উম্মাহ
পাকিস্তানে স্বয়ং বুশ সাহেব!
পাকিস্তানের ক্ষমতার দণ্ড থেকে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বিদায়ঘণ্টা বেজে ওঠেছে। নভেম্বরের শুরু থেকেই সেখানে অস্থিরতা দিন দিন তুঙ্গে উঠছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর দেশটিতে প্রবেশের পর অস্থিরতা
চরম পর্যায়ে চলছে। পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারীতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছে। বেনজির গৃহবন্দি, ইমরান খান কারাগারে ছিলেন। আরেক নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বিদেশে থেকেই মোশাররফ বিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সম্মতি দিয়ে রেখেছেন। অপরদিকে উচ্চ আদালতের বেশ কজন বিচারপতিকে জোরপূর্বক বরখাস্ত করা হয়ছে। প্রেসিডেন্টের সর্বেসর্বা পদ থেকে মোশাররফকে বিদায় দেওয়ার জোর দাবি উঠলেও নিজেকে ‘গণতন্ত্র উদ্ধারে বিকল্পহীন ব্যক্তি’ হিসবে ঘোষণা দিয়ে মোশাররফ ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে রাজনীতিক ও আদালতের এ যুগপৎ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে দিশেহারা মোশাররফ যখন যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করছেন পৃথিবীর মোড়ল বুশ সাহেবরা তাতেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে জেনারেল মোশাররফ যেদিন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন ও সামরিক শাসন জারি করেন সেদিন থেকেই আমেরিকা মোশাররফকে সমর্থন যুগিয়ে এসেছে। এ সমর্থন জোরালো হয়ে প্রকাশ পায় ১১ সেপ্টেম্বরের পর আফগানিস্তানে মার্কিন হামলায় একচ্ছত্র সহযোগিতা দেওয়ার পর থেকে। আফগান যুদ্ধ থিতিয়ে আসার পর আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে জঙ্গি অনুসন্ধানের নামে চালানো হয় ব্যাপক অভিযান। বহু মসজিদ-মাদরাসা গুড়িয়ে দেয়া হয়। নিরীহ বহু মানুষকে খুন করা হয়। জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে পাকিস্তান থেকে গ্রেফতার করে গুয়ানতানামো বের বন্দিশালাসহ অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষকে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ইসলামী শক্তিকে নির্মূল কিংবা চরম দুর্বল করে দিতে যে কোন মার্কিনী প্রেসক্রিপশন নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে যান জেনারেল মোশাররফ। এ ধারার সর্বশেষ সংযোজন ছিল ইসলামাবাদের লাল মসজিদে সামরিক কায়দায় আক্রমন। পশ্চিমা মিডিয়া ও পশ্চিমের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া প্রগতিশীল সমাজ মোশাররফকে বাহবা দিয়ে যান সবক্ষেত্রে। সামরিক শাসন বিরোধী মুখ ও কণ্ঠগুলোও মোশাররফের মধ্যে ‘গণতন্ত্রের ছায়া’ আবিষ্কার করতে থাকে। কিন্তু মার্কিনীদের কাছে আত্মসমর্পিত এই জেনারেলের যথেচ্ছ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদলতের প্রধান বিচারপতি ফরমান জারি করেন। প্রেসিডেন্ট তাকে বরখাস্ত করেন। আপিল করে তিনি আবার বহাল হন। আইনজীবী সমাজ রাস্তায় নেমে আসেন। জনগণের ভেতর ফোঁসফোসানির গন্ধ টের পেয়ে আমেরিকা দ্বিতীয় অপশন হিসেবে বেনজিরকে মোশাররফের সঙ্গে চুক্তিতে বসিয়ে পাকিস্তানে পাঠায়। মার্কিন স্বার্থের আরেক বরকন্দাজ এই বেনজির। দেশে এসেই তিনি বোমা হামলার শিকার হন। হৈ চৈ বাঁধিয়ে দেন। মোশাররফও তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। এখন আর তারা এক প্রভূর চুক্তিবদ্ধ দুই দাস না হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দাসে পরিণত হন। শেষ মুহূর্তের খবর, নওয়াজ শরীফ স্বদেশে ফিরেছেন এবং দুই ধারার বাইরে তার ধারাটিকে অধিক শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যাচ্ছে। অস্থিরতার এই খেলায় পাকিস্তান নামক দেশটির নাভিশ্বাস ছুটছে। কিন্তু মোশাররফের চোখে ক্ষমতার মজবুত মসনদ। বেনজিরের চোখে ক্ষমতায় আবার আরোহন। নওয়াজসহ অন্যরা মোশাররফ বিদায়ের পর গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় গমনের দৌঁড়ে। সর্বোপরি নিয়ন্ত্রক আমেরিকার চোখ এখন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা পক্ষের উপর। খেলাচ্ছে দুজনকে। কিন্তু সমর্থনের ফ্লাগ এখনো মোশাররফের দিকে। এ ফ্লাগ অবশ্যই নড়বড়ে। কখন কোন দিকে ঘুরে যায়, কিছুই বলা যায় না। পাকিস্তান আর্মিকে তো উপজাতীয় কিছু অঞ্চলে জনগণের সঙ্গে যুদ্ধে লাগিয়েই দেওয়া হয়েছে। এখন গোটা পাকিস্তানেই সিভিল ও আর্মির একটা টান টান মুখোমুখি পরিস্থিতি বিরাজমান। একটি দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি কেবল নয়, দেশটির প্রতিরক্ষা ও অস্তিত্বও বলা যায় চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। পাকিস্তান নামক সম্ভাবনাময় দেশটিকে নিয়ে খেলতে খেলতে এই জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ খেলার প্রধান নিয়ামক, খেলোয়ার ও আম্পায়ার অন্য কেউ নন, স্বয়ং বুশ সাহেব। তার নড়াচড়া দেখুন। বুঝতে আপনার বেগ পেতে হবে না।