এমন মৃত্যু যদি আমার হত!
হযরত মাওলানা সায়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.। একটি জীবন, একটি ইতিহাস। একটি আদর্শ, একটি প্রতিষ্ঠান। গত শতকের পৃথিবী তাঁকে পেয়ে যেমন ধন্য হয়েছিল, তেমনি তাঁকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান হয়েছে।
১৯৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর এই মহামনীষী ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবনের পুরোটাই কেটেছে অত্যন্ত বরকতময় ব্যস্ততার মধ্যে। আর তার শুভ সমাপ্তি হয়েছে মহান আল্লাহর ক্ষমা ও দানের এক অপূর্ব ইশারার সঙ্গে।
সেদিন ছিল শুক্রবার। হযরত মাওলানার বয়স তখন নব্বইয়ের কাছাকাছি। অসুস্থতা ও দুর্বলতা সত্ত্বেও তিনি জুমার প্রস্তুতি নিলেন। একজন খাদেম তাঁকে গোসল করিয়ে দিল। জুমার সময় সমাসন্ন। তিনি জুমার দিনের বিশেষ আমল সূরাতুল কাহফ তিলাওয়াত করতে চাইলেন। এটা ছিল তাঁর সারা জীবনের নিয়মিত আমল। একটি কুরআন শরীফ হাতে নিয়ে মেলে ধরলেন। কিন্তু সূরা কাহফ-এর স্থলে সূরা ইয়াসীন বের হল। তিনি তখন সূরা ইয়াসীনই তিলাওয়াত শুরু করলেন। রাব্বুল আলামীনের অপার মহিমা। তিনি তাঁর এ বন্ধুর জন্যে যে সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছেন তা অন্যদের বুঝে আসল কিছুক্ষণ পরেই। তাঁর হৃদয় কি তখন অনুভব করতে পেরেছিল যে, রাব্বুল আলামীনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার শুভক্ষণ সমুপস্থিত? তাঁর নিবেদিত আত্মা কি অনুমান করতে পেরেছিল তার জন্য মহান আল্লাহর এক অপূর্ব অনুগ্রহের কথা? তিনি সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করছেন। এক দুই আয়াত করে তিনি চলে এলেন সূরা ইয়াসীনের এগার নম্বর আয়াতে। তিনি আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন, যার তরজমা এই “হে নবী! আপনি শুধু তাকেই সতর্ক করতে পারবেন যে উপদেশ শোনে এবং না দেখেই করুণাময় কে ভয় করে।” তিনি আরও অগ্রসর হলেন এবং আয়াতের শেষাংশ তেলাওয়াত করলেন। ‘তুমি তাকে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের সুসংবাদ দাও।’ আয়াতটি শেষ হল এবং ‘নবীয়ে রহমতে’র রচয়িতা, আশেকে নবীর পুণ্যময় জীবনেরও পরিসমাপ্তি ঘটল। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
এই মহামনীষীর নাম যখন প্রথম শুনি তখন তিনি বেঁচে নেই। তাঁকে প্রথম জেনেছি তাঁর এ সুন্দর ঈর্ষণীয় মৃত্যুর মধ্য দিয়েই, তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত মাসিক আল-কলমের ‘আলী মিয়া স্মারকে’। এরপর বিভিন্ন ইসলামী পত্রিকায়। এখন যতই দিন যাচ্ছে, তাঁর ব্যক্তিত্ব আমাকে ততই অভিভূত করছে। তাঁর কর্মময় জীবন এবং সে জীবনের শুভ পরিসমাপ্তি আমার কাছে ততই ঈর্ষণীয় মনে হচ্ছে।
আহা! এমন মৃত্যু যদি আমারও হত।
শিব্বীর আহমদ
জামিআতুল উলূমিল ইসলামিয়া ঢাকা