শাবান-রমযান ১৪২৮   ||   সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০০৭

আল কুরআনে নারী
সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপের শাস্তি

যারা পবিত্র রমণীর প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয় অতঃপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং তাদের সাক্ষ্য কখনো গ্রহণ করবে না। এরা হল ফাসিক, কিন্তু যারা এরপরে তওবা করে এবং অবস্থার সংশোধন করে, আল্লাহ তো অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা নূর ৪-

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বে আরাফার ময়দানে ঘোষণা করেছেন,

সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকের শোণিত, সম্পদ ও ইজ্জত-আব্রএমনই সম্মানিত ও সংরক্ষিত যেমন আজকের এই দিন, এই মাস, এই স্থান সম্মানিত।

এই সম্মানের মধ্যে ইসলামে নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। পরস্ব অপহরণ করা কিংবা অন্যের ইজ্জত আব্রতে  হস্তক্ষেপ করা ইসলামের দৃষ্টিতে চরমভাবে নিষিদ্ধ সে নারী হোক কি পুরুষ। ইসলামী দণ্ডবিধিতে এ অপরাধের কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

উপরোক্ত আয়াতে সে ধরনের একটি শাস্তির বিধান উল্লিখিত হয়েছে। সতী সাধ্বী নারী কিংবা নিরপরাধ পুরুষের প্রতি যারা ব্যভিচারের অভিযোগ আরোপ করে এবং এর সপক্ষে চারজন নির্ভরযোগ্য সাক্ষী উপস্থিত করতে সক্ষম হয় না তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাতের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

ইসলামে একদিকে যেমন যিনা-ব্যভিচারের কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, অন্যদিকে কারো প্রতি ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদেরও কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। উল্লেখিত আয়াতের পূর্বের আয়াতগুলোতে ব্যভিচারের শাস্তি উল্লেখিত হয়েছে, এই আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদের শাস্তির বিধান।

শাস্তিটি এই যে, অপবাদ আরোপকারীকে আশি বেত্রাঘাত করা হবে এবং চিরদিনের জন্য তার সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে। কোনো বিষয়েই তার সাক্ষ্য আর গ্রহণযোগ্য হবে না। এটি হল তার পার্থিব শাস্তি। এরপর  এরা হল ফাসিকবাক্যে ব্যাক্যাংশে আখেরাতের কঠিন শাস্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহ তাআলার দরবারে খাঁটি তওবা করে এবং যার প্রতি অপবাদ আরোপ করেছিল তার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয় তবে আশা করা যায় আখেরাতের শাস্তি থেকে সে রেহাই পাবে, কিন্তু পার্থিব সাজা অথার্ৎ বেত্রাঘাত ও সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান এই দুটি তাকে ভোগ করতেই হবে।

এমনই কঠিনভাবে ইসলাম নারী-পুরুষের সম্মান রক্ষার বিধান দিয়েছে। এই বিধান দানের ক্ষেত্রে কুরআনী উপস্থাপনা সবিশেষ মনোযোগের দাবিদার। বিধানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ে সমান হলেও কুরআন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপের শাস্তি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। এর তাৎপর্য খুবই পরিষ্কার।

এখানে আরো দুটি বিষয় মনে রাখা জরুরি। প্রথম কথা এই যে, এই শাস্তি শুধু ব্যভিচারের অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অন্য কোনো অপবাদের শাস্তির বিধান এই আয়াতে উল্লেখিত হয়নি। সেগুলোর আলোচনা শরীয়তের অন্যান্য দলীলে করা হয়েছে।

দ্বিতীয় কথা এই যে, শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত দণ্ডগুলো কার্যকর করার অধিকার বিশেষের কোনো ব্যক্তি সংরক্ষণ করেন না। শরয়ী আদালতের কাযী বা বিচারক এগুলো কার্যকর করবেন। সাধারণ মানুষের কর্তব্য হল, শরয়ী আদালত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।

 

 

advertisement