শাবান-রমযান ১৪২৮   ||   সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০০৭

আলোর দিশা
ভেঙ্গে গেল মিথ্যার ঘোর

আবু তাসনীম

আরবে মূর্তিপূজার ব্যাপক রেওয়াজ ছিল। শয়তান তাদেরকে এই ঘৃণ্য শিরকী কাজে লিপ্ত করে রেখেছিল। ঘুমের ঘোরে মানুষ যেমন কী করছে বুঝতে পারে না তেমনি জাহেলী যুগের লোকেরাও ছিল মূর্খতার ঘোরে আচ্ছন্ন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম এসে আরবের বুকে ঐশী আলোর চেরাগ জ্বালালেন। ফলে কুফর ও শিরকের ঘোর অন্ধকার দূরীভূত হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহ্বানে যারা ঈমান আনলেন তাদের অন্তরে ঈমানের নূর জ্বলে উঠল এবং তারা ভালো ও মন্দ, তাওহীদ ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখলেন।

আরবের মূর্তিপূজারীদের মধ্যে এই রেওয়াজ ছিল যে, গোত্রের নেতারা নিজেদের জন্য বিশেষ বিশেষ মূর্তি  গড়ে তা তাদের গৃহে স্থাপিত করত এবং তার পূজা-অর্চনা করত।

বনূ সালামা গোত্রের নেতা আমর ইবনুল জামূহ একটি কাঠের মূর্তি তৈরি করেছিল। সে নিয়মিত মূর্তিটির পূজা করত। বনূ সালামা গোত্রের কজন যুবক মুয়ায ইবনে জাবাল রা., মুয়ায ইবনে আমর রা. প্রমুখ ইসলাম গ্রহণ করার পর এই শিরকী কর্মকাণ্ডকে বরদাশত করতে পারলেন না। তারা চুপে চুপে রাতের বেলায় এসে সেই মূর্তিটিকে ময়লার ভাগাড়ে নিক্ষেপ করে এলেন। সকাল বেলায় গোত্রপতি মূর্তি দেখতে না পেয়ে তাকে খুঁজতে বেরুল এবং ময়লার ভাগাড় থেকে উদ্ধার করে আনল। দ্বিতীয় রাতেও যুবকরা মূর্তি ভাগাড়ে ফেলে এল। এবারও আমর তাকে খুঁজে নিয়ে এল এবং যারা তার উপাস্যের এই হাল করেছে তাদের উদ্দেশে বকাঝকা করতে লাগল। কিন্তু মুসলিম যুবকগণ দমবার পাত্র নন। তারা তাদের নেতাকে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে, এটি একটি কাষ্ঠ খণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয় এবং তার হাতে মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের কোনোই ক্ষমতা নেই।

কয়েকদিন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার পর আমর নিজেও কিছুটা বিরক্ত হয়ে উঠল। কেননা, এই উপাস্যের যদি সত্যিই কোনো শক্তি থেকে থাকে তাহলে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না কেন? একরাতে সে মূর্তিটির গলায় একটি তলোয়ার ঝুলিয়ে দিয়ে বলল, যদি তোমার কোনো শক্তি থাকে তাহলে এই তলোয়ার দিয়ে ওই পাষণ্ডদের সমুচিত শিক্ষা দিবে। সে রাতে মুসলিম যুবকরা এসে মূর্তিটিকে ভাগাড়ে তো ফেলে দিলই সঙ্গে একটি মৃত পশুও রশি দিয়ে বেঁধে দিল। সকাল বেলা মূর্তির এই অবস্থা দেখে আমর বুঝতে পারলেন যে, এটি আসলে একটি মৃত কাষ্ঠ খণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। অনর্থক তিনি এর পূজা-অর্চনা করে চলেছেন। তার ঘোর কেটে গেল এবং সত্যের আলো গ্রহণের জন্য হৃদয় তার প্রস্তুত হয়ে গেল। তিনি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে এসে ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং শিরকের কালিমা থেকে চিরতরে পবিত্র হলেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যের কারণে তিনি মস্তবড় সাহাবী হয়েছিলেন। আজ আমরা তাঁকে হযরত আমর ইবনুল জামূহ রা. বলে স্মরণ করি। -সীরাতে ইবনে হিশাম

 

 

advertisement