নেক কাজে অগ্রগামীদের চারটি গুণ
اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهٖ مِنْ مَّالٍ وَّ بَنِیْنَ،نُسَارِعُ لَهُمْ فِی الْخَیْرٰتِ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ، اِنَّ الَّذِیْنَ هُمْ مِّنْ خَشْیَةِ رَبِّهِمْ مُّشْفِقُوْنَ،وَالَّذِیْنَ هُمْ بِاٰیٰتِ رَبِّهِمْ یُؤْمِنُوْنَ،وَ الَّذِیْنَ هُمْ بِرَبِّهِمْ لَا یُشْرِكُوْنَ،وَ الَّذِیْنَ یُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّ قُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ اَنَّهُمْ اِلٰی رَبِّهِمْ رٰجِعُوْنَ،اُولٰٓىِٕكَ یُسٰرِعُوْنَ فِی الْخَیْرٰتِ وَ هُمْ لَهَا سٰبِقُوْنَ.
তারা কি মনে করে, আমি তাদেরকে যে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যাচ্ছি তা দ্বারা তাদের কল্যাণ সাধনে ত্বরা দেখাচ্ছি? না, বরং (প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে) তাদের কোনো অনুভূতি নেই। নিশ্চয় যারা নিজ প্রতিপালকের ভয়ে ভীত এবং যারা নিজ প্রতিপালকের আয়াতসমূহে ঈমান রাখে এবং যারা নিজ প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করে না এবং যারা যে কোনো কাজই করে, তা করার সময় তাদের অন্তর এই ভয়ে ভীত থাকে যে, তাদেরকে নিজ প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে। তারাই কল্যাণ অর্জনে তৎপরতা প্রদর্শন করছে এবং তারাই সে দিকে অগ্রসর হচ্ছে দ্রুতগতিতে। —সূরা মুমিনূন (২৩) : ৫৫-৬১
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে নেক কাজে অগ্রগামীদের চারটি মৌলিক গুণের কথা বলা হয়েছে। মক্কার কাফেররা মনে করত এবং এখনো অনেক মানুষ এই ভুল ধারণায় নিপতিত যে, যেহেতু ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এবং দুনিয়াবী আরাম-আয়েশ আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন সেহেতু এটা একথা প্রমাণ করে, আল্লাহ আমাদের উপর খুশি আছেন। খুশি না হলে কি তিনি এত নিআমত দিতেন!
এই আয়াত বলছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি বোঝার উপায় দুনিয়ার নিআমত নয়। দুনিয়ার নিআমত তো তিনি যাকে ভালবাসেন তাকেও দেন এবং যাকে ভালবাসেন না তাকেও দেন। তবে দ্বীন পালনের নিআমত তিনি তাদেরকেই দেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসেন। তাই তাঁর ভালবাসা ও সন্তুষ্টির মাপকাঠি দ্বীন, দুনিয়া নয়।
এরপর আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কয়েকটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যাসহ গুণগুলো উল্লেখ করা হল—
এক.
তারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে ভীত থাকে। অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে ভীত থেকে তাঁর নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকে এবং করণীয় বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করে। এসব নেক আমল করার পরও তাদের মন থেকে ভয় কাটে না। সব সময় এই পেরেশানি লেগেই থাকে— ঈমানের মৃত্যু নসিব হবে তো? হায়! আল্লাহর হক তো কিছুই আদায় করতে পারলাম না!
দুই.
তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর ঈমান রাখে। কুরআনে আল্লাহ যে সকল আয়াত অবতীর্ণ করেছেন সেগুলো তিলাওয়াত করে। সেগুলোর অর্থ ও মর্ম অনুধাবনের চেষ্টা করে। পাশাপাশি পৃথিবীতে আল্লাহর যে সকল নিদর্শন রয়েছে, সেগুলো নিয়েও চিন্তা ফিকির করে। যেমন— মায়ের গর্ভে শিশুর বিকাশ, বৃষ্টির অবতরণ, মাটির নিচে পানির সংরক্ষণ ইত্যাদি। সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সে স্রষ্টার পরিচয় লাভ করে এবং তাঁর কুদরত ও ক্ষমতা বোঝার চেষ্টা করে।
তিন.
তারা আল্লাহর সাথে শিরক করে না। শিরক দুই প্রকার— শিরকে জলি, শিরকে খফি। আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট প্রার্থনা করা, মানত করা— এগুলো শিরকে জলি বা বড় শিরক। একজন মুমিন তো এসব বড় শিরকে লিপ্ত হওয়ার কল্পনাও করতে পারে না।
আরেক ধরনের শিরক হল শিরকে খফি বা গোপন শিরক। যেমন— আমলের মধ্যে লোক দেখানোর প্রবণতা থাকা। দানের ক্ষেত্রে সুনাম-সুখ্যাতির নিয়ত থাকা। তো আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এই ছোট শিরক থেকেও বেঁচে থাকেন।
শিরকে খফি আসলেও খুব মারাত্মক ও আমল বিধ্বংসী। এ থেকে বাঁচাটা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এব্যাপারে সবচে বেশি সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে লোক দেখানো ও সুখ্যাতির নিয়ত বড়ই মারাত্মক। নিজের কোনো কাজ একটু সুন্দর হলেই মানুষের বাহবা পাওয়ার আশা মনে জাগে। শয়তান এ পথে আক্রমণ করে সবচেয়ে বেশি। সুতরাং এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা; ইসতিগফার করা এবং বারবার নিয়ত শুধরে নেওয়া।
চার.
তারা নামায-রোযা, দান-সদকা যে নেক কাজই করে আখেরাতের কথা সদা মনে জাগরুক রাখে। নেক কাজে অগ্রগামী থাকে। প্রতিযোগিতামূলকভাবে নেক কাজে অংশগ্রহণ করে। নেক কাজ করে গর্ব করে না; বরং মনে ভয় রাখে, এসকল নেক কাজ আল্লাহ কবুল করবেন তো! আখেরাতে এগুলোর বিনিময়ে পাব তো! নেক কাজের ক্ষেত্রে আমি রিয়ার (লোক দেখানোর) শিকার নই তো!
তো এখানে মোট চারটি গুণের কথা বলা হল। আল্লাহর ভয়, আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর বিশ্বাস, সব ধরনের শিরকী কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকা, নেক কাজ করার পরও গর্ব না করা— এ চার গুণের অধিকারী লোকদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, এসকল লোক কল্যাণ অর্জনে সদা তৎপর থাকে এবং নেক কাজের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়। আল্লাহ আমাদেরকে এ চার গুণের অধিকারী হওয়ার তাওফীক দান করুন— আমীন।