তালাবাদের প্রতি আকাবিরের কয়েকটি পয়গাম
গত কয়েক সংখ্যা থেকে ‘তাঁদের প্রিয় কিতাব’ শিরোনামে লিখছিলাম, যেহেতু এই ধারাটি অনেক দীর্ঘ, এদিকে চলতি শিক্ষা বর্ষের শেষে এবং পরবর্তী বর্ষের শুরুতে তালিবে ইলম ভাইদের কাছে কিছু আবেদন-নিবেদনের প্রয়োজন থাকে সেজন্য ইচ্ছা হল কয়েক সংখ্যার জন্য সেই ধারাটি স্থগিত থাকুক এবং ওই জরুরি আবেদনগুলো আকাবির ও আসলাফের বরাতে প্রিয়জনদের সামনে তুলে ধরা হোক। তাই এ সংখ্যায় তালাবাদের কাছে তাঁদের শুধু দুটি পয়গাম পেশ করব।
১৪২১ হিজরীর শাওয়াল মাসে যখন মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বসুন্ধরার দাওয়াতে উস্তাদে মুহতারাম হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম-এর আগমন হল তখন খুলনার সফরে হযরতের সান্নিধ্যে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। যাওয়ার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে হযরত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দুটি বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব
তিনি বললেন, পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে উদাসীনতা তালাবাদের একটি ব্যাপক ব্যাধি। অথচ তাদের উচিত ছিল শরীরে, পোশাকে, পরিপার্শ্বে, সর্ববিষয়ে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা। তালিবে ইলমের পোশাক সাধারণ হতে পারে। জীর্ণ ও ছিন্ন হতে পারে কিন্তু অপরিচ্ছন্ন হতে পারে না।
এটা সত্যই দুঃখজনক যে, পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে শিথিলতা আামাদের মাঝে দিন দিন বেড়েই চলেছে।
কিতাবকে যত্নের সাথে ব্যবহার করা এবং ধুলো বালি থেকে পরিষ্কার রাখা তো দূরের কথা মাসহাফুল কুরআনের আদব পর্যন্ত রক্ষা হয় না এবং পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। মাসহাফের গিলাফ তো কখনো ধোয়াই হয় না। আর গিলাফ না থাকলে সরাসরি মাসহাফের উপরই ধুলো জমতে থাকে। অবশ্য যে মাসহাফগুলো দৈনিক তেলাওয়াত করা হয় সেগুলো ব্যবহারের বদৌলতে কিছুটা পরিষ্কার থাকে।
হাদীসে এসেছে-
طهورا أفنيتكم فإن اليهود لا تطهر أفنيتها. المعجم الأوسط
অর্থাৎ শুধু ঘর নয় ঘরের আঙ্গিনাসহ পবিত্র রাখ। -তাবরানী হাদীস ৪০৬৯
সাধারণত মাদরাসাগুলোতে পরিচ্ছন্নতা রক্ষার সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকে। তালিবে ইলমরা তা পালনই করে না কিংবা দায়সারাভাবে পালন করে কিন্তু পূর্ণ পরিচ্ছন্নতা এবং সূক্ষ্ম পরিচ্ছন্নতার প্রতি মোটেও গুরুত্ব দেয় না।
রান্নাঘর পরিষ্কার করা হয় না। কখনো রান্নাঘর পরিষ্কার করা হলে চুলা ডেগ ডেগচি পরিষ্কার করা হয় না। হলুদ মরিচ ও অন্যান্য মসলার পাত্রগুলো তো পরিষ্কার করার নামও নেওয়া হয় না কখনো। আর ইস্তেঞ্জাখানা ও গোসলখানাগুলো তো আরো বেশি অবহেলার শিকার। সেখানে সাবানের টুকরা কাগজের প্যাকেট, টয়লেট পেপার বিক্ষিপ্তভাবে ফেলে রাখা হয়। এমনকি সেখানে মানুষের খাবার ভাত তরকারী পর্যন্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়। মেঝেতে এবং দেয়ালের নিচের অংশে শ্যাওলা পড়ে থাকে। টয়লেট ব্যবহার করার পর ভালো করে পানি ঢেলে ময়লাগুলো পরিষ্কার করা হয় না। ব্যবহৃত টয়লেট পেপার বা নেকড়াগুলোও যথাস্থানে রাখা হয় না। টয়লেট, গোসলখানা, ওযুখানা পরিষ্কার করা হলেও ময়লার দাগ বা শেওলাগুলো পরিষ্কার করা হয় না। উপরে পরিষ্কার করা হলে কমোডের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করা হয় না। ওযু খানার নালা ঠিক মতো পরিষ্কার করা হয় না।
টয়লেটের লোটাগুলো পরিষ্কার করা হয় না। হলেও নামমাত্র। লোটার নিচের অংশের দিকে মোটেও দৃষ্টি দেওয়া হয় না। টয়লেটে রাখা জুতাগুলোর অবস্থা তো এমন দাঁড়ায় যে রুচিশীল কোনো মানুষ সেখানে পা রাখতেই পারবে না। টয়লেট বা ওযু-গোসল খানার ব্যাপারে মনে হয় যেন মানুষ এটাই ভেবে রেখেছে যে এগুলোর এমন অপরিষ্কার থাকাই নিয়ম।
কিন্তু দস্তরখান এবং দস্তরখানের আশেপাশে যেখানে বসে মানুষ আল্লাহর নেয়ামত গ্রহণ করে সেখানে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, দস্তরখানে তরকারী বা তরল খাবার পড়ে দাগ লাগতে লাগতে একদম নোংরা হয়ে যায় যে, আল্লাহর পানাহ।
আমার বন্ধু মাওলানা রহীমুদ্দীন চাটগামী একদিন শোনালেন, আমার কিছু দিন পটিয়া মাদরাসায় পড়ার সুযোগ হয়েছে। ওখানে হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান দামাত বারাকাতুহুম (বর্তমান প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুূল ফিকরিল ইসলামী বসুন্ধরা)-এর কাছে তাফসীরে জালালাইনের সবকে বসার সুযোগ হয়েছে। একদিন মুফতী সাহেব বললেন, ‘আমার কাছে যদি কোনো মেহমান আসে এবং এমন কোনো তালিবে ইলমকে দস্তরখান দিতে বলা হয় যে নিয়মিত খাদেম নয় তখন সে আমার কামরায় দস্তরখান খুঁজে পায় না। কারণ সাধারণ ধারণা হল দস্তরখানের কাপড়টা ময়লা থাকবে, কমপক্ষে খানাপিনার কিছু অংশ তো অবশ্যই তাতে লাগা থাকবে। যার ফলে তখন সে আমার এখানকার দস্তরখান দেখেও তা হাতে নেয় না। কারণ সে ভাবে, এত পরিষ্কার কাপড় দস্তরখান হয় কি করে?’ সমঝদার তালিবে ইলমদের জন্য এঘটনায় শিক্ষা গ্রহণের যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।
যে চিলমচিতে হাত ধোয়া হয় দ্বিতীয়বার ব্যবহারের প্রয়োজন হওয়া পর্যন্ত তাতে ময়লা পানিগুলো জমে থাকে। তারপর সেটার ভেতরের পানিগুলো ফেলা ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই। ভেতরের অংশ পরিষ্কার করার নাম গন্ধ নেই। সেখানে ময়লা জমতে জমতে স্তর পড়ে যাওয়াই যেন নিয়ম। এচিলমচির পানি ফেলার সময়ও লক্ষ করা হয় না যে, এটা কোথায় ফেলতে হবে। টয়লেটের কমোড বা গোসলখানা যেখানেই হোক, যেন ফেলতে পারলেই হল।
অনেক জায়গায় তালিবে ইলমদের পানি ফেলার বালতি থাকে, বালতিতে যদিও শুধু পানি ছাড়া কোনো ময়লা ফেলা নিষেধ থাকে, কিন্তু সবসময়ই পানির উপর ময়লা ভাসতে থাকে। আর অনেক সময়ই পানিটা যথাসময়ে ফেলা হয় না। এমনকি অনেক সময় বালতি পূর্ণ হয়ে পানি উপচে পড়ে এবং তখন সবাই ব্যবহৃত পানি ফেলার জন্য এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে তবুও বালতিটা খালি করার লোক পাওয়া যায় না। আর এ বালতি যে পরিষ্কার করতে হবে তা তো মনে হয় কখনো কারো মাথায়ই আসে না। যেই প্লেটে আমরা খানা খাই তাতে দেখা যায় নতুন প্লেটটা আসার কিছু দিনের মধ্যেই তার রূপ বদলে যায়। তাতে তরকারীর দাগ পড়ে যায়। নিচের অংশ তো সব সময় নিচেই থাকে, সেটা আর পরিষ্কার করারই বা কি দরকার। লবনদানি, জগ ও গ্লাসের অবস্থাও একটু লক্ষ করে দেখুন, কেমন দেখায়। জগের নিচে, গ্লাসের নিচে কি অবস্থা থাকে?
মোটকথা, ইসলাম পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা এবং অন্তরের স্বচ্ছতার ধর্ম। পবিত্রতা এবং অন্তরের পবিত্রতার বিষয়টি ছিল মানুষের আকলের ঊর্ধ্বে। এজন্য ইসলাম সেগুলোকে একেবারে বিন্দুবিসর্গসহ বিস্তারিতভাবে বলে দিয়েছে। আর স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি মানুষের মেধাও উপলব্ধি করতে পারে। তা সত্ত্বেও শরীয়ত শুধু পরিচ্ছন্নতার তাগিদ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং পরিচ্ছন্নতার এমন ছোটখাট বিষয়ের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যেগুলোর সকল স্তরের মানুষের চিন্তায় না আসার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। আগ্রহী পাঠকগণ হাদীসের কিতাবগুলোর সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে এবং ‘আল আদাবুশ শারইয়্যাহ’ বিষয়ক কিতাবগুলোতে এ বিষয়ক হাদীস ও সীরাতের নির্দেশনা পড়ে দেখতে পারেন।
নমুনাস্বরূপ আমি এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করছি। জনৈক সাহাবী বলেন (এক সফর থেকে ফেরার সময় মদীনার কাছাকাছি এসে সাহাবীদেরকে লক্ষ করে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তোমরা তোমাদের ভাইদের নিকট যাচ্ছ। সুতরাং তোমাদের সাওয়ারী ঠিকঠাক করে নাও এবং পোশাক বিন্যস্ত করে নাও। যাতে মানুষের মাঝে তোমাদেরকে তিলকের মতো সুন্দর মনে হয়। কেননা আল্লাহ তাআলা অশ্লীলতা ও অসৌন্দর্য পছন্দ করেন না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৮৯
হায় যদি আমরা পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ইসলামী শিক্ষার প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখতাম এবং এক্ষেত্রে একজন মুমিনে কামেলের পরিচয় দিতাম যাতে আমাদের দরসগাহ, বাসস্থান, রান্নাঘর, ওযুখানা, টয়লেট ইত্যাদি দেখে কেউ এই অনুভূতি ব্যক্ত করতে না পারে যে, মুসলমানদের নিদর্শন হল নোংরামী আর ইংরেজদের নিদর্শন হল পরিচ্ছন্নতা! (নাউযুবিল্লাহ) অথচ ইসলামের শিক্ষা হল শুধু বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা নয় বরং সব ধরনের নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করাও জরুরি এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্তঃকরণের স্বচ্ছতা, আদর্শের ও আখলাকের পবিত্রতা এবং হৃদয়ের পরিচ্ছন্নতাও কাম্য। আর ইংরেজদের কাছে যদি কিছু থাকে তবে আছে শুধু বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা। তাও ইবাদত হিসেবে নয়, ফ্যাশন সর্বস্ব।
২. আদাবুল মুআশারার প্রতি লক্ষ রাখা
হযরত আরো বললেন, দ্বিতীয় কথা হল আদাবুল মুআশারা সামাজিক শিষ্টাচারের ব্যাপারে। এ বিষয়ে আজকাল তালাবাদের মাঝে খুব বেশি অবহেলা দেখা যায়, এটার প্রতি খুব গুরুত্ব দেওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ মনে করুন কারো সাথে মুসাফাহা করতে হলে কোন অবস্থায় করতে হবে তাও খেয়াল রাখা উচিত।
আমি বললাম এ বিষয়ের উপর কোনো কিতাব পড়ানো যায় বা পড়ে শোনানো যায়? বললেন, হাঁ অবশ্যই। শুধু তাই নয়; বরং সব সময়ই তালাবাদের কথাবার্তা ও চলাফেরার প্রতি লক্ষ রেখে তাদেরকে সতর্ক করতে থাকা চাই।
আসলে ইসলামী শরীয়তে আদবের মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে এবং তার গুরুত্ব্ও ইসলামে অনেক বেশি। শুধু মুআশারা (সমাজ) কেন মানব-জীবনের কোন দিকটা এমন আছে যেখানে মানুষের জীবন সফলকাম, সুখ- স্বাচ্ছন্দময় ও সুচারু হওয়ার জন্য আদবের প্রয়োজন নেই? এজন্যই হাদীসের কিতাবগুলোতে যেখানে ‘আল আদাব’ নামে দীর্ঘ কলেবরের একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় আছে সেখানে অন্যান্য অধ্যায়গুলোতেও সে অধ্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আদাবের শিক্ষাও বিদ্যমান রয়েছে। আজকাল আদব বিষয়টাই অত্যন্ত অবহেলার শিকার। তবে আদাবুল মুআশারা তথা সামাজিক জীবনের শিষ্টাচার অনেক বেশি অবহেলার শিকার। আদাবুল মুআশারার মূল কথা হল মানুষের প্রতিটি আচরণ ও উচ্চারণ যেন সুন্দর ও সুশীল হয়। সে কারো কষ্টের বা পেরেশানীর কারণ হবে না এবং যথাসম্ভব নিজের কোনো কাজ বা কথার কারণে অন্যের দ্বারা কষ্টের সম্মুখীন হবে না। বলতে খুব সহজ হলেও এ নীতির বাস্তবায়ন কিন্তু খুবই কঠিন। কারণ এর জন্য অনেক আকল এবং হিলম সহনশীলতার প্রয়োজন। আর এ বিষয়গুলো কোনো ফকীহ আহলে দিলের সান্নিধ্য ছাড়া সহজে অর্জিত হয় না। আজকাল তো আমাদের তালিবে ইলম ভাইদের থেকে এ ধারণাও হারিয়ে যাচ্ছে যে, আদবও একটা শেখার বিষয়। অথচ সালাফে সালেহীনের অবস্থা ছিল তাঁরা ইলমের আগে আদব শিখতেন এবং শিখাতেন। ইমাম ইবনে সিরীন রহ. (১১০ হিজরী) বলেন, كانوا يتعلمون الهدي كما يتعلمون العلم ইলম যেমন শিক্ষা করতেন তেমনি জীবনাচারও শিক্ষা করতেন। -আল জামি লিআখলাকির রাবী ওয়াসসামে, খতীব বাগদানী ১/৭৯
ইমাম মালেক রহ. বলেন, আমার আম্মা আমাকে পাগড়ি পরিয়ে ইমাম রাবিয়াতুর রায় রহ.-এর নিকট পাঠাতেন এবং বলতেন তাঁর ইলমের আগে তাঁর আদবগুলো শিখে নাও। -তারতীবুল মাদারিক ১/১১৯
ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর ব্যাপারে একথা খুবই প্রসিদ্ধ যে, তাঁর চলাফেরা আগমন প্রস্থান সব কিছুইতে তার আকলের বহিঃপ্রকাশ ঘটত।
আজ আমরা হাদীস ও ফিকহের ইলম শিখলে সনদ তালাশ করি। আমাদের আকাবিরের কাছে আদবেরও সনদ থাকত। সে সনদ কিন্তু ইজাযত দেওয়া নেওয়ার সনদ ছিল না সেটা ছিল আদব শিখে সে আদব নিজের জীবনে বাস্তবায়নের সনদ।
ইমাম আবু আলী সাকাফী রহ. (২৪৪ হি.-৩২৮ হি.) -এর ব্যাপারে আবু বকর ইবনে ইসহাক রহ. (২৫৮-হি. ৩৪২ হি.) বলেন, তাঁর আকল সাহাবী ও তাবেয়ীন থেকে সংগৃহিত। তিনি সমরকন্দ শহরে মুহাম্মাদ ইবনে নাসর মারওয়াযী রহ. (২০২ হি.-২৯৪ হি.) -এর সান্নিধ্যে চার বছর অবস্থান করে এ আদব ও আখলাক অর্জন করেছেন। আর মুহাম্মাদ ইবনে নাসর রহ. এগুলো অর্জন করেছেন ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া নীশাপুরী রহ. (২২৬ হিজরী)-এর কাছ থেকে। খোরাসানে তাঁর চেয়ে আকলমন্দ লোক আর কেউ ছিল না। তিনি এসব অর্জন করেছিলেন ইমাম মালেক রহ.-এর কাছ থেকে। ইমাম মালেক রহ.-এর কাছে হাদীস শেখার পর পূর্ণ এক বছর ছিলেন আদব শেখার জন্য। পড়া শেষ হওয়ার পরও এক বছর অবস্থান করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, إنما أقمت مستفيدا لشمائله فانها شمائل الصحابة والتابعين অতিরিক্ত এক বছর অবস্থান করেছি তাঁর আদর্শ ও জীবনাচার শেখার জন্য। কারণ তাঁর জীবনাচার ছিল সাহাবী এবং তাবেয়ীদের মতো। -তাবাকাতুশ শাফেইয়্যাহ আলকুবরা ৩/১৯৩
ইমাম আবু দাউদ রহ.-এর ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের এই স্বাক্ষাৎ তো সম্ভবত উপরের জামাতের তালিবে ইলমদের সকলেরই জানার কথা যে, আবু দাউদ রহ. ভাবে ও ভঙ্গিমায় এবং আচারে ও শিষ্টতায় সব কিছুতে ইমাম আহমাদ রহ.-এর সদৃশ ছিলেন। ইমাম আহমাদ এসব বিষয়ে সদৃশ ছিলেন ওয়াকি রহ.-এর। ওয়াকি রহ. সদৃশ ছিলেন সুফিয়ান রহ.-এর। সুফিয়ান রহ. মনসুর রহ.-এর, মনসুর রহ. ইবরাহীম রহ.-এর, ইবরাহীম রহ. আলকামা রহ.-এর, আলকামা রহ. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর। আলকামা রহ. বলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.কে ভাবে ও ভঙ্গিমায় এবং আচারে ও শিষ্টতায় নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সদৃশ বলা হতো। -তাযকিরাতু হুফ্ফাজ। শাসসুদ্দীন যাহাবী ২/৫৯২
এ বিষয়ে সালাফে সালেহীনের হেদায়াত ও ঘটনাবলীর ধারা অনেক দীর্ঘ। আমার উস্তায শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা রহ. ‘আদাবুল ইখতিলাফ ফী মাসায়িলিল ইলমি ওয়াদ্দীন পৃ. ৬১-৬৭ পর্যন্ত তার সামান্য কিছু নমুনা পেশ করেছেন। যা সকলের জন্যই পড়ে নেওয়ার মতো। এখন প্রশ্ন হল, আমাদের মধ্যে এই আদবগুলো কীভাবে আসবে। উত্তর স্পষ্ট। প্রথমে আমাদেরকে আদব সংক্রান্ত শরীয়তের শিক্ষাগুলো হাসিল করতে হবে এবং কোনো আহলে দিল ফকীহ যিনি নিজের মধ্যে ওই আদবগুলোর বাস্তবায়ন করেছেন এবং অন্যের মধ্যেও বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন তাঁর সান্নিধ্যে থেকে অর্জন করতে হবে। আমাদেরকে উস্তাদদের নিকট থেকে তালীমের সঙ্গে সঙ্গে তারবিয়তও গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে যা যা মুতালাআ করা চাই তার কিছু নিম্নরূপ। এগুলোর মধ্যে যার জন্য যেটা সহজলভ্য এবং যার জন্য যেটা সহজবোধ্য সে সেটাই মুতালাআ করবে।
১. সূরায়ে হুজ্বরাত এবং সূরায়ে মুজাদালার তাফসীর এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আয়াতের তাফসীর।
২. আলআদাবুল মুফরাদ। ইমাম বুখারী (২৫৬ হিজরী)
৩. আদাবুদ দ্বীন ওয়াদদুনিয়া। আবুল হাসান মাওয়ার্দী। (৪৫০ হিজরী)
৪. আল আদাবুশ শারইয়্যাহ। ইবনে মুফলিহ (৭৬৩ হিজরী)
৫. আদাবুল মুআশারাহ, হাকীমুল উম্মত থানভী রহ. (৩৬২ হিজরী)
৬. মিন আদাবিল ইসলাম, শায়খ আব্দুল ফাতাহ আবু গুদ্দা (১৪১৭ হিজরী)
আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।