রজব ১৪২৮   ||   আগস্ট ২০০৭

কর্মজাল
খৃস্টান মিশনারীগুলো কি নিয়ন্ত্রণহীনই থাকবে?

পথচারী

কথাগুলো বলা হতো এনজিও কার্যক্রম নিয়ে। এনজিও কর্তৃপক্ষের ভুল কর্মপন্থা, সুদের বিস্তার, নারীর ক্ষমতায়নের ঐতিহ্যবিরোধী পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিষয়টা এ সবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং সুপরিকল্পিত প্রোগ্রাম নিয়ে দেশের অনুন্নত ও দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে টাকাকড়ি, জমি জিরেতের নানা রকম সুবিধা বিতরণ করে মানুষের ঈমান হরণ করে নেওয়ার কার্যক্রম চলছে পুরো দস্তুর এবং একাজটি করে যাচ্ছে এনজিওর পোশাক গায়ে চড়িয়ে শক্তিশালী কিছু মিশনারী সংস্থা। গত ১১ জুলাই ময়মনসিংহের কাশর অঞ্চলে একটি পরিবারের ৯ সদস্যের সবাই ট্রেনে কাটা পড়ে আত্মহত্যা করার পর তাদের জীবনধারা, গতিবিধি সম্পর্কে খেঁাজ নিয়ে খৃস্টান মিশনারীগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগের আলামত পাওয়া গেছে। ইসলাম ধর্মের বিধিবিধান, ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিষোদ গারমূলক লেখা ডায়েরীতে বিদ্যমান থাকা এবং এক যুগ আগে এ পরিবারের প্রয়াত পিতার ইসলাম বিদ্বেষ ও কৃশ্চিয়ানিজম গ্রহণের বিতর্ক এ আলামতকে আরো জোরালো করেছে। পরিবারের এক ছেলের নাম বদল করে খৃস্টান নাম ধারণ এবং স্বচ্ছলতার সঙ্গে গোটা পরিবারের বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন এ আলামতটিকে প্রায় নিশ্চিত করেছে। যদিও এভাবে সে পরিবারের সবারই আত্মহত্যার কারণ এখনও উদঘাটন হয়নি এবং স্থানীয় খৃস্টান চার্চের পক্ষ থেকে এ পরিবারের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগও প্রকাশ্যে মেনে নেওয়া হয়নি।

খৃস্টান মিশনারীগুলোর তৎপরতা ব্যাপকভাবে ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশংকায়

একটি পরিবারের ক্ষেত্রে তাদের পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃত সত্য গোপনের ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু বিষয়টি একটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। জুনের শেষ দিকে এবং জুলাইয়ের শুরুতে উত্তরবঙ্গের দারিদ্র্যপীড়িত কিছু কিছু স্থানে নগদ সুবিধা দিয়ে কয়েকশমুসলিম ও হিন্দু পরিবারকে খৃস্টান বানানোর খবর পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও দেশের আরো কোনো কোনো স্থানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় ছোট্ট করে ছাপানো নিউজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খৃস্টানদের এ দেশীয় প্রধান বলেছেন, কাউকে প্রলোভন দিয়ে খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হচ্ছে না, যারা খৃস্টান হচ্ছে বুঝে শুনেই হচ্ছে। উনার বক্তব্য পড়ে মনে হয়েছে, এ দেশের কোনো কোনো প্রান্তের দরিদ্র শ্রেণী হঠাৎ করেই ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। গবেষণা ও চিন্তাভাবনায় লিপ্ত হয়ে গ্রামের মূর্খ কিছু মানুষ ইসলামের পরিবর্তে খৃস্টান ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বখুঁজে পেয়ে অস্থির হয়ে ধর্ম বদল করে খৃস্টান হয়ে গেছে! 

গত ১৪ জুলাই ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে গারোদের স্বতন্ত্র ভূমি প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রবিষয়ে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। এ দেশে গারোদের শিক্ষিত ও বড় অংশই এখন খৃস্টান। তার মানে খৃস্টানদের ভিন্ন একটি রাষ্ট্র এ দেশের বুক চিরে বানানোর পূর্ব তীমুরীয়প্রেসক্রিপশন কার্যকর করা হচ্ছে। দেশের উপজাতীয়-প্রধান অঞ্চল, প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র-প্রধান অঞ্চল এবং উপেক্ষিত সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে যুগ যুগ ব্যাপী চলা মিশনরীগুলোর তৎপরতা এখন যেন একটা পূর্ণতায় চলে এসেছে। খোঁচা লাগলেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ধর্মান্তর ও খৃস্টাধর্ম গ্রহণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটা কিসের আলামত ভেবে দেখা দরকার সব মহলের।

পৃথিবীর বেশ কয়েকটি মুসলিম-প্রধান অঞ্চলে খৃস্টান মিশনারীগুলোর কাজের কুফল বিশ্লেষণ করে দেখলে এ দেশের অবস্থা নিয়ে আঁৎকে উঠা ছাড়া উপায় থাকে না। ইন্দোনেশিয়া ও লেবানন তো আছেই, আরো বহু দেশে এদের নীরব তৎপরতা একটা পর্যায় পর্যন্ত গিয়েই রাজনৈতিক ও আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। খৃস্টশক্তি যেখানেই মিশনারী খুলে সাফল্য পেয়েছে সেখানেই দেশ ভাগ করেছে, ক্ষমতায় ভাগ বসিয়েছে, নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছে। প্রশ্ন জাগে, এ দেশেও কি তাহলে তেমন কোনো কিছুর ঘনঘটা শুরু হয়েছে? প্রভাশালী বিদেশী শক্তির মদদ, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশ্রয় কি তাদেরকে কিছুটা খোলামেলা হয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করছে? বাস্তবতা আসলে কি, এ মুহূর্তে ব্যক্ত করা কঠিন। কিন্তু এটাতো সত্য যে, মিশনারীগুলো ইতোমধ্যে বহু মুসলিম ও হিন্দুকে খৃস্টধর্মে দীক্ষিত করে ফেলেছে এবং সব ধর্মান্তরের ঘটনা এখন দ্রুত লয়ে প্রকাশিতও হচ্ছে। কিংবা বলা যায় ধর্মান্তরের ঘটনা হঠাৎ করেই এখন বেগবান হয়ে উঠেছে।

মুসলিম ও হিন্দুদের খৃস্টধর্মে ধর্মান্তরের ঘটনা স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছিল। দিন দিন এর ব্যাপকতা বেড়েছে। সব সরকারের আমলেই সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা নীরবতা মিশনারীগুলোর কাজের গতি বাড়িয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে খৃস্টান মিশনারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এতটা উদগ্রীব হয়ে উঠার কার্যকারণ নিয়ে সন্দেহ জাগছে অনেকের মনে। কেউ কেউ মনে করেন বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রভাবশালী বিদেশী শক্তির জোর একটু বেশি। তাই এ জোরের কিছু অংশ মিশনারীগুলোও ভোগ করছে। কেউ কেউ বলছেন, এই প্রথম মন্ত্রীর পদমর্যাদায় একজন খৃস্টান উপদেষ্টা এ দেশে কাজ করছেন। তাই খৃস্টান মিশনারীগুলোর কোমরে বল বেড়ে গেছে। আমরা অবশ্য এ রকম মনে করতে চাচ্ছি না। এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ-অনুভূতি, এদেশের ধর্মীয় ঐতিহ্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার তাগিদে বর্তমান সরকার মিশনারীগুলোর কর্মজালে কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবেন বলেই আমরা মনে করতে চাই।

 

 

advertisement