শাওয়াল-যিলকদ ১৪২৮   ||   নভেম্বর ২০০৭

একটি ভুল ধারণা
২৭ এর রাত্রিই কি শবে কদর?

অনেকের মনে এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, সাতাশের রাতই হচ্ছে শবে কদর। এই ধারণা ঠিক নয়। সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর কোন রাত তা জানানো হয়েছিল। তিনি তা সাহাবীদেরকে জানানোর জন্য আসছিলেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল। তাদের ওই ঝগড়র কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে সে রাতের ইলম উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ কথাগুলো সাহাবীদেরকে জানানোর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হতে পারে, এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এখন তোমরা এ রাত (অর্থাৎ তার বরকত ও ফযীলত) রমযানের শেষ দশকে অন্বেষণ কর।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২০২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬৫/২০৯

অন্য হাদীসে বিশেষভাবে বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।-মুসনাদে আহমাদ

তাই সাতাশের রাতকেই সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, আজকাল আমাদের সমাজে এক আশ্চর্য অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তা এই যে, রমযানের শুরুতে মানুষ আগ্রহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে দলে দলে মসজিদে এসে থাকে। এটা অত্যন্ত ভালো দিক। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে মুসল্লি-সংখ্যা ততই হ্রাস পেতে থাকে। এমনকি শেষ দশকে মুসল্লি-সংখ্যা প্রায় অন্যান্য মাসের মতোই হয়ে যায়। এটা খুব আফসোসের বিষয়। রমযানের প্রথম দিকে যে আগ্রহ-উদ্দীপনা ছিল শেষ দিকে তা আরো বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। কেননা রমযানের শেষ দশকের ফযীলতই সবচেয়ে বেশি। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস এই ছিল যে, শেষ দশকে তিনি পুরো রাত জাগতেন, পরিবারের লোকদেরকে জাগিয়ে দিতেন এবং ইবাদতের জন্য কোমর বেঁধে নিতেন।-সহীহ মুসলিম

كان إذا دخل العشر الآخر أحيى ليله وأيقظ أهله وشد مئزره.

 উপরের আলোচনা থেকে বোঝা গেছে যে, রমযানের প্রথম দিকে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, তা অত্যন্ত মুবারক বিষয়, এটা মোটেই নিন্দার বিষয় নয়, নিন্দার বিষয় হল ধীরে ধীরে তা হ্রাস পেতে থাকা। আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাযত করুন।

আর পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা এটাও শুধু রমযান মাসের ফরয নয়, তদ্রƒপ জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করার বিধানও রমযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সারা বছরের বিধান। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান দরুন। আমীন।

 

 

advertisement