খলীফা ওমর রা.
খেদমত ও ন্যায়পরায়ণতা
ফিরোজ দায়লামী এক প্রদেশের গভর্নর ছিলেন। খলীফা ওমরের রা. কাছে সংবাদ পৌঁছল তিনি মধু দিয়ে ময়দার রুটি খান। খলীফার দরবারে ডাক পড়ল তার। যে সময় তিনি খলীফার দরবারে ঢুকছিলেন সে সময় একজন কুরাইশ নওজোয়ানও ভেতরে প্রবেশ করছিল। এতে রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় হযরত ফিরোজ দায়লামী কিছুটা রাগান্বিত হয়ে ঐ যুবকের নাকে ঘুষি মেরে দিলেন। ঘুষি খেয়ে তার নাক ফেটে রক্ত বের হলো এবং সে ঐ অবস্থাতেই খলীফার দরবারে উপনীত হলো। খলীফা আক্রমণ কারীর পরিচয় জানতে চাইলে সে দায়লামীর দিকে ইশারা করল। হযরত ওমর রা. ফিরোজকে লক্ষ করে বললেন, ফিরোজ! তোমাকে এর বদলা গ্রহণ করতে হবে। এই নওজোয়ানও ঠিক ঐরকমভাবে তোমার নাকে ঘুষি মারবে। হযরত দায়লামী বিনাবাক্য ব্যয়ে খলীফার কথা মেনে নিলেন এবং নওজোয়ানের উদ্দেশ্যে নাক বাড়িয়ে দিলেন। আর সেও ঘুষি মারার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। খলীফা এবার যুবককে লক্ষ্য করে বললেন, বেটা! একটু থামো। প্রথমে আমি তোমাকে সেই কথা শোনাই যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন- আজ রাতে মিথ্যা নবী আসওয়াদ আনাসীকে কতল করা হয়েছে এবং আল্লাহর এক নেক বান্দা ফিরোজ দায়লামী তাকে হত্যা করেছে। রাসূলের এই হাদীস শোনার পরও কী তুমি বদলা নিতে রাজি হবে? একথা শুনে নওজোয়ান বলল, আমি তাকে মাফ করে দিলাম। তখন ফিরোজ দায়লামী বললেন,আমিও তাকে আমার তলোয়ার, ঘোড়া এবং ত্রিশ হাজার দিরহাম হাদিয়া দিলাম।
ওমর রা. বললেন, বেটা! তুমি মাফ করে দিয়ে সওয়াবও পেলে আবার এতগুলো উপঢৌকনও পেয়ে গেলে।
***
একবার হযরত ওমর রা. বাজার অতিক্রম করছিলেন। হাতে তার চাবুক ছিল। সে সময় হযরত সালমা রা. তার পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। উল্লেখ্য, নাম সালমা হলেও তিনি ছিলেন পুরুষ সাহাবী। খলীফা রসিকতা করে তার গায়ে হালকা করে চাবুক দিয়ে একটু আঘাত করলেন। চাবুক তার কাপড়ের এক কিনারে লাগল মাত্র।
পরবর্তী বছর হযরত সালমার সাথে খলীফার দেখা হলে তিনি বললেন, সালমা! হজ্বের ইচ্ছা করেছ বুঝি? হযরত সালমা রা. ইতিবাচক জবাব দিলেন। হযরত ওমর রা. তাকে বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং ৬০০ দিরহাম দিয়ে বললেন, এ দিরহামগুলো হজ্ব সফরে ব্যয় করবে এবং এগুলো সেই চাবুক মারার বদলা যা গত বছর তোমাকে মেরেছিলাম। একথা শুনে তিনি বললেন, আমীরুল মুমিনীন! ঐ কথা তো আমার মনেই নেই এবং কখনও তা মনেও হয়নি। জবাবে খলীফা বললেন, কিন্তু আমিতো তা ভুলিনি। অর্থাৎ সারা বছর এ বিষয়টি অস্বস্তিতে রেখেছিল যে, রসিকতা করেই কেন তিনি তাকে আঘাত করতে গেলেন?
এরূপ সচেতন ও ইনসাফগার শাসক কোথায় খুঁজে পাবে তুমি?
হযরত ওমরের শাসনকালে সিরিয়া বিজিত হয়। এই সূত্রে রোমের কায়সারের সাথে তার সম্পর্ক হয়েছিল। পত্র আদান প্রদানও করা হত মাঝে মধ্যে। একবার তাঁর স্ত্রী হযরত উম্মে কুলসুম রা. উপহার স্বরুপ কায়সারের স্ত্রীর কাছে কয়েক কৌটা আতর পাঠালেন। কায়সারের স্ত্রী খুশি হয়ে এর বদলায় ঐ কৌটা ভরে জওহর পাঠিয়ে দেন। খলীফার কানে এই সংবাদ পৌঁছলে তিনি উম্মে কুলসুমকে রা. বললেন, আতর তোমার ছিল একথা ঠিক,তবে কাসেদ এটা বয়ে নিয়েছিল সে ছিল সরকারী লোক। বাইতুল মাল থেকে তার বেতন দেওয়া হয়। সুতরাং ঐ জওহরের উপর তোমার কোন অধিকার নেই। একথা বলে তিনি বাইতুল মালে ঐ মুল্যবান জওহর গুলো জমা দিলেন এবং স্ত্রীকে নিজের পকেট থেকে কিছু হাদিয়া দিলেন।
***
অন্ধকার এক রাতে হযরত ওমর রা. ঘর ছেড়ে বের হয়ে একদিকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হযরত তালহা রা. তাঁকে দেখে ফেলেছিলেন, তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ভাবলেন, দেখিতো কী করেন তিনি। যা ভাবা তাই করা। তিনি খলীফার পিছু নিলেন এবং লক্ষ্য করলেন, তিনি এক ঘরে প্রবেশ করলেন এবং কিছুক্ষণ পর বের হয়ে অন্য এক ঘরে প্রবেশ করলেন। হযরত তালহা রা. বড় চিন্তিত হলেন এবং সকালে ঐ ঘরে আগমন করলেন। তিনি দেখলেন, ঘরে একজন অন্ধ এবং একজন বিকলাঙ্গ বৃদ্ধা বসে আছে। তিনি বৃদ্ধাকে বললেন, ঘটনা কী? তোমাদের ঘরে রাতে কে আগমন করেন? কী করেন তিনি? বৃদ্ধা বললেন, বহুদিন হয় ঐ লোকটি আমাদের দেখাশুনা করেন। আমাদের ঘরের ময়লা-আবর্জনা পর্যন্ত তিনি পরিষ্কার করে দেন। বৃদ্ধার কথা শুনে হযরত তালহা রা. কপালে হাত রেখে বললেন, তালহা তোমার অকল্যাণ হোক! তুমি ওমরের রা. দোষ বের করতে চেয়েছিলে?