চরিত্রের মধ্যে আছে,
শরীয়তের বিধান গোপন করে মনচাহি বিধান রচনা করা। [দেখুন, সূরা আলে ইমরান (৩) : ৭১; সূরা মায়িদা (৫) : ৪১]
মানুষকে আল্লাহর পথে বাধা দেওয়া। [দ্র. সূরা নিসা (৪) : ১৬০]
উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে ধর্মবিকৃতি ও আসমানী বিধানে রদবদল করা। [দ্র. সূরা মায়িদা (৫) : ৪২; সূরা তাওবা (৯) : ৩৪]
এরা চিরলাঞ্ছিত
যতদিন ইহুদীরা তাদের মন্দ স্বভাব পরিত্যাগ করে ঈমান ও ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে না আসবে, এ পৃথিবীতে লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা ছায়ার মতোই তাদের সাথে লেগে থাকবে। এটা আল্লাহর ঘোষণা। অবশ্য আল্লাহর তরফ থেকে যদি কোনো উপায় সৃষ্টি হয়ে যায় কিংবা মানুষের পক্ষ হতে কোনো অবলম্বন পাওয়া যায়, যা তাদেরকে পোষকতা দান করবে, তবে ভিন্ন কথা। যেমন আজ পোষকতা পাচ্ছে মানুষ নামের একশ্রেণির পশ্চিমা খ্রিস্টান ও মুশরিকদের পক্ষ থেকে। এই পৃষ্ঠপোষকতা মুহূর্তের জন্য সরে গেলেই এরা সর্বহারা। এদের প্রতি রয়েছে আল্লাহ তাআলার ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির ঘোষণা। ইরশাদ হয়েছে-
ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ اَيْنَ مَا ثُقِفُوْۤا اِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللهِ وَ حَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ وَ بَآءُوْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَ ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيٰتِ اللهِ وَ يَقْتُلُوْنَ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّ كَانُوْا يَعْتَدُوْنَ.
তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাক, তাদের ওপর লাঞ্ছনার ছাপ মেরে দেওয়া হয়েছে, অবশ্য আল্লাহর তরফ থেকে যদি কোনো উপায় সৃষ্টি হয়ে যায় কিংবা মানুষের পক্ষ হতে কোনো অবলম্বন বের হয়ে আসে, (যা তাদেরকে পোষকতা দান করবে) তবে ভিন্ন কথা। এবং তারা আল্লাহর ক্রোধ নিয়ে ফিরেছে, আর তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অভাবগ্রস্ততা। এর কারণ এই যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। (তাছাড়া) এর কারণ এই যে, তারা অবাধ্যতা করত ও সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত থাকত। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১১২
নিজেদের অন্যায় অপরাধের কারণে তাদের পূর্বপুরুষদের থেকে শুরু করে যুগে যুগে কীভাবে এরা বাস্তুহারা হয়ে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছন্নছাড়া জীবন যাপন করেছে- তা ইতিহাসে সংরক্ষিত আছে।
স্বয়ং আল্লাহ ও নবীদের যবানে অভিশপ্ত ওরা
বনী ইসরাইল ও ইহুদী জাতি নিজের কৃতকর্মের কারণে আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত হয়ে আছে। ইরশাদ হয়েছে-
اُولٰٓىِٕكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُ وَ مَنْ يَّلْعَنِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ نَصِيْرًا.
এরাই তারা, যাদের প্রতি আল্লাহ লানত করেছেন। আল্লাহ যার প্রতি লানত করেন, তুমি তার কোনো সাহায্যকারী পাবে না। -সূরা নিসা (৪) : ৫২
আরও দ্রষ্টব্য : সূরা মায়িদা (৫) : ১৩; সূরা মায়িদা (৫) : ৬০]
এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
[তরজমা] বনী ইসরাইলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল, তাদের প্রতি দাউদ ও ঈসা ইবনে মারয়ামের যবানীতে লানত বর্ষিত হয়েছিল। তা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা করেছিল এবং তারা সীমালঙ্ঘন করত। -সূরা মায়িদা (৫) : ৭৮
শেষকথা
কুরআন কারীমের আলোকে ইহুদীদের দূষিত চরিত্রের কিছু দিক তুলে ধরা হল। আজকের ইহুদীরা তাদেরই বংশধর। আল্লাহ তাআলা অনেক জায়গায় বনী ইসরাইলের অপরাধের জন্য নবীযুগের ইহুদীদের সম্বোধন করেছেন। তাদের অপরাধগুলোর যেমন বিবরণ দিয়েছেন, তাদের পূর্বসূরিদের অপরাধসমূহেরও বিবরণ দিয়েছেন। কারণ একে তো তারা পূর্বসূরিদের অপরাধগুলো থেকে নিজেদের দায়মুক্তি ঘোষণা দেয়নি, তদ্রƒপ নিজেদের মধ্যেও সেই অপরাধ প্রবণতা ও মানসিকতা লালন করে আর নিত্য-নতুন জঘন্য অপরাধ তো করেই বেড়ায়। কুরআনে বর্ণিত দুষ্ট শ্রেণির ইহুদীদের চরিত্রগুলো পড়লেই এখনকার ইসরাইলী অত্যাচারী ইহুদীদের চেহারা আরো পরিষ্কার হয়ে উঠবে।