চলমান পরিস্থিতি: ঈমান ও তাকওয়ার দাবি পূরণই উত্তরণের উপায়
খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে এবং আরো কিছু ঘটনা ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে। এসব ঘটনার মধ্যে সংবিধান সংশোধন, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে ভারতীয় অনুপ্রবেশের মতো বিষয়গুলো নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় এই যে, অধিকাংশ বিষয়ে রাজনৈতিক বিবেচনাই প্রধান। যেন রাজনৈতিক বিবেচনাই বর্তমান সময়ের একমাত্র বিবেচনা। ন্যায়নীতি, দেশ ও জনগণের স্বার্থ, আদর্শ ও মূল্যবোধ কোনো কিছুই এখন আর বিবেচ্য বিষয় নয়। বলা বাহুল্য, এটি একটি জনগোষ্ঠীর পতন-কালের বৈশিষ্ট্য।
দলীয় বা রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা শক্তিশালী হলে সারা দেশে শুধু বিভেদ-বিভক্তি এবং হত্যা-সংঘর্ষই চলতে থাকবে, যা কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিক কামনা করতে পারে না।
পরিতাপের বিষয় এই যে, এদেশের শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীরাও রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার দ্বারা প্রভাবিত। একশ্রেণীর শিক্ষাবিদ তো কলম-কালির সাধনার পরিবর্তে লগি-বৈঠার সংস্কৃতির সাথেই অধিক অন্তরঙ্গতা বোধ করেন। তাদের কলম সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির কথা বলে না; বিভেদ ও বিভক্তির বিষ ছড়ায়। তারা কি কখনো ভেবেছেন যে, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার যে দানব তারা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে তৈরি করে চলেছেন তা শেষ পর্যন্ত এই দেশকেই রসাতলে নিয়ে যায় কি না? দেশ রসাতলে যাবার কিছু কিছু আলামত কি ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়নি?
এ দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে নগ্নতা ও পৌত্তলিকতার আগ্রাসন এখন আর ‘আগ্রাসন’ নয়; সাদরে বরণের মতো বিষয়। সাম্প্রতিক দৃষ্টান্তটি হল এয়ারটেল। এদের প্রচার-প্রচারণার ভাষা ও চিত্র থেকে যে কোনো সচেতন মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগবে যে, এরা কি এদেশে টেলিসেবা দিতে এসেছে, না ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি প্রচার করতে?
৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে এতটুকু কথা বলার মতো সাহস কারো নেই যে, ব্যবসা করতে হলে এদেশের সংস্কৃতি ও আদর্শকে শ্রদ্ধা করেই করতে হবে!
কিছুদিন আগে শাহরুখ ও তার নর্তকীদল শিল্পী ও শিল্পের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যা কিছু প্রদর্শন করে গেল, তাতে কি এই আশঙ্কাই মজবুত হয় না যে, এই দেশ ও ভূমি নগ্নতা ও পৌত্তলিকতার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হতে চলেছে?
আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলগণ এসব বিষয়ে ভাবুন আর না-ই ভাবুন, দেশের মুসলিম নাগরিকদের অবশ্যই ভাবতে হবে।
সংবিধান সম্পর্কেও কিছু কথা বলা দরকার। ইতিপূর্বে কিছু কথা বলা হয়েছে। যেহেতু পুনর্মুদ্রিত সংবিধান এখনো জনগণের হাতে আসেনি তাই এখনই আমরা কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছি। তবে একটি কথা এই যে, সংবিধান-সংশোধন নিয়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট থেকে রায় দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, আলাদতের রায়ের আলোকেই সংবিধান পুনমুর্দ্রিত হচ্ছে। কিন্তু সংবিধানে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের রায়কে কীভাবে সমন্বয় করা হল-এ বিষয়ে দেশবাসীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে। প্রশ্ন এই যে, এহেন কার্যক্রম ‘গণতান্দ্রিক’ চেতনার সাথেও কি সঙ্গতিপূর্ণ?
যাই হোক, পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য, ঈমান ও তাকওয়ার দাবি পূরণ করা। কারণ আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে ঘোষণা করেছেন-তোমরা হীনবল হয়ো না, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ো না। তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও।
বর্তমান সংখ্যা সম্পর্কেও কিছু কথা আরজ করছি। এ সংখ্যার প্রথম প্রবন্ধটিই হচ্ছে আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেবের একটি মূল্যবান প্রবন্ধ। ‘হিফযুন নুসূস’ সম্পর্কে লিখিত প্রবন্ধটি থেকে ইনশাআল্লাহ আলিম-তালিবে ইলম সকলেই উপকৃত হবেন। তাঁর ফতোয়া বিষয়ক প্রবন্ধটির দুটি কিস্তি জুলাই ’১০ ও আগস্ট ’১০ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। বাকি অংশ সম্পর্কে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, সংরক্ষণের সুবিধার্থে তা আগামী কোনো সংখ্যায় একসাথে প্রকাশিত হবে।
ইজতিমার উপরও দু’টি মূল্যবান লেখা ছাপা হল। সাথে অন্যান্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও বিভাগও রয়েছে। শিশু-কিশোর ও পর্দানশীন পাতাটি এ সংখ্যায় প্রকাশিত হল না। আগামী সংখ্যা থেকে তা নিয়মিত প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ।