উম্মাহ
প্রভাবশালী রাষ্ট্রটির হাতে রক্ত ঝরছে
জুন মাসের শুরু থেকেই মুসলিম বিশ্বের যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র ও সংঘাতকবলিত কয়েকটি দেশে আবার নতুন করে রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যাচ্ছিল। ইরাকে দখলদার বিরোধী যোদ্ধাদের দমনে প্রকাশ্যে কূট-কৌশলী আয়োজন গ্রহণের আলামত ফুটে উঠেছিল। শিয়া-সুন্নী বিরোধী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ দিতে কোনো কোনো গ্রুপের হাতে আমেরিকা ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। এর পরপরই কিছু শিয়া অঙ্গন ও কিছু কিছু সুন্নী ব্যক্তিত্বের উপর হামলার খবর এসেছে। পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, সংঘতের উদ্দেশ্যে অস্ত্র তো আমেরিকা বিলি করেছেই, সেটার আবার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন অন্য উদ্দেশ্যে। এরপর তারা নিজের হাতেই রক্তপাত ঘটিয়ে একের বিরুদ্ধে অন্যকে ক্ষেপিয়ে তোলার কাজটা করতে চাচ্ছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তারা তাদের অংকে সফল হচ্ছে। লেবাননে সরকারি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইসরাইল বিরোধী মুক্তিসংগ্রামীদের একটি অংশের বিরুদ্ধে। হামলা হচ্ছে, পরস্পর মোকাবিলাও হচ্ছে। এ হচ্ছে মুসলিম-দুশমন ইসরাইলের বিরোধী শক্তিরই মাঝে দু পক্ষের নিঃশেষ হওয়ার লড়াই। বাইরের বড় শক্তিগুলোর ইন্ধনের ব্যাপারটিও এখানে গৌণ নেই। একইভাবে ফিলিস্তিনেও ঘটে চলেছে উত্থান-পতনের আরেক পর্ব। হামাস সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে পশ্চিমানুগত প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নতুন সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। দৃশ্যত হামাসের কর্মী যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে গাজাসহ কিছু অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলেও প্রেসিডেন্ট মাহমুদের ফাতাহ গ্রুপের সৈনিক ও তাদের সরকারের কর্মকা-ের প্রতি আমেরিকা-ইসরাইল সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। আর এসব পরিবর্তনে ইহুদী-মার্কিন শক্তির সাহায্য-সমর্থনের বিষয়টিও প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছিলেন, ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামীদের পরপর কোন্দল ও দ্বন্দের এত বড় সংকট এর আগে সৃষ্টি হয়নি।
মাসের শুরুতে আফগানিস্তানের পুতুল প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইর সভাস্থলে বোমা নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। মার্কিন ও আফগান সরকারি বাহিনীর হকচকানো অবস্থার মধ্যেই কোনো মতে সামাল দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেন কারজাই। এ ঘটনার মাস দুয়েক আগে থেকেই সেখানেও মার্কিন দখলদার বিরোধী যোদ্ধাদের সঙ্গে সরকার ও মার্কিনী বাহিনীর লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছিল। এ হামলার পরও সে তীব্র লড়াই চলছে। অতি সম্প্রতি সেখানকার এক মাদরাসসায় বোমা হামলা করে নিরীহ কজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইসলামী শাসনপন্থী ও মার্কিন মদদপুষ্টদের এ লড়াইয়ে বহু সংগ্রামী ও নিরীহ আফগান মুসলিমের রক্ত ঝরছে। রক্তপাতের গন্ধ ইন্ধন ও আবহ বিরাজ করছে আরো বিভিন্ন মুসলিম দেশে এবং এর সবগুলোর পেছনেই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রটির অভিভাবকত্বের আলামতও স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে।