শাওয়াল-যিলকদ ১৪২৮   ||   নভেম্বর ২০০৭

ইবাদতের মাঝেই আত্মতৃপ্তি

মাসুমা সাদীয়া

প্রায় তিন চার বছরের আগের কথা। আমাদের পরিবারের সবাই মিলে ঢাকা এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম। ইতোপূর্বে কোনদিন এয়ারপোর্টে যাইনি, সেজন্য এয়ারপোর্ট দেখতে মনটা আমার খুবই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। অন্যথায় সেখানে যাওয়াটা বিশেষ করে আমার জন্য নিরর্থক ছিল বললেই চলে। তাছাড়া আমার ভাই কাতার থেকে আসবেন সেজন্য সুযোগের সদ্ব্যবহার না করে পারলাম না। কিন্তু সেই নিরর্থক সফরেই ঘটনাক্রমে পেয়েছিলাম কিছু অর্থবোধক সবক। আজ তা স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠছে। আমার দায়িত্বও হচ্ছে অজ্ঞ বান্দী হিসেবে নিজে যাই জানি তা অন্যকে জানানো। সেই দায়িত্ব আদায় করার জন্যেই আমার আজকের এই লেখা।

সেদিন দেখেছিলাম আমরা যখন এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম তখন সেখানে আমার ভাবীর সন্মানিত জনকও উপস্থিত হয়েছেন। কারণ আমার ভাই সেখানে সপরিবারে থাকেন। একসঙ্গেই তারা আসছেন। ভাইয়ের শ্বশুর একজন গণ্যমান্য আলেম বুযুর্গ ব্যক্তি এবং মারকাযুদদাওয়ার বিশিষ্ট মুরব্বী। আমরা যখন আনন্দে কোলাহলে ব্যস্ত হয়ে অতিথিদের পথপানে চেয়ে আছি তখন হঠাৎ দৃষ্টি পড়লো আমার ভাবীর জনকের উপর। দেখি তিনি একটি কিতাব হাতে নিয়ে এক কোনে দাঁড়িয়ে আছেন। মনোযোগের সাথে মুতালাআ করছেন। বাহিরের জগতের সাথে যেন তার কোন সম্পর্কই নেই। এত কোলাহল, এত আওয়াজ যেন তার কর্নকুহরেই প্রবেশ করছে না, প্রশান্ত মন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আহ! একি মানুষ নাকি মানুষরূপি ফেরেশতা! আসলে যার ইবাদতে এত তন্ময়তা, তার মন যেন কিছুক্ষণও ইবাদতের বিচ্ছেদ সইতে পারে না। এ দৃশ্য দেখে আমার মনটা হতাশা ও আনন্দের সংমিশ্রণে ভরে গেল। হতাশায় ভরে গেল নিজেদের চরম গাফলতির কথা স্মরণ করে। কিন্তু পরক্ষণেই যেন মন বলে ওঠলো, ওহে বান্দী! হতাশ হয়ো না, আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা হতাশ হয় না। দয়াবান মাওলার রহমত ও মাগফিরাতের দরজা সর্বদা উন্মুক্ত। তুমিও ইচ্ছে করলে এ বান্দার অনুসরণ করতে পারো। অনন্দিত হয়েছিলাম এজন্য যে, আল্লাহর এমন কিছু বান্দা এখনো আছেন যাদের সামনে ক্ষণস্থায়ী জিন্দেগীর ঢাকচিক্য, আনন্দ মূল্যহীন। প্রভুর আরাধনা করেই মন তৃপ্ত। এজন্যই তো এত ধ্যানযুক্ত মুতালাআ। এদের কারণেই জগত সংসার টিকে আছে।

দেওয়ান হাবেলী, সরাইল, বি-বাড়িয়া

 

 

advertisement