রবিউল আউয়াল ১৪৪৫   ||   অক্টোবর ২০২৩

‘আসআলুকা লাযযাতান নাযারি ইলা ওয়াজহিক’
মুমিনের অন্তরে আল্লাহর দীদার লাভের আকাঙ্ক্ষা

মাওলানা আবু আবদুস সবূর মুহাম্মাদ আবদুল মাজীদ

আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। কাররামনা বানী আদামবলে তিনি মানুষকে সম্মানিত করেছেন। সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে মানবজাতির সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। আর মানুষকে দুনিয়ার বুকে তাঁর খেলাফত ও প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন। বোঝা গেল, আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক যেমনি আবদিয়াত ও দাসত্বের, তেমনি প্রেম ও ভালবাসা এবং ইশক ও মহব্বতের।

অতএব মানুষের অন্তরে সব কিছুর মায়া ও ভালবাসার ঊর্ধ্বে থাকবে আল্লাহর প্রেম ও ভালবাসাÑ এটাই যুক্তির দাবি ও বাস্তবতা।

যে মহব্বতে দিল প্রশান্ত হয়

মানুষ যখন তার আল্লাহর যিকির স্মরণ করে তখন যিকিরের নূর তার কলব থেকে সব রকমের অস্থিরতা ও অশান্তি এবং ভয়-ভীতি ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করে দেয়। কুরআনে হাকীমে আল্লাহ তাআলা বলেনÑ

اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَىِٕنُّ الْقُلُوْبُ.

জেনে রাখ! শুধু আল্লাহর যিকিরেই অন্তর শান্তি লাভ করে। Ñসূরা রাদ (১৩) : ২৮

আল্লাহর দীদার লাভের আকাঙ্ক্ষা

শুধু তাঁর স্মরণেই যদি দিল এত প্রশান্ত হয় তাহলে আখেরাতে যখন মাওলায়ে কারীমের দীদার লাভ হবে এবং তাঁর জামাল ও সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য নসীব হবে তখন ঈমানদারগণ কী পরিমাণ তৃপ্ত ও পরিতৃপ্ত হবে! কুরআন কারীমে আল্লাহ বলেনÑ

وُجُوْهٌ يَّوْمَىِٕذٍ نَّاضِرَةٌ، اِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ.

সেদিন অনেক চেহারা সজীব ও হাস্যোজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। Ñসূরা কিয়ামাহ (৭৫) : ২২-২৩

আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াহাব রাহ. বলেন, ইমাম মালেক রাহ. বলেছেনÑ

النَّاسُ يَنْظُرُونَ إِلَى اللهِ تَعَالَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَعْيُنِهِمْ.

আখেরাতে মানুষ স্ব-চক্ষে আল্লাহকে দেখতে পাবে। Ñআশ্শারীআহ, আর্জুরী, বর্ণনা ৫৭৪; শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, লালাকাঈ, বর্ণনা ৮৭০; হাদিল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ, ইবনুল কায়্যিম, পৃ. ৬৯৯

ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেনÑ

وَبِهِ أَدِينُ اللهَ.

অর্থাৎ আখেরাতে আল্লাহর দীদার লাভ হবেÑ আমি এ আকীদা পোষণ করি। Ñশরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, লালাকাঈ, বর্ণনা ৮৮৩; হাদিল আরওয়াহ, ইবনুল কায়্যিম, পৃ. ৬১৬

ইমাম আহমাদ রাহ. বলেনÑ

مَنْ قَالَ بِأَنَّ اللهَ تَعَالَى لَا يُرَى فِي الْآخِرَةِ فَقَدْ كَفَرَ.

যে বলে, আখিরাতে আল্লাহর দীদার হবে না সে কুফুরী করল। Ñআশ্শারীআহ, আর্জুরী, বর্ণনা ৫৭৭; হাদিল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ, ইবনুল কায়্যিম, পৃ. ৭০৪

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুযাইমা রাহ. বলেনÑ

مَنْ أَنْكَرَ رُؤْيَةَ الْمُؤْمِنِينَ خَالِقَهُمْ يَوْمَ الْمَعَادِ فَلَيْسُوا بِمُؤْمِنِينَ عِنْدَ الْمُؤْمِنِينَ.

কিয়ামতের দিন মুমিনেরা তাদের খালিকের দীদার লাভ করবেÑ এ বিষয়টি যারা অস্বীকার করে তারা মুমিনদের কাছে ঈমানদার বলে গণ্য নয়। Ñকিতাবুত তাওহীদ, ইবনে খুযাইমা ২/৫৮৫; হাদিল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ, ইবনুল কায়্যিম, পৃ. ৭০৯

আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী রাহ. বলেনÑ

گمراہ لوگ اس کے منکر ہيں، کيونکہ يہ دولت اُن کے نصيب ميں نہيں ۔

গোমরাহ লোকেরা তা অস্বীকার করে। কেননা, এ দৌলত ওদের ভাগ্যে নেই। Ñতাফসীরে উসমানী, সূরা কিয়ামার ২৩ নং আয়াতের অধীনে

জান্নাতে সবচেয়ে বড় নিআমত আল্লাহ তাআলার দীদার

সুহাইব রুমী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ

إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، قَالَ: يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ، وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ.

জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমরা আমার কাছে আরো কিছু চাও?

তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারাসমূহ উজ্জ্বল ও জ্যোতির্ময় করে দেননি? আপনি কি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে দাখিল করনেনি?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন তিনি পর্দা উঠিয়ে দেবেন (তখন তারা অনুভব করবে)। আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে প্রিয় কোনো জিনিস তাদের দেওয়া হয়নি। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮১

ভিড়মুক্ত অবস্থায় আল্লাহর দীদার

আল্লাহর দীদারের সময় কোনো ভিড় বা হৈহুল্লোড় হবে না। সব ঈমানদারই আল্লাহর দীদার লাভ করতে পারবে। নারী-পুরুষ সকলেই। মন ভরে এবং পরিপূর্ণ তৃপ্তিসহকারে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সরাসরি আল্লাহকে দেখতে পাবে। কোনোরকম ঝঞ্ঝাট ছাড়াই অত্যন্ত শান্তভাবে মুমিনগণ আল্লাহর দর্শনের স্বাদ লাভ করবে।

আবু রাযীন উকাইলী রা.  থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, আমি একদিন নবীজীর কাছে আরজ করলাম, আল্লাহর রাসূল! আখেরাতে আমরা সবাই কি ভিড়মুক্ত অবস্থায় আল্লাহকে দেখতে পাব?

তিনি বলেন, হাঁ।

আমি বললাম, আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে এর কোনো দৃষ্টান্ত আছে কি?

তিনি বললেন, আবু রাযীন! পূর্ণিমার রাতে কি তোমরা কোনো রকম ভিড় ছাড়াই সকলে চাঁদ দেখতে পাও না?

আমি বললাম, অবশ্যই!

তিনি বললেনÑ

فَإِنَّمَا هُوَ خَلْقٌ مِنْ خَلْقِ اللهِ، فَاللهُ أَجَلُّ وَأَعْظَمُ.

চাঁদ তো আল্লাহর এক সৃষ্টি; আর আল্লাহ হলেন সবচেয়ে মহান ও প্রতাপশালী। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৭৩১

আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন জিজ্ঞেস করলেনÑ

هَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ بِالظَّهِيرَةِ صَحْوًا لَيْسَ مَعَهَا سَحَابٌ؟ وَهَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ صَحْوًا لَيْسَ فِيهَا سَحَابٌ؟

দুপুরের মেঘমুক্ত পরিচ্ছন্ন আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কষ্ট করতে হয়? পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লাগে?

সবাই বললেন, আল্লাহর রাসূল! না, তা হয় না।

নবীজী বললেনÑ

مَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَّا كَمَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا.

তেমনি কিয়ামত দিবসেও প্রতিপালককে দেখতে তোমাদের কোনোই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে না। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৩

আল্লাহর দীদার অর্জনে সহায়ক আমল

১. শিরক ও রিয়ামুক্ত আমল

আল্লাহ তাআলা বলেনÑ

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا.

সুতরাং যে নিজ রবের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ রবের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। Ñসূরা কাহ্ফ (১৮) : ১১০

আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহ. কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনÑ

مَنْ أَرَادَ النَّظَرَ إِلَى وَجْهِ خَالِقِهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُخْبِرْ بِهِ أَحَدًا.

(আখিরাতে) যে নিজ খালিকের দর্শন লাভ করতে চায় সে যেন নেক আমল করে এবং সেটা মানুষের মাঝে প্রচার না করে। Ñশরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, লালাকাঈ, বর্ণনা ৮৯৫; হাদিল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ, ইবনুল কায়্যিম, পৃ. ৬৯৭

সুতরাং আয়াতের মর্ম হল, আখেরাতে আল্লাহর দীদার প্রত্যাশীকে যেমন নেক আমলের বিষয়ে যত্নবান হতে হবে, তেমনি ইবাদত-বন্দেগীতে কোনো ধরনের শিরকের অনুপ্রবেশ থেকেও পরিপূর্ণরূপে বেঁচে থাকতে হবে। এমনকি রিয়া যা শিরকে খফী অর্থাৎ গোপন শিরক তা থেকেও আমলকে পবিত্র রাখতে হবে।

২. ফজর ও আসর নামাযের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ

হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ نَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، فَقَالَ: أَمَا إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ، لَا تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَا تُغْلَبُوا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ، وَقَبْلَ غُرُوبِهَا - يَعْنِي الْعَصْرَ وَالْفَجْرَ.

আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এ সময় তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, শোনো! তোমরা অবশ্যই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেমন এ চাঁদকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে গিয়ে তোমরা পরস্পর ভিড়ের চাপে পড়বে না। যদি তোমরা পার তাহলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে নামায আদায়ে পিছপা হয়ো না। অর্থাৎ আসর ও ফজর। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৩; সহীহ বুখারীহাদীস ৫৫৪

৩. তাকওয়া অবলম্বন

উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. তাঁর এক গভর্নরের কাছে প্রেরিত চিঠিতে লিখেনÑ

আমি তোমাকে অসিয়ত করছিÑ তুমি আল্লাহকে ভয় করবে ও তাঁর আনুগত্য করবে। তাঁর আদেশকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে।

আল্লাহ তোমার ওপর যে দ্বীনী দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন এবং তোমাকে তাঁর কিতাবের যেটুকু হিফয করিয়েছেন তার প্রতি যত্নবান থাকবে।

মনে রাখবে, তাকওয়ার মাধ্যমেই আল্লাহর ওলীগণ তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে রেহাই পেয়েছেন এবং এর মাধ্যমেই তারা আল্লাহর প্রিয় হয়েছেন। এর মাধ্যমেই তারা (আখিরাতে) নবীগণের সঙ্গ লাভ করবেন। এর মাধ্যমেই (আখিরাতে) তাদের চেহারা উজ্জ্বল থাকবে এবং তারা তাদের খালিকের দীদার লাভ করবেন। Ñর্আরদ আলাল জাহমিয়্যাহ, দারিমী, বর্ণনা ২০২; হাদিল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ, ইবনুল কায়্যিম, পৃ. ৬৯৪-৬৯৫

৪. সিয়াম পালন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ

لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ.

সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি খুশি। একটি খুশি ইফতারের সময়, আরেকটি  খুশি আপন প্রতিপালকের সাথে মিলিত হওয়ার সময়। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৪

আল্লাহর দীদার থেকে বঞ্চিত কারা

আল্লাহ তাআলা বলেনÑ

كَلَّاۤ اِنَّهُمْ عَنْ رَّبِّهِمْ يَوْمَىِٕذٍ لَّمَحْجُوْبُوْنَ، ثُمَّ اِنَّهُمْ لَصَالُوا الْجَحِيْمِ، ثُمَّ يُقَالُ هٰذَا الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ.

কখনো নয়! বস্তুত তারা সেদিন তাদের প্রতিপালক (অর্থাৎ তাঁর দর্শন) থেকে বঞ্চিত হবে। তারপর তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। তারপর বলা হবে, এটাই সেই সাজা, যাকে তোমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করতে। Ñসূরা মুতাফফিফীন (৮৩) : ১৫-১৭

এ আয়াতের আলোকে ইমামগণ বলেন, যারা মুমিন নয় অর্থাৎ যারা কুফর, শিরক বা নিফাক নিয়ে মারা যাবে এবং যাদের প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট থাকবেন তারা আখিরাতে আল্লাহ তাআলার দীদার থেকে বঞ্চিত হবে। (দেখুন শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, লালাকাঈ, পৃ. ৫১৬-৫১৯; হাদিল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ, ইবনুল কায়্যিম, পৃ. ৬১৬-৬১৭)

যেসব আমলে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্যের স্বাদ পাওয়া যায়

এ জগতে যদিও আল্লাহর দীদার সম্ভব নয়, কিন্তু আল্লাহ তাআলা দয়াপরবশ হয়ে মানুষের জন্য কিছু আমলের ব্যবস্থা রেখেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহকে না দেখেও তাঁর বিশেষ নৈকট্যের স্বাদ অনুভব করা যায়। এ ধরনের কিছু আমল হলÑ

ক. নামায

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ

إِنَّمَا جُعِلَ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ.

নামাযের মধ্যেই রাখা হয়েছে আমার চোখের শীতলতা। Ñসুনানে নাসায়ী, হাদীস ৩৯৩৯

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ

إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ فِي صَلاَتِه فَإِنَّهُ يُنَاجِي رَبَّه.

তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলে। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৪১৭

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ

إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا كَانَ فِي الصَّلاَةِ فَإِنَّ اللهَ قِبَلَ وَجْهِهِ.

তোমাদের কেউ যখন নামাযে থাকে তখন আল্লাহ তার সামনে থাকেন। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৭৫৩

খ. সিজদা

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ

أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ، وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.

বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকে, যখন সে সিজদায় থাকে। সুতরাং তোমরা (সিজদায়) বেশি বেশি দুআ কর। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮২

সিজদায় পাঠের জন্য হাদীস শরীফে নবীজীর বিভিন্ন দুআ বর্ণিত রয়েছে। আমরা সেসব দুআর প্রতি যত্নবান হব। এছাড়া নফল নামাযের সিজদায় নিজের ভাষায়ও দুআ করা যায়।

গ. কুরআন তিলাওয়াত

কুরআন আল্লাহ তাআলার কালাম। আল্লাহ তাআলার বাণী। তাই কুরআন তিলাওয়াতের সময় আল্লাহ তাআলার নৈকট্য বিশেষভাবে অনুভূত হয়। কুরআন তিলাওয়াতের সময় আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত নাযিল হয়।

ফারওয়া ইবনে নাওফিল আশজায়ী রাহ. বলেন, আমি একবার খাব্বাব ইবনুল আরাত রা.-এর সঙ্গে মসজিদ থেকে তার ঘরে আসলাম। তখন তিনি আমাকে বললেনÑ

إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَقَرَّبَ إِلَى اللَّهِ فَإِنَّكَ لَا تَقَرَّبُ إِلَيْهِ بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ كَلَامِهِ.

তোমার যদি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সামর্থ্য থাকে তবে মনে রেখো, তাঁর নৈকট্য অর্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম হল তাঁরই কালাম। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ৩০৭২২

ঘ. দুআ-মুনাজাত; বিশেষত শেষরাতের দুআ-মুনাজাত

কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ

وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَاِنِّيْ قَرِيْبٌ اُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَ لْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ.

(হে নবী!) আমার বান্দাগণ যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন (আপনি বলুন যে,) আমি তো নিকটবর্তী; কেউ  যখন  আমাকে  ডাকে  আমি  তার  ডাকে সাড়া দিই। অতএব তারাও যেন আমার হুকুম মানে এবং আমার প্রতি ঈমান আনে, আশা করা যায় তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হবে। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৮৬

শেষরাতে তাহাজ্জুদ, দুআ-মুনাজাত এবং ইসতিগফার ও কান্নাকাটি দেহের জন্য ভারী কষ্টকর হলেও আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে বিরাট উপকারী। হৃদয়েকে উষ্ণ ও সজীব রাখার অন্যতম প্রধান উপায়। এ সময় আল্লাহ তাআলা আপন শান অনুযায়ী দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। মানুষকে তাঁর প্রতি আহ্বান করেন। সেজন্য এ সময় আল্লাহ তাআলার নৈকট্য বিশেষভাবে অনুভূত হয়।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ

আমাদের মহান রব প্রতি রাতেই রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন। বলেন, কে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে দান করব। কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮

ঙ. বাইতুল্লাহর যিয়ারত এবং বাইতুল্লাহর তাওয়াফ

বাইতুল্লাহ মানে আল্লাহর ঘর। যে ঘরের সম্পর্ক সরাসরি আল্লাহ্ তাআলার সঙ্গেÑ সে ঘরের যিয়ারত ও তাওয়াফে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অনুভূত হবেÑ এটাই তো স্বাভাবিক।

হযরত মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ দামাত বারাকাতুহুমকে আল্লাহ তাআলা জাযায়ে খায়ের দান করুন। বাইতুল্লাহর মুসাফিরগ্রন্থটিতে তিনি  এ বিষয়টি অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। এটি নিছক কোনো সফরনামা নয়; এটিকে আসরারে হজ¦ ও বাইতুল্লাহর উপর লিখিত সকল কিতাবের সার নির্যাসও বলা যেতে পারে। এ গ্রন্থটি যতবার পড়েছি, ততবার দিলের ভেতরে আল্লাহর দীদারের আকাক্সক্ষা নতুনভাবে অনুভব করেছি।

উস্তাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা আবদুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ এ গ্রন্থের ভূমিকায় এ প্রসঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ও যিয়ারতের সময় আমাদের অনুভূতি কেমন হওয়া উচিতÑ এ সম্পর্কে তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর ভাই উরওয়া রাহ. একবার তাওয়াফের হালাতে বেখেয়াল অবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে একটি কথা জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। তাতে উরওয়া পেরেশান হলেন। পরবর্তী সাক্ষাতে ইবনে উমর রা. তাকে বললেন, কথাটা তুমি বলেছিলে যখন আমি তাওয়াফের হালাতে ছিলাম। এরপর বললেনÑ

وَنَحْنُ فِي الطَّوَافِ نَتَخَايَلُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ بَيْنَ أَعْيُنِنَا، وَكُنْتَ قَادِرًا أَنْ تَلْقَانِي فِي غَيْرِ ذَلِكَ الْمَوْطِنِ.

 আর তাওয়াফের সময় আমরা সম্মুখে আল্লাহকে কল্পনা করে থাকি। তুমি কথাটা অন্য স্থানে বলতে পারতে। Ñহিলয়াতুল আউলিয়া, আবু নুআঈম ১/৩০৯

চ. ইহসান

ইহসান এমন একটি আমল, যার মাধ্যমে যে কোনো মুহূর্তে রব্বে কারীমের নৈকট্যের স্বাদ হাসিল করা যায়হাদীসে জিবরীলে আছে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেনÑ

فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِحْسَانِ.

আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।

তিনি বললেনÑ

أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ.

তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তুমি তাঁকে না দেখ তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৮

দিলের এ কাইফিয়াত একদিনে পয়দা হয় না। এর জন্য মেহনত প্রয়োজন। আমরা যদি এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা ও মুরাকাবা অব্যাহত রাখি, ইনশাআল্লাহ একসময় তা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যাবে। তখন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের স্বাদ লাভ করা যাবে।

শেষ কথা

মুমিনেরা আখিরাতে আল্লাহ তাআলার দীদার ও দর্শন লাভ করবেÑ এ বিষয়টি বহু আয়াত ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাই এ বিষয়ে ঈমান রাখা জরুরি। পাশাপাশি অন্তরে আল্লাহ তাআলার দীদার লাভের আকাক্সক্ষাও থাকতে হবে। উবাদা ইবনুস সামিত রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ

مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ أَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ، وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ.

 যে আল্লাহর সাক্ষাতকে পছন্দ করে, আল্লাহ তার সাক্ষাতকে পছন্দ করেন। আর যে আল্লাহর সাক্ষাত অপছন্দ করে, আল্লাহ্ও তার সাক্ষাত অপছন্দ করেন। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৫০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৮৩

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অন্তিম মুহূর্তে এই বলে দুআ করেছিলেনÑ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَأَلْحِقْنِي بِالرَّفِيقِ الْأَعْلَى.

হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন এবং আমাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মহান বন্ধুর মিলন দান করুন। Ñমুয়াত্তা মালেক, হাদীস ৪৬; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৭৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৪৪

সবশেষে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি দুআ উল্লেখ করছি, যেখানে তিনি রব্বে কারীমের দীদার লাভের প্রার্থনা করেছেন।

একবার  আম্মার ইবনে ইয়াসির রা. নামায পড়ালেন। নামায শেষে কথা-প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আমি নামাযে এমন কিছু দুআ করেছি, যেগুলো আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি।

দুআটি এইÑ

اللَّهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ، وَقُدْرَتِكَ عَلى الْخَلْقِ، أَحْيِنِيْ مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِيْ، وَتَوَفَّنِيْ إِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِي.

 اللَّهُمَّ وَأَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، وَأَسْأَلُكَ كَلِمَةَ الْحَقِّ فِي الرِّضَا وَالْغَضَبِ، وَأَسْأَلُكَ الْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنَى.

وَأَسْأَلُكَ نَعِيمًا لَا يَنْفَدُ، وَأَسْأَلُكَ قُرَّةَ عَيْنٍ لَا تَنْقَطِعُ، وَأَسْأَلُكَ الرِّضَاءَ بَعْدَ الْقَضَاءِ، وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ، وَأَسْأَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ، وَالشَّوْقَ إِلَى لِقَائِكَ، فِي غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ، وَلَا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ.

 اللَّهُمَّ زَيِّنَّا بِزِينَةِ الْإِيمَانِ، وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُهْتَدِينَ.

ইয়া আল্লাহ! গায়েবের খবর আপনিই জানেন এবং আপনিই সমস্ত সৃষ্টির ওপর ক্ষমতাবান। অতএব আপনার নিকট আমার প্রার্থনাÑ আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতদিন আপনার জ্ঞানে আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর আর আমাকে উঠিয়ে নিন যখন আপনার জ্ঞানে মৃত্যু আমার জন্য উত্তম।

আপনার কাছে প্রার্থনাÑ আপনাকে যেন ভয় করি গোপনে ও প্রকাশ্যে। এবং যেন হকের কথা বলি আনন্দে ও ক্রোধে। আরো প্রার্থনাÑ আমি যেন দারিদ্র্যে ও প্রাচুর্যে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করি।

প্রার্থনা করছি ওই নিআমত, যা নিঃশেষ হবে না এবং ওই আনন্দ, যার সমাপ্তি ঘটবে না।

আপনার কাছে প্রার্থনা, যেন আপনার ফায়সালায় রাজি থাকি। আরো প্রার্থনা, মৃত্যুর পর যেন শান্তির জীবন লাভ করি।

আপনার কাছে প্রার্থনা, আমি যেন আপনার দীদার ও দর্শন লাভের পরমানন্দ উপভোগ করতে পারি এবং যেন সর্বদা আপনার সাক্ষাতের চিন্তায় ব্যাকুল থাকি। আমি যেন কষ্টদায়ক বিপদ ও ভ্রষ্টকারী ফিতনা থেকে মুক্ত থাকি।

ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে করুন ঈমানের শোভায় সুশোভিত, সুপথপ্রাপ্ত এবং পথের দিশারী (যেন নিজেরাও সুপথে থাকি, অন্যদেরও সুপথ প্রদর্শন করি। Ñসুনানে নাসাঈ, হাদীস ১৩০৫ ও ১৩০৬

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল করে নিন। আখিরাতে আমাদেরকে তাঁর দীদার লাভের পরম সৌভাগ্য দান করুনÑ আমীন।  

 

 

advertisement