বন্যা পরিস্থিতি : আমাদের করণীয়
বন্যা-দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা এ সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কর্তব্য। বরং তা মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি কোনো মুমিনের বিপদ দূর করে তবে আল্লাহ তার কিয়ামত-দিবসের বিপদ দূর করবেন।’
অন্য হাদীসে এসেছে, যেকোনো প্রাণধারী জীবের (কষ্ট মোচনে) পুণ্য রয়েছে। তাই এ জাতীয় দুর্যোগের মুহূর্তে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আর্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা আমাদের সকলের কর্তব্য। আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, বালা-মুসীবতে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। এমনকি নবুওত লাভের আগেও তিনি এ বৈশিষ্ট্যে প্রসিদ্ধ ছিলেন।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও বন্যার্তদের দুর্দশা শেষ হয় না। ডায়রিয়া, চর্মরোগ ইত্যাদি ব্যাপকভাবে দেখা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া যেসব মানুষ তাদের সহায়-সম্পদ ও মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও হারিয়েছেন তাদের পুনর্বাসন ও আর্থিক সাহায্য জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। এসব ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন কার্যক্রম থাকলেও দেশের বিত্তবান শ্রেণীর সচেতন দৃষ্টি থাকা দরকার। আর মুমিন হিসাবে তা থাকা উচিত পূর্ণ ইখলাসের সঙ্গে। কেননা, ইখলাস ছাড়া কোনো আমল নেক আমল হিসেবে গণ্য হয় না এবং তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না।
এ ধরনের ব্যাপক দুর্যোগের সময় আমাদের একবার নিজেদের দিকেও দৃষ্টি দেওয়া উচিত। দ্বীন ও ঈমান, নীতি ও নৈতিকতার বিচারে আমরা কী অবস্থানে রয়েছি এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় কী, এ বিষয়গুলো ভালোভাবে ভেবে দেখা উচিত। সমাজে যখন আল্লাহর বিধান ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হতে থাকে তখন বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি এবং বালা-মুসীবতও ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। তাই আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় রোধেও আমাদেরকে প্রয়াসী হতে হবে।
তাকওয়া অর্জনের মাস সমাগত
মাহে রমাযান সমাগত। তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জনের মাস সমাগত। এ মাসে রোযা রাখা মুমিনদের জন্য ফরয। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে সিয়াম যেভাবে তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।’ বলাবাহুল্য যে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকা এবং সকল রকম গুনাহ পরিত্যাগ করার অনুশীলন মানুষকে সংযমী ও আত্ম-নিয়ন্ত্রকরূপে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। আর সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রনই হল তাকওয়ার মূল কথা। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যারা কথা ও কাজে মিথ্যাকে বর্জন করে না তাদের পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ অর্থাৎ রোযার পূর্ণতার জন্য মিথ্যাচার বর্জন অপরিহার্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযার নিয়তে পানাহার ও স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকলে রোযার ফরয দায়িত্ব হয়তো আদায় হয় এবং এরও অনেক সুফল রয়েছে, কিন্তু রোযার পূর্ণ উপকারিতা লাভ করতে হলে রোযার হক্বও পূর্ণরূপে আদায় করতে হবে।
আজকের অবক্ষয়পূর্ণ সামাজিক পরিস্থিতিতে রোযার বিধান আমাদের জন্য হতে পারে আলোকবর্তিকা। এই ঐশী আলো ধারণ করে আমরা পুনরায় সরল পথের রেখা খুঁজে নিতে পারি।
সাওমের প্রেরণা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং মাহে রমাযানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য আমাদের উচিত সকল রকম পাপাচার ও অশ্লীলতা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত রাখার প্রয়াস গ্রহণ করা। ব্যবসায়ীদের কর্তব্য হল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা। দ্রব্যমূল্য যাতে সহনীয় পর্যায় অতিক্রম না করে এজন্য সরকারকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
পবিত্র মাহে রমাযান আমাদের সবার জীবনে বয়ে আনুক শান্তি, সংযম, পবিত্রতা।