রজব ১৪২৮   ||   আগস্ট ২০০৭

যাঁর বদান্যতায় মুক্তি পেল সাতটি প্রাণ

ইসলামের প্রথম দিনগুলো অত্যন্ত বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। যারা সে সময় ঈমান এনেছেন তাদেরকে অনেক কষ্ট, অনেক যাতনা ভোগ করতে হয়েছে। এ নির্যাতন শুধু দুর্বল শ্রেণীর মুসলিমরাই ভোগ করেছেন এমন নয়, অভিজাত পরিবারের সম্মানী মানুষদেরকেও, শুধু ইসলাম গ্রহণের অপরাধে অনেক অত্যাচার সইতে হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. ছিলেন মক্কার একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তাঁকেও কাফেরদের হাতে নির্যাতিত হতে হয়েছে। মুসলমানদের এই কোণঠাসা পরিস্থিতিতে আবু বকর সিদ্দীক রা. ছিলেন দুর্বল মুসলিমদের পরম বন্ধু। তিনি তাদের সাহায্য করেছেন এবং কাফেরদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন।

ইসলাম গ্রহণের সময় আবু বকর সিদ্দীক রা. চল্লিশ হাজার দিরহামের মালিক ছিলেন। এ সমুদয় সম্পদ তিনি ব্যয় করেছেন নির্যাতিত মুসলমানদেরকে কাফেরদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য এবং দরিদ্র অসহায় মুসলমানদের ভরণ পোষণের জন্য।

তিনি সাত জন মুসলিম নর-নারীকে তাদের কাফের মুনিবদের নিকট থেকে ক্রয় করে আযাদ করেছিলেন, যারা শুধু ইসলাম গ্রহণের অপরাধে নির্যাতিত হচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ ও পাঁচজন নারী ছিলেন। তাঁরা হলেন হযরত বিলাল, আমের ইবনে ফুহাইরা, যিন্নীরা, উম্মে উবাইস, মুয়াম্মিল পরিবারের একজন দাসী, নাহদিয়া ও তার কন্যা।

১. হযরত বিলাল হাবশী রা.-এর মুনিব ছিল উমাইয়া ইবনে খালাফ। এই চরম অত্যাচারী পাষণ্ড কাফের হযরত বিলাল রা.কে দুপুরের প্রচণ্ড রোদে মরুভূমিতে চিৎ করে শুইয়ে দিত এবং বুকের উপর প্রকাণ্ড পাথর চাপিয়ে দিত। আর বলত, হয় সে মু হাম্মাদকে পরিত্যাগ করবে কিংবা এভাবেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু বিলাল রা.-এর যবান থেকে সে অবস্থায়ও শুধু আহাদ’ ‘আহাদধ্বনি উচ্চারিত হত। আবু বকর সিদ্দীক রা. তাকে এভাবে নির্যাতিত হতে দেখে একটি শক্তিশালী কাফ্রী কৃতদাসের বিনিময়ে তাকে ক্রয় করলেন এবং আযাদ করে দিলেন।

২. আমের ইবনে ফুহাইরা রা.-এর মুনিব ছিল তুফাইল ইবনে আব্দুল্লাহ। ইসলাম গ্রহণের কারণে তার উপরও নির্যাতন হচ্ছিল। আবু বকর সিদ্দীক রা. তাকে কাফেদের নিকট থেকে ক্রয় করলেন এবং আযাদ করে দিলেন। পরে মদীনায় হিজরতের সময় আমের ইবনে ফুহাইরা ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর সফরসঙ্গী। 

অবশিষ্ট পাঁচজনই হলেন নারী। এঁরাও ইসলামের প্রথম দিনগুলোতে ঈমান এনেছেন এবং কাফেরদের হাতে নির্যাতন ভোগ করেছেন।

৩. এদের মধ্যে যিন্নীরা ছিলেন রোম দেশের। পাষণ্ড আবু জাহল তাঁকে নির্যাতন করত। এটা দেখে আবু বকর সিদ্দীক রা. তাকে ক্রয় করলেন এবং আযাদ করে দিলেন। তাঁর ঈমানী মজবুতির একটি চমৎকার ঘটনা রয়েছে। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর মাধ্যমে আল্লাহ যখন তাকে কাফেরদের হাত থেকে মুক্ত করলেন তখন একটি বিপদ দেখা দিল। বিপদটি এই যে, তাঁর দৃষ্টিশক্তি লোপ পেল। এটা দেখে কাফেররা বলতে লাগল, লাত-ওজ্জার অভিশাপে তার দৃষ্টিশক্তি বিনষ্ট হয়েছে।একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন, আল্লাহর ঘরের কসম, এরা মিথ্যা বলেছে। লাত-ওজ্জার তো কল্যাণ-অকল্যাণের কোনোই ক্ষমতা নেই।আল্লাহ তাআলার অপার অনুগ্রহে তিনি আবার তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন।

৪. উম্মে উবাইস নাম্মী আরেকজন মুসলিম নারীকেও আবু বকর সিদ্দীক রা. আযাদ করেছেন। উবাইস নামে তার এক সন্তান ছিল। সে সন্তানের নামেই তার কুনিয়াত (উপনাম) উম্মে উবাইস হয়েছে।

৫. মুয়াম্মিল নামক কাফেরের পুত্রদের একজন দাসী ছিল, যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এই অপরাধে তাঁকেও নির্যাতন সইতে হচ্ছিল। হাসসান ইবনে ছাবিত রা. থেকে এক বর্ণনায় এসেছে যে, আমি এক বছর হজ্ব করতে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে দেখেছি। কাফেররা তাঁর সঙ্গীদেরকে নির্যাতন করত। আমি আমরকে দেখেছি, সে (তাদের পরিবারের) এই মেয়েটিকে শাস্তি দিত।হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. তাঁকেও কাফের মুনিবদের নিকট থেকে ক্রয় করে আযাদ করেছেন।

-৭ এছাড়া আরও দুজন নারী, যারা পরস্পর মা ও মেয়ে ছিলেন, ইসলাম গ্রহণের অপরাধে শাস্তি ভোগ করছিলেন। আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকেও মুক্ত করেছেন।

 

 

advertisement