সৌভাগ্যের সিতারা
কন্যা সন্তান হল পিতা-মাতার জন্য সৌভাগ্যের বারতা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথায় যারা বিশ্বাস রাখেন তারা কন্যা সম্পর্কে এমন ধারণাই পোষণ করেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যার পিতাকে সৌভাগ্যের সংবাদ প্রদান করেছেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, একদিন আমার নিকট দুজন কন্যা নিয়ে এক মা এল এবং আমার কাছে কিছু খাবার চাইল। ওই সময়ে আমার ঘরে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছু ছিল না। আমি ওই খেজুরটাই মহিলাকে দিলাম। সে খেজুরটা দু টুকরো করে দু বাচ্চাকে দিল। নিজের জন্য কিছুই রাখল না। যখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তাশরীফ আনলেন তখন আমি এ ঘটনা তাঁকে বললাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তকন বললেন-
من ابتلي من هذه البنات بشيء فأحسن إليهن كن له سترا من النار
“যে কষ্ট সত্ত্বেও কন্যা শিশুদেরকে উত্তমভাবে লালন-পালন করে, কিয়ামতের দিন এই কন্যশিশু তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে আড়াল করে রাখবে।”
এই হাদীস যে কোনো মুসলিম পরিবারের জন্য শুভ সংবাদ বাহক। যখনই কোনো ঘরে কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন দ্বীনদার মাতাপিতা এজন্য আনন্দ প্রকাশ করে যে, এই সন্তান তাদের জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা সুগম করে দিবে। কন্যা সন্তান হলে দুঃখিত হওয়া আইয়্যামে জাহেলিয়াতের রীতি। সে যুগে লোকেরা কন্যাসন্তানকে অপমানজনক মনে করত। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা তাদের এই মানসিকতাকে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ইসলামী মানসিকতা এই যে, কন্যাসন্তান পিতামাতার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ যদি তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা হয় এবং তাদেরকে সঠিক ইসলামী শিক্ষায় গড়ে তোলা হয়। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। হাদীস শরীফের বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাটির মিল রয়েছে। ঘটনাটি এই যে, এক ব্যক্তির শুধু কন্যা সন্তান হত। প্রতিবারই সে আশা করত, এবার তার পুত্র হবে। কিন্তু তার সকল আশাকে নিরাশায় পরিণত করে প্রতিবারই কন্যা সন্তান হত। এভাবে একের পর এক ছয়টি কন্যাসন্তানের আগমনে পিতা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। স্ত্রী আবারো সন্তানসম্ভবা হল, কিন্তু সে স্বামীর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। আবার না জানি কন্যার মুখ দেখতে হয়। শয়তান সুযোগ বুঝে স্বামীর মনে কুমন্ত্রণা দিতে আরম্ভ করল। স্বামী মনে মনে ভাবল, এবার কন্যার আওয়াজ শুনলেই স্ত্রীকে তালাক দিবে।
হায়রে মূর্খতা! সন্তান কন্যা হলে তাতে স্ত্রীর কী অপরাধ! চিন্তিত মনে স্বামী রাতে বিছানায় গেল এবং একসময় ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মধ্যে সে এক ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখল এবং তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কপাল থেকে ঝর ঝর করে ঘা ঝরছে। বিছানা থেকে শরীর উঠাতে পারছে না। ভয়ে আতঙ্কে গলা থেকে আওয়াজ বেরুচ্ছে না। না! আমি আরো একটি কন্যা সন্তান চাই। একটি কন্যা সন্তান চা-ই চাই। সে স্বপ্নে দেখেছে, কিয়ামত কায়েম হয়েছে। আমলনামা যার যার হাতে পৌঁছে গেছে। তার আমলনামায় শুধু গুনাহ আর গুনাহ। বিন্দু পরিমাণ সওয়াব আছে কি না খোঁজ পাচ্ছে না। জাহান্নামের ফেরেশতারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে জাহান্নামের পথে। কিন্তু জাহান্নামের প্রথম দরজায় পৌঁছে দেখল তার প্রথম কন্যা সেখানে দাঁড়িয়ে পথ আগলে রেখেছে। ফেরেশতারা তাকে নিয়ে দ্বিতীয় দরজায় পৌঁছল। সেখানে দ্বিতীয় মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এবার তাকে তৃতীয় দরজায় নিয়ে গেল সেখানেও তার মেয়েরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তাকে কোনো দরজা দিয়েই জাহান্নামে প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। ষষ্ঠ দরজা পর্যন্ত ফেরেশতারা চেষ্টা করেছে তাকে জাহান্নামে ঢোকাতে, কিন্তু তারা প্রতিবারই তার মেয়েদের জন্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এবার শুধু সপ্তম দরজাটি বাকি রয়েছে। ফেরেশতারা তাকে সেই দরজার দিকে নিয়ে চলেছে। এবার আর তার পা চলছে না। সে আতঙ্কিত হয়ে ভাবতে লাগল, কে তাকে সপ্তম জাহান্নাম থেকে বাঁচাবে? সে কি বাঁচতে পারবে জাহান্নামের মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে? হা! তার যদি আরেকটি কন্যাসন্তান থাকত! তার ছয় মেয়ে ছিল। তারা ছয় দরজায় দাঁড়িয়ে গেছে। আফসোস! যদি আরেকটি মেয়ে থাকত! এ অবস্থায় তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে তখন কায়মনোবাক্যে দুআ করতে লাগল, আল্লাহ! তুমি আমাকে আরেকটি মেয়ে দাও।
তাই মুমিনের কন্যাসন্তানের জন্মে দুঃখিত না হয়ে আনন্দিত হয়। আর কন্যা সন্তানের জন্মের জন্য স্ত্রীকে দায়ী করা মারাত্মক ভুল। এটা ঈমানের দুর্বলতার পরিচায়ক। কেননা এখানে স্বামী-স্ত্রী কারো ইচ্ছার প্রভাব নেই। তারা তো শুধু মাধ্যমমাত্র। সৃষ্টির একক ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। তিনি মানুষকে সন্তান দান করেন। যাকে ইচ্ছা ছেলে দেন। যাকে ইচ্ছা মেয়ে দেন। আর যাকে ইচ্ছা ছেলে মেয়ে উভয়টা দেন। আবার যাকে ইচ্ছা কিছুই দেন না। এমতাবস্থায় সকল মুসলমানের উপর ওয়াজিব আল্লাহর ফয়সালায় রাজি খুশি থাকা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
لِلّٰهِ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ؕ یَخْلُقُ مَا یَشَآءُ ؕ یَهَبُ لِمَنْ یَّشَآءُ اِنَاثًا وَّ یَهَبُ لِمَنْ یَّشَآءُ الذُّكُوْرَ
“আসমান-যমীনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা মেয়ে দেন। যাতে ইচ্ছে ছেলে দেন। যাকে ইচ্ছা ছেলে-মেয়ে উভয়টা দেন। আর যাকে ইচ্ছা নিঃসন্তান বানান।