তাঁরা নবীজীকে ভালবাসতেন প্রাণের চেয়েও বেশি
সৃষ্টির ওপর সবচেয়ে বেশি দয়া ও অনুগ্রহ আল্লাহ তাআলার। তাঁর রহমত ও ইহসানের অন্ত নেই। তাঁর পরে মানুষের ওপর বেশি ইহসান ও অনুগ্রহ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। পুরো পৃথিবী যখন ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, অন্যায়-অনাচার, জুলুম-নির্যাতন, মূর্খতা-বর্বরতা ও কুফর-শিরকে পূর্ণ ছিল, দয়াময় আল্লাহ সেই সময় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে প্রেরণ করলেন।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওতের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের হেদায়েত ও সফলতা, শান্তি ও মুক্তির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে মদীনা হিজরত করেছেন। জিহাদ করেছেন। তবু তিনি নিরাশ বা বিরক্ত হননি, বরং নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এবং চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে দুআ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে অন্ধকার দুনিয়াকে আলোর সন্ধান দিলেন। দিকভ্রান্ত পৃথিবীকে হেদায়েতের দিশা দিলেন। মানুষকে শিক্ষা দিলেন সত্যিকারের মনুষ্যত্ব, মানবতা, সভ্যতা, রুচি ও বোধের স্বচ্ছতা, নৈতিক ও চারিত্রিক পবিত্রতা এবং ঈমান ও তাওহীদের বিশুদ্ধতা।
এজন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত ও ভালবাসা ঈমানের অংশ। তাঁর ভালবাসা ছাড়া ঈমান অপূর্ণ। ঈমানের স্বাদ আস্বাদনের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সবচেয়ে প্রিয়রূপে গ্রহণ করতে হবে। নবীজীর পাক যবানেই ইরশাদ হয়েছেÑ
ثَلَاثٌ مَنْ كُنّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنّ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ: مَنْ كَانَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبّ إِلَيْهِ مِمّا سِوَاهُمَا.
তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। তার মধ্যে প্রথমটি হল, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে প্রিয় হবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭
নবীজী আরো ইরশাদ করেনÑ
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.
তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না; যতক্ষণ আমি তার কাছে পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য সকল মানুষ থেকে বেশি প্রিয় না হব। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৫
নবীজী আরো বলেনÑ
لَا، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ.
ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তোমার কাছে তোমার জানের চেয়েও অধিক প্রিয় না হব। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৩২
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের মহব্বত এমনই ছিল। তারা নবীজীকে মা-বাবা, সন্তান-সন্ততি এমনকি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন। তাদের গোটা জীবনই ছিল নবী-প্রেমের প্রতিচ্ছবি। ইবাদত-বন্দেগী, লেনদেন, চলাফেরা, আখলাক-চরিত্র সর্বত্র ছড়িয়েছিল নবী-প্রেমের জ্যোতি। নবী- প্রেমে নিমজ্জন তাদের জীবন-জগতকে করেছিল জ্যোর্তিময়-আলোকিত। নবী-প্রেমের যে দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করে গেছেন, মানব ইতিহাসে তার নজির নেই। কাফেররা পর্যন্ত তা স্বীকার করেছেন।
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে উমরার উদ্দেশে মক্কার পথে রওনা হন। এ কথা শুনে কুরাইশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। মুসলিমদের বাধা দেওয়ার জন্য বাহিনী প্রেরণ করে। হুদায়বিয়া নামক স্থানে আলাপ-আলোচনার জন্য তাদের একাধিক প্রতিনিধি নবীজীর কাছে আসে। তাদের একজন হলেন উরওয়া ইবনে মাসঊদ, যিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। নবীজীর সঙ্গে আলোচনার সময় সাহাবীদের অবস্থা দেখে কুরাইশের কাছে গিয়ে তিনি এই অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলেনÑ
وَاللهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى المُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ، وَكِسْرَى، وَالنّجَاشِيِّ، وَاللهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطّ يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمّدٍ مُحَمّدًا، وَاللهِ إِنْ تَنَخّمَ نُخَامَةً إِلّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ.
আমি অনেক রাজা-বাদশার কাছে প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশীর কাছেও গিয়েছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তার সঙ্গীরা যেভাবে ভক্তি করে, সেভাবে আমি আর কাউকে দেখিনিÑ তাদের বাদশাহকে ভক্তি করতে। আল্লাহর কসম! তিনি থুথু ফেললেই তাদের কেউ না কেউ তা হাতে নিয়ে নেয় এবং তা চেহারা ও শরীরে মাখে। তিনি যখন তাদেরকে আদেশ করেন তখন তারা তার আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর যখন তিনি ওযু করেন তখন তার ওযুর ব্যবহৃত পানি পাওয়ার জন্য লড়াই করার উপক্রম হয়। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৩১
নবীজীর প্রতি সাহাবায়ে কেরামের ভালবাসার ঘটনাবলি হাদীস, সীরাত, তারীখ ও তারাজিমের কিতাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের মতো নবী-প্রেমে ডুবে আমরাও হতে পারি আলোকিত মানুষ। এখানে আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত সাহাবীগণের নবী-প্রেমের কিছু ঘটনা উল্লেখ করছি।
১. খলীফাতুর রাসূল আবু বকর সিদ্দীক রা. মৃত্যুশয্যায় শায়িত। এ অবস্থায় তাঁর প্রিয় কন্যা নবীপত্নী আয়েশা রা. এলেন। তিনি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন্ দিন ইন্তেকাল করেছেন?
আয়েশা রা. বললেন, সোমবার।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আজ কী বার?
আয়েশা রা. বললেন, সোমবার।
খলীফাতুর রাসূল বললেনÑ
أَرْجُو فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ اللّيْلِ.
আমি আশা করি, এখন থেকে রাতের মধ্যে আমার মৃত্যু হবে। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৮৭
এ থেকে অনুমান করা যায়, আবু বকর রা. নবীজীকে কত ভালবাসতেন, যার ফলে তিনি আকাক্সক্ষা করেন, নবীজীর মৃত্যু যে দিন হয়েছে তাঁর মৃত্যুও যেন সে দিনই হয়।
২. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেনÑ
يَا رَسُولَ اللهِ! وَاللهِ إِنَّكَ لَأَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي، وَإِنَّكَ لَأَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَهْلِي، وَأَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ وَلَدِي، وَإِنِّي لَأَكُونُ فِي الْبَيْتِ فَأَذْكُرُكَ فَمَا أَصْبِرُ حَتَّى آتِيَكَ فَأَنْظُرَ إِلَيْكَ، وَإِذَا ذَكَرْتُ مَوْتِي وَمَوْتَكَ عَرَفْتُ أَنَّكَ إِذَا دَخَلْتَ الْجَنَّةَ رُفِعت مَعَ النَّبِيِّينَ، وَإِنِّي إِذَا دَخَلْتُ الْجَنَّةَ خَشِيتُ أَنْ لَا أَرَاكَ.
ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আপনি আমার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এমনকি প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয়। আমি যখন ঘরে থাকি এবং আপনার কথা স্মরণ হয় তখন আপনাকে না দেখা পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারি না। আর যখন আমার ও আপনার মৃত্যুর কথা স্মরণ হয় তখন আমি বুঝি, আপনি জান্নাতে নবীদের সঙ্গে উঁচু মাকামে থাকবেন। আর আমি জান্নাত পেলেও ভয় হয়Ñ আপনাকে দেখতে পারব কি না। Ñআলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৪৮০
নবীজীর প্রতি সাহাবীর কত গভীর মহব্বত! নবীজীর কথা স্মরণ হলে তাঁকে এক নজর না দেখা পর্যন্ত অস্থিরতা বোধ করেন এবং মৃত্যুর পরে জান্নাতে তাঁকে দেখতে পারবেন কি না তা নিয়েও চিন্তিত।
৩. উহুদের যুদ্ধে শুরুর দিকে মুসলিমদের জয়ের পাল্লা ভারি ছিল। কিন্তু একপর্যায়ে কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই সুযোগে কাফেররা নবীজীকে হত্যা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিন্তু কতিপয় সাহাবী জীবন বাজি রেখে নবীজীর সামনে সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে কাফেরদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। এতে তাদের কেউ নিহত কেউ আহত হন।
ওই বীর-সাহসী সাহাবীদের অন্যতম আবু তালহা রা.। তিনি সুদক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন। কাফেররা যখন নবীজীকে লক্ষ করে তীর নিক্ষেপ শুরু করে তখন তিনি ঢাল হাতে নিয়ে নবীজীর সামনে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। নবীজী উঁকি দিয়ে কাফেরদের অবস্থা দেখতে চাইলে তিনি বলতেনÑ
يَا نَبِيَّ اللهِ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي، لاَ تُشْرِفْ يُصِيبُكَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ القَوْمِ، نَحْرِي دُونَ نَحْرِكَ.
হে আল্লাহর নবী! আমার মা-বাবা আপনার ওপর কুরবান হোক। আপনি উঁকি দেবেন না। পাছে আপনার গায়ে কোনো তীর এসে লাগে। আমার বুক আপনার জন্য উৎসর্গিত। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৩৮১১
এটা সত্যিকারের ভালবাসার প্রকাশ। নিজে আহত হবেন, নিহত হবেন; কিন্তু প্রেমাষ্পদ যেন নিরাপদ থাকেন। নবীজীকে লক্ষ করে কাফেরদের নিক্ষিপ্ত তীরে সাহাবী নিজে আহত হয়েছেন। নবীজীর গায়ে লাগতে দেননি।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু আমের রা.-কে আওতাসের যুদ্ধে পাঠান। যুদ্ধে তার হাঁটুতে তীর বিদ্ধ হয় এবং তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
মৃত্যুর আগে তিনি ভাতিজা আবু মূসা আশআরী রা.-কে বলেনÑ
يَا ابْنَ أَخِي! انْطَلِقْ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَقْرِئْهُ مِنِّي السَّلَامَ، وَقُلْ لَهُ: يَقُولُ لَكَ أَبُو عَامِرٍ: اسْتَغْفِرْ لِي.
হে ভাতিজা, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে আমার সালাম জানাও এবং বলো, আবু আমের আপনার কাছে দুআ চেয়েছে।
এ কথা বলার কিছুক্ষণ পর তিনি ইন্তেকাল করেন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৯৮
সাহাবীর অন্তরে নবীজীর মহব্বত কত দৃঢ়ভাবে গেঁথেছে! রণাঙ্গনে তীরবিদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও নবীজীকে স্মরণ করেছেন এবং লোক পাঠিয়ে তাঁর কাছে দুআ চেয়েছেন।
৫. উহুদের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে সা‘দ ইবনে রাবী রা.-এর খোঁজে পাঠান এবং বলেন, তাকে পেলে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে, আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করেছেন, তুমি কেমন আছ।
ঐ সাহাবী নিহতদের মাঝে সা‘দ রা.-কে এমন অবস্থায় খুঁজে পান যে, শুধু শেষ নিঃশ্বাসটুকু বাকি আছে এবং তার শরীর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। সাহাবী তাকে নবীজীর কথা জানালেন। তিনি বললেন, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাবেন, আমি জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। আর আমার সম্প্রদায়কে (অর্থাৎ জীবিত আনসারী সাহাবীদেরকে) বলবেনÑ
لَا عُذْرَ لَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَنْ يَخْلُصَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِيكُمْ شُفْرٌ يَطْرِفُ.
যদি তোমাদের একজন জীবিত থাকতেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো ওজর থাকবে না।
এ কথা বলার পর তিনি ইন্তেকাল করেন। Ñমুসতাদরাকে হাকেম ৩/২০১
নবীজীর প্রতি কী ভালবাসা! রণাঙ্গনে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও তাঁর নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
৬. আমিরুল মুমিনীন উমর রা. নিজ খেলাফত আমলে সাহাবায়ে কেরামের জন্য ভাতা ধার্যকালে উসামা ইবনে যায়েদ রা.-এর জন্য তিন হাজার পাঁচশ দিরহাম আর নিজের ছেলে আবদুল্লাহর জন্য তিন হাজার দিরহাম ধার্য করেন। তখন আবদুল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তাকে আমার চেয়ে বেশি দিলেন কেন? সে তো যুদ্ধে আমার চেয়ে অগ্রগামী ছিল না। উত্তরে উমর রা. বললেনÑ
لأَنَّ زَيْدًا كَانَ أَحَبَّ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَبِيكَ، وَكَانَ أُسَامَةُ أَحَبَّ إِلَى رَسُولِ اللهِ مِنْكَ، فَآثَرْتُ حُبَّ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حُبِّي.
তোমার পিতার চেয়ে তার পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশি প্রিয় ছিলেন এবং তোমার চেয়ে সে বেশি প্রিয় ছিল। তাই আমার মহব্বতের ওপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতকে প্রাধান্য দিলাম। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ৩৮১৩ (মূল ঘটনাটি সহীহ ইবনে হিব্বানেও [৭০৪৩] বর্ণিত হয়েছে)
এটা নবীজীর প্রতি উমর রা.-এর সুগভীর ভালবাসার প্রকাশ। এখানে প্রসঙ্গ নবীজীকে সন্তানের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার নয়; এটা তো সাহাবীগণের স্বভাবে পরিণত হয়েছিল, বরং এখানে প্রসঙ্গ হল, তিনি একজনকে বেশি মহব্বত করেন আর নবীজী একজনকে বেশি মহব্বত করেন। তো কোন্টা অগ্রাধিকার পাবে? অত্যধিক বিনয়ী আমীরুল মুমিনীন উমর রা. মনে করেছেন তিনি ও তার ছেলের চেয়ে নবীজী যায়েদ ও উসামা রা.-কে বেশি মহব্বত করতেন। সেই হিসেবে নবীজীর ভালবাসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উসামা রা.-কে পাঁচশ দিরহাম বেশি দেন।
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে মুআয ইবনে জাবাল রা.-কে ইয়ামান প্রেরণ করেন এবং বিদায়ের সময় তাকে কিছুদূর এগিয়ে দেন। এ সময় মুআয রা. সওয়ারীতে ছিলেন আর নবীজী পায়ে হাঁটছিলেন। চলতে চলতে প্রিয় সাহাবীকে তিনি কিছু নসীহত করেন। শেষে বলেনÑ
يَا مُعَاذُ! إِنَّكَ عَسَى أَنْ لَا تَلْقَانِي بَعْدَ عَامِي هَذَا، وَلَعَلَّكَ أنَ تَمُرَّ بِمَسْجِدِي هَذَا، وَقَبْرِي.
হতে পারে এই বছরের পর আমার সঙ্গে তোমার আর সাক্ষাৎ হবে না। তুমি হয়তো আমার মসজিদ ও কবরের পাশ দিয়ে যাবে।
এ কথা শুনে মুআয রা. কাঁদতে শুরু করেন। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২০৫২
সত্যিকারের ভালবাসার ক্ষেত্রে এমনই হয়। প্রেমাষ্পদের বিরহের কথা ভাবাই কষ্ট।
৮. মুহাম্মাদ ইবনে যায়েদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ
مَا سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ ذَاكِرًا رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم إِلاَّ ابْتَدَرَتْ عَيْنَاهُ تَبْكِيَانِ.
আমি যখনই (আমার দাদা) আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা আলোচনা করতে দেখেছি, তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরেছে। Ñতবাকাতে ইবনে সা‘দ ৪/৪০৩
এ থেকে বোঝা যায়, সাহাবায়ে কেরাম নবীজীকে অত্যন্ত গভীরভাবে ভালবাসতেন, যার ফলে নবীজী দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরও তাঁর কথা স্মরণ হলে চোখ ভেঙে অশ্রুধারা নামে।