জুমাদাল আখিরাহ ১৪২৮   ||   জুলাই ২০০৭

রুটিনবদ্ধ জীবন বরকতের জীবন

হাবীবা বিনতে আবদুস সামাদ

সব কজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য সর্বপ্রথম দরকার কাজের পরিকল্পনা, যার মধ্যে থাকবে প্রতিদিন কী কী কাজ করব এবং কখন করব। এতে স্বল্প সময়ে অনেক কাজ করা যায়। অন্যদিকে পরিকল্পনাহীনভাবে কাজ করলে একে তো সময়ে বরকত হয় না, তাছাড়া পরে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বাকি রয়ে গেছে, অথচ কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশি সময় ব্যয় হয়ে গেছে। তাই কাজের আগে পরিকল্পনা জরুরি। দৈনন্দিন কাজগুলো পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা আমাদের কাজের রুটিন বানিয়ে নিতে পারি। গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগী, পড়াশোনা, সন্তানের তালীম-তরবিয়ত ইত্যাদি কাজের জন্য তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় বরাদ্দ থাকবে। এক জায়গায় পড়েছিলাম, সকল কাজ এক রকম নয়, কোনোটি কঠিন আবার কোনোটি সহজ। কেউ যদি কঠিন কাজগুলোই অবিরাম করতে থাকে, তাহলে এক সময় কাজের প্রতি বিরক্তি এসে যেতে পারে। তাই কঠিন কাজের পর হালকা কাজ রাখলে কাজ সহজ হয় এবং কাজের উদ্যম বাকি থাকে। এতে কাজের একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক।

আমরা সবাই জানি যে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা থাকে। সে অনুযায়ী পরিচালনা করলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা সুন্দর হয়। পড়ালেখার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হলে অল্প সময়ে অনেক জ্ঞান অর্জন করা যায়। তেমনি গৃহের কাজকর্মের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হলে গৃহস্থালি কাজকর্মে শৃঙ্খলা আসে এবং পরিশ্রমও অনেক কমে যায়। তাছাড়া জীবনকে সফল করে তোলার জন্য রুটিনের গুরুত্ব অপরিসীম। রুটিন তৈরি করার সময় ভাবতে হবে কী কী কাজ করণীয় এবং সে কাজগুলোর জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় কোনটা। এভাবে চিন্তা করে কাজরে একটি রুটিন তৈরি করে সে অনুযায়ী কাজ করলে ইনশাআল্লাহ সময়ে বরকত হবে। এখানে একটি খসড়া রুটিন তুলে ধরছি।

৪.০০-৬.৩০     মিনিট : অযু, নামায (ফজর ও ইশরাক), তিলাওয়াত

৬.৩০-৭.৩০     মিনিট : নাস্তা

৭.৩০-৮.৩০     মিনিট : বিশ্রাম

৮.৩০-১০.০০   মিনিট : ঘর গুছানো

১০.০০-১২.০০  মিনিট : রান্না

১২.০০-১.০০    মিনিট : গোসল

১.০০-১.৩০      মিনিট : নামায

১.৩০-২.০০     মিনিট : তিলাওয়াত

২.০০-২.৩০     মিনিট : দুপুরের খাবার

২.৩০-৩.৩০     মিনিট : কায়লুলা

৩.৩০-৪.৩০     মিনিট : অন্যান্য কাজ

৪.৩০-৫.০০     মিনিট : নামায

৫.০০-৫.১৫     মিনিট : তাসবীহাত

৫.১৫-৬.৩০     মিনিট : লেখা/অন্যান্য কাজ

৬.৩০-৭.০০     মিনিট : নামায

৭.০০-৭.১৫      মিনিট :  তিলাওয়াত

৭.১৫-৭.৩০      মিনিট : তালীম

৭.৩০-৮.৩০     মিনিট : পড়াশোনা

৮.৩০-৯.০০     মিনিট : নামায

৯.০০-৯.৩০     মিনিট :  রাতের খাবার

৯.৩০-১০.০০   মিনিট : পড়াশোনা

১০.০০- ...

উল্লেখিত রুটিন শুধু নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা হল। মৌসুমের পরিবর্তন এবং কাজের ধরন হিসেবে প্রত্যেকের তালিকা বিভিন্নও হতে পারে। যার যেভাবে সুবিধা সে সেভাবেই রুটিন তৈরি করবে। প্রথম প্রথম একদম টাইম ধরে চলতে একটু অসুবিধা হতে পারে। পরে চলতে চলতে অভ্যাস হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা না বললেই নয়। তা হচ্ছে, রুটিন তৈরির সময় আমাদেরকে ইবাদত-বন্দেগীর জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। যেভাবেই রুটিন তৈরি করি না কেন ইবাদতের সময়ে যেন ইবাদতই থাকে। এমনকি অন্য কাজ বাদ দিয়ে হলেও। একটা কথা মনে রাখলেই বিষয়টা সহজ হয়ে যাবে। সেটা এই যে, আমার সময় ও কাজের শক্তি সবই আল্লাহর দান। আল্লাহ যদি আমাদেরকে নিয়ামতগুলো না দিতেন তবে আমরা কোনো কাজ করতে পারতাম না। এজন্য ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি মনোযোগ দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য। আয় আল্লাহ! আপনার দেওয়া সময়কে সঠিক কাজে ব্যয় করার তাওফীক দান করুন এবং সমস্ত কাজকে সহজ করে সময়ে বরকত দান করুন। আমীন।

 

 

advertisement