শাবান-রমযান ১৪২৮   ||   সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০০৭

একদিন ...
পবিত্র আনন্দ

মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব

দিনটি ছিল শুক্রবার। মাদরাসায় পানি না থাকায় আসরের নামায পড়তে নিকটেই এক মসজিদে গেলাম। সেদিন ছিল ওই মসজিদের সাপ্তাহিক গাশতের দিন। গাশতের আদব বয়ান হচ্ছিল। বয়ানে বসলাম এবং গাশতে বের হলাম। সাঁড়িবদ্ধভাবে সবাই এগুচ্ছে, দ্বীনী মেহনতের একটি ছোট্ট কাফেলা। সামনে রাহবারতার পেছনে মুতাকাল্লিমতারপর কজন মামুর। একেবারে পেছনে যিম্মাদার। জামাত যাচ্ছিল একটি মেসের দিকে। পথিমধ্যে যাকেই পাওয়া যাচ্ছে তাকেই দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। কোমল আহ্বানে প্রথমে রাহবার সাহেব লোকজন জমা করছেন, আর মুতাকাল্লিম সাহেব সুন্দর কৌশলে শুরুতেই সালামের ফযীলত তারপর নামাযের বিধান, দ্বীনের গুরুত্ব ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে সংক্ষেপে দাওয়াত দিচ্ছেন। এভাবে মেসের লোকদেরকে জমায়েত করেও তিনি দ্বীনী আলোচনা করলেন। ফেরার পথে এক রুমের সামনে গেলে একজন লোক ঝটপট বেরিয়ে এলেন এবং সবিনয়ে মুছাফাহা করলেন। মনে হচ্ছিল তিনি কিছু বলবেন। চেহারায় আনন্দের আভা। অন্যান্যদের মতো তাকেও দাওয়াত দেওয়া হল। সাথে সাথে তিনি মসজিদে যেতে প্রস্তুত হয়ে আমাদেরকে লক্ষ করে বললেন, হুজুর! আপনারা আমার ছেলের জন্য দুআ করবেন, সে আজ হেফজ শেষ করে শিক্ষকদের হাতে পাগড়ী পাবে’... ধীরে ধীরে তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল, চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। তার দুচোখ থেকে ফোটা ফোটা অশ্রু ঝরতে লাগল। আমরা সবাই বুঝতে পারছিলাম, সন্তান আল্লাহর কালাম বক্ষে ধারণ করেছে সেই সুখে পিতা আজ পরম আনন্দিত। কালামুল্লাহর প্রতি তার এ আবেগ লক্ষ করে আমাদেরও অনেকের চোখের পাতা ভিজে উঠল। সত্যিই এ আনন্দের কোনো তুলনা হয় না।

আমরা মসজিদে ফিরে এলাম। মসজিদ থেকে মাদরাসায়। কিন্তু সেই কুরআনভক্ত পিতার অশ্রুসজল উজ্জ্বল মুখ বার বার আমার স্মৃতিপটে ভেসে উঠতে লাগল।

 

 

advertisement