রবিউল আউয়াল ১৪৪৫   ||   অক্টোবর ২০২৩

আলকুরআনের দৃষ্টিতে সবর
তাৎপর্য গুরুত্ব ও ফযীলত

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল হাকীম

আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সৃষ্টির লক্ষ্য তিনি কুরআন মাজীদে নানা শব্দ-বাক্যে ব্যক্ত করেছেন। কুরআন মাজীদের এক জায়গায় বিষয়টি এই শব্দ-বাক্যে ব্যক্ত করেনÑ

الَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَ الْحَيٰوةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا  وَ هُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفُوْرُ.

তিনিই সেই সত্তা, যিনি জীবন-মৃত্যুকে এ পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন যে, তোমাদের মধ্যে কে অধিক উত্তম আমল করে। আর তিনিই পরাক্রমশালী ও অধিক ক্ষমাশীল। Ñসূরা মুলক (৬৭) : ২

আল্লাহ তাআলা মানুষের এ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছেন পৃথিবী। মানুষ পৃথিবীতে এসে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নানা রকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে থাকে। মানুষের প্রবৃত্তি তার জন্য এক পরীক্ষার বস্তু। এই প্রবৃত্তি-পূজা থেকে বেরিয়ে নিজেকে সঠিক পথের দিশারী বানানোÑ আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশাল এক পরীক্ষা। অনুরূপ মানুষ ও জিনদের মধ্যে যারা সদা অন্যায়ের পথে ডাকছেÑ তারা সঠিক পথের অনুসন্ধিৎসুদের জন্য বড় পরীক্ষা। তাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দেওয়াÑ মুমিনের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। তাছাড়া পার্থিব বিপদাপদ ও কষ্টক্লেশের মাধ্যমেও আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা করে থাকেন। একজন মুমিনকে তার জীবনে এসব পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা করতে চানÑ কে সবচে উত্তম আমলকারী আর কে নয়। এ পৃথিবীতে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বরং আল্লাহ তাআলার সবচে প্রিয় বান্দাগণও এ পৃথিবীতে কঠিন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন। তবে তারা ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে আল্লাহ তাআলার মনোনীত ও সবচে প্রিয় বান্দারূপে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। অনুরূপ যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ ছাড়াও আল্লাহ তাআলার বিশেষ বান্দাগণও বিপদের মুখে পড়ে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। তাঁরা আল্লাহ তাআলার মনোনীত ও বিশেষ বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। উক্ত সফলতা ও সৌভাগ্য অর্জনের ক্ষেত্রে ধৈর্যের রয়েছে অসাধারণ প্রভাব। এজন্য কুরআন মাজীদ মানুষকে সবর অবলম্বন করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। নানাভাবে মানুষকে ধৈর্যের চর্চা করার আহ্বান জানিয়েছে। এবং এর বহুবিধ উপকারিতা ও ফায়দার কথা তুলে ধরেছে।

কুরআন মাজীদে সবর শব্দটি বিভিন্নরূপে প্রায় নব্বই জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। যেমনটা ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ. (মৃত্যু : ২৪১ হি.) থেকে বর্ণিত রয়েছে। তার মধ্যে বাষট্টি জায়গায় সবরের আদেশসূচক ব্যবহার এসেছে। [দ্র. উদ্দাতুস্ সাবিরীন, ইবনুল কায়্যিম রাহ., পৃ. ৭১, যদিও ইবনে আশুর রাহ. (মৃত্যু : ১৩৯৩ হি.) তাঁর বিখ্যাত কিতাব আততাহরীর ওয়াততানবীরকিতাবে বলেছেন, কুরআন মাজীদে সবর শব্দটি সত্তর বারেরও বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। Ñআততাহরীর ওয়াততানবীর ১/৪৭৮]

যাহোক সবর শব্দটি যে কুরআন মাজীদে অনেক জায়গায় উল্লেখিত হয়েছে, সেটা উপরের কথা থেকে স্পষ্ট। এ থেকে বোঝা যায় সবর মুমিনের জীবনে এক অনিবার্য বাস্তবতা। অবশ্য-অর্জনীয় এক বিষয়।

সবর শব্দের অর্থ ও বিশ্লেষণ

কুরআন মাজীদে صبر শব্দটি বিভিন্নরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মূল অর্থ হল, নিজেকে সংকট, অপছন্দনীয়  অবস্থা ও পরিস্থিতিতে সুনিয়ন্ত্রিত রাখা, হক ও নীতির ওপর অটল অবিচল রাখা। যদিও সবজায়গায় আভিধানিক অর্থের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিভিন্ন অর্থ রয়েছে। আল্লামা রাগেব আস্ফাহানী রাহ. (মৃত্যু : ৫০২ হি.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ আলমুফরাদাত ফী গারীবিল কুরআন’-صبر -এর অর্থ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেনÑ

والصبر حبس النفس على ما يقتضيه العقل والشرع، أو عما يقتضيان حبسها عنه.

বিবেক-বুদ্ধি ও শরীয়ত যা করতে দাবি জানায়, নিজেকে তাতে নিয়োজিত করা আর যা থেকে দূরে থাকার দাবি জানায়, তা থেকে নিজেকে দূরে রাখা। Ñআলমুফরাদাত ফী গারীবিল কুরআন, পৃ. ২৭৩

নিচে صبر শব্দটির শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে মৌলিক কিছু ব্যবহার তুলে ধরা হলÑ

এক. বিপদাপদে নিজেকে স্থির রাখা ও আল্লাহ তাআলার ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনÑ

وَ لَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَ الْجُوْعِ وَ نَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَ الْاَنْفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِيْنَ،الَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْۤا اِنَّا لِلهِ وَ اِنَّاۤ اِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ.

আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবÑ (কখনো) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনো) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনো) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়। যারা তাদের কোনো মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৫৫-১৫৬

দুই. প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে গিয়ে গোনাহ ও অন্যায় থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান, তাঁর ইবাদাত-বন্দেগী ও দ্বীনের যাবতীয় বিধি-বিধান পালনে সদা তৎপর থাকা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনÑ

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَ صَابِرُوْا وَ رَابِطُوْا وَ اتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ۠.

হে মুুমিনগণ! সবর অবলম্বন কর, মোকাবেলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন কর এবং সীমান্ত রক্ষায় স্থিত থাক। আর আল্লাহকে ভয় করে চল, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। Ñসূরা আলে ইমরান (৩) : ২০০

এখানে সবর শব্দটি অনেক ব্যাপক। এর অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। যথা আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে অবিচলতা প্রদর্শন করা, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য মনের ইচ্ছা ও চাহিদাকে দমন করা এবং কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করা। এখানে এই তিন প্রকার সবরই উদ্দেশ্য হতে পারে। (তাওযীহুল কুরআন, পৃ. ১৮৫)

তিন. জিহাদের ময়দানে শত্রুর মোকাবেলায় দৃঢ়পদ থাকা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনÑ

وَ لَمَّا بَرَزُوْا لِجَالُوْتَ وَ جُنُوْدِهٖ قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَي الْقَوْمِ الْكٰفِرِيْنَ.

তারা যখন জালূত ও তার সৈন্যদের মুখোমুখি হল তখন তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে সবর দান কর এবং আমাদেরকে অবিচল-পদ রাখ। এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য ও বিজয় দান কর। Ñসূরা বাকারা (২) : ২৫০

চার. যালেম ও অত্যাচারীদের যুলুম নির্যাতন সহ্য করা।

وَ لَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰي مَا كُذِّبُوْا وَ اُوْذُوْا حَتّٰۤي اَتٰىهُمْ نَصْرُنَا وَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِ اللهِ وَ لَقَدْ جَآءَكَ مِنْ نَّبَاِي الْمُرْسَلِيْنَ.

বস্তুত তোমাদের পূর্বে বহু রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে যে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে এবং কষ্ট দেওয়া হয়েছে তাতে তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল; যে পর্যন্ত না তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছেছে। এমন কেউ নেই, যে আল্লাহর কথা পরিবর্তন করতে পারে। (পূর্ববর্তী) রাসূলগণের কিছু ঘটনা তোমার কাছে তো পৌঁছেছেই। Ñসূরা আনআম (৭) : ৩৪

এখানে শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের কষ্টই উদ্দেশ্য হতে পারে।

আলকুরআনে ধৈর্যের আদেশের তাৎপর্য

এ পৃথিবী যেহেতু পরীক্ষাক্ষেত্র। তাই নানাভাবে মানুষের জীবনে বিভিন্নমুখী পরীক্ষা আসবে। নানারকম বিপদাপদ আসবে। তাকে এ পরীক্ষায় ও বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সেই কঠিন বিপদাপদে তাকে উত্তীর্ণ হতে হবে। তাই আল্লাহ তাআলা মানুষকে কুরআন মাজীদের নানা জায়গায় ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে বলেনÑ

فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ اُولُوا الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَ لَا تَسْتَعْجِلْ لَّهُمْ كَاَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوْعَدُوْنَ لَمْ يَلْبَثُوْۤا اِلَّا سَاعَةً مِّنْ نَّهَارٍ بَلٰغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ اِلَّا الْقَوْمُ الْفٰسِقُوْنَ.

(সুতরাং হে রাসূল!) তুমি সবর অবলম্বন কর, যেমন সবর অবলম্বন করেছিল দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ এবং তুমি তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) বিষয়ে তাড়াহুড়া করো না। তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে, যেদিন তারা তা দেখবে, সেদিন (তাদের মনে হবে) তারা যেন (দুনিয়ায়) দিনের এক মুহূর্তের বেশি অবস্থান করেনি। এটাই সেই বার্তা, যা পৌঁছিয়ে দেওয়া হল। অতঃপর ধ্বংস তো হবে কেবল এমন সব লোক, যারা অবাধ্য। Ñসূরা আহকাফ (৪৬) : ৩৫

তিনি মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেনÑ

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَ صَابِرُوْا وَ رَابِطُوْا وَ اتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.

হে মুমিনগণ! সবর অবলম্বন কর, মোকাবেলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন কর এবং সীমান্ত রক্ষায় স্থিত থাক। আর আল্লাহকে ভয় করে চল, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। Ñসূরা আলে ইমরান (৩) : ২০০

ধৈর্য ধারণকারীদের প্রতি আল্লাহর সাহায্যের ঘোষণা

বিপদাপদে ধৈর্য ধারণকারীদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য করার ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ইরশাদ করেনÑ

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصّٰبِرِيْنَ.

হে মুমিনগণ! সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৫৩

ধৈর্য ধারণকারীদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধারের ঘোষণা

যারা ধৈর্য ধারণ করে, তাদেরকে আল্লাহ তাআলা বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। জটিল থেকে জটিল অবস্থায় সহজ পথ দেখান। এবং জীবনের নানা ধাপে তাদেরকে সফলতা দান করেন। তিনি ইরশাদ করেনÑ

الَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْۤا اِنَّا لِلهِ وَ اِنَّاۤ اِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ، اُولٰٓىِٕكَ عَلَيْهِمْ صَلَوٰتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ رَحْمَةٌ وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُهْتَدُوْنَ.

যারা তাদের কোনো মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, আমরা সকলে আল্লাহরই জন্য এবং আমাদেরকে তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হেদায়েতের ওপর। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৫৬-১৫৭

তিনি আরো বলেনÑ

قَالَ مُوْسٰي لِقَوْمِهِ اسْتَعِيْنُوْا بِاللهِ وَ اصْبِرُوْا اِنَّ الْاَرْضَ لِلهِ يُوْرِثُهَا مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَ الْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْن..

মূসা নিজ সম্প্রদায়কে বলল, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও ও ধৈর্য ধারণ কর। বিশ্বাস রাখ, যমীন আল্লাহর; তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যাকে চান এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন। আর শেষ পরিণাম মুত্তাকীদেরই অনুকূলে থাকে। Ñসূরা আরাফ (৭) : ১২৮

ধৈর্য ধারণকারীদেরকে পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা

আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ধৈর্য ধারণকারীদেরকে বিভিন্ন প্রতিদানের কথা শুনিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেনÑ

مَا عِنْدَكُمْ يَنْفَدُ وَ مَا عِنْدَ اللهِ بَاقٍ وَ لَنَجْزِيَنَّ الَّذِيْنَ صَبَرُوْۤا اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ.

তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী। যারা সবর করে আমি তাদের উৎকৃষ্ট কাজ অনুযায়ী অবশ্যই তাদেরকে প্রতিদান দেব। Ñসূরা নাহল (১৬) : ৯৬

তিনি আরো বলেনÑ

وَ الَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّ عَلَانِيَةً وَّ يَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمْ عُقْبَي الدَّارِ، جَنّٰتُ عَدْنٍ يَّدْخُلُوْنَهَا وَ مَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآىِٕهِمْ وَ اَزْوَاجِهِمْ وَ ذُرِّيّٰتِهِمْ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةُ يَدْخُلُوْنَ عَلَيْهِمْ مِّنْ كُلِّ بَابٍ، سَلٰمٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَي الدَّارِ.

এবং তারা সেইসকল লোক, যারা নিজ প্রতিপালকের সন্তুষ্টিবিধানের উদ্দেশ্যে সবর অবলম্বন করেছে, নামায কায়েম করেছে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং তারা দুর্ব্যবহারকে প্রতিরোধ করে সদ্ব্যবহার দ্বারা। প্রকৃত নিবাসে উৎকৃষ্ট পরিণাম তাদেরই জন্য। (অর্থাৎ) স্থায়ীভাবে অবস্থানের সেই উদ্যানসমূহ, যার ভেতর তারা নিজেরাও প্রবেশ করবে এবং তাদের বাপ-দাদাগণ, স্ত্রীগণ ও সন্তানদের মধ্যে যারা নেককার হবে তারাও। আর (তাদের অভ্যর্থনার জন্য) ফেরেশতাগণ তাদের নিকট প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। (আর বলতে থাকবেÑ) তোমরা (দুনিয়ায়) যে সবর অবলম্বন করেছিলে তার বদৌলতে এখন তোমাদের প্রতি কেবল শান্তিই বর্ষিত হবে এবং  (তোমাদের) প্রকৃত নিবাসে এটা কতইনা উৎকৃষ্ট পরিণাম। Ñসূরা রাদ (১৩) : ২২-২৫

আরো ইরশাদ হয়েছেÑ

اُولٰٓىِٕكَ يُؤْتَوْنَ اَجْرَهُمْ مَّرَّتَيْنِ بِمَا صَبَرُوْا وَ يَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ وَ مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ يُنْفِقُوْنَ.

এরূপ ব্যক্তিদেরকে তাদের প্রতিদান দেওয়া হবে দ্বিগুণ। কেননা তারা সবর অবলম্বন করেছে, তারা মন্দকে প্রতিহত করে ভালোর দ্বারা এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। Ñসূরা কাসাস (২৮) : ৫৪

তিনি আরো বলেনÑ

وَ جَعَلْنَا مِنْهُمْ اَىِٕمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوْا وَ كَانُوْا بِاٰيٰتِنَا يُوْقِنُوْنَ.

আর আমি তাদের মধ্যে কিছু লোককেÑ যখন তারা সবর অবলম্বন করলÑ এমন নেতা বানিয়ে দিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ প্রদর্শন করত এবং তারা আমার আয়াতসমূহে গভীর বিশ্বাস রাখত। Ñসূরা সাজদা (৩২) : ২৪

উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইসলামে সবর ও ধৈর্যের বিষয়টি কত তাৎপর্যপূর্ণ ও কত অর্থবহ। ইহকালের শান্তি ও রহমত থেকে শুরু করে পরকালের শান্তি ও সুখের নিশ্চয়তা দান করে এই সবর ও ধৈর্য।

তাই তো রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবর বা ধৈর্যকে আলো সাব্যস্ত করেছেন। ইরশাদ হয়েছেÑ

الصَّبْرُ ضِيَاءٌ.

সবর ও ধৈর্য হল আলো। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯০২

অর্থাৎ সবর ও ধৈর্য জীবনকে আলোকিত করে। জীবনের সকল অঙ্গনকে করে দেয় দ্যূতিময়। তাই জীবনকে রাঙাতে, জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে আলোর ছোঁয়া পেতে আমাদেরকে অবশ্যই সবর অবলম্বন করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যাবতীয় অর্থেই সবরকারী ও ধৈর্যশীল হওয়ার তাওফীক দান করুনÑ আমীন। 

 

 

advertisement