ফিরে দেখা ১৪৪৪ হিজরী : আমরা যাঁদের হারিয়েছি
(গত সংখ্যার পর)
২৫ মুহাররম (২৪ আগস্ট ২০২২), বুধবার
মাওলানা ফখরুদ্দীন রাহ.
মানিকগঞ্জের মুরব্বী আলেম ছিলেন। মানিকগঞ্জের প্রাচীন মাদরাসা কুস্তা জামিয়া ইসলামিয়া আশরাফুল উলূম (প্রতিষ্ঠা : ১৯২৬ ঈ.)-এ দীর্ঘ ত্রিশ বছর মুহতামিম ছিলেন। আশরাফুল উলূম বড় কাটারা মাদরাসায় মেশকাত পড়ে লালবাগ মাদরাসায় দাওরায়ে হাদীস পড়েছেন। পীরজী হুজুর রাহ. (মৃত্যু : ১৩৯৬ হি.), হাফেজ্জী হুজুর রাহ. (মৃত্যু : ১৪০৭ হি.) এবং মাওলানা আবদুল মাজীদ ঢাকুবী রাহ. (মৃত্যু : ১৪১৮ হি.)-এর শাগরিদ ছিলেন।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৮৫ বছর।
২৭ মুহাররম (২৬ আগস্ট ২০২২), জুমাবার
মাওলানা শামসুল হক কাদিরপুরী রাহ.
ফেনী দারুল উলূম ওলামাবাজার মাদরাসার উস্তায ছিলেন। ওলামাবাজারের হুজুর হযরত মাওলানা আবদুল হালীম রাহ. (মৃত্যু : ১৪১২ হি.)-এর খলীফা ছিলেন। নোয়াখালী সদর সুধারাম থানাধীন পণ্ডিতপুরের দারুল উলূম সিদ্দীকিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৮৭ বছর।
২৯ মুহাররম (২৮ আগস্ট ২০২২), রবিবার
হযরত মাওলানা সাঈদ আহমাদ পার্নাম্বুটী রাহ.
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের প্রসিদ্ধ বুযুর্গ আলেম। হযরত হারদূয়ী রাহ.-এর খেলাফতপ্রাপ্ত ছিলেন। তামিলনাড়ুর পার্নাম্বুটে মাদরাসা ওসিয়্যাতুল উলূমের সদর ও সারপুরস্ত ছিলেন।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ৭৩ বছর।
শাইখুল ইসলাম হযরত তাকী উসমানী দা. বা.‘সফর দর সফর’ কিতাবে (পৃষ্ঠা ৩৪৩-৩৪৪) তামিলনাড়ু সফরের আলোচনায় তাঁর অনেক প্রশংসা করেছেন।
৮ সফর (৫ সেপ্টেম্বর ২০২২), সোমবার
মুফতী ইবরাহীম খান ছাহেব রাহ.
মুফতীয়ে আজম মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ.-এর বিশেষ শাগিরদ ছিলেন। ইন্তেকাল পর্যন্ত মেখল হামিউস সুন্নাহ মাদরাসায় খেদমত করে গেছেন। ‘শরীয়ত ও প্রচলিত কুসংস্কার’সহ একাধিক কিতাব রচনা করেছেন।
১৪ সফর (১১ সেপ্টেম্বর ২০২২), রবিবার
মাওলানা তাজুল ইসলাম রাহ.
টেকনাফের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইমদাদিয়া লেঙ্গুরবিল-এর প্রবীণ উস্তায ছিলেন।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৮৩ বছর।
২৭ সফর (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২), শনিবার
মাওলানা আবদুল বারী রাহ.
নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা চৌমুহনী ইসলামিয়া আরাবিয়ার প্রবীণ মুহাদ্দিস ছিলেন। ত্রিশ বছরেরও অধিককাল তিনি এ প্রতিষ্ঠানে তাদরীসী খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস ছাহেব মাওলানা আবদুল কাইয়ুম ছাহেব রাহ., মাওলানা হামিদ ছাহেব রাহ. এবং মাওলানা আবদুল আযীয মুহাদ্দিস ছাহেব রাহ. প্রমুখ ছিলেন তাঁর উস্তায। কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের বিখ্যাত বুযুর্গ নারায়ণকরা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মাওলানা সূফী আনওয়ারুল্লাহ রাহ. ছিলেন তাঁর আধ্যাত্মিক শায়েখ।
৭ রবিউল আউওয়াল [মিশরের চাঁদ দেখা অনুসারে] (৩ অক্টোবর ২০২২), সোমবার
শায়েখ উসামা আবদুল আযীম আলআযহারী রাহ.
মিশরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুযুর্গ আলেম ছিলেন। তাঁর ইলমী পরিপক্বতা, যুহদ-তাকওয়া আলেমদের মাঝে স্বীকৃত ছিল। উসূলে ফিকহ শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক কিতাব রচনা করেছেন। এছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন পাণ্ডুলিপির তাহকীক করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি এই-
১. حجية قول الصحابي.
২. السبيل لتصفية علم الأصول من الدخيل.
৩. مدخل الهائب إلى تيسير وتحرير مختصر ابن الحاجب.
৪. إتحاف الأكابر بتهذيب كتاب الكبائر للذهبي.
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৭৭ বছর।
২১ রবিউল আখির (১৬ নভেম্বর ২০২২), বৃহস্পতিবার
হযরত মাওলানা খুরশীদ আহমাদ রাহ.
পাকিস্তানের বিখ্যাত জামিয়া খায়রুল মাদারেস মুলতানের প্রবীণ উস্তায ও উস্তাযুল হাদীস ছিলেন।
১৮ জুমাদাল উলা (১৩ ডিসেম্বর ২০২২), মঙ্গলবার
হযরত মাওলানা আতাউর রহমান কাসেমী রাহ.
ভারতের তামিলনাড়ুর প্রসিদ্ধ আলেম। তামিলনাড়ুর তিরুপাতুর জেলার ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন মাদরাসায় দীর্ঘ ২২ বছর তাদরীসী খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি মাদরাসার সদরে মুদাররিস ও নাযেমে তালীমাত ছিলেন। জনসাধারণের মধ্যেও তাঁর দ্বীনী খেদমতের পরিধি বিস্তৃত ছিল।
৮ জুমাদাল আখিরাহ (২ জানুয়ারি ২০২৩), সোমবার
শায়েখ মুহাম্মাদ নাঈম ইয়াসীন রাহ.
বিশিষ্ট দাঈ। ১৯৪৩ সনে ফিলিস্তিনের সালফিতে জন্মগ্রহণ করেন। কাতার ইউনিভার্সিটি, জর্দান ইউনিভার্সিটি এবং কুয়েত ইউনিভার্সিটিতে শরীয়াহ অনুষদের প্রফেসর ছিলেন। ফিকহ শাস্ত্র ও দাওয়াহ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলি রেখে গিয়েছেন। তন্মধ্যে-
১. افتراءات حول طرق انتشار الإسلام.
২. افتراءات حول غايات الجهاد.
৩. قضايا فكرية معاصرة.
-বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২৮ জুমাদাল আখিরাহ (২২ জানুয়ারি ২০২৩), রবিবার
শায়েখ মুহাম্মাদ মুখতার ওলদ আব্বাহ রাহ.
উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার আরব-আফ্রিকান দেশ মোরিতানিয়া-এর প্রভাবশালী আলেম ছিলেন। ফরাসী উপনিবেশবাদীদের মুকাবেলা করে স্বাধীন মোরিতানিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যেসকল দ্বীনী ব্যক্তিত্বের সরাসরি ভূমিকা ছিল, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। ফরাসী ভাষায় তাঁর অনূদিত কুরআন কারীম ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এছাড়া উলূমুল কুরআন, সীরাত, ফিকহ, উলূমুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ ইত্যাদি শাস্ত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা রয়েছে। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৯৮ বছর।
৭ রজব (২৯ জানুয়ারি ২০২৩), রবিবার
ড. শায়েখ আবদুর রহমান আবদুল্লাহ আলমুহাম্মাদী আসসুলুস
কায়রোর জামিয়া আযহারের আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের তাফসীর ও উলূমুল কুরআনের প্রফেসর ছিলেন। তাফসীর ও উলূমুল কুরআন বিষয়ে তাঁর মূল্যবান রচনাবলি রয়েছে।
১৯ শাওয়াল (১০ মে ২০২৩), বুধবার
হযরত মাওলানা জহুরুল হক রাহ.
ফরিদপুরের সালথা এলাকায় ১৩৩৮ হি. (১৯২০ ঈ.) সনে তাঁর জন্ম। ফরিদপুরের হযরত মাওলানা আবদুল আযীয রাহ. ছিলেন তাঁর ইলমী মুরব্বী। মাওলানা আবদুল আযীয রাহ. ছিলেন সদর ছাহেব রাহ.-এর সমসাময়িক এবং হযরত থানবী রাহ.-এর সোহবতপ্রাপ্ত। (সালথা এলাকার মাওলানা আশরাফ আলী রাহ. -যিনি শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রাহ., সদর ছাহেব রাহ. ও হাফেজ্জী হুজুর রাহ.-এর খলীফা ছিলেন- তাঁর মুহতারাম চাচা।)
হাটহাজারী ও গওহরডাঙ্গায় পড়ার সুবাদে তিনি আকাবিরে হাটহাজারী ও আকাবিরে গওহরডাঙ্গার অনেকেরই শাগরিদ ছিলেন। সদর ছাহেব রাহ., মুফতী ফয়জুল্লাহ রাহ. ও আবদুল ওয়াহ্হাব ছাহেব রাহ. তাঁদের অন্যতম। নিজ গ্রামে আলজামিয়াতুল আরাবিয়া নিযামুল উলূম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ইন্তেকাল পর্যন্ত এ মাদরাসার খেদমত করে যান।
২৬ শাওয়াল (১৭ মে ২০২৩), বুধবার
মাওলানা শাহাদাত আলী রাহ.
রাজশাহী জামিয়া ইসলামিয়া শাহ মাখদূম মাদরাসায় দীর্ঘ ৩৩ বছর মুহতামিম ছিলেন। রাজশাহী অঞ্চলে জনসাধারণের মধ্যে সঠিক দ্বীনীবোধ জাগ্রত করতে সচেষ্ট ছিলেন।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৯ বছর।
৭ যিলকদ (২৮ মে ২০২৩), রবিবার
মাওলানা সূফী রিয়ায খান সাওয়াতী রাহ.
মাওলানা সরফরায খান সফদর রাহ.-এর ভাতিজা এবং মুফাসসিরে কুরআন সূফী আবদুল হামীদ সাওয়াতী রাহ.-এর পুত্র। পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা ‘জামিয়া নুসরাতুল উলূম গুজরানওয়ালা’র নাযেম ছিলেন।
১২ যিলকদ (২ জুন ২০২৩), জুমাবার
হযরত মাওলানা মুফতী ইউসুফ শায়খে শ্যামপুরী রাহ.
সিলেটের হরিপুরের প্রবীণ বুযুর্গ আলেম। হরিপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদরাসাতুল উলূম দারুল হাদীস মাদরাসার দীর্ঘ সময়ের শাইখুল হাদীস ছিলেন। আল্লামা আবদুল্লাহ হরিপুরী রাহ. (মৃত্যু : ১৪১৯ হি.)-এর ঘনিষ্ঠ শাগরিদ ও খলীফা ছিলেন। কাশ্মীরী রাহ.-এর শাগরিদ মাওলানা রিয়াসত আলী রাহ. (মৃত্যু : ১৪১০ হি.) এবং আল্লামা মুশাহিদ বায়ামপুরী রাহ. (মৃত্যু : ১৩৯০ হি.) ছিলেন তাঁর উস্তাযদের অন্যতম।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৮ বছর।
৮ যিলহজ্ব (২৭ জুন ২০২৩), মঙ্গলবার
মাওলানা ইকরামুল হক রাহ.
রাজস্থানের সর্দার শহরের মাদরাসায়ে ইসলামিয়া লাতিফিয়ার শাইখুল হাদীস ছিলেন। তিনি মুফতী মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী রাহ.-এর খলীফা ছিলেন।
৮ যিলহজ্ব (২৭ জুন ২০২৩), মঙ্গলবার
মাওলানা আবদুল ওলী ফারূকী রাহ.
ভারতের লখনৌর নেতৃস্থানীয় আলেম। লখনৌর প্রসিদ্ধ বুযুর্গ আলেম মাওলানা আবদুশ শাকুর লখনভী রাহ. (১৩৮১ হি.)-এর নাতি। তাঁর পিতার নাম মাওলানা আবদুল হালীম ফারূকী রাহ.।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৩ বছর।
২৪ যিলহজ্ব (১৩ জুলাই ২০২৩), বৃহস্পতিবার
শায়খ আবদুল বাকী হুসাইনী রাহ.
তুরস্কের প্রভাবশালী মুরব্বী আলেম। সেদেশে নকশবন্দী সিলসিলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।