মারকাযের দিনরাত
০৮.০৩.১৪২৮ হি./২৮.০৩.২০০৭ ঈ.
মারকাযের মুরব্বী হযরত মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরী দা. বা. বিভিন্ন সময় মারকাযে তাশরীফ এনে থাকেন। বিশেষ করে প্রতি বুধবারে একান্ত কোনো ওযর না থাকলে হযরত তাশরীফ আনেন এবং ইসলাহে নফস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করে থাকেন। এই ইসলাহী মজলিসে মারকাযের আসাতিযা, ত্বলাবা এবং বাহির থেকে আগত অনেকে উপস্থিত থাকেন। আজকের বয়ানের মূল কথা ছিল, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রতিবন্ধক সেগুলো পরিহার করা। এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হযরত বলেন, সালেকের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধক হল, ‘খেয়ানতে নযর’ অর্থাৎ দৃষ্টির খেয়ানত করা। মানুষকে দৃষ্টিশক্তি আল্লাহ তাআলা দান করেছেন। এটা মানুষের কাছে আল্লাহর আমানত। শুধু যে ক্ষেত্রে দৃষ্টি দেওয়া বৈধ সেক্ষেত্রে দৃষ্টি দিতে পারবে। অন্যথায় আমানতের খেয়ানত হবে। যারা দৃষ্টির অপব্যবহার করে, অপাত্রে দৃষ্টি দেয় আল্লাহ তাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-
یَعْلَمُ خَآىِٕنَةَ الْاَعْیُنِ وَ مَا تُخْفِی الصُّدُوْرُ
অর্থাৎ চোখের অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন রয়েছে সে সম্পর্কে তিনি জানেন।-সূরা মুমিন : ১৯
অপাত্রে দৃষ্টি দেওয়া এবং দৃষ্টির অপব্যবহারকে হাদীস শরীফে চোখের যিনা বলা হয়েছে।
অতএব সুলুকের ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হলে যেগুলো উন্নতির পথে প্রতিবন্ধক সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে হবে। অন্যথায় শুধু আমলের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ করা সম্ভব হবে না। হাফেজ্জী হুজুর রাহ. বার বার নযর হেফাযত করার নসীহত করতেন। তুমি তাহাজ্জুদগুজার হলে, কিন্তু দৃষ্টির হেফাযত করলে না তাহলে এই ইবাদত তোমাকে অগ্রগামী করবে না।
এরপর একপর্যায়ে হযরত খেয়ানতে নযর থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় বললেন-
১. হাঁটতে চলতে সর্বদা দৃষ্টি নিচের দিকে রাখা।
২. হঠাৎ অপাত্রে দৃষ্টি পড়ে গেলে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলা।
৩. রাস্তায় বের হওয়ার সময় এই অঙ্গীকার করে বের হওয়া যে, রাস্তায় নযরের খেয়ানত করব না এবং গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পর উক্ত প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী আমল হয়েছে কি না তা যাচাই করে দেখা।
৪. ইস্তেগফার ও তওবা করা।
৫. কোনো দ্বীনী কিতাব সাথে রাখা। সুযোগ হলে বাসে, রিকশায় বসে তা মুতালাআ করা। এতে দৃষ্টি অন্যদিকে যাবে না। আবার পড়ার মধ্যে মনোযোগ হলে কানের হেফাযতও হয়ে যাবে।
৬. ইনশাআল্লাহ আগামীতে হযরতের বয়ানগুলো ধারাবাহিকভাবে ‘হৃদয় থেকে হৃদয়ে’ শীর্ষক একটি কলামে প্রকাশ করা হবে। আমরা পাঠক ও শুভাকাঙ্খীদের দুআ প্রার্থী।
১০.০৪.১৪২৮ হি./২৯.০৪.২০০৭ ঈ.
আজ থেকে দুই দিনব্যাপী ‘ইসলাহী জোড়’ বোয়ালদী, সোনারগাঁও-এ শুরু হয়েছে। সেখানে নানুপুরের হযরত মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব দা. বা.-এর খলীফা, মুরীদ ও ভক্তবৃন্দ সমবেত হয়েছেন। মারকাযের আমীনুত তালীম সাহেব আজ এই ইসলাহী জোড়ে শরিক হওয়ার জন্য গিয়েছেন এবং জোড় শেষ হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক উলামায়ে কেরামের সমাবেশ ঘটেছে এই ইসলাহী জোড়ে। নানুপুরী হযরতের সান্নিধ্য গ্রহণ করা এবং ইসলাহে নফসের ক্ষেত্রে তাঁর অমূল্য নসীহত শ্রবণ করে আত্মার সংশোধন করার উদ্দেশ্যেই তাদের এই সমাবেশ। মারকাযের কয়েকজন তালিবে ইলমও সেখানে শরিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। অসংখ্য ভক্তবৃন্দের উদ্দেশে হযরতের খলীফাগণ ইসলাহে নফস সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। হযরত আমভাবে কয়েকবার মুরীদ ও ভক্তবৃন্দের উদ্দেশ্যে তাযকিয়া ও ইসলাহে নসফ সম্পর্কে বয়ান করেছেন এবং দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আবার আলেমদের উদ্দেশ্যে খাসভাবে বয়ান করেছেন। তিনি তাঁর বয়ানে সুন্নতের উপর চলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। মন্দ ও নিকৃষ্ট গুণাবলি কলব থেকে বের করে ভালো ও প্রশংসনীয় গুণাবলি পয়দা করতে বলেছেন। বেশি বেশি যিকির করার আদেশ করেছেন। নযর হেফাযত করতে বলেছেন। কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকার তাগিদ করেছেন। তাহাজ্জুদ নামাযের পাবন্দী এবং আল্লাহর কাছে কাঁদার অভ্যাস সৃষ্টি করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে বলেছেন। দৈনিক শোয়ার সময় বিশেষভাবে তওবা-ইস্তেগফার করার তাগিদ করেছেন। তাঁর ইসলাহী মিশনের প্রাণ হল, ইত্তেবায়ে সুন্নত, যিকির এবং দুআ।
২০.০৫.১৪২৮ হি./০৭.০৬.২০০৭ ঈ.
আজ রাতে এক মাওলানা সাহেব ‘ছহীহ বারো চাঁদের ফযিলত, আমল ও ঘটনা’ নামক একটি বই এনে মারকাযের আমীনুত তালীম মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবকে দেখালেন। বইটির গায়ে লেখকের নাম লেখা রয়েছে হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ.। অনুবাদকের নাম, মাওলানা মুহা. যুবায়ের। সম্পাদনায় হাফেজ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম মুজাহিদ। প্রকাশনায় সোলেমানিয়া বুক হাউস, আনোয়ারা বুক হাউস। মাওলানা সাহেব বইটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আসলে বইটি থানভী রাহ.-এর কি না? এবং এ নামে থানভী রাহ.-এর কোনো কিতাব আছে কি না? মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব উত্তরে বললেন, এই বিষয়ে থানভী রহা.-এর পুস্তিকা হল, ‘যাওয়ালুস সিনাহ আন আমালিস সানাহ’ কিন্তু এই বাংলা বইটির সাথে তার আদৌ কোনো মিল নেই। তাছাড়া থানভী রাহ.-এর দুই শাগরিদ মাওলানা যফর আহমাদ উসমানী ও মাওলানা আবদুল কারীম গুনতালভী মিলে ‘বারাহ মাহীনু কী ফযীলত’ নামে একটি কিতাব লিখেছিলেন। কিন্তু এই বাংলা বইটি এরও অনুবাদ নয়; বরং এই বাংলা অনুবাদ নামক কিতাবটিতে বিভিন্ন মাসের ফযিলত বয়ান করতে গিয়ে অনেক ভিত্তিহীন আজগবি আলোচনা উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত কিতাবটি থানভী রাহ.-এর নামে পাঠকমহলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছেমাত্র। জানি না এটা কার কারসাজি। প্রকাশকের, না অন্য কোনো মতলবী গোষ্ঠীর। আল্লাহ তাওফীক দিলে বইটি সম্পর্কে আগামী কোনো সংখ্যায় বিস্তারিত মন্তব্য করা হবে ইনশাআল্লাহ।