ঘুর্ণিঝড় সিডর
প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন পরিকল্পনা
গত ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপর দিয়ে এক প্রবল ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল। এতে উপকূলবর্তী অঞ্চল ও দেশের অভ্যন্তরভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানমালের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সারাদেশের মানুষ জেনেছেন। রেড ক্রিসেন্টের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। ২২ জেলায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রাথমিক ত্রাণ-তৎপরতা পরিচালিত হলেও এ বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য তা নিতান্তই অপ্রতুল। অনেক প্রচারবিমুখ দ্বীনী প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে এ কাজে অংশগ্রহণ করেছে। মসজিদে মসজিদে খতীবগণ বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য মহল্লাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বলাবাহুল্য, এটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঈমানী দায়িত্ব।
তবে এ ধরনের দুর্যোগে সাধারণত দেখা যায় যে, প্রথম দিকে ব্যাপকভাবে ত্রাণ-কার্যক্রম পরিচালিত হলেও শীঘ্রই এ উৎসাহে ভাটা পড়ে যায়। এ প্রবণতা বিবেচনায় রেখে কর্মপন্থা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
এবারের ঘূর্ণিঝড়ে বহু মানুষের ফল-ফসল, গাছ-গাছালি ও গবাদি পশু বিনষ্ট হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘর-বাড়ি। প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব অনুযায়ী আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ির সংখ্যা নয় লাখ। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ-গ্রহীতা বহু মানুষ তাদের অবলম্বন হারিয়েছেন। এদের উপায় কী হবে? কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এটুকু দয়া প্রদর্শন করেছে যে, দু তিন সপ্তাহের জন্য ঋণের কিস্তি-আদায় স্থগিত রেখেছেন। এটা চক্ষুলজ্জা এড়ানোর উপায় হতে পারে, নৈতিকতা ও মানবতার কোনো সংজ্ঞায় পড়ে না। যেসব প্রতিষ্ঠান এদেশের খেটে-খাওয়া মানুষের সঙ্গে ‘ ঋণ-ব্যবসা’করে শত শত কোটি টাকা ‘মুনাফা’উপার্জন করেছে তাদের বিবেচনা করা কর্তব্য যে, দু এক সপ্তাহ কিস্তি-পরিশোধ স্থগিত করা দ্বারা বিপদগ্রস্তদের বাস্তব কোনো উপকার করা হয় না। একটি যৌক্তিক ও উল্লেখযোগ্য সময় পর্যন্ত কিস্তিগ্রহণ মওকুফ রাখা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর এ পরিস্থিতিতে তারা সুদী মুনাফার হাতছানি থেকেও নিজেদের নিবৃত্ত করতে পারেন কি না তা-ও দেখার বিষয়।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর পুনর্বাসন, ঋণমুক্তি এবং উপার্জনের ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি দ্বীনদার বিত্তশালীরা সচেষ্ট হলে অনেক বড় ঈমানী দায়িত্ব পালন করা হবে। দ্বীনদার শ্রেণীর অসচেতনতা এসব ক্ষেত্রে দ্বীনহীনদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। এটা যাতে না হতে পারে সে জন্য নিজ নিজ সামর্থ্যরে আওতায় প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়া কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন।
ডিসেম্বর ও আমাদের বিজয়-ভাবনা
পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা-যুদ্ধে জয় লাভ করার পর দীর্ঘ ৩৬ বছর অতিবাহিত হয়েছে। একটি বিজয়ী জাতির উন্নতি-অগ্রগতির জন্য এ সময়টা নিতান্ত সামান্য না হলেও বিভিন্ন কারণে কাক্সিক্ষত উন্নতি আমরা অর্জন করতে পারিনি। পরস্পর বিভক্তি, কাঁদা ছোড়াছুড়ি এবং দুর্নীতি ও সাম্রাজ্যবাদী বিভিন্ন শক্তির লেজুরবৃত্তির ফলে একটি পরিণত জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বদরবারে পরিচিত হতে পারিনি। অথচ এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম। ঈমানী বলে বলীয়ান হয়ে অনেক দূর পর্যন্ত অগ্রসর হওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল। ইনসাফ ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা, সুষম অর্থ-ব্যবস্থা প্রণয়ন, কল্যাণমুখী রাাজনীতির ধারা প্রবর্তন এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সুনীতি ও শালীনতার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে একটি আদর্শ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা আমাদের পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তা হয়নি। কেন হয়নি এবং এটা কাদের ব্যর্থতা, এ প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল আমরা কি অনেক দেরিতে হলেও এ অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি? যদি করে থাকি তাহলে আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির উন্নতি-অগ্রগতির লক্ষ্যে যথার্থ কর্মপন্থা প্রণয়ন করে উদ্যম ও সাহসিকতার সঙ্গে কর্ম-ব্যস্ত হওয়া কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।